পণ্ডিতদের মতানুসারে সুসমাচার
“আমি কে, এ বিষয়ে লোকসমূহ কি বলে?” (লূক ৯:১৮) প্রায় দুই সহস্র বছর পূর্বে যীশু তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়টি জিজ্ঞাসা করেছিলেন। প্রশ্নটি সেই সময় বিতর্কমূলক ছিল। আর এখন তা এমনকি আরও বেশি বলে মনে হয়, বিশেষকরে বড়দিনের মরশুমে, যা তথাকথিতভাবে যীশুকে কেন্দ্র করে ঘটে থাকে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য স্বর্গ থেকে যীশুকে পাঠানো হয়েছিল। এটি কি তাই যা আপনিও চিন্তা করেন?
কিছু পণ্ডিতেরা অন্য দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে প্রস্তাব দেন। ধর্ম এবং সংস্কৃতির অধ্যাপক মারকস জে. বর্গ দাবি করেন যে “এইপ্রকার এক ব্যক্তি হিসাবে যীশুর ভাবমূর্তি ঐতিহাসিকভাবে সত্য নয়, যিনি শিখিয়েছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন, যাঁকে জগতের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল।”
অন্যান্য পণ্ডিতেরা দাবি করেন যে বাইবেলে আমরা যা পড়ি তার থেকে প্রকৃত যীশু ভিন্ন ছিলেন। কিছুজন বিশ্বাস করেন যে সমস্ত সুসমাচার পুস্তক যীশুর মৃত্যুর চার দশক অথবা তার চেয়েও বেশি পরে লেখা হয়েছিল আর তাই সেইসময়ের মধ্যে যীশুর প্রকৃত পরিচিতিকে অলঙ্কৃত করা হয়ে গিয়েছিল। পণ্ডিতেরা দৃঢ়রূপে নিশ্চিত করেন যে, সমস্যা সুসমাচার লেখকদের স্মৃতিতে নয়, কিন্তু তাদের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ছিল। যীশুর মৃত্যুর পরে শিষ্যেরা তাঁকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে থাকেন—ঈশ্বরের পুত্র, ত্রাণকর্তা এবং মশীহরূপে। কিছুজন সাহসের সাথে এও দাবি করেন যে যীশু একজন বিস্ময়কর পরম বিজ্ঞ ব্যক্তি, একজন সমাজ সংস্কারকের চেয়ে বেশি কিছু ছিলেন না। পণ্ডিতেরা বলে থাকেন, এটিই হল সুসমাচারের সত্য।
যীশু সম্বন্ধে “পাণ্ডিত্যপূর্ণ” দৃষ্টিভঙ্গি
তাদের “পাণ্ডিত্যপূর্ণ” দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করতে, সমালোচকদের যীশু সম্বন্ধে সমস্ত অতিলৌকিক বিষয়গুলি বর্জন করার জন্য উৎসুক হতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, কিছুজন বলেন কুমারী গর্ভে জন্ম, যীশুর অবৈধতার উপর এক আচ্ছাদন দেওয়ার প্রচেষ্টা মাত্র। অন্যান্যেরা, যিরূশালেম ধ্বংস সম্বন্ধে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীকে অস্বীকার করে এই বিষয়টির উপর জোর দিয়ে যে, সেগুলি “পরিপূর্ণতার” পরে সুসমাচার পুস্তকে সংযোজিত হয়েছে। কিছুজন এমনকি বলে থাকেন যীশুর আরোগ্য সাধন ছিল নিশ্চিতভাবে এক সম্মোহন—শরীরের উর্ধ্বে মনকে স্থান দেওয়া। আপনি কি এইধরনের প্রস্তাবগুলিকে যথার্থ অথবা অযৌক্তিক বলে মনে করেন?
নির্দিষ্ট কিছু পণ্ডিতেরা এমনকি দাবি করেন যে, যীশুর শিষ্যেরা তাদের কার্যধারাকে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য পুনরুত্থানের বিষয়টি উদ্ভাবন করে নিয়েছিলেন। সর্বোপরি, পণ্ডিতেরা যুক্তি করেন যে, যীশুর অনুগামীরা তাঁকে ছাড়া ক্ষমতাহীন ছিল, সুতরাং তারা কাহিনীর মধ্যে তাদের প্রভুর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে লিখেছিল। প্রকৃতপক্ষে, খ্রীষ্ট নয়, কিন্তু এটি ছিল খ্রীষ্টতত্ত্ব যা পুনরুত্থিত হয়েছিল। যদি এটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ স্বাধীনতার সুযোগ নেওয়া বলে মনে হয় তাহলে ঈশ্বরতত্ত্ববিদ্ বার্বরা থিরিঙ্গের এই প্রস্তাব সম্বন্ধে কী বলা যায় যেখানে যীশুকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়? তিনি বিশ্বাস করেন যে যীশু তার প্রেকবিদ্ধ অবস্থা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন এবং দুই বার বিবাহ করেছিলেন ও তিনটি সন্তানের পিতা হিসাবে জীবনযাপন করেছিলেন।
এই সমস্ত দাবিগুলি যীশুকে কেবলমাত্র সেই পর্যায় পর্যন্তই আনতে পেরেছে যার ভিত্তিতে অনেক পণ্ডিতেরা তাঁকে এইভাবে স্বীকার করবে: এক জ্ঞানী ব্যক্তি, প্রান্তীয় যিহূদী, সমাজ সংস্কারক—যে কোনকিছুই হোন না কেন, কিন্তু ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে নয়, যিনি “অনেকের পরিবর্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে” এসেছিলেন।—মথি ২০:২৮.
সম্ভবত বছরের এই সময়ে, আপনি সুসমাচারের কিছু অংশ পড়েছেন, যেমন হয়ত সেই অংশটি যেখানে যীশুর জন্ম জাবপাত্রে হয়েছিল বলে বর্ণিত আছে। অথবা আপনি হয়ত এইরকম কিছু গির্জায় শুনেছেন। আপনি কি সুসমাচারের এই বিবরণগুলি মূল্যবান ও বিশ্বাসযোগ্য বলে গ্রহণ করেছিলেন? তাহলে এই আঘাতজনক পরিস্থিতিটির প্রতি লক্ষ্য করুন। এক তথা-কথিত যীশু সম্বন্ধীয় আলোচনাসভায় ১৯৮৫ সাল থেকে এক দল পণ্ডিত যীশুর বাক্যের প্রামাণিকতা নিশ্চিত করার জন্য বছরে দুই বার মিলিত হয়েছেন। যীশু কি প্রকৃতই তাই বলেছিলেন যা বাইবেল তাঁর উপর আরোপ করে? আলোচনাসভার সদস্যেরা প্রত্যেকটি বক্তব্যের উপর রঙিন পুঁথির সাহায্যে মতদান করেছিলেন। একটি লাল পুঁথি বুঝিয়েছিল যে উক্তিটি নিশ্চিতভাবেই যীশুর দ্বারা কথিত হয়েছিল; একটি গোলাপী পুঁথি বুঝিয়েছিল যে সম্ভবত যীশু এটি বলেছিলেন; একটি ধুসর পুঁথি সন্দেহকে সূচিত করেছিল এবং একটি কালো পুঁথি মিথ্যাকে চিহ্নিত করেছিল।
আপনি হয়ত এটি জেনে বিভ্রান্ত হবেন যে যীশু সম্বন্ধীয় আলোচনাসভা ঘোষণা করেছে যে যীশুর উপর আরোপিত ৮২ শতাংশ বাক্য সম্ভবত তাঁর দ্বারা কথিতই হয়নি। কেবলমাত্র মার্কের সুসমাচার থেকে একটি উদ্ধৃতি বিশ্বাসযোগ্য বলে গণ্য করা হয়েছিল। লূকের সুসমাচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল যে সেটি এত বেশি অতিরঞ্জিত বিষয়ে পূর্ণ ছিল যে তা “পুনরুদ্ধারের উর্ধ্বে” পৌঁছেছিল। কেবলমাত্র তিনটি পঙ্ক্তি ছাড়া সম্পূর্ণ যোহনের সুসমাচার কালো পুঁথির মতদান পেয়েছিল যা অসত্যকে ব্যক্ত করে, আর যা কিছু অবশিষ্ট ছিল তা সন্দেহের ধুসর পুঁথি দ্বারা বিবেচিত হয়েছিল।
তত্ত্বের চেয়েও বেশি
আপনি কি পণ্ডিতদের সাথে একমত? তারা কি আমাদের বাইবেলে যীশু সম্বন্ধে যা পাওয়া যায় তার চেয়েও আরও বেশি যথার্থ চিত্রণ উপস্থিত করে? এই প্রশ্নগুলি পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিতর্কের চেয়ে আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বছরের এই সময়টিতে বাইবেল অনুযায়ী আপনাকে হয়ত স্মরণ করিয়ে দেওয়া হতে পারে যে ঈশ্বর যীশুকে পাঠিয়েছিলেন “যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”—যোহন ৩:১৬.
যদি যীশু কেবলমাত্র এক বিস্ময়কর বিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া আর কিছু না হতেন, যার সম্বন্ধে আমরা অল্পই জানি, তাহলে তাঁর উপর ‘বিশ্বাস করা’ নিতান্তই ভিত্তিহীন হবে। অপরদিকে, যদি যীশু সম্বন্ধে বাইবেলের চিত্রণ সত্য হয়, তাহলে তার সাথে আমাদের অনন্তকালীন পরিত্রাণ জড়িত। সুতরাং, আমাদের জানা প্রয়োজন—বাইবেল কি যীশু সম্বন্ধে সত্যগুলি সূচিবদ্ধ করে?