‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়া
“সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] দিন মহৎ ও অতি ভয়ানক; আর কে তাহা সহ্য করিতে পারে?”—যোয়েল ২:১১.
১. কেন ‘যিহোবার ভয়ানক দিন’ আনন্দের সময় হওয়া উচিত?
“ভয়ানক”! এইভাবেই ঈশ্বরের ভাববাদী যোয়েল “যিহোবার” মহৎ “দিন” সম্বন্ধে বর্ণনা দেন। কিন্তু, আমরা যারা যিহোবাকে ভালবাসি আর যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে তাঁর কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছি, যিহোবার দিন আসছে বলে আমাদের ভয়ে কুঁকড়ে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। এটি অবশ্যই এক ভয়ঙ্কর দিন হবে কিন্তু একই সাথে তা হবে মহান পরিত্রাণের দিন, সহস্রাধিক বছর ধরে যে দুষ্ট বিধিব্যবস্থা মানবজাতির উপর উপদ্রব করে এসেছে তার থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন। সেই দিনটির প্রত্যাশায় যোয়েল ঈশ্বরের লোকেদের বলেন, “উল্লাসিত হও, আনন্দ কর, কেননা সদাপ্রভু মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিয়াছেন” আর তিনি এই আশ্বাসবাণীও যুক্ত করেন: “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] নামে ডাকিবে, সেই রক্ষা পাইবে।” আর এইভাবে ঈশ্বরের রাজ্য ব্যবস্থায় “সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে . . . পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকিবে, যাহাদিগকে সদাপ্রভু ডাকিবেন।”—যোয়েল ২:১১, ২১, ২২, ৩২.
২. ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলির কার্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে কী ঘটনা ঘটে (ক) “প্রভুর দিন”-এ (খ) “যিহোবার দিন”-এ?
২ যিহোবার ভয়ানক দিনকে প্রকাশিত বাক্য ১:১০ পদে উদ্ধৃত “প্রভুর দিন” বলে ভুল করা উচিত নয়। পরবর্তী এই দিনটির মধ্যে প্রকাশিত বাক্য ১ থেকে ২২ অধ্যায়ে বর্ণিত ১৬টি দর্শনের পরিপূর্ণতা অন্তর্ভুক্ত। এর সাথে যুক্ত সেই সমস্ত ঘটনাবলীর পরিপূর্ণতার সময়টি যা যীশু ভাববাণী করেছিলেন তাঁর শিষ্যদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে: “এই সকল ঘটনা কখন্ হইবে? আর আপনার আগমনের [“উপস্থিতির,” “NW”] এবং যুগান্তের [“বিধিব্যবস্থার শেষের,” “NW”] চিহ্ন কি?” যীশুর স্বর্গীয় উপস্থিতি, পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর ‘যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দ্বেষ, মহামারী আর অধর্ম্ম’ দ্বারা চিহ্নিত হয়ে এসেছে। যতই এই দুঃখকষ্টগুলি বৃদ্ধি পেয়েছে, “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে,” প্রচার করার জন্য তাঁর আধুনিক দিনের শিষ্যদের পাঠানোর দ্বারা যীশু ঈশ্বর ভয়শীল মানুষদের সান্ত্বনা প্রদান করেছেন। সুতরাং, প্রভুর দিনের চরম পর্যায়ে বর্তমান বিধিব্যবস্থার “শেষ” অর্থাৎ যিহোবার ভয়ানক দিনের সূচনা ঘটবে। (মথি ২৪:৩-১৪; লূক ২১:১১) সেটিই হবে শয়তানের কলুষিত জগতের উপর দ্রুত বিচার নিষ্পন্ন করার জন্য যিহোবার দিন। “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী কম্পিত হইবে; কিন্তু সদাপ্রভু আপন প্রজাদের আশ্রয় . . . হইবেন।”—যোয়েল ৩:১৬.
নোহের দিনে যিহোবা কাজ করেন
৩. আজকের দিনের পরিস্থিতি কিভাবে নোহের দিনের মতই?
৩ আজকের জগৎ পরিস্থিতি, ৪,০০০ বছরেরও বেশি আগে “নোহের সময়ে”-রই মত। (লূক ১৭:২৬, ২৭) আদিপুস্তক ৬:৫ পদে আমরা পড়ি: “সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড়, এবং তাহার অন্তঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ।” এটি কতই না আজকের জগতের মত! দুষ্টতা, লোভ আর প্রেমের অভাব সর্বত্র বিদ্যমান। অনেক সময় হয়ত আমরা চিন্তা করতে পারি যে মানবজাতির অবনতি একেবারে নিম্নতম স্তরে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু ‘শেষ কাল’ সম্বন্ধে প্রেরিত পৌলের ভবিষ্যদ্বাণী এমনকি এখনও পরিপূর্ণতা লাভ করে চলেছে: “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।”—২ তীমথিয় ৩:১, ১৩.
৪. প্রাচীনকালে মিথ্যা উপাসনার কী প্রভাব ছিল?
৪ নোহের দিনে ধর্ম কি মানবজাতির জন্য স্বস্তি আনতে পেরেছিল? বরঞ্চ, সেই সময় বিদ্যমান ভ্রষ্ট ধর্ম অবশ্যই ধ্বংসাত্মক অবস্থার ক্ষেত্রে অনেকটাই অবদান রেখেছিল। আমাদের প্রথম পিতামাতা “সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়,” তার মিথ্যা শিক্ষার প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেছিল। আদমের পর দ্বিতীয় পুরুষ থেকে, স্পষ্টতই লোকেরা ঈশ্বর নিন্দার ভঙ্গিতে ‘সদাপ্রভুর নামে ডাকিতে আরম্ভ করে।’ (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯; আদিপুস্তক ৩:৩-৬; ৪:২৬, NW) পরে, বিদ্রোহী দূতেরা, ঈশ্বরের প্রতি ঐকান্তিক ভক্তি পরিহার করে সুন্দরী মনুষ্য কন্যাদের সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য মানব দেহ ধারণ করে। এই স্ত্রীলোকেরা নেফিলিম নামে অভিহিত বর্ণসঙ্কর দৈত্যদের জন্ম দেয় যারা মানবজাতির উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করত। এই পৈশাচিক প্রভাবের অধীনে “পৃথিবীর সমুদয় প্রাণী ভ্রষ্টাচারী হইয়াছিল।”—আদিপুস্তক ৬:১-১২.
৫. নোহের দিনের ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে কোন্ সতর্কতামূলক উপদেশ যীশু আমাদের দেন?
৫ কিন্তু, একটি পরিবার যিহোবার প্রতি তাদের আনুগত্য বজায় রেখেছিল। তাই, ঈশ্বর “যখন ভক্তিহীনদের জগতে জলপ্লাবন আনিলেন, তখন আর সাত জনের সহিত ধার্ম্মিকতার প্রচারক নোহকে রক্ষা করিলেন।” (২ পিতর ২:৫) সেই জলপ্লাবন যিহোবার ভয়ানক দিনের পূর্বাভাসস্বরূপ ছিল যা এই বিধিব্যবস্থার শেষকে চিহ্নিত করে এবং যে সম্বন্ধে যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “কিন্তু সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গে দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন। বাস্তবিক নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্ত্রের আগমনও [“উপস্থিতিও,” “NW”] তদ্রূপ হইবে। কারণ জলপ্লাবনের সেই পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত, লোকে যেমন ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; তদ্রূপ মনুষ্যপুত্ত্রের আগমন [“উপস্থিতি,” “NW”] হইবে।” (মথি ২৪:৩৬-৩৯) আজকে আমরাও একই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, তাই যীশু আমাদের উপদেশ দেন ‘নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, পার।’—লূক ২১:৩৪-৩৬.
সদোম ও ঘমোরার প্রতি যিহোবার বিচারমূলক দণ্ড
৬, ৭. (ক) লোটের দিনের ঘটনাবলীর দ্বারা কোন্ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে?(খ) আমাদের জন্য এটি কোন্ স্পষ্ট সতর্কবার্তা প্রদান করে?
৬ জলপ্লাবনের প্রায় শতাধিক বছর পর, যখন নোহের বংশধরেরা পৃথিবীতে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে, বিশ্বস্ত অব্রাহাম ও তার ভাইপো লোট আরেকটি যিহোবার ভয়ানক দিনের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছিলেন। লোট ও তার পরিবার সদোম শহরে বাস করতেন। প্রতিবেশী শহর ঘমোরার সাথে এই শহরটিও ঘৃণ্য যৌন অনৈতিকতার দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে উঠেছিল। বস্তুবাদিতাও একটি মুখ্য বিষয় ছিল, পরিশেষে যা লোটের স্ত্রীকে প্রভাবিত করেছিল। যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন: “সদোমের ও ঘমোরার ক্রন্দন আত্যন্তিক, এবং তাহাদের পাপ অতিশয় ভারী।” (আদিপুস্তক ১৮:২০) সেখানকার ধার্মিক ব্যক্তিদের স্বার্থে সেই শহরগুলিকে ধ্বংস না করার জন্য অব্রাহাম যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু যিহোবা ঘোষণা করেন যে তিনি সেখানে এমনকি দশজন ধার্মিক ব্যক্তিকেও খুঁজে পাননি। ঈশ্বরের দূতেরা লোট ও তার দুই কন্যাকে কাছের একটি শহর সোয়রে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।
৭ এর পরে কী হয়েছিল? আমাদের ‘শেষ কাল’-কে লোটের দিনের সাথে তুলনা করে লূক ১৭:২৮-৩০ পদ বিবৃতি দেয়: “সেইরূপ লোটের সময়ে যেমন হইয়াছিল—লোকে ভোজন পান, ক্রয় বিক্রয়, বৃক্ষ রোপণ ও গৃহ নির্ম্মাণ করিত; কিন্তু যে দিন লোট সদোম হইতে বাহির হইলেন, সেই দিন আকাশ হইতে অগ্নি ও গন্ধক বর্ষিয়া সকলকে বিনষ্ট করিল—মনুষ্যপুত্ত্র যে দিন প্রকাশিত হইবেন, সে দিনেও সেইরূপ হইবে।” যিহোবার সেই ভয়ঙ্কর দিনে সদোম ও ঘমোরার দুর্দশামূলক পরিণতি যীশুর উপস্থিতির এই সময়ে আমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্কবাণী প্রদান করে। মানবজাতির এই আধুনিক বংশও “নিতান্ত বেশ্যাগামী এবং বিজাতীয় মাংসের চেষ্টায় বিপথগামী” হয়েছে। (যিহূদা ৭) এছাড়াও, আমাদের সময়ের অনৈতিক যৌন দৃষ্টিভঙ্গি বহু ধরনের “মহামারী”-র জন্য দায়ী যেগুলির বিষয়ে যীশু বর্তমান দিনে ঘটবে বলে ভাববাণী করেছিলেন।—লূক ২১:১১.
ইস্রায়েল “ঝঞ্ঝারূপ” শস্য কাটে
৮. কতদূর পর্যন্ত ইস্রায়েল যিহোবার সাথে চুক্তি বজায় রেখেছিল?
৮ কালক্রমে, যিহোবা ইস্রায়েলকে তাঁর “সকল জাতি অপেক্ষা . . . নিজস্ব অধিকার . . . যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি” হওয়ার জন্য মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু এটি নির্ভর করত তাদের ‘তাঁহার রবে অবধান করা তাঁহার নিয়ম পালন করার’ উপর। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬) এই মহান সুযোগের প্রতি কি তারা সম্মান দেখিয়েছিল? অবশ্যই নয়! এটি সত্য যে সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তিবিশেষেরা নিষ্ঠাপূর্ণভাবে তাঁর সেবা করেছিলেন—যেমন মোশি, শমূয়েল, দায়ূদ, যিহোশাফট, হিষ্কিয়, যোশিয় ও সেইসাথে অনুরক্ত ভাববাদী ও ভাববাদিণীগণ। তবুও সমষ্টিগতভাবে সেই জাতি অবিশ্বস্ত ছিল। কালক্রমে, রাজ্যটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়—ইস্রায়েল ও যিহূদা। মোটামুটিভাবে, দুটি রাজ্যই প্রতিবেশী দেশগুলির পৌত্তলিক উপাসনা ও অন্যান্য ঈশ্বর অসম্মানকারী প্রথাগুলির দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়ে।—যিহিষ্কেল ২৩:৪৯.
৯. যিহোবা কিভাবে বিদ্রোহী দশ বংশীয় রাজ্যের বিচার করেছিলেন?
৯ যিহোবা কিভাবে বিষয়গুলির বিচার করেছিলেন? যথারীতিভাবে, আমোষের দ্বারা উল্লেখিত মানদণ্ডের সাথে সংগতি রেখে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “নিশ্চয়ই প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।” আমোষ নিজেই ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যের জন্য সন্তাপ ঘোষণা করেছিলেন: “সদাপ্রভুর দিন তোমাদের কি করিবে? তাহা অন্ধকার, আলোক নহে।” (আমোষ ৩:৭; ৫:১৮) এছাড়াও, আমোষের সহভাববাদী হোশেয় ঘোষণা করেছিলেন: “তাহারা বায়ুরূপ বীজ বপন করে, ঝঞ্ঝারূপ শস্য কাটিবে।” (হোশেয় ৮:৭) সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে যিহোবা চিরকালের মত ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যকে ধ্বংস করার জন্য অশূরীয় সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন।
ভ্রষ্ট যিহূদার সাথে যিহোবার হিসাব নিকাশ
১০, ১১. (ক) কেন যিহোবা যিহূদাকে ক্ষমা করতে সম্মত হননি? (খ) কোন্ জঘন্য বিষয়গুলি জাতিটিকে কলুষিত করেছিল?
১০ যিহোবা, যিহূদার দক্ষিণ রাজ্যেও তাঁর ভাববাদীদের পাঠিয়েছিলেন। তবুও, যিহূদার এইধরনের রাজারা যেমন মনঃশি ও তার উত্তরাধিকারী আমোন ‘অনেক নির্দোষের রক্তপাত করে এবং পুত্তলির সেবা করে ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করে’ তাঁর দৃষ্টিতে যা মন্দ তা করে চলেছিলেন। এমনকি যদিও আমোনের পুত্র যোশিয় যিহোবার দৃষ্টিতে যা ন্যায্য তাই করেছিলেন কিন্তু তার পরবর্তী রাজারা ও সেইসাথে লোকেরাও আবার দুষ্টতার মধ্যে জড়িয়ে পড়ে যার দরুন “সদাপ্রভু ক্ষমা করিতে চাহিলেন না।”—২ রাজাবলি ২১:১৬-২১; ২৪:৩, ৪.
১১ যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিরমিয়ের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন: “দেশের মধ্যে ভয়ানক ও রোমাঞ্চজনক ব্যাপার সাধিত হয়। ভাববাদিগণ মিথ্যা ভাববাণী বলে, আর যাজকগণ তাহাদের বশবর্ত্তী হইয়া কর্ত্তৃত্ব করে; আর আমার প্রজারা এই রীতি ভালবাসে; কিন্তু ইহার পরিণামে তোমরা কি করিবে?” যিহূদা দেশ চরমভাবে রক্তদোষে দোষী হয় আর লোকেরা চুরি, হত্যা, পারদারিকতা, মিথ্যা দিব্য, অন্যান্য দেবদেবীর উপাসনা ও অন্যান্য ঘৃণ্য কাজগুলি করার দ্বারা কলুষিত হয়ে পড়েছিল। ঈশ্বরের মন্দির “দস্যুগণের গহ্বর”-এ পরিণত হয়েছিল।—যিরমিয় ২:৩৪; ৫:৩০, ৩১ ৭:৮-১২.
১২. কিভাবে যিহোবা ধর্মত্যাগী যিরূশালেমকে শাস্তি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন?
