“আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি”!
“তিনি [আন্দ্রিয়] প্রথমে আপন ভ্রাতা শিমোনের দেখা পান, আর তাঁহাকে বলেন, আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি—অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ খ্রীষ্ট [অভিষিক্ত]।”—যোহন ১:৪১.
১. নাসরতীয় যীশু সম্বন্ধে যোহন বাপ্তাইজক কী সাক্ষ্য দেন, এবং তাঁর সম্পর্কে আন্দ্রিয় কী পরিসমাপ্তিতে আসেন?
আন্দ্রিয় নাসরতীয় যীশু নামে পরিচিত সেই যিহূদী পুরুষের প্রতি এক দীর্ঘ গভীর দৃষ্টি দিলেন। সেই ব্যক্তিটির রাজার বা বিজ্ঞ ব্যক্তির অথবা কোন রব্বির চেহারা ছিল না। না ছিল তাঁর কোন রাজকীয় পোশাক-পরিচ্ছদ, অথবা পলিত কেশ, কোমল হস্ত বা উজ্জ্বল গাত্রবর্ণ। যীশু ছিলেন এক যুবক পুরুষ—প্রায় ৩০ বছর বয়স্ক—যাঁর ছিল পরিশ্রমী শ্রমিকের কঠিন হাত ও তামাটে চেহারা। তাই হয়ত আন্দ্রিয় আশ্চর্য হয়ে যাননি এই জেনে যে তিনি হলেন এক সূত্রধর। তবুও, যোহন বাপ্তাইজক এই ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেন: “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক!” একদিন পূর্বে যোহন এর থেকেও আরও বিষ্ময়সূচক কিছু বলেন: “ইনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র।” তা কী সত্যি? সেই দিন আন্দ্রিয়, যীশুর কথা শুনতে কিছু সময় ব্যয় করলেন। আমরা জানি না যে যীশু কী বলেছিলেন; কিন্তু আমরা জানি যে তাঁর বাক্য আন্দ্রিয়ের জীবনকে পরিবর্তিত করে। তার ভাই শিমোনকে খুঁজতে তিনি তৎপর হন ও বিষ্ময়ে চিৎকার করে বলে উঠেন, “আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি”!—যোহন ১:৩৪-৪১.
২. যীশু প্রতিজ্ঞাত মশীহ ছিলেন কি না সেই সম্বন্ধে প্রমাণগুলি বিবেচনা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২ আন্দ্রিয় ও শিমোন (যাকে যীশু নতুন নাম দেন পিতর) পরে যীশুর প্রেরিত হন। দুইবছরেরও বেশী তাঁর শিষ্য থাকার পরে, পিতর যীশুকে বলেন: “আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (মথি ১৬:১৬) বিশ্বস্ত প্রেরিতেরা ও শিষ্যরা অবশেষে সেই বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করতেও রাজী ছিলেন। বর্তমানে, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরাও সমরূপে ভক্ত। কিন্তু কোন্ সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে? কারণ বিশ্বাস ও শুধুমাত্র সহজ বিশ্বাসের মধ্যে সাক্ষ্যপ্রমাণ পার্থক্য ঘটায়। (ইব্রীয় ১১:১১ দেখুন।) তাই আসুন আমরা তিনটি সাধারণ সাক্ষ্য বিষয় বিবেচনা করে দেখি যা প্রমাণ করে যে যীশু প্রকৃতই মশীহ।
যীশুর বংশাবলি
৩. যীশুর বংশাবলি সম্পর্কে মথি ও লূকের সুসমাচার কি বিশদ বিবরণ দেয়?
৩ যীশুর বংশাবলি হল প্রথম প্রমাণ, যা খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্র যীশুর মশীহ-পরিচয় সমর্থনে প্রদান করে। বাইবেল ভাববাণী করে যে মশীহ রাজা দায়ূদের বংশ থেকে আসবেন। (গীতসংহিতা ১৩২:১১, ১২; যিশাইয় ১১:১, ১০) মথির সুসমাচার আরম্ভ হয়: “যীশু খ্রীষ্টের বংশাবলি পত্র, তিনি দায়ূদের সন্তান, অব্রাহামের সন্তান।” যীশুর পালক পিতা যোষেফের বংশ থেকে তাঁর বংশ পরিচয় খুঁজে বার করে মথি এই স্পষ্ট দাবীর সমর্থন করেন। (মথি ১:১-১৬) লূকের সুসমাচারে যীশুর বংশ পরিচয় সন্ধান করা হয় তাঁর স্বাভাবিক মা, মরিয়ম থেকে দায়ূদ ও অব্রাহামের মাধ্যমে আদম পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়ে। (লূক ৩:২৩-৩৮)a তাই যীশু যে দায়ূদের এক বংশধর ছিলেন সেই সম্বন্ধে সুসমাচার লেখকগণ তাদের দাবীকে আইনত ও স্বাভাবিক উভয় অর্থে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে প্রমাণ করেন।
৪, ৫. (ক) যীশুর সমকালীন ব্যক্তিরা কী দায়ূদ থেকে তাঁর বংশ পরিচয়ের চ্যালেঞ্জ করেছিল, এবং কেন এটি তাৎপর্যপূর্ণ? (খ) কিভাবে বাইবেল-বহির্ভূত উল্লেখগুলি যীশুর বংশাবলিকে সমর্থন করে?
৪ এমনকি যীশুর মশীহ-পরিচয়ের অতি সন্দেহপ্রবণ বিরোধীও, দায়ূদ সন্তান হিসাবে যীশুর দাবীকে অস্বীকার করতে পারবে না। কেন? তার দুটি কারণ আছে। একটি কারণ হল, যিরূশালেম শহরটি সা.শ. ৭০ সালে ধ্বংস হওয়ার পূর্বে এই দাবী বহু দশক ধরে শহরে ব্যাপকরূপে পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল। (তুলনা করুন মথি ২১:৯; প্রেরিত ৪:২৭; ৫:২৭, ২৮.) যদি দাবীটি মিথ্যা হত, তাহলে যীশুর যে কোন বিরোধী—যা তাঁর বহু ছিল—তাঁকে প্রতারক হিসাবে প্রমাণ করতে পারত, শুধুমাত্র সরকারি সংরক্ষণাগারের বংশবৃত্তান্ত থেকে তাঁর বংশ পরিচয় পরীক্ষা করার মাধ্যমে।# রাজা দায়ূদ থেকে যীশুর বংশ পরিচয় কেউ চ্যালেঞ্জ করছে বলে ইতিহাসে কিন্তু কোন প্রমাণ নেই। বাস্তবিকই এই দাবীটি অখন্ডনীয়। কোন সন্দেহ নেই যে মথি ও লূক এই বিশিষ্ট নামগুলি সরাসরি সরকারি নথি থেকে লেখেন।
৫ দ্বিতীয় কারণটি হল, বাইবেলের বাইরের উৎসগুলি যীশুর বংশ পরিচয়ের সাধারণভাবে স্বীকারকে সমর্থন করে। যেমন, তালমুড বিবরণ দেয় যে চতুর্থ-শতাব্দীর এক রব্বি, যীশুর মাতা মরিয়মের প্রতি অমার্জিত মন্তব্য করে এইভাবে যে তিনি ‘সূত্রধরের সাথে বেশ্যাকৃত্য করতেন’; কিন্তু সেই একই অনুচ্ছেদ স্বীকার করে যে “তিনি ছিলেন রাজকুমার ও শাসকদের বংশধর।” এর পূর্বের আর একটি উদাহরণ হল দ্বিতীয়-শতাব্দীর ঐতিহাসিক হেজেসিপাস্। তিনি বলেন যে রোমান কৈসর ডমিশিয়ান, যখন দায়ূদের বংশধরদের সম্পূর্ণ নিঃশেষ করতে চাইছিল, তখন প্রারকি খ্রীষ্টানদের কিছু শত্রুরা যীশুর অর্দ্ধভ্রাতা যিহূদার পৌত্রদের ‘দায়ূদের বংশের’ বলে অভিযুক্ত করে। যদি যিহূদা, দায়ূদের বংশধর রূপে পরিচিত থাকেন তাহলে কী যীশুও হবেন না? সন্দেহাতীতরূপে!—গালাতীয় ১:১৯; যিহূদা ১.
মশীহ সম্বন্ধীয় ভাববাণীগুলি
৬. ইব্রীয় শাস্ত্রে মশীহ সম্বন্ধীয় ভাববাণীর প্রাচুর্য কতটা?
৬ যীশু যে মশীহ তার অপর একটি প্রমাণ হল পরিপূর্ণতাপ্রাপ্ত ভাববাণী। মশীহের প্রতি যে ভাববাণীগুলি প্রযোজ্য তা ইব্রীয় শাস্ত্রে প্রচুর আছে। দ্যা লাইফ অ্যান্ড টাইমস্ অফ যিসাস্ দ্যা মেসায়া বইতে অ্যালফ্রেড এডারশিম্ ইব্রীয় শাস্ত্রে ৪৫৬-টি অনুচ্ছেদ মিলিয়ে দেখেন যে প্রাচীন রব্বিগণ এইগুলিকে মশীহ সম্বন্ধীয়রূপে বিবেচনা করত। কিন্তু, রব্বিদের মশীহ সম্বন্ধে অনেক ভুল ধারণা ছিল; অনেক অনুচ্ছেদ তারা তুলে ধরে যা একেবারেই মশীহ সম্বন্ধীয় ছিল না। তবুও কম পক্ষে কয়েক কুড়ি ভাববাণী আছে যা যীশুকে মশীহরূপে শনাক্ত করে।—তুলনা করুন প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০.
৭. যীশু পৃথিবীতে তাঁর সাময়িক বসবাস কালে কিছু কোন্ কোন্ ভাববাণী পরিপূর্ণ করেন?
৭ এইগুলির মধ্যে: তাঁর জন্মের নগর (মীখা ৫:২; লূক ২:৪-১১); তাঁর জন্মের পরে যে ব্যাপক শিশুহত্যার দুঃখদায়ক ঘটনা (যিরমিয় ৩১:১৫; মথি ২:১৬-১৮); তাঁকে মিসর থেকে ডাকা হবে (হোশেয় ১১:১; মথি ২:১৫); জাতিগণের শাসকগন একত্রিত হবে তাঁকে ধ্বংস করতে (গীতসংহিতা ২:১, ২; প্রেরিত ৪:২৫-২৮); ৩০টি রৌপমুদ্রার জন্য তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা (সখরিয় ১১:১২; মথি ২৬:১৫); এমনকি তাঁর মৃত্যুর ধরন।—গীতসংহিতা ২২:১৬, পাদটীকা; যোহন ১৯:১৮, ২৩; ২০:২৫, ২৭.b
তাঁর আগমন পূর্বভাষিত ছিল
৮. (ক) কখন মশীহের আগমন হবে সেই সম্বন্ধে কোন্ ভাববাণী দৃষ্টিপাত করায়? (খ) এই ভাববাণী বোধগম্য করতে কোন্ দুটি বিষয় জানা প্রয়োজন?
৮ আসুন আমরা মাত্র একটি ভাববাণীর প্রতি দৃষ্টিপাত করি। মশীহ কখন আসবেন সেই সম্বন্ধে দানিয়েল ৯:২৫ পদে যিহূদীদের বলা হয়। তা বলে: “তুমি জ্ঞাত হও, বুঝিয়া লও, যিরূশালেমকে পুনঃস্থাপন ও নির্ম্মাণ করিবার আজ্ঞা বাহির হওয়া অবধি অভিষিক্ত ব্যক্তি, নায়ক, পর্যন্ত সাত সপ্তাহ আর বাষট্টি সপ্তাহ হইবে।” প্রথম দৃষ্টিতে দেখলে এই ভাববাণীকে রহস্যজনক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সাধারণ অর্থে, এটি আমাদের শুধুমাত্র দুটি তথ্য খুঁজে বার করতে বলে: একটি আরম্ভের ক্ষণ ও সময়ের দৈর্ঘ্য। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কাছে একটা মানচিত্র থাকে যাতে দেখানো হয়েছে যে, কোন ধনসম্পদ “শহরের পার্কেতে একটি পাতকুয়ার পূর্বে ৫০ বাঁও গভীরে পোঁতা আছে”, আপনার হয়ত সেই নির্দেশকে ধাঁধাঁর মতো বলে মনে হতে পারে—বিশেষকরে আপনি যখন জানেন না যে এই পাতকুয়াটি কোথায়, অথবা এক ‘বাঁও’ কতটা দীর্ঘ। আপনি কী ওই দুটি বিষয় খুঁজতে চেষ্টা করবেন না যাতে আপনি ধনটি পেতে পারেন? আমরা একটি আরম্ভের ক্ষণকে শনাক্ত ও সময়ের দৈর্ঘ্যকে পরিমাপ করছি, এছাড়া দানিয়েলের ভাববাণীটি অনেকটা সেইরূপই।
৯, ১০. (ক) যখন থেকে ৬৯ সপ্তাহ গণনা করা হয়েছে সেই আরম্ভের ক্ষণটি কখন? (খ) কত দীর্ঘ ছিল ৬৯ সপ্তাহ, এবং আমরা কি করে তা জানতে পারি?
