ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৪ ৩/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭
  • যিহোবা উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর
  • ১৯৯৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর
  • ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ক্রমশঃ প্রকাশ পায়
  • জ্ঞানালোক প্রাপ্ত
  • অধিকাংশই জানতে চায় না
  • জ্যোতি বাহকগণ—কী উদ্দেশ্যে?
    ১৯৯৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে যিহোবাতে আস্থা রাখুন
    ১৯৯৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • জীবনের এক মহান উদ্দেশ্য আছে
    জীবনের উদ্দেশ্য কী? আপনি কিভাবে তা পেতে পারেন?
  • বাইবেল আমাদের দিনের জরুরি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৪ ৩/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭

যিহোবা উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর

“অবশ্যই, আমি যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছি, তদ্রূপ ঘটিবে; আমি যে মন্ত্রণা করিয়াছি, তাহা স্থির থাকিবে।”—যিশাইয় ১৪:২৪.

১, ২. জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অনেকে কী বলে থাকে?

সর্বত্রই লোকেরা জিজ্ঞাসা করে: “জীবনের উদ্দেশ্য কী?” পশ্চিমী এক রাজনৈতিক নেতা বলেন: “এখন অধিকাংশ মানুষ জিজ্ঞাসা করে, ‘আমরা কারা? আমাদের উদ্দেশ্য কী?’ “জীবনের উদ্দেশ্য কী, এই প্রশ্নের উপর একটি সংবাদপত্রে যুবকদের মতামত জানতে চাওয়া হলে সাধারণ প্রতিক্রিয়া ছিল: “হৃদয় যা চায় তাই করে যাও।” “জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ কর।” “স্ফুর্তিতে ও অমিতব্যয়ীভাবে জীবন যাপন কর।” “সন্তান লাভ কর, সুখী হও এবং তারপর একদিন মারা যাও।” অনেকেই মনে করেছিল যে এইগুলিই ছিল জীবনের সবকিছু। কেউই পৃথিবীতে জীবনের কোন দীর্ঘ-স্থায়ী উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেনি।

২ একজন কনফুশিয়ান্‌ পণ্ডিত বলেন: আমাদের সাধারণ, মানব অস্তিত্বেই, জীবনের চূড়ান্ত অর্থটি খুঁজে পাওয়া যায়।” এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, মানুষকে জন্ম নিতেই হবে, বেঁচে থাকার জন্য ৭০ অথবা ৮০ বছর সংগ্রাম করে যেতেই হবে, তারপর মৃত্যু বরণ করে চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে। একজন ক্রমবিবর্তণবাদী বিজ্ঞানী বলেন: “আমরা হয়ত এক ‘উন্নতমানের’ উত্তর পেতে চাই​—⁠কিন্তু কোন উত্তর নেই।” কারণ এই সকল বিবর্তণবাদীদের কাছে, জীবন হল বেঁচে থাকার জন্য এক সংগ্রাম, মৃত্যুতে যার সব কিছু শেষ হয়ে যায়। এই ধরনের দর্শনবাদ জীবন সম্বন্ধে এক হতাশাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।

৩, ৪. অনেকে জীবনের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি রাখে, তাকে জগৎ পরিস্থিতি কিভাবে প্রভাবিত করেছে?

৩ যখন অনেকেই দেখে যে মানব জীবন অত্যন্ত দুঃখদুর্দশায় পূর্ণ তখন তাদের মনে জীবনের এক উদ্দেশ্য আছে কি না সেই সম্বন্ধে সন্দেহ জাগে। আমাদের দিনে, যেখানে মানুষের শিল্পসংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চশিখরে পৌঁছাবার এবং বৈজ্ঞানিক সাফল্য অর্জন করার কথা, সেখানে সারা জগতে কোটি কোটি মানুষ গুরুতরভাবে অসুস্থ অথবা পুষ্টির অভাবে ভুগছে। এই কারণেই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ শিশু মারা যায়। এই বিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা, তার থেকে চার গুণেরও বেশি দাঁড়ায়। অপরাধ, হিংস্রতা, নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, পরিবারে ভাঙন, এইডস এবং অন্যান্য যৌনসংক্রান্ত রোগ​—⁠এই অপ্রীতিকর বিষয়গুলির তালিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জগতের নেতাদের কাছে এই সকল সমস্যার কোন সমাধান নেই।

৪ এই ধরনের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, একজন মহিলা ব্যক্ত করেন যা অনেকেই বিশ্বাস করে: “জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই। যদি এই সকল মন্দ বিষয়গুলি ঘটেই চলে, তাহলে জীবনের বিশেষ কোন অর্থ থাকতে পারে না।” আর এক প্রবীন ব্যক্তি বলেন: “প্রায় সারা জীবন ধরেই আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, আমি এখানে কেন? যদি কোন উদ্দেশ্য থাকেও, আমি সে সম্বন্ধে কোন চিন্তাই করি না।” যেহেতু বহুসংখ্যক মানুষ জানে না ঈশ্বর যে কেন দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন, তাই দুর্দর্শাপূর্ণ জগৎ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে তাদের জন্য কোন প্রকৃত আশার কারণ দেয় না।

৫. জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কেন এই জগতের ধর্মগুলির নেতারা জটিলতা বাড়িয়ে থাকে?

৫ জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এমন কি ধর্মীয় নেতাদের ও বিভিন্ন মত আছে এবং তারা অনিশ্চিত। লণ্ডনের সেন্ট পল্‌ ক্যাথিড্রালের উচ্চপদস্থ এক প্রাক্তন যাজক বলেন: “বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য খুঁজতে আমি সারা জীবন ধরে সংগ্রাম করেছি। . . . আমি ব্যর্থ হয়েছি।” সত্যই, অনেক পুরোহিতেরা শিক্ষা দেয় যে মৃত্যুতে ভাল লোকেরা স্বর্গে যায় এবং মন্দ লোকেরা অনন্তকালের জন্য এক অগ্নিময় নরকে যায়। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পৃথিবীতে মানবজাতিকে এখনও ক্রমাগত দুঃখকষ্ট ভোগ করে চলতেই হচ্ছে। আর যদি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যই ছিল মানুষ স্বর্গে বাস করবে, তাহলে তিনি প্রথমেই কেন তাদের স্বর্গীয় প্রাণী করে সৃষ্টি করেননি যেমন তিনি দূতদের করেছিলেন আর এইভাবে কেন মানুষকে এক কষ্ট ভোগ করতে দিচ্ছেন? সুতরাং পৃথিবীতে জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হওয়া অথবা এর কোন উদ্দেশ্য আছে তা বিশ্বাস করতে প্রত্যাখ্যান করা স্বাভাবিক।

উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর

৬, ৭. বিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তি সম্পর্কে বাইবেল আমাদের কী বলে?

৬ তথাপি, ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে বিতরিত পুস্তক, পবিত্র বাইবেল, আমাদের বলে যে বিশ্বের সার্বভৌম যিহোবা, হলেন উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর। এটি দেখায় যে বাস্তবিকই, পৃথিবীতে মানবজাতির জন্য, তাঁর একটি দীর্ঘ-স্থায়ী, অনন্ত উদ্দেশ্য আছে। আর যিহোবা যখন কিছু করার উদ্দেশ্য করেন, সেটি ঘটবেই। ঈশ্বর বলেন, বৃষ্টি যেমন বীজকে অঙ্কুরিত করে, “আমার মুখনির্গত বাক্য তেমনি হইবে; তাহা নিষ্ফল হইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না, কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সম্পন্ন করিবে, এবং যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।” (যিশাইয় ৫৫:​১০, ১১) যিহোবা যা কিছু বলেছেন, তিনি তা সম্পন্ন করবেন, “তাহা স্থির থাকিবে।”​—⁠যিশাইয় ১৪:২৪.

৭ আমরা মানুষেরা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে সর্বশক্তিমান তাঁর প্রতিজ্ঞাসকল পূর্ণ করবেন, কারণ ঈশ্বর “মিথ্যাকথনে অসমর্থ।” (তীত ১:২; ইব্রীয় ৬:১৮) যখন তিনি আমাদের বলেন তিনি কিছু করবেন, তাঁর বাক্য হল এক নিশ্চয়তাস্বরূপ যে তা ঘটবেই। সেই কাজ হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তিনি ঘোষণা করেন: “আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়; আমি ঈশ্বর, আমার তুল্য কেহ নাই। আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই, আর বলি, আমার মন্ত্রণা স্থির থাকিবে, আমি আপনার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিব। . . . আমি বলিয়াছি, আর আমি সফল করিব; আমি কল্পনা করিয়াছি, আর আমি সিদ্ধ করিব।”​—⁠যিশাইয় ৪৬:​৯-১১.

৮. যারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বরকে জানতে চায় তারা কী তাঁকে জানতে পারে?

৮ এছাড়া, ‘কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা যিহোবার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁর বাসনা।” (২ পিতর ৩:⁠৯) এই কারণে, তিনি চান না তাঁর বিষয়ে কেউ অজ্ঞ থাকুক। অসরিয় নামে এক ভাববাদী বলেন: “যদি তোমরা তাঁহার [ঈশ্বরের] অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিবেন; কিন্তু যদি তাঁহাকে ত্যাগ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে ত্যাগ করিবেন।” (২ বংশাবলি ১৫:​১, ২) অতএব, যারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য জানতে চায় অবশ্যই তারা তা পেতে পারে, যদি তারা তাঁকে অন্বেষণ করার জন্য প্রচেষ্টা করে।

৯, ১০. (ক) যারা ঈশ্বরকে জানতে চায় তাদেরকে কী যোগান হয়েছে? (খ) ঈশ্বরের বাক্যের অনুসন্ধান আমাদের কী করতে সমর্থ করে?

৯ কোথায় অন্বেষণ করবে? যারা প্রকৃতই ঈশ্বরের অন্বেষণ করছে, তিনি তাদের তাঁর বাক্য, বাইবেল দিয়েছেন। তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে, সেই একই কার্যকারী শক্তি, যে শক্তিকে তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে ব্যবহার করেছিলেন, সেই শক্তির দ্বারা ঈশ্বর বিশ্বস্ত মানুষদের সেইগুলি লিখতে পরিচালিত করেন যা তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে আমাদের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল ভাববাণীর বিষয়ে প্রেরিত পিতর বলেন: “ভাববাণী কখনও মনুষ্যের ইচ্ছাক্রমে উপনীত হয় নাই, কিন্তু মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহাই বলিয়াছেন।” (২ পিতর ১:২১) একইভাবে, প্রেরিত পৌল ঘোষণা করেন: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।”​—⁠২ তীমথিয় ৩:​১৬, ১৭; NW ১ থিষলনীকীয় ২:১৩.

১০ লক্ষ্য করুন যে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আংশিকভাবে অথবা অসম্পূর্ণভাবে নয় কিন্তু “সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ব, সম্পূর্ণভাবে সজ্জীভূত” হতে সক্ষম করে। এটি একজনকে এই বিষয়ে নিশ্চিত করে যে ঈশ্বর কে, তাঁর উদ্দেশ্য কী এবং তাঁর দাসেদের কাছে থেকে তিনি কী আশা করেন সেই সম্বন্ধে জানতে। ঈশ্বরের লিখিত বই থেকে তা আশা করা যেতে পারে। আর এটিই হচ্ছে একমাত্র উৎস যেখানে ঈশ্বরের বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে আমরা অন্বেষণ করতে পারি। (হিতোপদেশ ২:​১-৫; যোহন ১৭:⁠৩) তা করার দ্বারা, আমরা আর ‘বালক থাকি না, মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ত্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরীক্রমে তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত হই না।’ (ইফিষীয় ৪:১৩. ১৪) গীতরচক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন: “তোমার [ঈশ্বরের] বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।”​—⁠গীতসংহিতা ১১৯:​১০৫.

ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ক্রমশঃ প্রকাশ পায়

১১. মানবজাতির কাজে যিহোবা কিভাবে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন?

১১ মানব পরিবারের অতি প্রারম্ভেই যিহোবা এই পৃথিবীর ও মানুষের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন। (আদিপুস্তক ১:​২৬-৩০) কিন্তু যখন আমাদের প্রথম পিতামাতা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করে, তখন মানবজাতি আধ্যাত্মিক অন্ধকারে ও মৃত্যুতে পতিত হয়। (রোমীয় ৫:১২) তা সত্ত্বেও, যিহোবা জানতেন যে কেউ কেউ থাকবে যারা তাঁকে সেবা করতে চাইবে। সেইজন্য, বিগত শতাব্দীগুলিতে তিনি তাঁর বিশ্বস্ত দাসেদের কাছে তাঁর উদ্দেশ্য ক্রমশঃ ব্যক্ত করেছিলেন তারা হলেন হনোক (আদিপুস্তক ৫:২৪; যিহূদা ১৪, ১৫), নোহ (আদিপুস্তক ৬:⁠৯, ১৩), অব্রাহাম (আদিপুস্তক ১২:​১-৩) এবং মোশি (যাত্রাপুস্তক ৩১:১৮; ৩৪:​২৭, ২৮)। ঈশ্বরের ভাববাদী আমোষ লেখেন: “প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।”​—⁠আমোষ ৩:⁠৭; দানিয়েল ২:​২৭, ২৮.

১২. যীশু কিভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের উপর আরও আলোক বষর্ণ করেন?

১২ এদনে বিদ্রোহের প্রায় ৪,০০০ বছর পরে, যখন ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট পৃথিবীতে ছিলেন, যিহোবার উদ্দেশ্য আরও বিশদভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পৃথিবীর উপর শাসন করতে এক স্বর্গীয় রাজ্যের প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য প্রকাশ হয়। (দানিয়েল ২:৪৪) যীশু রাজ্যকেই তাঁর শিক্ষার মূল বিষয় করেছিলেন। (মথি ৪:১৭; ৬:১০) তিনি এবং শিষ্যেরা শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, রাজ্যের অধীনে পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে। পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হবে, যাতে সিদ্ধ মানুষেরা বসবাস করবে যারা চিরকাল বেঁচে থাকবে। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; মথি ৫:৫; লূক ২৩:৪৩; ২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:⁠৪) এছাড়া, ঈশ্বর-দত্ত শক্তিতে অলৌকিক কাজগুলি সম্পাদন করা দ্বারা যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা প্রদর্শন করেছিলেন যে সেই নতুন জগতে কী ঘটবে।​—⁠মথি ১০:​১, ৮; ১৫:​৩০, ৩১; যোহন ১১:​২৫-৪৪.

১৩. মানবজাতির সাথে ঈশ্বরের ব্যবহারের ক্ষেত্রে, ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে কী পরিবর্তন ঘটে?

১৩ যীশুর মৃত্যুর ৫০ দিন পর, সা.শ. ৩৩ খ্রীষ্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে খ্রীষ্টের অনুসরণকারীদের মণ্ডলীর উপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়। যিহোবার চুক্তিবদ্ধ লোক হিসাবে অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলের জায়গায় এটিকে পুর্নস্থাপন করা হয়। (মথি ২১:৪৩; ২৭:৫১; প্রেরিত ২:​১-৪) ঐ সময়ে পবিত্র আত্মার বর্ষণ প্রমাণ দেয় যে, সেই সময় থেকে ঈশ্বর এই নতুন প্রতিনিধির মাধ্যমে তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সত্য প্রকাশ করবেন। (ইফিষীয় ৩:১০) সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সাংগঠনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়।​—⁠১ করিন্থীয় ১২:​২৭-৩১; ইফিষীয় ৪:​১১, ১২.

১৪. সত্যানুসন্ধানীরা কিভাবে সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে শনাক্ত করতে পারে?

১৪ বর্তমান, তারা ক্রমাগত ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ, প্রেম প্রদর্শন করার দ্বারা সত্যানুসন্ধানীরা সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে শনাক্ত করতে পারে। (১ যোহন ৪:​৮, ১৬) বাস্তবিকই, ভ্রাতৃপ্রেম হল সত্য খ্রীষ্টতত্ত্বের একটি শনাক্তিকরণ চিহ্ন। যীশু বলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য। আমার আজ্ঞা এই, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, যেমন আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি।” (যোহন ১৩:৩৫; ১৫:১২) আর যীশু তাঁর শ্রোতাদের স্মরণ করিয়ে দেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু।” (যোহন ১৫:১৪) সুতরাং ঈশ্বরের সত্য দাস হল তারাই যারা প্রেমের আইনটি মেনে চলে। তারা এই বিষয়ে শুধুমাত্র কথাই বলে না, কারণ “কর্ম্মবিহীন বিশ্বাসও মৃত।”​—⁠যাকোব ২:২৬.

জ্ঞানালোক প্রাপ্ত

১৫. ঈশ্বরের দাসেরা কিসের বিষয়ে সুনিশ্চিত থাকতে পারে?

১৫ যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে, সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আরও বেশি জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত। তিনি তাঁর অনুগামীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন: “সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দেবে।” (যোহন ১৪:​২৬, NW) যীশু আরও বলেন: “দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:২০) এইভাবে, ঈশ্বরের দাসেদের মধ্যে, ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য বিষয়ক সত্যের জ্ঞানালোক বৃদ্ধি পাচ্ছে। হ্যাঁ, “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।”​—⁠হিতোপদেশ ৪:১৮.

১৬. ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুসারে আমাদের স্থান কোথায়, এই সম্বন্ধে আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোকপ্রাপ্তি আমাদের কী বলে?

১৬ আজকের দিনে, সেই আধ্যাত্মিক জ্যোতি আরও আলোকিত হয়েছে, কারণ আমরা এমন একটি সময়ে আছি যখন বাইবেলের বহু ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণতা লাভ করছে অথবা পরিপূর্ণতার দোরগোড়ায়। এগুলি আমাদের দেখায় যে আমরা এই মন্দ বিধি-ব্যবস্থার “শেষকালে” বাস করছি। এটি হল সেই সময়কাল যাকে “যুগান্ত” বলে; এরপরে ঈশ্বরের নতুন জগৎ আসবে। (২ তীমথিয় ৩:​১-৫, ১৩; মথি ২৪:​৩-১৩) দানিয়েল যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য শীঘ্রই “ঐ সকল [বর্তমানে অস্তিত্বপ্রাপ্ত] রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”​—⁠দানিয়েল ২:৪৪.

১৭, ১৮. কোন্‌ মহান ভবিষ্যদ্বাণী এখন পরিপূর্ণ হচ্ছে?

১৭ এখন যে সকল ভবিষ্যদ্বাণীগুলি পরিপূর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে মথি ২৪ অধ্যায়ের ১৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণীটি পরিপূর্ণতা লাভ করছে। সেখানে যীশু বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” সারা জগতে, লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষীদের দ্বারা সেই রাজ্য-প্রচার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। আর প্রতি বছর হাজার হাজার ব্যক্তিরা তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে। যিশাইয় ২:​২, ৩ পদের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে এটির মিল দেখা যায়, যেখানে বলে যে, এই মন্দ জগতের “শেষকালে” যিহোবার সত্য উপাসনা করার জন্য, সমস্ত জাতি থেকে লোকেরা আসবে এবং ‘তিনি তাহাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন আর তাহারা তাঁহার মার্গে গমন করিবে।’

১৮ এই নবাগতেরা যিহোবার উপাসনা করতে “মেঘের ন্যায়” একত্রিত হচ্ছে, যেমন যিশাইয় ৬০ অধ্যায় ৮ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। ২২ পদ আরও বলে: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।” প্রমাণ দেখায়, সেই সময়কাল হল এখনই। আর নবাগতেরা সুনিশ্চিত হতে পারে যে, যিহোবার সাক্ষীদের সাথে মেলামেশার দ্বারা তারা সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সান্নিধ্যে এসেছে।

১৯. আমরা কেন বলি যে, নবাগতেরা যারা যিহোবার সাক্ষীদের সাথে মেলামেশা করছে তারা সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে?

১৯ আমরা কেন নিঃসন্দেহে তা বলতে পারি? কারণ এই নবাগতেরা এবং ইতিমধ্যেই যে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা যিহোবার সংগঠনে আছেন তারা ঈশ্বরের কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করছেন। এর অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বরীয় প্রেমের আইনের সাথে মিল রেখে তাদের জীবনযাপন করা। এর একটি প্রমাণ হিসাবে, এই খ্রীষ্টানেরা ‘আপন আপন খড়্গ ভেঙ্গে লাঙ্গলের ফাল গড়েছে, ও আপন আপন বড়শা ভেঙ্গে কাস্তা গড়েছে এবং তারা আর যুদ্ধ শেখে না।’ (যিশাইয় ২:⁠৪) সারা জগতে সকল যিহোবার সাক্ষীরা এটি করেছে কারণ ঈশ্বরের দাসেরা প্রেম প্রদর্শন করে। এর অর্থ তারা কখনও পরস্পরের বিরুদ্ধে অথবা অন্য যে কোন লোকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে না। এই ক্ষেত্রে তারা অদ্বিতীয়​—⁠জগতের ধর্মগুলির থেকে আলাদা। (যোহন ১৩:​৩৪, ৩৫; ১ যোহন ৩:​১০-১২, ১৫) তারা বিবাদ-সৃষ্টিকর জাতীয়তাবাদে জড়িত হয় না, কারণ তারা প্রেমের দ্বারা বদ্ধ বিশ্ব ভ্রাতৃপ্রেম গড়ে তোলে যা হল, “সিদ্ধির যোগবন্ধন”।​—⁠কলসীয় ৩:১৪; মথি ২৩:৮; ১ যোহন ৪:​২০, ২১.

অধিকাংশই জানতে চায় না

২০, ২১. মানবজাতির বিরাট অংশ কেন আধ্যাত্মিক অন্ধকারে রয়েছে? (২ করিন্থীয় ৪:৪; ১ যোহন ৫:১৯)

২০ যখন আধ্যাত্মিক আলো ঈশ্বরের দাসেদের মধ্যে উজ্জ্বল হচ্ছে, তখন জগতের অবশিষ্ট লোকেরা আরও বেশি গভীর আধ্যাত্মিক অন্ধকারের দিকে নেমে যাচ্ছে। তারা যিহোবা অথবা তাঁর উদ্দেশ্য জানে না। ঈশ্বরের ভাববাদী এই সময়কে বর্ণনা করেন যখন তিনি বলেন: “দেখ, অন্ধকার পৃথিবীকে, ঘোর তিমির জাতিগণকে, আচ্ছন্ন করিতেছে।” যিশাইয় ৬০:⁠২) এটি ঘটছে কারণ লোকেরা ঈশ্বর সম্বন্ধে শিখতে আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করে না, কিংবা তাঁকে খুশি করতে চেষ্টা করার ইচ্ছাও দেখায় না। যীশু বলেন: “আর সেই বিচার এই যে, জগতে জ্যোতি আসিয়াছে, এবং মনুষ্যেরা জ্যোতি হইতে অন্ধকার অধিক ভাল বাসিল, কেননা তাহাদের কর্ম্ম সকল মন্দ ছিল। কারণ যে কেহ কদাচরণ করে, সে জ্যোতি ঘৃণা করে, এবং জ্যোতির নিকেট আইসে না, পাছে তাহার কর্ম্ম সকলের দোষ ব্যক্ত হয়।”​—⁠যোহন ৩:​১৯, ২০.

২১ এই ধরনের ব্যক্তিরা প্রকৃতরূপে ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে আগ্রহী নয়। পরিবর্তে, তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছামত চলতে তাদের জীবনকে কেন্দ্রীভূত করে। ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অবহেলা করে তারা নিজেদের এক বিপদজনক স্থানে রাখে, কারণ তাঁর বাক্য বলে: “যে ব্যবস্থা শ্রবণ হইতে আপন কর্ণ ফিরাইয়া লয়, তাহার প্রার্থনাও ঘৃণাস্পদ।” (হিতোপদেশ ২৮:⁠৯) তারা তাদের পথ বেছে নেওয়ার ফল ভোগ করবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।”​—⁠গালাতীয় ৬:⁠৭.

২২. বহুসংখ্যক লোক যারা ঈশ্বরকে জানতে চায় তারা এখন কী করছে?

২২ যাইহোক, বহুসংখ্যক ব্যক্তিরা আছে যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে চায়, যারা আন্তরিকভাবে তাঁর অন্বেষণ করে এবং তাদেরকে তাঁর নিকটে আনা হয়: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” যাকোব ৪:⁠৮ পদ বলে। এই ধরনের ব্যক্তিদের যীশু বলেন: “কিন্তু যে সত্য সাধন করে, সে জ্যোতির নিকেট আইসে, যেন তাহার কর্ম্ম সকল ঈশ্বরে সাধিত বলিয়া সপ্রকাশ হয়।” (যোহন ৩:২১) আর যারা জ্যোতিতে আসে তাদের জন্য কী অপূর্ব উদ্দেশ্য না ঈশ্বর রেখেছেন! আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধ রোমাঞ্চকর প্রত্যাশাগুলি আলোচনা করবে।

আপনি কিরূপে উত্তর দেবেন?

▫ জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অনেকেই কী বলে থাকে?

▫ এক উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর হিসাবে যিহোবা কিভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন?

▫ সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে কোন্‌ মহান জ্ঞানালোকপ্রাপ্তি ঘটে?

▫ বর্তমানে সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে কিভাবে শনাক্ত করা যেতে পারে?

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার