আপনার কি অব্রাহামের মতো বিশ্বাস আছে?
“মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন?”—লূক ১৮:৮.
১. আজকে বিশ্বাসকে শক্তিশালী রাখা কেন সহজ নয়?
আজকে বিশ্বাসকে শক্তিশালী রাখা সত্যিই সহজ নয়। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো থেকে খ্রীষ্টানদের মনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জগৎ তাদের উপর প্রচণ্ড চাপ নিয়ে আসে। (লূক ২১:৩৪; ১ যোহন ২:১৫, ১৬) অনেককেই বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ, বিপর্যয়, অসুস্থতা বা ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে হয়। (লূক ২১:১০, ১১) অনেক দেশে লোকেদের মধ্যে এমন কিছু বদ্ধমূল সামাজিক ধারণা রয়েছে যে যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের ধর্ম পালন করতে চান তাদেরকে একগুঁয়ে ও গোঁড়া বলে দেখা হয়। এছাড়াও অনেক খ্রীষ্টানদের উপর তাদের বিশ্বাসের জন্য নির্যাতন করা হয়েছে। (মথি ২৪:৯) তাই প্রায় ২০০০ বছর আগে যীশু যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করেছিলেন তা সত্যিই উপযুক্ত ছিল: “মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন?”—লূক ১৮:৮.
২. (ক) একজন খ্রীষ্টানের জন্য শক্তিশালী বিশ্বাস কেন জরুরি? (খ) কার বিশ্বাসের উদাহরণ থেকে এখন আমরা শিখব?
২ কিন্তু শক্তিশালী বিশ্বাস খুবই জরুরি, যদি আমরা এখন আমাদের জীবনকে সফল করতে চাই ও ভবিষ্যতে প্রতিজ্ঞাত অনন্ত জীবন পেতে চাই। হবক্কূককে যিহোবা যা বলেছিলেন সেই কথাগুলোকে উদ্ধৃত করে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমার ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে, আর যদি সরিয়া পড়ে, তবে আমার প্রাণ তাহাতে প্রীত হইবে না। . . . বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়।” (ইব্রীয় ১০:৩৮–১১:৬; হবক্কূক ২:৪) পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন: “বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর; অনন্ত জীবন ধরিয়া রাখ; তাহারই নিমিত্ত তুমি আহূত হইয়াছ।” (১ তীমথিয় ৬:১২) তাহলে এইরকম শক্তিশালী বিশ্বাস কিভাবে গড়ে তোলা যায় যা কখনও ভেঙে যাবে না? এই প্রশ্নটির উত্তর পাওয়ার জন্য আমরা এখন এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে শিখব যিনি প্রায় ৪০০০ বছর আগে জীবিত ছিলেন আর তার বিশ্বাসকে পৃথিবীর তিনটে বড় ধর্মে খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়—ইসলাম, যিহূদীবাদ ও খ্রীষ্টধর্মে। এই ব্যক্তি হলেন অব্রাহাম। কেন তার বিশ্বাস এতখানি উল্লেখযোগ্য ছিল? আজকে কি আমরা তাকে অনুকরণ করতে পারি?
ঈশ্বরের নির্দেশের প্রতি বাধ্যতা
৩, ৪. কেন তেরহ তার পরিবার নিয়ে ঊর থেকে হারণে চলে এসেছিলেন?
৩ বাইবেল একেবারে শুরুতেই অব্রাহামের (যার আসল নাম ছিল অব্রাম) বিষয়ে বলে। আদিপুস্তক ১১:২৬ পদে আমরা পড়ি: “তেরহ . . . অব্রাম, নাহোর ও হারণের জন্ম দিলেন।” তেরহ ও তার পরিবার কল্দীয় দেশের ঊর নগরে বাস করতেন যেটা দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার এক সমৃদ্ধশালী শহর। কিন্তু তারা সেখানে বেশি দিন থাকেননি। “তেরহ আপন পুত্ত্র অব্রামকে ও হারণের পুত্ত্র আপন পৌত্ত্র লোটকে এবং অব্রামের স্ত্রী সারী [সারা] নাম্নী পুত্ত্রবধূকে সঙ্গে লইলেন; তাঁহারা একসঙ্গে কনান দেশে যাইবার নিমিত্তে কল্দীয় দেশের ঊর হইতে যাত্রা করিলেন; আর হারণ নগর পর্য্যন্ত গিয়া তথায় বসতি করিলেন।” (আদিপুস্তক ১১:৩১) অব্রাহামের ভাই নাহোরও তার পরিবার নিয়ে হারণ নগরে এসেছিলেন। (আদিপুস্তক ২৪:১০, ১৫; ২৮:১, ২; ২৯:৪) তেরহ কেন সমৃদ্ধশালী ঊর থেকে এত দূরে হারণ নগরে চলে এসেছিলেন?
৪ অব্রাহামের সময় থেকে প্রায় ২০০০ বছর পরে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি স্তিফান যিহূদী মহাসভায় দাঁড়িয়ে তেরহের পরিবারের এই অস্বাভাবিক যাত্রার কারণ সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমাদের পিতা অব্রাহাম হারণে বসতি করিবার পূর্ব্বে যে সময়ে মিসপতামিয়ায় ছিলেন, তৎকালে প্রতাপের ঈশ্বর তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন ‘তুমি স্বদেশ হইতে ও আপন জ্ঞাতি কুটুম্বদের মধ্য হইতে বাহির হও, এবং আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল।’ তখন তিনি কল্দীয়দের দেশ হইতে বাহির হইয়া গিয়া হারণে বসতি করিলেন।” (প্রেরিত ৭:২-৪) তেরহ অব্রাহামের জন্য যিহোবার ইচ্ছাকে মেনে নিয়েছিলেন ও তার পরিবার নিয়ে হারণে চলে এসেছিলেন।
৫. অব্রাহাম তার বাবার মৃত্যুর পর কোথায় গিয়েছিলেন? কেন?
৫ তেরহের পরিবার এই নতুন শহরে এসে বাস করতে থাকেন। অনেক বছর পরে যখন অব্রাহাম “আমার দেশে” বলে উল্লেখ করেছিলেন তখন তিনি ঊর দেশকে বোঝাননি কিন্তু হারণকে বুঝিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২৪:৪) কিন্তু হারণও অব্রাহামের জন্য স্থায়ী জায়গা হয়ে ওঠেনি। স্তিফান যেমন বলেছিলেন, “[অব্রাহামের] পিতার মৃত্যু হইলে পর ঈশ্বর তাঁহাকে তথা হইতে এই দেশে আনিলেন, যে দেশে আপনারা এখন বাস করিতেছেন।” (প্রেরিত ৭:৪) যিহোবার নির্দেশের বাধ্য হয়ে অব্রাহাম লোটকে সঙ্গে নিয়ে ইউফ্রেটিস নদী পার হয়ে কনান দেশে এসেছিলেন।a
৬. যিহোবা অব্রাহামের কাছে কোন্ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?
৬ যিহোবা কেন অব্রাহামকে কনানে চলে আসতে বলেছিলেন? এই বিশ্বস্ত ব্যক্তির জন্য ঈশ্বরের যে উদ্দেশ্য ছিল তা পূর্ণ করার জন্যই এটা করতে বলা হয়েছিল। যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন: “তুমি আপন দেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব ও পৈতৃক বাটী পরিত্যাগ করিয়া, আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল। আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া তোমার নাম মহৎ করিব, তাহাতে তুমি আশীর্ব্বাদের আকর হইবে। যাহারা তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবে, তাহাদিগকে আমি আশীর্ব্বাদ করিব, যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দিবে তাহাকে আমি অভিশাপ দিব; এবং তোমাতে ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ১২:১-৩) অব্রাহাম একটি বিশাল জাতির পিতা হবেন, যিহোবা যে জাতিকে সুরক্ষা যোগাবেন ও যারা কনান দেশের অধিকারী হবে। কতই না অপূর্ব প্রতিজ্ঞা! কিন্তু সেই দেশের অধিকার পাওয়ার জন্য অব্রাহামকে তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে হয়েছিল।
৭. যিহোবার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কনান দেশের অধিকারী হতে অব্রাহামকে তার জীবনে কোন্ পরিবর্তনগুলো করার জন্য তৈরি থাকতে হয়েছিল?
৭ যখন অব্রাহাম ঊর ছেড়ে এসেছিলেন তিনি সেই সমৃদ্ধ শহর আর সম্ভবত তার পিতার বড় পরিবার পিছনে ফেলে চলে এসেছিলেন যা সেই কূলপতিদের সময়ে নিরাপত্তার প্রধান উৎস ছিল। যখন তিনি হারণ ছাড়েন তিনি তার ভাই নাহোরের পরিবার ও তার পিতার বিরাট পরিবারকে ছেড়ে এক অপরিচিত দেশে এসেছিলেন। কনানে তিনি স্থায়ীভাবে বাস করেননি বা সেই নগরে সুরক্ষাও খোঁজেননি। কেন তিনি তা করেননি? কারণ অব্রাহাম সেই দেশে এসে পৌঁছানোর অল্প কিছু সময় পরেই যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “এই দেশের দীর্ঘপ্রস্থে পর্য্যটন কর, কেননা আমি তোমাকেই ইহা দিব।” (আদিপুস্তক ১৩:১৭) ৭৫ বছর বয়স্ক অব্রাহাম ও তার ৬৫ বছর বয়স্কা স্ত্রী সারা এই নির্দেশ পালন করেছিলেন। “বিশ্বাসে তিনি বিদেশের ন্যায় প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবাসী হইলেন, তিনি সেই প্রতিজ্ঞার সহাধিকারী ইস্হাক ও যাকোবের সহিত তাম্বুতেই বাস করিতেন।”—ইব্রীয় ১১:৯; আদিপুস্তক ১২:৪.
আজকে অব্রাহামের মতো বিশ্বাস
৮. অব্রাহাম ও প্রাচীনকালের আরও অন্যান্য সাক্ষীদের কথা মনে রেখে আমাদের কী গড়ে তোলা উচিত?
৮ ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে উল্লেখিত “বৃহৎ [খ্রীষ্টপূর্ব] সাক্ষীমেঘ” এর তালিকায় অব্রাহাম ও তার পরিবারের নাম আছে। এই প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসের কথা মনে রেখে পৌল খ্রীষ্টানদের “সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ [বিশ্বাসের অভাব] ফেলিয়া” দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। (ইব্রীয় ১২:১) সত্যিই বিশ্বাসের অভাব আমাদের জন্য ‘সহজে বাধাজনক’ হতে পারে। কিন্তু পৌলের দিনে ও আজকে আমাদের দিনে সত্যিকারের খ্রীষ্টানেরা শক্তিশালী বিশ্বাস গড়ে তুলতে পেরেছেন যা অব্রাহাম ও প্রাচীনকালের আরও অন্যান্যদের বিশ্বাসের মতোই। নিজের ও তার খ্রীষ্টান ভাইদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে পৌল বলেন: “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।”—ইব্রীয় ১০:৩৯.
৯, ১০. আজকে যে অনেকেরই অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রয়েছে তার কী প্রমাণ আছে?
৯ এটা ঠিক যে অব্রাহামের সময় থেকে এখন জগৎ অনেক বদলে গিয়েছে। কিন্তু আমরা সেই একই ঈশ্বর ‘অব্রাহামের . . . ঈশ্বরের’ উপাসনা করছি আর তিনি পরিবর্তিত হন না। (প্রেরিত ৩:১৩; মালাখি ৩:৬) অব্রাহামের সময়ে তিনি যেভাবে উপাসিত হয়েছিলেন, তাঁর প্রতি যতখানি বিশ্বাস দেখানো হয়েছিল আজও তিনি ঠিক ততখানিই পাওয়ার যোগ্য। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) অনেকে তাদের নিজেদেরকে যিহোবার কাছে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেন ও অব্রাহামের মতো তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য তাদের জীবনে যে কোন রকমের পরিবর্তন করে থাকেন। গত বছর ৩,১৬,০৯২ জন ব্যক্তি যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসাবে “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।—মথি ২৮:১৯.
১০ এই নতুন খ্রীষ্টানদের মধ্যে বেশিরভাগকেই তাদের উৎসর্গীকরণ অনুযায়ী জীবন যাপন করার জন্য এক অপরিচিত দেশে যেতে হয়নি। কিন্তু এক আধ্যাত্মিক অর্থে তাদের অনেকে এক দীর্ঘ পথ যাত্রা করেছেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, মরিসাসের জাদুকরি এলসি, ভুতবিদ্যা দিয়ে লোকেদের রোগ ভাল করতেন। সবাই তাকে ভয় পেত। কিন্তু যখন একজন বিশেষ অগ্রগামী এলসির মেয়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন সেটিই এলসিকে ‘অন্ধকার হইতে জ্যোতির প্রতি ফিরিয়া আসার’ পথ দেখিয়েছিল। (প্রেরিত ২৬:১৮) মেয়ের আগ্রহ তাকে এতখানিই নাড়া দিয়েছিল যে এলসি আমার বাইবেলের গল্পের বই থেকে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য রাজি হয়েছিলেন। তার উৎসাহকে যাতে জাগিয়ে রাখা যায় সেইজন্য সপ্তাহে তিন দিন তার সঙ্গে অধ্যয়ন করা হতো। জাদুবিদ্যা তাকে সুখ দিতে পারেনি আর তার জীবন সমস্যায় একেবারে ভর্তি ছিল। যাইহোক শেষ পর্যন্ত তিনি এই জাদুবিদ্যা থেকে সত্য উপাসনা পর্যন্ত পৌঁছানোর লম্বা পথ পার হতে পেরেছিলেন। এরপর যখন লোকেরা সুস্থ হওয়ার জন্য তার কাছে এসেছিলেন তিনি তাদের বুঝিয়েছেন যে কেবল যিহোবাই তাদের মন্দতা থেকে রক্ষা করতে পারেন। এলসি এখন একজন বাপ্তিস্মিত সাক্ষী আর তার পরিবার ও চেনাজানা লোকেদের মধ্যে ১৪ জন সত্যে এসেছেন।
১১. যারা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেন তারা কোন্ পরিবর্তনগুলো করার জন্য ইচ্ছুক থাকেন?
১১ গত বছর যারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছিলেন তাদের অনেককেই জীবনে এইরকম আমূল পরিবর্তন করতে হয়নি। কিন্তু সকলেই আধ্যাত্মিক মৃত অবস্থা থেকে পরিবর্তিত হয়ে আধ্যাত্মিকভাবে জীবিত হয়েছেন। (ইফিষীয় ২:১) যদিও তারা জগতে বাস করছেন, তারা আর জগতের নন। (যোহন ১৭:১৫, ১৬) অভিষিক্ত খ্রীষ্টান যারা “স্বর্গপুরীর প্রজা,” তাদের মতো তারাও এখানে “বিদেশী ও প্রবাসী” হিসাবে আছেন। (ফিলিপীয় ৩:২০; ১ পিতর ২:১১) তারা ঈশ্বরের মান অনুযায়ী চলেন আর ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমই তা করতে তাদেরকে প্রেরণা যোগায়। (মথি ২২:৩৭-৩৯) তারা স্বার্থপর নন, টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদের পিছনে ছোটা তাদের লক্ষ্য নয় আর তারা এই জগতে ব্যক্তিগত সাফল্য পেতে চান না। বরং তারা “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর . . . যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে” তার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেছেন।—২ পিতর ৩:১৩; ২ করিন্থীয় ৪:১৮.
১২. গতবছরের কোন্ নথি দেখায় যে যীশু তাঁর উপস্থিতির সময়ে “পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন”?
১২ যখন অব্রাহাম কনানে এসেছিলেন তখন সেখানে তিনি ও তার পরিবার একেবারে একা ছিলেন আর তাদের সাহায্য ও রক্ষা করার জন্য একমাত্র যিহোবাই ছিলেন। সেইরকমই ৩,১৬,০৯২ জন নতুন বাপ্তিস্মিত খ্রীষ্টানেরা একেবারেই একা নন। যিহোবা যেমন অব্রাহামকে সাহায্য করেছিলেন তেমনই তিনি এই ব্যক্তিদেরও তাঁর আত্মার দ্বারা সাহায্য করেন ও সুরক্ষা যোগান। (হিতোপদেশ ১৮:১০) এছাড়াও তিনি তাদের এক প্রাণবন্ত আন্তর্জাতিক “জাতি”-র মাধ্যমে সমর্থন করেন, যে জাতির জনসংখ্যা আজকে পৃথিবীর অনেক জাতির তুলনায় বেশি। (যিশাইয় ৬৬:৮) গতবছর এই জাতির ৫৮,৮৮,৬৫০ জন নাগরিক তাদের প্রতিবেশীদের কাছে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার কথা প্রচার করে তাদের সক্রিয় বিশ্বাসের প্রমাণ দিয়েছিলেন। (মার্ক ১৩:১০) আগ্রহী লোকেদের খোঁজার জন্য তারা এই কাজে ১১৮,৬৬,৬৬,৭০৮ ঘন্টা ব্যয় করেছিলেন যা সত্যিই অসাধারণ। ফলে যারা বিশ্বাস করতে চেয়েছেন তাদের সঙ্গে তারা ৪৩,০২,৮৫২টা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও এই ‘জাতির’ ৬,৯৮,৭৮১ জন উদ্যোগী সদস্য অগ্রগামীর কাজ করেছিলেন পূর্ণ-সময়ের জন্য অথবা এক বা একের বেশি মাসগুলিতে। (যিহোবার সাক্ষীদের গতবছরের কাজের বিস্তারিত বিবরণ ১২ থেকে ১৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া রয়েছে।) নজরকাড়ার মতো এই নথি, “মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন?” যীশুর এই প্রশ্নের এক হ্যাঁ-সূচক, জ্বলন্ত উত্তর।
পরীক্ষা সত্ত্বেও বিশ্বস্ত
১৩, ১৪. কনানে অব্রাহাম ও তার পরিবারকে যে অসুবিধাগুলো ভোগ করতে হয়েছিল তার কয়েকটির বিষয়ে বলুন।
১৩ কনানে অব্রাহাম ও তার পরিবারের জন্য জীবন খুবই কঠিন ছিল। একবার সেখানে খুব দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যার ফলে তাকে কনান থেকে মিশরে আসতে হয়েছিল। এছাড়াও মিশরের শাসক ও (গাজার কাছে অবস্থিত) গরারের শাসক অব্রাহামের স্ত্রী সারাকে নিজেদের জন্য চেয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:১০-২০; ২০:১-১৮) আর অব্রাহামের পশুপালক ও লোটের পশুপালকদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়েছিল। ফলে এই দুটি পরিবারকে আলাদা হয়ে যেতে হয়েছিল। নিজের স্বার্থ না দেখে অব্রাহাম লোটকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন আর লোট যর্দনের সমস্ত অঞ্চল বেছে নিয়েছিলেন যা উর্বরতা ও সৌন্দর্যে এদন উদ্যানের মতো ছিল।—আদিপুস্তক ১৩:৫-১৩.
১৪ তারপর লোট এলোমের রাজা ও তার মিত্রপক্ষ এবং সিদ্দীম তলভূমির আরও অন্য পাঁচটা নগরের রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিদেশী রাজারা স্থানীয় রাজাদের পরাজিত করেছিলেন, সমস্তকিছু লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিলেন ও সেইসঙ্গে অব্রাহামের ভাইপো লোট ও তার সব সম্পত্তি লুঠ করেছিলেন। যখন অব্রাহাম এই ঘটনাটি জানতে পেরেছিলেন তিনি সাহসের সঙ্গে সেই বিদেশী রাজাদের পিছনে ধাওয়া করেছিলেন আর লোট ও তার সম্পত্তি উদ্ধার করতে পেরেছিলেন আর স্থানীয় রাজাদের সম্পত্তিও তিনি ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৪:১-১৬) যাইহোক কনানে শুধু এটাই লোটের খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল না। যদিও সদোম অনৈতিকতায় ভরা ছিল, তবুও কয়েকটি কারণে তিনি সেখানে বাস করাকে বেছে নিয়েছিলেন।b (২ পিতর ২:৬-৮) যখন দুজন দূত তাকে শহরটা ধংস হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছিলেন লোটকে তার স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে পালাতে হয়েছিল। কিন্তু লোটের স্ত্রী দূতেদের সমস্ত নির্দেশনা মানেননি আর তার ফলে তিনি লবনস্তম্ভ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে লোট ও তার দুই মেয়ে সোয়রে গুহার মধ্যে বাস করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৯:১-৩০) এটি হয়ত অব্রাহামকে খুবই বিব্রত করেছিল বিশেষ করে যেহেতু লোট অব্রাহামের পরিবারের অংশ হয়ে কনানে এসেছিলেন।
১৫. এক অপরিচিত দেশে তাঁবুতে বাস করার সময় অব্রাহাম যে সমস্যাগুলি ভোগ করছিলেন সেই সময়ে কোন্ নেতিবাচক চিন্তাগুলো তিনি সত্যিই এড়িয়ে চলেছিলেন?
১৫ অব্রাহাম কি একবারের জন্যও ভেবেছিলেন যে তার ও লোটের ঊরদেশে তাদের পিতার বিরাট পরিবারের সুরক্ষা ছেড়ে বা হারণে তার ভাই নাহোরের পরিবার ছেড়ে আসা উচিত হয়েছে কি না? তিনি কি কখনও এমন মনে করেছিলেন যে যদি তিনি এই তাঁবু ছেড়ে প্রাচীর ঘেরা কোন নিরাপদ নগরে বাস করতে পারতেন? এক অপরিচিত দেশে ঘুরে বেড়িয়ে তিনি যে ত্যাগ করেছিলেন তার জন্য কি কখনও তার মনে হয়েছিল যে এই সমস্ত কিছু করা মুর্খতা ছিল? অব্রাহাম ও তার পরিবার সম্বন্ধে বলতে গিয়ে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “যে দেশ হইতে বাহির হইয়া ছিলেন, সেই দেশ যদি মনে রাখিতেন, তবে ফিরিয়া যাইবার সুযোগ অবশ্য পাইতেন।” (ইব্রীয় ১১:১৫) তবুও তারা ফিরে যাননি। কষ্ট হলেও তারা সেখানেই ছিলেন যেখানে তারা থাকুক বলে যিহোবা চেয়েছিলেন।
আজকে ধৈর্য ধরা জরুরি
১৬, ১৭. (ক) আজকে অনেক খ্রীষ্টানেরা কোন্ অসুবিধাগুলি ভোগ করেন? (খ) খ্রীষ্টানেরা কোন্ ইতিবাচক মনোভাব রাখেন? কেন?
১৬ আজকেও খ্রীষ্টানেরা একইরকম ধৈর্য দেখিয়ে থাকেন। যদিও ঈশ্বরের উপাসনা করা সত্য খ্রীষ্টানদের কাছে খুবই সুখের বিষয় কিন্তু এই শেষের দিনগুলোতে জীবন তাদের জন্য সহজ নয়। আধ্যাত্মিক পরমদেশে বাস করলেও তাদের প্রতিবেশীদের মতো তারাও অর্থনৈতিক কষ্ট ভোগ করেন। (যিশাইয় ১১:৬-৯) অনেকেই বিনা কারণে যুদ্ধে মারা গিয়েছেন আর কিছুজন হয়ত বিনা দোষে অত্যন্ত অভাব ভোগ করেছেন। তার উপর তারা একটি অপ্রিয় সংখ্যালঘু দল হওয়ায় অনেক সমস্যা ভোগ করে থাকেন। অনেক দেশে লোকেরা সুসমাচার একেবারে শুনতে চায় না তবুও তাদের প্রচার করে যেতে হয়। অন্যান্য দেশে তারা, যারা ‘বিধান দ্বারা উপদ্রব রচনা করে’ এবং ‘ধার্ম্মিকের প্রাণের বিরুদ্ধে দল বাঁধে, নির্দ্দোষের রক্তকে দোষী করে’ তাদের আক্রমণের সামনে পড়েছেন। (গীতসংহিতা ৯৪:২০, ২১) এমনকি যে দেশগুলিতে খ্রীষ্টানদের উপর সরাসরি অত্যাচার করা হয় না আর তাদের জীবনধারণের উচ্চ মানের জন্য তাদের প্রশংসা করা হয়, সেখানেও তাদেরকে তাদের সহপাঠী ও সহকর্মীদের থেকে আলাদা থাকার জন্য সতর্ক থাকতে হয়—ঠিক যেন অব্রাহামের মতো যিনি তাঁবুতে বাস করতেন যে সময়ে তার আশেপাশের বেশিরভাগ লোকেরা শহরে বাস করতেন। সত্যিই এই জগতে বাস করে ‘জগতের না হওয়া’ খুবই কঠিন ব্যাপার।—যোহন ১৭:১৪.
১৭ তাহলে আমরা কি এখন নিজেদের যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছি বলে দুঃখ করব? আমরা কি মনে মনে ভাবব যে যদি আমরা অন্যদের মতো জগতের হয়ে থাকতাম তাহলেই ভাল হতো? যিহোবাকে সেবা করার জন্য আমাদের যে আত্মত্যাগ করতে হয়েছে আমরা কি তার জন্য অনুশোচনা করি? কখনও না! অতৃপ্ত মনে পিছনের দিকে না তাকিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে ইতিমধ্যেই আমরা যে আশীর্বাদ উপভোগ করছি এবং ভবিষ্যতে যা লাভ করব, আমাদের আত্মত্যাগ তার তুলনায় কিছুই নয়। (লূক ৯:৬২; ফিলিপীয় ৩:৮) এছাড়াও আমরা ভাবতে পারি যে জগতের লোকেরা কি সুখী? সত্যি বিষয়টা হচ্ছে অনেকেই সেই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে বেড়ান যা আমরা ইতিমধ্যেই জানি। তারা কষ্টভোগ করেন কারণ তারা ঈশ্বরের নির্দেশনা মেনে চলেন না যা আমরা বাইবেলের পাতায় পেয়ে থাকি ও মেনে চলি। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) আর তাদের অনেকেই সেইরকম বন্ধুত্ব ও সাহচর্য পেতে চান যেমন আমরা আমাদের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে আমাদের ভাইদের কাছ থেকে পাই।—গীতসংহিতা ১৩৩:১; কলসীয় ৩:১৪.
১৮. খ্রীষ্টানেরা যখন অব্রাহামের মতো বিশ্বাস দেখান তখন তার শেষ ফল কী হয়?
১৮ লোটকে যারা বন্দি করেছিলেন অব্রাহাম তাদের পিছনে ধাওয়া করেছিলেন। সেই সময় অব্রাহাম যে সাহস দেখিয়েছিলেন আমাদেরও কখনও কখনও এইরকমই সাহসী হওয়ার প্রয়োজন আছে তাই আমরা যখন চেষ্টা করি যিহোবা আশীর্বাদযুক্ত ফল দেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, উত্তর আয়ারল্যান্ডে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে যখন ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছিল সেইসময় নিরপেক্ষ থাকার জন্য সাহসের দরকার ছিল। তবুও বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা সেই কথাগুলি মেনে চলেছিলেন যা যিহোবা যিহোশূয়কে বলেছিলেন: “তুমি বলবান হও ও সাহস কর, মহাভয়ে ভীত কি নিরাশ হইও না; কেননা তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।” (যিহোশূয় ১:৯; গীতসংহিতা ২৭:১৪) বছরের পর বছর ধরে নিরপেক্ষ থাকা তাদের জন্য সম্মান নিয়ে এসেছিল আর আজ তারা সেই দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের কাছে খুব সহজেই প্রচার করতে পারেন।
১৯. খ্রীষ্টানেরা কী করে চলতে খুশি আর যখন তারা যিহোবার নির্দেশনা মেনে চলেন তখন কোন্ ফলের আশা তারা রাখেন?
১৯ আমরা একেবারে নিশ্চিন্ত হতে পারি যে যদি আমরা যিহোবার নির্দেশনা মেনে চলি, আমাদের যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলাই করতে হোক না কেন, শেষ ফল তাঁর জন্য গৌরব নিয়ে আসবে আর আমাদের জন্য তা চিরস্থায়ী মঙ্গল নিয়ে আসবে। কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা ও আত্মত্যাগ করতে হলেও যিহোবার সেবায় লেগে থাকা, আমাদের খ্রীষ্টীয় ভাইদের সঙ্গ উপভোগ করা ও ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত অনন্ত ভবিষ্যতের দিকে আশার সঙ্গে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের জন্য ভাল আর কিছু হতে পারে না।
[পাদটীকাগুলো]
a অব্রাহামের ভাই, লোটের বাবা মারা গেলে অব্রাহাম সম্ভবত তার ভাইপো লোটকে দত্তক নিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ১১:২৭, ২৮; ১২:৫.
b কিছুজন বলেন যে লোট সেই চারজন রাজার বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আরও বেশি নিরাপত্তার জন্য একটি শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আপনার কি মনে আছে?
◻ কেন শক্তিশালী বিশ্বাস খুবই জরুরি?
◻ অব্রাহাম কিভাবে দেখিয়েছিলেন যে তার শক্তিশালী বিশ্বাস ছিল?
◻ উৎসর্গীকরণ কিভাবে একজনের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসে?
◻ আমরা যে কোন সমস্যাতেই পড়ি না কেন, আমরা কেন ঈশ্বরের সেবা করতে খুশি?
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রতিজ্ঞার অধিকারী হওয়ার জন্য অব্রাহাম তার জীবনে বিরাট পরিবর্তনগুলো করতে প্রস্তুত ছিলেন
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রমাণ দেখায় যে যীশু তাঁর উপস্থিতির সময়ে “পৃথিবীতে বিশ্বাস” পেয়েছেন