তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করেছিলেন
এলিয় সত্য ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করেন
ইস্রায়েলে তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, ভীষণভাবে যার অনুসন্ধান করা হয়েছিল। খুব সম্ভবত রাজা তাকে পাওয়া মাত্রই মৃত্যুদণ্ড দেবেন। অনুসন্ধানের লক্ষ্য এই ব্যক্তিটি কে ছিলেন? যিহোবার ভাববাদী, এলিয়।
রাজা আহাব ও তার পৌত্তলিক স্ত্রী ঈষেবল ইস্রায়েলে বাল উপাসনার বিস্তার করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ, যিহোবা সেই দেশে অনাবৃষ্টি নিয়ে এসেছিলেন আর সেই সময় এর চতুর্থ বছর চলছিল। প্রতিহিংসাপরায়ণ রাণী ঈষেবল, যিহোবার ভাববাদীদের হত্যা করার সংকল্প নিয়েছিলেন কিন্তু আহাব বিশেষভাবে এলিয়ের অন্বেষণ করছিলেন। তিন বছরেরও বেশি আগে এই এলিয়ই আহাবকে বলেছিলেন: “এই কয়েক বৎসর শিশির কি বৃষ্টি পড়িবে না; কেবল আমার কথানুসারে পড়িবে।” (১ রাজাবলি ১৭:১) আর এর পরিণতিস্বরূপ সেই অনাবৃষ্টি তখনও চলছিল।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, যিহোবা এলিয়কে বলেছিলেন: “তুমি গিয়া আহাবকে দেখা দেও; পরে আমি ভূতলে বৃষ্টি প্রেরণ করিব।” নিজের জীবনের প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে, এলিয় যিহোবার আদেশ পালন করেছিলেন।—১ রাজাবলি ১৮:১, ২.
দুই প্রতিপক্ষ মিলিত হয়
“হে ইস্রায়েলের কন্টক, এ কি তুমি?” এলিয়কে দেখামাত্রই আহাব জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এলিয় সাহসের সাথে উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি ইস্রায়েলের কন্টক হই নাই, কিন্তু আপনি ও আপনার পিতৃকুল; কেননা আপনারা সদাপ্রভুর আজ্ঞা সকল ত্যাগ করিয়াছেন, এবং আপনি বালদেবগণের অনুগামী হইয়াছেন।” এরপর এলিয় “বালের ভাববাদী সেই চারি শত পঞ্চাশ জনকে ও আশেরার ভাববাদী সেই চারি শত” জন সহ সমস্ত ইস্রায়েলকে কর্মিল পর্বতে একত্রিত হতে বলেছিলেন। পরে জনতাকে উদ্দেশ্য করে এলিয় বলেছিলেন: “তোমরা কত কাল দুই নৌকায় পা দিয়া থাকিবে?a সদাপ্রভু যদি ঈশ্বর হন, তবে তাঁহার অনুগামী হও; আর বাল যদি ঈশ্বর হয়, তবে তাহার অনুগামী হও।”—১ রাজাবলি ১৮:১৭-২১.
লোকেরা নিরুত্তর ছিল। হয়ত তারা যিহোবাকে একাগ্র ভক্তি প্রদর্শনে তাদের অক্ষমতার অপরাধটি বুঝতে পেরেছিল। (যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫) কিংবা এও হতে পারে, তাদের বিবেক এতই অসাড় হয়ে পড়েছিল যে তারা যিহোবা ও বালের মধ্যে তাদের নিষ্ঠা বন্টন করায় কোন দোষই দেখতে পায়নি। যাই হোক না কেন, এলিয় লোকেদের দুটি বৃষ—একটি বালের ভাববাদীদের ও আরেকটি তার জন্য আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দুটি বৃষই বলিদানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল কিন্তু জ্বালানোর জন্য কোনটিতে আগুন দেওয়া হয়নি। “তোমরা আপনাদের দেবতার নামে ডাকিও,” এলিয় বলেছিলেন, “এবং আমি সদাপ্রভুর নামে ডাকিব; আর যে ঈশ্বর আগুনের দ্বারা উত্তর দিবেন, তিনিই ঈশ্বর হউন।”—১ রাজাবলি ১৮:২৩, ২৪.
যিহোবা মহিমান্বিত হন
বালের ভাববাদীরা তাদের “নির্ম্মিত যজ্ঞবেদীর কাছে খোঁড়ার ন্যায় নাচিতে লাগিল।” সারা সকাল ধরে তারা চিৎকার করে বলেছিল: “হে বাল, আমাদিগকে উত্তর দেও।” কিন্তু বাল কোন উত্তর দেয়নি। (১ রাজাবলি ১৮:২৬) তখন এলিয় তাদের বিদ্রূপ করতে শুরু করেন: “উচ্চৈঃস্বরে ডাক; কেননা সে দেবতা।” (১ রাজাবলি ১৮:২৭) বালের ভাববাদীরা এমনকি ছুরিকা ও শলাকা দিয়ে তাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত করতে শুরু করেছিল—একটি প্রথা যা সাধারণত পৌত্তলিকেরা তাদের দেবতাদের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য পালন করত।b—১ রাজাবলি ১৮:২৮.
এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল আর বালের উপাসকেরা “ভাবোক্তি প্রচার করিল”—একটি বাক্যাংশ যেটি এই প্রসঙ্গে ইন্দ্রিয়দমনহীন সাময়িক উন্মাদনাগ্রস্ত অবস্থার ধারণাকে প্রকাশ করে। সন্ধ্যার সময়, অবশেষে এলিয় লোকেদের বলেছিলেন: “আমার নিকটে আইস।” যখন এলিয় যিহোবার যজ্ঞবেদী পুনর্নির্মাণ করলেন, এর চারদিকে প্রণালী খুদলেন, বৃষকে খণ্ড খণ্ড করে উৎসর্গের জন্য কাঠসহ বেদীর উপরে স্থাপন করলেন সকলে মনোযোগের সাথে এলিয়কে দেখেছিলেন। এরপর বৃষ, যজ্ঞবেদী ও কাঠ জল দিয়ে ভালভাবে ভেজানো হয়েছিল আর সেই প্রণালীটিকেও জল দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়েছিল (নিঃসন্দেহে সাগরের জল ভূমধ্যসাগর থেকে আনা হয়েছিল)। পরে এলিয়, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “অদ্য জানাইয়া দেও যে, ইস্রায়েলের মধ্যে তুমিই ঈশ্বর, এবং আমি তোমার দাস, ও তোমার বাক্যানুসারেই এই সকল কর্ম্ম করিলাম। হে সদাপ্রভু আমাকে উত্তর দেও, আমাকে উত্তর দেও; যেন এই লোকেরা জানিতে পারে যে, হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর, এবং তুমিই ইহাদের হৃদয় ফিরাইয়া আনিয়াছ।”—১ রাজাবলি ১৮:২৯-৩৭.
হঠাৎ আকাশ থেকে আগুন পড়ে “হোমবলি, কাষ্ঠ, প্রস্তর ও ধূলি গ্রাস করিল, এবং প্রণালীস্থীত জলও চাটিয়া খাইল।” যে লোকেরা তা দেখছিল তারা তৎক্ষণাৎ উপুড় হয়ে পড়ে বলতে লেগেছিল: সদাপ্রভুই ঈশ্বর, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।” এলিয়ের আদেশে বালের ভাববাদীদের ধরে কীশোন স্রোতমার্গে আনা হয়েছিল, সেখানে তাদের বধ করা হয়েছিল।—১ রাজাবলি ১৮:৩৮-৪০.
আমাদের জন্য শিক্ষা
এলিয়ের প্রদর্শিত সাহস হয়ত অতিমানবীয় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাইবেল লেখক যাকোব আমাদের আশ্বাস দেন যে, “এলিয় আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য ছিলেন।” (যাকোব ৫:১৭) তিনি ভয় ও উদ্বিগ্নতার অজুহাতে দায়মুক্ত হতে চাননি। উদাহরণস্বরূপ, ঈষেবল যখন বাল ভাববাদীদের হত্যা করার কারণে প্রতিশোধ গ্রহণের সংকল্প নেন, তখন এলিয় পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রার্থনায় যিহোবার কাছে ক্রন্দন করে বলেছিলেন: “এই যথেষ্ট; হে সদাপ্রভু এখন আমার প্রাণ লও।”—১ রাজাবলি ১৯:৪.
যিহোবা মৃত্যুর মাধ্যমে এলিয়ের প্রাণ নেননি। পরিবর্তে তিনি করুণার সাথে সহায়তা যুগিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১৯:৫-৮) আজকে যিহোবার দাসেরাও আশ্বাস পেতে পারেন যে বিরোধিতার কারণে যখন তারা প্রচণ্ড উদ্বিগ্নতার মুখোমুখি হন, তাদের প্রতিও যিহোবা একইরকম করবেন। বাস্তবিকই যদি তারা যিহোবার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেন, তিনি তাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” প্রদান করতে পারেন, যার ফলে এমনকি তারা “সর্ব্বপ্রকারে ক্লিষ্ট” হলেও “সঙ্কটাপন্ন” হবেন না। এইভাবে তারা এলিয়ের মত ধৈর্যশীল থাকতে সাহায্য পাবেন।—১ করিন্থীয় ৪:৭, ৮.
[পাদটীকাগুলো]
a কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি বলে থাকেন যে, এলিয় হয়ত পরোক্ষভাবে বাল উপাসকদের আচারানুষ্ঠান সংক্রান্ত নাচের রীতিকে উল্লেখ করেছেন। একই ইব্রীয় শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ “খোঁড়ার ন্যায়” ১ রাজাবলি ১৮:২৬ পদে দেখতে পাওয়া যায় যেখানে এটি বাল ভাববাদীদের নাচ সম্বন্ধে বর্ণনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়।
b কেউ কেউ বলে থাকেন যে নিজের অঙ্গচ্ছেদ করা মানব বলিদানের অভ্যাসের সাথে যুক্ত ছিল। উভয় কাজই ইঙ্গিত করত যে শারীরিক যন্ত্রণা বা রক্তপাত দেবতার অনুগ্রহ অর্জনে সাহায্য করে।