ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৪ ৩/১ পৃষ্ঠা ২৮-৩২
  • তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে যিহোবাতে আস্থা রাখুন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে যিহোবাতে আস্থা রাখুন
  • ১৯৯৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • কিসের ভুল?
  • ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি
  • তারা যিহোবাতে আস্থা রেখেছিলেন
  • খ্রীষ্টান সাক্ষীরা ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখে
  • যিহোবা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের প্রতি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলি পরিপূর্ণ করেন
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বিশ্বাসের এক পরীক্ষা
    বাইবেল থেকে তুমি যা শিখতে পার
  • যিহোবা তাকে “আমার বন্ধু” বলেছিলেন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৬
  • “আপন আপন হৃদয় সুস্থির কর”
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৪ ৩/১ পৃষ্ঠা ২৮-৩২

তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে যিহোবাতে আস্থা রাখুন

“ধার্ম্মিকেরা পৃথিবীর অধিকারী হবে, তারা চিরকাল সেখানে বাস করবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৯, NW.

১. মানুষ ও এই পৃথিবীর জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য কী?

যিহোবা যখন আমাদের প্রথম পিতামাতা, আদম ও হবাকে সৃষ্টি করেন তখন তিনি তাদের সিদ্ধরূপে তৈরি করেন। আর তিনি তাদের সৃষ্টি করেছিলেন তাদের এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য​—⁠যদি তারা তাঁর নিয়ম মেনে চলত। (আদিপুস্তক ১:​২৬, ২৭; ২:১৭) এছাড়া, ঈশ্বর তাদের পরমদেশীয় পরিবেশের মধ্যে রেখেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৮) ফলে তাদের বংশধরেরা অবশেষে সারা জগতে পরিব্যাপ্ত হতে পারত এবং এই পৃথিবী সিদ্ধ, সুখী মানবজাতির দ্বারা পূর্ণ হয়ে পরমদেশে পরিণত হতে পারত। মানব পরিবারের কী উত্তম এক আরম্ভই না ছিল! “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।”​—⁠আদিপুস্তক ১:৩১.

২. মানুষের অবস্থা কোন্‌ প্রশ্নগুলি উত্থিত করে?

২ তথাপি, হাজার হাজার বছর ধরে মানবজাতি যে অবস্থায় রয়েছে তার সাথে ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্যের কোন মিল নেই। মানবজাতি সিদ্ধতা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে এবং বাস্তবিকই তারা সুখী নয়। জগৎ পরিস্থিতি দুর্দশাগ্রস্ত হচ্ছে আর যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, আমাদের দিনে তা অস্বাভাবিকভাবে অত্যধিক মন্দ হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:​১-৫, ১৩) সুতরাং কিভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নিকট ভবিষ্যতে সফল হবে? আরও বেশ কিছু সময় ধরে কি এই দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতি ক্রমাগত চলতে থাকবে?

কিসের ভুল?

৩. মানবজাতির বিদ্রোহকে যিহোবা কেন তৎক্ষণাৎ শেষ করেননি?

৩ ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের যথার্থ জ্ঞান যাদের আছে তারা জানে কেন যিহোবা পৃথিবীতে এই মন্দ পরিস্থিতি থাকতে দিয়েছেন। তারা এও জানে তিনি এই সম্বন্ধে কী করবেন। বাইবেলের বিবরণ থেকে তারা শিখেছে যে আমাদের প্রথম পিতামাতা স্বাধীন মনোনয়নের অপূর্ব উপহারকে, যা ঈশ্বর মানুষদের দিয়েছিলেন, তা অপব্যবহার করে। (তুলনা করুন ১ পিতর ২:১৬) তারা ভুলভাবে ঈশ্বরের থেকে স্বাধীন হওয়ার পথ বেছে নেয়। (আদিপুস্তক ২ ও ৩ অধ্যায়) তাদের বিদ্রোহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি তুলেছিল, যেমন: সার্বিক সার্বভৌমের কি মানুষের উপর শাসন করার অধিকার আছে? তাঁর শাসন কি তাদের জন্য মঙ্গলজনক ঈশ্বরের তত্ত্বাবধান ব্যাতীত মানুষ কি শাসন করতে সক্ষম? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়ার একমাত্র পথ হল মানুষকে শতাব্দী ধরে শাসন করতে দেওয়া। নিঃসন্দেহে এর ফলাফল দেখাবে যে, তাদের নির্মাতার কাছ থেকে সরে গিয়ে মানুষ সফল হতে পারে কি না।

৪, ৫. (ক) ঈশ্বরের শাসন প্রত্যাখ্যান করায়, মানুষ কী ফল ভোগ করছে? (খ) অতিবাহিত সময় নিঃসন্দেহে কী প্রদর্শন করেছে?

৪ যখন আদম ও হবা ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে, তিনি তাদের আর সিদ্ধতা ভোগ করতে দেননি। তাঁর সমর্থন না থাকায়, তাদের অবনতি ঘটে। ফল হয় অসিদ্ধতা, বৃদ্ধাবস্থা এবং পরিশেষে মৃত্যু। বংশগতির নিয়মানুসারে, আমাদের প্রথম পিতামাতা আমাদের এবং তাদের সকল ধংশধরদের ঐ ক্ষতিকর বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদান করে। (রোমীয় ৫:১২) আর হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের শাসনের ফলই বা কী হয়? এটি হয়েছে সর্বনাশা, ঠিক যেমন উপদেশক ৮:৯ পদ যথাযথভাবে বর্ণনা করে: “একজন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।”

৫ সময়ের ধারা দেখায় যে, সৃষ্টিকর্তা বিনা কৃতকার্যতার সাথে মানুষের বিষয়সকল পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অনুপ্রাণিত বাইবেল লেখক যিরমিয় ঘোষণা করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”​—⁠যিরমিয় ১০:২৩; দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:​৪, ৫; উপদেশক ৭:২৯.

ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি

৬, ৭. (ক) হাজার হাজার বছরের ইতিহাস কি যিহোবার উদ্দেশ্যের কোন পরিবর্তন করেছে? (খ) যিহোবার উদ্দেশ্যের মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত হয়?

৬ এত দুষ্টতা ও দুঃখকষ্টে পূর্ণ মানব ইতিহাসের হাজার হাজার বছর অতিক্রান্ত হলেও, ঈশ্বরের পরিকল্পনার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? তাঁর বাক্য বলে: “কেননা আকাশমণ্ডলের সৃষ্টিকর্ত্তা সদাপ্রভু, স্বয়ং ঈশ্বর, যিনি পৃথিবীকে সংগঠন করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তাহা স্থাপন করিয়াছেন, ও অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনি এই কথা কহেন, আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়।” (যিশাইয় ৪৫:১৮) সুতরাং ঈশ্বর পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছিলেন মানুষ বাস করবে বলে এবং এখনও সেটিই তাঁর উদ্দেশ্য।

৭ যিহোবা পৃথিবীকে কেবলমাত্র বসবাসের জন্য সৃষ্টি করেননি কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তা যেন এক পরমদেশে পরিণত হয় যা সিদ্ধ, সুখী মানুষ উপভোগ করতে পারে। সেই কারণে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে “নূতন পৃথিবী” এক নতুন মানব সমাজ হবে, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) আর প্রকাশিত বাক্য ২১:৪ পদে, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে যে তাঁর নতুন জগতে, “তিনি তাহাদের [মানবজাতির] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” এই কারণেই যীশু পৃথিবীতে আগত নতুন জগতকে “পরমদেশ” বলতে পেরেছিলেন।​—⁠লূক ২৩:৪৩.

৮. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন?

৮ যেহেতু যিহোবা হলেন এই মহা বিশ্বের সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী সৃষ্টিকর্তা, তাই কেউই তাঁর উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করতে পারবে না। “বাহিনীগণের সদাপ্রভু শপথ করিয়া বলিয়াছেন, অবশ্যই, আমি যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছি, তদ্রূপ ঘটিবে; আমি যে মন্ত্রণা করিয়াছি, তাহা স্থির থাকিবে।” (যিশাইয় ১৪:২৪) তাই, ঈশ্বর যখন বলেছেন তিনি এই পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবেন যেখানে সিদ্ধ মানুষ বাস করবে, তখন তাই হবে। যীশু বলেন: “সুখী যারা মৃদুশীল, কারণ তারা দেশের অধিকারী হবে।” (মথি ৫:⁠৫, NW; তুলনা করুন গীতসংহিতা ৩৭:২৯) সেই প্রতিজ্ঞার পূর্ণতার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে সেই অনুসারে চলতে পারি। বাস্তবিকই, এরজন্য আমরা আমাদের জীবনে যে কোন ঝুঁকি নিতে পারি।

তারা যিহোবাতে আস্থা রেখেছিলেন

৯. অব্রাহাম কী করেছিলেন যা দেখায় যে যিহোবার প্রতি তার আস্থা ছিল?

৯ সারা ইতিহাসে বহু ঈশ্বর-ভীরু ব্যক্তি, পৃথিবীতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন কারণ তারা দৃঢ় নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি তা পরিপূর্ণ করবেন। যদিও হয়ত তাদের জ্ঞান ছিল সীমিত, তারা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করতেই তাদের জীবনকে গড়ে তুলেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, অব্রাহাম, যিনি যীশু পৃথিবীতে আসার প্রায় ২,০০০ বছর আগে বাস করতেন​—⁠বাইবেল লেখা শুরু হওয়ার বহু বছর আগে জীবিত ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হতে যিহোবাতে আস্থা রেখেছিলেন। সম্ভবতঃ, অব্রাহাম তার বিশ্বস্ত পিতৃপুরুষ শেমের কাছ থেকে সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে শিখেছিলেন, যিনি আবার নোহের কাছ থেকে শিখেছিলেন। তাই, ঈশ্বর যখন অব্রাহামকে কলদীয়াতে সমৃদ্ধশীল উর শহর ছেড়ে অপরিচিত এবং বিপদজনক দেশ কনানে যেতে বলেন, তখন সেই কুলপতি তিনি যিহোবাতে নির্ভর করতে পারেন আর সেইজন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৮) উপযুক্ত সময়ে যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব।”​—⁠আদিপুস্তক ১২:⁠২.

১০, ১১. অব্রাহাম কেন তার একমাত্র পুত্র, ইস্‌হাককে উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক ছিলেন?

১০ ইস্‌হাকের জন্মের পর অব্রাহামের প্রতি কী ঘটে? যিহোবা অব্রাহামকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ইস্‌হাক ছিল সেই মাধ্যম যার দ্বারা তার বংশধরেরা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে মহাজাতিতে পরিণত হবে। (আদিপুস্তক ২১:১২) কিন্তু, অবশ্যই এটিকে সম্পূর্ণরূপে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হবে যখন যিহোবা অব্রাহামকে বলে, বিশ্বাসের পরীক্ষা হিসাবে, তার পুত্র ইস্‌হাককে উৎসর্গ করতে। (আদিপুস্তক ২২:⁠২) তথাপি, যিহোবাতে সম্পূর্ণ আস্থা রেখে, অব্রাহাম তাঁর ইচ্ছাপূরণ করতে পদক্ষেপ নেন, ইস্‌হাককে বলি দিতে প্রকৃতপক্ষে ছুরি তুলে নেন। শেষ মুহূর্তে, ঈশ্বর অব্রাহামকে বিরত করতে এক দূতকে পাঠান।​—⁠আদিপুস্তক ২২:​৯-১৪.

১১ অব্রাহাম কেন এত বাধ্য ছিলেন? ইব্রীয় ১১:​১৭-১৯ পদ ব্যক্ত করে: “বিশ্বাসে অব্রাহাম পরীক্ষিত হইয়া ইস্‌হাককে উৎসর্গ করিয়াছিলেন; এমন কি, যিনি প্রতিজ্ঞা সকল সানন্দে গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি আপনার সেই একজাত পুত্ত্রকে উৎসর্গ করিতেছিলেন, যাঁহার বিষয়ে তাঁহাকে বলা হইয়াছিল, ‘ইস্‌হাককে তোমার বংশ আখ্যাত হইবে’; তিনি মনে স্থির করিয়াছিলেন, ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও উত্থাপন করিতে সমর্থ; আবার তিনি তথা হইতে দৃষ্টান্তরূপে তাঁহাকে ফিরিয়া পাইলেন।” রোমীয় ৪:​২০, ২১ পদ অনুরূপে বর্ণনা করে: “ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি লক্ষ্য করিয়া [অব্রাহাম] অবিশ্বাস বশতঃ সন্দেহ করিলেন না; . . . নিশ্চয় জানিলেন, ঈশ্বর যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা সফল করিতে সমর্থও আছেন।”

১২. অব্রাহাম তার বিশ্বাসের জন্য কিভাবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন?

১২ অব্রাহাম তার বিশ্বাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলেন শুধুমাত্র ইস্‌হাককে ফিরে পেয়ে এবং তার মাধ্যমে “মহাজাতি” আনয়ন করার দ্বারা নয়, কিন্তু অন্যভাবেও। ঈশ্বর অব্রাহামকে বলেছিলেন: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ।” (আদিপুস্তক ২২:১৮) কিভাবে? ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা অব্রাহামের বংশেই আসবে। সেই রাজ্য শয়তানের অধীনের এই দুষ্ট জগতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে নিশ্চিহ্ন করবে। (দানিয়েল ২:৪৪; রোমীয় ১৬:২০; প্রকাশিত বাক্য ১৯:​১১-২১) তারপর, রাজ্যের শাসনের অধীনে এক পরিষ্কৃত পৃথিবীতে, জগদ্ব্যাপী পরমদেশ প্রসারিত হবে, আর “সমস্ত জাতি” থেকে লোকেরা যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সিদ্ধ স্বাস্থ্য এবং অনন্ত জীবন উপভোগ করবে। (১ যোহন ২:​১৫-১৭) আর যদিও অব্রাহামের রাজ্য সম্বন্ধে মাত্র সীমিত জ্ঞান ছিল, তিনি ঈশ্বরের উপর আস্থা রেখেছিলেন এবং তার প্রতিষ্ঠার প্রতি সানন্দে প্রতীক্ষা করেছিলেন।​—⁠ইব্রীয় ১১:১০.

১৩, ১৪. ইয়োব কেন ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন?

১৩ কয়েক শত বছর পর, সা.শ.পূ. সপ্তদশ এবং ষষ্ঠদশ শতাব্দীর মধ্যে এখন যার নাম আরব, সেখানে ইয়োব নামে এক ব্যক্তি বাস করতেন। তিনিও বাইবেল লেখা শুরুর আগে জীবিত ছিলেন। ইয়োব “সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী ছিলেন।” (ইয়োব ১:১) যখন শয়তান ইয়োবের উপর এক জঘন্য, অত্যন্ত কষ্টকর রোগের দ্বারা আঘাত হানে, সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তি তার এই পরীক্ষার সময়েও “একটি পাপপূর্ণ বাক্য উচ্চারণ করেননি।” (ইয়োব ২:​১০, দি নিউ ইংলিশ বাইবেল) ইয়োব ঈশ্বরের উপর আস্থা রেখেছিলেন। আর যদিও তিনি সম্পূর্ণরূপে জানতেন না কেন তাকে এত কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছিল, তবুও তিনি ঈশ্বর ও তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর নিজের জীবন বিপন্ন করেছিলেন।

১৪ ইয়োব জানতেন যে তিনি মারা গেলেও, ঈশ্বর পরে তাকে পুনরুত্থানের মাধ্যমে পুনরায় জীবিত করবেন। তিনি এই আশার ইঙ্গিত করেছিলেন যখন তিনি যিহোবা ঈশ্বরকে বলেন: “হায়, তুমি আমাকে পাতালে [কবরে] লুকাইয়া রাখিও, গুপ্ত রাখিও, . . . আমার জন্য সময় নিরূপণ কর, আমাকে স্মরণ কর। মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে? . . . পরে তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব। তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করিবে।” (ইয়োব ১৪:​১৩-১৫) কষ্টকর যন্ত্রণা সত্ত্বেও, ইয়োব যিহোবার সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন, বলেছিলেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা ত্যাগ করিব না।”​—⁠ইয়োব ২৭:⁠৫.

১৫. যিহোবার উদ্দেশ্যর প্রতি দায়ূদ কিভাবে তার আস্থা প্রকাশ করেছিলেন?

১৫ ইয়োবের প্রায় ছয়শত বছর পরে এবং যীশু পৃথিবীতে আসার প্রায় এক হাজার বছর আগে, নতুন জগতের প্রতি দায়ূদ তার আস্থা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি গীতসংহিতায় বলেন: “যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারাই পৃথিবীর অধিকারী হইবে। আর ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে। ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” তার অটল আশার জন্যই, তিনি আবেদন জানান: “যিহোবাতে আস্থা রাখ, . . . আর যিহোবাতে আমোদ কর, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করিবেন।”​—⁠গীতসংহিতা ৩৭:​৩, ৪, ৯-১১, ২৯, NW.

১৬. ‘এক বৃহৎ সাক্ষীমেঘ’-এর কী আশা ছিল?

১৬ বিগত শতাব্দীগুলিতে, বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরা পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের সেই একই আশা রেখেছিলেন। বাস্তবিকই, তারা ‘এক বৃহৎ সাক্ষীমেঘ গঠন করেছিলেন যারা প্রকৃতপক্ষে সত্যসত্যই আক্ষরিকরূপে যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর নিজেদের জীবন বিপন্ন করে। যিহোবার সেই সব প্রাচীন সাক্ষীদের অনেকেই বিশ্বাসের জন্য নৃশংস অত্যাচার এবং হত্যা করা হয়, যাতে তারা “শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থানের ভাগী হতে পারেন। কিন্তু কিভাবে? নতুন জগতে ঈশ্বর তাদের শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান এবং অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা দিয়ে পুরস্কৃত করবেন।​—⁠যোহন ৫:​২৮, ২৯; ইব্রীয় ১১:৩৫; ১২:⁠১.

খ্রীষ্টান সাক্ষীরা ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখে

১৭. প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা কত দৃঢ়তার সাথে যিহোবাতে আস্থা রেখেছিল?

১৭ সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে, রাজ্য, ও পৃথিবীর উপর এর শাসন সম্বন্ধে যিহোবা, নব প্রতিষ্ঠিত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কাছে আরও বিস্তারিতভাবে ব্যক্ত করেন। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর আত্মা প্রেরিত যোহনকে লিখতে অনুপ্রাণিত করে যে খ্রীষ্টের সাথে যারা স্বর্গীয় রাজ্যে সহযোগিতা করবে তাদের সংখ্যা হল ১,৪৪,০০০ জন। তারা হবে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাস যারা “মনুষ্যদের মধ্য হইতে ক্রীত হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৪; ১৪:​১-৪) তারা খ্রীষ্টের সাথে স্বর্গে ‘রাজারূপে’ পৃথিবীর উপর শাসন করবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:​৪-৬) স্বর্গীয় রাজ্য ও তাঁর পার্থিব প্রজার জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা যিহোবার উপর এত দৃঢ় আস্থা রেখেছিল যে তারা তাদের বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত ছিল। এর জন্য অনেকে মৃত্যুবরণ করেও ছিল।

১৮. বর্তমান দিনের যিহোবার সাক্ষীরা কিভাবে তাদের মত অতীতকালের লোকেদের অনুকরণ করে?

১৮ বর্তমানে, প্রায় ৫০ লক্ষ যিহোবার সাক্ষী ঈশ্বরের প্রতি একই আস্থা রাখে, যেমন তাদের মত অতীতকালের ব্যক্তিরা রেখেছিলেন। বর্তমান-দিনের এই সাক্ষীরাও যিহোবার প্রতিজ্ঞার জন্য তাদের জীবন বিপন্ন করে থাকে। তারা তাঁর কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে এবং তাদের বিশ্বাস দৃঢ় করতে তাদের কাছে সম্পূর্ণ বাইবেল আছে। (২ তীমথিয় ৩:​১৪-১৭) আধুনিক-দিনের এই যিহোবার সাক্ষীরা প্রথম শতাব্দীর যীশুর অনুসরণকারীদের অনুকরণ করে যারা ঘোষণা করেছিলেন যে তারা “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন” করবে। (প্রেরিত ৫:২৯) এই শতাব্দীতেই অনেক খ্রীষ্টান সাক্ষীরা নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হয়েছে। এমনকি কিছু সাক্ষীদের তাদের বিশ্বাসের জন্য হত্যা করা হয়েছে। অন্যরা অসুস্থতা, দুর্ঘটনা অথবা বৃদ্ধ হয়ে মারা গেছে। অতীতকালের বিশ্বস্ত সাক্ষীদের মত এরাও ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখেছে কারণ তারা জানে যে নতুন জগতে পুনরুত্থানের মাধ্যমে তিনি তাদের পুনর্জীবন দেবেন।​—⁠যোহন ৫:​২৮, ২৯; প্রেরিত ২৪:১৫; প্রকাশিত বাক্য ২০:​১২, ১৩.

১৯, ২০. আমাদের দিনের জন্য বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীকে আমরা কিভাবে শনাক্ত করতে পারি?

১৯ যিহোবার সাক্ষীরা উপলব্ধি করে যে বহু বছর পূর্বে কথিত বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে তাদের সমস্ত জাতি থেকে বার করে এক বিশ্ব ভ্রাতৃত্বে আনা হয়েছে। (যিশাইয় ২:​২-৪; প্রকাশিত বাক্য ৭:​৪, ৯-১৭) জগদ্ব্যাপী প্রচার কাজের মাধ্যমে অন্যান্য সহৃদয় ব্যক্তিদের তাঁর অনুগ্রহ ও সুরক্ষা পেতে সাহায্য করতে যিহোবা এখনও তাদের ব্যবহার করেছেন। (হিতোপদেশ ১৮:১০; মথি ২৪:১৪; রোমীয় ১০:১৩) এদের সকলেই পূর্ণরূপে যিহোবার উপর তাদের আস্থা রেখেছে, এই জেনে যে, তিনি শীঘ্রই তাঁর অপূর্ণ নতুন জগতে তাদের প্রবেশ করাবেন।​—⁠তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮; ইব্রীয় ৬:১০.

২০ বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ইঙ্গিত করে যে ১৯১৪ সালের গুরুত্বপূর্ণ বছরের পর থেকে শয়তানের জগতের শেষকাল আজ প্রায় ৮০ বছর ধরে চলেছ। এই জগৎ শেষের সন্নিকটে এসেছে। (রোমীয় ১৬:২০; ২ করিন্থীয় ৪:৪; ২ তীমথিয় ৩:​১-৫) যিহোবার সাক্ষীরা তাই সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কারণ তারা উপলব্ধি করে যে ঈশ্বরের রাজ্য শীঘ্রই পৃথিবীর সর্ব বিষয়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ জারি করবে। বর্তমান এই মন্দ জগতের শেষ এবং তাঁর নতুন ধার্মিক জগৎ আনয়ন করার দ্বারা ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে মন্দ পরিস্থিতিকে নিশ্চিহ্ন করবেন যা দীর্ঘ শতাব্দীগুলি ধরে পৃথিবীতে বিদ্যমান রয়েছে।​—⁠হিতোপদেশ ২:​২১, ২২.

২১. বর্তমানের সমস্যাগুলি থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন আনন্দ করতে পারি?

২১ তারপর, অনন্তকাল ধরে, ঈশ্বর এমনভাবে আমাদের আশীর্ব্বাদ করে তাঁর মহান যত্ন দেখাবেন যা অতীতে পাওয়া যে কোন দুঃখকষ্টের বেদনার উপশম করবে। নতুন জগতে আমাদের জন্য অনেক কিছুই ভাল হবে যা আমাদের স্মৃতি থেকে পূর্বেকার সমস্যাগুলিকে ম্লান করে দেবে। এটি জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে তখন যিহোবা ‘আপন হস্ত মুক্ত করবেন, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করবেন।’​—⁠গীতসংহিতা ১৪৫:১৬; যিশাইয় ৬৫:​১৭, ১৮.

২২. যিহোবাতে কেন আমরা আমাদের আস্থা রাখতে পারি?

২২ নতুন জগতে বিশ্বস্ত মানবজাতি রোমীয় ৮:২১ পদের পরিপূর্ণতা দেখবে: “সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।” তারা এই প্রার্থনার পরিপূর্ণতা দেখবে যা যীশু তাঁর অনুগামীদের শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:১০) তাই যিহোবার উপর আপনার পূর্ণ আস্থা রাখুন কারণ তাঁর অব্যর্থ প্রতিজ্ঞা হল: “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”​—⁠গীতসংহিতা ৩৭:২৯.

আপনি কিরূপে উত্তর দেবেন?

▫ মানুষ ও এই পৃথিবীর জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য কী?

▫ ঈশ্বর কেন পৃথিবীতে মন্দ অবস্থা থাকতে অনুমতি দিয়েছেন?

▫ প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা কিভাবে যিহোবাতে তাদের আস্থা দেখিয়েছিলেন?

▫ বর্তমানে ঈশ্বরের দাসেরা কেন যিহোবাতে আস্থা রাখে?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল সুখে বাস করার জন্য ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

মৃতদের পুনরুত্থান করার যিহোবার সামর্থের প্রতি অব্রাহাম আস্থা রেখেছিলেন

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার