এক স্বাধীন কিন্তু উত্তরদায়ী লোকসমূহ
“আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।”—যোহন ৮:৩২.
১, ২. (ক) মানুষের ইতিহাসে স্বাধীনতা কিরূপভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? (খ) কে একমাত্র সত্যই স্বাধীন? ব্যাখ্যা করুন।
স্বাধীনতা। এই কথাটি কতইনা শক্তিশালী! মানবজাতি অগণিত যুদ্ধ, বিপ্লব এবং তার সাথে অগণনীয় সামজিক অশান্তি সহ্য করেছে কারণ মানুষের ইচ্ছা করে স্বাধীন হবার। সেইকারণে, দ্যা অ্যানসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা বলে: ‘সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে, স্বাধীনতার ধারণার থেকে আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়নি।’
২ যাহাহোক, কত লোক আজ সত্যই স্বাধীন? কতজন জানে যে স্বাধীনতা কি? দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক অ্যানসাক্লোপিডিয়া বলে: “যদি লোকেদের সত্যই সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকতে হয়, তাহলে তারা কিভাবে চিন্তা করে, কথা বলে, অথবা কাজ করে, তার উপর কোন বাধানিষেধ থাকা উচিৎ নয়। নির্ণয়গুলি কি সেই সম্বন্ধে তাদের সচেতন থাকতে হবে, এবং সেই নির্ণয়গুলির মধ্যে থেকে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিৎ তাদের।” এই বিষয় স্মরণে রেখে আপনি কি কাউকে জানেন যে সত্যই স্বাধীন? কে বলতে পারে যে তাদের “কোন বাধানিষেধ নেই তারা যেভাবে চিন্তা করে, কথা বলে, অথবা কাজ করে তার উপর”? বাস্তব সত্যে, কেবল একজন বিশ্বে এই বর্ণনার সাথে মানান—যিহোবা ঈশ্বর। তিনি কেবল সম্পূর্ণ স্বাধীনতার অধিকারী। কেবল তিনিই যে কোন নির্ণয় ইচ্ছা মত নিতে পারেন এবং তারপর সব বিপক্ষতা সত্বেও তা সম্পন্ন করতে পারেন। তিনি হলেন “সর্ব্বশক্তিমান্।”—প্রকাশিত বাক্য ১:৮; যিশাইয় ৫৫:১১.
৩. কি পরিস্থিতে সাধারনতঃ মানুষেরা স্বাধীনতা উপভোগ করে?
৩ অবনত মানুষদের জন্য, স্বাধীনতা কেবল আপেক্ষিক। সাধারনতঃ তা কোন কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রদান অথবা প্রতিভূ করা হয় এবং তা নির্ভর করে যে আমারা সেই কর্তৃপক্ষের অধীনে আছি কিনা তার উপর। সত্যই, প্রায় সব ক্ষেত্রেই, একজন ব্যক্তি স্বাধীন হতে পারে যদি সে তার স্বাধীনতাদাতার যে অধিকার তা মেনে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, যে ব্যক্তিরা “স্বাধীন জগতে” বাস করে তারা অনেক উপকার উপভোগ করে, যেমন চলাফেরা করার স্বাধীনতা, বাক্ স্বাধীনতা, এবং ধর্ম্মীয় স্বাধীনতা। কি এই স্বাধীনতাগুলির প্রতিভূ দেয়? সেই দেশের আইন। একজন ব্যক্তি তা উপভোগ করতে পারে যতক্ষন পর্য্যন্ত সে সেই আইন পালন করে। যদি সে তার স্বাধীনতা অপব্যবহার করে এবং আইন ভঙ্গ করে, তাহলে তার যে স্বাধীনতা তা কঠোরভাবে সীমিত করা যেতে পারে করাবাস দন্ডাদেশের দ্বারা।—রোমীয় ১৩:১-৪.
ঈশ্বরীয় স্বাধীনতা—উত্তরদায়িত্বতার সাথে
৪, ৫. যিহোবার উপাসকেরা কি স্বাধীনতা উপভোগ করে, এবং কিসের নিমিত্ত তিনি তাদের উত্তরদায়ী ধরবেন?
৪ প্রথম শতাব্দীতে, যীশু স্বাধীনতা সম্বন্ধে কথা বলেন। তিনি যিহৃদীদের বলেন: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য; আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” (যোহন ৮:৩১, ৩২) তিনি এখানে বাক্ স্বাধীনতা বা ধর্ম্মীয় স্বাধীনতার কথা বলছিলেন না। তিনি অবশ্যই রোমীয় যে অত্যাচার তার থেকে স্বাধীনতার কথাও বলাছিলেন না, যার জন্য অনেক যিহৃদীরা আকাঙ্ক্ষা করছিল। না, ইহা ছিল তার থেকে অনেক মূল্যবান বেশী কিছু, এক স্বাধীনতা যা মানুষের আইনের দ্বারা প্রদত্ত নয় অথবা কোন মানব শাসনকর্তার খোশখেয়াল দ্বারা নয়, কিন্তু বিশ্বের সর্বমহান্ কর্তা, যিহোবার দ্বারা। ইহা ছিল কুসংস্কার থেকে স্বাধীনতা, ধর্ম্মীয় অজ্ঞানতা থেকে স্বাধীনতা, এবং এর থেকেও, আরও অনেক কিছু। যে স্বাধীনতা যিহোবা প্রদান করে থাকেন তা হল সত্য স্বাধীনতা, এবং তা অনন্তকাল ধরে স্থায়ী হবে।
৫ প্রেরিত পৌল বলেন: “আর যিহোবাই সেই আত্মা; আর যেখানে যিহোবার আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।” (২ করিন্থীয় ৩:১৭, NW) বিগত শতাব্দীগুলি ধরে যিহোবা মানবজাতির সাথে এমনভাবে ব্যবহার করে আসছেন যাতে বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা অবশেষে সব থেকে উত্তম ও মহৎ সেই মানবীয় স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে, “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা।” (রোমীয় ৮:২১) অন্তর্বর্তীকালে, যিহোবা আমাদের পরিমিতভাবে স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন বাইবেলের সত্যের মাধ্যমে, আর তিনি আমাদের উত্তরদায়ী ধরেন যদি আমারা সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করি। প্রেরিত পৌল লেখেন: “আর তাঁহার সাক্ষাতে কোন সৃষ্ট বস্তু অপ্রকাশিত নয়; কিন্তু তাঁহার চক্ষুর্গোচরে সকলেই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে, যাঁহার কাছে আমাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে।”—ইব্রীয় ৪:১৩.
৬-৮. (ক) আদম ও হবা কি স্বাধীনতা উপভোগ করে, এবং কিরূপ পরিস্থিতিতে তারা ঐরূপ স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারত? (খ) আদম ও হবা তাদের নিজেদের জন্য এবং তাদের বংশধরদের জন্য কি হারায়?
৬ যিহোবার কাছে উত্তরদায়িত্বতা তুলে ধরা হয় যখন আমাদের প্রথম মানব পিতামাতা, অদম ও হবা, জীবিত ছিলেন। যিহোবা তাদের সৃষ্টি করেন স্বাধীন ইচ্ছার এক অপূর্ব দান দিয়ে। যতক্ষন অবধি তারা তাদের সেই স্বাধীন ইচ্ছার দানকে দায়িত্ববোধের সাথে ব্যবহার করে, তারা অন্য সকল আশীর্বাদ উপভোগ করে, যেমন ভয় থেকে স্বাধীনতা, অসুস্থতা থেকে স্বাধীনতা, মৃত্যু থেকে স্বাধীনতা, এবং এক শুদ্ধ বিবেকে তাদের স্বর্গীয় পিতার নিকটে অভিগমন করার স্বাধীনতা। কিন্তু যখন তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে অপব্যবহার করে, সেই সব পরিবর্ত্তিত হয়।
৭ যিহোবা আদম ও হবাকে এদন উদ্যানে রাখেন, তাদের আনন্দের জন্য তিনি তাদের উদ্যানের সকল বৃক্ষের ফল সকল দেন—কেবল একটি ছাড়া। তা তিনি নিজের জন্য রাখেন; সেটা ছিল “সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ।” (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭, NW) সেই বৃক্ষের ফল খাওয়া থেকে নিবৃত্ত থেকে, আদম ও হবা ইহা মেনে নেবে যে কেবল যিহোবা হলেন স্বাধীন কোনটা ভাল এবং কোনটা মন্দ তার মান স্থির করার জন্য। যদি তারা দায়িত্বপূর্ণ ভাবে সেই নিষিদ্ধ ফল খাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকে, তাহলেই যিহোবা তাদের অন্যান্য স্বাধীনতাগুলি দিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করবেন।
৮ দুঃখজনক ভাবে, হবা শয়তানের চতুর ধারণাসঞ্চারে কর্ণপাত করে যে তার নিজের ‘ভাল মন্দ’ জানা উচিৎ। (আদিপুস্তক ৩:১-৫) প্রথমে সে, এবং পরে আদম, সেই নিষিদ্ধ ফল খায়। তার ফলস্বরূপ, যখন যিহোবা তাদের সাথে কথা বলতে এদন উদ্যানে আসেন, তারা লজ্জা পায় ও নিজেদের লুকিয়ে রাখে। (আদিপুস্তক ৩:৮, ৯) তারা এখন পাপী হয় যাদের শুদ্ধ বিবেকে ঈশ্বরের কাছে অভিগমন করার যে বোধ তা থাকে না। এই জন্য, তারা রোগ ও মৃত্যু থেকে স্বাধীনতা হারায়, তাদের জন্য ও তাদের বংশধরদের জন্য। পৌল বলেন: “এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।”—রোমীয় ৫:১২; আদিপুস্তক ৩:১৬, ১৯.
৯. কারা নিজেদের জ্ঞাত করেছে সেই ব্যক্তিরূপে যারা যে স্বাধীনতা তারা পায় তা উত্তমভাবে ব্যবহার করেছে?
৯ যাহাহোক, মানবজাতির তবুও স্বাধীন ইচ্ছা ছিল, এবং সময়ের ধারায়, কিছু অসিদ্ধ মানুষেরা তা দায়িত্ববোধের সাথে ব্যবহার করে যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে। তাদের কারুর কারুর নাম প্রাচীনকাল থেকে আমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এই সব ব্যক্তি যেমন হেবল, হনোক, নোহ, অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব (যাকে ইস্রায়েলও বলা হয়) সেই ব্যক্তিদের উদাহরণ যারা তাদের পরিমিত স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনের উপভোগার্থে। আর ফলস্বরূপ তা তাদের মঙ্গল সাধন করে।—ইব্রীয় ১১:৪-২১.
ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের স্বাধীনতা
১০. চুক্তির কি নিয়মগুলি যিহোবা তার বিশেষ লোকদের সাথে করেন?
১০ মোশির দিনে যিহোবা ইস্রায়েল সন্তানদের মুক্ত করেন—যাদের সংখ্যা তখন লক্ষ লক্ষ ছিল—তাদের মিশরের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করেন এবং তাদের সাথে এক চুক্তি করেন যার মাধ্যমে তারা তাঁর বিশেষ লোক হয়। এই চুক্তির অধীনে, ইস্রায়েলীয়দের ছিল এক যাজকত্ব ও পশুদের উৎসর্গ করার ব্যবস্থা যা তাদের পাপ সকল প্রতীকভাবে আচ্ছাদন করত। সেইকারণে, তাদের ছিল উপাসনায় ঈশ্বরের কাছে অভিগমন করার স্বাধীনতা। তাদের এক আইন এবং নিয়ম ব্যবস্থা ছিল যাতে তাদের মিথ্যা উপাসনার যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন রীতি তার থেকে মুক্ত রাখা যায়। পরে, তারা সেই প্রতিজ্ঞাত দেশ উত্তরাধিকারসূত্রে পাবে, এই নিশ্চয়করণের সাথে যে তারা ঐশ্বরিক সাহায্য পাবে তাদের শত্রুদের বিপক্ষে। তাদের জন্য সেই চুক্তিতে চাহিদা ছিল যাতে তারা যিহোবার সেই আইন পালন করে। ইস্রায়েলীয়রা স্বেচ্ছায় এই অবস্থা মেনে নেয়, এই বলে: “যিহোবা যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।”—যাত্রাপুস্তক ১৯:৩-৮; দ্বিতীয় বিবরণ ১১:২২-২৫.
১১. যখন ইস্রায়েল তাদের দিকের চুক্তি রাখতে বিফল হয় যিহোবার সাথে তার ফল কি হয়?
১১ প্রায় ১,৫০০ বৎসরের অধিক সময়, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার সাথে এই বিশেষ সম্পর্কে থাকে। কিন্তু সময়ের পর সময় ধরে তারা এই চুক্তি পালনে বিফল হয়। তারা বারংবার মিথ্যা উপাসনার দ্বারা প্রলুব্ধ হয় এবং প্রতিমাপূজা ও কুসংস্কারের বন্দিত্বে আসে, তাই ঈশ্বর তাদের অনুমতি দেন যেন তারা দৈহিকভাবে তাদের শত্রুদের দাসত্বে যায়। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:১১-১৯) যে আশীর্বাদ আসে চুক্তির পালন করা থেকে তা উপভোগ না করে, তারা শাস্তি পায় তা লঙ্ঘন করার দরুন। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১, ২, ১৫) অবশেষে, ৬০৭ খ্রী.পূ., যিহোবা অনুমতি দেন সেই জাতিকে বাবিলনের বন্দিত্বে আসতে।—২ বংশাবলি ৩৬:১৫-২১.
১২. মোশীর নিয়মচুক্তির সম্বন্ধে অবশেষে কি প্রকট হয়?
১২ ইহা ছিল এক কঠোর শিক্ষা। এর থেকে তাদের শেখা উচিৎ ছিল যে আইন পালন করা কত গুরুত্বপূর্ণ। যাহাহোক ৭০ বৎসর পর যখন তারা তাদের দেশে আবার ফিরে যায়, তখনও তারা আইন চুক্তি সম্পূর্ণভাবে পালন করতে বিফল হয়। তাদের প্রত্যাগমনের প্রায় একশ বৎসর পর, যিহোবা ইস্রায়েলীয় যাজকদের বলেন: “তোমরা পথ হইতে সরিয়া পড়িয়াছ, ব্যবস্থার বিষয়ে অনেককে উছোট খাওয়াইয়াছ।” (মালাখি ২:৮) সত্যই, ইস্রায়েলদের মধ্যে সব থেকে নিষ্টাবান ব্যক্তিও এই সিদ্ধ আইন পূর্ণভাবে রাখতে সক্ষম হয় না। তাই আশির্বাদ হওয়ার পরিবর্তে, তা হয়ে দাঁড়ায়, প্রেরিত পৌলের কথায়, “শাপ।” (গালাতীয় ৩:১৩) পরিস্কার হয় যে, মোশির আইন চুক্তির থেকে অধিক কিছু প্রয়োজন ছিল যাতে অসিদ্ধ, বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতায় আনার জন্য।
খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতার বৈশিষ্ট
১৩. স্বাধীনতার জন্য অবশেষে কি উত্তম ভিত্তি প্রদান করা হয়?
১৩ যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যের আরও কিছু আছে। ৫০ সা. শ. দিকে পৌল মনোনীত গালাতীয় খ্রীষ্টানদের লেখেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে যিহোবা তাদের কি ভাবে নিয়ম চুক্তির যে দাসত্ব তার থেকে মুক্ত করেন এবং তারপর বলেন: “স্বাধীনতার নিমিত্তই খ্রীষ্ট আমাদিগকে স্বাধীন করিয়াছেন; অতএব তোমরা স্থির থাক এবং দাসত্বের যোয়ালিতে আর বদ্ধ হইও না।” (গালাতীয় ৫:১) কি কি ভাবে যীশু তাদের মুক্ত করেন?
১৪, ১৫. কি অপূর্ব উপায়ে যীশু বিশ্বাসী যিহৃদী ও ন-যিহৃদীদের স্বাধীন করেন?
১৪ যীশুর মৃত্যুর পরে, যিহৃদীরা যারা তাকে মশীহ বলে গ্রহণ করে এবং তার শিষ্য হয় তারা নতুন চুক্তির অধীনে আসে, যা পুরাতন চুক্তিকে প্রতিস্থাপন করে। (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪; ইব্রীয় ৮:৭-১৩) এই নতুন চুক্তির অধীনে তারা—এবং যে ন-যিহৃদী বিশ্বাসীরা তাদের সাথে যোগ দেয়—তারা নতুন, আত্মিক জাতির অংশ হয় যারা মাংসিক ইস্রায়েলের স্থানে ঈশ্বরের এক বিশেষ লোক হয়। (রোমীয় ৯:২৫, ২৬; গালাতীয় ৬:১৬) তারা সেই স্বাধীনতা উপভোগ করে, যা যীশু প্রতিজ্ঞা করেন যখন তিনি বলেন “সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” তাদেরকে মোশির আইনের শাপ থেকে স্বাধীন করা ছাড়াও, সত্য যিহৃদী খ্রীষ্টানদের স্বাধীন করে সেই সব কষ্টদায়ক রীতিনীতি থেকে যা তাদের উপর ধর্ম্মীয় নেতারা চাপিয়ে দিয়েছিল। আর তা ন-যিহৃদী খ্রীষ্টানদের মুক্ত করে প্রতিমাপূজা এবং সেই কুসংস্কার থেকে যা তাদের বিগত উপাসনার অঙ্গ ছিল। (মথি ১৫:৩, ৬; ২৩:৪; প্রেরিত ১৪:১১-১৩; ১৭:১৬) আরও অনেক কিছু ছিল।
১৫ যীশু, যখন সেই সত্য সম্বন্ধে বলছিলেন যা একজনকে স্বাধীন করে, তিনি বলেন: “সত্য সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ পাপাচরণ করে, সে পাপের দাস।” (যোহন ৮:৩৪) যেহেতু আদম ও হবা পাপ করে, প্রত্যেক ব্যক্তি যারা জীবিত ছিল তারা সকলে পাপী ছিল এবং সেইহেতু পাপের দাস। এর থেকে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন যীশু নিজে, এবং যীশুর বলিদান বিশ্বাসীদের সেই দাসত্ব থেকে মুক্ত করে। সত্য, যে তারা সাধারনত অসিদ্ধ ও পাপী ছিল। এখন, অবশ্য, তারা তাদের পাপ থেকে পশ্চাতাপ করতে পারত ও যীশুর বলিদানের উপর ভিত্তি করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে পারত, এই দৃঢ়তায় যে তাদের প্রার্থনা শ্রোবণ করা হবে। (১ যোহন ২:১, ২) যীশুর প্রায়শ্চিত্বরূপ বলিদানের উপর ভিত্তি করে, ঈশ্বর তাদের ধার্ম্মিক ঘোষনা করেন, এবং তারা তার কাছে শুদ্ধ বিবেকে অভিগমন করতে পারে। (রোমীয় ৮:৩৩) আরও, যেহেতু মুক্তির মূল্য পুনরুত্থানের মাধ্যমে অন্তহীন জীবনের সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে, সত্য তাদেরকে এমনকি মৃত্যুর ভয় থেকেও মুক্ত করেছে।—মথি ১০:২৪; ইব্রীয় ২:১৫.
১৬. খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতা কি করে জগতের যে কোন স্বাধীনতার চেয়ে বেশী ব্যাপক?
১৬ মনুষ্যদের জন্য বলতে গেলে এক অপূর্ব পথ খুলে যায়, নারী পুরুষ তাদের অবস্থা যাই হোক না কেন তাদের সামনে খুলে যায় খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতার পথ। দরিদ্র লোকেরা, বন্দীরা, এমনকি যারা ক্রীতদাস, তারও মুক্ত হতে পারে। অন্যদিকে, জাতির যারা উচ্চ স্থানিয় ব্যক্তি ছিল যারা এই খ্রীষ্ট বিষয়ক সংবাদকে উপেক্ষা করে তারা তখনও পাপ, মৃত্যুর ভয়, এই সকলের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভয়ের দাসত্বে থাকে। এই যে স্বাধীনতা আমারা উপভোগ করি তার জন্য যেন আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে না ভুলি। এই জগত আমাদের যাই দেবার চেষ্টা করুক না কেন তা এর সমতুল্য হতে পারে না।
স্বাধীন কিন্তু উত্তরদায়ী
১৭. (ক) প্রথম শতাব্দীতে কি করে কোন কোন খ্রীষ্টান তাদের স্বাধীনতা হারান? (খ) কেন আমরা শয়তানের জগতের যে কৃত্রিম স্বাধীনতা তার দ্বারা প্রতারিত হব না?
১৭ প্রথম শতাব্দীতে, সম্ভবত বেশীরভাগ যারা মনোনীত খ্রীষ্টানরা ছিলেন তারা তাদের স্বাধীনতায় আনন্দ করেন ও তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখেন। দুঃখজনক ভাবে কোন কোন জন খ্রীষ্টীয় যে স্বাধীনতা তার স্বাদ পান সব আশীর্বাদের সাথে কিন্তু তারপর তা প্রত্যাখ্যান করেন, এবং জগতের যে দাসত্ব তাতে ফিরে যান। কেন এমন হয়? কারণ সন্দেহ নেই যে অনেকের বিশ্বাস দুর্বল হয়, আর তারা ‘ভাসিয়া চলিয়া যায়।’ (ইব্রীয় ২:১, NW) অন্যান্যরা ‘সৎসংবেদ দূরে ফেলাতে কাহারও কাহারও বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন হয়।’ (১ তীমথিয় ১:১৯) হয়ত তারা অনৈতিকতায় অথবা জাগতিক বিষয়ের লালসায় পতিত হয়। কত গুরুত্বপূর্ণ যে আমারা আমাদের যে বিশ্বাস তাকে রক্ষা করি এবং তাকে গঠন করে তুলি, ব্যক্তিগত অধ্যয়নে ব্যস্ত থেকে, মেলামেশা করে, প্রার্থনা, এবং খ্রীষ্টীয় কর্ম্মের মাধ্যমে! (২ পিতর ১:৫-৮) আমরা যেন কখন খ্রীষ্টীয় যে স্বাধীনতা তা উপলব্ধি করতে ক্ষান্ত না হই! সত্য, অনেকে হয়ত প্রলুব্ধ হতে পারে যে আলগাভাব তারা মণ্ডলীর বাইরে দেখে তার দ্বারা, এই চিন্তা করে যে যারা বাইরে আছে তারা তাদের থেকে বেশী স্বাধীন। সাধারনতঃ, যা, দেখে মনে হয় জগতে স্বাধীনতা তা বাস্তবে কেবলমাত্র দায়ীত্বহীনতা। যদি আমরা ঈশ্বরের দাস না হই, তাহলে আমরা পাপের দাস, আর সেই দাসত্ব খুব তিক্ত বেতন দেয়।—রোমীয় ৬:২৩; গালাতীয় ৬:৭, ৮.
১৮-২০. (ক) কি করে কেউ কেউ “শাস্তি দণ্ডের শত্রু হয়”? (খ) কি করে কেহ কেহ ‘তাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতাকে দুষ্টতার আবরণস্বরূপ গ্রহণ করে?
১৮ আরও ফিলিপীয়দের প্রতি তার পত্রে, পৌল লেখেন: “কেননা অনেকে এমন চলিতেছে, যাহদের বিষয়ে তোমাদিগকে বারবার বলিয়াছি, এবং এখনও রোদন করিতে করিতে বলিতেছি, তাহারা খ্রীষ্টের শাস্তি দণ্ডের শত্রু।” (ফিলিপীয় ৩:১৮, NW) হ্যাঁ, সেই এক সময়ের খ্রীষ্টানেরা ছিলেন যারা বিশ্বাসের শত্রু হয়েছিলেন, হয়ত ভাক্ত হয়েছিলেন। কত গুরুত্বপূর্ণ যে আমারা যেন তাদের যে পথ তা অনুসরণ না করি! এর সাথে যোগ করে, পিতর লেখেন: “আপনাদিগকে স্বাধীন জান; আর সাধীনতাকে দুষ্টতার আবরণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে ঈশ্বরের দাস জান।” (১ পিতর ২:১৬) কি করে একজন তার স্বাধীনতাকে দুষ্টতার আবরণ করতে পারে? গুরুতর পাপ করে—হয়ত গোপনে—এবং তখনও মণ্ডলীর সাথে মেলামেশা করে।
১৯ দিয়ত্রিফিকে স্মরণে পড়ে। যোহন তার সম্বন্ধে বলেন: “দিয়ত্রিফি যে প্রাধান্যপ্রিয় স্থান চায় [মণ্ডলীতে], আমাদের নিকট হইতে কিছুই সম্মানের সাথে গ্রহণ করে না। . . . সে আপনি . . . ভ্রাতৃগণকে গ্রাহ্য করে না আর যাহারা গ্রাহ্য করিতে ইচ্ছা করে, তাহাদিগকেও বারণ করে এবং মণ্ডলী হইতে বাহির করিয়া দেয়।” (৩ যোহন ৯, ১০, NW) দিয়ত্রিফি তার স্বাধীনতাকে আবরণ হিসাবে ব্যবহার করে তার স্বার্থপর স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য।
২০ শিষ্য যিহৃদা লেখেন: “যেহেতু এমন কয়েক জন গোপনে প্রবিষ্ট হইয়াছে, যাহারা এই দণ্ডাজ্ঞার পাত্ররূপে পূর্ব্বে লিখিত হইয়াছিল; তাহারা ভক্তিহীন, আমাদের ঈশ্বরের অনুগ্রহ লম্পটতায় পরিণত করে, এবং আমাদের একমাত্র অধিপতি ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে।” (যিহৃদার পত্র ৪) যদিও তারা মণ্ডলীর সাথে মেলামেশা করে, এই ব্যক্তিরা ছিল কলুষিতকারী প্রভাব। (যিহৃদার পত্র ৮-১০, ১৬) প্রকাশিত বাক্যে আমরা পড়ি যে পার্গামাম এবং থুয়াতীরা মণ্ডলীতে, সাম্প্রদায়ীকতা, প্রতিমাপূজা, এবং চরিত্রহীনতা ছিল। (প্রকশিত বাক্য ২:১৪, ১৫, ২০-২৩) খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতার কি অপব্যবহার!
২১. যারা তাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতার অপব্যবহার করে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে?
২১ যারা তাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে? স্মরণে রাখবেন ইস্রায়েলীয়দের ক্ষেত্রে কি হয়েছিল। ইস্রায়েল ছিল ঈশ্বরের মনোনীত জাতি, কিন্তু অবশেষে ঈশ্বর তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। কেন? কারণ ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের সাথে তাদের সম্পর্ককে ব্যবহার করে দুষ্টতার আবরণ হিসাবে। তারা শ্লাঘা করে যে তারা হচ্ছে আব্রাহামের সন্তান, কিন্তু আব্রাহমের বীজ এবং যিহোবার মনোনীত মশীহ, যীশুকে প্রত্যাখ্যান করে। (মথি ২৩:৩৭-৩৯; যোহন ৮:৩৯-৪৭; প্রেরিত ২:৩৬; গালাতীয় ৩:১৬) “ঈশ্বরের ইস্রায়েল” সমষ্টিগত ভাবে এইরূপ অবিশ্বস্ত প্রমানিত হবে না। (গালাতীয় ৬:১৬) কিন্তু যে কোন ব্যক্তিগত খ্রীষ্টান যে আত্মিক অথবা নৈতিক দূষন করে সে অবশেষে শাস্তি পাবে, হয়ত প্রতিকূল বিচারজ্ঞা। আমরা সকলে কিভাবে আমাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনাতাকে ব্যবহার করি তার জন্য উত্তরদায়ী।
২২. যারা তাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে ঈশ্বরের দাসত্ব করার জন্য তাদের জন্য কি আনন্দ আসে?
২২ ইহা আরও কত উত্তম ঈশ্বরের জন্য দাসত্ব করা যিনি আমাদের সত্যই স্বাধীন করতে পারেন। কেবল যিহোবাই সেই স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন যা মূল্য রাখে। হিতোপদেশ বলে: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিটকারি দেয় তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতোপদেশ ২৭:১১) আসুন আমরা আমাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতাকে ব্যবহার করি যিহোবার যথার্থতা প্রতিপাদন করার জন্য। যদি আমরা তা করি, আমাদের জীবনের এক অর্থ থাকবে, আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার জন্য পরিতোষ নিয়ে আসব, এবং পরিশেষে আমরা তাদের মধ্যে থাকব যারা উপভোগ করে ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা। (w92 6/1)
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
▫ কে একমাত্র সত্যই স্বাধীন?
▫ আদম ও হবা কি স্বাধীনতা উপভোগ করে, আর কেন তারা তা হারায়?
▫ ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার সাথে তাদের চুক্তি পালন করে তখন তারা কি স্বাধীনতা উপভোগ করে?
▫ যারা যীশুকে গ্রহণ করে তাদের জন্য কি স্বাধীনতা আসে?
▫ প্রথম শতাব্দীতে কি করে কেউ কেউ তাদের খ্রীষ্টীয় স্বাধীনতা হারায় অথবা অপব্যবহার করে?
[Pictures on page 6]
যে স্বাধীনতা যীশু প্রদান করেন তা মানুষ যা দিতে পারে তার থেকে অনেক উত্তম