তাদের দীপ্তি চলে যায়নি
বাইবেলের সময় যিহোবার বিশ্বস্ত সাক্ষীরা নিরুৎসাহবোধ ও সংকটের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। তারা বিরোধিতা ও আপেক্ষিকভাবে অকৃতকার্যতারও সম্মুখীন হয়েছিল। তবুও, তারা নিরুৎসাহ হওয়ার দরুন হাল ছেড়ে দেয়নি। বস্তুতপক্ষে, তাদের দীপ্তি চলে যায়নি।
উদাহরণস্বরূপ, ভাববাদী যিরমিয়কে যিহূদার ধর্মভ্রষ্ট জাতির কাছে ঈশ্বরের ভাববাদী হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি যিরূশালেমের আগত ধ্বংস সম্বন্ধে সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন। (যিরমিয় ১:১১-১৯) এর ফলে, তার সহদেশবাসীর সাথে যিরমিয়ের অনেক সংঘর্ষ হয় যারা তাকে ধ্বংসের প্রচারকারী বলে গণ্য করত।
ঈশ্বরের গৃহের প্রধান অধ্যক্ষ, যাজক পশ্হূর একবার যিরমিয়কে ভাববাণী বলার জন্য প্রহার করেছিলেন এবং হাঁড়িকাঠে বদ্ধ করে রেখেছিলেন। এইধরনের আপেক্ষিক বাধার মধ্যে, যিরমিয় বলেছিলেন: “আমি সমস্ত দিন উপহাসের পাত্র হইয়াছি, সকলেই আমাকে ঠাট্টা করে। যতবার আমি কথা কহি, ততবার চেঁচাইয়া উঠি; দৌরাত্ম্য ও লুটপাট বলিয়া চেঁচাই; সদাপ্রভুর বাক্য প্রযুক্ত সমস্ত দিন আমাকে টিটকারি দেওয়া ও বিদ্রূপ করা হয়।” ভাববাদী এতই নিরুৎসাহ হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি এমনকি এও বলেছিলেন: “তাঁহার [যিহোবা] বিষয় আর উল্লেখ করিব না, তাঁহার নামে আর কিছু কহিব না।”—যিরমিয় ২০:১, ২, ৭-৯.
কিন্তু, যিরমিয় এই নিরুৎসাহের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেননি। “সদাপ্রভুর বাক্য” সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আমার হৃদয়ে যেন দাহকারী অগ্নি অস্থিমধ্যে রুদ্ধ হয়; তাহা সহ্য করিতে করিতে আমি ক্লান্ত হইয়া পড়ি, আর তিষ্ঠিতে পারি না।” (যিরমিয় ২০:৮, ৯) ঈশ্বরের ঘোষণা প্রচার করার দৃঢ় মনোভাব নিয়ে, যিরমিয় পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য পেয়েছিলেন এবং তার কাজকে সম্পন্ন করেছিলেন।
প্রেরিত পৌলও যদি বশ্যতা স্বীকার করতেন তাহলে তারও নিরুৎসাহ হওয়ার অনেক কারণ ছিল। তিনি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জাহাজডুবি, তাড়না এবং প্রহার সহ্য করেছিলেন। এছাড়াও, ‘প্রতিদিন তার উপর চেপে ছিল সমস্ত মণ্ডলীর চিন্তা।’ (২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৮) হ্যাঁ, প্রতিদিন পৌলকে সমস্যার মোকাবিলা করতে হত, নতুন মণ্ডলীগুলির সম্বন্ধে চিন্তা করতে হত যেগুলি তিনি প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি ছিলেন অসিদ্ধ আর সেই কারণে তাকে “মাংসে একটা কন্টক,” সহ্য করতে হত, সম্ভবত তার দুর্বল দৃষ্টি। (২ করিন্থীয় ১২:৭; রোমীয় ৭:১৫; গালাতীয় ৪:১৫) এমনকি কিছু লোক পৌলের পিছনে কথা বলত আর সেটি তার কর্ণগোচর হয়েছিল।—২ করিন্থীয় ১০:১০.
তৎসত্ত্বেও, পৌল কিন্তু তাকে নত করতে নিরুৎসাহকে প্রশ্রয় দেননি। না, তিনি অতিমানব ছিলেন না। (২ করিন্থীয় ১১:২৯, ৩০) তার ‘অন্তরের দীপ্তিকে’ জাগিয়ে রাখতে কী সাহায্য করেছিল? একটি বিষয় হল যে, তার সঙ্গে সমর্থনকারী সহযোগীরা ছিল, এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন তার সাথে রোমে পর্যন্ত গিয়েছিল যেখানে তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছিল। (প্রেরিত ২৮:১৪-১৬) দ্বিতীয় বিষয়, প্রেরিত তার পরিস্থিতিকে এক ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেছিলেন। তার তাড়নাকারী ও বিরোধীরাই ভুল পথে ছিল, পৌল নন। তার পার্থিব জীবনের শেষের দিকে তিনি তার পরিচর্যাকে এক ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মূল্যায়ন করেছিলেন আর বলেছিলেন: “এখন অবধি আমার নিমিত্ত ধার্ম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে; প্রভু, সেই ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা, সেই দিন আমাকে তাহা দিবেন।”—২ তীমথিয় ৪:৮.
আর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পৌল নিয়মিতরূপে যিহোবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন এবং ‘প্রভু তাহার নিকটে দাঁড়াইলেন, এবং তাহাকে বলবান্ করিলেন।’ (২ তীমথিয় ৪:১৭) “তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি,” পৌল বলেন, “যিনি আমাকে শক্তি দেন।” (ফিলিপীয় ৪:১৩) ঈশ্বর ও সহখ্রীষ্টানদের সাথে ভাববিনিময় আর তার সাথে নিজের পরিচর্যা সম্পর্কে ইতিবাচক মূল্যায়ন, যিহোবার পরিচর্যা চালিয়ে যেতে পৌলকে সাহায্য করেছিল।
ঈশ্বর পৌলকে এটি লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; কেননা ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব।” (গালাতীয় ৬:৭-৯) কোন্ শস্য পাব? অনন্ত জীবন। অতএব, শাস্ত্রে উল্লেখিত যিরমিয়, পৌল এবং যিহোবার অন্যান্য বহু বিশ্বস্ত সাক্ষীদের মত হোন। হ্যাঁ, তাদের মত হোন এবং নিরুৎসাহ হওয়ার কাছে হার স্বীকার করবেন না। আপনার দীপ্তিকে চলে যেতে দেবেন না।—তুলনা করুন মথি ৫:১৪-১৬.
[Pictures on page 25]
পৌল ও যিরমিয় তাদের দীপ্তিকে চলে যেতে দেননি