ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ৪/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭
  • পরমদেশের খোঁজে

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • পরমদেশের খোঁজে
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আবার চাষ-আবাদ শুরু করা
  • ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করা
  • আমার প্রার্থনার উত্তর
  • আধ্যাত্মিকভাবে এগিয়ে যাওয়া
  • দুঃখের সময়ে সাহায্য
  • আরও ভাল কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা
  • বেথেল—চমৎকার আধ্যাত্মিক পরমদেশ
  • আপনি কি নিজেকে প্রাপ্তিসাধ্য করতে পারেন?
    ২০০৩ আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা
  • বেথেল পরিচর্যা—আরও স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন
    ১৯৯৫ আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা
  • এটা কি আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল কাজ হতে পারে?
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমি জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে শিখতে থাকি
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২৪
আরও দেখুন
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ৪/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭

পরমদেশের খোঁজে

পাস্কাল স্টিজি দ্বারা কথিত

গভীর রাত আর তাই দক্ষিণ ফ্রান্সের বেজিয়া শহরের রাস্তাগুলো একেবারে ফাঁকা। ধর্মীয় বইয়ের একটা দোকানের সদ্য রং করা দেওয়াল দেখতে পেয়ে, আমার বন্ধু ও আমি সেটার ওপর বড় বড় কালো অক্ষরে জার্মান দার্শনিক নিৎসার এই কথাগুলো লিখে দিই: “দেবতারা মৃত। মহামানবেরা দীর্ঘজীবী হোন!’ কিন্তু, কেন আমি এইরকম কথা লিখেছিলাম?

আমি ১৯৫১ সালে ফ্রান্সে, ইতালীয় বংশের এক ক্যাথলিক পরিবারে জন্মাই। ছোটবেলায়, আমরা দক্ষিণ ইতালিতে ছুটি কাটাতে যেতাম। সেখানকার সব গ্রামেই কুমারী মরিয়মের মূর্তি ছিল। যখন এই প্রকাণ্ড মূর্তিগুলো নিয়ে বড় বড় শোভাযাত্রা পাহাড়ি পথ দিয়ে যেত আমি কোন কিছু না বুঝেই দাদুর সঙ্গে এই শোভাযাত্রার পেছনে পেছনে যেতাম। জেসুইট পাদ্রিদের একটা ধর্মীয় স্কুলে আমি আমার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করি। কিন্তু সেখানে আমি এমন কিছু শুনেছিলাম বলে মনে পড়ে না যা আমার মধ্যে সত্যি করে ঈশ্বরে বিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিল।

মন্টপেলিয়ারের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার সময় আমি জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করি। আমার বাবা যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন তাই ডাক্তারেরা সবসময় তাকে ঘিরে থাকত। যুদ্ধে মানুষের যে ক্ষতি হয় তা থেকে তাদেরকে সুস্থ করার জন্য এত কষ্ট ও সময় নষ্ট না করে যুদ্ধকে শেষ করাই কি আরও ভাল নয়? কিন্তু, ভিয়েতনামে তখনও পুরোদমে যুদ্ধ চলছিল। আমার মতে ফুসফুসে ক্যানসারের একমাত্র চিকিৎসা হল রোগের মূল কারণ—তামাককে নির্মূল করা। আর অনুন্নত দেশগুলোতে অপুষ্টি এবং উন্নত দেশগুলোতে বেশি খাওয়ার ফলে যে রোগগুলো হয় সেই বিষয়েই বা কী বলা যায়? রোগের চিকিৎসার চেষ্টা না করে, রোগের মূল কারণগুলোকে শেষ করাই কি আরও ভাল হবে না? পৃথিবীতে কেন এত দুঃখকষ্ট? আমি মনে করেছিলাম যে এই মৃত্যুমুখী সমাজের কোথাও মারাত্মক কিছু ভুল রয়েছে আর আমি দেশের সরকারগুলোকে এর জন্য দায়ী করেছিলাম।

একজন বিদ্রোহীর লেখা একটা বই ছিল আমার প্রিয় বই আর আমি প্রায়ই সেখান থেকে কিছু কিছু কথা দেওয়ালে লিখে রাখতাম। ধীরে ধীরে, আমিও একজন বিদ্রোহী হয়ে উঠি, এমন একজন মানুষ যে কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না বা কোন নীতিও মানে না। আর আমার কোন ঈশ্বর বা প্রভু থাকুক তা আমি পছন্দ করতাম না। আমি মনে করতাম ঈশ্বর ও ধর্ম হল ধনী আর ক্ষমতাবানদের কৌশল, যেন তারা লোকেদের ওপর প্রভুত্ব করতে পারে তাদেরকে শোষণ করতে পারে। ধনী শ্রেণীর কথা ছিল, ‘তোমরা পৃথিবীতে আমাদের জন্য কঠোর পরিশ্রম কর, তাহলে স্বর্গের বাগানে তোমরা অনেক পুরস্কার পাবে।’ কিন্তু ঈশ্বরের দোহায় দিয়ে সবকিছু মুখবুজে সহ্য করার দিন আর ছিল না। আর এই কথাটাই লোকেদেরকে জানানোর দরকার ছিল। আর এটা করার একটা উপায় ছিল দেওয়ালে লিখে তাদেরকে বলা।

এর ফলে, আমার পড়াশুনা মাথায় ওঠে। এরই মধ্যে আমি মন্টপেলিয়ারের আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও বাস্তুবিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা করতে শুরু করি আর বিদ্রোহের আগুন সেখানেও ছিল। বাস্তুবিদ্যা নিয়ে আমি যত বেশি পড়াশুনা করেছি ততই আমি রেগে গিয়েছি এটা দেখে যে আমাদের এই সুন্দর গ্রহকে দূষিত করে দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যেক বছর গরমের ছুটিতে, আমি বিনা ভাড়ায় পথচলতি মোটরগাড়ি বা লরিতে করে ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার কিলোমিটার পথ ঘুরে বেড়াতাম। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা ও শত শত চালকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি নিজের চোখে দেখেছি যে মানব সমাজ কত নোংরা, কত অন্যায় এখানে রয়েছে আর এটা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একবার, পরমদেশের খোঁজ করতে করতে আমি ক্রীত দ্বীপের কয়েকটা সুন্দর সুন্দর সমুদ্রসৈকতের কাছে এসে সেগুলোকে তেলে ভরে থাকতে দেখে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। আমি ভাবতাম এই পৃথিবীতে পরমদেশের এতটুকু অংশও কি কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে না?

আবার চাষ-আবাদ শুরু করা

ফ্রান্সের বাস্তুবিজ্ঞানীরা বলছিলেন যে আমাদের আবার চাষ-আবাদ শুরু করা দরকার, তাহলেই সমাজের সমস্যাগুলোর সমাধান করা যেতে পারে। আমি নিজের হাতে কাজ করতে চেয়েছিলাম। তাই আমি দক্ষিণ ফ্রান্সের সিভেন্স পাহাড়ের লাগোয়া এক ছোট্ট গাঁয়ে পাথরের তৈরি একটা পুরনো বাড়ি কিনি। দরজায় আমি লিখেছিলাম, “এখানে পরমদেশ” যেটা আমেরিকার হিপ্পিদের স্লোগান ছিল। একজন জার্মান মেয়ে যে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল আমার সঙ্গিনী হয়ে আমার সঙ্গে থাকতে লাগে। মেয়রের সামনে গিয়ে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না কারণ তিনি সরকারি প্রতিনিধি। আর গির্জা? গির্জার কথা ছেড়েই দিন!

বেশিরভাগ সময় আমরা খালি পায়ে হাঁটতাম আর আমার লম্বা চুল ও দাড়ি ছিল। ফল ও শাকসবজির চাষ করতে আমার খুব ভাল লাগত। গরমকালে, আকাশের রঙ গাঢ় নীল হতো আর ঝিঝি পোকার গান শোনা যেত। জংলী ফুলের সুবাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত আর ভূমধ্যসাগরের তীরে আমরা যে আঙ্গুর ও ডুমুরের চাষ করতাম—সেগুলো খুবই রসালো হতো! মনে হয়েছিল যেন আমরা পরমদেশে আমাদের জায়গা খুঁজে পেয়েছি।

ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করা

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কোষ জীববিদ্যা, ভ্রূণতত্ত্ব এবং অঙ্গ-সংস্থান বিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা করেছিলাম আর এই পদ্ধতিগুলোর জটিলতা ও মিল আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। এখন আমি প্রকৃতিকে রোজ আরও কাছ থেকে দেখতে পেতাম আর চিন্তা করতে পারতাম আর এর সৌন্দর্য ও কাজ আমাকে অবাক করে দিত। একটার পর একটা দিন গিয়েছে আর প্রকৃতি আমার কাছে তার আবরণ খুলেছে। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একদিন আমি অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম আর জীবন সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করার পর, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে একজন সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন। আমি মনে মনে ঈশ্বরে বিশ্বাস করব বলে ঠিক করেছিলাম। এর আগে আমি সবসময় এক শূন্যতা অনুভব করতাম, নিজেকে ভীষণ একা লাগত। কিন্তু যে দিন থেকে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করি সেদিন আমি নিজেকে বলি, ‘পাস্কাল, তুমি আর একা নও।’ এটা এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিল।

কিছুদিনের মধ্যে আমাদের একটা মেয়ে হয় আর তার নাম আমানডিন। সে ছিল আমার চোখের মণি। ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করায় আমি আমার জানা কিছু নৈতিক নিয়মগুলো মানতে শুরু করি। আমি চুরি করা ও মিথ্যে কথা বলা বন্ধ করে দিই আর শীঘ্রিই বুঝতে পারি যে এতে আমার পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমার সমস্যা অনেক কমে গিয়েছে। কিন্তু তবে এখনও আমাদের সমস্যা ছিল আর আমি যে পরমদেশের আশা করেছিলাম এটা তা ছিল না। আশেপাশের লোকেরা আঙ্গুর চাষ করত আর তারা তাতে কীটনাশক ওষুধ ও আগাছা না হওয়ার ওষুধ দিত যা আমার শস্যের ক্ষতি করত। দুষ্টতার কারণ কী আমার এই প্রশ্নের উত্তর আমি তখনও পায়নি। এছাড়া পারিবারিক জীবনের ওপর আমি অনেক বই পত্রিকা পড়লেও, আমার সাথির সঙ্গে রাগারাগি করা বন্ধ করতে পারিনি। আমার কয়েকজন বন্ধু ছিল আর তারা সবাই ছিল প্রবঞ্চক; তাদের কেউ কেউ এমনকি চেষ্টা করেছিল আমার সঙ্গিনী যেন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। না এটা সত্যিকারের পরমদেশ হতে পারে না।

আমার প্রার্থনার উত্তর

জীবনে আমাকে রাস্তা দেখানোর জন্য আমি প্রায়ই নিজের মতো করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম। এক রবিবার সকালে ইরেন লোপেজ নামে একজন হাসি খুশি মহিলা তার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে আমাদের ঘরে আসেন, যিনি একজন যিহোবার সাক্ষী ছিলেন। তিনি যা বলেছিলেন আমি তা শুনি আর তাকে আবার আসতে বলি। তারপর দুজন ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর আমার দুটো বিষয় মনে থাকে—পরমদেশ এবং ঈশ্বরের রাজ্য। তাদের কথাগুলোকে আমি আমার মনে খুব ভাল করে গেঁথে নিয়েছিলাম আর এর কয়েক মাস পর, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি যদি শুদ্ধ বিবেক ও সত্যিকারের সুখ খুঁজে পেতে চাই, তাহলে আমাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলতে হবে।

ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী চলার জন্য আমার সঙ্গিনী প্রথমে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। তারপর সে এমন কিছু খারাপ বন্ধুবান্ধবদের পাল্লায় পড়ে, যারা ঈশ্বর ও তাঁর আইনগুলোকে ঠাট্টা করত। বসন্তের এক সন্ধ্যায় আমি প্রচণ্ড আঘাত পাই যেদিন ঘরে ফিরে এসে আমি দেখেছিলাম যে আমাদের ঘর খালি পড়ে আছে। আমার সঙ্গিনী আমাদের তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে। অনেকদিন ধরে আমি তাদের পথ চেয়ে বসেছিলাম—কিন্তু সবই বৃথা হয়েছে। ঈশ্বরকে দোষ দেওয়ার বদলে আমি প্রার্থনা করেছিলাম যেন তিনি আমাকে সাহায্য করেন।

এর অল্প দিন পরেই, আমি আমার ডুমুর গাছের তলায় বসে বাইবেল পড়তে শুরু করি। আসলে, বাইবেলের কথাগুলো আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করি। আমি মনোজগৎ ও মনোবিজ্ঞানের অনেক বই পড়েছিলাম কিন্তু আমি কোথাও এইরকম জ্ঞানের কথা পাইনি। এই বই অবশ্যই ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। যীশুর শিক্ষা ও মানুষের স্বভাব সম্পর্কে তাঁর বোঝার ক্ষমতা আমাকে অবাক করে দিয়েছিল। গীতসংহিতার কথাগুলো আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল আর হিতোপদেশে যে বাস্তব প্রজ্ঞা পাওয়া যায় তা আমাকে আশ্চর্য করেছিল। আমি শীঘ্রিই বুঝতে পারি যে সৃষ্টিকে কাছ থেকে দেখা যদিও ঈশ্বরের কাছে আসার এক চমৎকার উপায় কিন্তু এগুলো “তাঁহার মার্গের প্রান্ত” মাত্র।—ইয়োব ২৬:১৪.

সাক্ষীরা আমাকে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় এবং আপনার পারিবারিক জীবন সুখী করাa বইদুটো দিয়ে গিয়েছিলেন। সেগুলো পড়ে আমার চোখ খুলে যায়। সত্য বইটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করে যে কেন সারা পৃথিবীর মানুষ দূষণ, যুদ্ধ, দৌরাত্ম্য ভোগ করে চলেছে আর কেন পৃথিবী পারমাণবিক ধ্বংসের বিপদের মধ্যে রয়েছে। আর ঠিক যেমন আমি আমার বাগান থেকে লাল আকাশ দেখে বলে দিতে পারতাম যে কালকে আকাশ একেবারে পরিষ্কার থাকবে, তেমনই এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করেছিল যে ঈশ্বরের রাজ্য একেবারে কাছে। আর পারিবারিক জীবন বইটা পড়ে আমার মনে হয়েছিল যে যদি আমার সাথিকে আমি এটা দেখাতে পারতাম আর বলতে পারতাম যে বাইবেলের উপদেশগুলো কাজে লাগালে আমরা সুখী হতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি।

আধ্যাত্মিকভাবে এগিয়ে যাওয়া

আমি আরও শিখতে চেয়েছিলাম, তাই রবার্ট নামে একজন সাক্ষীকে আমি বলেছিলাম তিনি যেন আমার কাছে আসতেই থাকেন। আমি বাপ্তিস্ম নিতে চাই শুনে তিনি খুবই অবাক হয়ে যান আর তাই বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়। আমি যা শিখছিলাম তা তখনই অন্যদের কাছে বলতে শুরু করেছিলাম আর কিংডম হল থেকে আমি যে বই পত্রিকা আনতাম সেগুলো আমি লোকদেরকে দিতে শুরু করেছিলাম।

নিজের রুজি-রোজগারের জন্য আমি রাজমিস্ত্রির কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছিলাম। একজন ব্যক্তির জন্য ঈশ্বরের বাক্য যে মঙ্গল আনতে পারে তা জেনে আমি প্রতিটা সুযোগে আমার সঙ্গী ছাত্র ও শিক্ষকদের কাছে প্রচার করতে শুরু করি। একদিন সন্ধ্যায় করিডোরে আমি সার্জকে দেখি। তার হাতে কয়েকটা পত্রিকা ছিল। আমি তাকে বলি “আপনি মনে হয় পড়তে ভালবাসেন।” তিনি বলেছিলেন “হ্যাঁ ভালবাসি কিন্তু এগুলো পড়তে পড়তে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি।” আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম “আপনি কি সত্যিকারের ভাল কিছু পড়তে চান?” ঈশ্বরের রাজ্য নিয়ে আমাদের খুব ভাল আলোচনা হয়েছিল আর এরপরই তিনি কয়েকটা বাইবেলের বই পত্রিকা নিয়েছিলেন। পরের সপ্তায় তিনি আমার সঙ্গে কিংডম হলে এসেছিলেন ও বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন।

একদিন আমি রবার্টকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আমি ঘরে ঘরে প্রচারে যেতে পারব কি না। তিনি তার আলমারি থেকে আমার জন্য একটা কোট বের করে আনেন। পরের রবিবারে আমি তার সঙ্গে প্রথম প্রচারে যাই। এরপর আমি যিহোবার কাছে আমার জীবন উৎসর্গ করি আর ১৯৮১ সালের ৭ই মার্চ সবার সামনে বাপ্তিস্ম নিয়ে তা দেখাই।

দুঃখের সময়ে সাহায্য

এরইমধ্যে আমি জানতে পারি যে আমানডিন ও তার মা কোথায় থাকত। তার মা যেখানে থাকত সেখানকার আইন অনুযায়ী আমাকে সে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে নিষেধ করেছিল। আমি একেবারে ভেঙে পড়ি। আমানডিনের মা বিয়ে করেছিল আর আমার দুঃখ আরও চরমে পৌঁছেছিল যখন আমি তার স্বামীর কাছ থেকে সরকারিভাবে বিজ্ঞপ্তি পাই যে তিনি আমার মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন—আমার কোনরকম অনুমতি ছাড়াই। আমার মেয়ের ওপর আমার আর কোনই অধিকার ছিল না। আমিও আইনের সাহায্য নিয়েছিলাম কিন্তু আমি আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাইনি। আমার দুঃখ এত বেড়ে গিয়েছিল যে আমার মনে হয়েছিল আমি যেন পিঠে ৫০ কিলো ওজনের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি।

কিন্তু যিহোবার বাক্য আমাকে অনেকভাবে সাহায্য করে। একদিন আমার মন খুবই খারাপ করছিল আর আমি বার বার হিতোপদেশ ২৪:১০ পদের কথাগুলো বলেছিলাম: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” এই পদ আমাকে একেবারে ভেঙে পড়া থেকে বাঁচিয়েছিল। আরেকবার, আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে বিফল হয়ে আমি প্রচারে বেরিয়ে গিয়েছিলাম আর আমি আমার প্রচারের ব্যাগটা আমার সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরেছিলাম। এইরকম কঠিন সময়ের মধ্যে আমি গীতসংহিতা ১২৬:৬ পদের সত্যতা অভিজ্ঞতা করেছিলাম যেখানে বলে: “যে ব্যক্তি রোদন করিতে করিতে বপনীয় বীজ লইয়া বাহিরে যায়, সে আনন্দগান-সহ আপন আটি লইয়া আসিবেই আসিবে।” একটা জরুরি বিষয় যা আমি শিখেছিলাম তা হল, যখন বড় বড় সমস্যাগুলো আসে আর যখন আমরা সেগুলোকে পার করার জন্য সবরকম চেষ্টা করি তারপর আর আমাদের সেই বিষয় নিয়ে শোক করা উচিত নয় বরং সবকিছু পেছনে ফেলে যিহোবার সেবায় সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে দেওয়া উচিত। একমাত্র এভাবেই আপনি আপনার আনন্দ বজায় রাখতে পারবেন।

আরও ভাল কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা

আমার বাবামা যখন দেখেন যে আমি ভাল হয়ে গেছি আমার বাবামা আমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন আর তারা চেয়েছিলেন আমি যেন আবার আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শুরু করি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই কিন্তু তখন আমার লক্ষ্য একেবারেই আলাদা ছিল। সত্য আমাকে সমস্ত মানব দর্শন, রহস্যবাদ ও জ্যোতির্বিদ্যা থেকে স্বাধীন করেছিল। আমি সত্যিকারের বন্ধুদের পেয়েছিলাম যারা যুদ্ধ করে একে অন্যকে হত্যা করে না। আর শেষ পর্যন্ত আমি আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়েছিলাম যে পৃথিবীতে কেন এত দুঃখকষ্ট। আমার হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠেছিল আর তাই আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করতে চেয়েছিলাম। যীশু পরিচর্যায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করেছিলেন আর আমি তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম।

১৯৮৩ সালে, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে একজন পূর্ণ-সময়ের পরিচারক হই। আমার প্রার্থনার উত্তর হিসেবে আমি একটা পার্কে পার্টটাইম কাজ পেয়েছিলাম যার থেকে আমি আমার খাওয়া-পরা চালিয়ে নিতে পারতাম। আমার আনন্দের সীমা ছিল না যখন সার্জের সঙ্গে আমি অগ্রগামী স্কুলে যোগ দিই, যার কাছে রাজমিস্ত্রির স্কুলে থাকার সময় আমি প্রচার করেছিলাম! তিন বছর একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে কাজ করার পর, আমার ইচ্ছা হয় যে আমি আরও বেশি করে যিহোবার সেবা করব। তাই ১৯৮৬ সালে প্যারিসের কাছেই প্রভেনের পিকচারেস্ক শহরে আমাকে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। প্রায়ই, প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় প্রচার থেকে ঘরে ফিরে এসে আমি হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতাম আর তাঁর সম্বন্ধে লোকেদের জানাতে পেরে একটা সুন্দর দিন কাটায় আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতাম। আসলে জীবনে দুটো বিষয় আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিত ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলা আর ঈশ্বরের বিষয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলা।

৬৮ বছর বয়সে যখন আমার মা বাপ্তিস্ম নেন তখন সেটা ছিল আমার জীবনে আরেকটা বড় আনন্দের ঘটনা। তিনি দক্ষিণ ফ্রান্সের একটা ছোট গ্রাম সাবাসানে থাকতেন। আমার মা যখন বাইবেল পড়তে শুরু করেন, আমি তাকে নিয়মিত প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা পাঠাতাম। তিনি একজন বুদ্ধিমতি মহিলা ছিলেন আর তাই তিনি তাড়াতাড়িই বুঝে ফেলেন যে তিনি যা পড়ছিলেন সেটাই সত্য।

বেথেল—চমৎকার আধ্যাত্মিক পরমদেশ

ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি যখন বিশেষ অগ্রগামীদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমি মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল ও ফ্রান্সে যিহোবার সাক্ষীদের শাখা অফিস, বেথেলের জন্য আবেদন করি। আমি সবকিছু যিহোবার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম এই ভেবে যে তিনিই ঠিক করুন আমি কোথায় সবচেয়ে ভালভাবে তাঁকে সেবা করতে পারব। কয়েক মাস পর, ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাকে উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের লুভেয়ার্সের বেথেলে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এটা চমৎকার সুযোগ ছিল কারণ যখন আমার বাবামা খুব অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন তাদের দেখাশোনা করায় আমি আমার দাদা-বৌদিকে সাহায্য করতে পারতাম। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে মিশনারির কাজ করলে আমি তা করতে পারতাম না।

আমার মা আমাকে দেখতে বেশ কয়েকবার বেথেলে এসেছিলেন। আমি দূরে আছি এটা তার খুবই মনোদুঃখের কারণ ছিল কিন্তু তিনি প্রায়ই আমাকে বলতেন: “তুমি বেথেলেই থাক, বাবা। আমি খুব খুশি যে তুমি এভাবে যিহোবাকে সেবা করে চলেছ।” কিন্তু দুঃখের বিষয় যে আমার বাবামা দুজনের কেউই এখন নেই। তবে আমি পরিবর্তিত পৃথিবী, সত্যিকারের পরমদেশে তাদের দেখার জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করে আছি!

আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে কোন ঘরকে যদি “এখানে পরমদেশ” নাম দিতে হয় তাহলে তা বেথেল—“ঈশ্বরের গৃহ।” কারণ এটা সত্যিকারের পরমদেশ যেখানে আধ্যাত্মিকতা রাজত্ব করে। এখানে আত্মার ফল উৎপন্ন করার সুযোগ আমাদের রয়েছে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) প্রতিদিন বাইবেলের পদ আলোচনা এবং বেথেলে পারিবারিক প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা যে প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য পাই তা আমাকে বেথেল সেবায় শক্তি যোগায়। এছাড়াও, বেথেলে আমরা এমন ভাইবোনেদের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পাই যারা আধ্যাত্মিকমনা, যারা বহু বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করছেন আর তাই বেথেল এমন এক তুলনাহীন জায়গা যেখানে আধ্যাত্মিকভাবে বেড়ে ওঠা যায়। যদিও প্রায় ১৭ বছর ধরে আমি আমার মেয়ের কাছ থেকে আলাদা রয়েছি, তবুও বেথেলে আমি অনেক উদ্যমী যুবক-যুতীদের পেয়েছি যাদেরকে আমি আমার সন্তানের মতো দেখি আর তাদের আধ্যাত্মিকভাবে এগিয়ে যেতে দেখে আমি আনন্দ পাই। গত আট বছরে আমি সাতটা আলাদা আলাদা বিভাগে কাজ করেছি। যদিও এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় কাজ বদলে যাওয়া সবসময় আমার জন্য সহজ ছিল না কিন্তু এইরকম প্রশিক্ষণ থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

একসময় আমি একরকম শিমের চাষ করেছিলাম যা শতগুণ ফল উৎপন্ন করত। একইভাবে আমি দেখতে পেরেছিলাম যে খারাপ কিছু বুনলে আপনি শতবার খারাপ কিছু কাটবেন—শুধু একবার নয়। অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হলে খুবই মূল্য দিতে হয়। আর ভাল হত যদি আমি এভাবে না শিখে যিহোবার পথেই বড় হতাম। খ্রীষ্টান বাবামায়েরা যে যুবক-যুবতীদের বড় করে তোলেন এটা তাদের জন্য কতই না আশীর্বাদের! কোন সন্দেহ নেই যে যিহোবার চোখে যা ঠিক সেটা বোনায় ভাল যাতে কাটার জন্য শতগুণ শান্তি ও তৃপ্তি পাওয়া যায়।—গালাতীয় ৬:৭, ৮.

আমি যখন একজন অগ্রগামী ছিলাম, তখন আমি কতবার সেই ধর্মীয় বইয়ের দোকানের পাশ দিয়ে যেতাম, যার দেওয়ালে আমরা প্রতিবাদের স্লোগান লিখেছিলাম। পরে আমি ওই দোকানের ভিতরে গিয়ে মালিকের সঙ্গে জীবন্ত ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কথা বলেছিলাম। হ্যাঁ, ঈশ্বর জীবন্ত! এর চেয়েও বড় কথা হল যে যিহোবা হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর, একজন বিশ্বস্ত পিতা যিনি কখনও তাঁর সন্তানদের ছেড়ে দেন না। (প্রকাশিত বাক্য ১৫:৪) সমস্ত জাতি থেকে লক্ষ লক্ষ লোকেরা এখনই জীবন্ত ঈশ্বর, যিহোবাকে সেবা করে ও তাঁর প্রশংসা করে আধ্যাত্মিক পরমদেশ পেয়েছে আর ভবিষ্যতে আসন্ন পরমদেশও পাবে!

[পাদটীকাগুলো]

a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শুরু করি। আজকে বেথেল পরিচর্যায় (ডানদিকে)

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার