ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w17 ফেব্রুয়ারি পৃষ্ঠা ১৩-১৭
  • আমরা অনেক উপায়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছি

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আমরা অনেক উপায়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছি
  • প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • বাবার মতো নিরপেক্ষতা বজায় রাখি ও অগ্রগামী সেবা শুরু করি
  • ব্রাজিলে মিশনারি সেবা
  • পোর্তুগালে আমাদের কার্যভার
  • আদালতে সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করা
  • আমরা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের উদাহরণ দেখে উপকৃত হয়েছি
  • চরম অভাব থেকে ধনের প্রাচুর্য
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার সেবায় বিস্ময়ে ভরা এক জীবন
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করা আশীর্বাদ নিয়ে আসে
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • পূর্ণসময়ের পরিচর্যা এটা আমাকে যেখানে নিয়ে এসেছে
    ২০১৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
w17 ফেব্রুয়ারি পৃষ্ঠা ১৩-১৭

জীবনকাহিনি

আমরা অনেক উপায়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছি

বলেছেন ডগলাস গেস্ট

আমার বাবার নাম আর্থার গেস্ট। অল্পবয়স থেকেই তিনি একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন এবং মেথডিস্ট গির্জার যাজক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন বাইবেল ছাত্রদের প্রকাশনা পড়েন ও তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেন, তখন তার সেই পরিকল্পনা বদলে গিয়েছিল। তিনি ১৯১৪ সালে ১৭ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। সেই সময়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তাণ্ডব বৃদ্ধি পাচ্ছিল আর তাকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। তিনি যেহেতু অস্ত্র বহন করতে রাজি হননি, তাই তাকে কানাডার অন্টারিওর কিংস্টন কারাগারে দশ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর, বাবা একজন কলপোর্টার (অগ্রগামী) হিসেবে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছিলেন।

বাবা ১৯২৬ সালে বিয়ে করেন। আমার মায়ের নাম হেজেল উইলকিনসন। আমার দিদিমা ১৯০৮ সালে সত্য শিখেছিলেন। ১৯৩১ সালের ২৪ এপ্রিল আমার জন্ম হয়। আমরা চার ভাই-বোন আর তাদের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমরা পরিবারগতভাবে যিহোবার উপাসনা করতাম। বাইবেলের প্রতি বাবার গভীর সম্মান ছিল আর তিনি আমাদের মধ্যেও ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি এমন উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলেছিলেন, যা সারা জীবন স্থায়ী হয়েছে। আমরা পরিবারগতভাবে নিয়মিত ঘরে ঘরে পরিচর্যায় অংশ নিতাম।—প্রেরিত ২০:২০.

বাবার মতো নিরপেক্ষতা বজায় রাখি ও অগ্রগামী সেবা শুরু করি

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল আর এর পরের বছর কানাডায় যিহোবার সাক্ষিদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বেসরকারি স্কুলগুলোতে দেশাত্মবোধক আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হতো আর সেই সময়ে পতাকা অভিবাদন করা হতো ও জাতীয় সংগীত গাওয়া হতো। আমার দিদি ডরথি ও আমাকে সেই সময়ে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হতো। একদিন আমার শিক্ষক যখন আমাকে কাপুরুষ বলে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তখন আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেই দিন স্কুলের পর কয়েক জন সহপাঠী আমার উপর আক্রমণ করে আর আমাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। কিন্তু সেই আক্রমণ আসলে “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন” করার বিষয়ে আমার সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করেছিল।—প্রেরিত ৫:২৯.

১৯১৮-১৯১৯ সালের দিকে ডগলাস গেস্টর বাবা এবং ১৯২৬ সালে তার বাবা-মা; ডগলাস গেস্ট অগগামী হিসেবে সেবা করছন এবং জনসাধারণের উদশে তার পথম বক্তৃতা দিচ্ছন

১৯৪২ সালের জুলাই মাসে, একটা খামারের জলের ট্যাঙ্কে আমি বাপ্তিস্ম নিই। তখন আমার বয়স ১১ বছর। স্কুলের বাৎসরিক ছুটির সময় আমি একজন অবকাশ অগ্রগামী (বর্তমানে সহায়ক অগ্রগামী) হিসেবে কাজ করতাম। একবার আমি অন্য তিন জন ভাইয়ের সঙ্গে অন্টারিওর উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত কাঠুরিয়াদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলাম, যে-এলাকায় আগে প্রচার করা হয়নি।

১৯৪৯ সালের ১ মে, আমি নিয়মিত অগ্রগামী হই। যেহেতু তখন শাখা অফিসে নির্মাণকাজ চলছিল, তাই আমাকে বেথেলে সাহায্য করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি ১ ডিসেম্বর কানাডার বেথেল পরিবারের একজন সদস্য হই। আমাকে ছাপাখানায় কার্যভার দেওয়া হয় আর আমি সেখানে ফ্ল্যাটবেড মেশিনে ছাপানোর প্রশিক্ষণ পাই। সেই সময়ে একটা ট্র্যাক্টের জন্য আমাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাতের শিফ্‌টে কাজ করতে হয়েছিল। সেই ট্র্যাক্টে কানাডায় যিহোবার সাক্ষিরা যে তাড়নার শিকার হচ্ছিল, সেই বিষয়ে তথ্য ছিল।

পরে, পরিচর্যা বিভাগে কাজ করার সময় আমি এমন অগ্রগামীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, যারা কুইবেকে সেবা করতে যাওয়ার সময় আমাদের শাখা অফিস দেখতে এসেছিলেন। কুইবেকে তখন প্রচণ্ড বিরোধিতা চলছিল। যারা শাখা অফিসে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মেরি জাজুলা। তিনি অ্যালবার্টার এডমনটন থেকে এসেছিলেন। যেহেতু সেই বোন ও তার দাদা জো বাইবেল অধ্যয়ন করা বন্ধ করেননি, তাই তাদের বাবা-মা তাদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তারা অর্থোডক্স গির্জার সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তারা দু-জন ১৯৫১ সালের জুন মাসে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন আর এর ছয় মাস পর অগ্রগামী সেবা শুরু করেছিলেন। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মেরির আধ্যাত্মিক মনোভাব দেখে আমি অভিভূত হই। আমি নিজেকে বলি, ‘সব কিছু যদি ঠিক মতো হয়, তা হলে আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করব।’ এর নয় মাস পর, ১৯৫৪ সালের ৩০ জানুয়ারি আমরা বিয়ে করি। বিয়ের এক সপ্তাহ পর, সীমার কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় আর এর পরের দু-বছর আমরা অন্টারিওর উত্তরাঞ্চলের একটা সীমায় সেবা করি।

সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে আর তাই মিশনারিদের প্রয়োজন দেখা দেয়। আমরা তখন চিন্তা করি, আমরা যেহেতু কানাডায় শীতের সময় কনকনে ঠাণ্ডা এবং গরমের সময় বিরক্তিকর মশার কামড় সহ্য করতে পারছি, তাই আমরা যেকোনো কার্যভারে গিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যেও টিকে থাকতে পারব। আমরা ১৯৫৬ সালে গিলিয়েড স্কুলের ২৭তম ক্লাস থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করি এবং নভেম্বরের মধ্যে আমাদের নতুন কার্যভারের এলাকায়—ব্রাজিলে—পৌঁছাই।

ব্রাজিলে মিশনারি সেবা

ব্রাজিলের শাখা অফিসে পৌঁছে আমরা পোর্তুগিজ ভাষার সঙ্গে পরিচিত হই। কারো সঙ্গে কথা বলার সাধারণ রীতি শেখার ও পত্রিকা অর্পণ করার জন্য এক মিনিটের একটা উপস্থাপনা মুখস্থ করার পর, আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যায় কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, কোনো গৃহকর্তা আগ্রহ দেখালে আমরা যেন ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে জীবন কেমন হবে, সেই বিষয়ে শাস্ত্রপদ দেখাই। প্রথম দিন ক্ষেত্রের পরিচর্যায় একজন মহিলা মন দিয়ে আমাদের কথা শুনেছিলেন, তাই আমি তাকে প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদ পড়ে শোনাই। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি! আমার শরীর সেখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি আর আমাকে সবসময়ই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করতে হয়েছে।

ডগলাস গেস্ট বেথেলে সেবা করার সময়, তার বিয়ের দিন, ত্রীর সগ গিলিয়েড স্কুলের গ্যাজুয়েশনের সময়, বাজিলে সেবা করার সময় এবং টলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে

আমাদের মিশনারি কার্যভার ছিল ক্যামপস শহরে, যেখানে এখন ১৫টা মণ্ডলী রয়েছে। আমরা যখন এখানে আসি, তখন এই শহরে শুধু একটা বিচ্ছিন্ন দল ও সেইসঙ্গে একটা মিশনারি হোম ছিল। সেই মিশনারি হোমে চার জন বোন ছিলেন: এস্টার ট্রেসি, রামোনা ব্রুয়ের, লুইজা শুভাৎস্‌ এবং লোরেন ব্রুকস্‌ (এখন ওঅলেন)। হোমে আমার কাজ ছিল লন্ড্রিতে সাহায্য করা এবং রান্নার জন্য কাঠ জোগাড় করা। একদিন, সোমবার রাতে আমাদের প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের পর, আমরা এক অপ্রত্যাশিত অতিথির দেখা পাই। সারা দিনের কাজ নিয়ে কথা বলতে বলতে আমার স্ত্রী সোফায় একটু গা এলিয়ে দিয়েছিল। ওঠার সময় সে যখন বালিশ থেকে মাথা তোলে, তখন একটা সাপ বের হয়ে আসে আর আমি সেটাকে মেরে ফেলার আগে পর্যন্ত বেশ হইচই হয়!

এক বছর ধরে পোর্তুগিজ ভাষা শেখার পর, আমাকে একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। আমরা গ্রামাঞ্চলে সাদাসিধে জীবনযাপন করতাম—আমাদের বিদ্যুৎ ছিল না, আমরা মাদুর পেতে ঘুমাতাম আর ঘোড়ায় চড়ে কিংবা ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে ভ্রমণ করতাম। আগে প্রচার করা হয়নি এমন একটা এলাকায় প্রচার অভিযান করার সময়, আমরা একবার ট্রেনে করে পাহাড়ি একটা শহরে গিয়েছিলাম আর সেখানে একটা গেস্ট হাউসে রুম ভাড়া করে থেকেছিলাম। পরিচর্যায় ব্যবহার করার জন্য শাখা অফিস ৮০০ পত্রিকা পাঠিয়েছিল। আমাদের বেশ কয়েক বার পোস্ট অফিসে গিয়ে সেইসমস্ত পত্রিকার বাক্স বহন করে গেস্ট হাউসে নিয়ে আসতে হয়েছিল।

১৯৬২ সালে পুরো ব্রাজিলজুড়ে ভাইদের ও মিশনারি বোনদের জন্য রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছয় মাস ধরে আমাকে একের পর এক স্কুলে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, তবে মেরি আমার সঙ্গে যেতে পারেনি। আমি মানাউস, বেলেম, ফোরতালিজা, রেসিফি ও সালভাদর শহরে ক্লাস নিয়েছি। আমাকে মানাউসের একটা বিখ্যাত অপেরা হাউসে জেলা সম্মেলনের আয়োজন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রবল বৃষ্টির কারণে খাবার জলের বেশিরভাগই দূষিত হয়ে পড়েছিল আর আমরা সম্মেলনস্থলে কোনো উপযুক্ত ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। (সেই সময়ে সম্মেলনে খাবার পরিবেশন করা হতো।) আমি তখন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। একজন সদয় কর্মকর্তা সানন্দে পুরো সম্মেলনের জন্য খাবার জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং বড়ো বড়ো দুটো তাঁবু খাটিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েক জন সৈনিক পাঠিয়েছিলেন, যাতে আমরা রান্নাঘর ও ক্যান্টিন হিসেবে সেগুলো ব্যবহার করতে পারি।

আমি যখন দূরে ছিলাম, তখন মেরি পোর্তুগিজ ভাষার একটা বাণিজ্যিক এলাকায় সাক্ষ্য দিয়েছিল আর সেই এলাকার লোকেদের একমাত্র আগ্রহের বিষয় ছিল, টাকা রোজগার করা। মেরি কারো সঙ্গেই বাইবেল আলোচনা শুরু করতে পারেনি, তাই সে কয়েক জন বেথেলাইটকে বলেছিল, “পৃথিবীর মধ্যে সর্বশেষ যে-দেশে আমি বাস করতে চাইব, তা হল পোর্তুগাল।” আশ্চর্য এক ঘটনা ঘটে! এর অল্পসময় পরেই আমরা একটা চিঠি পাই, যে-চিঠিতে আমাদের পোর্তুগালে গিয়ে সেবা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন সেখানে আমাদের প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল আর মেরির প্রাথমিক বিস্ময় সত্ত্বেও আমরা সেই কার্যভার গ্রহণ করি।

পোর্তুগালে আমাদের কার্যভার

আমরা ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে পোর্তুগালের লিসবনে এসে পৌঁছাই। আমাদের ভাই-বোনেরা পোর্তুগালের গোয়েন্দা পুলিশ (পিআইডিই)-এর তাড়নার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এই কারণে, সেখানে পৌঁছানোর পর আমাদের অভ্যর্থনা জানানো হয়নি আর আমরা স্থানীয় সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলেছিলাম। সেখানে থাকার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাভের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা গেস্ট হাউসে থেকেছিলাম। ভিসা পাওয়ার পর, আমরা একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলাম। অবশেষে ১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে আমরা শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পাঁচ মাস পর প্রথম সভাতে যোগ দিতে পেরে আমরা কতই-না আনন্দিত হয়েছিলাম!

আমরা জানতে পেরেছিলাম, পুলিশেরা প্রতিদিন আমাদের ভাই-বোনদের ঘরে আচমকা হানা দিত। কিংডম হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মণ্ডলীর সভা ব্যক্তিগত বাড়িতে করা হতো। এর ফলে শত শত সাক্ষিকে নিজেদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও পুলিশি তদন্তের জন্য পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছিল। বিশেষভাবে ভাইদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হতো, যাতে তাদের কাছ থেকে সেই ভাইদের নাম বের করা যায়, যারা সভা পরিচালনা করেন। তাই, ভাইয়েরা একে অন্যকে তাদের পদবি নয় বরং শুধু নাম দিয়ে চেনার অভ্যাস করেছিল যেমন, ঝুজে অথবা পাউলু। আমরাও একই কাজ করেছিলাম।

ডগলাস গেস্ট ১৯৬৪ সালে পোর্তুগালে, ১৯৬৬ সালে আদালতে একটা মামলা চলাকালীন, ১৯৭৪ সালে ভাই-বোনদের এক সমাবেশে এবং তার ত্রী মেরি গেস্টর সগ

আমাদের ভাই-বোনদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানো ছিল প্রধান চিন্তার বিষয়। মেরির কার্যভার ছিল স্টেনসিলের উপর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার অধ্যয়ন প্রবন্ধ ও অন্যান্য প্রকাশনা টাইপ করা। মিমিওগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে প্রকাশনার প্রতিলিপি তৈরি করার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা হতো।

আদালতে সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করা

১৯৬৬ সালের জুন মাসে, লিসবনে একটা অসাধারণ মামলা উপস্থাপন করা হয়েছিল। একটা ব্যক্তিগত বাড়িতে অবৈধ সভায় যোগ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করে ফেইজু মণ্ডলীর ৪৯ জন সদস্যের সবাইকে বিচার করা হয়েছিল। আমি সরকারি উকিলের মতো অভিনয় করে তাদের বিচার ও জেরার জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। আমরা জানতাম, আমরা সেই মামলায় হেরে যাব, তবে এর ফলে যে-ব্যাপক সাক্ষ্যদান করা হবে, তা আমরা উপলব্ধি করেছিলাম। আমাদের উকিল আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য সাহসের সঙ্গে প্রথম শতাব্দীতে গমলীয়েলের বলা কথাগুলো উদ্ধৃত করেছিলেন। (প্রেরিত ৫:৩৩-৩৯) এই মামলা নিয়ে সংবাদপত্রে হইচই পড়ে গিয়েছিল আর ৪৯ জন ভাই ও বোনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। সর্বনিম্ন ৪৫ দিন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ মাস পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা আনন্দিত যে, আমাদের সাহসী উকিল বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন আর তিনি মারা যাওয়ার আগে আমাদের সভাগুলোতেও যোগ দিতে শুরু করেছিলেন।

১৯৬৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাকে শাখা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল আর আমাকে আইনি বিষয়গুলো দেখাশোনা করার জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়েছিল। যিহোবার সাক্ষিদের উপাসনা করার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্ভরযোগ্য নথিপত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। (ফিলি. ১:৭) অবশেষে ১৯৭৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমরা বৈধ স্বীকৃতি লাভ করেছিলাম। বিশ্বপ্রধান কার্যালয় থেকে ভাই নেথেন নর ও ফ্রেডরিক ফ্রাঞ্জ, পোর্তুগাল পরিদর্শন করতে এসেছিলেন এবং ওপরতু ও লিসবন শহরে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক সভায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। এই দু-জায়গায় উপস্থিতির সংখ্যা ছিল ৪৬,৮৭০ জন।

যিহোবা অ্যাজোরেজ, কেপ ভেরডে, ম্যাডিরা এবং সাঁও তোমে ও প্রিন্সিপে-সহ পোর্তুগিজভাষী বিভিন্ন দ্বীপে প্রচার করার সুযোগের দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। এর ফলে আমাদের আরও বড়ো শাখা অফিস প্রয়োজন হয়েছিল আর ১৯৮৮ সালে সেই চাহিদা পূরণ হয়েছিল। সেই বছরের ২৩ এপ্রিল ভাই মিলটন হেনশেল ৪৫,৫২২ জন উদ্যমী শ্রোতার সামনে নতুন অফিসগুলোর উৎসর্গীকরণ করেছিলেন। পোর্তুগালে মিশনারি হিসেবে সেবা করেছিলেন এমন ২০ জন ভাই ও বোন সেই ঐতিহাসিক সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন। তাদের পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম।

আমরা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের উদাহরণ দেখে উপকৃত হয়েছি

বছরের পর বছর ধরে বিশ্বস্ত ভাই-বোনদের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে আমাদের জীবন সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। একবার একটা আঞ্চলিক পরিদর্শনে ভাই থিওডোর জারাসের সঙ্গে সহযোগিতা করার সময় আমি মূল্যবান এক শিক্ষা লাভ করেছিলাম। তিনি যে-শাখা অফিস পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন, সেখানে একটা গুরুতর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল আর শাখা কমিটির সদস্যরা তা সমাধান করার জন্য যথাসম্ভব প্রচেষ্টা করেছিলেন। তারা যাতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন সেইজন্য ভাই জারাস বলেছিলেন: “এখন পবিত্র আত্মাকে কিছুটা কাজ করতে দেওয়ার সময় হয়েছে।” কয়েক দশক আগে আমি ও আমার স্ত্রী মেরি যখন ব্রুকলিন পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম, তখন আমি একদিন সন্ধ্যা বেলা ভাই ফ্রাঞ্জ ও অন্য কয়েক জনের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলাম। শেষে ভাই ফ্রাঞ্জকে অনুরোধ করা হয়েছিল, যেন তিনি যিহোবার সেবায় যে-দীর্ঘসময় ব্যয় করেছেন, সেই বিষয়ে কিছু বলেন। তখন ভাই বলেছিলেন: “আমার পরামর্শ হল: দুঃসময়েও যিহোবার দৃশ্যত সংগঠনের সঙ্গে থাকুন। যিশু তাঁর শিষ্যদের যে-আদেশ দিয়েছিলেন—ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করো—একমাত্র এই সংগঠনই সেই কাজ করছে!”

আমার স্ত্রী ও আমি শুধু সেই কাজ করেই প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পেয়েছি। বিভিন্ন শাখা অফিসে আঞ্চলিক পরিদর্শনের স্মৃতি আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। এসব পরিদর্শন করার ফলে আমরা যুবক-বৃদ্ধ সকলকে তাদের বিশ্বস্ত সেবার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পেরেছি ও যিহোবার সেবায় তারা যে-বিশেষ সুযোগ পেয়েছে, তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের উৎসাহিত করতে পেরেছি।

অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে আর আমাদের দু-জনের বয়সই এখন আশির কোঠায়। মেরির বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। (২ করি. ১২:৯) বিভিন্ন পরীক্ষা আমাদের বিশ্বাসকে পরিশোধন করেছে ও নিজেদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার সংকল্পকে শক্তিশালী করেছে। আমরা যখন আমাদের জীবনের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, আমরা অনেক অনেক উপায়ে ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছি।a

a এই প্রবন্ধ প্রকাশনার জন্য প্রস্তুত করার সময়, ভাই ডগলাস গেস্ট যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর মারা গিয়েছেন।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার