মহান কুম্ভকার ও তাঁর কাজ
“সমাদরের পাত্র [হও], . . . সমস্ত সৎক্রিয়ার নিমিত্ত প্রস্তুত [হও]।”—২ তীমথিয় ২:২১.
১, ২. (ক) ঈশ্বরের সৃষ্ট পুরুষ ও নারী কিভাবে এক উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল? (খ) আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার পেছনে মহান কুম্ভকারের উদ্দেশ্য কী ছিল?
যিহোবা হলেন মহান কুম্ভকার। আমাদের প্রথম পিতা আদম ছিল তাঁর সৃষ্টির সেরা শিল্পকাজ। বাইবেল আমাদের জানায়: “সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল,” অর্থাৎ “শ্বাস গ্রহণকারী প্রাণী” হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:৭, পাদটীকা, NW) প্রথম মানুষ সিদ্ধ ছিল, ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে তাকে তৈরি করা হয়েছিল। আর এই প্রথম মানুষ ছিল ঐশিক প্রজ্ঞা এবং প্রকৃত ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর ভালবাসার এক প্রমাণ।
২ আদমের পাঁজর থেকে হাড় নিয়ে ঈশ্বর পুরুষের পরিপূরক ও সহকারিণী হিসাবে নারীকেও সৃষ্টি করেছিলেন। হবার নিখুঁত সৌন্দর্যের কাছে আজকালকার সেরা সুন্দরীরা কিছুই না। (আদিপুস্তক ২:২১-২৩) এছাড়াও, প্রথম মানব দম্পতিকে নিখুঁত দেহ ও কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা এই পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার জন্য তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। আদিপুস্তক ১:২৮ পদে বর্ণিত ঈশ্বরের এই আজ্ঞা পালন করার ক্ষমতাও তাদের দেওয়া হয়েছিল: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।” একসময় পৃথিবী জুড়ে এই বাগান কোটি কোটি সুখী মানুষদের দিয়ে ভরে যাওয়ার কথা ছিল। আর তারা সকলে ভালবাসার এক অটুট বাঁধনে অর্থাৎ ‘সিদ্ধির যোগবন্ধনে’ এক হতো।—কলসীয় ৩:১৪.
৩. আমাদের প্রথম পিতামাতা কিভাবে অনাদরের পাত্র হয়ে উঠেছিল আর তার ফল কী হয়েছিল?
৩ কিন্তু দুঃখের কথা যে আমাদের প্রথম পিতামাতা স্বেচ্ছায় তাদের সার্বভৌম সৃষ্টিকর্তা, মহান কুম্ভকারের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। যিশাইয় ২৯:১৫, ১৬ পদে যেমন বলা হয়েছে তারা সেইরকম কাজ করেছিল: “ধিক্ তাহাদিগকে, যাহারা গভীর মন্ত্রণা করতঃ সদাপ্রভু হইতে গুপ্ত রাখিতে চেষ্টা করে, অন্ধকারে কর্ম্ম করে ও বলে, আমাদিগকে কে দেখিতে পায়? আমাদিগকে কে চিনিতে পারে? . . . কুম্ভকার কি মৃত্তিকার সমান বলিয়া গণ্য? নির্ম্মিত বস্তু কি নির্ম্মাতার বিষয়ে বলিবে, ঐ ব্যক্তি আমাকে নির্ম্মাণ করে নাই? গঠিত বস্তু কি আপন গঠনকারীর বিষয়ে বলিবে, উহার বুদ্ধি নাই?” তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতা দুর্দশা—অনন্ত মৃত্যু নিয়ে এসেছিল। এছাড়াও, তাদের থেকে আসা সমস্ত মানবজাতি তাদের কাছ থেকেই পাপ ও মৃত্যু পেয়েছে। (রোমীয় ৫:১২, ১৮) মহান কুম্ভকারের সৃষ্টির সৌন্দর্য একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।
৪. কোন্ সমাদরজনক কাজ আমরা করতে পারি?
৪ কিন্তু, পাপী আদমের অসিদ্ধ বংশধর হয়েও আমরা আজ গীতসংহিতা ১৩৯:১৪ পদের বাক্যগুলোর মতো মনোভাব নিয়ে যিহোবার প্রশংসা করতে পারি: “আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত; তোমার কর্ম্ম সকল আশ্চর্য্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।” কিন্তু, এটা কতই না দুঃখের যে মহান কুম্ভকারের হাতের প্রথম কাজ খুবই ত্রুটিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল!
কুম্ভকার তাঁর কাজের সীমা বাড়ান
৫. কিভাবে মহান কুম্ভকার তাঁর কাজের সীমা বাড়িয়েছিলেন?
৫ আনন্দের বিষয় এই যে মহান কুম্ভকার, আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাজ কেবল প্রথম পুরুষ ও স্ত্রীকে বানিয়েই শেষ হয়ে যায়নি কিন্তু তারপরেও তা চলেছিল। প্রেরিত পৌল আমাদের বলেন: “হে মনুষ্য, বরং, তুমি কে যে ঈশ্বরের প্রতিবাদ করিতেছ? নির্ম্মিত বস্তু কি নির্ম্মাতাকে বলিতে পারে, আমাকে এরূপ কেন গড়িলে? কিম্বা কাদার উপরে কুম্ভকারের কি এমন অধিকার নাই যে, একই মৃৎপিণ্ড হইতে একটী সমাদরের পাত্র, আর একটা অনাদরের পাত্র গড়িতে পারে?”—রোমীয় ৯:২০, ২১.
৬, ৭. (ক) আজকে অনেকে কিভাবে অনাদরে গড়ে ওঠার পথ বেছে নেন? (খ) ধার্মিকেরা কিভাবে সমাদরের পাত্র হিসাবে গড়ে ওঠেন?
৬ হ্যাঁ, মহান কুম্ভকারের কিছু পাত্রকে সমাদরে ব্যবহারের জন্য আর কিছু পাত্রকে অনাদরে ব্যবহারের জন্য গঠন করা হয়। অধার্মিকতার গভীর জলাভূমিতে ঝাঁপ দেওয়ার মতো যারা জগতের সঙ্গে মিশে যাওয়াকে বেছে নেন, তারা এমনভাবে গড়ে ওঠেন যা তাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। মহিমান্বিত রাজা, যীশু খ্রীষ্ট যখন বিচার করার জন্য আসবেন তখন এই অনাদরের পাত্রেরা, সমস্ত একগুঁয়ে ছাগতুল্য মানুষের মধ্যে থাকবে যারা “অনন্ত দণ্ডে” যাবেন, যেভাবে মথি ২৫:৪৬ পদে বলা হয়েছে। কিন্তু, মেষতুল্য “ধার্ম্মিকেরা” যারা ‘সমাদরে’ ব্যবহৃত হওয়ার জন্য গড়ে উঠেছেন তারা ‘অনন্ত জীবন’ পাবেন।
৭ এই ধার্মিক ব্যক্তিরা নম্রভাবে ঈশ্বর তাদের যেভাবে গড়ে তোলেন তাকে মেনে নেন। তারা জীবনের জন্য ঈশ্বরের পথে এসেছেন। তারা ১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯ পদের পরামর্শ মেনে নিয়েছেন যা বলে তারা: “ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে।” তারা “পরের উপকার করে, সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান্ হয়, দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয়; এইরূপে তাহারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করুক, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।” ঈশ্বরের সত্য তাদেরকে গড়ে তোলে এবং খ্রীষ্ট যীশুর মাধ্যমে যিহোবা যে ব্যবস্থা করেছেন তাতে তারা অটল বিশ্বাস দেখান। আদমের পাপের ফলে যা কিছু হারিয়ে গিয়েছিল তা আবার ফিরিয়ে আনার জন্য যীশু “মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন।” (১ তীমথিয় ২:৬) সুতরাং স্বেচ্ছায় পৌলের এই উপদেশ মেনে চলা আমাদের জন্য কতই না দরকার: “সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান [করি], যে আপন সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত [গঠিত] হইতেছে”!—কলসীয় ৩:১০.
আপনি কেমন পাত্র হবেন?
৮. (ক) একজন ব্যক্তি কেমন পাত্র হবেন, তা কিভাবে বোঝা যায়? (খ) কোন্ দুটো বিষয় একজনের গঠনকে গড়ে তোলে?
৮ একজন ব্যক্তি কেমন পাত্র হবেন, তা কিভাবে বোঝা যায়? তার মনোভাব এবং আচরণ থেকে। একজন ব্যক্তির মনের আকাঙ্ক্ষা ও হৃদয়ের গুপ্তভাব তার মনোভাব ও আচরণ গড়ে তোলে। জ্ঞানী রাজা শলোমন বলেছিলেন: “মনুষ্যের মন আপন পথের বিষয় সঙ্কল্প করে; কিন্তু সদাপ্রভু তাহার পাদবিক্ষেপ স্থির করেন।” (হিতোপদেশ ১৬:৯) তারপর, আমরা যা কিছু শুনি ও দেখি আর আমাদের মেলামেশা ও অভিজ্ঞতাগুলোও এগুলোকে গড়ে তোলে। অতএব, এই পরামর্শে মন দেওয়া কতই না জরুরি: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) ২ পিতর ১:১৬ পদ যেমন আমাদের সতর্ক করে যে আমাদের অবশ্যই ‘কৌশল-কল্পিত গল্প’ থেকে দূরে থাকতে হবে অথবা নক্সের রোমান ক্যাথলিক সংস্করণ অনুসারে “মানুষদের রচিত গল্প” থেকে দূরে থাকতে হবে। তার মধ্যে খ্রীষ্টীয় জগতের বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা ও উৎসব রয়েছে।
৯. মহান কুম্ভকার যাতে আমাদের গড়ে তুলতে পারেন তারজন্য আমাদের কিভাবে সাড়া দেওয়া দরকার?
৯ অতএব, আমরা যেভাবে সাড়া দেব সেই অনুসারে ঈশ্বর আমাদের গড়ে তুলবেন। আমরা যিহোবার কাছে নম্রভাবে দায়ূদের মতো প্রার্থনা করতে পারি: “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।” (গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪) যিহোবা তাঁর রাজ্যের বার্তা প্রচার করিয়ে চলেছেন। সুসমাচার ও তাঁর অন্যান্য নির্দেশনায় আমরা আমাদের হৃদয় থেকে সাড়া দিয়েছি। তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদেরকে সুসমাচার প্রচারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন; আসুন আমরা সেগুলো করে চলতে থাকি ও তাতে আনন্দ করি।—ফিলিপীয় ১:৯-১১.
১০. আধ্যাত্মিক কার্যক্রমগুলো মেনে চলার জন্য আমাদের কিভাবে চেষ্ট করা উচিত?
১০ ঈশ্বরের বাক্যে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া, প্রতিদিন বাইবেল পড়া আর আমাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে শাস্ত্র এবং যিহোবার পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যিহোবার সাক্ষীদের প্রত্যেক বেথেল পরিবার ও মিশনারি হোমগুলোতে জলখাবারের আগে সকালের উপাসনায় এক সপ্তায় বাইবেলের কিছুটা অংশ আর এক সপ্তায় বর্ষপুস্তক (ইংরাজি) এর কিছুটা অংশ পালা পালা করে পড়া হয়। আপনার পরিবারেও কি আপনি এই একই ব্যবস্থা করতে পারেন? খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে, সভাগুলোতে এসে এবং বিশেষভাবে সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে উত্তর দিয়ে কত উপকারই না আমরা পেতে পারি!
পরীক্ষার মোকাবিলা করার জন্য গড়ে ওঠা
১১, ১২. (ক) আমাদের রোজকার জীবনে পরীক্ষা আসলে আমরা কিভাবে যাকোবের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি? (খ) ইয়োবের অভিজ্ঞতা কিভাবে আমাদের আনুগত্য বজায় রাখতে উৎসাহ দেয়?
১১ আমাদের রোজকার জীবনে ঈশ্বর এমন কিছু পরিস্থিতি ঘটার অনুমতি দেন যেগুলোর কয়েকটা আমাদের কাছে খুব কঠিন বলে মনে হতে পারে। আমাদের এগুলোকে কিভাবে নেওয়া উচিত? যাকোব ৪:৮ পদ পরামর্শ দেয় আমরা যেন কখনও বিরক্ত না হই বরং আমরা যেন ঈশ্বরের নিকটবর্তী হই, মনেপ্রাণে তাঁর উপর আস্থা রাখি এবং আত্মবিশ্বাসী হই যে আমরা যখন ‘তাঁহার নিকটবর্ত্তী হইব, তখন তিনিও আমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।’ এটা সত্যি যে আমাদের কষ্ট ও পরীক্ষা সহ্য করতে হবে কারণ আমাদের গড়ে তুলবার জন্য সেগুলোকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার ফল হবে আনন্দজনক। যাকোব ১:২, ৩ পদ আমাদের আশ্বাস দেয়: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে।”
১২ যাকোব আরও বলেন: “পরীক্ষার সময়ে কেহ না বলুক, ঈশ্বর হইতে আমার পরীক্ষা হইতেছে; কেননা মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়।” (যাকোব ১:১৩, ১৪) আমাদের হয়ত অনেক পরীক্ষা আসতে পারে ও তা বিভিন্ন রকমের হতে পারে কিন্তু ইয়োবের বেলায় যেমন ঘটেছিল তেমনই সেগুলো আমাদের গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখে। অতএব, যাকোব ৫:১১ পদে শাস্ত্র কী অপূর্ব আশ্বাসই না আমাদের দেয়: “দেখ, যাহারা স্থির রহিয়াছে, তাহাদিগকে আমরা ধন্য বলি। তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; প্রভুর পরিণামও দেখিয়াছ, ফলতঃ প্রভু স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” মহান কুম্ভকারের হাতে গড়ে ওঠা পাত্র হিসাবে আমরা যেন সবসময় আনুগত্য বজায় রাখি, পুরস্কারের প্রতি ইয়োবের মতো আস্থা রাখি!—ইয়োব ২:৩, ৯, ১০; ২৭:৫; ৩১:১-৬; ৪২:১২-১৫.
আমাদের ছোটদের গড়ে তোলা
১৩, ১৪. (ক) বাবামাদের কখন থেকে তাদের সন্তানদের গড়ে তুলতে শুরু করা উচিত এবং এর ফল কী হতে পারে? (খ) আপনি এইরকম কোন অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারেন?
১৩ বাবামারা তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের একেবারে শিশুকাল থেকেই গড়ে তুলতে পারেন আর এর ফলে আমাদের ছোটরা কত চমৎকার আনুগত্য-রক্ষাকারী হিসাবেই না গড়ে ওঠে! (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) এমনকি চরম পরীক্ষার সময়েও তা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। কয়েক বছর আগে, আফ্রিকার একটা দেশে যখন ভীষণ তাড়না চলছিল তখন এক বিশ্বস্ত পরিবার গোপনে তাদের বাড়ির পেছনে একটা চালাঘরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ছাপাতো। একদিন সৈন্যরা যুবকদেরকে জোর করে সেনাবাহিনীতে ঢোকানোর জন্য ঘরে ঘরে তল্লাশি করে। এই পরিবারের অল্প বয়সী দুজন ছেলের তখনও পালানোর সুযোগ ছিল কিন্তু তারা যদি পালিয়ে যায় তবে তাদেরকে না পেয়ে সৈন্যরা বাড়ি তল্লাশি করবে আর ছাপাখানাটা দেখে ফেলবে। আর তারজন্য তারা হয়তো পুরো পরিবারের ওপরই অত্যাচার করবে বা তাদের মেরে ফেলবে। এখন কী করা যায়? এই দুই ছেলে সাহসের সঙ্গে যোহন ১৫:১৩ পদের কথাগুলো বলেছিল: “কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই।” না পালিয়ে তারা তাদের বসার ঘরেই ছিল। সৈনিকেরা সহজেই তাদের খুঁজে পেয়ে যাবে, তাদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করবে আর তারা সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিতে না চাইলে হয়তো বা তাদের মেরেও ফেলবে। কিন্তু তারা তল্লাশি করবে না। ফলে ছাপাখানা ও পরিবারের অন্যেরা রক্ষা পাবেন। কিন্তু, অবাক হওয়ার মতো কিছু ঘটেছিল। সৈনিকেরা এই ঘরটাকে বাদ দিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়! এই মনুষ্য পাত্রেরা সমাদরে ব্যবহারের জন্য গড়ে ওঠায় বেঁচে যায় আর সেইসঙ্গে তাদের ছাপাখানাটাও রক্ষা পায়, যাতে করে সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাদ্য ছাপানো চলতে থাকে। ওই দুজন ছেলের মধ্যে একজন ও তার দিদি এখন বেথেলে সেবা করছেন; তাদের পুরনো মেশিনটা এখনও কাজ করে চলেছে।
১৪ কী করে প্রার্থনা করতে হয় তা ছোটদেরও শেখানো যেতে পারে আর ঈশ্বর তাদের প্রার্থনার উত্তর দেন। রুয়ান্ডায় গণহত্যার সময়ে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল। ছয় বছরের এক মেয়ে ও তার বাবামাকে বিদ্রোহীরা হাত বোমা দিয়ে মারার জন্য তৈরি হলে, সেই ছোট্ট মেয়ে জোরে জোরে ও অন্তর থেকে প্রার্থনা করেছিল যেন যিহোবাকে সেবা করার জন্য তারা বেঁচে থাকতে পারে। এই কথা শুনে, যারা তাদেরকে মারতে যাচ্ছিল তারা না মেরে বলে, “একমাত্র এই ছোট্ট মেয়েটার জন্যই আমরা তোমাদের মারতে পারলাম না।”—১ পিতর ৩:১২.
১৫. কোন্ খারাপ বিষয়গুলো সম্বন্ধে পৌল সতর্ক করে দিয়েছিলেন?
১৫ আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ছোট ছেলেমেয়েদেরই হয়তো সেই ছোট্ট মেয়ে যার কথা ওপরে বলা হয়েছে তার মতো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় না কিন্তু স্কুল ও আজকের এই খারাপ সমাজে তারা অনেক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে: অনেক দেশে গালাগালি দেওয়া, অশ্লীল পত্রপত্রিকা পড়া, নোংরা আমোদপ্রমোদ এবং খারাপ কাজ করার জন্য বন্ধুবান্ধবদের চাপ কেবল বেড়েই চলেছে। এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বার বার সতর্ক করে দিয়েছিলেন।—১ করিন্থীয় ৫:৬; ১৫:৩৩, ৩৪; ইফিষীয় ৫:৩-৭.
১৬. কিভাবে একজন সমাদরে ব্যবহারের পাত্র হয়ে উঠতে পারেন?
১৬ “কতকগুলি সমাদরের, কতকগুলি অনাদরের পাত্র” সম্বন্ধে বলার পর পৌল বলেন: “অতএব যদি কেহ আপনাকে এই সকল হইতে শুচি করে, তবে সে সমাদরের পাত্র, পবিত্রীকৃত, কর্ত্তার কার্য্যের উপযোগী, সমস্ত সৎক্রিয়ার নিমিত্ত প্রস্তুত হইবে।” তাই আসুন আমরা আমাদের ছোট ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিই যাতে তারা তাদের বন্ধুবান্ধব বাছাইয়ের ব্যাপারে সতর্ক হয়। তারা যেন ‘যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন করে; এবং যাহারা শুচি হৃদয়ে প্রভুকে ডাকে, তাহাদের সহিত ধার্ম্মিকতা, বিশ্বাস, প্রেম ও শান্তির অনুধাবন করে।’ (২ তীমথিয় ২:২০-২২) “এক জন অন্যকে গাঁথিয়া” তোলার জন্য পরিবারের ব্যবস্থা ছোট ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উপকারি হতে পারে। (১ থিষলনীকীয় ৫:১১; হিতোপদেশ ২২:৬) সোসাইটির প্রকাশনা ব্যবহার করে রোজ বাইবেল পড়া ও অধ্যয়ন করা আমাদের অনেক সাহায্য করতে পারে।
সকলকে গড়ে তোলা
১৭. কিভাবে শাসন আমাদের গড়ে তুলবে এবং এর কোন্ আনন্দজনক ফলাফল হয়?
১৭ আমাদেরকে গড়ে তোলার জন্য যিহোবা তাঁর বাক্য ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে পরামর্শ দেন। ঈশ্বরের এই পরামর্শকে কখনও অবহেলা করবেন না! এতে বুদ্ধিমানের মতো সাড়া দিন এবং যিহোবাকে সুযোগ দিন যাতে তিনি আপনাকে সমাদরের পাত্র করে ব্যবহার করতে পারেন। হিতোপদেশ ৩:১১, ১২ পদ উপদেশ দেয়: “বৎস, সদাপ্রভুর শাসন তুচ্ছ করিও না, তাঁহার অনুযোগে ক্লান্ত হইও না; কেননা সদাপ্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাস্তি প্রদান করেন, যেমন পিতা প্রিয় পুত্ত্রের প্রতি করেন।” এছাড়াও ইব্রীয় ১২:৬-১১ পদেও পিতৃসুলভ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “প্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন, . . . কোন শাসনই আপাততঃ আনন্দের বিষয় বোধ হয় না, কিন্তু দুঃখের বিষয় বোধ হয়; তথাপি তদ্দ্বারা যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে, তাহা পরে তাহাদিগকে ধার্ম্মিকতার শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে।” এই শাসনের প্রধান মাধ্যম অবশ্যই ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য।—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.
১৮. অনুতাপের বিষয়ে লূক ১৫ অধ্যায় থেকে আমরা কী শিখি?
১৮ এছাড়াও যিহোবা করুণাময়। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬) গুরুতর পাপ করার পরেও অন্তর থেকে অনুতাপ করলে তিনি ক্ষমা করেন। এমনকি আধুনিক দিনের ‘অপব্যয়ীরা’ সমাদরে ব্যবহারের পাত্র হিসাবে গড়ে উঠতে পারেন। (লূক ১৫:২২-২৪, ৩২) আমাদের পাপ হয়তো অপব্যয়ী পুত্রের মতো এত গুরুতর নয়। কিন্তু শাস্ত্রের পরামর্শে নম্রভাবে সাড়া দিলে তা আমাদেরকে সবসময় সমাদরে ব্যবহারের পাত্র হিসাবে গড়ে তুলবে।
১৯. আমরা সবসময় কিভাবে যিহোবার হাতে সমাদরের পাত্র হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারি?
১৯ আমরা যখন প্রথম সত্য জেনেছিলাম তখন আমরা নিজেদেরকে গড়ে তোলার জন্য স্বেচ্ছায় যিহোবাকে সুযোগ দিয়েছিলাম। আমরা জাগতিক জীবনধারা ত্যাগ করে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে শুরু করি আর উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত খ্রীষ্টান হই। আমরা ইফিষীয় ৪:২০-২৪ পদের পরামর্শের বাধ্য হয়েছি অর্থাৎ ‘পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ করিয়া, যাহা প্রতারণার বিবিধ অভিলাষ মতে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িতেছে; আর সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিয়াছি যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।’ ব্যক্তিগতভাবে আমরা সবসময় যেন মহান কুম্ভকার, যিহোবার হাতে সমাদরে ব্যবহারের পাত্র হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য নমনীয় হই!
পুনরালোচনা
◻ পৃথিবী সম্বন্ধে মহান কুম্ভকারের উদ্দেশ্য কী?
◻ আপনি কিভাবে সমাদরে ব্যবহারের জন্য গড়ে উঠতে পারেন?
◻ আমাদের ছেলেমেয়েরা কিভাবে গড়ে উঠতে পারে?
◻ শাসনকে আমাদের কিভাবে নেওয়া উচিত?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি সমাদরে ব্যবহারের জন্য গড়ে উঠবেন নাকি আপনাকে বাদ দেওয়া হবে?
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
ছোটদের শিশুকাল থেকেই গড়ে তোলা যায়