৯ প্রথমে আমাদের আরম্ভের সেই ক্ষণের, ‘যিরূশালেমকে পুনঃস্থাপন ও নির্ম্মাণ করিবার আজ্ঞা বাহির হওয়া’ সেই তারিখের প্রয়োজন। এরপরে আমাদের জানতে হবে সেই ক্ষণ থেকে কালের দীর্ঘতা, এই ৬৯ (৭ যোগ ৬২) সপ্তাহ ঠিক কতটা দীর্ঘ ছিল। এই দুটি তথ্যই পাওয়া খুব কঠিন নয়। নহিমিয় স্পষ্টরূপে আমাদের বর্ণনা করেন যে যিরূশালেমের চারিদিকে প্রাচীর পুনর্নির্ম্মান করে, অবশেষে পুনস্থাপিত শহর গড়ে তুলতে আজ্ঞা প্রদান করা হয় ‘অর্তখস্ত রাজার অধিকারের বিংশতিতম বৎসরে।’ (নহিমিয় ২:১, ৫, ৭, ৮) এই বাক্যগুলিই আমাদের আরম্ভের ক্ষণ সা. শ. পূ. ৪৫৫ সালে নিয়ে যায়।c
১০ এখন এই ৬৯ সপ্তাহ সম্বন্ধে, সেগুলি কী সাত দিনের আক্ষরিক সপ্তাহ ছিল? না, কারণ মশীহ সা. শ. পূ. ৪৫৫ সালের ঠিক এক বছরের কিছু পরেই আবির্ভূত হননি। তাই বেশীরভাগ বাইবেল পন্ডিতগণ ও বাইবেল অনুবাদগুলি (এমনকি যিহূদী তানাখ এই পদটির পরিপ্রেক্ষিতে ফুটনোটে) স্বীকার করে যে এই সপ্তাহগুলি হল “বছরের” সপ্তাহ। ‘বছরের সপ্তাহ’ অথবা সাত-বছরের চক্রের ধারণাটি প্রাচীন যিহূদীদের কাছে সুপরিচিত ছিল। যেমন তারা প্রতি সপ্তম দিনে বিশ্রামবার পালন করত, ঠিক সেইরকম প্রতি সপ্তম বছরে বিশ্রাম বৎসর পালন করত। (যাত্রাপুস্তক ২০:৮-১১; ২৩:১০, ১১) তাই ৬৯ সপ্তাহ হবে ৬৯ গুণ ৭ বছর অথবা ৪৮৩ বছর। এখন আমাদের গোনা ছাড়া আর কিছুই করতে হবে না। সা.শ.পূ. ৪৫৫ সাল থেকে ৪৮৩ বছর গুণলে তা আমাদের সা.শ. ২৯ সালে নিয়ে যাবে—ঠিক সেই বছরেই যখন যীশু বাপ্তিস্মিত হয়েছিলেন এবং মেশিয়াখ, মশীহ হন!—“সত্তর সপ্তাহ,” সম্বন্ধে ইনসাইট অন দ্যা স্ক্রিপচারস, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৯৯ দেখুন।
১১. যারা বলে যে এটি শুধুমাত্র দানিয়েলের ভাববাণীকে আধুনিকরূপে ব্যাখ্যা করার উপায়, তাদের আমরা কিভাবে উত্তর দিতে পারি?
১১ অনেকে হয়ত প্রতিবাদ করে বলতে পারে যে এটি হল ইতিহাসের সাথে মিল রাখার জন্য শুধুমাত্র আধুনিক উপায়ে ভাববাণীর ব্যাখ্যা করা। যদি তাই হয়, তাহলে যীশুর দিনে কেন লোকেরা সেই সময়েই মশীহের প্রকাশের অপেক্ষা করছিল? খ্রীষ্টীয় ঐতিহাসিক লূক, রোমীয় ঐতিহাসিক ট্যাসিটাস্ ও সিউটোনিয়াস্, যিহূদী ঐতিহাসিক যোসিফাস্ এবং যিহূদী দার্শনিক ফিলো, এরা সকলেই এই সময়ের নিকটবর্তী সময়ে বাস করতেন এবং এইরূপ আশা করার পরিস্থিতি সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেন। (লূক ৩:১৫) বর্তমানে কিছু পন্ডিতগণ দৃঢ়ভাবে বলেন যে, রোমীয় অত্যাচারের কারণেই যিহূদীরা সেই সময়ে মশীহকে চাইছিল ও তাঁর অপেক্ষা করছিল। কিন্তু কিছু শতাব্দী পূর্বে গ্রীকদের পাশবিক অত্যাচারের সময় তাঁর অপেক্ষা না করে, কেন যিহূদীরা সেই সময়েই মশীহের আশা করছিল? কেন ট্যাসিটাস্ বলেন যে এটি ছিল “রহস্যময় ভাববাণী” যা যিহূদীদের, যিহূদিয়া থেকে শক্তিশালী শাসকগণ আসবে ও “সার্বভৌম সাম্রাজ্য লাভ করবে” বলে আশা করতে পরিচালিত করেছিল? আব্বা হিলেল সিলভার, তার বই এ হিস্ট্রি অফ মেসেয়ানিক স্পেকুলেশন ইন ইস্রায়েল-এ স্বীকার করেন যে “মশীহের অপেক্ষা করা হচ্ছিল প্রথম শতাব্দীর সা.শ.-র দ্বিতীয় চতুর্থাংশের কাছাকাছি সময়,” রোমীয় অত্যাচারের জন্য নয়, কিন্তু “সেই সময়ের জনপ্রিয় কালনিরূপণের” জন্য যার কিছুটা অংশ দানিয়েলের পুস্তক থেকে গ্রহণ করে করা হয়েছে।
উর্দ্ধ থেকে শনাক্ত
১২. কিভাবে যিহোবা যীশুকে মশীহরূপে শনাক্ত করেন?
১২ যীশুর মশীহ-পরিচয়ের তৃতীয় ধরনের প্রমাণ হল ঈশ্বর স্বয়ং সাক্ষ্য প্রদান করেন। লূক ৩:২১, ২২, পদানুসারে যীশুর বাপ্তিস্মের পর, বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র ও ক্ষমতাশালী শক্তি, যিহোবা ঈশ্বরের নিজ পবিত্র আত্মা দ্বারা তিনি অভিষিক্ত হন। যিহোবা ঈশ্বর তাঁর নিজ কণ্ঠস্বর দ্বারা স্বীকার করেন যে তিনি তাঁর পুত্র যীশুকে অনুমোদন করেছেন। অপর দুই উপলক্ষে, যিহোবা সরাসরি যীশুর সঙ্গে স্বর্গ থেকে কথা বলেন, যা তাঁর অনুমোদনকে ইঙ্গিত করে: একবার যীশুর তিন প্রেরিতের সম্মুখে, আর একবার দর্শকবৃন্দের সম্মুখে। (মথি ১৭:১-৫; যোহন ১২:২৮, ২৯) তাছাড়া, দূতেদের স্বর্গ থেকে প্রেরণ করা হয় যীশুর পদমর্যাদা, খ্রীষ্ট অথবা মশীহরূপে স্থিরীকৃত করার জন্য।—লূক ২:১০, ১১.
১৩, ১৪. যীশুকে মশীহরূপে তাঁর অনুমোদনকে যিহোবা কিরূপে প্রদর্শন করেন?
১৩ যিহোবা তাঁর অভিষিক্তকে মহান কার্য করার শক্তি প্রদান করে তাঁর প্রতি নিজের অনুমোদন প্রকাশ করেন। উদাহরণস্বরূপ, যীশু ভাববাণী করেন যা হল পূর্ব থেকেই বিশদ ইতিহাসের বিবরণ—তার মধ্যে কিছু আমাদের দিনের প্রতিও প্রযোজ্য।d তিনি আশ্চর্য কাজও করেছিলেন, যেমন ক্ষুধার্ত জনতাকে খাদ্যদান করেন, অসুস্থকে সুস্থ করেন। এমনকি তিনি মৃতদের পুনরুত্থানও করেন। সেই মহান কার্যাবলীর সত্য ঘটনাকে আধার করে কী তাঁর শিষ্যরা শুধুমাত্র গল্পের সৃষ্টি করেছিলেন? প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে ও অনেক সময় তা এক সঙ্গে হাজার হাজার লোকেদের সামনে যীশু তাঁর বহু আশ্চর্য কার্য করেন। তিনি যে এইগুলি করেছিলেন তা এমনকি যীশুর শত্রুরাও অস্বীকার করতে পারেনি। (মার্ক ৬:২; যোহন ১১:৪৭) তাছাড়া, যদি যীশুর অনুসরণকারীরা সেইরূপ গল্প সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক থাকত, তাহলে কেন তারা নিজেদের দোষত্রুটির ক্ষেত্রে অত স্পষ্টভাষী ছিল? সত্যই কী তারা তাদের সৃষ্ট শুধুমাত্র পৌরাণিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করা এক বিশ্বাসের জন্য মৃত্যু বরণ করতেও রাজী ছিল? না, যীশুর আশ্চর্য কার্যগুলি ছিল ইতিহাসের সত্য ঘটনা।
১৪ মশীহ রূপে যীশুর সম্বন্ধে ঈশ্বরের সাক্ষ্য, আরও ব্যাপক হয়। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তিনি এটি নিশ্চিত করেন যে যীশুর মশীহ-পরিচয় যেন লিপিবদ্ধ হয় এবং সমস্ত ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকরূপে অনুবাদিত ও বিতরিত বইয়ের যেন অংশ হয়।
কেন যিহূদীরা যীশুকে গ্রহণ করেনি?
১৫. (ক) যীশুকে মশীহরূপে শনাক্ত করার প্রমাণগুলি কত ব্যাপক ছিল? (খ) যিহূদীদের কোন্ আশা, অনেককে যীশুকে মশীহরূপে অস্বীকার করতে পরিচালিত করে?
১৫ তাহলে সর্বমোট এই তিন পর্যায়ের প্রমাণের মধ্যে, আক্ষরিকরূপে শত শত সত্য ঘটনাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যা যীশুকে মশীহ রূপে শনাক্ত করে। তা কি যথেষ্ট নয়? মনে করুন যে গাড়ী চালাবার লাইসেন্স বা ক্রেডিট কার্ড করার জন্য আর্জি করাতে, আপনাকে বলা হল যে তিন প্রকৃতির শনাক্তকরণ যথেষ্ট নয়—আপনাকে শত শত আনতে হবে। কী অযৌক্তিক! তাহলে নিশ্চয়ই যীশুকে বহুভাবে বাইবেলেতে শনাক্ত করা হয়েছে। তবুও কেন যীশুর স্বজাতীয়েরা, তিনি যে মশীহ ছিলেন তার এই সমস্ত প্রমাণগুলি অস্বীকার করে? কারণ প্রকৃত বিশ্বাসের জন্য প্রমাণ খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা বিশ্বাস সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দান করে না। দুঃখের সাথে বলতে হয় যে বহু লোকে, প্রচুর প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের ইচ্ছানুযায়ী বিশ্বাস করে। মশীহ সম্বন্ধে বেশীরভাগ যিহূদীরা তারা যা চেয়েছিল সেই অনুসারে এক বিশেষ ধারণা করে নিয়েছিল। তারা চেয়েছিল এক রাজনৈতিক মশীহকে, যিনি রোমীয় অত্যাচারের অবসান ঘটিয়ে ইস্রায়েলকে বস্তুবাদী উপায়ে সেই মহিমা পুনঃপ্রদান করবেন যা শলোমনের সময়ে ছিল। তাই, কী করে তারা সেই সাধারণ এক সূত্রধরের পুত্র, এই নাসরতীয়কে গ্রহণ করবে যার রাজনীতি ও ধনের প্রতি কোন আগ্রহই ছিল না? বিশেষকরে, যন্ত্রণা ভোগ করে ও যাতনা দন্ডে কলঙ্ককর মৃত্যুবরণ করার পর, তিনি কী করে মশীহ হতে পারেন?
১৬. মশীহ সম্পর্কে, যীশুর অনুসরণকারীদের ব্যক্তিগত আশাকে কেন রদ্বদল করতে হয়?
১৬ যীশুর নিজ শিষ্যরাই তাঁর মৃত্যুতে বিচলিত হন। তাঁর মহিমাপূর্ণ পুনরুত্থানের পর, তারা প্রকৃতই আশা করেছিলেন যে তিনি তখনই ‘ইস্রায়েলের রাজ্য পুনঃস্থাপন’ করবেন। (প্রেরিত ১:৬) যেহেতু তাদের এই ব্যক্তিগত আশা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি তাই বলে তারা কিন্তু যীশুকে মশীহরূপে প্রত্যাখ্যান করেননি। প্রাপ্তিসাধ্য প্রচুর প্রমাণের উপর ভিত্তি করে তারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন, এবং তাদের বোধগম্যতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; রহস্য উদ্গাটন হয়। তারা বুঝতে পারে যে মশীহ পৃথিবীতে মানবরূপে অল্প সময় থাকাকালে তাঁর সম্বন্ধীয় প্রতিটি ভাববাণীর পরিপূর্ণতা প্রদান করতে পারেনা। কেন একটি ভাববাণী গর্দভ শাবকের উপরে চড়ে নম্ররূপে আগমনের বিষয় বলে, আবার অপরটি মেঘের উপরে মহিমার সাথে তাঁর আগমন সম্বন্ধে বলে! কি করে উভয়ই সঠিক হতে পারে? বাস্তবিকপক্ষে তাঁকে দ্বিতীয়বার আসতেই হবে।—দানিয়েল ৭:১৩; সখরিয় ৯:৯.
কেন মশীহকে মৃত্যুবরণ করতেই হল
১৭. কিভাবে দানিয়েলের ভাববাণী স্পষ্টরূপে বলে যে মশীহকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে, এবং কী কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন?
১৭ আরও, মশীহ সম্বন্ধীয় ভাববাণী এটি স্পষ্ট করে যে মশীহকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে। যেমন, যে ভাববাণীটি বলে যে কখন মশীহের আগমন হবে সেই ভাববাণীই পরবর্তী পদে বলে: “সেই বাষট্টি সপ্তাহের পরে [যা সাত সপ্তাহের পরে] অভিষিক্ত ব্যক্তি উচ্ছিন্ন হবে” (দানিয়েল ৯:২৬) “উচ্ছিন্ন” হওয়ার ক্ষেত্রে এখানে ইব্রীয় শব্দ কারাথ ব্যবহার হয়েছে, যা মোশির নিয়মে মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত। মশীহকে যে মৃত্যুবরণ করতেই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেন? পদ ২৪ আমাদের উত্তর দেয়: “পাপ শেষ করিবার জন্য, অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য, অনন্তকালস্থায়ী ধার্ম্মিকতা আনয়ন করিবার জন্য।” যিহূদীরা এটি ভালভাবে জানত শুধুমাত্র বলিদান, মৃত্যুই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে।—লেবীয়পুস্তক ১৭:১১; তুলনা করুন ইব্রীয় ৯:২২.
১৮. (ক) কিভাবে যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় দেখায় যে মশীহকে যন্ত্রনা ও মৃত্যুভোগ করতে হবে? (খ) এই ভাববাণীটি কোন্ আপাতরূপ আত্মবিরোধী সত্যটির উত্থাপন করে?
১৮ যিশাইয় ৫৩ অধ্যায়, মশীহকে যিহোবার এক বিশেষ দাস হিসাবে বলে, যাকে অপরের পাপ নিবারণের জন্য যন্ত্রনা ও মৃত্যুভোগ করতে হবে। পদ ৫ বলে: “তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন।” মশীহকে “দোষার্থক বলি উৎসর্গ” স্বরূপ মৃত্যুবরণ করতেই হবে বলার পর এই একই ভাববাণী প্রকাশ করে যে এই ব্যক্তিই “দীর্ঘায়ু হইবেন, এবং তাঁহার হস্তে সদাপ্রভুর মনোরথ সিদ্ধ হইবে।” (পদ ১০) এটি কী আপাতরূপে আত্মবিরোধী সত্য নয়? কি করে মশীহ মৃত্যুবরণ করে আবার “দীর্ঘায়ু” হতে পারেন? কি করে তিনি বলিদানরূপে উৎসর্গীকৃত হয়ে পরে ‘যিহোবার মনোরথ সিদ্ধ করতে পারেন’? তাছাড়া তাঁর সম্বন্ধে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাববাণী, যেখানে বলা হয়েছে যে সম্পূর্ণ জগতে শান্তি এবং সুখ আনয়ন করতে তিনি রাজারূপে শাশ্বতকাল রাজত্ব করবেন তার পরিপূর্ণতা না করে, কি করে সত্যিই তিনি মৃত্যুবরণ করতে পারেন ও মৃত অবস্থায় থাকতে পারেন?—যিশাইয় ৯:৬, ৭.
১৯. কিভাবে যীশুর পুনরুত্থান মশীহ সম্বন্ধীয় আপাতরূপ আত্মবিরোধী ভাববাণীটিগুলির বিরোধ দূর করে দেয়?
১৯ এই আপাতরূপে আত্মবিরোধী সত্যটির সমাধান হয় মাত্র একটি দর্শনীয় আশ্চর্যকার্যের মাধ্যমে। যীশু পুনরুত্থিত হন। এই মহিমাময় বাস্তবের প্রত্যক্ষদর্শী হয় শত শত সহৃদয়যুক্ত যিহূদীরা। (১ করিন্থীয় ১৫:৬) প্রেরিত পৌল পরবর্তীকালে লেখেন: “ইনি [যীশু খ্রীষ্ট] পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন, এবং তদবধি অপেক্ষা করিতেছেন, যে পর্যন্ত তাঁহার শত্রুগণ তাঁহার পাদপীঠ না হয়।” (ইব্রীয় ১০:১০, ১২, ১৩) হ্যাঁ, স্বর্গীয় জীবনে যীশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর ও কিছু সময় অবধি “অপেক্ষা” করার পর, অবশেষে তিনি রাজারূপে উপবিষ্ট হবেন ও তাঁর পিতা যিহোবার, শত্রুদের বিরুদ্ধে কার্য করবেন। স্বর্গীয় রাজার ভূমিকায় যীশু যিনি মশীহ, বর্তমানে জীবিত প্রতিটি ব্যক্তির জীবনকে প্রভাবিত করেন। কিরূপে? আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধ এই বিষয় বিবেচনা করবে। (w92 10⁄1)
[পাদটীকাগুলো]
a যখন লূক ৩:২৩ পদ বলে: “যোষেফের পুত্ত্র—ইনি এলির পুত্ত্র,” এখানে স্পষ্টতই “পুত্ত্র”-এর অর্থ বোঝায় “জামাতা” যেহেতু এলি ছিল মরিয়মের জন্মদাতা পিতা।—ইনসাইট অন্ দ্যা স্ক্রিপচারস, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯১৩-১৭.
b যিহূদী ঐতিহাসিক যোসিফাস নিজের বংশ পরিচয় দিতে গিয়ে এই বিষয়টি স্পষ্ট করেন যে ওই প্রকৃতির নথিগুলি ৭০ সা. শ.-র পূর্বে পাওয়া যেত। যিরূশালেম শহর ধ্বংস হওয়ার সাথে, আপাতরূপে এই নথিগুলিও ধ্বংস হয়ে যায়, যা মশীহ-পরিচয়ের পরবর্তী দাবীগুলিকে অপ্রমাণিত করে।
c ইনসাইট অন দ্যা স্ক্রিপচারস খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৮৭ দেখুন।
d প্রাচীন গ্রীক, বাবিলন ও পারস্য উৎস থেকে দৃঢ় প্রমাণ আছে যা নির্দেশ করে যে অর্তখস্ত রাজার প্রথম শাসিত বছর ছিল ৪৭৪ সা. শ. পূ. ইনসাইট অন দ্যা স্ক্রিপচারস, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬১৪-১৬, ৯০০ দেখুন।
ঐ প্রকৃতির এক ভাববাণীতে, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে তাঁর সময়ের পর থেকে মিথ্যা মশীহের উত্থান হবে। (মথি ২৪:২৩-২৬)
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
▫ যীশু প্রতিজ্ঞাত মশীহ কি না সেই সম্বন্ধে প্রমাণগুলি কেন পরীক্ষা করা দরকার?
▫ কিভাবে যীশুর বংশাবলি তাঁর মশীহ-পরিচয়ের সমর্থন করে?
▫ কিভাবে বাইবেলের ভাববাণীগুলি যীশুকে মশীহরূপে প্রমাণ করতে সাহায্য করে?
▫ কি উপায়ে যিহোবা ব্যক্তিগতরূপে যীশুর মশীহ পরিচয়কে দৃঢ় নিশ্চিত করেন?
▫ কেন বহু যিহূদীরা যীশুকে মশীহরূপে প্রত্যাখ্যান করে, এবং কেন এই কারণগুলি অযৌক্তিক?
[Pictures on page 6]
যীশুর বহু আশ্চর্যকার্যের প্রত্যেকটি তাঁর মশীহ-পরিচয়ের আরও অধিক প্রমাণ দেয়