সুসমাচার নিয়ে আরও বেশিজনের কাছে পৌঁছানো
আমি যখন আমার দেশের লোকেদের কথা চিন্তা করতাম, আমি উপলব্ধি করতাম যে অনেকে কেবল সংবাদ মাধ্যমগুলির দ্বারাই যিহোবার সাক্ষীদের জানেন। আমি চিন্তা করেছিলাম যে এই লোকেদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত যাতে করে তারা যেন জানতে পারেন যে যিহোবার সাক্ষীরা কারা ও প্রকৃতপক্ষে তারা কী বিশ্বাস করেন। কিন্তু আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি? আমার স্বামী একজন খ্রীষ্টীয় প্রাচীন এবং তিনি আমাকে বিজ্ঞ নির্দেশনা ও পরামর্শ দ্বারা সহায়তা করেছিলেন।
আমরা, “পত্রিকাগুলি যা বাস্তব সান্ত্বনা প্রদান করে” নামক প্রবন্ধটির মধ্যে একটি মুখ্য ধারণা খুঁজে পেয়েছিলাম, যেটি সচেতন থাক! (ইংরাজি) পত্রিকার জানুয়ারি ৮, ১৯৯৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। একজন সাক্ষীর কার্যধারা সম্বন্ধে, এই প্রবন্ধটি বলে: “তিনি নির্দিষ্ট কিছু সচেতন থাক! পত্রিকার পুরনো কপি সংগ্রহ করাকে লক্ষ্যে পরিণত করেছেন, যা অন্যান্য সাক্ষীদের গৃহে জমা হয়ে রয়েছিল। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠানগুলিতে সাক্ষাৎ করেন যারা হয়ত কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাবে বলে তিনি মনে করেন।”
আমার স্বামীর সহযোগিতায়, শীঘ্রই আমি পত্রিকাগুলির কয়েক শতাধিক কপি সংগ্রহ করেছিলাম। এগুলি থেকে আমি সেই লোকেদের জন্য উপযুক্ত বিভিন্ন ধরনের বিষয় বেছে নিতে পেরেছিলাম যাদের সাথে আমি সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করব।
টেলিফোন নির্দেশিকা ও সর্বসাধারণের ব্যক্তিগত তথ্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে আমি হাসপাতাল, যুবনিবাস ও নার্সিং হোমগুলিতে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছিলাম। এছাড়াও আমি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কার্যপরিচালক, বিদ্যালয় তত্ত্বাবধায়ক ও উপদেষ্টা, ময়নাতদন্তকারী এবং কারাগার ও আদলতের কর্মকর্তাদের তালিকা করেছিলাম। আমার তালিকাটিতে মদ্যপ ও মাদকাসক্তদের প্রতিবাসন, পরিবেশসংক্রান্ত বিষয়ক সমিতি, প্রতিবন্ধী ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এবং পুষ্টিসংক্রান্ত গবেষণা সংশ্লিষ্ট পরিচালকেরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এমনকি আমি কল্যাণ বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজ সেবা ও পারিবারিক মন্ত্রণালয়ের প্রধান কর্মকর্তাদেরও বাদ দিইনি।
আমি কী বলতাম?
একটি সাক্ষাতের সময় প্রথমে আমি আমার ব্যক্তিগত পরিচয়কে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতাম। তারপর আমি উল্লেখ করতাম যে আমার এই সাক্ষাৎ মাত্র অল্প কয়েক মিনিট সময় নেবে।
একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুখোমুখি হলে, আমি বলতাম: “আমি একজন যিহোবার সাক্ষী। কিন্তু, আমি কোনও ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করতে এখানে আসিনি, যেটি দপ্তরের কর্মানুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়ে অনুপযুক্ত।” স্বাভাবিকভাবেই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বেশ সহজ হয়ে যেত। তখন পরিস্থিতির সাথে আমার মন্তব্যকে উপযোগী করে নিয়ে, আমি বলে চলতাম: “আমার সাক্ষাতের কারণের দুটি দিক আছে। প্রথমত, আপনাদের দপ্তর কর্তৃক যে কাজ সংগঠিত হচ্ছে তার জন্য আমি আমার উপলব্ধি প্রকাশ করতে চাই। সর্বসাধারণের উপকারার্থে কোন ব্যক্তি তার সময় ও শ্রম ব্যয় করেন, এই বিষয়টিকে অনায়াসে তুচ্ছ বলে গণ্য করা উচিত নয়। বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসিত হওয়ার যোগ্য।” অনেক ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি এইভাবে সম্বোধিত হওয়ায় অবাক হয়ে যেতেন।
এর মধ্যে সেই ব্যক্তি খুব সম্ভবত আমার সাক্ষাতের দ্বিতীয় কারণটি কী তা চিন্তা করতে শুরু করেছেন। আমি বলে চলতাম: “আমার সাক্ষাতের দ্বিতীয় কারণটি এই: আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত আমাদের এই সচেতন থাক! পত্রিকা থেকে আমি কয়েকটি প্রবন্ধ বেছে নিয়েছি যা বিশেষভাবে আপনাদের কাজের ধরন ও এর সাথে সম্পর্কযুক্ত সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করে। আমি নিশ্চিত যে আপনি জানতে চাইবেন একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকা এই সমস্যাগুলিকে কিভাবে দেখে থাকে। আমি এই কপিগুলি আপনার কাছে ছেড়ে যেতে আনন্দিত হব।” প্রায়ই আমাকে বলা হত যে আমার প্রচেষ্টাকে উপলব্ধি করা হয়েছিল।
আশ্চর্যজনক ও পুরস্কারজনক ফলাফল
আমি যখন এই উপস্থাপনাটি ব্যবহার করেছিলাম, অধিকাংশেরাই আমাকে এক বন্ধুত্বসুলভ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন; তবে সতের জনের মধ্যে মাত্র একজন আমার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেছিলেন। আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছিল যেগুলি আশ্চর্যজনক ও পুরস্কারজনক উভয়ই।
উদাহরণস্বরূপ, চার বার চেষ্টা করা ও ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করার পর, আমি একজন বিদ্যালয় জেলা পরিদর্শকের সাথে সাক্ষাৎ করতে সফল হয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত লোক ছিলেন। তথাপি, তিনি বেশ বন্ধুত্বসুলভ ছিলেন এবং আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেছিলেন। আমি যখন চলে আসছিলাম, তিনি বলেছিলেন: “আমি প্রকৃতই আপনার প্রচেষ্টার প্রতি উপলব্ধি জানাই এবং আমি অবশ্যই আপনাদের সাহিত্য সযত্নে পড়ব।”
আরেকটি ঘটনায়, আমি একটি জেলা আদালতে গিয়েছিলাম যেখানে আমি একজন মধ্য বয়স্ক প্রধান বিচারকের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। আমি যখন তার দপ্তরে প্রবেশ করেছিলাম, তিনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে তার দলিলপত্রের উপর থেকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলেন।
“মঙ্গলবার সকালে শুধু দপ্তরের সময় আর কেবল তখনই আমি কোন তথ্য জানাবার জন্য সময় দিতে পারব।” তিনি কর্কশস্বরে বলেছিলেন।
“এই অনুপযুক্ত সময়ে আসার জন্য আমাকে ক্ষমা করুন,” আমি দ্রুত উত্তর দিয়ে আরও বলেছিলাম, “অবশ্যই আমি অন্য এক সময়ে আবার আসতে আনন্দিত হব। আসলে আমি কিন্তু একটি ব্যক্তিগত বিষয়ে সাক্ষাৎ করতে এসেছি।”
এইবার সেই বিচারক কৌতূহলী হয়ে পড়েছিলেন। আমি কী চাই, বেশ খানিকটা নরম ভঙ্গিতে, তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি পুনরায় বলেছিলাম যে আমি আবার মঙ্গলবারে আসব।
“দয়া করে, বসুন,” আমাকে অত্যন্ত অবাক করে দিয়ে, তিনি অনুরোধ করেছিলেন। “আপনি কী চান?”
এক প্রাণবন্ত আলাপ-আলোচনা হয়েছিল আর প্রথমদিকে তার অত্যন্ত বিরূপ আচরণের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন কারণ তিনি সত্যই খুব ব্যস্ত ছিলেন।
“আপনি কি জানেন আমি যিহোবার সাক্ষীদের কোন্ বিষয়টি পছন্দ করি?” কিছুক্ষণ পর সেই বিচারক জিজ্ঞাসা করেছিলেন। “তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি রয়েছে যা থেকে তারা বিচ্যুত হন না। হিটলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন, তৎসত্ত্বেও সাক্ষীরা কিন্তু যুদ্ধে যাননি।”
আমরা দুইজন যখন একটি দপ্তরে প্রবেশ করেছিলাম, সেখানকার সচিবেরা আমাদের চিনতে পেরেছিলেন। তারপর কার্যনির্বাহী সচিব উদাসীনভাবে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “সভাপতি কখনও কোন দলগত ব্যাপারে দেখা করেন না।”
“তিনি কিন্তু আমাদের সাথে দেখা করবেন,” আমি শান্তভাবে উত্তর দিয়েছিলাম, “কারণ আমরা যিহোবার সাক্ষী। আমরা আবেদনপত্র পেশকারী নই এবং আমাদের এই সাক্ষাৎ তিন মিনিটের চেয়ে বেশি সময় নেবে না।” আমি মনে মনে একাগ্রভাবে প্রার্থনা করেছিলাম, “হে যিহোবা, দয়া করে এটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দাও!”
সেই সচিবটি নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, “ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করে দেখছি।” তিনি চলে যান। প্রায় দুই মিনিট পর যা আমার কাছে এক অফুরন্ত সময়ের মত মনে হয়েছিল, তিনি ফিরে এসেছিলেন আর স্বয়ং সভাপতি পিছন পিছন এসেছিলেন। কোন কিছু না বলে, অন্য দুটি কক্ষ অতিক্রম করে তিনি তার অফিসের দিকে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন।
আমরা যখন আলাপ করতে শুরু করেছিলাম, তিনি আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। আমরা যখন সচেতন থাক! পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাগুলি দেখিয়েছিলাম তিনি সাগ্রহে সেগুলি নিয়েছিলেন। আমাদের কাজের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এক উত্তম সাক্ষ্যদানের এই সুযোগের জন্য আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম।
অনেক অপূর্ব অভিজ্ঞতাগুলির দিকে ফিরে তাকিয়ে, আমি আরও পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পেরেছি যা প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) এটিই ঈশ্বরেরই ইচ্ছা যে যেন সমস্ত পটভূমিকার, ভাষার, কিংবা সামাজিক স্তরের লোকেদের, মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানার সুযোগ দেওয়া হয়।—উৎসর্গীকৃত।