১২ যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “আমি উত্তর দিক্ [কল্দীয়] হইতে অমঙ্গল ও মহাধ্বংস আনিব।” (যিরমিয় ৪:৬) তাই ধর্মত্যাগী যিরূশালেম ও তার মন্দিরকে চূর্ণ করতে তিনি সেই সময়ে বাবিলনীয় বিশ্বশক্তি অর্থাৎ “সমস্ত পৃথিবীর মুদ্গর”-কে আনেন। (যিরমিয় ৫০:২৩) সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে এক তিক্ত আক্রমণের পর শহরটি নবূখদ্নিৎসরের শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীর হাতে পরাভূত হয়। “আর বাবিল-রাজ রিব্লাতে [রাজা] সিদিকিয়ের সাক্ষাতে তাঁহার পুত্ত্রগণকে বধ করিলেন, বাবিল-রাজ যিহূদার সমস্ত অধ্যক্ষকেও বধ করিলেন। আর তিনি সিদিকিয়ের চক্ষু উৎপাটন করিয়া তাঁহাকে বাবিলে লইয়া যাইবার জন্য পিত্তলের দুই শৃঙ্খলে বদ্ধ করিলেন। পরে কল্দীয়েরা রাজবাটী ও সামান্য লোকদের ঘরবাড়ী আগুনে পোড়াইয়া দিল, এবং যিরূশালেমের সমস্ত প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিল। আর নবূষরদন রক্ষক-সেনাপতি, যাহারা নগরে অবশিষ্ট ছিল, সেই লোকদিগকে, ও যাহারা পক্ষান্তরে গিয়া তাঁহার সপক্ষ হইয়াছিল, তাহাদিগকে এবং অন্য অবশিষ্ট লোকদিগকে বন্দি করিয়া বাবিলে লইয়া গেলেন।”—যিরমিয় ৩৯:৬-৯.
১৩. সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিহোবার দিনে কারা রক্ষা পেয়েছিল ও কেন?
১৩ বাস্তবিকই এক ভয়ানক দিন! তবুও, কয়েকজন যারা যিহোবার বাধ্য হয়েছিলেন তারা সেই অগ্নিময় বিচার থেকে রক্ষা প্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন ন-ইস্রায়েলীয় রেখবীয়রা যারা যিহূদীদের বৈসাদৃশ্যে নম্র ও বাধ্য মনোভাব দেখিয়েছিলেন। এছাড়াও রক্ষা পেয়েছিলেন বিশ্বস্ত নপুংসক এবদ-মেলক যিনি যিরমিয়কে কাদায় ভরা কূপের মধ্যে মৃত্যুর হাত থকে রক্ষা করেছিলেন আর যিরমিয়ের নিষ্ঠাবান সচিব, বারূক। (যিরমিয় ৩৫:১৮, ১৯; ৩৮: ৭-১৩; ৩৯:১৫-১৮; ৪৫:১-৫) এইধরনের ব্যক্তিদের কাছেই যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “আমি তোমাদের পক্ষে যে সকল সঙ্কল্প করিতেছি, তাহা আমিই জানি; সে সকল মঙ্গলের সঙ্কল্প, অমঙ্গলের নয়, তোমাদিগকে শেষ ফল ও আশাসিদ্ধি দিবার সঙ্কল্প!” সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে সেই প্রতিজ্ঞার এক ক্ষুদ্র পরিপূর্ণতা হয়েছিল, যখন ঈশ্বর-ভীরু যিহূদীরা বাবিলনের বিজেতা, রাজা কোরসের দ্বারা মুক্তি পেয়েছিল এবং যিরূশালেমের নগর ও মন্দির পুনর্নির্মাণ করার জন্য ফিরে গিয়েছিল। আজকে যারা বাবিলনীয় ধর্ম থেকে বেরিয়ে এসেছেন আর যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তারাও ঠিক একই রকমভাবে যিহোবার পুনরধিষ্ঠিত পরমদেশে অনন্ত শান্তির এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা রাখতে পারেন।—যিরমিয় ২৯:১১; গীতসংহিতা ৩৭:৩৪; প্রকাশিতবাক্য ১৮:২, ৪.
প্রথম শতাব্দীর “মহাক্লেশ”
১৪. কেন যিহোবা চিরস্থায়ীভাবে ইস্রায়েলকে পরিত্যাগ করেছিলেন?
