ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৭ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২৫-২৯
  • বাইবেল যেভাবে আমাদের কাছে এসেছে—ভাগ দ্বিতীয়

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • বাইবেল যেভাবে আমাদের কাছে এসেছে—ভাগ দ্বিতীয়
  • ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • এক অগ্রগামী আবির্ভূত হন
  • চার্চ পুনরায় আঘাত করে
  • মুদ্রণের প্রভাব
  • উইলিয়াম টিনডেল ও ইংরাজি বাইবেল
  • গবেষণা স্পষ্টতর বোধগম্যতা নিয়ে আসে
  • টিনডেল ইব্রীয় শাস্ত্রাবলী অনুবাদ করেন
  • বাইবেল ও টিনডেলের উপর নিষেধাজ্ঞা
  • উইলিয়াম টিনডেল—এক দূরদর্শী ব্যক্তি
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • তারা বাইবেলকে মূল্যবান হিসেবে দেখেছিলেন—অংশ-বিশেষ (উইলিয়াম টিনডেল)
    অন্যান্য বিষয়
  • তারা বাইবেলকে মূল্যবান হিসেবে দেখেছিলেন
    অন্যান্য বিষয়
  • আপনি ঈশ্বরের বাক্যকে কতটা মূল্যবান হিসেবে দেখেন?
    আমাদের খ্রিস্টীয় জীবন ও পরিচর্যা—সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা ২০১৯
আরও দেখুন
১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৭ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২৫-২৯

বাইবেল যেভাবে আমাদের কাছে এসেছে—ভাগ দ্বিতীয়

হৈচৈ-পূর্ণ বহ্যুৎসবে যতই ইন্ধন যোগানো হয়েছিল অগ্নিশিখা ততই আকাশের দিকে সবেগে উঠতে থাকে। কিন্তু এটি সাধারণ অগ্নি ছিল না। এই প্রচণ্ড অগ্নি বাইবেল দ্বারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল যা যাজক ও অন্যান্য ধর্মাধিকারীরা দেখেছিলেন। কিন্তু, সেগুলিকে নষ্ট করার জন্য বাইবেল ক্রয় করার দ্বারা লন্ডনের বিশপ অজান্তে অনুবাদক উইলিয়াম টিনডেলকে সাহায্য করেছিলেন যাতে করে তিনি আরও সংস্করণগুলির জন্য অর্থসংস্থান করতে পারেন!

কোন্‌ বিষয়টি উভয় পক্ষকে যুদ্ধের জন্য এইধরনের দৃঢ়সংকল্পে পরিচালিত করেছিল? পূর্ববর্তী সংখ্যায়, আমরা মধ্যযুগের শেষ দিকে বাইবেল প্রকাশনের ইতিহাস বিবেচনা করেছিলাম। এখন আমরা একটি নতুন যুগের প্রারম্ভে এসেছি যখন ঈশ্বরের বাক্যের বার্তা ও কর্তৃত্ব, সমাজের উপর এক প্রগাঢ় প্রভাব ফেলতে চলেছে।

এক অগ্রগামী আবির্ভূত হন

এক শ্রদ্ধেয় অক্সফোর্ড পণ্ডিত জন ওয়াইক্লিফ তার কর্তৃত্ব ‘ঈশ্বরের ব্যবস্থা’ অর্থাৎ বাইবেলের উপর ভিত্তি করে ক্যাথলিক গির্জার বাইবেল বিরোধী অভ্যাসগুলির বিরুদ্ধে প্রবলভাবে প্রচার করেছিলেন ও লিখেছিলেন। তিনি তার ছাত্রদের, লোলার্ডদের বাইবেলের বার্তা ইংরাজি ভাষায় প্রচারের জন্য সম্পূর্ণ ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলগুলিতে যারা শুনতে চায় তাদের কাছে তা প্রচার করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ১৩৮৪ সালে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ল্যাটিন থেকে তার দিনের ইংরাজি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করার কাজে ব্রতী ছিলেন।

গির্জা ওয়াইক্লিফকে ঘৃণা করার অনেক কারণ খুঁজে নিয়েছিল। প্রথমত, তিনি পাদ্রিদের অমিতাচার ও অনৈতিক আচরণের জন্য নিন্দা করেছিলেন। এছাড়াও, ওয়াইক্লিফের সমর্থনকারী অনেক ব্যক্তিরা তাদের সশস্ত্র বিদ্রোহকে ন্যায্য প্রতিপন্ন করার জন্য তার শিক্ষার অপব্যবহার করেছিল। পাদ্রিরা এমনকি তার মৃত্যুর পরও ওয়াইক্লিফকে দোষী করেছিল যদিও তিনি কখনও হিংস্র বিদ্রোহকে সমর্থন করেননি।

১৪১২ সালে পোপ জন ত্রয়োবিংশের কাছে লেখা একটি পত্রে প্রধান বিশপ অরনডেল তাকে “এই মন্দ, ক্ষতিসাধক ব্যক্তি জন ওয়াইক্লিফ, জঘন্য স্মৃতি, পুরাতন সর্পের পুত্র এবং খ্রীষ্টারির অগ্রদূত ও সন্তান” হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। তার এই ভর্ৎসনার চূড়ান্ত পর্যায়ে অরনডেল লিখেছিলেন যে: “নিজের দুষ্কর্ম চরিতার্থ করার জন্য তিনি মাতৃভাষায় শাস্ত্রের এক নতুন অনুবাদ করার কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন।” বাস্তবিকই, সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি গির্জার নেতাদের ক্রোধান্বিত করেছিল তা হল যে ওয়াইক্লিফ লোকেদের তাদের নিজস্ব ভাষায় বাইবেল দিতে চেয়েছিলেন।

তৎসত্ত্বেও, কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের কাছে আঞ্চলিক ভাষায় শাস্ত্র প্রাপ্তিসাধ্য ছিল। এদের মধ্যে একজন ছিলেন বোহেমিয়ার অ্যান, যিনি ১৩৮২ সালে ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ রাজা দ্বিতীয় রিচার্ডকে বিবাহ করেছিলেন। তার কাছে ওয়াইক্লিফের ইংরাজিতে অনুবাদিত সুসমাচারের পুস্তকগুলি ছিল যেগুলি থেকে তিনি সর্বদা অধ্যয়ন করতেন। যখন তিনি রাণী হয়েছিলেন, তার অনুকূল মনোভাব বাইবেলের লক্ষ্যকে অগ্রগতি দিতে সাহায্য করেছিল—আর তা কেবলমাত্র ইংল্যান্ডেই নয়। অ্যান বোহেমিয়ার প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অক্সফোর্ডে আসার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। সেখানে তারা উদ্যমের সাথে ওয়াইক্লিফের রচনাগুলি অধ্যয়ন করেন আর কিছু তাদের সাথে প্রাগে নিয়ে যান। প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াইক্লিফের শিক্ষার জনপ্রিয়তা পরবর্তী সময়ে ইয়ান হাসের জন্য সমর্থনস্বরূপ কাজ করেছিল যিনি সেখানে অধ্যয়ন করেছিলেন ও পরে সেখানেই শিক্ষকতা করেছিলেন। হাস পুরনো স্লোভনিক অনুবাদ থেকে এক পঠনযোগ্য চেক সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। তার প্রচেষ্টা বোহেমিয়া ও প্রতিবেশী দেশগুলিতে বাইবেলের সাধারণ ব্যবহারকে বৃদ্ধি করেছিল।

চার্চ পুনরায় আঘাত করে

এই বিষয়টি শেখানোর জন্যও পাদ্রিরা ওয়াইক্লিফ ও হাসের প্রতি ক্রোধন্মত্ত ছিল যে “অনাচ্ছাদিত পাঠ” অর্থাৎ মূল অনুপ্রাণিত শাস্ত্র যাতে কিছু যুক্ত করা হয়নি, “সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা” অর্থাৎ গির্জা স্বীকৃত বাইবেলের প্রান্তিক অংশে লিখিত দুর্বহ পরম্পরাগত ব্যাখ্যার চেয়ে অনেক বেশি কর্তৃত্বসম্পন্ন ছিল। এটি ছিল ঈশ্বরের বাক্যের সেই অমিশ্রিত বার্তা যা এই প্রচারকেরা সাধারণ লোকেদের কাছে প্রাপ্তিসাধ্য করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন।

সুরক্ষা প্রদানের মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করে ১৪১৪ সালে হাসকে ছলনাপূর্ণভাবে জার্মানির কনসট্যান্স ক্যাথলিক আলোচনা সভার সম্মুখে এইজন্য আনা হয় যেন তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করতে পারেন। আলোচনা সভাটি ২,৯৩৩ জন যাজক, বিশপ ও কার্ডিনাল নিয়ে গঠিত হয়েছিল। হাস তার মত প্রত্যাহার করতে রাজি ছিলেন যদি তার শিক্ষা শাস্ত্র দ্বারা ভুল প্রমাণিত করা যেতে পারত। আলোচনা সভার জন্য প্রশ্নটি তা ছিল না। তাদের কর্তৃত্ব সম্বন্ধে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতাই ১৪১৫ সালে কাষ্ঠদণ্ডে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য তাদের পক্ষে যথেষ্ট ছিল, যখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে প্রার্থনা করছিলেন।

ওই একই আলোচনা সভা জন ওয়াইক্লিফের নিন্দা ও অপমানের এক চূড়ান্ত সংকেত দিয়েছিল এই আদেশ জারি করার মাধ্যমে যে তার অস্থি কবর থেকে তুলে ইংল্যান্ডে নিয়ে এসে জ্বালান হোক। এই নির্দেশ এতই ঘৃণাপূর্ণ ছিল যে এটি ১৪২৮ সাল পর্যন্ত পালন করা হয়নি যতক্ষণ পর্যন্ত না পোপ এর দাবি করেছিলেন। কিন্তু সর্বকালের মত, এই হিংস্র বিরোধিতা অন্যান্য সত্যের প্রেমিকদের উদ্যোগকে নিস্তেজ করে দিতে পারেনি। বরঞ্চ, এটি ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশের জন্য তাদের দৃঢ়সংকল্পকে আরও বৃদ্ধি করেছিল।

মুদ্রণের প্রভাব

১৪৫০ সালে হাসের মৃত্যুর মাত্র ৩৫ বছর পরে, যোহান্স গুটেনবার্গ জার্মানিতে চলমান টাইপে মুদ্রণ শুরু করেছিলেন। তার সম্পাদিত প্রথম বড় কাজটি ছিল ল্যাটিন ভালগেট এর একটি সংস্করণ যেটি প্রায় ১৪৫৫ সালে সম্পূর্ণ হয়েছিল। ১৪৯৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ অথবা বাইবেলের কিছু অংশ জার্মান, ইতালি, ফ্রেঞ্চ, চেক, ডাচ, হিব্রু, কেটালান, গ্রীক, স্প্যানিশ, স্লোভানিক, পর্তুগীজ এবং সার্বিয় ভাষায়—এই ক্রমানুসারে মুদ্রিত হয়েছিল।

ডাচ পণ্ডিত ডেসিডরিয়ুস ইরাসমাস ১৫১৬ সালে গ্রীক পাঠ্যাংশের প্রথম সম্পূর্ণ মুদ্রিত সংস্করণ উৎপাদন করেছিলেন। ইরাসমাস চেয়েছিলেন যে শাস্ত্রাবলী “সমস্ত লোকের সকল ভাষায় অনুবাদিত হোক।” কিন্তু, তিনি নিজে অনুবাদ করার দ্বারা তার মহৎ জনপ্রিয়তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে ইতস্তত করেছিলেন। তৎসত্ত্বেও, পরবর্তী অন্যান্যেরা তা করেছিলেন যারা আরও বেশি সাহসী ছিলেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন উইলিয়াম টিনডেল।

উইলিয়াম টিনডেল ও ইংরাজি বাইবেল

টিনডেল অক্সফোর্ডে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রায় ১৫২১ সালে স্যার জন ওয়ালসের গৃহে তার সন্তানদের গৃহশিক্ষক হিসাবে আসেন। ওয়ালসের বদান্যতার সাথে আমন্ত্রিত টেবিলে ভোজনের সময় যুবক টিনডেলের প্রায়ই স্থানীয় পাদ্রিদের সাথে তর্ক হত। টিনডেল বাইবেল খুলে শাস্ত্রপদ দেখিয়ে তথ্যপূর্ণভাবে তাদের মতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। কিছু সময় পরে, ওয়ালস দম্পতি, টিনডেল যা বলতেন তার দ্বারা প্রত্যয়ী হয়েছিলেন আর তারপর পাদ্রিদের আমন্ত্রণ করা কমে যায় ও তাদের স্বাগত জানানোতে উৎসাহেরও অভাব দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবে, এটি টিনডেল ও তার বিশ্বাসের প্রতি যাজকদের আরও তিক্ত করে তুলেছিল।

একবার এক বিতর্কের সময় টিনডেলের এক ধর্মীয় বিরোধী ঘোষণা করেছিলেন: “পোপের নিয়মের চেয়ে বরং ঈশ্বরের নিয়ম ব্যতীত থাকা উত্তম।” টিনডেলের দৃঢ়প্রত্যয় সম্পর্কে কল্পনা করুন যখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি পোপ ও তার সমস্ত নিয়মের প্রকাশ্য বিরোধিতা করছি। যদি ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন, কিছু বছরের মধ্যেই আমি এমন কিছু সম্পন্ন করব যাতে একটি চাষার ছেলে শাস্ত্র সম্বন্ধে অনেক বেশি জানবে যা আপনি জানেন।” টিনডেলের সংকল্প স্ফটিকাকার ধারণ করেছিল। পরবর্তীকালে তিনি লিখেছিলেন: “আমি অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রত্যক্ষ করেছিলাম যে সাধারণ লোকেদের কাছে কোন সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা কত অসম্ভব ছিল যদি না তাদের সামনে তাদের মাতৃভাষায় সহজভাবে শাস্ত্রকে রাখা হয় যেন তারা পাঠের সারমর্ম, অনুক্রম ও অর্থ দেখতে পারে।”

সেই সময় পর্যন্ত, ইংরাজিতে কোন বাইবেল মুদ্রিত হয়নি। সুতরাং ১৫২৩ সালে, টিনডেল অনুবাদ কার্যক্রমের অনুমতি ও অধিকার পেতে বিশপ টনস্টলের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ করার জন্য লন্ডনে যান। প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি তার উদ্দেশ্য সম্পন্ন করার জন্য ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন ও আর কখনও তিনি সেখানে ফিরে আসেননি। জার্মানির কলোনে তার প্রথম মুদ্রণ দপ্তরটিতে আকস্মিক হানা দেওয়া হয়েছিল আর টিনডেল কিছু মূল্যবান খোলা পৃষ্ঠা নিয়ে কোনরকমে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যাইহোক, জার্মানির ওয়ার্মসে তার ইংরাজি “নূতন নিয়ম” এর অন্তত ৩,০০০ প্রতিলিপি সম্পূর্ণ হয়েছিল। এগুলি ইংল্যান্ডে পাঠানো ও ১৫২৬ সালের প্রথমদিকে বিতরণ করা শুরু হয়েছিল। এর কিছু বাইবেল বিশপ টনস্টল কিনেছিলেন ও পুড়িয়ে দিয়েছিলেন যাতে করে নিজের অজান্তে তিনি টিনডেলকে তার কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।

গবেষণা স্পষ্টতর বোধগম্যতা নিয়ে আসে

স্পষ্টতই টিনডেল তার কাজকে উপভোগ করেছিলেন। যেমন বাইবেলের কেম্ব্রিজ ইতিহাস (ইংরাজি) বলে; “শাস্ত্র তাকে আনন্দিত করেছিল আর তার ছন্দে উচ্ছল ও প্রাণচঞ্চল কিছু ছিল যা তার আনন্দকে প্রকাশ করেছিল।” টিনডেলের লক্ষ্য ছিল যতখানি সম্ভব যথার্থ ও সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে শাস্ত্রকে কথা বলতে দেওয়া। তার গবেষণা তাকে বাইবেলের বাক্যগুলির অর্থ দেখিয়েছিল যা শতাব্দীগুলি ধরে গির্জার মতবাদের আড়ালে আবৃত ছিল। মৃত্যুভয় কিংবা তার শক্তিশালী শত্রু স্যার টমাস মোরের বিদ্বেষপূর্ণ লেখনী দ্বারা আতঙ্কিত না হয়ে টিনডেল তার আবিষ্কার তার অনুবাদে সম্মিলিত করেছিলেন।

ল্যাটিনের পরিবর্তে বরং ইরাসমাসের পাঠ্যাংশের মূল গ্রীক থেকে কাজ করে টিনডেল গ্রীক পরিভাষা আগাপে-র অর্থ আরও সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য “সদয়তা”-র পরিবর্তে “প্রেম” নির্বাচন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি “গির্জা”-র স্থলে “মণ্ডলী” “পাপ স্বীকার” এর পরিবর্তে “অনুতাপ” এবং “যাজক” এর পরিবর্তে “প্রাচীন” ব্যবহার করেছেন। (১ করিন্থীয় ১৩:১-৩; কলসীয় ৪:১৫, ১৬; লূক ১৩:৩, ৫; ১ তীমথিয় ৫:১৭, টিনডেল) এই পরিবর্তন গির্জার অধিকার আর যাজকের কাছে পাপ স্বীকারের মত পরম্পরাগত ধর্মীয় অভ্যাসগুলির জন্য ধ্বংসাত্মক ছিল।

অনুরূপভাবে টিনডেল “পুনরুত্থান” শব্দটি রেখেছিলেন আর পুরগাতরী ও মৃত্যুর পর চেতনাকে বাইবেল বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেন। মৃত্যু সম্বন্ধে তিনি মোরেকে লিখেছিলেন: “তাদের স্বর্গ, নরক ও পুরগাতরীতে পাঠিয়ে [আপনি] সেই যুক্তিকে ধ্বংস করে দেন যার দ্বারা খ্রীষ্ট ও পৌল পুনরুত্থানকে প্রমাণ করেছিলেন।” এই বিষয়ে টিনডেল মথি ২২:৩০-৩২ এবং ১ করিন্থীয় ১৫:১২-১৯ পদ উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সঠিকভাবে এটিই বিশ্বাস করেছিলেন যে মৃতেরা ভবিষ্যৎ পুনরুত্থান পর্যন্ত অচেতন অবস্থায় থাকে। (গীতসংহিতা ১৪৬:৪; উপদেশক ৯:৫; যোহন ১১:১১, ২৪, ২৫) এর অর্থ মরিয়ম ও “সাধুদের” কাছে প্রার্থনা করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি অর্থহীন কারণ তাদের অচেতন অবস্থায় তারা শুনতেও পারেন না কিংবা মধ্যস্থতাও করতে পারেন না।

টিনডেল ইব্রীয় শাস্ত্রাবলী অনুবাদ করেন

১৫৩০ সালে, টিনডেল ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীর প্রথম পাঁচটি বই, পেন্টাটিউকের একটি সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন। এইভাবে তিনিই বাইবেলকে ইব্রীয় থেকে ইংরাজিতে অনুবাদ করার ক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। এছাড়া টিনডেলই ছিলেন প্রথম ইংরাজি অনুবাদক যিনি যিহোবার নাম ব্যবহার করেছিলেন। লন্ডনের পণ্ডিত ডেভিড দানিয়েল লেখেন: “নিশ্চিতভাবেই টিনডেলের পাঠকেরা অত্যধিকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকবেন যেহেতু ঈশ্বরের নাম নতুনভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।”

স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় টিনডেল একটি একক ইব্রীয় শব্দ অনুবাদ করার জন্য বিভিন্ন ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু, তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ইব্রীয় কাঠামো অনুসরণ করেছিলেন। ফলস্বরূপ তার অনুবাদে ইব্রীয় ভাষার বাহুল্যবর্জিত শক্তি সংরক্ষিত হয়েছে। তিনি নিজে বলেছিলেন: “ইব্রীয় ভাষার ধর্ম ল্যাটিন ভাষা থেকে হাজার গুণ বেশি ইংরাজির সাথে মিলযুক্ত। উভয়েরই কথ্য ভাষা বলার প্রক্রিয়া একইরকম; তাই অসংখ্য জায়গাগুলিতে ইংরাজিতে কেবলমাত্র আক্ষরিক অনুবাদ করা প্রয়োজনীয়।”

এই মূলত আক্ষরিক প্রক্রিয়া টিনডেলের অনুবাদকে ইব্রীয় অভিব্যক্তির দ্বারা সুগন্ধিত করেছে। এগুলির কিছু প্রথমবার পড়ার সময় কিছুটা অপরিচিত বলে মনে হবে। তবুও, কালক্রমে বাইবেল এতই অন্তরঙ্গ হয়ে গিয়েছে যে এর অনেক অভিব্যক্তি এখন ইংরাজি ভাষার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। (যেমন ১ শমূয়েল ১৩:১৪ পদে) উল্লেখিত “a man after his own heart” এবং “passover” ও “scapegoat” এর কিছু উদাহরণ। এর চেয়েও বড় কথা ইংরাজি বাইবেলের পাঠকেরা, এইভাবে ইব্রীয় চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হয়েছে যা তাদের অনুপ্রাণিত শাস্ত্র থেকে আরও উত্তম অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে থাকে।

বাইবেল ও টিনডেলের উপর নিষেধাজ্ঞা

একজনের নিজস্ব ভাষায় ঈশ্বরের বাক্য পড়ার সম্ভাবনা ছিল রোমাঞ্চকর। তাই কাপড় অথবা অন্য কোন বস্তুর বস্তায় করে ছদ্মবেশে লুকিয়ে লুকিয়ে দেশে নিয়ে আসা সমস্ত বাইবেলগুলিকে ইংরাজি জানে এমন জনসাধারণ কিনে নিত। ইতিমধ্যে, পাদ্রিবর্গ ভাবতে থাকে যে যদি বাইবেল চূড়ান্ত কর্তৃত্ব হিসাবে গণ্য হতে থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাদের স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এইজন্য, অনুবাদক ও তার সমর্থকদের জন্য পরিস্থিতি আরও বেশি করে জীবন-মরণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

গির্জা ও সরকার নিরবিচ্ছিন্নভাবে শিকারি কুকুরের মত তার পিছনে লেগে থাকায় টিনডেল বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পে লুকিয়ে তার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। তবুও, সপ্তাহে দুই দিন তিনি নিজেকে সেই কাজে উৎসর্গ করেছিলেন যেটিকে তিনি বলেছিলেন তার অবসর বিনোদন—অন্যান্য ইরেজ শরণার্থী, দরিদ্র ও অসুস্থদের পরিচর্যা করা। তিনি তার অর্থের অধিকাংশ এইভাবেই ব্যয় করেছিলেন। ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীর পরবর্তী অর্ধাংশ অনুবাদ করতে পারার পূর্বে বন্ধুর মুখোশধারী এক ইংরেজ টাকার জন্য টিনডেলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ১৫৩৬ সালে বেলজিয়ামের ভিলভুর্দে তাকে হত্যা করার সময় তার অন্তিম ঐকান্তিক বাক্যগুলি ছিল “হে প্রভু! ইংল্যান্ডের রাজার চোখ খুলে দাও।”

১৫৩৮ সালের মধ্যে রাজা অষ্টম হেনরী নিজে থেকেই আদেশ দিয়েছিলেন যে ইংল্যান্ডের সমস্ত গির্জায় বাইবেল রাখা হবে। যদিও টিনডেলকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি, তবুও যে অনুবাদ নির্বাচন করা হয়েছিল তা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে তারই ছিল। এইভাবে টিনডেলের কাজ এতই সুপরিচিত ও জনপ্রিয় হয়েছিল যে ইংরাজিতে “পরবর্তী অধিকাংশ সংস্করণের মূল বৈশিষ্ট্যের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল।” (বাইবেলের কেম্ব্রিজ ইতিহাস) ১৬১১ সালের মধ্যে টিনডেলের অনুবাদের প্রায় ৯০ শতাংশই সরাসরিভাবে কিং জেমস ভারসন-এ প্রকাশ করা হয়েছিল।

বাইবেলের অবাধ প্রাপ্তিসাধ্যতা ইংল্যান্ডের জন্য এক বিরাট পরিবর্তন বুঝিয়েছিল। গির্জায় রাখা বাইবেল সম্বন্ধে আলোচনা এতই জীবন্ত হয়ে উঠেছিল যে কখনও কখনও এই কারণে গির্জার সভায় বাধা পড়ত! “বৃদ্ধলোকেরা পড়তে শিখেছিল যাতে করে তারা প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরের বাক্যের সান্নিধ্যে আসতে পারে আর অল্পবয়স্কেরা শোনার জন্য বয়স্কদের সাথে যোগ দিয়েছিল।” (ইংরাজি বাইবেলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ইংরাজি) এই সময়েও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ও ভাষাগুলিতে বাইবেল বিতরণে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে বাইবেল আন্দোলনের এক বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার হওয়ার ছিল। সেটি কিভাবে হয়েছিল? আর পরবর্তী আবিষ্কার ও গবেষণা কিভাবে বাইবেলকে প্রভাবিত করেছিল যেটি আজ আমরা ব্যবহার করি? আমরা আমাদের বিবরণ এই ধারাবাহিক রচনার পরবর্তী প্রবন্ধে সমাপ্ত করব।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৫২৬ সালে টিনডেলের “নূতন নিয়ম”—অগ্নি থেকে রক্ষা পাওয়া জ্ঞাত সম্পূর্ণ দুটি প্রতিলিপির মধ্যে একটি

[সজন্যে]

© The British Library Board

[২৬, ২৭ পৃষ্ঠার তালিকা/চিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

মুখ্য তারিখগুলি বাইবেলের হস্তান্তরের

সাধারণ কাল

ওয়াইক্লিফের বাইবেল শুরু হয়েছিল (১৩৮৪ সালের পূর্বে)

১৪০০

১৪১৫ সালে হাসকে হত্যা করা হয়

গুটেনবার্গ—প্রায় ১৪৫৫ সালে প্রথম মুদ্রিত বাইবেল

১৫০০

আঞ্চলিক ভাষায় প্রাথমিক মুদ্রণ

১৫১৬ সালে ইরাসমাসের গ্রীক পাঠ্যাংশ

১৫২৬ সালে টিনডেলের “নূতন নিয়ম”

১৫৩৬ সালে টিনডেলকে হত্যা করা হয়

১৫৩৮ সালে অষ্টম হেনরী বাইবেলকে গির্জায় রাখার আদেশ দেন

১৬০০

১৬১১ সালে কিং জেমস ভারসন

[Pictures]

ওয়াইক্লিফ

হাস

টিনডেল

অষ্টম হেনরী

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার