ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৮ ৫/১ পৃষ্ঠা ২৬-২৯
  • ৮০ বছর বয়সে কার্যভারের পরিবর্তন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ৮০ বছর বয়সে কার্যভারের পরিবর্তন
  • ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • বাইবেলের সত্য আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে
  • যে উদাহরণগুলি আমাদের শক্তিশালী করেছিল
  • পূর্ব অ্যাংলিয়ায় অগ্রগামীর কাজ করা
  • যুদ্ধের সময় ও একটি পরিবার
  • স্পেনে যাওয়ার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত
  • “আমরা এই পরিচর্য্যা-পদ প্রাপ্ত হওয়ায় . . . নিরুৎসাহিত হই না”
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • মায়েরা—উনীকীর কাছ থেকে শিখুন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২২
  • পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি এবং হৃদয় নিবদ্ধ রাখা
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার সেবায় বিস্ময়ে ভরা এক জীবন
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৮ ৫/১ পৃষ্ঠা ২৬-২৯

৮০ বছর বয়সে কার্যভারের পরিবর্তন

গুয়েনডোলিন ম্যাথিউস দ্বারা কথিত

আমার বয়স যখন ৮০ বছর, আমার স্বামী ও আমি আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র একটি ভাড়া করা মালগাড়িতে করে নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে স্পেনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতাম না এবং আমরা দক্ষিণ-পশ্চিম স্পেনে যাচ্ছিলাম যে স্থানটি ইংরেজি ভাষী পর্যটকদের যাতায়াতের স্থান থেকে অনেক দূরে ছিল। আমাদের বেশির ভাগ বন্ধুরাই ভেবেছিলেন যে আমরা পাগল হয়ে গিয়েছি কিন্তু আমি আনন্দের সাথে স্মরণ করেছিলাম যে অব্রাহাম যখন ঊর ত্যাগ করেছিলেন তখন তার ৭৫ বছর বয়স ছিল।

যখন তা বাস্তবায়িত হয়, ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে স্পেনে এসে পৌঁছানোর পর থেকে বছরগুলি আমাদের জীবনে সবচেয়ে ফলদায়ক হয়ে এসেছে। আমরা কেন জায়গা পরিবর্তন করেছিলাম তা বলার আগে, যিহোবার পরিচর্যায় আমাদের জীবনকাল কিভাবে আমাদের এইধরনের একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে পরিচালিত করেছিল, তা আমাকে বলতে দিন।

বাইবেলের সত্য আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে

দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের লন্ডনে এক ধর্মীয় গৃহে আমি বড় হয়ে উঠেছিলাম। যেহেতু মা আধ্যাত্মিক পরিতৃপ্তির অন্বেষণ করে চলেছিলেন, তাই তিনি আমাকে ও আমার বোনকে বিভিন্ন উপাসনালয়ে নিয়ে যেতেন। আমার বাবা, টিউবারকিউলোসিস দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় আমাদের সাথে যেতে পারতেন না। কিন্তু তিনি বাইবেলের এক উদ্যোগী পাঠক ছিলেন এবং তাকে মুগ্ধ করত, এমন প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদের নিচে দাগ দিয়ে রাখতেন। আমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলির একটি হল সেই বহুল ব্যবহৃত বাইবেলটি, যেটি তার জন্য প্রচুর অর্থ রেখেছিল।

১৯২৫ সালে আমার বয়স যখন ১৪, আমাদের দরজার নিচে একটি ট্র্যাক্ট রাখা ছিল যেটিতে ওয়েস্ট হেম টাউন হলে একটি জনসাধারণের বক্তৃতার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমার মা ও একজন প্রতিবেশীনী সেই বক্তৃতায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং আমি ও আমার বোন তাদের সাথে গিয়েছিলাম। “বর্তমানে জীবিত লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা কখনও মরবে না” নামক বক্তৃতাটি মায়ের হৃদয়ে বাইবেলের সত্যের বীজ বপন করেছিল।

কয়েক মাস পর, ৩৮ বছর বয়সে বাবা মারা যান। তার মৃত্যু ছিল এক চরম দুর্দশা, কারণ এটি আমাদের ভগ্নচিত্ত ও সেই সাথে নিঃসহায় অবস্থায় রেখে গিয়েছিল। স্থানীয় চার্চ অফ্‌ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মৃতদেহ সৎকারের সভায়, পুরোহিত যখন দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে বাবার আত্মা স্বর্গে গিয়েছে তা শুনে মা আশ্চর্য হয়েছিলেন। তিনি বাইবেল থেকে জেনেছিলেন যে মৃতেরা কবরে ঘুমিয়ে রয়েছে এবং তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে কোন একদিন বাবা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের জন্য পুনরুত্থিত হবেন। (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১, ২৯; ১৪৬:৩, ৪; উপদেশক ৯:৫; প্রেরিত ২৪:১৫: প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) যারা ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দিতেন তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে আন্তর্জাতিক বাইবেল ছাত্রদের সাথে পরিচিত হতে স্থিরসংকল্পবদ্ধ হন, যিহোবার সাক্ষীদের তখন যে নামে ডাকা হত।

যেহেতু আমাদের যাত্রার খরচ বহনের মত অর্থ ছিল না, তাই প্রত্যেক সপ্তাহে আমাদের ঘর থেকে যিহোবার সাক্ষীদের সভাগুলিতে যাওয়ার জন্য আমরা দুই ঘন্টা করে হাঁটতাম। পরে, ঘরে ফিরে আসার জন্য আবার আমরা দুই ঘন্টা হাঁটতাম। কিন্তু ওই সভাগুলিকে আমরা অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করতাম এবং কখনও অনুপস্থিত থাকতাম না, এমনকি লন্ডনের প্রচণ্ড কুয়াশা যখন শহরটিকে আচ্ছন্ন করে ফেলত তখনও না। শীঘ্রই মা তার জীবন যিহোবার উদ্দেশে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ও বাপ্তিস্মিত হয়েছিলেন আর আমিও ১৯২৭ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম।

আমাদের আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, মা সবসময় আমাকে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিকে অগ্রে রাখার গুরুত্ব সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। মথি ৬:৩৩ পদ ছিল তার প্রিয় পদগুলির একটি এবং প্রকৃতই তিনি ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা’ করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে ক্যানসারের কারণে যখন তার অকাল মৃত্যু হয়, সেই সময়ে তিনি পূর্ণ সময়ের পরিচারকদের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছিলেন, যাদের সেবা করার জন্য ফ্রান্সে যেতে হত।

যে উদাহরণগুলি আমাদের শক্তিশালী করেছিল

অতীতের সেই বছরগুলিতে, লন্ডনের সভাগুলিতে যোগদানকারী কিছু ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব ধারণাগুলি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন এবং এই লোকেরা বিবাদ ও অত্যন্ত বিক্ষোভ উৎপন্ন করেছিলেন। তথাপি মা সবসময় বলতেন যে, সর্বোপরি যিহোবার সংগঠন থেকে আমরা যা শিখেছি, তার সমস্ত কিছুর পরে এটি পরিত্যাগ করা নিষ্ঠাহীন কাজ হবে। তৎকালীন সভাপতি যোসেফ এফ. রাদারফোর্ডের পরিদর্শনগুলি আমাদের নিষ্ঠার সাথে সেবা চালিয়ে যেতে উদ্দীপিত করেছিল।

আমার মনে পড়ে ভাই রাদারফোর্ড একজন সদয়, সহজগম্য লোক ছিলেন। আমি যখন একজন কিশোরী ছিলাম, একবার লন্ডন মণ্ডলী বেড়াতে গিয়েছিল যেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাকে—একটি লাজুক কিশোরীকে—ক্যামেরা হাতে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি তার একটি ছবি তুলব কি না। সেই ছবিটি একটি প্রিয় স্মৃতিচিহ্ন হয়ে উঠেছিল।

পরবর্তী সময়ে, একটি অভিজ্ঞতা আমাকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তি ও জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য করতে প্রভাবিত করেছিল। আমি লন্ডনের একটি বড় হোটেলে পরিচারিকার কাজ করতাম, যেখানে ফ্র্যাঞ্জ ভন পাপেন নামে হিটলারের একজন গুপ্তচরকে দুপুরের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। খাওয়ার সময় তিনি তার অস্ত্র খুলে রাখতে অস্বীকার করেছিলেন আর আমি এতে উছোট খাই ও যে স্যুপ আমি নিয়ে আসছিলাম তা পড়ে যায়। তিনি ক্রোধের সাথে বলেছিলেন যে জার্মানিতে আমার এইধরনের অসতর্কতার জন্য আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। ভোজনের অবশিষ্ট সময়ে আমি তার থেকে দূরে সরে থেকেছিলাম!

১৯৩১ সালে আলেকজান্দ্রা প্যালেসের সম্মেলনটি ছিল এক স্মরণীয় সম্মেলন, যেখানে আমি ভাই রাদারফোর্ডকে বক্তৃতা দিতে শুনেছিলাম। সেখানে উদ্দীপনার সাথে আমরা নতুন যিহোবার সাক্ষী নামটি গ্রহণ করেছিলাম। (যিশাইয় ৪৩:১০, ১২) দুই বছর পর, ১৯৩৩ সালে আমি অগ্রগামী পরিচর্যায় যোগ দিয়েছিলাম, পূর্ণ সময়ের পরিচর্যাকে তখন যেভাবে বলা হত। আরেকটি আশীর্বাদের কথা আমার মনে পড়ে যা হল উত্তম যুবক ব্যক্তিদের সাথে সহযোগিতা করতে পারা, যারা পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর দূরবর্তী দেশগুলিতে মিশনারী হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন ক্লড গুডম্যান, হেরোল্ড কিং, জন কুক্‌ এবং এডুইন স্কিনার। এইধরনের বিশ্বস্ত উদাহরণগুলি আমাকে বিদেশী ক্ষেত্রগুলিতে সেবা করতে প্রণোদিত করেছিল।

পূর্ব অ্যাংলিয়ায় অগ্রগামীর কাজ করা

আমার অগ্রগামীর কার্যভার ছিল পূর্ব অ্যাংলিয়ায় (পূর্ব ইংল্যান্ড) আর সেখানে প্রচার করার জন্য উদ্দীপনা ও উদ্যমের প্রয়োজন ছিল। আমাদের বৃহৎ ক্ষেত্রটি শেষ করার জন্য আমরা সাইকেলে চড়ে শহরে শহরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করতাম এবং ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। সেই এলাকায় কোন মণ্ডলীই ছিল না, তাই আমি ও আমার সঙ্গী নিজেদের মধ্যে নিয়মিত সাপ্তাহিক সভাগুলির প্রতিটি বিষয় একত্রে আলোচনা করতাম। আমাদের পরিচর্যায় আমরা শত শত বই ও পুস্তিকা অর্পণ করেছিলাম যেগুলি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলি ব্যাখ্যা করে।

এক যাজকের বাড়িতে সাক্ষাৎ করা ছিল একটি স্মরণীয় ঘটনা, যেখানে আমরা চার্চ অফ্‌ ইংল্যান্ডের একজন স্থানীয় প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছিলাম। সেই সময় পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকায় আমরা অ্যাংলিকান যাজকদের সাথে সাক্ষাৎ করাকে এড়াতাম আর একেবারে শেষে তার কাছে যেতাম, কারণ যখন তারা শুনতেন যে আমরা সেই এলাকায় সুসমাচার প্রচার করছি প্রায়ই তারা আমাদের জন্য বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতেন। কিন্তু এই গ্রামে সকলে এখানকার যাজকের প্রশংসা করতেন। তিনি অসুস্থদের পরিদর্শন করতেন, যারা পড়তে ভালবাসে তাদের বই ধার দিতেন এবং এমনকি তাদের বাইবেলের বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করার জন্য তার যাজকপল্লীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের গৃহেও যেতেন।

নিশ্চিতভাবে, আমরা যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম তিনি অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ ছিলেন এবং অনেকগুলি বইও নিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে কেউ যদি আমাদের বইগুলি পড়তে চান কিন্তু মূল্য দিতে অসমর্থ হন, তবে তিনি তা পরিশোধ করবেন। আমরা জেনেছিলাম যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাগুলিই তার যাজকপল্লীতে শান্তি ও সৌহার্দ্য উন্নীত করতে তাকে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ করেছিল। আমরা চলে আসার পূর্বে তিনি আমাদের প্রতি তার আশীর্বাদ দান করেছিলেন ও এই উত্তম কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন। প্রস্থানের সময় আমাদের প্রতি তার বাক্যগুলি ছিল গণনাপুস্তক ৬:২৪ পদের: “প্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করুন ও রক্ষা করুন।”—কিং জেমস ভারসান।

আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করার দুই বছর পর মা মারা গিয়েছিলেন এবং অর্থ ছাড়া ও পরিবার হারিয়ে আমি লন্ডনে ফিরে এসেছিলাম। একজন প্রেমময় স্কটিশ সাক্ষী বোন আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, মায়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন এবং পূর্ণ সময়ের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। তাই আমি জুলিয়া ফেয়ারফ্যাক্স নামে একজন নতুন অগ্রগামী সাথীর সাথে পূর্ব অ্যাংলিয়ায় ফিরে গিয়েছিলাম। আমরা একটি পুরনো ক্যারাভানকে ভ্রাম্যমান গৃহ হিসাবে কাজ করার জন্য তৈরি করেছিলাম; আর এটিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য আমরা একটি মোটরগাড়ি অথবা ট্রাক ব্যবহার করতাম। এক বয়স্ক দম্পতি, অ্যালবার্ট ও এথেল অ্যাবোটের সাথে আমরা আমাদের প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলাম, তাদেরও একটি ছোট ক্যারাভান ছিল। অ্যালবার্ট ও এথেল আমার কাছে বাবামার মত হয়ে উঠেছিলেন।

ক্যাম্ব্রিজশায়ারে অগ্রগামীর কাজ করার সময়ে আমি একজন উত্তম খ্রীষ্টীয় ভাই জন ম্যাথিউসের সাক্ষাৎ পাই, যিনি ইতিমধ্যে কঠিন পরিস্থিতিতে যিহোবার প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরই, ১৯৪০ সালে আমরা বিয়ে করেছিলাম।

যুদ্ধের সময় ও একটি পরিবার

আমরা যখন নব বিবাহিত দম্পতি ছিলাম, আমাদের ঘর ছিল একটি ছোট্ট ক্যারাভান যেটির আকার ছিল ছোট রান্নাঘরের সমান আর আমরা একটি নির্ভরযোগ্য মোটরসাইকেলে চড়ে আমাদের আশেপাশে পরিচর্যায় যেতাম। আমাদের বিয়ের এক বছর পর, জন তার বাইবেল ভিত্তিক দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে সৈনিকের কাজকে প্রত্যাখ্যান করায় তাকে একটি খামারে শ্রমিকের কাজ করার দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। (যিশাইয় ২:৪) যদিও এটির অর্থ ছিল আমাদের অগ্রগামীর কাজের অবসান কিন্তু জনের সেই দণ্ডাদেশটি ঈশ্বরের ব্যবস্থা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল, কারণ আমি সন্তানসম্ভবা ছিলাম আর সে আমাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারবে।

যুদ্ধের দিনগুলিতে আমরা কষ্টের মধ্য দিয়েও যে বিশেষ সভাগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলি উপভোগ করেছিলাম। ১৯৪১ সালে আমাদের মোটরসাইকেলে চড়ে জন ও প্রথম সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় আমি, ৩০০ কিলোমিটার দূরে ম্যানচেস্টারে গিয়েছিলাম। রাস্তায় আমরা অনেক বোমা-বিধ্বস্ত শহর অতিক্রম করেছিলাম আর এইধরনের পরিস্থিতিতে সভা করা যাবে কি না সেই সম্বন্ধে চিন্তা করেছিলাম। সভা হয়েছিল। ম্যানচেস্টারের কেন্দ্রে ফ্রি ট্রেড হলটি ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাক্ষীদের দ্বারা পূর্ণ হয়েছিল আর সমস্ত কার্যক্রমটি উপস্থাপন করা হয়েছিল।

সম্মেলনের সর্বশেষ বক্তা, তার বক্তৃতার শেষে শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন যে অবিলম্বে তাদের এই ভবনটি খালি করতে হবে কারণ একটি বিমান আক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সতর্কবাণীটি সময়োপযোগী ছিল। যখন আমরা সতর্কবাণীরূপ শব্দ ও শত্রুবিমানের আক্রমণকারী বন্দুকের শব্দ শুনতে পাই, আমরা হলটির থেকে বেশি দূরে ছিলাম না। পিছনের দিকে তাকিয়ে, আমরা দেখেছিলাম যে অনেক বিমান শহরের কেন্দ্রে বোমা নিক্ষেপ করছিল। দূর থেকে আগুন ও ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে হলটিকে দেখতে পেয়েছিলাম যেখানে একটু আগে আমরা বসেছিলাম; এটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল! আনন্দের বিষয় যে, আমাদের খ্রীষ্টীয় ভাইবোনদের কেউই মারা যাননি।

আমাদের সন্তান প্রতিপালনের সময় আমরা অগ্রগামীর কাজ করতে পারিনি কিন্তু আমরা ভ্রমণ অধ্যক্ষ ও অগ্রগামীরা, যাদের কোন বাসস্থান ছিল না, তাদের জন্য সর্বদা আমাদের গৃহ খোলা রাখতাম। এক সময় কয়েক মাসের জন্য ছয়জন অগ্রগামী আমাদের গৃহে থেকেছিলেন। নিঃসন্দেহে, এইধরনের সাহচর্যই ১৯৬১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সী আমাদের মেয়ে ইউনিসের অগ্রগামীর কাজ মনোনয়ন করার একটি কারণ ছিল। দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের ছেলে ডেভিড বড় হওয়ার পর যিহোবাকে সেবা করা অব্যাহত রাখেনি আর আমাদের অন্য মেয়ে লিন্ডা যুদ্ধের সময় দুঃখজনক পরিস্থিতিতে মারা গিয়েছিল।

স্পেনে যাওয়ার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত

মায়ের উদাহরণ ও উৎসাহ আমার মধ্যে মিশনারী হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে উদ্দীপিত করেছিল এবং আমি কখনও সম্পূর্ণরূপে সেই লক্ষ্য থেকে দৃষ্টি সরাইনি। তাই ১৯৭৩ সালে যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের অধিক প্রয়োজন এমন একটি দেশ, স্পেনে যাওয়ার জন্য ইউনিস যখন ইংল্যান্ড ত্যাগ করেছিল, আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। সে আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে দেখে আমরা অবশ্যই দুঃখিত হয়েছিলাম কিন্তু সে যে বিদেশে সেবা করতে চায় সেইজন্য আমরা গর্বিত ছিলাম।

আমরা প্রায়ই ইউনিসের সাথে দেখা করতাম, ফলে আমরা স্পেনের সাথে ভালভাবে পরিচিত হয়েছিলাম। আসলে, জন ও আমি তার চারটি ভিন্ন ভিন্ন কার্যভারের এলাকায় সাক্ষাৎ করেছিলাম। তারপর, সময়ের প্রবাহে আমাদের শক্তি দুর্বল হতে থাকে। জন আঘাত পেয়েছিল যা গুরুতরভাবে তার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছিল আর আমার হৃদযন্ত্র ও গলগ্রন্থির সমস্যাগুলি দেখা দিয়েছিল। এছাড়াও আমরা দুজনেই বাতের সমস্যায় ভুগছিলাম। যদিও আমাদের ইউনিসের সাহায্যের প্রকৃতই প্রয়োজন ছিল, তবুও আমরা চাইনি যে সে আমাদের জন্য তার কার্যভার ছেড়ে দিক।

আমরা আমাদের অভিমত ইউনিসের সাথে আলোচনা করেছিলাম আর নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করেছিলাম। সে আমাদের সাহায্য করার জন্য গৃহে ফিরে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে সর্বোত্তম সমাধান হবে যদি আমি ও জন তার সাথে থাকার জন্য স্পেনে চলে যাই। একজন মিশনারী হতে না পারলেও, আমি অন্ততপক্ষে আমার মেয়ে ও তার দুই অগ্রগামী সাথীকে পূর্ণ সময়ের পরিচর্যায় সমর্থন করতে পারব। তখন থেকে জন ও আমি ইউনিসের প্রায় ১৫ বছরের দুই অগ্রগামী সাথী, নুরিয়া ও অ্যানাকে আমাদের মেয়ের মত দেখি। আর যেখানেই তাদের কার্যভার হোক না কেন, আমরা তাদের সাথে থাকাতে তারা আনন্দিত হয়েছিল।

যে সময় আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন থেকে ছয় বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এরপর আমাদের স্বাস্থ্যের আর অবনতি হয়নি এবং নিশ্চিতরূপে আমাদের জীবন আরও আগ্রহপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখনও আমি ভালভাবে স্প্যানিশ বলতে পারি না কিন্তু সেটি আমাকে প্রচার করা থেকে বিরত করে না। দক্ষিণ-পশ্চিম স্পেনের এক্সট্রেমেডুরায় আমাদের ছোট মণ্ডলীতে জন ও আমি আমাদের নিজের দেশের মত মনে করি।

স্পেনে বাস করা আমাকে, আমাদের রাজ্যের প্রচার কাজের আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখিয়েছে আর আমি এখন আরও অনেক স্পষ্টভাবে যীশুর কথাগুলি বুঝতে পারি, তিনি যেমন বলেছিলেন, “ক্ষেত্র জগৎ।”—মথি ১৩:৩৮.

[Pictures on page 28]

১৯৩০ এর দশকে অগ্রগামীর কাজ করা

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার