যিহোবাকে গ্রহণযোগ্য যজ্ঞ উৎসর্গ করা
এক সময় এদন উদ্যানের পূর্বদিকের ঢোকার পথে এক উল্লেখযোগ্য দৃশ্য দেখা যেত।a সেখানে শক্তিমান করূবেরা পাহারা দিতেন আর তাদের চেহারার গম্ভীর ভাবমূর্তি দেখে সহজেই বোঝা যেত যে সেখানে ঢোকার মতো সাহস কারও নেই। একইভাবে ঘূর্ণায়মান তেজোময় খড়্গও ভয়ের আরেকটা কারণ ছিল, যেটা সম্ভবত রাতের বেলা এর চারদিকের গাছগুলোতে এক গা ছমছম করা আভা ছড়িয়ে দিত। (আদিপুস্তক ৩:২৪) আর এইসব দেখে মনে যত প্রশ্নই আসুক না কেন, কেউই এর কাছে যেতে সাহস করত না।
কয়িন এবং হেবল হয়তো অনেকবার এর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছিল। আদম ও হবা বাগান থেকে বাইরে আসার পর তাদের জন্ম হয়েছিল। তাই তারা হয়তো কেবল এটুকুই কল্পনা করতে পেরেছিল যে উর্বর, সবুজ এবং প্রচুর ফল ও শাকসবজিতে ভরা এই সুন্দর বাগানে বাস করতে কেমন লাগত, যেখানে একসময় তাদের বাবামা বাস করত। এতে কোন সন্দেহই নেই যে তখন এদন বাগানের যে অংশটুকু দেখা যেত তা অযত্ন অবহেলায় পড়ে ছিল এবং আগাছায় ভরে গিয়েছিল।
আদম ও হবা নিশ্চয়ই তাদের ছেলেদের বলেছিল কেন ওই বাগানের কোন যত্ন নেওয়া হয় না এবং কেন তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। (আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:৬, ২৩) এটা শুনে কয়িন ও হেবল কত হতাশই না হয়েছিল হয়তো! তারা শুধু দূর থেকে বাগানটা দেখতে পারত কিন্তু ভিতরে ঢুকতে পারত না। পরমদেশের এত কাছে থাকা সত্ত্বেও তা তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে ছিল। অসিদ্ধতা সবকিছু খারাপ করে দিয়েছিল আর কয়িন ও হেবলের এতে কিছুই করার ছিল না।
তাদের বাবামার সম্পর্ক হয়তো ব্যাপারটাকে আরও খারাপ করে দিয়েছিল। হবাকে শাস্তি দেওয়ার সময় ঈশ্বর বলেছিলেন: “স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৬) সেই ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, আদম তার স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব করেছিল, সম্ভবত সে তার সঙ্গে আর সঙ্গিনী এবং সহকারিণীর মতো ব্যবহার করেনি। এছাড়াও মনে হয় যে হবা তার স্বামীর উপর অত্যধিক নির্ভরশীল ছিল। একজন মন্তব্যকারী তো “বাসনা”-কে এইভাবে বলেন যে তার “আকাঙ্ক্ষা এমন ছিল যা প্রায় এক সংক্রামক রোগের মতো।”
বাবামার মধ্যে এইরকম সম্পর্ক দেখে ছেলেরা তাদেরকে কতটা শ্রদ্ধা করতে পেরেছিল তা বাইবেল জানায় না। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে আদম ও হবা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য মোটেই ভাল উদাহরণ স্থাপন করেনি।
আলাদা আলাদা পথ বেছে নেওয়া
বড় হয়ে হেবল মেষপালক হন আর কয়িন হয় কৃষক। (আদিপুস্তক ৪:২) এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে হেবল তার পশুপাল চরাণোর সময় সেই বিশেষ ভবিষ্যদ্বাণীটা নিয়ে চিন্তা করার অনেক সময় পেয়েছিলেন, যা তার বাবামাকে এদন বাগান থেকে বের করে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) হেবল নিশ্চয়ই ভাবতেন, ‘যে বংশ সর্পকে চূর্ণ করবে সেই বংশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা কী করে পূর্ণ হবে এবং সেই বংশের পাদমূলেই বা কিভাবে আঘাত করা হবে?’
এরপর, কয়িন ও হেবল যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তারা দুজনে যিহোবার কাছে আলাদা আলাদা যজ্ঞ উৎসর্গ করে। হেবল মেষপালক ছিলেন তাই এটা আশ্চর্যের নয় যে তিনি “আপন পালের প্রথমজাত কএকটী পশু ও তাহাদের মেদ উৎসর্গ” করেছিলেন। অন্যদিকে, কয়িন “ভূমির ফল উৎসর্গ করিল।” যিহোবা হেবলের উপহার গ্রাহ্য করেছিলেন কিন্তু “কয়িনকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন না।” (আদিপুস্তক ৪:৩-৫) কিন্তু কেন?
কেউ কেউ বলেন যে হেবলের বলি ছিল “পালের প্রথমজাত কএকটি পশু” আর কয়িন ‘ভূমির কিছু ফল’ দিয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা এই নয় যে কয়িনের উৎসর্গের গুণগত মানে কোন খুঁত ছিল কারণ বাইবেল বলে যে যিহোবা “হেবলকে ও তাহার উপহার” গ্রাহ্য করেছিলেন কিন্তু “কয়িনকে ও তাহার উপহার” গ্রাহ্য করেননি। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) সুতরাং এটা দেখায় যে যিহোবা উপাসকদের হৃদয় দেখেছিলেন। তা দেখে তিনি কী বুঝতে পেরেছিলেন? ইব্রীয় ১১:৪ পদ বলে যে “বিশ্বাসে” হেবল তার যজ্ঞ উৎসর্গ করেছিলেন। অতএব, কয়িনের সেই বিশ্বাসের অভাব ছিল যে বিশ্বাসের কারণে হেবলের যজ্ঞ গ্রাহ্য হয়েছিল।
এখানে দেখার বিষয়টা হল যে হেবলের উৎসর্গে রক্ত জড়িত ছিল। তিনি হয়তো যুক্তিসংগতভাবেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে ঈশ্বর যে বংশ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাতে জীবন উৎসর্গ করার দরকার হতে পারে কারণ প্রতিজ্ঞায় বলা হয়েছিল যে বংশের পায়ে আঘাত করা হবে। তাই হেবলের উৎসর্গ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার প্রয়োজনকে বুঝিয়েছিল আর তার যজ্ঞ থেকে ঈশ্বরের উপর তার এই বিশ্বাস দেখা গিয়েছিল যে পাপের জন্য ঈশ্বর তাঁর নিরূপিত সময়ে এক পাপার্থক যজ্ঞের ব্যবস্থা করবেন।
অন্যদিকে, কয়িন উৎসর্গের বিষয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। উনবিংশ শতাব্দীর একজন বাইবেল মন্তব্যকারী বলেছিলেন, “ঈশ্বরই যে সবকিছু যোগান এই বিষয়ে তার উৎসর্গে এক সামান্য স্বীকারোক্তি ছিল। এটা পরিষ্কার দেখা গিয়েছিল যে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে তার সম্পর্কের মধ্যে কোন ফাটলই সে দেখতে পায়নি কিংবা পাপ স্বীকার করার অথবা প্রায়শ্চিত্ত করার কোন প্রয়োজনই সে অনুভব করেনি।”
এছাড়াও, প্রথমজাত হওয়ায় কয়িন হয়তো উদ্ধতভাবে ভেবেছিল যে সেই ছিল ওই প্রতিজ্ঞাত বংশ, যে সর্প অর্থাৎ শয়তানকে ধ্বংস করবে। হবাও হয়তো তার প্রথমজাত সন্তানের বিষয়ে এমন উচ্চ ধারণা পোষণ করেছিল। (আদিপুস্তক ৪:১) কিন্তু কয়িন ও হবা যদি এমন আশা করে থাকে, তাহলে সত্যিই তারা অনেক বড় ভুল করেছিল।
হেবলের যজ্ঞ যিহোবা যে গ্রাহ্য করেছিলেন তা তিনি কিভাবে দেখিয়েছেন এই বিষয়ে বাইবেল জানায় না। কেউ কেউ মনে করেন যে স্বর্গ থেকে আগুন এসে সেগুলো গ্রাস করেছিল। তা যেভাবেই হোক না কেন, কয়িন যখন বুঝতে পেরেছিল যে তার যজ্ঞ গ্রাহ্য হয়নি, তখন সে “অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল, তাহার মুখ বিষণ্ণ হইল।” (আদিপুস্তক ৪:৫) আর কয়িন তার নিজের ক্ষতি নিজে ডেকে এনেছিল।
যিহোবার পরামর্শ ও কয়িনের উত্তর
যিহোবা কয়িনকে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে?” এই প্রশ্ন কয়িনকে তার অনুভূতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছিল। যিহোবা বলেছিলেন, “যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা থাকিবে, এবং তুমি তাহার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে।”—আদিপুস্তক ৪:৬, ৭. (২৩ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)
কয়িন তা শোনেনি। এর বদলে সে হেবলকে মাঠে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। পরে যিহোবা যখন কয়িনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে হেবল কোথায়, তখন সে মিথ্যে কথা বলে তার পাপকে আরও বাড়িয়েছিল। উত্তরে সে বলেছিল, “আমি জানি না; আমার ভ্রাতার রক্ষক কি আমি?”—আদিপুস্তক ৪:৮, ৯.
হেবলকে মারার আগে ও পরে কখনই কয়িন “সদাচারণ” করেনি। সে পাপকে তার উপর কর্তৃত্ব করতে দিয়েছিল আর এই কারণে কয়িনকে অন্য মানব পরিবারগুলো যেখানে বাস করত সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে একটা “চিহ্ন” দেওয়া হয়েছিল যাতে কেউ কয়িনকে মেরে হেবলের মৃত্যুর প্রতিশোধ না নেয়। আর সেই চিহ্ন সম্ভবত ঈশ্বরের এক গম্ভীর আদেশ ছিল।—আদিপুস্তক ৪:১৫.
পরে কয়িন একটা নগর গড়ে তোলে আর তার ছেলের নামে সেই নগরের নাম রাখে। আশ্চর্যের বিষয় নয় যে তার বংশধরেরাও হিংস্রতার জন্য পরিচিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নোহের দিনের জলপ্লাবন কয়িনের বংশের সব দুষ্ট লোককে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।—আদিপুস্তক ৪:১৭-২৪; ৭:২১-২৪.
বাইবেলে কয়িন ও হেবলের এই বিবরণ কেবল আমাদের পড়ার জন্য লেখা হয়নি। বরং এটা “শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল” আর তা “শিক্ষার, অনুযোগের . . . নিমিত্ত উপকারী।” (রোমীয় ১৫:৪; ২ তীমথিয় ৩:১৬) এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
আমাদের জন্য শিক্ষা
কয়িন ও হেবলের মতো, খ্রীষ্টানদেরকেও ঈশ্বরের কাছে যজ্ঞ উৎসর্গ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিন্তু তা আক্ষরিক হোমবলি নয় বরং “স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল।” (ইব্রীয় ১৩:১৫) বর্তমানে তা সারা পৃথিবীতে সব জায়গায় বড় আকারে করা হচ্ছে কারণ যিহোবার সাক্ষীরা ২৩০টিরও বেশি দেশে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছেন। (মথি ২৪:১৪) আপনি কি এই কাজে অংশ নিচ্ছেন? আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.
কয়িন ও হেবলের যজ্ঞের মতো আপনার বলিও বাইরের অবস্থা দেখে বিচার করা হবে না—যেমন আপনি কত ঘন্টা প্রচার করছেন। যিহোবা গভীর বিষয় দেখেন। যিরমিয় ১৭:১০ পদ বলে যে তিনি “অন্তঃকরণের অনুসন্ধান” করেন এবং এমনকি “মর্ম্মের পরীক্ষা” করেন অর্থাৎ একজনের একেবারে গভীর চিন্তা, অনুভূতি ও উদ্দেশ্য। আসল বিষয়টা হল উদ্দেশ্য কিন্তু পরিমাণ নয়। সুতরাং, যজ্ঞ ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, এর পেছনে যখন ভালবাসা থাকে ও তা অন্তর থেকে দেওয়া হয় আর তখনই তা ঈশ্বরের কাছে অনেক দামি হয়ে ওঠে।—মার্ক ১৪:৩-৯ পদের সঙ্গে মার্ক ১২:৪১-৪৪ পদের তুলনা করুন।
কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত যে যিহোবা খুঁতযুক্ত যজ্ঞ গ্রহণ করবেন না, যেমন তিনি মন্দ হৃদয় নিয়ে উৎসর্গ করা কয়িনের যজ্ঞ গ্রহণ করেননি। (মালাখি ১:৮, ১৩) যিহোবা চান আপনি যেন আপনার সবচেয়ে ভাল জিনিসটা তাঁকে দেন আর আপনার সমস্ত হৃদয়, মনপ্রাণ ও শক্তি দিয়ে তাঁর সেবা করেন। (মার্ক ১২:৩০) আপনি কি তা করছেন? তাহলে আপনার যজ্ঞকে গ্রহণযোগ্য মনে করার কারণ আপনার আছে। পৌল লিখেছিলেন: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।”—গালাতীয় ৬:৪.
কয়িন ও হেবল একই শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছিল। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি তাদের দুজনকে আলাদা আলাদা চরিত্র গড়ে তুলতে সুযোগ দিয়েছিল। কয়িন ধীরে ধীরে হিংসা, কলহ ও ক্রোধপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলেছিল।
অন্যদিকে, হেবলকে ঈশ্বর একজন ধার্মিক ব্যক্তি হিসাবে মনে রেখেছেন। (মথি ২৩:৩৫) যে কোন কিছুর বিনিময়েই হেবল ঈশ্বরকে খুশি করতে চেয়েছিলেন আর তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্য—আদম, হবা ও কয়িনের চেয়ে আলাদা ছিলেন। বাইবেল আমাদের জানায় যে হেবল যদিও মারা গিয়েছেন তবুও তিনি “কথা কহিতেছেন।” ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বস্ত পরিচর্যা বাইবেলের স্থায়ী ঐতিহাসিক বিবরণ হয়ে আছে। আসুন আমরাও হেবলের উদাহরণকে নকল করে সবসময় ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য যজ্ঞ উৎসর্গ করি।—ইব্রীয় ১১:৪.
[পাদটীকাগুলো]
a কেউ কেউ মনে করেন যে এদন উদ্যান আধুনিক দিনের তুরস্কের পূর্ব দিকের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ছিল।
[২৩ পৃষ্ঠার বাক্স//চিত্র]
খ্রীষ্টান পরামর্শদাতাদের জন্য এক আদর্শ
“তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে?” এই প্রশ্নগুলো করে যিহোবা দয়ালুভাবে কয়িনকে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তিনি কয়িনকে মন পরিবর্তন করার জন্য জোর করেননি, কারণ কয়িন নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) কিন্তু সেইসঙ্গে কয়িনের স্বেচ্ছাচারী কাজের পরিণাম সম্বন্ধে জানাতেও দ্বিধাবোধ করেননি। তিনি কয়িনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন: “যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা থাকিবে।”—আদিপুস্তক ৪:৬, ৭.
কিন্তু লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল যে তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করার পরও, যিহোবা কয়িনকে এমন একজন ব্যক্তি হিসাবে ভাবেননি যে কোন পরামর্শেই কান দেবে না। বরং, তিনি কয়িনকে বলেছিলেন যে সে যদি তার পথ পরিবর্তন করে তবে তার জন্য কী কী আশীর্বাদ রয়েছে আর তাঁর আস্থা ছিল যে চাইলে কয়িন তার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারত। যিহোবা বলেছিলেন, “যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না?” কয়িনের এই খুনী রাগের কারণে তিনি কয়িনকে বলেছিলেন: “তুমি তাহার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে।”
আজকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীনদেরও যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করা উচিত। ২ তীমথিয় ৪:২ পদে যেমন বলা হয়েছে যে তাদের মাঝে মাঝে “অনুযোগ” এবং “ভর্ৎসনা” করতে হয় আর অন্যায়কারীর স্বেচ্ছাচারী কাজের পরিণাম সম্বন্ধে তাকে সরাসরি বলতে হয়। সেইসঙ্গে প্রাচীনদের “চেতনা” দেওয়া উচিত। গ্রিক শব্দ প্যারাকেলিও এর মানে হল “উৎসাহ দেওয়া।” নতুন নিয়মের ঈশ্বরতাত্ত্বিক শব্দকোষ (ইংরাজি) বলে: “এই পরামর্শ রূঢ় কথা, তর্ক করা কিংবা কঠোর সমালোচনা করা নয়। কিন্তু আসলে এর আরেকটা মানে হতে পারে সান্ত্বনা দেওয়া।”
এছাড়াও লক্ষণীয় যে, এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গ্রিক শব্দ প্যারাক্লিটস্ আইনসংক্রান্ত ব্যাপারে কোন সাহায্যকারী বা কোন উকিলকেও বোঝায়। তাই, এমনকি প্রাচীনেরা যদি কোন অপরাধীকেও পরামর্শ দিচ্ছেন তখনও তাদের মনে রাখা উচিত যে, সেই ব্যক্তিকে তারা পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি তাদের শত্রু নন কিন্তু তারা তাকে সাহায্য করতে চান। যিহোবার মতো প্রাচীনদের আশাবাদী হওয়া এবং আস্থা রাখা উচিত যে যাকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তিনি তার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।—গালাতীয় ৬:১ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
অবশ্য পরামর্শ কাজে লাগানোর বিষয়টা ব্যক্তির নিজের। (গালাতীয় ৬:৫; ফিলিপীয় ২:১২) পরামর্শদাতা হয়তো দেখতে পারেন যে কেউ কেউ তাদের পরামর্শ শোনেন না, ঠিক যেমন কয়িন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার অনুযোগকে অবহেলা করেছিল। কিন্তু যখন প্রাচীনেরা, খ্রীষ্টান পরামর্শদাতাদের জন্য আদর্শ, যিহোবাকে অনুকরণ করেন তখন তারা নিশ্চিত হতে পারেন যে তাদের যা করা উচিত ছিল তারা তাই করেছেন।