সুসমাচারের প্রতি একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থাকা
প্রেরিত পৌল একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা বর্তমানে যিহোবার সাক্ষীদের মধ্যে যারা পূর্ণ-সময় পরিচারক তাদের অজানা নয়—তিনি অর্থের অভাব উপলব্ধি করছিলেন। তাই করিন্থে তিনি সাধারণ তাম্বু নির্মাণের কাজ শুরু করেন যা তিনি কিশোর হিসাবে শিখেছিলেন। কাজটি কঠিন ছিল, আর কখনও কখনও হয়তো সেই অমসৃণ কাপড় ব্যবহারের জন্য তার হাত কেটে রক্তাক্ত হয়ে উঠত। যে আয় তিনি লাভ করতেন তা কোনরকমে তার ভরনপোষনের জন্য যথেষ্ট ছিল, কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন, কারণ তার জাগতিক কাজ শেষ হয়ে গেলে, প্রত্যেক দিন তার কাজের সরঞ্জাম সরিয়ে রেখে তিনি যে কাজের জন্য করিন্থে এসেছিলেন সেই কাজ করতেন—তিনি সুসমাচার প্রচার করতেন!—ফিলিপীয় ৪:১১, ১২.
বিশ্রামবার আসলে, পৌল সমাজগৃহে যাত্রা করতেন। সত্য, পৌল প্রথমে করিন্থীয় শ্রোতাদের সম্মুখীন হয়েছিলেন “দুর্বলতা, ভয়, ও মহাকম্পযুক্ত” হয়ে। (১ করিন্থীয় ২:১, ৩) কিন্তু তার সংবাদের প্রতি কিছু লোকের প্রতিক্রিয়া দেখে ভরসা লাভ করে, পৌল “প্রতি বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে কথা প্রসঙ্গ করিতেন, এবং যিহুদী ও গ্রীকদিগকে বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি দিতেন।”—প্রেরিত ১৮:১-৪.
কিছু দিনের জন্য পৌল আংশিক সময় প্রচার করা ছাড়া বেশী কিছু করতে পারেননি। তারপর মাকিদনিয়া থেকে সীল ও তীমথিয় উদারহস্তের দান নিয়ে আসে যা ‘তার অভাব দূর করে।’ (২ করিন্থীয় ১১:৯; ফিলিপীয় ৪:১৫) থিষলনীকীয় প্রদেশের ভাইরা যে তাড়না সত্ত্বেও দৃঢ়রূপে দাঁড়িয়ে ছিল, এই সংবাদও উৎসাহজনক ছিল।—১ থিষলনীকীয় ৩:৬.
পৌলের প্রতি তার প্রভাব কি ছিল? “বাক্যের প্রতি একান্ত ভাবে নিবিষ্ট ছিলেন [“তার সমস্ত সময় প্রচারের প্রতি প্রয়োগ করতেন,” দ্যা যেরুসালেম বাইবেল; টুডেজ ইংলিশ ভারশন], যীশুই যে খ্রীষ্ট, ইহার প্রমাণ যিহূদীদিগকে দিতেছিলেন।” (প্রেরিত ১৮:৫) আর্থিক চাপ থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্ত হয়ে, পৌল পূর্ণ-সময় প্রচারে ফিরে না গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারছিলেন না। তার কাজে তিনি তৃপ্তিসহকারে ফিরে গেলেন, শুধুমাত্র যিহুদীদের কাছে প্রচার নয় কিন্তু তার প্রথম অনুপ্রাণীত পত্র লেখার জন্যেও সময় করে নিলেন—থিষলনীকীয়দের কাছে তার পত্র!
বর্তমানে আমাদের জন্য একটি উদাহরণ
করিন্থে পৌলের বিস্তৃত কাজের লিখিত বিবরণ রাখা হয়েছে যাতে সকল খ্রীষ্টানেরা সুসমাচারের প্রতি একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থাকতে উৎসাহ পায়। পৌল উপলব্ধি করেছিলেন যে প্রভু যীশু নিজে তার শিষ্যদের “জগতের দীপ্তি” হওয়ার উচ্চ সম্মান প্রদান করেছিলেন। তাদের এই দীপ্তি দেওয়া হবে গুপ্ত রাখার জন্য নয়। যীশু তাদের বলেন: “তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে।” (মথি ৫:১৪-১৬) এর অর্থ যীশু যে প্রচার কাজ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তাতে পূর্ণ অংশ নেওয়া। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১:৬-৮) খ্রীষ্টান মণ্ডলীর অস্তিত্বের প্রধান কারণ ছিল এই সুসমাচার প্রচার।
প্রাথমিক খ্রীষ্টানরাও, পৌলের মত, প্রচার কাজকে গুরুত্বপূর্ণরূপে দেখত। তাই, যখন ঈশ্বরের শত্রুরা মনে করে যে “জীবনের আদিকর্ত্তাকে” নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে তারা সত্য দীপ্তি প্রশমিত করেছে, তার অনুগামীরা জগতের দীপ্তি হিসাবে প্রবল উদ্দিপনার সাথে প্রচার কাজ বজায় রাখে। (প্রেরিত ৩:১৫) এমনকি তাড়না তাদের প্রচেষ্টাকে নিরুদ্যম করতে পারেনি। বাইবেলের বিবরণ জানায়: “তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে থ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।” (প্রেরিত ৫:৪২) কিছুই তাদের বাধা দিতে পারত না!
বর্তমান কালে, একইভাবে খ্রীষ্টানরা সাক্ষ্যদানের কাজে একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থেকেছে। ১৯ শতাব্দীর শেষের দিকে, ঈশ্বরের বাক্যের একাগ্র ছাত্রেরা বাইবেলের সত্য অন্যদের জানাবার প্রয়োজন উপলব্ধি করতে শুরু করে। জায়নস্ ওয়াচটাওয়ার ট্র্যাক্ট সোসাইটি—একটি সংগঠন যা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে—১৮৮৪ সালে সংস্থাপিত হয়। এই বাইবেলের ছাত্ররা, ১৯৩১ সাল থেকে যাদের যিহোবার সাক্ষী বলা হয়, আক্ষরিকভাবে ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞানে সমস্ত পৃথিবী পরিপূর্ণ করে তুলেছে। তাদের একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থাকা ৪০ লক্ষেরও অধিক সদস্যের এক বিশাল সৈন্যদল তৈরী করেছে! আর কোন সন্দেহ নেই তাদের সংখ্যা যিহোবার পরিচালনায় আরও বৃদ্ধি পাবে।—যিশাইয় ৬০:২২.
আপনি কি আপনার ভূমিকা পালন করছেন?
যীশু বলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প।” (মথি ৯:৩৭, ৩৮) ১৯৯০ সালে প্রায় ১ কোটি লোক খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্বরণার্থক সভায় উপস্থিত ছিল। বর্ধিত আকারে বিশ্বব্যাপী শস্যছেদনের জন্য কত উত্তম সুযোগ! কিন্তু এই ক্রমাগত বৃদ্ধিতে আনন্দ প্রকাশ করা ছাড়াও, আমাদের প্রত্যেককে নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, ‘এই উত্তম কাজে আমি কতটা অংশ নিচ্ছি? আমি কি নিয়মিত তা করছি—সম্ভব হলে প্রত্যেক সপ্তাহে?’
“পালের আদর্শ” হিসাবে প্রাচীণদের উচিৎ এই কাজে নেতৃত্ব নেওয়া। (১ পিতর ৫:৩) সত্য, অধিকাংশ প্রাচীণদের জাগতিক কাজ থাকে। করিন্থে থাকাকালীন পৌলও কাজ করতেন। তবুও, তিনি নিয়মিত প্রচার কাজের জন্য সময় ধার্য্য করে রাখতেন। অনুরূপভাবে বর্তমানে বহু প্রাচীণরা সপ্তাহের শেষে আত্মিক কাজে একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থাকেন। এর দ্বারা মণ্ডলী শক্তিশালী এবং উৎসাহজনকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। কিছু মাসে যখন বিশেষ ভাবে প্রচেষ্টা করা হয়, বহু মণ্ডলীতে অধিকাংশ প্রকাশক অগ্রগামী হিসাবে কাজ করে। এর পিছনে রহস্য কি? প্রচারে এবং ক্ষেত্রের পরিচর্য্যার জন্য ব্যবস্থা করায় প্রাচীণরা নেতৃত্ব নেয়।
একইভাবে পরিচারক দাসেরা মণ্ডলীর প্রতি এক গঠনমূলক প্রভাব ফেলতে পারে যদি তারা নিয়মিত ক্ষেত্রের পরিচর্য্যায় অংশ নেয়। মনে রাখবেন, শাস্ত্র অনুযায়ী তাদের “ধীর হওয়ার . . . এবং উত্তমরূপে পরিচারকের কার্য্য” করার প্রয়োজন। (১ তীমথিয় ৩:৮, ১৩) ক্ষেত্রের পরিচর্য্যায় বিশ্বস্ততার প্রয়োজন যদি একজন ভাইকে প্রাচীণ অথবা পরিচারক দাস হিসাবে যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হয়।—তীত ১:৮, ৯.
পৌলের মত, কেউ কেউ জাগতিক কাজকর্ম্ম কমিয়ে দিয়ে অগ্রগামীর কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। মাত্র দশ বছর আগে নিয়মিত, সহায়ক, এবং বিশেষ অগ্রগামীদের সংখ্যা ১৩৭,৮৬১ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯০ সালে ৫৩৬,৫০৮ হয়। অবশ্যই, শুধুমাত্র যিহোবার আশীর্বাদ এবং সম্মতির সাহায্যে ইহা সম্ভব হয়েছে। অগ্রগামীদের যদিও, সময়ের মূল্য গণনা করতে হবে, শুধুমাত্র সময় গণনা করা নয়। অগ্রগামীরা, আপনারা কি পরিচর্য্যার জন্য সুপ্রস্তুত এবং কার্য্যকারী? আপনারা কি ক্রমাগত উন্নতি করার চেষ্টা করেন যাতে আপনাদের পরিচর্য্যা সত্যই ফলপ্রসু হয়ে উঠবে?
ভারসাম্যপূর্ণ পরিচর্য্যার পুরস্কারসকল
আপনি কি প্রতি মাসে দ্যা ওয়াচটাওয়ার এবং তার আনুষঙ্গিক পত্রিকা আওয়েক!-এ দেওয়া জীবনদায়ক তথ্য উপলব্ধি করেন? কোন সন্দেহ নেই আপনি করেন। আপনার উপলব্ধি কি আপনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এই পত্রিকাগুলি বিতরণ করতে? বোটস্ওয়ানাতে একজন ভগ্নী এইরূপ করেন। পূর্বে তিনি সত্যের বিরোধিতা করতেন, কিন্তু তার স্বামী তাকে পত্রিকা থেকে পড়ে শোনাতেন। পরবর্তীকালে তার হৃদয় পরিবর্তন হয় ও তিনি একজন সাক্ষী হন। যদিও তিনি নিরক্ষর ছিলেন, পত্রিকা বিতরণ করতে তিনি দারুণ সাফল্য লাভ করেন, তিনি বলতেন, “আমি পড়তে জানি না, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে এই পত্রিকাগুলি পড়ে শোনান। আমি এইগুলি উপভোগ করি, এবং আমি নিশ্চিত যে আপনিও করবেন।”
জীবনসংরক্ষণের এই কাজে প্রত্যেক সপ্তাহে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন? যত শীঘ্র আপনি আত্মিক যোগ্যতা লাভ করবেন, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী আপনাকে শুরু করতে সাহায্য করবে। পত্রিকা বিতরণ করা, যাইহোক, পরিচর্য্যার শুধুমাত্র একটি দিক। যে সুসমাচারের প্রতি একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থাকতে চায় সে ভারসাম্যপূর্ণ পরিচর্য্যা রাখতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াচটাওয়ার সোসাইটি লক্ষ লক্ষ বই প্রকাশিত করে, এবং এইগুলি জনতাকে দেওয়া হয় উত্তম আত্মিক খাদ্যের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী উৎস হিসাবে। আপনি কি আপনার পরিচর্য্যায় সুদক্ষ হয়ে উঠেছেন যাতে আপনি বই অর্পন করতে পারেন, যেমন ইউ ক্যান লিভ ফরএভার ইন প্যারাডাইস অন আর্থ?
আর যে লোকেরা আগ্রহ দেখায় তাদের সম্বন্ধে কি? আপনি কি ভালভাবে রেকর্ড রাখেন যাতে তাদের পুনঃসাক্ষাৎ করতে পারেন? এইরকম সাক্ষাৎ পরিচর্য্যার সেই ক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারে যার থেকে সর্বাধিক আনন্দ লাভ করা যায়—গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের কাজ। মনে রাখবেন, মথি ২৮:১৯, ২০ পদে যীশু আমাদের নির্দেশ দেন ‘শিষ্য কর, তাহাদের বাপ্তাইজিত কর।’ তার অর্থ তাদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করা। সত্য, অধ্যয়ন শুরু করার জন্য অনেক সময় ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয়। একজন সাক্ষী এক বয়স্ক দম্পতির সাথে সাক্ষাৎ করেন যারা সাগ্রহে গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করতে সম্মত হয়। কিন্তু তারা পর পর তিন সপ্তাহ অধ্যয়ন স্থগিত রাখে। অবশেষে অধ্যয়ন শুরু হয়। তারপর, কিছু সময়ের জন্য সেই দম্পতি প্রায় প্রত্যেক দ্বিতীয় সপ্তাহে অধ্যয়ন বন্ধ রাখতেন। পরিশেষে, যদিও, সেই স্ত্রী বাপ্তিস্ম নেওয়ার মত উন্নতি করে। “বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরে,” সেই ভাই স্মরণ করেন, “তার চোখ আনন্দাশ্রুতে ভরে ওঠে, যা আমার ও আমার স্ত্রীর চোখেও আনন্দাশ্রু নিয়ে আসে।” হ্যাঁ, সুসমাচারের প্রতি একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থাকা অবর্ণনীয় আনন্দ নিয়ে আসে!
নিজেকে প্রাপ্তিসাধ্য করুন!
যীশু খ্রীষ্ট এবং প্রেরিত পৌল প্রগাঢ় ভক্তি সম্বন্ধে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন যা আমরা অনুকরণ করতে পারি। আর যিহোবার সাক্ষীদের মধ্যেও বর্তমানে অনেক উত্তম উদাহরণ রয়েছে। যারা সুসমাচার জানে অন্যদের তা জানাতে সক্রিয় হওয়ার জন্য এখনই সময়। বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয় এই পরিশ্রম “নিষ্ফল নয়।”—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.
পৌলের মত, অধিকাংশ লোকের আর্থিক চাহিদা পূরণ করার রয়েছে। এই জন্য, অনেকে হয়তো অগ্রগামীর কাজ করতে পারবে না। কিন্তু যিহোবার সাহায্যে, সকলে রোমীয় ১২:১১ পদে দেওয়া উত্তম উপদেশ পালন করতে পারে: “তোমার কাজের প্রতি যত্নে শিথিল হইও না। আত্মায় উত্তপ্ত হও। যিহোবার দাসত্ব কর।” (NW) আর যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় যাতে যিহোবার পরিচর্য্যায় আরও অধিক সময় ব্যয় করা যায়, যে সত্যই যিহোবাকে ভালবাসে সে, পৌলের মত, এই সুযোগ আকড়ে ধরবে। সুসমাচারের প্রতি একান্ত ভাবে নিবিষ্ট থাকুন! তা করলে শুধুমাত্র এখন আশীর্বাদ লাভ করবেন না কিন্তু ভবিষ্যতে অফুরন্ত আনন্দ এবং সুখ সমেত অনন্ত জীবন লাভ করবেন!—মথি ১৯:২৮, ২৯. (w91 7/1)