সমবয়সীদের চাপ—এটা কি আপনার জন্য উপকারী হতে পারে?
সমবয়সীরা আমাদের আপন করে নিক, এটা আমাদের সবারই আজন্ম আকাঙ্ক্ষা। কেউই নিজেকে তুচ্ছ ও পরিত্যক্ত হতে দিতে চান না। তাই কোন না কোনভাবে আমাদের সমবয়সীরা আমাদেরকে প্রভাবিত করে।
একজন সমবয়সী হল, “এমন একজন ব্যক্তি যে অন্য একজনের সমপর্যায়ের . . . ও একই সমাজিক গোষ্ঠীর আর [বিশেষভাবে] একই বয়সের ও শ্রেণীর অথবা যে একই মানমর্যাদায় বেড়ে ওঠে।” অন্যদিকে, সমবয়সীদের চাপ হল সেই জোর যা আমাদের সমবয়সীরা আমাদের ওপরে খাটিয়ে থাকে আর যার ফলে আমরা সজ্ঞানে কী অজ্ঞানে তাদের মতো চিন্তা করতে বা কাজ করতে শুরু করি। সমবয়সীদের চাপকে সাধারণত ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। কিন্তু, এখন আমরা দেখব যে এটাকে আমরা কীভাবে আমাদের জন্য উপকারজনক করে তুলতে পারি।
সব বয়সের লোকেরাই প্রভাবিত হয়
সমবয়সীদের চাপ শুধু অল্পবয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটা সমস্ত বয়সের লোকেদের ওপর পড়ে। আর এটা তখন বোঝা যায় যখন আমরা নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করে দেখি, যেমন: “অন্যেরা এটা করলে, আমি কেন করতে পারি না?” “আমাকে কেন সবসময় আলাদা থাকতে হবে?” “অন্যেরা কী ভাববে বা বলবে?” “আমার সব বন্ধুবান্ধবী প্রেম ও বিয়ে করে ফেলছে, কিন্তু আমি করছি না। তাহলে আমার মধ্যে কি কোন খুঁত আছে?”
মানিয়ে নেওয়ার চাপ যদিও সব বয়সের লোকেদেরই প্রভাবিত করে, কিন্তু উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই ইচ্ছা আরও বেশি করে কাজ করে। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপেডিয়া জানায় যে “বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীরা তাদের সমবয়সীদের দলে অর্থাৎ তাদের বন্ধু ও পরিচিত মহলের মধ্যে খুব ভালভাবে আটকা পড়ে যায়। এই তরুণ-তরুণীরা তাদের বাবামার চেয়ে তাদের সমবয়সীদের পছন্দকে বেশি প্রাধান্য দেয় আর এইজন্য তারা এমনকি তাদের স্বভাবকেও হয়তো বদলে ফেলার জন্য তৈরি থাকে।” এটা আরও বলে, তরুণ-তরুণীরা “মনে করে তাদের সমবয়সীরা যদি তাদেরকে ভাল চোখে দেখে ও পছন্দ করে তাহলেই সব ঠিক আছে।” আর এটা করতে গিয়ে তারা “সেই বিষয়গুলো করার জন্য উঠেপড়ে লাগে যেগুলো তাদেরকে জনপ্রিয় করে তুলবে বলে তারা মনে করে, যেমন তাদের পোশাকের ধরন, নেতা হওয়ার চেষ্টা এবং সফল প্রেমিক হওয়া।”
বিবাহিত দম্পতিরাও তাদের সমবয়সীদের চাপে পড়েন অর্থাৎ তাদের প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব বা তাদের সমাজের লোকেরা যেভাবে চলছেন তা দেখেই হয়তো তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, যেমন কী ধরনের বাড়ি কিনবেন বা ভাড়া নেবেন, কোন্ মডেলের গাড়ি চালাবেন, সন্তান চান কি চান না, এছাড়াও আন্যান্য বিষয় তো আছেই। কিছু পরিবার এমনকি প্রতিবেশী ও সমবয়সীদের সঙ্গে নেহাত বস্তুগত সমতা বজায় রাখতে গিয়ে বিরাট ঋণে জড়িয়ে পড়ে। হ্যাঁ আমাদের লক্ষ্য, চিন্তাধারা এবং সিদ্ধান্তগুলো প্রায়ই বলে দেয় যে সমবয়সীদের চাপের অস্পষ্ট প্রভাব আমাদের ওপর রয়েছে। সমবয়সীদের চাপ যখন আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে তখন আমরা কি এটাকে আমাদের জন্য উপকারজনক করে তুলতে পারি যে পথ আমাদেরকে নিজেদের মতো করে চলতে সাহায্য করবে? অবশ্যই, আমরা পারি!
