যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের প্রতি আস্থা রাখুন
“যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে বিশ্বাস [“আস্থা,” NW] রাখিবে।”—গীতসংহিতা ৯:১০.
১. আমাদের এই আধুনিক দিনেও কেন আমরা যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপর আস্থা রাখতে পারি?
এই আধুনিক জগতে, ঈশ্বর এবং তাঁর বাক্য, বাইবেলের প্রতি আস্থা রাখার আমন্ত্রণ হয়ত অকার্যকর এবং অযৌক্তিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রজ্ঞা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সত্য প্রমাণিত হয়েছে। পুরুষ এবং স্ত্রীর সৃষ্টিকর্তা তিনি বিবাহের এবং পরিবারের উদ্ভাবক এবং তিনি আমাদের প্রয়োজনীয়তা অন্য কারও চেয়ে আরও ভাল জানেন। ঠিক যেমন মানবজাতির মৌলিক প্রয়োজনের পরিবর্তন হয়নি, তাই সেই প্রয়োজনাদি মিটানোর ক্ষেত্রগুলিও একই রয়েছে। বাইবেলের বুদ্ধিপূর্বক উপদেশ, যদিও বহু শতাব্দী আগে লেখা হয়েছে তবুও এখনও এটি জীবনধারণ এবং সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে এক উত্তম নির্দেশ দিয়ে থাকে। এটিকে মেনে চলা অনেক সুখ নিয়ে আসতে পারে—এমনকি বস্তুধর্মী, বৈজ্ঞানিক জগতেও যেখানে আমরা বসবাস করছি!
২. (ক) ঈশ্বরের আদেশগুলি পালন করার দ্বারা যিহোবার লোকেরা জীবনে কোন্ উত্তম ফল উৎপাদন করেছে? (খ) যারা তাঁর প্রতি এবং তাঁর বাক্যের প্রতি বাধ্য হয় তাদের জন্য যিহোবা আর কী প্রতিজ্ঞা করেছেন?
২ যিহোবার উপরে আস্থা এবং বাইবেলের নীতিগুলি প্রয়োগ করা প্রতিদিন বাস্তবধর্মী উপকারগুলি নিয়ে আসবে। এর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই পৃথিবীব্যাপী ছড়ানো লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষীদের জীবনে যাদের বাইবেলের উপদেশ প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রত্যয় এবং সাহস রয়েছে। তাদের জন্য, সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর বাক্যের প্রতি আস্থা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। (গীতসংহিতা ৯:৯, ১০) ঈশ্বরের আদেশগুলির প্রতি বাধ্যতা তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সৎ, পরিশ্রমী, অন্যদের জীবন এবং সম্পত্তির প্রতি সম্মান এবং খাদ্য এবং পানীয় সম্বন্ধে ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে আরও ভাল লোক করে তুলেছে। এটি পরিবারের মধ্যে সঠিক প্রেম এবং প্রশিক্ষণ—যেমন আতিথেয়তা, সহিষ্ণুতা, করুণা দেখানো এবং ক্ষমা করা—সাথে সাথে আরও অন্যান্য বিষয়গুলিও গড়ে তুলেছে। তারা অনেকাংশে রাগ, ঘৃণা, হত্যা, হিংসা, ভয়, অলসতা, গর্ব, মিথ্যাকথা বলা, নিন্দা করা, বাছবিচারহীন যৌন এবং অনৈতিকতার খারাপ ফলগুলি এড়াতে পেরেছে। (গীতসংহিতা ৩২:১০) কিন্তু যারা তাঁর নিয়ম পালন করে তাদের জন্য শুধু উত্তম পরিণতিই ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন না। যীশু বলেছিলেন যে যারা খ্রীষ্টীয় পথ অনুযায়ী চলবে, তারা “ইহকালে তাহার শতগুণ . . . পাইবে . . . মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে, এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে।”—মার্ক ১০:২৯, ৩০.
জাগতিক প্রজ্ঞায় আস্থা রাখা এড়িয়ে চলুন
৩. যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপর আস্থা রাখার সাথে সাথে কয়েক সময় খ্রীষ্টানেরা কোন্ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে?
৩ অসিদ্ধ মানুষের মধ্যে সমস্যা হল যে তারা ভুলকে ছোট করে দেখে অথবা ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে কী চায় তা ভুলে যায়। তারা সহজেই মনে করে যে তারা আরও বেশি জানে অথবা সমাজের বুদ্ধিজীবীদের প্রজ্ঞা ঈশ্বরের চাইতে উৎকৃষ্ট ও তা আরও আধুনিক। তারা এই জগতের মাঝে বাস করছে বলে ঈশ্বরের সেবকেরাও এইধরনের মনোভাব গড়ে তুলেত পারে। তাই, তাঁর প্রেমপূর্ণ উপদেশ শোনার আমন্ত্রণ জানানোর সাথে আমাদের স্বর্গীয় পিতা যথার্থ সাবধানবাণীও অন্তর্ভুক্ত করেন: “বৎস, তুমি আমার ব্যবস্থা ভুলিও না; তোমার চিত্ত আমার আজ্ঞা সকল পালন করুক। কারণ তদ্দ্বারা তুমি আয়ুর দীর্ঘতা, জীবনের বৎসর-বাহুল্য, এবং শান্তি, প্রাপ্ত হইবে। তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর [“আস্থা রাখ, NW]; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন। আপনার দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হইও না; সদাপ্রভুকে ভয় কর, মন্দ হইতে দূরে যাও।”—হিতোপদেশ ৩:১, ২, ৫-৭.
৪. “জগতের যে জ্ঞান” তা কতটা ব্যাপৃত এবং তা “ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা” কেন?
৪ জগতের প্রজ্ঞা ব্যাপকভাবে প্রাপ্তলভ্য এবং এর উৎসগুলিও প্রচুর। শিক্ষা পাওয়ার অনেক সংগঠন রয়েছে এবং “বহুপুস্তক রচনার শেষ হয় না।” (উপদেশক ১২:১২) এখন তথা-কথিত কমপিউটার জগতের সুপারহাইওয়ে যে কোন বিষয়ের উপর অফুরন্ত তথ্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। এইসব জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তা জগৎকে আরও জ্ঞানী করে না অথবা এর সমস্যাও সমাধান করতে পারে না। বরঞ্চ, জগতের পরিস্থিতি প্রতিদিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই যথার্থরূপে বাইবেল আমাদের বলে যে, “জগতের যে জ্ঞান, তাহা ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা।”—১ করিন্থীয় ৩:১৯, ২০.
৫. “জগতের যে জ্ঞান” সেই সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের কী সাবধানবাণীগুলি দেয়?
৫ এই শেষকালের শেষের দিকে, এটি আশা করা যেতে পারে যে মুখ্য-প্রতারক, শয়তান দিয়াবল, মিথ্যা কথা বর্ষণ করবে এই প্রচেষ্টাতে যাতে করে বাইবেলের সত্যতার উপর আস্থা দুর্বল করে দেওয়া যেতে পারে। বাইবেলের সমালোচকেরা অনেক দূরকল্পী বই বার করেছে যা বাইবেলের সত্যতা এবং নির্ভরতাকে চ্যালেঞ্জ করে। পৌল তার সহখ্রীষ্টানকে সাবধান করে দিয়েছিলেন: “হে তীমথিয়, তোমার কাছে যাহা গচ্ছিত হইয়াছে, তাহা সাবধানে রাখ; যাহা অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত, তাহার ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর ও বিরোধবাণী হইতে বিমুখ হও; সেই বিদ্যা অঙ্গীকার করিয়া কেহ কেহ বিশ্বাস সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৬:২০, ২১) বাইবেল আরও সাবধান করে: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার [“প্রথার,” NW] অনুরূপ খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।”—কলসীয় ২:৮.
সন্দেহ করার প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করুন
৬. আমাদের হৃদয়ে সন্দেহের শিকড় গড়ে ওঠা এড়ানোর জন্য কেন জাগ্রত থাকার প্রয়োজন আছে?
৬ দিয়াবলের আরেকটি ধূর্ত কৌশল হল লোকেদের মনে সন্দেহের বীজ বপন করা। বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কার দুর্বলতা রয়েছে সে বিষয় খুঁজতে এবং তার সুযোগ নিতে সে সবসময়ই সচেতন। যে কেউ সন্দেহ অনুভব করে তাদের মনে রাখা উচিত যে এর পিছনে সেই ব্যক্তি রয়েছে যে হবাকে বলেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” একবার যখন শয়তান তার মনে সন্দেহ বপন করেছিল, এর পরের পদক্ষেপটি ছিল তার কাছে মিথ্যা কথা বলা যা সে বিশ্বাস করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১, ৪, ৫) আমাদের বিশ্বাস হবার মত সন্দেহের দ্বারা ধ্বংস হওয়ার থেকে এড়ানোর জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যদি যিহোবা, তাঁর বাক্য অথবা তাঁর সংগঠন সম্বন্ধে কোন সন্দেহ বিন্দুমাত্র আমাদের হৃদয়ে থাকে, তাহলে তা আরও বড় আকার ধারণ করে আমাদের বিশ্বাস ধ্বংস করার আগে তা সরিয়ে দিতে শীঘ্রই পদক্ষেপ নিন।—তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১০:১২.
৭. সন্দেহকে মুছে ফেলার জন্য কী করা যেতে পারে?
৭ কী করা যেতে পারে? আবার, উত্তর হল যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপর আস্থা রাখুন। “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়, তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না; তাহাকে দত্ত হইবে। কিন্তু সে বিশ্বাস-পূর্ব্বক যাচ্ঞা করুক কিছু সন্দেহ না করুক; কেননা যে সন্দেহ করে, সে বায়ুতাড়িত বিলোড়িত সমুদ্র-তরঙ্গের তুল্য।” (যাকোব ১:৫, ৬; ২ পিতর ৩:১৭, ১৮) তাই যিহোবার কাছে সনির্বন্ধ প্রার্থনা হল প্রথম পদক্ষেপ। (গীতসংহিতা ৬২:৮) এরপর, মণ্ডলীতে প্রেমময় অধ্যক্ষদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে ইতস্ততবোধ করবেন না। (প্রেরিত ২০:২৮; যাকোব ৫:১৪, ১৫; যিহূদা ২২) তারা আপনাকে সাহায্য করবে সন্দেহের উৎসগুলি খুঁজে পেতে, যা হয়ত গর্ব অথবা ভুল চিন্তার জন্য হতে পারে।
৮. কিভাবে বেশির ভাগ সময় ধর্মভ্রষ্ট চিন্তাধারা শুরু হয় এবং এর প্রতিকার কী?
৮ ধর্মভ্রষ্ট ধারণাগুলি এবং জাগতিক দর্শনবাদ পড়া অথবা শোনা কি বিষতুল্য সন্দেহের প্রবর্তন ঘটিয়েছে? প্রজ্ঞার সাথে বাইবেল উপদেশ বলে: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও. যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে। কিন্তু ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর হইতে পৃথক্ থাক; কেননা সেই প্রকার লোক ভক্তিলঙ্ঘনে অধিক অগ্রসর হইবে, এবং তাহাদের বাক্য গলিত ক্ষতের ন্যায় উত্তর উত্তর ক্ষয় করিবে।” (২ তীমথিয় ২:১৫-১৭) এটি আগ্রহের বিষয় যে বেশির ভাগ যারা ধর্মভ্রষ্টতার শিকার হয়েছে তারা ভুল দিকে গেছে প্রথমে এই অভিযোগ করে যে যিহোবার সংগঠনে কী ব্যবহার পেয়েছে। (যিহূদা ১৬) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ভুল ধরা তার পরে এসেছিল। ঠিক যেমন অস্ত্রোপচারক তৎপরতার সাথে পচা ক্ষত কেটে বার করে দেয়, ঠিক তেমনি অভিযোগ করা, যেভাবে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে কাজ করা হয় সেই বিষয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ার প্রবণতা আপনার মন থেকে শীঘ্রই উৎপাটন করুন। (কলসীয় ৩:১৩, ১৪) যা কিছু এই সন্দেহকে বাড়িয়ে তোলে তা কেটে ফেলুন।—মার্ক ৯:৪৩.
৯. বিশ্বাসে স্বাস্থ্যকর থাকতে কিভাবে উত্তম ঐশিক কর্মসূচী আমাদের সাহায্য করবে?
৯ যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনকে নিবিড়ভাবে ধরে থাকুন। বিশ্বস্ততার সাথে পিতরকে অনুকরণ করুন, যিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন: “প্রভু, কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।” (যোহন ৬:৫২, ৬০, ৬৬-৬৮) যিহোবার বাক্যের অধ্যয়ন করার এক উত্তম তালিকা রাখুন যাতে করে আপনি আপনার বিশ্বাসকে ঢালের মত দৃঢ় করতে পারেন যা আপনাকে “পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে” সাহায্য করবে। (ইফিষীয় ৬:১৬) খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় সক্রিয় থাকুন, প্রেমের সাথে অন্যদের কাছে রাজ্যের সংবাদ বন্টন করুন। প্রতিদিন, যেভাবে যিহোবা আপনাকে আশীর্বাদ করেছেন তার উপর উপলব্ধিবোধের সাথে ধ্যান করুন। আপনার যে সত্য সম্বন্ধে জ্ঞান আছে সেই বিষয়ে ধন্যবাদসূচক মনোভাব পোষণ করুন। এই সবগুলি আপনি যদি উত্তম খ্রীষ্টীয় কর্মসূচীর সাহায্যে করেন, তাহলে তা আপনাকে সুখী, সহিষ্ণু এবং সন্দেহবিহীন হতে সাহায্য করবে।—গীতসংহিতা ৪০:৪; ফিলিপীয় ৩:১৫, ১৬; ইব্রীয় ৬:১০-১২.
বিবাহের ক্ষেত্রে যিহোবার নির্দেশ অনুসরণ করা
১০. খ্রীষ্টীয় বিবাহে নির্দেশের জন্য যিহোবার দিকে তাকানো কেন বিশেষকরে গুরুত্বপূর্ণ?
১০ পুরুষ এবং স্ত্রীকে একসাথে বিবাহিত দম্পতি হিসাবে থাকার ব্যবস্থা করার বিষয়ে যিহোবার শুধু পৃথিবীকে পরিমিত মাত্রায় পূর্ণ করাই নয়, কিন্তু তাদের সুখকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যও ছিল। কিন্তু, পাপ এবং অসিদ্ধতা বিবাহ সম্পর্কের মধ্যে গভীর সমস্যা নিয়ে আসে। খ্রীষ্টানেরা এর ব্যতিক্রম নয়, কারণ তারাও অসিদ্ধ এবং আধুনিক জগতের জীবনধারার চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকে। তবুও, যতদূর তারা যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপর আস্থা রাখে খ্রীষ্টানেরা বিবাহ এবং ছেলেমেয়েদের বড় করার ক্ষেত্রে কিছুটা পরিমাণে সফলতা অর্জন করতে পারে। খ্রীষ্টীয় বিবাহে জাগতিক অভ্যাসগুলি এবং আচরণের কোন স্থান নেই। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের উপদেশ দেয়: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।”—ইব্রীয় ১৩:৪.
১১. বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধানের ক্ষেত্রে উভয় সাথীদের কী বোঝা উচিত?
১১ যে বিবাহিত জীবন বাইবেলের উপদেশ অনুযায়ী চলে তার মধ্যে প্রেম, দায়িত্ববোধ এবং সুরক্ষার আবহওয়া দেখতে পাওয়া যায়। স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ই মস্তক ব্যবস্থার নীতিকে বোঝে এবং সম্মান করে। যখন সমস্যার সৃষ্টি হয়, তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয়ত বাইবেলের উপদেশ উপেক্ষা করার জন্যই হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ব্যাপৃত কোন সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে, উভয় সাথীদের সততাপূর্ণভাবে যে সমস্যা তার উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত এবং তার উপসর্গের পরিবর্তে তার কারণগুলির সাথে মোকাবিলা করা উচিত। যদি সম্প্রতি আলোচনাগুলি কিছুটা অথবা কোনরকমের মতৈক্য না এনে থাকে, তাহলে দম্পতি হয়ত কোন প্রেমময় অধ্যক্ষের পক্ষপাতহীন সাহায্য নিতে পারে।
১২. (ক) সাধারণ বিবাহ সংক্রান্ত কোন্ সমস্যাগুলি সম্বন্ধে বাইবেল উপদেশ দেয়? (খ) উভয় সাথীদের যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার কেন প্রয়োজন রয়েছে?
১২ সমস্যাটি কি ভাববিনিময়, অপরের অনুভূতিকে সম্মান করা, মস্তক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান অথবা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তার সাথে সংযুক্ত? ছেলেমেয়েদের বড় করার ক্ষেত্রে অথবা যৌন প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাবের সাথে কি এটি যুক্ত? অথবা তা কি পরিবারের খরচ, আমোদপ্রমোদ, সংসর্গ, স্ত্রীর চাকরি করা উচিত কি না অথবা আপনি কোথায় থাকবেন তার সাথে যুক্ত? সমস্যা যা কিছুই হোক না কেন, বাইবেল প্রত্যক্ষভাবে নিয়মের মাধ্যমে অথবা পরোক্ষভাবে নীতির মাধ্যমে বাস্তবধর্মী উপদেশ দেয়। (মথি ১৯:৪, ৫, ৯; ১ করিন্থীয় ৭:১-৪০; ইফিষীয় ৫:২১-২৩, ২৮-৩৩; ৬:১-৪; কলসীয় ৩:১৮-২১; তীত ২:৪, ৫; ১ পিতর ৩:১-৭) যখন উভয় সাথী স্বার্থপর দাবি করা থেকে বিরত থাকে এবং তাদের বিবাহে প্রেমকে পূর্ণ মাত্রায় প্রকাশিত হতে দেয় তখন তার পরিণতি হয় অধিক সুখ। উভয় বিবাহ সাথীদের মধ্যে যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার এক পূর্ণ ইচ্ছা থাকা উচিত। “যে বাক্যে মন দেয়, সে মঙ্গল পায়; এবং যে সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, সে ধন্য।”—হিতোপদেশ ১৬:২০.
যুবক-যুবতীরা—ঈশ্বরের বাক্যকে শুন
১৩. যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপর দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বড় হওয়া কেন খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতীদের জন্য সহজ বিষয় নয়?
১৩ যেহেতু তারা এই দুষ্ট জগৎ দ্বারা পরিবেষ্টিত তাই খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতীদের বিশ্বাসে দৃঢ় হওয়া সহজ বিষয় নয়। একটি কারণ হল যে “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে,” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবল। (১ যোহন ৫:১৯) যুবক-যুবতীরা এই মন্দ শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে যে মন্দকে ভাল হিসাবে দেখাতে পারে। আমিত্ব-মনোভাব, স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি, অনৈতিক এবং নিষ্ঠুর বিষয়গুলির প্রতি আসক্তি এবং আনন্দের দিকে অস্বাভাবিকভাবে দৌঁড়ানো—এই সবগুলি একটি মুখ্য চিন্তাধারার মধ্যে পড়ে যা বাইবেল বর্ণনা করে এইভাবে “যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে।” (ইফিষীয় ২:১-৩) শয়তান চাতুরীর সাথে এই “আত্মা” স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে, বেশির ভাগ সঙ্গীতে, খেলাধূলায় এবং অন্যান্য আমোদপ্রমোদগুলিতে তুলে ধরেছে। ছেলেমেয়েদের যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপর আস্থা রাখতে সাহায্য করে পিতামাতাদের এই প্রভাবগুলিকে রুদ্ধ করতে সচেতন থাকতে হবে।
১৪. কিভাবে যুবক-যুবতীরা ‘যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন করতে’ পারে?
১৪ তার যুবক সহচর তীমথিয়কে পৌল পিতৃসুলভ উপদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর; এবং যাহারা শুচি হৃদয়ে প্রভুকে ডাকে, তাহাদের সহিত ধার্ম্মিকতা, বিশ্বাস, প্রেম ও শান্তির অনুধাবন কর।” (২ তীমথিয় ২:২২) কিন্তু সব “যৌবনকালের অভিলাষ” খারাপ নয়, যুবক-যুবতীদের ‘পলায়ন করতে’ হবে এমন বিষয়গুলি থেকে যা হয়ত আমাদের অনেক সময় নিয়ে নিতে পারে আর খুব অল্প সময় ঈশ্বরীয় কাজের জন্য থাকতে পারে। ব্যায়াম, খেলাধূলা, সঙ্গীত, আমোদপ্রমোদ, শখ এবং ভ্রমণ হয়ত খারাপ বিষয় নয়, কিন্তু তা একটি ফাঁদস্বরূপ হতে পারে যদি আমরা এটিকে আমাদের জীবনে মুখ্য বিষয় হতে দিই। অর্থহীন কথোপকথন, অযথা ঘুরে বেড়ানো, যৌনতার প্রতি অস্বাভাবিক আগ্রহ, শুধু বসে থেকে একঘেঁয়েমি অনুভব করা এবং পিতামাতারা তোমাদের বোঝে না সেই বিষয়ে অভিযোগ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে পলায়ন কর।
১৫. আমাদের ঘরের নির্জনতায় কোন্ বিষয়গুলি ঘটতে পারে যা একজন যুবক-যুবতীকে দ্বৈত জীবন যাপন করতে প্ররোচিত করতে পারে?
১৫ এমনকি ঘরের নির্জনতায় যুবক-যুবতীদের বিপদ থাকতে পারে। যদি অনৈতিক এবং দৌরাত্ম্যপূর্ণ টিভি এবং ভিডিও দেখা হয়, তাহলে খারাপ বিষয়গুলি করার ইচ্ছা জেগে উঠতে পারে। (যাকোব ১:১৪, ১৫) বাইবেল উপদেশ দেয়: “হে সদাপ্রভু-প্রেমিকগণ, দুষ্টতাকে ঘৃণা কর।” (গীতসংহিতা ৯৭:১০; ১১৫:১১) যিহোবা সেইসব ব্যক্তিদের জানেন যারা দ্বৈত জীবন যাপন করার চেষ্টা করছে। (হিতোপদেশ ১৫:৩) খ্রীষ্টীয় যুবক-যুবতীরা, তোমার ঘরের চারিদিকে দেখ। তুমি কি খেলাধূলার বা সঙ্গীত জগতের অনৈতিক তারকাদের পোস্টার তোমার দেয়ালে রাখ অথবা উত্তম বিষয়গুলি যা ভাল স্মারক হতে পারে তা রাখ? (গীতসংহিতা ১০১:৩) তোমার আলমারীতে কি মার্জিত পোশাক আছে অথবা তোমার কয়েকটি পোশাক জগতের চরম মন্দ পোশাকের রীতিকে প্রতিফলিত করে? ধূর্ত রীতির সাহায্যে দিয়াবল তোমাকে প্রলোভনে পড়তে প্রতারিত করতে পারে যাতে করে তুমি মন্দ বিষয়টি আস্বাদ করতে পার। বাইবেল প্রজ্ঞার সাথে উপদেশ দেয়: “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।”—১ পিতর ৫:৮.
১৬. কিভাবে বাইবেলের উপদেশ একজন যুবককে সেইসব ব্যক্তিদের কাছে গর্বিত হতে সাহায্য করবে যারা তার কাছে মূল্যবান?
১৬ বাইবেল তোমাকে বলে তোমার সংসর্গের বিষয়ে সাবধান হতে। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) তোমার সঙ্গীরা এমন ব্যক্তি হবে যারা যিহোবাকে ভয় করে। তোমার সঙ্গীদের চাপের নিচে অবনত হয়ো না। (গীতসংহিতা ৫৬:১১; হিতোপদেশ ২৯:২৫) তোমার ঈশ্বর-ভীরু পিতামাতাদের প্রতি বাধ্য হও। (হিতোপদেশ ৬:২০-২২; ইফিষীয় ৬:১-৩) প্রাচীনদের কাছে নির্দেশ এবং উৎসাহের জন্য যাও। (যিশাইয় ৩২:১, ২) তোমার মন এবং চক্ষু আধ্যাত্মিক মূল্য এবং লক্ষ্যগুলি উপরে রাখ। আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং মণ্ডলীর কাজে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সুযোগ খুঁজে নাও। নিজের হাতে কী করে কাজ করতে হয় সেই বিষয়গুলি শেখ। বিশ্বাসে দৃঢ় এবং স্বাস্থ্যকরভাবে গড়ে ওঠ আর তাহলে তুমি প্রমাণ করতে পারবে যে তুমি একজন ব্যক্তি—একজন ব্যক্তি যে যিহোবার নতুন জগতে জীবন পাওয়ার যোগ্য! আমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমার জন্য গর্বিত হবেন, তোমার পার্থিব পিতামাতা তোমাতে আনন্দ করবে এবং তোমার খ্রীষ্টীয় ভাই ও বোনেরা তোমার দ্বারা উৎসাহিত হবে। সেটিই গুরুত্বপূর্ণ!—হিতোপদেশ ৪:১, ২, ৭, ৮.
১৭. যারা যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপর আস্থা রাখে তাদের কোন্ উপকারগুলি আসে?
১৭ পদ্যের ভাষাতে গীতরচক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এই বিষয়টি লিখতে: “যাহারা সিদ্ধতায় চলে, তিনি তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিবেন না। হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তোমার উপরে নির্ভর করে।” (গীতসংহিতা ৮৪:১১, ১২) হ্যাঁ, নিরাশ এবং অসফলতার পরিবর্তে সুখ এবং সফলতা পাবে সেই সব ব্যক্তিরা যারা যিহোবা এবং তাঁর বাক্য, বাইবেলের উপর আস্থা রাখে।—২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৬, ১৭.
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কেন খ্রীষ্টানদের “জগতের যে জ্ঞান” তার উপর আস্থা রাখা উচিত নয়?
◻ যদি এক ব্যক্তি সন্দেহ অনুভব করে, তাহলে কী করা উচিত?
◻ যিহোবার পথ অনুযায়ী জিনিসগুলি করা কিভাবে বিবাহে সফলতা এবং সুখ নিয়ে আসে?
◻ ‘যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন করতে’ বাইবেল কিভাবে যুবক-যুবতীদের সাহায্য করে?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্টানেরা যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের প্রতি তাকায় এবং “জগতের যে জ্ঞান” তা মুর্খ বলে প্রত্যাখ্যান করে
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা এবং তাঁর বাক্যের উপরে যে পরিবারগুলি আস্থা রাখে তাদের সফলতা এবং সুখ রয়েছে