১৪ আসুন, এখন আমরা সা.কা. প্রথম শতাব্দীর দিকে দৃষ্টি দিই। সেই সময়ের মধ্যেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত যিহূদীরা আবার ধর্মভ্রষ্টতায় পতিত হয়েছিল। যিহোবা অভিষিক্ত ব্যক্তি বা মশীহ হিসাবে তাঁর একজাত পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। সা.কা. ২৯ থেকে ৩৩ সাল পর্যন্ত সমগ্র ইস্রায়েল দেশে যীশু প্রচার করেছিলেন এই বলে, “‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’।” (মথি ৪:১৭) এছাড়াও, রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণায় তাঁর সাথে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি শিষ্যদের একত্রিত করেন ও প্রশিক্ষণ দেন। যিহূদীদের শাসকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? তারা যীশুকে নিন্দা করেন আর পরিশেষে তাঁকে যাতনাদণ্ডে এক মর্মান্তিক মৃত্যুতে ঠেলে দিয়ে সবচাইতে জঘন্যতম অপরাধ করেছিল। যিহোবা তাঁর লোক হিসাবে যিহূদীদের পরিত্যাগ করেন। এইসময়ে চিরস্থায়ীভাবে সেই জাতি পরিত্যক্ত হয়েছিল।
১৫. অনুতপ্ত যিহূদীরা কী সম্পাদন করার সুযোগ পেয়েছিল?
১৫ সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পুনরুত্থিত যীশু পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেন আর এটি তাঁর শিষ্যদের শক্তি দেয় যিহূদী ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা যারা তৎপরতার সাথে একত্র হয়েছিল তাদের কাছে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে। জনতাকে সম্বোধন করে প্রেরিত পিতর ঘোষণা করেছিলেন: “এই যীশুকেই ঈশ্বর উঠাইয়াছেন, আমরা সকলেই এই বিষয়ের সাক্ষী।. . . . অতএব ইস্রায়েলের সমস্ত কুল নিশ্চয় জ্ঞাত হউক যে, যাঁহাকে তোমরা ক্রুশে দিয়াছিলে, সেই যীশুকেই ঈশ্বর প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করিয়াছেন।” সৎহৃদয় সম্পন্ন যিহূদীরা কিভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? “তাহাদের হৃদয়ে যেন শেল-বিদ্ধ হইল,” তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তারা বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ২:৩২-৪১) রাজ্য প্রচার কাজ দ্রুততর হয়েছিল আর ৩০ বছরের মধ্যে এটি “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” প্রসারিত হয়েছিল।—কলসীয় ১:২৩.
১৬. যিহোবা কিভাবে ঘটনাগুলিকে কৌশলে পরিচালনা করেছিলেন যা স্বাভাবিক ইস্রায়েলের উপর তাঁর বিচার নিষ্পন্ন করার প্রতি পরিচালিত করেছিল?
১৬ তখন তাঁর পরিত্যক্ত লোক, স্বাভাবিক ইস্রায়েলের উপর যিহোবার বিচার নিষ্পন্ন করার উপযুক্ত সময় এসেছিল। সেই সময়ের পরিচিত জগতের সমস্ত জাতি থেকে আসা সহস্র সহস্র লোক খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে একত্রিত এবং ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ হিসাবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। (গালাতীয় ৬:১৬) যদিও, সেই সময়ের যিহূদী সম্প্রদায় বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক দৌরাত্ম্যের মধ্যে ডুবে গিয়েছিল। ‘প্রাধান্য প্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হওয়া’ সম্বন্ধে পৌল যা লিখেছিলেন তার বিপরীতে তারা খোলাখুলিভাবে তাদের উপর শাসনরত রোমীয় শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। (রোমীয় ১৩:১) স্পষ্টতই যিহোবা এর পরবর্তী ঘটনাগুলিকে কৌশলের সাথে পরিচালিত করেছিলেন। সা.কা. ৬৬ সালে রোমীয় বাহিনী, সেনাপতি গ্যালাসের নেতৃত্বাধীনে যিরূশালেম আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হয়। আক্রমণরত রোমীয়রা শহরটির মধ্যে প্রবেশ করে এমনকি সুড়ঙ্গ কেটে ভিতরে ঢুকে মন্দিরের প্রাচীরকে দুর্বল করে দেয়। যোসেফাসের ইতিহাস যেমন নথিভুক্ত করে, সেই নগর ও লোকেদের জন্য তা প্রকৃতই এক মহাক্লেশ ছিল।a কিন্তু হঠাৎ করে এই আক্রমণরত সৈন্যেরা পশ্চাদপসরণ করেছিল। এটি যীশুর শিষ্যদের ‘পর্বতে পলায়ন করতে’ সুযোগ দিয়েছিল, মথি ২৪:১৫, ১৬ পদে নথিভুক্ত তাঁর ভাবিষ্যদ্বাণীতে যেমন সতর্ক করা হয়েছিল।
১৭, ১৮. (ক) কোন্ ক্লেশের মাধ্যমে যিহোবা যিহূদী সম্প্রদায়ের উপর বিচার নিয়ে আসেন? (খ) কোন্ প্রাণী ‘রক্ষা পেয়েছিল’ আর এটি কিসের পূর্বাভাস ছিল?
১৭ কিন্তু মহাক্লেশের চরম পর্যায় যিহোবার বিচার সম্পূর্ণভাবে নিষ্পন্ন করার সময় আসতে তখনও বাকি ছিল। সা.কা. ৭০ সালে, রোমীয় বাহিনী, এবার সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বে, পুনরায় আক্রমণ করার জন্য ফিরে আসে। এইবার যুদ্ধটি ছিল নিষ্পত্তিমূলক! যিহূদীরা যারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছিল, তারা রোমীয়দের মোকাবিলায় খুবই দুর্বল ছিল। শহর ও তার মন্দিরটিকে ধূলিস্মাৎ করা হয়। দশ লক্ষের অধিক দুর্বল যিহূদীরা কষ্টভোগ ও মৃত্যুবরণ করেছিল, প্রায় ৬,০০,০০০ মৃতদেহ নগরদ্বারের বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। শহরটি পরাভূত হওয়ার পর ৯৭,০০০ জন যিহূদীদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় যাদের মধ্যে অনেককে হিংস্র পশুদের সাথে মল্লযুদ্ধে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, ক্লেশের সেই বছরগুলিতে কেবলমাত্র সেই সব প্রাণীরাই রক্ষা পেয়েছিল অর্থাৎ বাধ্য খ্রীষ্টানেরা যারা যর্দনের পরপারে পর্বতগুলিতে পালিয়ে গিয়েছিল।—মথি ২৪:২১, ২২; লূক ২১:২০-২২.
১৮ এইভাবে, ‘যুগান্ত’ সম্বন্ধীয় যীশুর মহান ভবিষ্যদ্বাণীর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা ঘটেছিল যা যিহোবার দিন হিসাবে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল যখন সা.কা. ৬৬-৭০ সালে বিদ্রোহী যিহূদী জাতির উপর বিচার নিষ্পন্ন করা হয়েছিল। (মথি ২৪:৩-২২) তবুও, সেটি ছিল “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের” অর্থাৎ শেষ ক্লেশ যা সমগ্র পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করবে তার পূর্বাভাস মাত্র। (যোয়েল ২:৩১) কিন্তু কিভাবে আপনি “রক্ষা” পেতে পারেন? পরবর্তী প্রবন্ধটি তা জানাবে।
[পাদটীকাগুলো]
a যোসেফাস বর্ণনা দেন যে আক্রমণকারী রোমীয়রা শহরটিকে ঘিরে ফেলে, সুড়ঙ্গ কেটে প্রাচীরের একটি অংশকে দুর্বল করে দেয় আর যিহোবার মন্দিরের প্রবেশদ্বারে আগুন লাগানোর জন্য উদ্যত হয়। ভিতরে আটকে পড়া বহু যিহূদীদের জন্য এটি ভয়ঙ্কর আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল কারণ তারা তাদের আসন্ন মৃত্যুকে দেখতে পেয়েছিল।—যিহূদীদের যুদ্ধ (ইংরাজি) পুস্তক ২য়, অধ্যায় ১৯.
পুনরালোচনার জন্য প্রশ্নগুলি
◻ “প্রভুর দিন” কিভাবে “যিহোবার দিন” এর সাথে সম্পর্কযুক্ত?
◻ নোহের দিন সম্বন্ধে পুনর্বিবেচনা করে কোন্ সতর্কতার প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?
◻ কিভাবে সদোম ও ঘমোরা এক প্রভাবশালী শিক্ষার নজির রাখে?
◻ প্রথম শতাব্দীর “মহাক্লেশ”-এ কারা রক্ষা পেয়েছিল?
[Pictures on page 15]
যিহোবা নোহ ও লোটের পরিবারের জন্য এবং একইভাবে সা.কা.পূ. ৬০৭ ও সা.কা. ৭০ সালে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন