ঈর্ষা আমার জীবনকে প্রায় নষ্ট করে দিয়েছিল
যখন আমি আমার দ্বিতীয় স্বামী, মার্ককেa বিবাহ করি, তখন সত্যই ঈর্ষা আমার উপর গভীররূপে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। আমাদের মধ্যে, অনেক কটি সৎছেলেমেয়েদের দেখাশোনা এবং আমাদের প্রাক্তন সাথীদের মোকাবিলা করতে হত। পরিস্থিতি কয়েকসময় অসহ্য হয়ে উঠত। যখনই কোন পারিবারিক মতবিরোধ হত, তখন মনে হত যে মার্ক আমাকে সমর্থন করছে না। আমার মনে হত যে সে তখনও তার প্রাক্তন স্ত্রীকে ভালবাসে। আমার ঈর্ষাকে নিয়ন্ত্রণ না করে আমি এটিকে আমার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে দিই। যখনই মার্কের প্রাক্তন স্ত্রী আসত আমি মানসিকভাবে ভয় পেতাম।
আমি সর্বক্ষণ মার্ককে দেখতাম, এমনকি এও দেখতাম যে তার চোখ কোন্ দিকে যাচ্ছে। আমি তার চোখে এমন জিনিসগুলি দেখতাম যেগুলি সম্বন্ধে এমনকি সে চিন্তাই করত না। কয়েকসময় আমি সরাসরি তাকে অভিযোগ করতাম যে তখনও সে তার প্রাক্তন স্ত্রীকে ভালবাসে। একবার সে এর দ্বারা এত হয়রান হয়ে ওঠে যে সে খ্রীষ্টীয় অধিবেশন থেকে উঠে চলে যায়। যিহোবার সামনে আমি দোষী মনে করতাম। আমি আমার পরিবারের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলি কারণ শেষে আমার ছেলেমেয়েরাও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। যা আমি করছিলাম তার জন্য আমি নিজেকে ঘৃণা অনুভব করতাম, কিন্তু যত কষ্টই করি না কেন, বোধ হয় আমি আমার ঈর্ষাকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।
আমাকে সাহায্য করার পরিবর্তে, মার্ক পরিশোধ নিতে শুরু করে। যখন আমি তাকে অভিযোগ করতাম, সে আমার প্রতি চিৎকার করে বলত, “ঈর্ষান্বিত, তুমি শুধু ঈর্ষান্বিত হচ্ছো।” এমনকি মনে হত সে জোর করে আমাকে ঈর্ষান্বিত করার চেষ্টা করত। হয়ত সে মনে করত যে তা আমার ঈর্ষার প্রতিকার করবে, কিন্তু পরিবর্তে তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিত। সে অন্যান্য মহিলাদের দিকে দেখতে শুরু করত এবং মন্তব্য করত যে তাদের কত সুন্দরই না দেখাচ্ছে। এমনকি এটি আমাকে আরও হীন এবং অপ্রয়োজন মনে করাত। এটি এমন এক পর্যায়ে চলে আসে যেখানে আরেকটি অনুভূতি—ঘৃণা—বাস্তব হয়ে ওঠে। এই সময়ে, আমি এত জড়িয়ে পড়েছিলাম যে আমি কেবল চাইতাম সে এবং তার পরিবার আমার জীবন থেকে আলাদা হয়ে যাক।
যখন বাইবেল বলে যে, “ঈর্ষা সকল অস্থির পচনস্বরূপ,” তা অবশ্যই সত্য। (হিতোপদেশ ১৪:৩০) আমার স্বাস্থ্য প্রভাবিত হতে শুরু করে। আমার পাকস্থলীতে ঘা হয় যা সারতে অনেকদিন সময় নেয়। যা কিছু মার্ক করেছিল তার উপর সন্দেহ করে আমি ক্রমাগত আমার জীবনকে আরও অতিষ্ঠ করে চলি। আমি তার পকেট তল্লাশ করতাম এবং যদি কোন টেলিফোন নম্বর পেতাম তাহলে কে উত্তর দিচ্ছে তা জানবার জন্য তাদের আমি ফোন করতাম। আমার হৃদয়ে আমার নিজের প্রতি আমি লজ্জিত ছিলাম, যিহোবার সামনে লজ্জা হেতু আমি কাঁদতাম। তবুও আমি নিজেকে রুখতে পারিনি। আমি আমার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠি।
আমার আধ্যাত্মিকতা এত প্রভাবিত হয় যে আমি আর প্রার্থনা করতে পারতাম না। আমি যিহোবাকে ভালবাসতাম এবং প্রকৃতই যা সঠিক তা করতে চাইতাম। আমি স্বামী এবং স্ত্রী সংক্রান্ত সব শাস্ত্রপদগুলি জানতাম, কিন্তু আমি তা প্রয়োগ করতে পারতাম না। আমার জীবনে প্রথমবার, আমি আর বাঁচতে চাইনি, যদিও আমার অতি উত্তম ছেলেমেয়েরা ছিল।
খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীনেরা সত্যই খুব উৎসাহ দান করেন এবং আমাকে সাহায্য করার জন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু যখন তারা আমার ঈর্ষার বিষয়টি তোলে, তখন লজ্জার জন্য আমি তা অস্বীকার করি, কারণ আমি স্বীকার করতে চাইনি যে আমার এই সমস্যাটি রয়েছে।
অবশেষে, আমার স্বাস্থ্য এত খারাপ হয়ে যায় যে আমাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে যেতে হয়। সেখানে থাকার সময় আমি বুঝতে পারি যে জীবন যেরকম যাচ্ছে তা সেইভাবে চলতে পারে না। মার্ক এবং আমি সিদ্ধান্ত নিই যে তিন মাসের জন্য আলাদা থাকব যাতে করে মানসিক দিক দিয়ে জড়িয়ে না পড়ে আমাদের পরিস্থিতিকে পরীক্ষা করতে পারি। এই সময়ে অদ্ভুত কিছু ঘটে। সচেতন থাক! পত্রিকাতে একটি প্রবন্ধ বার হয় যার শিরোনাম ছিল “মদ্যাসক্ত ব্যক্তিদের প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের জন্য সাহায্য।”b
আমার মা ছিলেন একজন মদ্যাসক্ত ব্যক্তি। যদিও আমি দৈহিক দিক দিয়ে কখনও অপব্যবহৃত হয়নি, কিন্তু আমার বাবামা কখনও একে অপরের প্রতি অথবা আমার প্রতি স্নেহ দেখাতেন না। আমার মা কখনও আমাকে কোলে নিয়েছেন অথবা বলেছেন যে তিনি আমাকে ভালবাসেন তা আমার মনে পড়ে না। তাই আমি প্রকৃতপক্ষে কিভাবে প্রেম করতে হয় অথবা, একই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিভাবে প্রেম পেতে হয় তা না জেনেই বড় হয়েছিলাম।
আমার মা প্রায়ই আমাকে আমার বাবার প্রণয়ঘটিত ব্যাপার সম্বন্ধে এবং সেইজন্য তিনি যে তাকে বিশ্বাস করতেন না তা বলতেন। তাই আমার মনে হয় সাধারণভাবে পুরুষদের না বিশ্বাস করার মনোভাব নিয়ে আমি বড় হই। আমি যেভাবে বড় হয়েছি তার দরুন, আমি সবসময় অন্যদের কাছে নিজেকে হীন মনে করতাম, বিশেষকরে অন্যান্য মহিলাদের কাছে। সচেতন থাক! এর প্রবন্ধটি পড়া আমাকে এই বিষয়গুলির গুরুত্বতা বুঝতে সাহায্য করেছিল। এই প্রথমবার, ঈর্ষার সাথে যুক্ত সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণগুলি বুঝতে পারি।
আমি সচেতন থাক! এর প্রবন্ধটি আমার স্বামী, মার্ককে দেখাই আর এটি তাকে আমাকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে। শীঘ্রই সে এবং আমি সেই সব দম্পতিদের জন্য যারা আলাদা থাকার চিন্তা করছে বাইবেলের যে উপদেশ তা মেনে চলতে শুরু করি। আমরা পুনরায় মিলনসাধন করি। (১ করিন্থীয় ৭:১০, ১১) এখন আমাদের বিবাহ আগের থেকে অনেক ভাল। আমরা বেশির ভাগ জিনিস একত্রে করি, বিশেষকরে যখন খ্রীষ্টীয় কাজকর্মগুলি জড়িত থাকে। মার্ক আরও বেশি সহমর্মিতা দেখায়। প্রায় প্রতিটি দিন সে আমাকে বলে যে, সে আমাকে কতটা ভালবাসে আর এখন আমি সত্যিই তা বিশ্বাস করি।
যখনই আমি জানতে পারি যে আমার সাথে মার্কের প্রাক্তন স্ত্রীর দেখা হবে, তখন আমি যিহোবার কাছে শক্তির জন্য প্রার্থনা করি, যাতে করে পরিপক্ব খ্রীষ্টানের মত ব্যবহার করতে তিনি আমাকে সাহায্য করেন। আর সেটি কাজ করে। এমনকি তার প্রতি আমার বিদ্বেষ মনোভাব কম হয়ে গেছে। এখন আমি আর নেতিবাচক চিন্তা করি না অথবা আমি আমার চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করি।
তবুও ঈর্ষার অনুচিত অনুভূতিগুলি এখনও আমার কাছে আসে। শুধুমাত্র ঈশ্বরের নতুন জগতে সিদ্ধ জীবন সম্পূর্ণরূপে তা মুছে ফেলতে পারে। অন্তর্বর্তীকালে, ঈর্ষাকে আমার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়ার পরিবর্তে আমি ঈর্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছি। হ্যাঁ, ঈর্ষা আমার জীবনকে প্রায় নষ্ট করে দিয়েছিল, কিন্তু যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনকে ধন্যবাদ দিই যার হেতু আমি এখন আরও সুখী ব্যক্তি এবং আমার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। আবার আমার ঈশ্বর, যিহোবার সাথে এক দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।—প্রদান করা হয়েছে।
[পাদটীকাগুলো]
a নামের পরিবর্তন করা হয়েছে।
b সচেতন থাক! (ইংরাজি) মে ২২, ১৯৯২ পৃষ্ঠা ৮-১২ দেখুন।