ভাল সমবয়সীদের প্রভাবকে উপকারজনক করে তোলা
ডাক্তার ও অন্যান্য দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মীরা জানেন যে তাদের রোগীদের জন্য সঠিক মনোভাব রাখেন এমন লোকেদের মাঝে ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকাটা কত উপকারজনক। এইধরনের এক পরিবেশ সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ হিসেবে কাজ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যে লোকেরা পঙ্গু হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য অনেক সময় লাগে। এই সময়ে তাকে মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ রাখার জন্য অন্যান্য একইরকম রোগীর ভাল উদাহরণ ও উৎসাহ প্রায়ই প্রতিকারক হয়ে কাজ করে। এটা স্পষ্ট যে ভাল পরিবেশ, যেখানে আশাবাদী, সৎ, আদর্শবান লোকেরা আছেন, এইরকম সমবয়সীদের চাপ আমাদের জন্য উপকারজনক হবে।
এই নীতিটা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতেও সত্যি, যিহোবা যে তাঁর লোকেদেরকে নিয়মিত মিলিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তার একটা কারণ হল সৎ সমবয়সীদের প্রভাব। ঈশ্বর আমাদের “প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে” পরামর্শ দিয়েছেন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) বর্তমান জগতে অনেক নৈরাশ্যজনক ও ক্ষতিকর চাপ রয়েছে সেইজন্য এইধরনের উৎসাহ খুবই মূল্যবান। এই চাপগুলো থাকায়, খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকতে ‘প্রাণপণ করতে’ হবে। (লূক ১৩:২৪) এইজন্য, খ্রীষ্টান ভাইবোনদের প্রেমপূর্ণ সাহায্য আমাদের দরকার আর আমরা তা উপলব্ধি করি। এছাড়াও বলা যায়, আমাদের কোন ভাইবোনকে হয়তো অসুস্থতা বা অক্ষমতার ‘কারণে . . . মাংসে একটা কন্টক’ সহ্য করতে হতে পারে। (২ করিন্থীয় ১২:৭) অন্যেরা হয়তো তাদের খারাপ অভ্যাস বা হতাশাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য লড়াই করে থাকেন অথবা তাদের হয়তো জীবনের চাহিদাগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু, আমাদের আশেপাশের লোকেদেরকে বোঝার বুদ্ধি আমাদের আছে যারা যিহোবা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকেন ও যারা তাঁকে উপাসনা করে আনন্দ পান। এইধরনের সমবয়সীরা আমাদের মনের জোর বজায় রাখতে ও ‘শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকতে’ সাহায্য করবে।—মথি ২৪:১৩.
অতএব, সঠিক বন্ধুবান্ধব বাছাই করে আমরা আমাদের ওপর ভাল প্রভাব পড়তে দিতে পারি। এছাড়াও বলা যায়, খ্রীষ্টীয় সভাগুলো থেকে যে উত্তম আধ্যাত্মিক খাদ্য ও ব্যবহারিক পথ-নির্দেশনা পাওয়া যায় সেগুলো আমাদের সমবয়সীদের কাছ থেকে পাওয়া উৎসাহকে আরও জোরদার করে।
এটা ঠিক যে সবসময় খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যাওয়া সহজ নয়। কারও কারও বিবাহিত সঙ্গীরা হয়তো তাদেরকে কিছুটা বা একেবারেই সহযোগিতা করেন না, অন্যদের হয়তো ছেলেমেয়ে থাকে যাদেরকে তৈরি করতে হয় আবার কিছুজন আছেন যারা যানবাহনের সমস্যা ভোগ করে থাকেন। কিন্তু ভাবুন তো: আপনি যদি এইধরনের বাধাগুলোকে প্রশ্রয় না দেন, তাহলে আপনার এই উদাহরণ অন্যদের হয়তো প্রেরণা যোগাবে যারা ওই একই ঝামেলাগুলো পোহাচ্ছেন। অন্য কথায়, আপনি ও আপনার মতো অন্যেরা কেবল সুন্দর উদাহরণই স্থাপন করেন না বরং সেইসঙ্গে সমবয়সীদের ওপর আপনি ভাল প্রভাব ফেলছেন—তাও আবার কোনরকম জোর জবরদস্তি ছাড়াই।
সত্যি সত্যি প্রেরিত পৌল, যাকে অনেক কষ্ট-যন্ত্রণা ও বাধা-বিঘ্ন পোহাতে হয়েছিল, তিনি খ্রীষ্টানদেরকে তার এবং অন্যান্য পরিপক্ব খ্রীষ্টানদের উত্তম উদাহরণগুলো অনুকরণ করার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, তোমরা সকলে মিলিয়া আমার অনুকারী হও, এবং আমরা যেমন তোমাদের আদর্শ, তেমনি আমাদের ন্যায় যাহারা চলে, তাহাদের প্রতি দৃষ্টি রাখ।” (প্রেরিত ৩:১৭; ৪:৯) থিষলনীকীতে প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা পৌলের উত্তম উদাহরণের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিলেন। তাদের সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা বহু ক্লেশের মধ্যে পবিত্র আত্মার আনন্দে বাক্যটী গ্রহণ করিয়া আমাদের এবং প্রভুরও অনুকারী হইয়াছ; এইরূপে মাকিদনিয়া ও আখায়াস্থ সমস্ত বিশ্বাসী লোকের আদর্শ হইয়াছ।” (১ থিষলনীকীয় ১:৬, ৭) একইভাবে আমাদের সঠিক মনোভাব ও ভাল উদাহরণের প্রভাব তাদের ওপরে পড়তে পারে যাদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করি।
খারাপ প্রভাবগুলো এড়িয়ে চলুন
আমরা যদি খারাপ বন্ধুবান্ধবদের চাপ এড়াতে চাই, তাহলে “যাহারা মাংসের বশে আছে” তাদের প্রভাবকে আমাদের অবশ্যই ঠেকাতে হবে। (রোমীয় ৮:৪, ৫; ১ যোহন ২:১৫-১৭) তা না হলে, ক্ষতিকর সমবয়সীদের চাপ আমাদেরকে যিহোবা ও তাঁর বিজ্ঞ পরামর্শ থেকে বিপথে নিয়ে যাবে। হিতোপদেশ ১৩:২০ পদ বলে: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” আপনি কি এমন কোন ব্যক্তিকে জানেন যিনি খারাপ সমবয়সীদের চাপে পড়ে বিপথগামী হয়েছেন? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোন কোন খ্রীষ্টান তাদের সমবয়সীদের প্রভাবে পড়ে বস্তুবাদিতা, অনৈতিকতা বা মাদকদ্রব্য ও নেশাকর পানীয়ের অপব্যবহার করতে শুরু করেছেন।
এমনকি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে, যারা আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল তাদেরকে যদি আমরা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বেছে নিই, তাহলে আমরা খারাপ সমবয়সীদের চাপের প্রভাবে পড়ে যেতে পারি। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; ২ থিষলনীকীয় ৩:১৪) এইধরনের ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে চান না; এমনকি তারা হয়তো সেইসব ব্যক্তিকে ঠাট্টা করেন যারা এইরকম আধ্যাত্মিক আলোচনায় আনন্দ পান। আমরা যদি আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে এইধরনের ব্যক্তিদের বেছে নিই, তাহলে সমবয়সীদের চাপ হয়তো আমাদের ওই একই ধাঁচে গড়ে ওঠার জন্য জোর করতে পারে আর খুব তাড়াতাড়ি হয়তো আমরা দেখব যে আমাদের চিন্তাধারা ও মনোভাব তাদের মতো হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমরা হয়তো সেইসব ব্যক্তিকে খারাপ বলে ভাবতে শুরু করতে পারি যারা বিশ্বাসে অটল এবং যারা আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করার জন্য চেষ্টা করছেন।—১ তীমথিয় ৪:১৫.
যে ব্যক্তিরা যিহোবাকে খুশি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন ও যারা আধ্যাত্মিক বিষয়ে খুবই উদ্যোগী তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা কতই না বুদ্ধির কাজ হবে! এইধরনের বন্ধুবান্ধব আমাদেরকে “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে,” তা দেখাতে সাহায্য করবে যে এটা “প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট।” (যাকোব ৩:১৭) এর অর্থ এই নয় যে আধ্যাত্মিক-মনা ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিক বিষয় ছাড়া অন্য কিছুই জানেন না। এটা কতই না ভুল কথা! ওয়াচ টাওয়ার প্রকাশনার সচেতন থাক! পত্রিকায় বিভিন্ন আগ্রহজনক বিষয় নিয়ে যে প্রবন্ধগুলো আলোচনা করা হয়েছে সেই সম্বন্ধে একটু ভাবুন। আলোচনার জন্য বিভিন্ন গঠনমূলক বিষয়ের সত্যি শেষ নেই আর আলাদা আলাদা বিষয়ে আগ্রহ দেখানোর মাধ্যমে আমরা দেখাই যে জীবনের জন্য ও যিহোবার হস্তশিল্পের জন্য আমাদের ভালবাসা আছে।
ঠিক যেমন একজন ভাল টেনিস খেলোয়াড় অন্য একজন ভাল খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলে তার দক্ষতাকে বাড়ান, তেমনই ভাল বন্ধুরা আমাদেরকে মানসিক, আবেগগত ও আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত করে তুলতে পারেন। অন্য দিকে, খারাপ বন্ধুরা আমাদেরকে দ্বৈত জীবনযাপন করার জন্য উৎসাহ দিয়ে ভণ্ডামী করতে প্ররোচিত করতে পারে। এক শুদ্ধ বিবেক আর সেইসঙ্গে আত্মসম্মান বজায় রাখা কতই না ভাল!
কেউ কেউ যারা উপকার পেয়েছেন
বেশিরভাগ লোক ভাবেন যে বাইবেলের মতবাদ এবং এর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো সম্বন্ধে শেখা খুব একটা কঠিন নয়। কিন্তু, যে বিষয়টা কঠিন লাগতে পারে তা হল, সেগুলো মেনে চলা। যেমন নিচের উদাহরণগুলো দেখায় যে ভাল সমবয়সীদের প্রভাবই আমাদেরকে সম্পূর্ণ হৃদয়ে যিহোবার সেবা করতে সাহায্য করতে পারে।
একজন সাক্ষি ভাই যিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করছেন তিনি বলেন যে তার জীবনে তিনি কোন্ বিষয়টা বেছে নেবেন তা তার সমবয়সীদের উদাহরণই ঠিক করে দিয়েছিল। তার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, তাকে তার খারাপ প্রভাবগুলোকে মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কিন্তু বন্ধু হিসেবে তিনি তাদেরকে বেছে নিয়েছেন যারা তাকে প্রচারে ও খ্রীষ্টীয় সভায় নিয়মিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল। এই বন্ধুবান্ধবীদের সাহচর্য ধরে রাখাই তাকে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার পথে চলতে সাহায্য করেছে।
আরেকজন সাক্ষি লেখেন: “আমাদের বিয়ের পর, আমরা এমন একটা মণ্ডলীতে যাই যেখানে আমাদের বয়সী এক দম্পতি ছিলেন, যারা নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ করতেন। তাদের উদাহরণই আমাদের পূর্ণ-সময় পরিচর্যার কাজে প্রেরণা যুগিয়েছে। এরপর আমরাও মণ্ডলীতে অগ্রগামীর আত্মা গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছি। ফলে, অনেকে আমাদের সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করেছেন।”
যে ব্যক্তিদের জীবনের লক্ষ্য হল ঈশ্বরের সেবায় এগিয়ে যাওয়া তাদের সঙ্গে মেলামেশাই যিহোবার বাধ্য থাকাকে অনেক সহজ করে দিতে পারে। ভাল সমবয়সীদের চাপের এটা হল আরেকটা উপকারজনক দিক। যুবক থাকতে একজন ভাই পূর্ণ-সময় পরিচর্যার কাজ শুরু করেছিলেন, পরে তিনি একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছিলেন আর এখন ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির একটা শাখা অফিসে সেবা করছেন। তিনি লেখেন: “আমার ছেলেবেলার কিছু স্মৃতির মধ্যে সবচেয়ে প্রথম ও প্রিয় স্মৃতিগুলো হল এই যে আমাদের বাসায় পূর্ণ-সময় পরিচারকেরা প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন। অতিথিদের জন্য আমাদের খাবার ঘরের টেবিলে সবসময় একটা চেয়ার বেশি থাকত। আমার বয়স যখন দশ বছর তখন একজন সীমা অধ্যক্ষ আমাকে একটা প্রচারের ব্যাগ দিয়েছিলেন। আমি আজও সেই ব্যাগটা সযত্নে আগলে রেখেছি।”
তার কিশোর বয়সের কথা মনে করে এই ভাই আরও বলেন: “অনেক যুবক ভাইয়েরা মণ্ডলীর কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে চান আর তাদের উদাহরণ অন্যদের মতো আমাদেরও একইরকম করার জন্য উদ্দীপিত করে।” ভাল সমবয়সীরা এই তরুণকে ভাল ও একজন খ্রীষ্টান হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে, ঠিক যেমন এক অঙ্কুর একটা খাড়া গাছ হয়ে বেড়ে ওঠে। বাবামায়েরা, আপনারা কি আপনাদের ঘরে সেইসব ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করেন যারা আপনার ছেলেমেয়েদের ওপর এক ভাল ও গঠনমূলক প্রভাব ফেলতে পারেন?—মালাখি ৩:১৬.
এটা ঠিক যে এই ব্যক্তিদের মতো আমরা সবাই পূর্ণ-সময় পরিচর্যার কাজ করতে পারব না। কিন্তু আমরা সবাই ‘আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, . . . সমস্ত প্রাণ ও . . . সমস্ত মন দিয়া’ যিহোবাকে ভালবাসতে শিখতে পারি। (মথি ২২:৩৭) আর এই ভালবাসা গড়ে তোলায় আমাদের বন্ধুবান্ধব বাছাইয়ের ব্যাপারটার অনেকখানি হাত আছে, আর এটা আমাদের অনন্ত জীবনের আশার ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জীবনে সত্যিই সফল হওয়ার জন্য গীতরচক একটা সহজ কিন্তু কার্যকর সূত্র দিয়েছেন: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, পাপীদের পথে দাঁড়ায় না, নিন্দকদের সভায় বসে না। কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”—গীতসংহিতা ১:১-৩.
এটা কী এক অপূর্ব নিশ্চয়তা! আমরা যদিও অসিদ্ধ এবং ভুল করি তবুও, আমাদের জীবন সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে যদি আমরা যিহোবাকে আমাদের পথ-নির্দেশ করতে দিই আর যদি আমরা ঈশ্বর-দত্ত ভাল সমবয়সীদের প্রভাবের ভাণ্ডার অর্থাৎ ‘জগতে অবস্থিত [আমাদের] ভ্রাতৃবর্গের’ কাছ থেকে আরও উপকার নিই।—১ পিতর ৫:৯.
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
ভাল বন্ধুবান্ধব মণ্ডলীতে পাওয়া যায়
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাবামায়েরা, আপনাদের সন্তানদের ভাল বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশতে উৎসাহ দিন