যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয় আঘাত করে
আক্রা, ঘানা, জুলাই ৪, ১৯৯৫: প্রায় ৬০ বছরের মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে তীব্র বন্যা ঘটে। প্রায় ২,০০,০০০ জন সমস্তকিছু হারায়, ৫,০০,০০০ জন তাদের গৃহের প্রবেশপথ এবং ২২ জন তাদের জীবন হারায়।
সান এঞ্জেলো, টেক্সাস, ইউ.এস.এ, মে ২৮, ১৯৯৫: ঘূর্ণিঝড় এবং শিলাবৃষ্টি ৯০,০০০ জন অধিবাসীর এই শহরটিকে বিধ্বস্ত করে যার কারণস্বরূপ আনুমানিক ১২ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র) ক্ষতি হয়।
কোবে, জাপান, জানুয়ারি ১৭, ১৯৯৫: মাত্র ২০ সেকেণ্ড স্থায়ী ভূমিকম্প হাজার হাজার লোকের মৃত্যু ঘটায়, লক্ষাধিক আহত ও শতসহস্র গৃহহীন হয়ে পড়ে।
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যাকে হয়ত বিপর্যয়ের যুগ বলা যেতে পারে। জাতিসংঘের এক রিপোর্ট প্রকাশ করে যে ১৯৬৩-৯২ সাল পর্যন্ত, এই ৩০ বছরের মধ্যে বিপর্যয়গুলির দ্বারা নিহত, আহত এবং বিতাড়িত লোকেদের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে শতকরা ৬ ভাগ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি জাতিসংঘকে ১৯৯০ এর দশকটিকে “প্রাকৃতিক বিপর্যয় হ্রাস করার আন্তর্জাতিক দশক” হিসাবে আখ্যা দিতে বাধ্য করেছে।
অবশ্য, এক প্রাকৃতিক শক্তি—যেমন ঝড়, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বা ভূমিকম্প—সর্বদা বিপর্যয় নিয়ে আসে না। প্রতি বছর এইগুলির শতাধিক ঘটে থাকে যাতে মানুষের কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু যখন জীবন ও সম্পদের অত্যধিক ক্ষতি জড়িত হয়, তখনই তাকে যথাযথভাবে একটি বিপর্যয় বলা যায়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বৃদ্ধিকে অপরিহার্য বলে মনে হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি—ঈশ্বরের কর্ম অথবা মানুষের কর্ম? (ইংরাজি), নামক বইটি মন্তব্য করে: “লোকেরা তাদের পরিবেশকে কিছু বিপর্যয়ের প্রতি আরও আসক্ত হয়ে পড়ার মত করে পরিবর্তন করছে আর এমন ব্যবহার তারা করে চলেছে যা তাদের এই আকস্মিক ঘটনাগুলির প্রতি আরও অরক্ষিত করেছে।” বইটি একটি প্রকল্পিত নমুনা উপস্থাপন করে: “খাড়া উপত্যকার পাশে অবস্থিত ভারী মাটির ইঁটে নির্মিত গৃহসহ এক বস্তি অঞ্চলে, মৃদু ভূমিকম্পের কারণে মানুষের মৃত্যু এবং দুঃখকষ্টের পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত তা একটি বিপর্যয় হিসাবে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু এই বিপর্যয়ের কারণ কি বেশিভাবে ভূকম্পন অথবা বিষয়টি এই, যে লোকেরা এইধরনের বিপদজনক ভূমির উপর নির্মিত বিপদজনক গৃহে বসবাস করছে?”
বাইবেলের ছাত্রদের জন্য, কেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলির বৃদ্ধি আশ্চর্যজনক নয় তার আরও একটি কারণ রয়েছে। প্রায় ২,০০০ বছর পূর্বে, যীশু খ্রীষ্ট ভাববাণী করেছিলেন যে “এই বিধিব্যবস্থার শেষ,” অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাথে “স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প” দ্বারা চিহ্নিত হবে। (মথি ২৪:৩, (NW), ৬-৮) এছাড়াও বাইবেল ভাববাণী করেছিল যে, ‘শেষ কালে,’ মানুষেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, স্নেহরহিত এবং সদ্বিদ্বেষী হবে।a (২ তীমথিয় ৩:১-৫) এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রায়ই মানুষের তার পরিবেশের প্রতিকূলে কাজ করার কারণ হয়েছে যা মানবজাতিকে প্রাকৃতিক শক্তিগুলির সামনে আরও অরক্ষিত করে। মানব-সৃষ্ট বিপর্যয়গুলিও প্রেমহীন সমাজের একটি প্রশাখা, যেখানে অধিকাংশকে বসবাস করতে হয়।
যতই আমাদের গ্রহ আরও জনবহুল হচ্ছে, যতই মানবজাতির ব্যবহার লোকেদের অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে এবং যতই পৃথিবীর সম্পদের উত্তরোত্তর অপব্যবহার করা হচ্ছে, বিপর্যয়গুলি ততই মানুষকে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকবে। তাই ত্রাণ সরবরাহ করা প্রতিদ্বন্দ্বিতাস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায় যেমন পরবর্তী প্রবন্ধটি দেখাবে।
[পাদটীকাগুলো]
a শেষ কালের চিহ্ন সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য, ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটির, পৃষ্ঠা ৯৮-১০৭ দেখুন।
[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Top: Information Services Department, Ghana; right: San Angelo Standard-Times
[২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
COVER: Maxie Roberts/Courtesy of THE STATE