“নশ্বর ভক্ষ্যের নিমিত্ত শ্রম করিও না”
ডেভিড লেনস্ট্রেম দ্বারা কথিত
আমার ভাই এলউড ও আমি ভূমি থেকে নয় মিটার উচ্চে একটি ভারার উপর দাঁড়িয়ে ওয়াচটাওয়ার কারখানা বিল্ডিং-এ একটি নতুন সাইনবোর্ড রঙ করছিলাম। ৪০ বছরের বেশি পরেও এটি সেখানেই আছে, যেটি উৎসাহ দেয়: “প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পবিত্র বাইবেল পড়ুন।” প্রত্যেক সপ্তাহে সহস্র সহস্র লোক এই সাইনবোর্ডটি দেখে যখন তারা বিখ্যাত ব্রুকলিন সেতুটি পার হয়।
আমার প্রাথমিক স্মৃতির অন্তর্ভুক্ত হল আমাদের পারিবারিক কাপড় পরিষ্কার করার দিনটি। সকাল ৫:০০টার মধ্যে মা উঠতেন আমাদের বড় পরিবারের কাপড় পরিষ্কার করার জন্য আর বাবা কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেন। আবার তারা তাদের ঝগড়া শুরু করতেন, বাবা তর্ক করতেন যে মানুষ কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে আর মা বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি করতেন প্রমাণ করার জন্য যে মানুষ ঈশ্বরের সরাসরি সৃষ্টি।
এমনকি যখন আমি মাত্র সাত বছরের, আমি বুঝেছিলাম মা সঠিক ছিল। যদিও আমি বাবাকে ভালবাসতাম, আমি দেখি যে তার বিশ্বাস ভবিষ্যতের জন্য কোন আশা প্রদান করে না। আমার মা কতই না খুশি হয়েছিলেন অনেক বছর পরে যখন তিনি জানতে পারেন যে তার দুই ছেলে একটি সাইনবোর্ড রঙ করছিল যা লোকেদের বাইবেল পড়তে উৎসাহ দেয়, এমন একটি বই যেটি তার খুব প্রিয় ছিল!
কিন্তু আমি ধারাবাহিকভাবে গল্প বলছি না। কিভাবে আমি এইধরনের একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাই? তার জন্য আমার জন্মগ্রহণের তিন বছর আগে, ১৯০৬ সালে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন আছে।
মায়ের বিশ্বস্ত উদাহরণ
সেই সময় মা ও বাবা নববিবাহিত ছিলেন ও অ্যারিজোনায় একটি তাঁবুতে বাস করতেন। এক বাইবেলের ছাত্র, যেমন যিহোবার সাক্ষীদের তখন ডাকা হত, আসেন ও মাকে চার্লস তেজ রাসেলের লেখা শাস্ত্র থেকে অধ্যয়ন (ইংরাজি) নামক ধারাবাহিক বইগুলি অর্পণ করেন। তিনি সারারাত ধরে সেগুলিকে পড়েন ও শীঘ্রই উপলব্ধি করেন যে, এটিই সত্য যা তিনি এতদিন ধরে অন্বেষণ করছিলেন। তিনি খুব উদগ্রীবভাবে বাবার কাজ খোঁজা থেকে ফেরার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।
বাবাও গির্জার শিক্ষায় অতৃপ্ত ছিলেন, সুতরাং কিছু সময়ের জন্য তিনি এই বাইবেলের সত্য গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে, অবশ্য তিনি ধর্মীয়ভাবে তার নিজস্ব পথে যান আর এটি এমনকি মায়ের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি করেছিল। তবুও মা কখনও তার সন্তানদের প্রতি দৈহিক ও সেইসাথে আধ্যাত্মিক যত্ন নেওয়া থেকে নিবৃত্ত হননি।
আমাদের সাথে বাইবেলের কিছু অংশ পড়বার জন্য অথবা কোন আধ্যাত্মিক মূল্যবান বিষয় ভাগ করে নেওয়ার জন্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পরও প্রত্যেক রাত্রে মায়ের নিচে নেমে আসা, আমি কখনও ভুলতে পারব না। বাবাও একজন পরিশ্রমী ব্যক্তি ছিলেন আর আমি বড় হওয়ার সাথে সাথে তিনি আমাকে রঙ করার বৃত্তি শেখান। হ্যাঁ, বাবা আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন, কিন্তু মা আমাকে শিখিয়েছিলেন কিসের জন্য কাজ করতে হবে, যেমন যীশু নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘সেই ভক্ষ্য যাহা নশ্বর নয়।’—যোহন ৬:২৭.
আমাদের পরিবার পরে ওয়াসিংটন রাজ্যের এলেনসবার্গ এর একটি ছোট শহরে যা সিয়েটলের প্রায় ১৮০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ছিল সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। যখন আমরা ছোটরা মায়ের সাথে বাইবেল ছাত্রদের সভায় উপস্থিত হতাম, আমরা ব্যক্তিগত ঘরগুলিতে একত্রিত হতাম। সমস্ত পুরুষ সদস্যরা আমাদের অধ্যয়নের দল ছেড়ে দিয়েছিল যখন গৃহ থেকে গৃহে পরিচর্যা কাজের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মা কখনও বিচলিত হননি। সর্বদা যিহোবার সংগঠনের নির্দেশনার প্রতি আস্থা রাখার ক্ষেত্রে এটি আমার উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।
পরে বাবা মার নয়টি সন্তান হয়েছিল। তাদের তৃতীয় সন্তান, আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম ১৯০৯ সালের ১লা অক্টোবর। আমাদের মোট ছয়জন মায়ের উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করেছিল ও যিহোবার উদ্যোগী সাক্ষী হয়েছিল।
উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম
যখন আমি আমার কৈশরাবস্থার শেষ পর্যায়ে ছিলাম, তখন আমি যিহোবার কাছে উৎসর্গ করি আর প্রতীকস্বরূপ ১৯২৭ সালে জলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করার দ্বারা তা প্রদর্শন করি। বাপ্তিস্ম অনুষ্ঠানটি হয়েছিল সিয়েটলের এক পুরনো বিল্ডিং-এ যেটি পূর্বে একটি ব্যাপ্টিস্ট গির্জা ছিল। তারা পুরনো চূড়া সরিয়ে দেওয়ায় আমি খুশি হই। আমাদের পথ দেখিয়ে সেই অট্টালিকার সবচেয়ে নিচের তলায় নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে আমাদের পরার জন্য লম্বা কালো কাপড় দেওয়া হয়। এটি দেখতে এমন ছিল যেন আমরা কোন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যাচ্ছি।
অল্প কিছু মাস পরে আবার আমি সিয়েটলে ছিলাম ও সেই সময় আমি প্রথম ঘরে ঘরে পরিচর্যার স্বাদ পাই। যিনি নেতৃত্ব দিতেন তিনি আমাকে নির্দেশ দেন, “তুমি ব্লকের এই দিক দিয়ে যাও আর আমি অন্য দিক দিয়ে আসব।” আমার আত্মপ্রত্যয়ের অভাব সত্ত্বেও আমি এক সুন্দর মহিলার কাছে দুই সেট পুস্তিকা অর্পণ করেছিলাম। যখন আমি এলেনসবার্গে ফিরে আসি তখনও আমি ঘরে ঘরে প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে থাকি আর এখন, প্রায় ৭০ বছর পরে এই পরিচর্যা আজও আমার কাছে এক মহা আনন্দের বিষয়।
বিশ্ব প্রধান কার্যালয়ে সেবা করা
তার খুব বেশি পরে নয়, এক ব্যক্তি যিনি বেথেলে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ে সেবা করতেন, আমাকে উৎসাহিত করেন সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে সেবা করার জন্য। আমাদের কথোপকথনের অল্প দিন পরেই একটি বিজ্ঞপ্তি প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেখা গিয়েছিল যার দ্বারা বেথেলে সাহায্য করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানা গিয়েছিল। সুতরাং আমি আবেদন করেছিলাম। আমি কখনও আমার সেই আনন্দের কথা ভুলব না যা ১৯৩০ সালে ১০ই মার্চ, নিউ ইয়র্ক, ব্রুকলিন বেথেল সেবার জন্য আসা চিঠিটি গ্রহণ করে আমার হয়েছিল। তাই তখনই আমার পূর্ণ-সময়ের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ‘সেই ভক্ষ্য যা নশ্বর নয়’ তার উদ্দেশ্যে।
আমার রঙ করার কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় কেউ হয়ত মনে করতে পারে আমি কিছু রঙ করার কার্যভারে নিযুক্ত হয়েছিলাম। পরিবর্তে, আমার প্রথম কাজ ছিল কারখানায়, সেলাই মেশিনে। যদিও এটি খুব একঘেয়ে কাজ ছিল, আমি ছয় বছরেরও বেশি কাজটি উপভোগ করেছিলাম। বৃহৎ রোটারী প্রেস যাকে আমরা কৌতুকচ্ছলে পুরনো যুদ্ধজাহাজ বলতাম যাতে উৎপাদিত পুস্তিকাগুলি কনভেয়ার বেল্টে করে আমাদের নিচের তলায় পাঠান হত। এটি দেখা আমাদের কাছে খুব উপভোগ্য ছিল, যদি আমরা যুদ্ধজাহাজ থেকে পুস্তিকাগুলি পাওয়ার সাথে সাথেই সেগুলিকে সেলাই করতে পারতাম।
এরপর আমি একাধিক বিভাগে কাজ করেছিলাম, এর অন্তর্ভুক্ত ছিল একটি বিভাগ যেখানে আমরা ধ্বনিগ্রাহী যন্ত্র তৈরি করতাম। আমরা এই মেশিনগুলি ব্যবহার করতাম রেকর্ড করা বাইবেল সংবাদ গৃহকর্তাদের ঘরের দরজায় বাজাতে। একটি উল্লম্ব ধ্বনিগ্রাহী যন্ত্র আমাদের কর্মবিভাগে প্রস্তুত ও উৎপাদিত হয়েছিল। এই ধ্বনিগ্রাহী যন্ত্র কেবলমাত্র পূর্বে রেকর্ড করা সংবাদ পরিবেশনেই বাজানো হত না, কিন্তু এর সাথে বিশেষ কিছু বিভাগ থাকত পুস্তিকাগুলি বহন করার জন্য আর সম্ভবত একটি স্যান্ডউইচ। ১৯৪০ সালে মিশিগানের ডেট্রয়েটে, এক সম্মেলনে আমার সুযোগ হয়েছিল এই নতুন যন্ত্রটির ব্যবহার প্রদর্শন করার।
কিন্তু, আমরা এই বিশিষ্ট মেশিনগুলি ছাড়াও আরও কিছু তৈরি করতাম। আমরা গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক রদবদলগুলিও করছিলাম। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সাক্ষীরা একটি ব্রোচ ব্যবহার করত যাতে একটি ক্রশ ও একটি মুকুট থাকত। কিন্তু তারপর আমরা বুঝতে পারি যে যীশু হত হয়েছিলেন একটি সোজা কাষ্ঠদণ্ডে, ক্রশে নয়। (প্রেরিত ৫:৩০) সুতরাং এই ব্রোচটি পরা বর্জন করা হয়। সেই ব্রোচগুলি থেকে কীলক খুলে ফেলার সুযোগ আমার হয়েছিল। পরে সেই সোনা গলিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
যদিও আমাদের সপ্তাহে সাড়ে পাঁচ দিনের এক ব্যস্ত কর্মতালিকা ছিল, আমরা সপ্তাহ শেষে খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় যুক্ত থাকতাম। একদিন আমাদের ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় ও ব্রুকলিনের জেলে পাঠানো হয়। কেন? কারণ সেই দিনগুলিতে আমরা সমস্ত ধর্মগুলিকে মিথ্যা ধর্মের সাথে সমার্থক হিসাবে বিবেচনা করতাম। সুতরাং আমরা একটি প্রতীক বহন করতাম যার একদিকে এইভাবে পড়া হত “ধর্ম একটি ফাঁদ ও ফন্দি।” আর অপর দিকে লেখা থাকত “ঈশ্বর ও রাজা খ্রীষ্টের পরিচর্যা করুন।” এই প্রতীকগুলি বহন করার জন্য আমাদের জেলে দেওয়া হয়, কিন্তু হেইডেন কেভিনটেন, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির আইনজ্ঞ আমাদের জামিনে মুক্ত করেন। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে উপাসনায় স্বাধীনতা সংক্রান্ত অনেক বিষয়ের বিচার চলছিল আর তাই তখন বেথেলে থাকা ও আমাদের বিজয় সম্বন্ধে প্রথমে শোনা রোমাঞ্চকর ছিল।
পরে আমি সেই কাজে নিযুক্ত হয়েছিলাম যেখানে আমার রঙ করার কাজের অভিজ্ঞতা ব্যবহৃত হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক শহরের পাঁচটি পৌরনগরের একটি স্টেটেন দ্বীপে আমাদের একটি বেতার কেন্দ্র ডব্লিউ.বি.বি.আর. ছিল। বেতার কেন্দ্রের টাওয়ারটি ৬০ মিটার উঁচু ছিল আর সেখানে তিন সেট রজ্জুদণ্ড ছিল। আমি দশমিক ৯ মিটার লম্বা ও ২০ সেন্টিমিটার চওড়া একটি কাঠের ফলকের উপর বসতাম যখন আমার সহকর্মী আমাকে উপরের দিকে টেনে তুলত। ভূমি থেকে এত উঁচুতে একটি ছোট জায়গায় বসে আমি রজ্জুদণ্ড ও টাওয়ার রঙ করতাম। কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, যে ওই কাজ করার সময় আমরা কি অনেক প্রার্থনা করি না!
এক গ্রীষ্মকালীন কাজ যা আমি কখনও ভুলব না সেটি ছিল কারখানা বিল্ডিং এর জানালাগুলি ধোওয়া ও সেগুলি রঙ করা। আমরা এটিকে আমাদের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বলে ডাকতাম। আমরা আমাদের কাঠের ভারা কাষ্ঠখণ্ড ও কপিকল দিয়ে কার্যোপযোগী করে সজ্জিত করতাম যা আমাদের আট-তলা বিল্ডিং এর উপরে উঠতে ও নিচে নামতে সাহায্য করত।
একটি সমর্থনকারী পরিবার
১৯৩২ সালে, আমার বাবা মারা যান আর আমি ভেবেছিলাম আমার হয়ত বাড়ি ফিরে যাওয়া ও মায়ের দেখাশোনায় সাহায্য করা উচিত। তাই একদিন দুপুরের খাওয়ার আগে আমি প্রধান টেবিল যেখানে সমিতির সভাপতি ভাই রাদারফোর্ড বসতেন, সেখানে একটি নোট রাখি। এই নোটটিতে আমি তার সাথে কথা বলতে চেয়ে অনুরোধ জানাই। আমার সম্বন্ধে ও আমার ঘরে আরও ভাই বোনেরা এখনও আছে জেনে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কি বেথেলে থেকে, প্রভুর কাজ করে চলতে চাও?”
“অবশ্যই আমি করতে চাই” আমি উত্তর দিয়েছিলাম।
সুতরাং তিনি আমাকে পরামর্শ দেন মাকে লিখে দেখতে যে মা আমার এখানে থাকার সিদ্ধান্তের সাথে একমত হন কি না। আমি তাই করেছিলাম আর তিনি আমার সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ সমমত ব্যক্ত করে তার মত জানিয়েছিলেন। আমি ভাই রাদারফোর্ডের দয়া ও পরামর্শ প্রকৃতই উপলব্ধি করেছিলাম।
বেথেলে দীর্ঘ বছরগুলি অতিক্রম করাকালীন আমি নিয়মিতভাবে আমার পরিবারে লিখতাম ও যিহোবাকে সেবা করার জন্য উৎসাহিত করতাম ঠিক যেমন আমার মা আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন। মা মারা যান ১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে। আমাদের পরিবারের জন্য তিনি কত অনুপ্রেরণাদায়ক ছিলেন! কেবল আমার বড় ভাই ও বোন, পল ও এস্টার এবং ছোট বোন লোয়েস সাক্ষী হয়নি। কিন্তু, পলের আমাদের কাজের প্রতি সমর্থন ছিল আর সে যেখানে আমরা আমাদের প্রথম কিংডম হল তৈরি করেছিলাম সেখানে জমির ব্যবস্থা করেছিল।
১৯৩৬ সালে আমার বোন ইভা অগ্রগামী বা পূর্ণ-সময়ের প্রচারক হয়েছিল। সেই একই বছরে সে রাল্ফ টমাসকে বিবাহ করেছিল, ১৯৩৯ সালে তারা যিহোবার সাক্ষীদের মণ্ডলীগুলিতে সেবা করার জন্য ভ্রমণের কাজে নিযুক্ত হয়। পরে তাদের মেক্সিকোয় পাঠানো হয়, যেখানে তারা ২৫ বছর রাজ্যের কাজে সাহায্য করার জন্য কাটায়।
১৯৩৯ সালে আমার বোন অ্যালিস ও ফ্রান্সেসও অগ্রগামী কাজ গ্রহণ করে। অ্যালিসের কাছে ১৯৪১ সালে সেন্ট লুইস সম্মেলনে ধ্বনিগ্রাহী যন্ত্র যেটি তৈরি করতে আমি সাহায্য করেছিলাম তার ব্যবহার প্রদর্শন করার বিভাগে কাজ করতে দেখা কত আনন্দেরই না ছিল! যদিও কয়েকবার অ্যালিসকে পারিবারিক দায়িত্বের কারণে অগ্রগামীর কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছিল, তবুও সর্বমোট ৪০ বছরের উপর সে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় অতিবাহিত করেছিল। ফ্রান্সেস ১৯৪৪ সালে ওয়াচটাওয়ার স্কুল অফ গিলিয়াডে যোগ দিয়েছিল ও পুয়র্টো রিকোতে মিশনারী হিসাবে কিছু সময় সেবা করেছিল।
যোয়েল ও এলউড পরিবারের সবচেয়ে ছোট দুজন ১৯৪০ দশকের প্রথমদিকে মনটনাতে অগ্রগামী হিসাবে সেবা করেন। যোয়েল এক বিশ্বস্ত সাক্ষী ছিল ও এখন সে একজন পরিচারক দাস হিসাবে সেবা করে। এলউড ১৯৪৪ সালে আমার সাথে বেথেলে যোগ দিয়েছিল যা আমার হৃদয়কে গভীরভাবে আনন্দিত করেছিল। আমি যখন ঘর ছেড়েছিলাম সে তখন পাঁচ বছরেরও ছোট ছিল। যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে আমরা কারখানা বিল্ডিং এর সাইনবোর্ডটি একসাথে রঙ করছিলাম, “প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পবিত্র বাইবেল পড়ুন।” আমি প্রায়ই আশ্চর্য হতাম এই ভেবে যে কত লোকেরা যারা সেই সাইনবোর্ডটি বছরের পর বছর দেখেছে তারা তাদের বাইবেল পড়তে উৎসাহিত হয়েছে।
এলউড ১৯৫৬ সালে এমা ফ্লিটকে বিবাহ করার আগে পর্যন্ত বেথেলে সেবা করেছিল। অনেক বছর ধরে এলউড ও এমা একসাথে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করে যার মধ্যে তারা কিছু সময়ের জন্য কেনিয়া, আফ্রিকা ও সেইসাথে স্পেনেও পরিচর্যা করেছিল। এলউড ক্যানসারে আক্রান্ত হয় ও ১৯৭৮ সালে মারা যায়। এমা আজ পর্যন্ত স্পেনে তার অগ্রগামী কাজে নিযুক্ত আছে।
বিবাহ ও পরিবার
১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি ব্রুকলিন সেন্টার মণ্ডলী যেখানে আমি যোগ দিতাম সেখানকার এক অগ্রগামী অ্যালিস রিভেরাকে বিবাহ করার জন্য বেথেল ছেড়ে দিই। আমি অ্যালিসকে জানিয়েছিলাম যে আমার স্বর্গীয় আশা আছে, কিন্তু তবুও সে আমাকে বিবাহ করতে আগ্রহী ছিল।—ফিলিপীয় ৩:১৪.
বেথেলে ২৩ বছর বাস করার পর অ্যালিস ও আমার অগ্রগামী কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে রঙের কাজ শুরু করতে কিছুটা মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। অ্যালিস সবসময়ের জন্য খুব সহযোগী ছিল এমনকি তখনও যখন শারীরিক কারণে তাকে অগ্রগামীর কাজ ছেড়ে দিতে হয়। ১৯৫৪ সালে আমরা আমাদের প্রথম সন্তান আশা করেছিলাম। প্রসবের সময়টা আশঙ্কাজনক ছিল যদিও আমাদের ছেলে জন ভাল ছিল। অস্ত্রোপচারের সময় অ্যালিস এত বেশি রক্ত হারিয়েছিল যে চিকিৎসকেরা ভাবেনি যে সে বাঁচবে। এক সময় এমনকি তারা হৃদস্পন্দন পাচ্ছিল না। তথাপি সে সেই রাতে বেঁচেছিল ও পরে সম্পূর্ণভাবে পুনরায় সুস্থ হয়েছিল।
অল্প কিছু বছর পরে, অ্যালিসের বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা তার মায়ের সাথে লং আইল্যাণ্ডে চলে যাই। যেহেতু আমাদের কোন গাড়ি ছিল না, তাই আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসাবে হেঁটে যেতাম অথবা বাস ও সাবওয়ে ব্যবহার করতাম। আমি এইভাবে আমার অগ্রগামী কাজ ও আমার পরিবারকে পালন করার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলাম। পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার আনন্দ যে কোন ত্যাগস্বীকারকে ছাপিয়ে যায়। লোকেদের সাহায্য করা—যেমন জো নেটালি যে তার নিশ্চিত বেসবল খেলার কর্মজীবন ত্যাগ করে একজন সাক্ষী হওয়ার জন্য—যেটি ছিল আমার পাওয়া অনেক আশীর্বাদগুলির মধ্যে একটি।
যেহেতু নিউ ইয়র্ক শহরের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে তাই ১৯৬৭ সালে, আমি স্থির করি বসবাস করার জন্য অ্যালিস ও জনকে নিয়ে আমাদের নিজস্ব শহর এলেনসবার্গে যাব। এখন আমি আমার অনেক পৌত্রদের ও আমার মায়ের অনেক প্রপৌত্রদের পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় অংশ নিতে দেখাকে পুরস্কারজনক মনে করি। এদের কিছুজন বেথেলেও সেবা করে। জনও তার স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলেছে।
দুঃখজনকভাবে, আমি আমার প্রিয় স্ত্রী অ্যালিসকে ১৯৮৯ সালে মৃত্যুতে হারায়। পূর্ণ-সময় পরিচর্যার ব্যস্ততা আমাকে এই ক্ষতি সহ্য করতে সাহায্য করেছে। আমার বোন অ্যালিস ও আমি এখন একসাথে অগ্রগামীর কাজ উপভোগ করি। এটি কতই না উত্তম আবার একই ছাতের তলায় বাস করা ও একসাথে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকা!
১৯৯৪ সালের বসন্ত কালে, এই ২৫ বছরে প্রথমবার আমি বেথেল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। ৪০ বছরেরও আগে যাদের সাথে আমি কাজ করেছিলাম তাদের অনেককে দেখতে পাওয়া ভীষণ আনন্দের ছিল! যখন ১৯৩০ সালে আমি বেথেলে যোগ দিয়েছিলাম, তখন পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫০ জন, কিন্তু আজকে ব্রুকলিন বেথেল পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩,৫০০ জনের বেশি!
আধ্যাত্মিক খাদ্য দ্বারা পালিত হওয়া
অধিকাংশ দিন খুব সকালে আমি আমাদের বাড়ির কাছে ইয়াকিমা নদীর ধারে বেড়াতে যাই। সেখান থেকে আমি বরফ আচ্ছাদিত মহিমাময় রায়িনিয়ার পর্বত দেখতে পাই যা ৪,৩০০ মিটারের বেশি উচ্চ। সেখানে প্রচুর বন্যজন্তু রয়েছে। কখনও কখনও আমি হরিণ দেখতে পাই আর একবার আমি এমনকি এল্ক দেখেছিলাম।
এই শান্ত নিসঙ্গ সময়গুলি আমাকে যিহোবার অপূর্ব ব্যবস্থা সম্বন্ধে ধ্যান করার অবসর দিয়েছিল। আমি শক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি যেন ক্রমাগত বিশ্বস্ততার সাথে আমাদের ঈশ্বর যিহোবার সেবা করে যেতে পারি। বেড়ানোর সময় আমি বিশেষ করে “যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করা,” এই গানটি গাইতে ভালোবাসি যার ছত্রগুলি বলে: “মহান ঈশ্বর আমরা তোমার ইচ্ছা পালন করার অঙ্গীকার করেছি; প্রজ্ঞার সাথে আমরা তোমার কাজ পূর্ণ করব। কারণ তখনই আমরা জানি তোমার প্রেমময় হৃদয়কে আনন্দিত করায় আমাদের অংশ আছে।”
আমি খুশি যে আমি এমন একটি কাজ নির্বাচন করেছি যা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে। আমি প্রার্থনা করি প্রতিজ্ঞাত স্বর্গীয় পুরস্কার না পাওয়া পর্যন্ত যেন আমি এই কাজ করে যেতে পারি। আমার ইচ্ছা এই যে, এই বর্ণনা যেন অন্যদেরও তাদের জীবনকে ‘সেই ভক্ষ্য যা নশ্বর নয় তার জন্য কাজে’ ব্যবহার করতে পরিচালিত করে।—যোহন ৬:২৭.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
এলউড সেই সাইনবোর্ডটি রঙ করছে “প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পবিত্র বাইবেল পড়ুন”
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৪০ সালের সম্মেলনে গ্র্যান্ট সুটার ও জন কার্জারের সাথে ধ্বনিগ্রাহী যন্ত্রটি প্রদর্শন করা হয়
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৪৪ সালে আমাদের মধ্যে যারা সত্যে ছিল ও পূর্ণ-সময় পরিচর্যায় নিযুক্ত ছিল: ডেভিড, অ্যালিস, যোয়েল, ইভা, এলউড এবং ফ্রান্সেস
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
জীবিত ভাইবোনেরা বাঁ দিক থেকে: অ্যালিস, ইভা, যোয়েল, ডেভিড এবং ফ্রান্সেস