সৃষ্টিকর্তা আপনার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারেন
“ইহারা সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা তিনি আজ্ঞা করিলেন, আর ইহারা সৃষ্ট হইল।”—গীতসংহিতা ১৪৮:৫.
১, ২. (ক) কোন্ প্রশ্ন আমাদের বিবেচনা করা উচিত? (খ) যিশাইয়ের প্রশ্ন কীভাবে সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত?
“তুমি কি জ্ঞাত হও নাই?” প্রশ্নটা শুনে অনেকেই কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘কী জ্ঞাত হইব?’ কিন্তু প্রশ্নটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা এর উত্তর বাইবেলের যিশাইয় বইয়ের ৪০ অধ্যায়ে দেওয়া এর পটভূমি দেখলে ভালভাবে বুঝতে পারব। প্রাচীনকালের একজন ইব্রীয় ব্যক্তি, যিশাইয় এই প্রশ্নটা করেছিলেন। অতএব, প্রশ্নটা খুবই পুরনো। কিন্তু, এরপরেও তা খুবই নতুন কারণ এটা আপনার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অর্থের সঙ্গে জড়িত।
২ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই যিশাইয় ৪০:২৮ পদের এই প্রশ্নটায় আমাদের গভীরভাবে মন দেওয়া উচিত: “তুমি কি জ্ঞাত হও নাই? তুমি কি শুন নাই? অনাদি অনন্ত ঈশ্বর, সদাপ্রভু, পৃথিবীর প্রান্ত সকলের সৃষ্টিকর্ত্তা।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) অতএব, ‘জ্ঞাত হওয়ার’ সঙ্গে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা জড়িত এবং প্রসঙ্গটা দেখায় যে এর চেয়েও বেশি, পৃথিবী জড়িত। এর ঠিক দুটো পদ আগে যিশাইয় তারকাদের সম্পর্কে লিখেছিলেন: “ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, . . . তাঁহার সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকে না।”
৩. সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জেনে থাকলেও কেন আপনি আরও বেশি জানতে চাইবেন?
৩ অতএব, “তুমি কি জ্ঞাত হও নাই?” প্রশ্নটা আসলে আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে। আপনি নিজে হয়তো বিশ্বাস করেন যে যিহোবা ঈশ্বর হলেন “পৃথিবীর প্রান্ত সকলের সৃষ্টিকর্ত্তা।” এছাড়াও আপনি তাঁর ব্যক্তিত্ব ও তাঁর পথগুলো সম্বন্ধে হয়তো খুব ভাল করেই জানেন। কিন্তু, আপনি যদি এমন কোন পুরুষ বা মহিলার সামনে পড়েন যার সন্দেহ আছে যে সৃষ্টিকর্তা আদৌ আছেন কি না আর থাকলেও তিনি কীধরনের ঈশ্বর সেই সম্বন্ধে পরিষ্কার কোন ধারণা নেই, তখন কী হবে? এইরকম কারও সামনে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ আজকে লাখ লাখ মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে জানেন না বা তাঁকে বিশ্বাসও করেন না।—গীতসংহিতা ১৪:১; ৫৩:১.
৪. (ক) এখন সৃষ্টিকর্তার বিষয় বিবেচনা করা কেন উপযুক্ত? (খ) বিজ্ঞান কোন্ কোন্ উত্তর দিতে পারে না?
৪ আজকে স্কুলগুলো সন্দেহবাদীদের তৈরি করে যারা মনে করেন যে মহাবিশ্ব ও জীবনের উৎপত্তি সম্বন্ধে প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞানের কাছে আছে (কিংবা বিজ্ঞানই সেগুলো খুঁজে বের করতে পারবে)। জীবনের উৎপত্তি (ইংরেজি) নামে (ফরাসি শিরোনাম: অক্স অরিজিনস ডে লা ভি) বইয়ে লেখক আজহান এবং লিনে বলেছিলেন: “এই একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও জীবনের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সমস্যাটা এতই জটিল যে এর সমাধান খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন আর তাই আমাদের বিশাল মহাশূন্য থেকে শুরু করে এর অশেষ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষা করা দরকার।” তবুও বইয়ের “প্রশ্নটা এখনও অমীমাংসিত” শিরোনামের শেষ অধ্যায় বলে: “পৃথিবীতে জীবন কীভাবে এসেছে? এই প্রশ্নের কিছু বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর আমরা যদিও বা আবিষ্কার করেছি কিন্তু জীবন কেন এসেছে? জীবনের কি কোন উদ্দেশ্য আছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না। এটা শুধু ‘কীভাবে’ হল সেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করে। কিন্তু, ‘কীভাবে’ আর ‘কেন’ দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রশ্ন। . . . সুতরাং এই ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর দর্শন, ধর্ম এবং তার চেয়েও বড় কথা আমাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে হবে।”
উত্তর ও অর্থ খোঁজা
৫. সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে আরও বেশি জেনে বিশেষ করে কোন্ ধরনের লোকেরা উপকৃত হতে পারেন?
৫ আমরা বুঝতে চাই যে কেন জীবনের অস্তিত্ব আছে আর বিশেষ করে কেন আমরা এখানে আছি। এছাড়াও, আমাদের সেই লোকেদের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া উচিত যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে এখনও সন্দেহ করে থাকেন ও সেইসঙ্গে তাঁর পথগুলো সম্পর্কে খুব একটা জানেন না। কিংবা সেই লোকেদের কথা চিন্তা করুন যাদের শিক্ষাদীক্ষা ঈশ্বর সম্পর্কে এমন এক ধারণা দেয় যা বাইবেল থেকে একেবারেই আলাদা। কোটি কোটি লোকেরা হয়তো প্রাচ্যের দেশগুলোতে বা এমন কোন দেশে বড় হয়েছেন যেখানে বেশিরভাগ লোকই একজন ব্যক্তিত্ববান ঈশ্বর অর্থাৎ এক সুন্দর ব্যক্তিত্ব আছে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে ঈশ্বরকে দেখেন না। “ঈশ্বর” শব্দটা হয়তো তাদের মনে কেবল এক রহস্যময় শক্তি বা এক নিরাকার সংঘটকের ধারণা দিয়ে থাকে। তারা ‘সৃষ্টিকর্ত্তাকে জ্ঞাত হননি’ অথবা তাঁর পথগুলোকেও জানেননি। যদি তারা অথবা এইরকম একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী লাখ লাখ মানুষ মেনে নেন যে সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাহলে তারা কতই না উপকার পাবেন, যার মধ্যে অনন্ত জীবনের আশাও আছে! এছাড়াও তারা এখনই এমন কিছু পেতে পারেন যা সত্যিই খুব দুর্লভ—জীবনের প্রকৃত অর্থ, প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং মনের শান্তি।
৬. আজকে অনেকের জীবনে কীভাবে পল গগুইন এবং তার আঁকা ছবির মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে?
৬ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: ১৮৯১ সালে, ফরাসি চিত্রকর পল গগুইন পরিপূর্ণ জীবনের খোঁজে পরমদেশের মতো জায়গা, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ায় গিয়েছিলেন। কিন্তু, আগের বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে তিনি এবং অন্যান্যেরা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি একটা বিশাল ছবি এঁকেছিলেন যেখানে তিনি ‘জীবনকে এক মহা রহস্য বলে বর্ণনা করেছিলেন।’ আপনি কি জানেন গগুইন ওই ছবির কী নাম দিয়েছিলেন? “আমরা কোথা থেকে এসেছি? আমরা এখানে কেন? আমরা কোথায় যাচ্ছি?” আপনি হয়তো এই প্রশ্নগুলো অনেককেই করতে শুনেছেন। হ্যাঁ, অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু তারা যখন কোন ভাল উত্তর অর্থাৎ জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পান না তখন তারা কী করেন? তারা হয়তো এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন যে তাদের জীবন ও পশুপাখিদের জীবনের মধ্যে খুব অল্পই পার্থক্য আছে।—২ পিতর ২:১২.a
৭, ৮. বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন পর্যাপ্ত নয়?
৭ তাই, আপনি বুঝতে পারেন যে কেন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফ্রিম্যান ডাইসন লিখেছিলেন: “আমি যখন ইয়োবের মতো সেই প্রশ্নগুলো আবার জিজ্ঞাসা করি, তখন আমি অনেকের মনের কথাকে বলি। আমরা কেন দুঃখকষ্ট ভোগ করি? এই জগতে এত অন্যায় কেন? ব্যথা ও দুঃখের কারণ কী?” (ইয়োব ৩:২০, ২১; ১০:২, ১৮; ২১:৭) আগেই যেমন বলা হয়েছে, অনেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের জন্য ঈশ্বরের বদলে বিজ্ঞানের দিকে তাকিয়ে আছে। জীববিজ্ঞানী, সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং অন্যেরা পৃথিবী ও এর জীবন সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানকে দিনে দিনে বাড়িয়ে চলেছেন। অন্য আরেক পথে উত্তর খুঁজতে গিয়ে জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগৎ, তারকারাজি আর এমনকি দূরের ছায়াপথগুলো সম্বন্ধেও আরও অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। (আদিপুস্তক ১১:৬ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) এই তথ্যগুলো কোন্ যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্তের দিকে নির্দেশ করে?
৮ কিছু বিজ্ঞানী মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ঈশ্বরের “মন” অথবা তাঁর “হাতের লেখা” সম্বন্ধে বলেন। কিন্তু এটা কি মূল বিষয়টাকে বাদ দেয়? সায়েন্স পত্রিকা বলেছিল: “গবেষকেরা যখন বলেন যে সৃষ্টিতত্ত্ব ঈশ্বরের ‘মন’ অথবা ‘হাতের লেখা’ প্রকাশ করে তখন তারা ঐশিক কিছুর প্রতি ইঙ্গিত করেন যা মহাবিশ্বের এই ক্ষুদ্র দিককে অর্থাৎ এর ভৌত গঠনকে তুলে ধরে।” সত্যিই, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন উইনবার্গ ঠিকই লিখেছিলেন: “মহাবিশ্বকে আমরা যতই বুঝতে পেরেছি ততই তা অর্থহীন বলে মনে হয়েছে।”
৯. কোন্ সাক্ষ্যপ্রমাণ আমাদের ও অন্যান্যদের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করে?
৯ কিন্তু, আপনি হয়তো সেই লাখ লাখ লোকেদের মধ্যে একজন, যারা খুব মন দিয়ে বিষয়টা অধ্যয়ন করেছেন এবং বুঝেছেন যে জীবনের প্রকৃত অর্থ সৃষ্টিকর্তাকে জানার মধ্যেই লুকিয়ে আছে। মনে করে দেখুন প্রেরিত পৌল কী লিখেছিলেন: “মানুষ বলতে পারে না যে সে ঈশ্বরকে জানে না। সৃষ্টির একেবারে শুরু থেকেই মানুষ ঈশ্বরের সৃষ্টি দেখে বুঝতে পেরেছে, তিনি কীধরনের ঈশ্বর। এর থেকে বোঝা যায় যে তাঁর ক্ষমতা চিরকাল স্থায়ী। এটা দেখায় তিনিই ঈশ্বর।” (রোমীয় ১:২০, হোলি বাইবেল, নিউ লাইফ ভারসান) হ্যাঁ, এই জগৎ ও আমরা নিজেরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিষয়ে সাক্ষ্য দিই ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক যে জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে, তা জানাই। আসুন আমরা এই বিষয়গুলোর তিনটে দিক বিবেচনা করি: আমাদের চারিদিকের মহাবিশ্ব, জীবনের উৎপত্তি এবং আমাদের নিজেদের মানসিক ক্ষমতা।
বিশ্বাস করার জন্য যুক্তিগুলো
১০. কেন আমাদের মহাবিশ্বের “শুরু” সম্বন্ধে চিন্তা করা উচিত? (আদিপুস্তক ১:১, NW; গীতসংহিতা ১১১:১০)
১০ আমাদের মহাবিশ্ব কীভাবে এখানে এসেছে? মহাশূন্য দূরবীক্ষণ ও মহাশূন্য পরিভ্রমণের রিপোর্টগুলো থেকে আপনি হয়তো জানেন যে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই স্বীকার করেন, আমাদের মহাবিশ্ব সবসময় অস্তিত্বে ছিল না। এর একটা শুরু ছিল এবং ধীরে ধীরে এটা বিস্তৃত হয়েছে। এটা কী বোঝায়? জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যার বার্নাড লোভেলের কথা শুনুন: “অতীতে মহাবিশ্ব যদি অতি ক্ষুদ্র একক এবং অতি ক্ষুদ্র ঘনত্বের হয়, তবে আমাদের প্রশ্ন হবে যে এর আগে তা কেমন ছিল . . . এর উৎপত্তি নিয়ে আমাদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেবে।”
১১. (ক) মহাবিশ্ব কতটা বিশাল? (খ) মহাবিশ্বের খুঁটিনাটি বিষয়েও যথার্থতা কী ইঙ্গিত করে?
১১ এছাড়াও আমাদের মহাবিশ্ব যার মধ্যে পৃথিবীও রয়েছে সেটার গঠন, নিখুঁত সমন্বয়কে তুলে ধরে। যেমন, সূর্য ও অন্য নক্ষত্রগুলোর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল দীর্ঘস্থায়ী কর্মক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতা। সাম্প্রতিক হিসাব দেখায় যে আমরা মহাবিশ্বের যতটুকু দেখতে পাই তাতে ছায়াপথের সংখ্যা ৫০০ কোটি থেকে শুরু করে অগণিত। আর আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথেই কোটি কোটি তারা রয়েছে। এখন ভেবে দেখুন: আমরা জানি যে একটা মোটর গাড়ির ইঞ্জিনের সঠিক অনুপাতে জ্বালানি এবং বায়ুর দরকার হয়। আপনার যদি গাড়ি থাকে, তাহলে আপনি হয়তো এর ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য কোন দক্ষ কারিগরকে ডাকবেন যাতে আপনার গাড়ি আরও ভালভাবে ও ঠিক মতো চলতে পারে। একটা সামান্য ইঞ্জিনের বেলায় যদি এতটা যথার্থতা মেনে চলতে হয়, তবে আমাদের “জ্বলন্ত” সূর্যের বেলায় কী বলা যেতে পারে? এটা পরিষ্কার যে পৃথিবীতে যাতে জীবন টিকে থাকতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় মুখ্য শক্তিগুলোকে ঠিক-ঠিক করে রাখা হয়েছে। এটা কি হঠাৎ করে হয়ে গেছে? ইয়োবকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “তুমি কি সেই নিয়মগুলোর বিষয়ে জান যা আকাশমণ্ডলকে নিয়ন্ত্রণ করে বা পৃথিবীর প্রাকৃতিক নিয়মগুলোকে কি তুমি নিরূপণ করতে পার?” (ইয়োব ৩৮:৩৩, দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল) কোন মানুষই পারেনি। তাহলে এই যথার্থতা কোথা থেকে এসেছে?—গীতসংহিতা ১৯:১.
১২. সৃষ্টির পিছনে খুবই বুদ্ধিমান কোন ব্যক্তি আছেন তা চিন্তা করা কেন অযৌক্তিক নয়?
১২ এটা কি এমন কিছু বা এমন কেউ করেছেন যাকে মানুষ দেখতে পায় না? এই প্রশ্নটাকে আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখা যাক। বেশিরভাগ জ্যোতির্বিদ এখন স্বীকার করেন যে প্রচণ্ড শক্তিশালী কিছু নক্ষত্র রয়েছে যেগুলোকে কৃষ্ণ-বিবর বলা হয়। এই কৃষ্ণ-বিবরগুলোকে দেখা যায় না কিন্তু বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত যে এগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে। একইভাবে, বাইবেল অন্য একটা রাজ্য সম্বন্ধে বলে যেখানে ক্ষমতাবান প্রাণীরা আছেন যাদের দেখা যায় না কারণ তারা হলেন আত্মিক প্রাণী। অতএব, এইরকম ক্ষমতাবান, অদৃশ্য সত্তাদের যদি অস্তিত্ব থেকেই থাকে, তাহলে এটা কি যুক্তিযুক্ত নয় যে মহাবিশ্বে যে যথার্থতা দেখা যায় তা খুবই বুদ্ধিমান কেউ সৃষ্টি করেছেন?—নহিমিয় ৯:৬.
১৩, ১৪. (ক) জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞান আসলে কোন্ সিদ্ধান্তে এসেছে? (খ) পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব কী ইঙ্গিত করে?
১৩ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করতে লোকেদের সাহায্য করার জন্য দ্বিতীয় প্রমাণটা হল জীবনের উৎপত্তি নিয়ে কথা বলা। লুই পাস্তুরের গবেষণার সময় থেকে লোকেরা মেনে নিয়েছেন যে জীবন নিজে নিজে অস্তিত্বে আসেনি। তাহলে পৃথিবীতে কীভাবে জীবনের উৎপত্তি হয়েছিল? ১৯৫০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছিলেন যে পৃথিবীতে জীবন সম্ভবত বহু আগের কোন মহাসাগরে আস্তে আস্তে গঠিত হয়েছিল, যখন মূল বায়ুমণ্ডলে বিদ্যুৎ বার বার আঘাত করেছিল। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক প্রমাণগুলো দেখায় যে পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি এভাবে হতে পারে না কারণ বায়ুমণ্ডল কখনই এরকম ছিল না। কিন্তু, কিছু বিজ্ঞানীরা এর চেয়েও নিখুঁত ব্যাখ্যা খুঁজে চলেছেন। কিন্তু তারাও কি কোন জরুরি বিষয় বাদ দিয়ে যাচ্ছেন?
১৪ মহাবিশ্ব ও এর মধ্যেকার জীবন সম্বন্ধে বেশ কয়েক বছর গবেষণা করার পর, ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার ফ্রেড হোলে মন্তব্য করেছিলেন: “প্রকৃতির মুক্ত শক্তি থেকে জীবনের উৎপত্তি হয়েছে, এই কাল্পনিক ক্ষীণ সম্ভাবনাকে মেনে নেওয়ার বদলে জীবনের উৎপত্তি, উদ্দেশ্যপূর্ণ ও বুদ্ধিমান কোন কাজ ছিল বলে বিশ্বাস করাই আরও বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।” জীবনের বিস্ময়কর বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা যত বেশি করে জানি, আমাদের কাছে এটা তত বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হবে যে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাছ থেকে জীবন এসেছে।—ইয়োব ৩৩:৪; গীতসংহিতা ৮:৩, ৪; ৩৬:৯; প্রেরিত ১৭:২৮.
১৫. কেন বলা যেতে পারে যে আপনি অদ্বিতীয়?
১৫ অতএব, প্রথম যুক্তিটা মহাবিশ্বকে নিয়ে আর দ্বিতীয়টা পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি সম্বন্ধে। এখন তৃতীয়টা দেখুন—আমাদের নিজস্ব অদ্বিতীয়ত্ব। অনেক দিক দিয়েই মানুষ অদ্বিতীয় আর আপনিও অদ্বিতীয়। কীভাবে? আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন যে একটা শক্তিশালী কমপিউটারকে মস্তিষ্কের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো দেখায় যে এই তুলনা পুরোপুরি ঠিক নয়। ম্যাসাচুসেটস্ প্রযুক্তিবদ্যা প্রতিষ্ঠানের একজন বিজ্ঞানী বলেছিলেন: “আজকের কমপিউটারগুলোর এমনকি চার বছরের একজন শিশুর মতো দেখার, কথা বলার, হাঁটার কিংবা সাধারণ জ্ঞান কাজে লাগানোর ক্ষমতাও নেই। . . . হিসাব করে দেখা গেছে যে সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কমপিউটারের তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা একটা শামুকের স্নায়ুতন্ত্রের সমান—[আপনার] মস্তিষ্কে যে পরিমাণ শক্তি রয়েছে তার এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিমাণ সুপার কমপিউটারে পাওয়া যায়।”
১৬. আপনার ভাষা জানার ক্ষমতা কী ইঙ্গিত করে?
১৬ আপনি ভাষা জানেন আর সেই ক্ষমতা আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে দেয়। যদিও কেউ কেউ দুটো, তিনটে বা তারও বেশি ভাষায় কথা বলতে পারেন কিন্তু শুধু একটা ভাষায় কথা বলতে পারাই আমাদেরকে অদ্বিতীয় করে তোলে। (যিশাইয় ৩৬:১১; প্রেরিত ২১:৩৭-৪০) অধ্যাপক আর. এস. এবং ডি. এইচ, ফৌটস্ প্রশ্ন করেছিলেন: “শুধু কি মানুষই . . . ভাষার মাধ্যমে কথাবার্তা বলতে পারে? . . . আমরা জানি সমস্ত উন্নত প্রাণীই একে অন্যের সঙ্গে ভাববিনিময় করে . . . আর তারা অঙ্গভঙ্গি, ঘ্রাণ, চিৎকার, তাদের বৈশিষ্ট্যগত ডাক ও গানের মাধ্যমে তা করে থাকে আর মৌমাছিরা এমনকি নেচে নেচে তা করে। তবুও মানুষ ছাড়া অন্য আর কোন প্রাণীকে সাজানো গোছানো ব্যাকরণগত ভাষায় কথা বলতে দেখা যায় না। আরও লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল পশুপাখিরা ছবি আঁকতে পারে না। বড়জোর তারা হিজিবিজি কাটতে পারে।” শুধু মানুষই কথা বলার ও অর্থপূর্ণ ছবি আঁকার জন্য মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পারে।—যিশাইয় ৮:১; ৩০:৮; লূক ১:৩ পদগুলোর সঙ্গে তুলনা করুন।
১৭. পশুপাখির আয়না দেখা এবং মানুষের আয়না দেখার মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
১৭ এছাড়াও আপনি আত্মসচেতন; আপনি নিজের ব্যাপারে সতর্ক। (হিতোপদেশ ১৪:১০) আপনি কি কোন পাখি, কুকুর বা বিড়ালকে আয়না দেখে আঘাত করতে, গর্জন করতে বা আক্রমণ করতে দেখেছেন? সে মনে করে যে সে অন্য কোন প্রাণীকে দেখছে অথচ সে নিজেকেই চিনতে পারে না। অন্য দিকে, আপনি যখন আয়নার দিকে তাকান তখন নিজেকে চিনতে পারেন। (যাকোব ১:২৩, ২৪) আপনি হয়তো নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন কিংবা চিন্তা করেন যে কয়েক বছর পর আপনাকে কেমন দেখাবে। কোন পশুপাখিই সেইরকম করে না। হ্যাঁ, আপনার মস্তিষ্কই আপনাকে অদ্বিতীয় করে তোলে। এই সমস্ত কৃতিত্ব কার কাছে যায়? ঈশ্বর থেকে যদি না হয়ে থাকে, তাহলে আপনার মস্তিষ্কের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে?
১৮. কোন্ মানসিক ক্ষমতা আপনাকে পশুপাখির চেয়ে আলাদা করে?
১৮ আপনার মস্তিষ্ক থাকায় আপনি শিল্পকলা ও সংগীতের মর্ম বুঝতে পারেন এবং মস্তিষ্ক আপনাকে এক নীতিবোধ দেয়। (যাত্রাপুস্তক ১৫:২০; বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৩৪; ১ রাজাবলি ৬:১, ২৯-৩৫; মথি ১১:১৬, ১৭) কেন শুধু আপনিই পারেন কিন্তু পশুপাখিরা পারে না? পশুপাখিরা মূলত তাদের জরুরি চাহিদাগুলো পূরণের জন্য তাদের মস্তিষ্ক কাজে লাগায় যেমন, খাদ্য সংগ্রহ করা, সাথি খোঁজা অথবা একটা বাসা তৈরি করা। মানুষই কেবল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে পারে। কেউ কেউ এমনকি এও চিন্তা করে যে তাদের কাজ কীভাবে পরিবেশকে অথবা ভবিষ্যতে তাদের বংশধরদের প্রভাবিত করবে। কেন? উপদেশক ৩:১১ পদ মানুষদের সম্বন্ধে বলে: “[সৃষ্টিকর্তা] . . . তাহাদের হৃদয়মধ্যে চিরকাল রাখিয়াছেন।” চিরকালের অর্থ চিন্তা করার কিংবা অনন্ত জীবন সম্বন্ধে কল্পনা করার যে ক্ষমতা আপনার আছে তা সত্যিই অসাধারণ।
অর্থপূর্ণ করে তোলার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে সুযোগ দিন
১৯. অন্যদেরকে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে চিন্তা করতে সাহায্য করার জন্য কোন্ তিনটে প্রশ্ন আপনি ব্যবহার করতে পারেন?
১৯ আমরা শুধু তিনটে দিক নিয়ে কথা বলেছি: বিশাল মহাবিশ্বের যে যথার্থতা দেখা যায়, পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি এবং বিভিন্ন ক্ষমতা সহ মানব মস্তিষ্কের অনস্বীকার্য অদ্বিতীয়ত্ব। কেন এগুলো আলোচনা করা হল? অন্যদেরকে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করার জন্য আপনি এই যুক্তিগুলো ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন: মহাবিশ্বের কি কোন শুরু ছিল? বেশিরভাগ লোকই স্বীকার করবেন যে মহাবিশ্বের শুরু ছিল। তারপর জিজ্ঞাসা করুন: সেই শুরু কি আপনাআপনিই হয়েছিল নাকি তা করা হয়েছিল? বেশিরভাগ লোকই স্বীকার করবেন যে তা করা হয়েছিল। এটাই শেষ প্রশ্নে নিয়ে যায়: তাহলে সেই শুরু কি কোন চিরন্তন শক্তি বা অনন্তকালীন কোন ব্যক্তি করেছিলেন? যে বিষয়গুলো স্পষ্ট ও যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে তা অনেককে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে: একজন সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আছেন! যদি তাই হয়, তাহলে জীবনকে কি অর্থপূর্ণ করা যায় না?
২০, ২১. জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে সৃষ্টিকর্তাকে জানা কেন জরুরি?
২০ আমাদের জীবনের সবকিছু, যার মধ্যে রয়েছে আমাদের নীতিজ্ঞান এবং নৈতিকতা, সেগুলো অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়া উচিত। ডা. রোলো মে একবার লিখেছিলেন: “শুধুমাত্র জীবনের আসল অর্থের উপরে ভিত্তি করেই নৈতিকতা গড়ে ওঠে।” সেটা কোথায় পাওয়া যাবে? তিনি বলে চলেন: “নৈতিকতার আসল ভিত্তি হল ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য। ঈশ্বরের নীতিগুলো হল সেই নীতি যেগুলো সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনকে গড়ে তোলে।”
২১ তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে কেন গীতরচক সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করার সময় নম্রতা ও প্রজ্ঞা দেখিয়েছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও। তোমার সত্যে আমাকে চালাও, আমাকে শিক্ষা দেও, কেননা তুমিই আমার ত্রাণেশ্বর।” (গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫) গীতরচক সৃষ্টিকর্তাকে যত ভালভাবে জেনেছিলেন তার জীবনে নিশ্চয়ই আরও বেশি অর্থ, উদ্দেশ্য ও প্রেরণা খুঁজে পেয়েছিলেন। আমাদের সকলের বেলায়ই এই একই বিষয় হতে পারে।—যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৩.
২২. সৃষ্টিকর্তার পথগুলো জানার সঙ্গে কী জড়িত?
২২ সৃষ্টিকর্তার “পথ সকল” জানা বোঝায় যে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও তাঁর ব্যবহারকে আরও ভালভাবে জানা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যেহেতু অদৃশ্য এবং খুবই শক্তিশালী তাই কীভাবে আমরা তাঁকে আরও ভাল করে জানতে পারি? পরের প্রবন্ধে এটা আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকাগুলো]
a নাৎসী কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অভিজ্ঞতাগুলো থেকে ডা. ভিক্টর ই. ফ্র্যাঙ্কেল বুঝতে পেরেছিলেন: “জীবনের অর্থ খোঁজা মানুষের এক সচেতন চেষ্টা, পশু পাখিদের মতো সহজাত প্রবৃত্তির তাড়নায় তা ‘গৌণ’ প্রচেষ্টা নয়।” তিনি আরও বলেছিলেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশ কিছু বছর পর ফ্রান্সে করা একটা সমীক্ষায় “দেখা গিয়েছিল যে ৮৯ শতাংশ লোক স্বীকার করেছিলেন, মানুষের ‘এমন কিছু’ দরকার যার জন্য সে বেঁচে থাকবে।”
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
◻ আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে কেন আমাদের শুধু বৈজ্ঞানিক তথ্যের চেয়েও আরও বেশি কিছু জানা দরকার?
◻ অন্যদেরকে সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করার জন্য আপনি কোন্ বিষয়গুলোর কথা বলবেন?
◻ সৃষ্টিকর্তাকে জানা কেন জীবনে সন্তোষজনক অর্থ পাওয়ার এক চাবি?
[১৮ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম/চিত্র]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
আপনার কী মনে হয়?
আমাদের মহাবিশ্ব
↓ ↓
কোন শুরু শুরু
ছিল না ছিল
↓ ↓
আপনাআপনিই হয়েছিল তা করা হয়েছিল
↓ ↓
চিরন্তন কোন অনন্তকালীন কোন
শক্তি ব্যক্তি করেছিলেন
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
মহাবিশ্বের বিশালতা ও যথার্থতা অনেককে সৃষ্টিকর্তার বিষয় চিন্তা করিয়েছে
[সজন্যে]
পৃষ্ঠা১৫ এবং ১৮: Jeff Hester (Arizona State University) and NASA