ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ৭/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭
  • চরম অভাব থেকে ধনের প্রাচুর্য

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • চরম অভাব থেকে ধনের প্রাচুর্য
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আরও ভাল কিছুর খোঁজে
  • বাইবেলের আশায় রোমাঞ্চিত
  • আতিথেয়তা দেখিয়ে উপকৃত হওয়া
  • তাড়না সহ্য করা
  • ধনের প্রাচুর্য উপভোগ করা
  • আমরা অনেক উপায়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছি
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • যিহোবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করা আশীর্বাদ নিয়ে আসে
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার সেবায় বিস্ময়ে ভরা এক জীবন
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ৭/১ পৃষ্ঠা ২৩-২৭

চরম অভাব থেকে ধনের প্রাচুর্য

ম্যানুয়েল ডে জেজাস আলমেইডা দ্বারা কথিত

১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে আমার জন্ম হয়, আমি ছিলাম আমাদের ১৭ জন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। আমার নয় জন দাদা-দিদি অসুখ ও অপুষ্টিতে ভুগে মারা গিয়েছে, তাই তাদের সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না। আমরা বাকি আটজন ভাইবোন বাবামায়ের সঙ্গে পর্তুগালের, পর্তুর কাছেই একটা ছোট্ট গাঁয়ে থাকতাম।

আমাদের ছোট্ট বাসায় শুধু একটা বসার ঘর ও একটা থাকার ঘর ছিল। প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে একটা কুয়ো থেকে খাবার জল তুলে আনতে হতো আর আমাদের রান্নার কাজের জন্য আমরা কাঁচা জল ব্যবহার করতাম।

আমার দাদারা একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভুট্টার খেতে কাজ করতে শুরু করে। তাদের আয়ের জন্য পরিবারে দুমুঠো খাবার জুটতো। তাদের জন্যই ভাইবোনদের মধ্যে শুধু আমিই স্কুলের মুখ দেখতে পেয়েছিলাম। আমাদের জীবন যদিও কষ্টে ভরা ছিল তবুও, আমরা ক্যাথলিক গির্জার প্রতি খুবই অনুরাগী ছিলাম এই আশা নিয়ে যে এখানে থাকলে কোন না কোন দিন আমাদের জীবনের অভাব ঘুচবে।

মে মাসে, গির্জায় নভেনা নামে একটা অনুষ্ঠান হতো। এই সময়ে পরপর নয় দিন ধরে, আমরা ভোররাতে উঠে অন্ধকার থাকতে থাকতেই হেঁটে হেঁটে গির্জায় যেতাম। সেখানে গিয়ে এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা প্রার্থনা করতাম যে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা শুনে আশীর্বাদ করবেন। এছাড়াও আমরা ভাবতাম যে যাজকেরা পবিত্র ব্যক্তি কারণ ঈশ্বর তাদের পাঠিয়েছেন। কিন্তু, ধীরে ধীরে আমাদের চিন্তাধারা বদলে যায়।

আরও ভাল কিছুর খোঁজে

আমরা যখন গির্জার কর দিতে পারতাম না, তখন যাজক আমাদের এত সংকটময় অবস্থার জন্য কোন সহানুভূতি দেখাতেন না বা গরিব বলে রেহাই দিতেন না। এটাই আমাদের মনকে ভেঙে দেয়। গির্জার সম্বন্ধে আমার ধারণা একেবারে বদলে যায় আর তাই ১৮ বছর বয়সে আমি এই খোঁজে ঘর ছাড়ি যে খেতে কাজ করা ও গির্জার সঙ্গে ঝগড়া করা ছাড়া জীবনে আরও ভাল কিছু আছে কি না। ১৯৩৬ সালে আমি পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আসি।

সেখানে এডমিনিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি যদিও মনে করতাম যে ধর্ম আমাকে ধোকা দিয়েছে তবুও, আমরা রীতি অনুসারে ক্যাথলিক গির্জায় গিয়ে বিয়ে করি। তারপর ১৯৩৯ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের সময়, আমি অস্ত্রাগারের ১৮টা গুদাম দেখাশোনা করতাম আর দিনে আমাদেরকে ১২৫টা পর্যন্ত ট্রাক বোঝাই করে যুদ্ধের সরঞ্জামাদি পাঠাতে হতো।

যুদ্ধের আতঙ্ক আর সেইসঙ্গে এতে ক্যাথলিক গির্জার সক্রিয় ভূমিকা দেখে আমার মন আরও ভেঙে যায়। আমি মনে মনে ভাবতাম, ‘ঈশ্বর কি সত্যিই মানুষের জন্য চিন্তা করেন? তাঁকে আমাদের কীভাবে উপাসনা করা উচিত?’ কয়েক বছর পর, ১৯৫৪ সালে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, যিনি একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন, তার সঙ্গে আমার ওই প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা হয়। এই কথাবার্তা আমার জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল।

বাইবেলের আশায় রোমাঞ্চিত

জশুয়া নামে সেই সদয় ব্যক্তি আমাকে বুঝিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্যই হল জগতের সমস্ত সমস্যার একমাত্র সমাধান আর একমাত্র এই রাজত্বের মাধ্যমেই শান্তি ও নিরাপত্তা আসবে। (মথি ৬:৯, ১০; ২৪:১৪) তিনি যা বলেছিলেন তা শুনে আমার ভাল লেগেছিল কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে আমার আগের অভিজ্ঞতার কারণে তার কথা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। তিনি যখন আমার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে চান, আমি তখন এই শর্তে রাজি হই যে তিনি আমার কাছে কোন টাকা-পয়সা চাইতে আর আমার সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে কোনরকম কথা বলতে পারবেন না। তিনি রাজি হন আর আমাকে বলেন যে তিনি বিনা পয়সায় আমাকে বাইবেল শেখাবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭.

জশুয়ার ওপর আমার বিশ্বাস খুব তাড়াতাড়িই বেড়ে যায়। তাই আমি তার কাছে একটা জিনিস চাই যা আমার ছেলেবেলা থেকে পাওয়ার খুব আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমি বলি যে “আমার নিজের জন্য কি একটা বাইবেল পাওয়া যাবে?” সেটা হাতে পাওয়ার পর আমি যে কী খুশিই হয়েছিলাম যখন আমি সেখান থেকে প্রথমবারের মতো আমাদের সৃষ্টিকর্তার নিজের বাক্যে এই প্রতিজ্ঞাটা পড়ি: “ঈশ্বর আপনি [মানবজাতির] সঙ্গে থাকিবেন; . . . আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল”!—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

বিশেষ করে, দারিদ্র্য ও অসুস্থতা দূর হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাইবেলের এই প্রতিজ্ঞাটা পড়ে আমি সান্ত্বনা পেয়েছিলাম। বিশ্বস্ত ব্যক্তি, ইলীহূ ঈশ্বর সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনি প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপন্ন করেন।” (ইয়োব ৩৬:৩১) আর বাইবেল জানায় যে ঈশ্বরের ধার্মিক রাজত্বের সময়ে, “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) সত্যিই যিহোবা ঈশ্বর মানুষদের কতই না ভালবাসেন! তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো জানার জন্য আমার ইচ্ছা আরও অনেকখানি বেড়ে যায়!

১৯৫৪ সালের ১৭ই এপ্রিল, আমি প্রথম যিহোবার সাক্ষিদের সভায় যাই। এটা ছিল একটা বিশেষ সভা—খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা। এর পর থেকে আমি সব সভায় প্রায় নিয়মিত আসতে থাকি। শীঘ্রই আমি বাইবেল থেকে যা কিছু শিখছিলাম সেই উত্তম বিষয়গুলো অন্যদের কাছে বলতে শুরু করি। পর্তুগালে ওই দিনগুলোতে, আমরা প্রতি মাসে সমুদ্রের ধারে বনভোজন করতাম তারপর সেখানে আমাদের বাপ্তিস্ম দেওয়া হতো। জশুয়ার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হওয়ার সাত মাস পরে, আমি নিজেকে যিহোবা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করি আর এই মহাসাগরের জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে তা লোকেদের সামনে প্রকাশ করি।

১৯৫৪ সালের শুরুর দিকে পুরো পর্তুগালে প্রায় একশ জনের মতো সাক্ষি ছিলেন। সেইজন্য প্রচার কাজে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য লোকেদের অনেক দরকার হয়। আমি খুব তাড়াতাড়ি আধ্যাত্মিকতায় এগোতে থাকি আর শীঘ্রই আমাকে মণ্ডলীর মধ্যে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে, লিসবনে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বিতীয় মণ্ডলীতে আমাকে মণ্ডলীর দাস হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন পরিচালক অধ্যক্ষকে ওই নামে ডাকা হতো। আজকে, এখানে ও এর আশেপাশের জায়গাগুলোতে একশরও বেশি মণ্ডলী রয়েছে।

আতিথেয়তা দেখিয়ে উপকৃত হওয়া

এডমিনিয়া ও আমার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল না হলেও, খ্রীষ্টান ভাইদের জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা থাকত। ১৯৫৫ সালে একজন অগ্রগামী অর্থাৎ যিহোবার সাক্ষিদের পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারককে, “বিজয়ী রাজ্য” নামে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তার বাড়ি ব্রাজিল থেকে জার্মানিতে যাওয়ার পথে পর্তুগালে থামতে হয়েছিল। যানবাহন ব্যবস্থার সমস্যার কারণে, তিনি এক মাস আমাদের বাসায় ছিলেন আর তিনি আমাদের সঙ্গে থাকায় আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমরা কতই না উপকৃত হয়েছি!

সেই সময় আমাদের ঘরে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে নিউ ইয়র্কের, ব্রুকলিনে অবস্থিত যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন, যেমন হুগও রেইমার ও চার্লস্‌ ইকার যিনি তার সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন। তারা আমাদের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন ও পর্তুগিজ ভাইদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সদ্য ডিম ফুটে বের হওয়া মুরগির বাচ্চারা যেমন খাবারের জন্য হাঁ করে থাকে, ঠিক সেইরকম আমরাও এই ভাইদের কাছ থেকে সুস্বাদু আধ্যাত্মিক খাদ্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম।

যিহোবার সাক্ষিদের ভ্রমণ অধ্যক্ষরাও পরিদর্শনের সময় আমাদের বাসাতেই থাকতেন। ১৯৫৭ সালে মরক্কোর শাখা অধ্যক্ষ, অ্যালভারু বেরেকোচিয়া যখন ভাইদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য পর্তুগালে এসেছিলেন, তখন তিনি আমাদের অতিথি হয়েছিলেন আর তার সঙ্গে কাটানো সেই দিনগুলোর কথা আমরা কখনও ভুলব না। তিনি আমাদের ঘরে বুকস্টাডিতে যোগ দিয়েছিলেন আর আমরা তাকে জোর করে পর্তুগালের তার বাকি সময়টা আমাদের সঙ্গে থাকতে বলেছিলাম। তিনি প্রায় এক মাস আমাদের সঙ্গে ছিলেন আর এই দীর্ঘ সময়ে আমরা অনেক আশীর্বাদ পেয়েছি, বলা যায় যে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছি আর অন্যদিকে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী এডমিনিয়ার হাতের সুস্বাদু রান্না খেয়ে অ্যালভারুর ওজন বেড়ে যায়।

ছেলেবেলায় আমি যেরকম চরম অভাব ভোগ করেছি, তা একজন ব্যক্তির ওপর গভীর ছাপ রেখে যেতে পারে। কিন্তু, আমি জেনেছি যে আমরা যিহোবা ও তাঁর বিশ্বস্ত দাসেদেরকে যত বেশি দেব, তত বেশি তিনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন। যখনই আমরা আমাদের সাধ্য মতো আতিথেয়তা দেখিয়েছি, তখনই আমি এই সত্যি কথাটা বার বার অনুভব করেছি।

১৯৫৫ সালে পর্তুতে আমাদের সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছিল যে ১৯৫৮ সালে নিউ ইয়র্ক শহরের ইয়াংকি স্টেডিয়ামে যিহোবার সাক্ষিদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেই সময় খুব অল্প কিংডম হল থাকায় সব কিংডম হলে একটা করে দান বাক্স রাখা হয়েছিল যাতে করে কিছুজন পর্তুগিজ ভাইবোনদের সেই সম্মেলনে পাঠানোর খরচ মেটানো যেতে পারে। আপনি কি আমাদের আনন্দটা কল্পনা করতে পারেন যখন সম্মেলনে পাঠানোর জন্য ওই ভাইবোনদের মাঝে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে বাছা হয়েছিল? সেটা কী এক আনন্দই না ছিল যখন আমরা সম্মেলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ব্রুকলিনে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বের প্রধান কার্যালয় ঘুরে দেখেছি!

তাড়না সহ্য করা

১৯৬২ সালে পর্তুগালে যিহোবার সাক্ষিদের প্রচার কাজ নিষিদ্ধ করা হয়, ফলে এরিক ব্রিটেন, ডমেনিক পিকোনি, এরিক বেভারিজ ও তাদের স্ত্রীদের আর সেইসঙ্গে কয়েকজন মিশনারিকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর, আমাদেরকে আর কিংডম হলে সভা করতে দেওয়া হয়নি, তাই আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের নিজেদের ঘরে সভা করতাম; এমনকি পর্তুগালে বিরাট সম্মেলনও আর করা সম্ভব হয়নি। সেইজন্য আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা সম্মেলন করার জন্য অন্য দেশে যেতেন আর তাদের যাওয়া-আসার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার দায়িত্বটা আমাকে নিতে হয়েছিল।

বিরাট সংখ্যক সাক্ষিদের নিয়ে অন্য দেশে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করাটা সহজ ছিল না। কিন্তু, এই কষ্টের পিছনে ফলও ভাল হয়েছিল কারণ পর্তুগিজ ভাইয়েরা অপূর্ব আধ্যাত্মিক উপকার লাভ করেছিলেন। সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ইতালি ও ফ্রান্সের সম্মেলনগুলোতে যোগ দেওয়া তাদের জন্য কতই না আনন্দের বিষয় ছিল! এছাড়াও ওই সম্মেলনগুলো থেকে তারা সোসাইটির সাহিত্যাদি নিজেদের দেশে নিয়ে আসার সুযোগও পেয়েছিলেন। ওই বছরগুলোতে, আমরা পর্তুগালে যিহোবার সাক্ষিদেরকে একটা ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে রেজিস্ট্রি করার জন্য অনেকবার আবেদন দাখিল করেছি কিন্তু সমস্ত আবেদন নাকচ করা হয়েছিল।

১৯৬২ সালের শুরুর দিকে, মিশনারিদের বের করে দেওয়ার পর ছদ্মবেশী পুলিশ আমাদের প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। আমাদের অনেক ভাইবোনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কিছু ঘটনার রিপোটগুলো এই পত্রিকা ও সেইসঙ্গে সচেতন থাক!a নামক এরই সাথি পত্রিকায় প্রাকাশিত হয়েছে।

প্রচার কাজের জন্য যারা কারাবদ্ধ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন অগ্রগামী ছিলেন যাকে আমি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার জানিয়েছিলাম। যেহেতু পুলিশ তার সব জিনিস-পত্রের মধ্যে আমার ঠিকানা পেয়েছিলেন তাই আমাকেও জেরা করার জন্য ডাকা হয়েছিল।

পরে, দুজন পুলিশ কর্মকর্তা আমার বাসায় আসেন। তারা আমার বাইবেল অধ্যয়নের সহায়ক বইপত্র ও সেইসঙ্গে ১৩টা বাইবেল বাজেয়াপ্ত করেন। তারা আমাকে হয়রানি করতে থাকেন আর মোট সাতবার আমাদের বাড়িঘর তল্লাশির জন্য ঘুরে ফিরে আসেন। প্রতিবারেই, তারা আমাদের একগাদা করে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেন।

আদালতে বিভিন্ন মামলায় খ্রীষ্টান সাক্ষি ভাইবোনদের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আমাকে অনেকবার ডাকা হয়েছিল। আমি যদিও বেশি লেখাপড়া জানতাম না তবুও, যিহোবা আমাকে ‘বিজ্ঞতা দিয়েছেন যাতে, . . . বিপক্ষেরা কেহ প্রতিরোধ করিতে কি উত্তর দিতে না পারে।’ (লূক ২১:১৫) একবার বিচারক আমার সাক্ষ্য শুনে এতই বিস্মিত হয়েছিলেন যে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কত দূর লেখা-পড়া করেছি। আমি যখন তাদের বলি যে আমি মাত্র চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি তখন আদালতে উপস্থিত অন্য সবাই হেসে দিয়েছিলেন।

তাড়না যতই বাড়তে থাকে, ততই লোকেরা রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন। এইভাবে, পর্তুগালে ১৯৬২ সালে যেখানে সাক্ষিদের সংখ্যা ১৩০০ জনেরও কম ছিল সেখানে এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ১৯৭৪ সালের মধ্যে ১৩,০০০ জনেরও বেশিতে দাঁড়ায়! এরই মধ্যে, ১৯৬৭ সালের মে মাসে, আমাকে ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ দেওয়া হয়। আমি যিহোবার সাক্ষিদের বিভিন্ন মণ্ডলীতে গিয়ে ভাইদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার কাজ করতাম।

ধনের প্রাচুর্য উপভোগ করা

১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, পর্তুগালে যিহোবার সাক্ষিদের কাজকে বৈধ করার জন্য রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে সাহায্য করার সুযোগ পেয়েছিলাম। পরের বছরে আমার স্ত্রী ও আমি ইস্টোরিলে যিহোবার সাক্ষিদের বেথেল পরিবারের সদস্য হই। এছাড়াও আমি পর্তুগাল শাখা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে কাজ করার জন্য নিযুক্ত হই।

পর্তুগালে আর সেইসঙ্গে আমাদের শাখার অধীনে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রচার কাজে বৃদ্ধি দেখা কী যে আনন্দ! এইগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাঞ্জোলা, অ্যাজোরেস, কেইপ ভারডে, ম্যাডেইরা আর সাঁও টোমা ও প্রিনসেপে। কয়েক বছর ধরে পর্তুগাল থেকে অনেক মিশনারিদের এই দেশগুলোতে সেবা করার জন্য পাঠাতে দেখা সত্যিই রোমাঞ্চকর, যেখানে রাজ্যের বার্তার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখা গিয়েছে। এখন এই জায়গাগুলোতে ৮৮,০০০ জনেরও বেশি আর সেইসঙ্গে পর্তুগালে ৪৭,০০০ জনেরও বেশি রাজ্যের ঘোষণাকারী থাকায় আমাদের কী যে আনন্দ হচ্ছে তা একবার ভেবে দেখুন! ১৯৯৮ সালে এই দেশগুলোতে স্মরণার্থক সভায় সবোর্চ্চ উপস্থিত সংখ্যা ছিল ২,৪৫,০০০ জন আর ১৯৫৪ সালে আমি যখন একজন সাক্ষি হয়েছিলাম তখন তা ছিল ২০০ জনেরও কম।

এডমিনিয়া ও আমি সম্পূর্ণ হৃদয়ে বাইবেলের গীতরচকের সঙ্গে একই কথা বলি, যিনি বলেছিলেন যে “তোমার [যিহোবার] প্রাঙ্গণে এক দিনও সহস্র দিন অপেক্ষা উত্তম।” (গীতসংহিতা ৮৪:১০) আমি যখন আমার অতীতের সেই গরিব অবস্থার কথা ভাবি আর এই প্রচুর আধ্যাত্মিক ধন যা আমি এই পর্যন্ত পেয়েছি এর সঙ্গে তুলনা করি, তখন আমারও ভাববাদী যিশাইয়ের মতো মনে হয়: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমার ঈশ্বর; আমি তোমার প্রতিষ্ঠা করিব, তোমার নামের প্রশংসা করিব; কেননা তুমি আশ্চর্য্য কার্য্য করিয়াছ; . . . কেননা তুমি দরিদ্রের দৃঢ় দুর্গ, সঙ্কটে দীনহীনের দৃঢ় দুর্গ ঝটিকানিবারক আশ্রয়।”—যিশাইয় ২৫:১, ৪.

[পাদটীকাগুলো]

a ১৯৬৪ সালের ২২শে মে সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরেজি) এর ৮-১৬ পৃষ্ঠা এবং ১৯৬৬ সালের ১লা অক্টোবর সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ৫৮১-৯২ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

উপরে: লিসবনে ভাই আলমেইডা সম্মেলনে ঘোষণা করছেন যে ১৯৫৮ সালে নিউ ইর্য়কের সম্মেলনে পর্তুগালের কিছুজন ভাইবোনকে পাঠানো হবে

মাঝখানে: প্যারিসে “পৃথিবীতে শান্তি” আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পরিচর্যা দাসেদের সভা পরিচালনার নমুনা দেখানো হচ্ছে

নিচে: ফ্রান্সের জেলা সম্মেলনে যাওয়ার জন্য ভাড়া করা বাসগুলো তৈরি হচ্ছে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

পর্তুগাল শাখায় সকালের উপাসনা পরিচালনা করা হচ্ছে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৮৮ সালে পর্তুগাল শাখার উৎসর্গীকরণ

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ভাই হুগও রেইমার যখন ব্রুকলিন বেথেল থেকে এসেছিলেন তার দেওয়া বক্তৃতা আমাদেরকে উৎসাহিত করেছিল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্ত্রীর সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার