প্রাচ্যের এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে যিহোবা তাঁর লোকেদের শক্তি দেন
যে এলাকাগুলিতে প্রচার কাজ নিষিদ্ধ, যে দেশগুলি যুদ্ধবিগ্রহে জর্জরিত হয়ে পড়েছে এবং যে দেশগুলিতে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে—বস্তুতপক্ষে, পৃথিবীব্যাপী ক্ষেত্রের সর্বত্র—যিহোবা তাঁর লোকেদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭.
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সমৃদ্ধিলাভ
দূরপ্রাচ্যের একটি দ্বীপপুঞ্জে, ১৭ বছর ধরে প্রচার-কাজ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। সাক্ষীরা কি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন? অবশ্যই না! গত মে মাসে, তারা ১০,৭৫৬ প্রকাশকের একটি নতুন শীর্ষ সংখ্যায় পৌঁছান, যাদের মধ্যে ১,২৯৭ জন পূর্ণ-সময় পরিচারক হিসাবে কাজ করছিলেন। জগতের অবস্থার অবনতি হওয়ার সাথে সাথে, দ্বীপপুঞ্জের লোকেরা সত্য জানতে আরও বেশি ইচ্ছুক হয়ে পড়েছেন। সুতরাং, আগ্রহী ব্যক্তিদের বাড়িতে নেওয়া ১৫,৬৫৪ বাইবেল অধ্যয়ন তারা রিপোর্ট করেছেন। তার আগে, যীশুর মৃত্যুর স্মরণার্থে সাবধানে যে সভাগুলি রাখা হয়েছিল, তাতে ২৫,৩৯৭ জন উপস্থিত ছিলেন।
“ঐশিক শিক্ষা” জেলা সম্মেলনগুলি যখন উদ্যাপিত হয়েছিল—এবারেও সাবধানে, স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী—তখন, যুক্তরাষ্ট্রে যে বইগুলি প্রকাশিত হয়েছিল, সেই একই বই স্থানীয় ভাষায় পেয়ে ভাইয়েরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। অনুবাদকেরা, প্রুফ্-পরীক্ষকেরা এবং অন্যেরা স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সময় কাজ করেছিলেন যাতে উপযুক্ত সময়ে তারা শত শত পৃষ্ঠা-সমেত প্রধান প্রকাশনাটি প্রস্তুত করতে পারেন। আর বাইরের একটি সহযোগিতাকারী ছাপাখানা সুন্দরভাবে বইটি ছাপানোর এবং বাঁধানোর কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল। এক হাজারেরও বেশি রঙীন চিত্রের সাথে বইটি পেয়ে, সম্মেলনে যোগদানকারীরা অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। বহু সরকারী কর্মকর্তারা যিহোবার সাক্ষীদের শ্রদ্ধা করেন এবং বিরোধিতা প্রধানত আসে খ্রীষ্টজগতের পাদ্রিদের থেকে। আশা করা হচ্ছে যে শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।
আমেরিকা সম্বন্ধে কী?
পাশ্চাত্যের এই দেশগুলিতে, সাহসের সাথে সমস্যার সম্মুখীন হতে, যিহোবার সাক্ষীরা তাদের প্রাচ্যের ভাইয়েদের সঙ্গে একতাবদ্ধ, আর কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে যিহোবার পবিত্র আত্মা তাদের সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, লাতিন-আমেরিকার একটি দেশ থেকে এই বিবরণটি লক্ষ্য করুন, যেখানকার জঙ্গলের মধ্যে ড্রাগ-ব্যবসায়ীদের নিয়মিত আনাগোনা আছে।
একদল সাক্ষী বাসে করে একটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় গিয়েছিলেন। বাস থেকে নামার সময়ে, তারা লক্ষ্য করে যে সরু একটি পথ গ্রামের বাইরে চলে গেছে। সুতরাং, ভগ্নীদের এবং ছেলেমেয়েদের গ্রামের মধ্যে কাজ করতে দিয়ে, পাঁচজন ভাই দেখতে বেরিয়ে যান সেই মাটির রাস্তাটি কোথায় গেছে। একজন ভাই এই বিবরণ দিয়েছে:
“সেই রাস্তায় দুই ঘন্টা ধরে হাঁটার পরেও খুব কমই বাড়ি দেখা গেল। তারপর হঠাৎ, আটজন মুখ-ঢাকা সশস্ত্র লোক জঙ্গলের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল। তাদের কারো কাছে মেশিন-গান ছিল, অন্যদের কাছে ছিল ভোজালি। আমরা কাদের মধ্যে এসে পড়লাম? আমরা জিজ্ঞাসা করলাম তাদের কী চাই, কিন্তু আমাদের বলা হল চুপ করে থাকতে—কথা না বলে শুধু এগিয়ে যেতে। আমরা তাই করলাম! জঙ্গলের গভীর ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আরও দুই ঘন্টা চলার পরে আমরা একটি ফাঁকা জায়গায় এসে পৌঁছালাম, যেটি স্পষ্টতই একটি সশস্ত্র ঘাঁটি ছিল। সর্বত্র বন্দুকধারী পাহারাদার ছিল। মাঝখানে ভালভাবে তৈরি একটি বাড়ি ছিল এবং সেইদিকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল।
“বসবার পর, সেই ঘাঁটির নেতা বলে যাকে মনে হল, সে আমাদের সাথে কথা বলতে এল। তার পোশাক-পরিচ্ছদ ভাল ছিল, আর সে নিজে বেশ সুশিক্ষিত এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিল। আমাদের মধ্যে একজন ভাইয়ের প্রতি নির্দেশ করে সে তাকে দাঁড়িয়ে উঠতে বলল। তারপর সে তাকে জিজ্ঞাসা করল: ‘[আমাদের] দল সম্বন্ধে তোমাদের কী ধারণা?’ আমরা কোথায় আছি তা ভালভাবে বুঝতে পেরে, সেই ভাই উত্তর দিলেন: ‘আমরা আপনাদের দল সম্বন্ধে জানি কিন্তু সেই বিষয়ে বা অন্য কোন রাজনৈতিক দল সম্বন্ধে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। আমাদের এখানে আসার একমাত্র কারণ হল খ্রীষ্ট যীশুর মাধ্যমে যিহোবা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করা। শীঘ্রই সেই রাজ্য, এই বিধিব্যবস্থার সমস্ত রাজনৈতিক সরকারকে ধ্বংস করবে এবং এই পৃথিবীতে পরমদেশের মত পরিস্থিতিতে মানবজাতির জন্য অপূর্ব আশীর্বাদ নিয়ে আসবে—অন্য কোন মানুষ বা দল যা করতে পারবে না।’
“সেই লোকটির আচরণে পরিবর্তন হল। সে প্রশ্ন করতে লাগল। ‘এই সব তোমরা কোথায় শিখেছ? এইভাবে উত্তর দিতে তোমরা কিভাবে প্রস্তুত হলে?’ প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে, জগতের পরিস্থিতি সম্বন্ধে ভালভাবে সাক্ষ্য দিতে পারলাম এবং দেখালাম যে মানবজাতির একমাত্র আশা বাইবেলেই দেওয়া আছে। রোমীয় ১৩ অধ্যায়ও আমরা ব্যাখ্যা করে দেখালাম—যে আমরা শাসনরত কর্তৃপক্ষদের প্রতি বাধ্যতা দেখাই, কিন্তু যখন যিহোবার এবং তাদের ইচ্ছার মধ্যে বিরোধিতা দেখা দেয়, তখন আমরা প্রথমে আমাদের ঈশ্বর যিহোবাকেই মেনে চলি। অবশেষে, আমাদের কাছে যে বইগুলি ছিল, সেগুলি আমরা তাকে দিলাম। সে তিনটি বই এবং একটি বাইবেল নিল, আর আশ্চর্যের বিষয়, সেইজন্য কিছু চাঁদাও আমাদের দিল। সে বলল যে সেগুলি পড়ে দেখবে।
“তারপর, সেই নেতাটি একজন লোককে ইশারা করল আমাদের ঘাঁটির বাইরে নিয়ে যেতে। শীঘ্রই আমরা ফিরবার পথ ধরলাম, সাক্ষ্য দেওয়ার অন্য একটি ক্ষেত্রে যে সাফল্য আমরা পেয়েছি, সেইজন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ জানালাম।”
যুদ্ধে জর্জরিত আফ্রিকায়
দূরপ্রাচ্য এবং দূরপাশ্চাত্যের মাঝামাঝি, আফ্রিকা মহাদেশ অবস্থিত। বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে যুদ্ধ সেখানকার কিছু দেশে মারামারির ঝড় বইয়ে দিয়েছে। লাইবেরিয়াতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার জন্য, যিহোবার লোকেরা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছে। প্রথমে, ১৯৯২ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ রাজধানীর আশেপাশে মারামারি চলছিল। তারপর, দেশের উত্তরদিকে যুদ্ধ যত ছড়িয়ে পড়ল, অন্যান্য লোকেদের সঙ্গে ভাইয়েরাও জঙ্গলের মধ্যে পালিয়ে যাওয়াতে সম্পূর্ণ মণ্ডলী ভেঙে ফেলতে হয়। কিন্তু, তাদের উদ্যোগ কিছুমাত্র কমে না। পালাবার সময়ও তারা প্রচার করেছিলেন আর এইজন্য দেশের মধ্যাঞ্চলের বহু দূরবর্তী জায়গাতেও খুব ভালভাবে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।
গৃহ ত্যাগ করতে বাধ্য ভাইদের একটি মণ্ডলী, রাবার গাছের ক্ষেতের মাঝখানে একটি সাময়িক কিংডম হল গড়ে তুলেছিল। যুদ্ধসীমান্তের কাছে একটি ছোট শহরে, আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ এড়াবার জন্য দিনের বেলায় অসামরিক লোকেরা আশেপাশের রাবার ক্ষেতগুলিতে পালিয়ে যেত। স্থানীয় ভাইয়েরা (এবং রাজধানী মন্রোভিয়া থেকে আসা বহু প্রকাশকেরা) ক্ষেত্রের পরিচর্যার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং নিয়মিত তাদের দেখা যেত রাবার গাছের নিচে আশ্রিত হাজার হাজার লোকেদের কাছে প্রচার করছেন! যখন প্লেন আসত, ভাই-বোনেরা কাছের গর্তের মধ্যে লাফিয়ে পড়তেন আর বিপদ কেটে যাওয়ার পর তাদের কাজ শুরু করতেন।
আশ্চর্যের বিষয়, এক হাজারের কিছু বেশি যে মণ্ডলীর প্রকাশকেরা সমিতির কাছে রিপোর্ট পাঠাতে পেরেছিলেন, গৃহযুদ্ধ চলা সত্ত্বেও প্রত্যেক মাসে গড়ে ১৮.১ ঘন্টা দিতে এবং ৩,১১১গুলি বাইবেল অধ্যয়ন করাতে সক্ষম হচ্ছেন।
গত চার বছরে, আফ্রিকার ১৮টি দেশে, যিহোবার সাক্ষীদের কাজের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। আর সবচেয়ে আনন্দের বিষয়, মালাউইতে অক্টোবর ১৯৬৭ সালে যিহোবার সাক্ষীদের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, আগস্ট ১২ তারিখে তা তুলে নেওয়া হয়েছে। গোপনে সুসমাচার প্রচারের কাজ সর্বদাই সাফল্য লাভ করেছে, কিন্তু এখন সাক্ষীরা স্বাধীনভাবে তা প্রসারিত করার সুযোগ পেয়েছে, যদিও তাদের অনেক প্রিয় সহকারীদের, যারা নির্যাতনকারীদের হাতে মারা গিয়েছেন, পুনরুত্থানে তাদের আবার সমবর্ধনা জানানোর জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে।
অক্টোবর ৪, ১৯৯২ সালে মোজাম্বিক একটি শান্তি চুক্তি জারি করা হয়। গত ১৬ বছর ধরে বিধ্বংসী যুদ্ধের জন্য আগে যেখানে যাওয়া অসম্ভব ছিল, এখন সেখানে যাওয়া হচ্ছে। কারিওকো এলাকায় ৩৭৫ জন ভাইবোনেদের সাথে আবার যোগাযোগ স্থাপন করা হয়, গত সাত বছর ধরে সংগঠনের সঙ্গে যাদের কোন সংযোগ ছিল না। মিলাঞ্জে একটি বিশেষ সম্মেলন দিন রাখা হয়। মিলাঞ্জ হল একটি জেলার রাজধানী আগে যেখানে কন্সেনট্রেশন ক্যাম্প এবং যিহোবার সাক্ষীদের, যাদের মধ্যে অনেকেই মালাউই থেকে উদ্বাস্তু ছিল, তাদের জন্য একটি “পুনর্শিক্ষা” কেন্দ্র ছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, ২,৯১৫ জন উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে সেই শহরের প্রশাসকও ছিলেন, যিনি যিহোবার সাক্ষীদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। সুতরাং, পূর্বেকার “পুনর্শিক্ষা” কেন্দ্রটি একদিনের জন্য ঐশিক শিক্ষা কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়।
একজন মিশনারী লিখেছেন: “টেটে জেলার উদ্বাস্তু শিবিরে যে ভাইয়েরা ছিলেন, তাদের সম্বন্ধে ইউ এন্ এইচ সি আর-এর (রাষ্ট্রসংঘ উদ্বাস্তু দূতাবাস) একজন প্রতিনিধি একটি আগ্রহজনক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে যিহোবার সাক্ষীরা তাদের নিজেদের শিবির তৈরি করে নিয়েছে, অন্য দলগুলির থেকে আলাদাভাবে। ‘একমাত্র তাদের শিবিরে,’ তিনি বলেছেন ‘সুব্যবস্থা ছিল,’ এবং তারপর তিনি আরও যোগ দেন, ‘যিহোবার সাক্ষীরা পরিষ্কার, সুসংগঠিত এবং শিক্ষিত।’ তারপর প্লেনে করে জঙ্গলের উপর দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে তিনি আমন্ত্রণ জানালেন। আকাশ থেকে, বিমানচালক দুটি শিবির দেখালেন। একটি অগোছালো এবং নোংরা ছিল, কোন পরিকল্পনা ছাড়া মাটির ঘর গায়ে গায়ে তৈরি করা হয়েছে। অন্যটি বেশ ভালভাবে তৈরি সারি বাঁধা ঘরগুলিকে রাস্তা তৈরি করে আলাদা করা হয়েছে। ঝাড়ু দেওয়া চত্বর-সমেত বাড়িগুলির চেহারা পরিষ্কার ছিল। এমনকি কয়েকটিতে বাড়িতে তৈরি করা রঙও লাগানো হয়েছিল। ‘বলুন তো, কোনটি আপনাদের লোকেদের?’ বিমানচালক জিজ্ঞাসা করলেন। এই শিবিরের ভাই-বোনেদের সাথে দেখা করা আমার পক্ষে অত্যন্ত আনন্দের বিষয় ছিল। সাক্ষীদের এই গ্রামে এখন আটটি মণ্ডলী আছে।”
“ঈগলের দেশে”
না, যুক্তরাষ্ট্রের ঈগলের দেশ এটি নয়। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মাঝখানে, একটি ইউরোপীয় দেশ আছে, আলবেনিয়া, সেখানকার সরকারী ভাষায় যার নাম হল স্কাইপেরিয়া, অর্থাৎ “ঈগলের দেশ।” সম্প্রতি, যিহোবার সাক্ষীদের উপর থেকে ৫০-বছর যাবৎ নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, আর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলির ভাইদের সঙ্গে উপাসনার স্বাধীনতার আনন্দে তারা যোগ দিতে পারে। তারা সত্যিই ‘সময় কিনে নিচ্ছে।’ (ইফিষীয় ৫:১৬) রবিবার, মার্চ ২১ তারিখে রাজধানী তিরানের ন্যাশনাল থিয়েটারে আলবেনিয়ার ইতিহাসে প্রথম অধিবেশন, একটি এক দিনব্যাপী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার দুপুরে সাক্ষীদের মধ্যে থেকে ৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক, একটি ভেঙে পড়া থিয়েটারকে পরিষ্কার, উজ্জ্বল সম্মেলন সভাঘরে পরিণত করেছিল। কর্তৃপক্ষেরা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। আর লক্ষ্য করার বিষয় যে ৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে মাত্র ২০ জন ছিল বাপ্তিস্মিত!
আবহাওয়া খুবই ভাল ছিল। বিদেশ থেকে যখন সদস্যেরা আসতে লাগলেন, তখন পারস্পরিক অভিনন্দন—বিশেষত ইঙ্গিত করে এবং জড়িয়ে ধরে—সেই বিশেষ সম্মেলনের দিনটিকে আরও বেশি বিশিষ্ট করে তুলেছিল আকাশের দিকে হাত তুলে, ভাই নাশো ডোরি আরম্ভের প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি ১৯৩০ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন আর এখন প্রায় অন্ধ হয়ে এসেছেন। আলবেনিয়ার ভাষায় কার্যক্রম উপস্থাপনা করা হয়েছিল, যার অধিকাংশই বিদেশী বিশেষ অগ্রগামীরা পরিবেশন করেছিলেন। উপস্থিত ৫৮৫ জন “খ্রীষ্টীয় উৎসর্গীকরণ” গানটি গেয়েছিলেন—এই উপলক্ষে অনুবাদ করা ছয়টি গানের মধ্যে একটি—আর ৪১ জন নতুন ভাই-বোন, সফরকারী গ্রীক ভাইদের দ্বারা স্থানীয় কিংডম হলের মধ্যে নির্মিত একটি জলের ট্যাঙ্কের দিকে হেঁটে গিয়েছিলেন। কত বড় পরিবর্তন! আগে, বাইবেল থাকার জন্য সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হত আর দুই অথবা তিন জনের মধ্যে সভাগুলি সীমিত রাখতে হত।
সম্মেলনের পরের দিন, ওয়াচ টাওয়ার অফিস সেই থিয়েটারের পরিচালকের কাছ থেকে একটি ফোন পেয়েছিল। সাধারণত কে থিয়েটার ব্যবহার করছে সে বিষয়ে তিনি সামান্যই আগ্রহ দেখাতেন। তা হল সহকারী পরিচালকের কাজ। কিন্তু তিনি বলেছিলেন: “ধন্যবাদ জানানোর জন্য আমার অবশ্যই ফোন করা প্রয়োজন ছিল। জায়গাটা আমি এত পরিষ্কার কখনো দেখিনি। যদি বর্ণনা করতে হত তাহলে আমি বলতাম যে গতকাল আমাদের থিয়েটারে স্বর্গ থেকে হাওয়া এসেছিল। যে কোন সময়ে আমাদের হল ব্যবহার করতে হলে দয়া করে আবার আসবেন আর আমরা প্রথমে আপনাদেরই সুযোগ দেব। আসলে আমাদের উচিত প্রত্যেক তিন মাস অন্তর বিনামূল্যে আপনাদের হল ভাড়া দেওয়া।”
সাক্ষীরা আবার শক্তি পেয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে নিজেদের শহরে ফিরে এসেছিলেন এবং যীশুর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন। মাত্র ১৫ দিন পরে, মঙ্গলবার এপ্রিল ৬ তারিখে প্রকাশ্যে সাত জায়গায় স্মরণার্থক সভা প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বেরাট শহরে সভায় উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৭০এ দাঁড়িয়েছে আর সেইজন্য স্থানীয় পাদ্রি রেগে আগুন হয়েছেন। বেরাটের ৩৩ জন প্রকাশকের মধ্যে ২১ জনের বাপ্তিস্ম সম্মেলনে হয়েছিল। স্মরণার্থক সভার জন্য উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য ছিল, প্রধানত বিশেষ অগ্রগামীদের ভাল নেতৃত্বের জন্য।
আলবেনিয়ার যেখানে ক্যাথলিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেই শহর স্কোডারে, যেখানে একটি ব্যাসিলিকা আছে, গির্জা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত করা শুরু করেছিল আর প্রত্যেকটি সংখ্যাতে দেওয়া হত “কিভাবে যিহোবার সাক্ষীদের এড়িয়ে চলা যায়।” শেষ সংখ্যাটিতে বলা হয়েছে: “যিহোবার সাক্ষীরা স্কোডার ছেয়ে ফেলেছে”! সেখানে, দুই জন সাক্ষীর একটি বিশাল বাহিনী ৭৪ জন ভদ্র এবং আন্তরিকভাবে আগ্রহী ব্যক্তিকে স্মরণার্থক সভায় একত্রিত করেছিলেন। স্মরণার্থক বক্তৃতা শুনবার পরে, ১৫টি গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করতে চেয়েছিলেন। আরেকটি শহর, ডুরেসে, যেখানে চারজন সাক্ষীর একটি বাহিনী রয়েছে, সেখানে উপস্থিতি খুবই উৎসাহজনকরূপে ছিল ৭৯ জন।
ক্যাথলিক যুবকদের বিরোধিতার জন্য, যারা পাথর মেরে সাক্ষীদের তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিল, পাহাড়ী গ্রাম কালমেটি ই ফোগেলের স্মরণার্থক সভা একজন স্থানীয় ভাইয়ের বাড়িতে রাখা হয়, যেখানে ২২ জন শান্তিপূর্ণভাবে উপস্থিত ছিল। এই দলটির মধ্যে পাঁচ জন প্রকাশক আছেন যাদের মধ্যে তিন জনের বাপ্তিস্ম তিরানের সম্মেলনে হয়েছিল।
ভ্লোরে, দুইজন যুবক প্রহরীদুর্গের একটি সংখ্যা পেয়েছিলেন, সেটি পড়েছিলেন এবং সমিতিকে চিঠি লিখেছি- লেন: “প্রহরীদুর্গে যে সত্য সম্বন্ধে আমরা পড়েছি, সেইজন্য এখন আমরা নিজেদের যিহোবার সাক্ষী বলি। দয়া করে আমাদের কাছে সাহায্য পাঠান।” দুইজন বিশেষ অগ্রগামীকে সেখানে কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল আর এই যুবকদের মধ্যে একজন শীঘ্রই প্রকাশক হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। ভ্লোরে যে ৬৪ জন স্মরণার্থক সভায় উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন।
একজন আলবেনিয়ান্ ভাই, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে সত্য শিখেছিলেন, ১৯৫০এর দশকে তিনি তার জন্মস্থান, গিরোকাস্টার শহরে ফিরে এসেছিলেন, যেখানে তার মৃত্যু পর্যন্ত যথাসাধ্য কাজ করেছিলেন। তিনি তার ছেলের হৃদয়ে সত্যের বীজ বপন করেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর, তার ছেলে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। উত্তরদিকের আরেকটি গ্রাম থেকে আরেকজন লোকও সাহায্য চেয়েছিলেন, সুতরাং চারজন বিশেষ অগ্রগামীকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। স্মরণার্থক সভার পরের দিন, বুধবার সকালে, তাদের মধ্যে একজন সমিতির তিরানে শাখায় ফোন করে বলেছিলেন: “যিহোবার আত্মা যে কত কিছু করেছে, তা আপনাদের জানাতে আমার আর তর সইছিল না। আমরা খুবই আনন্দিত। স্মরণার্থক সভা সফল হয়েছে।” রাজ্যের প্রকাশকদের সাতজনের একটি দল সমেত উপস্থিতি ছিল ১০৬ জন।
স্মরণার্থক সভায় মোট উপস্থিতি সম্বন্ধে কী? উনিশশো বিরানব্বই সালে, যখন মাত্র ৩০ জন প্রকাশক ছিলেন, উপস্থিতি ছিল ৩২৫. আর ১৯৯৩ সালে, ১৩১ জন প্রকাশক ১,৩১৮ জনকে একত্রিত করেছিলেন। এই দুটি বছরেই, উপস্থিতি ছিল প্রকাশকদের সংখ্যার দশগুণ। অল্প সময়ের মধ্যে “যে ছোট, সে সহস্র” হয়ে উঠেছে, তা দেখা কত উৎসাহের বিষয়!—যিশাইয় ৬০:২২.
“তোমার রজ্জু সকল দীর্ঘ কর”
যিহোবার সাক্ষীদের প্রচার কাজ যখন পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, তখন এই আহবান শোনা যায়: “তুমি আপন তাম্বুর স্থান পরিসর কর, তোমার শিবিরের যবনিকা বিস্তারিত হউক, ব্যয়শঙ্কা করিও না; তোমার রজ্জু সকল দীর্ঘ কর, তোমার গোঁজ সকল দৃঢ় কর। কেননা তুমি দক্ষিণে ও বামে বিস্তীর্ণা হইবে।” (যিশাইয় ৫৪:২, ৩) ঈশ্বরের মহান “শিবির” বিস্তীর্ণ হওয়া—যা তাঁর উপাসকেদের বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীগুলি দ্বারা চিত্রিত করা হয়—তা পূর্ব ইউরোপে অবশ্যই দেখা গেছে, বিশেষত প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়ার দেশগুলিতে। বহু দশক ধরে নির্যাতনের মধ্যে তাঁর সেবকদের শক্তি দিয়ে, এখন যিহোবা তাঁর সাক্ষীদের সেই সামর্থ্য দিয়েছেন যার দ্বারা সংগঠন বেড়ে উঠতে এবং শক্তিশালী হতে পারে।
গত বছরের “ঐশিক শিক্ষা” আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্মেলন জুলাই ২২-২৫ তারিখে, রাশিয়ার মস্কোতে লোকোমোটিভ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ছিল ২৩,৭৪৩ জন। মাত্র দুই বছর আগেও তা যে সম্ভব হবে, কেউ ভাবতে পেরেছিল কি? কিন্তু এখন তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন! জাপান এবং কোরিয়া থেকে ১,০০০এরও বেশি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডা থেকে প্রায় ৪,০০০ এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং অন্যান্য জায়গার ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে আরও হাজার হাজার লোক এসেছিলেন—সত্যিই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটি মিলন। রাশিয়ান্ ভাই-বোনেদের মধ্যে ১৫,০০০এরও বেশি লোকেদের সঙ্গে মুক্তভাবে মেলামেশা করা এদের সকলের জন্য কতই না উৎসাহজনক ছিল! তাদের আনন্দের অন্ত ছিল না।
আশ্চর্যের বিষয়, মোট ১,৪৮৯ জন নতুন সাক্ষী বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সারা বিশ্বে, এই বাপ্তিস্ম-গ্রহণের কথা সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল, এমনকি দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস্এর প্রথম পাতায় একটি ভাল ছবিও দেওয়া হয়েছিল। বাপ্তিস্মের সময় দেওয়া হাততালি যতই জোর হোক না কেন, সবচেয়ে বেশি হাততালি পড়েছিল শেষ বক্তৃতার সময়, যখন সম্মেলনটিকে সফল করবার জন্য ৪,৭৫২ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাবার পর বক্তা বলেছিলেন: “সব থেকে বেশি, আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই!” হ্যাঁ, যিহোবার আত্মা গোড়া ধর্মমতবাদীদের বিরোধিতাকে আটকে রেখেছিল এবং সেই শক্তি দিয়েছিল যা সম্মেলনটিকে একটি আনন্দময় বাস্তবে পরিণত করেছিল।
যাইহোক, ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে, আগস্ট ৫-৮ তারিখে আরও কিছু ঘটতে চলেছিল। এখানেও, ইচ্ছুক কর্মীরা স্টেডিয়ামটিকে সম্পূর্ণ নতুন করে তুলেছিল আর এই বিশাল কিংডম হলে সর্বোচ্চ উপস্থিতি হয়েছিল ৬৪,৭১৪. আবার, সাক্ষীরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য থেকে এসেছিলেন এবং তার মধ্যবর্তী সমস্ত অঞ্চল থেকেও। মুখ্য বক্তৃতাগুলি ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। প্রায় ৫৩,০০০ প্রতিনিধিকে, যারা বিভিন্ন যানবাহন-ব্যবস্থার মাধ্যমে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে স্টেশনে এবং এয়ারপোর্টে দেখা করতে হয় এবং বিভিন্ন হোটেল, স্কুল, লোকেদের বাড়িতে ও জাহাজে তাদের থাকবার জায়গায় নিয়ে যেতে হয়। এই সবকিছুই খুব কম খরচে এবং সহজ, সরল ও দক্ষভাবে করা হয়েছিল, যে জন্য শহরের পুলিশ দপ্তর আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল।
সম্মেলনের অপূর্ব কার্যক্রমের একটি প্রধান বিষয় ছিল বাপ্তিস্মগ্রহণ, যার জন্য সম্পূর্ণ আড়াই ঘন্টা লেগেছিল। বিশাল স্টেডিয়ামে বার বার হাততালি প্রতিধ্বনিত হওয়ার সাথে সাথে, মোট ৭,৪০২ জন নতুন ভাই-বোন যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণকে চিহ্নিত করেছিলেন। এটি ৭,১৩৬ জনের বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগেকার রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়, যা ১৯৫৮ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ২,৫৩,৯২২ জনের উপস্থিতির সময়ে হয়েছিল।
বিচারকাল যত তার পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে চলছে, প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, এমনকি “পৃথিবীর প্রান্ত” থেকে মেষতুল্য ব্যক্তিদের এমনভাবে একতাবদ্ধ করা হচ্ছে, যা মানুষের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। বাস্তবিকই, “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক,” আত্মিক ইস্রায়েলের সাথে সাথে যোগ দিচ্ছে, পাপের প্রায়শ্চিত্তমূলক যীশুর মূল্যবান বলিদানের প্রতি তাদের বিশ্বাস ঘোষণা করতে, যে বলিদান হল যিহোবার সার্বভৌম শাসনকে প্রকাশ করতে যা কিছু হচ্ছে সেই সব কিছুর ভিত্তি।—প্রেরিত ১:৮; প্রকাশিত বাক্য ৭:৪, ৯, ১০.
[Pictures on page 8, 9]
মস্কো এবং কিয়েভে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছিল