ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ৯/১ পৃষ্ঠা ২৫-২৯
  • যিহোবা মম শৈল হয়েছেন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা মম শৈল হয়েছেন
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আধ্যাত্মিক পরিবার পাওয়া
  • একজন নিঃসঙ্গ অগ্রগামী
  • তাড়না ও নির্বাসন সহ্য করা
  • বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃদ্ধি
  • যিহোবা “রক্ষাকর্ত্তা”
  • নিদারুণ যন্ত্রণার অগ্নিময় পরীক্ষায় পরীক্ষিত
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ‘পার হওয়া’
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • এক পরিত্যক্ত অনাথ একজন প্রেমময় পিতা খুঁজে পান
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবা যা কিছু চান তাঁকে তাই-ই দেওয়া
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ৯/১ পৃষ্ঠা ২৫-২৯

যিহোবা মম শৈল হয়েছেন

ইম্মানূয়েল লিওনুভাকিস দ্বারা কথিত

আমার মা অগ্নিমূর্তি হয়ে আমায় বলেছিলেন: “তুমি যদি ঠিক করেই থাক যে তুমি এভাবেই চলবে, তাহলে এই ঘর ছেড়ে তোমায় চলে যেতে হবে।” আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম যে আমি পূর্ণ-সময়ের জন্য ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করব। এই কারণে আমাকে বার বার গ্রেপ্তার করা হতো আর এই অপমান আমার পরিবার সইতে পারছিল না।

আমার বাবামা ছিলেন বিনয়ী ও ঈশ্বর ভয়শীল লোক। তারা ক্রীতের গ্রিক দ্বীপের পশ্চিম দিকে দুলিয়ানা গ্রামে বাস করতেন আর সেখানেই ১৯০৮ সালে আমার জন্ম হয়। ছেলেবেলা থেকেই তারা আমায় ঈশ্বরকে ভয় ও শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছিলেন। আমি ঈশ্বরের বাক্যকে খুব ভালবাসতাম, যদিও আমি কখনও শিক্ষক বা গ্রিক অর্থোডক্স পাদ্রিদের হাতে বাইবেল দেখিনি।

আমাদের একজন প্রতিবেশী, সি. টি. রাসেলের লেখা শাস্ত্রের অধ্যয়ন (ইংরেজি) এর ছয়টা খণ্ড ও ঈশ্বরের বীণা (ইংরেজি) বই দুটো পড়া শেষ করার পর এতটাই উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন যে আমার সঙ্গে তিনি শাস্ত্রীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তারা আমায় যা জানিয়েছিলেন তাতে আমারও চোখ খুলে গিয়েছিল। ওই বইগুলো বাইবেলের ছাত্রেরা প্রকাশ করেছিলেন, তখন যিহোবার সাক্ষিরা ওই নামে পরিচিত ছিলেন। আমি এথেন্সে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির অফিস থেকে একটা বাইবেল ও কিছু বই পেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলাম। আমার এখনও মনে আছে যে আমি ও সেই প্রতিবেশী মোমবাতির আলোয় অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ওই বইগুলোকে খুব মন দিয়ে পড়তাম আর যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতাম।

২০ বছর বয়সে, আমি কাছাকাছি আরেকটা গাঁয়ের স্কুলে শিক্ষকতা করতে শুরু করি আর সেইসময় আমার নতুন নতুন শেখা বাইবেলের জ্ঞানকে আমি অন্যদের কাছে জানাতে শুরু করি। শীঘ্রিই দুলিয়ানায় আমরা চারজন মিলে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য নিয়মিত সভা করতে থাকি। এছাড়াও আমি চাইতাম, সব লোকেরা জানুক যে মানবজাতির জন্য একটাই মাত্র আশা আছে আর তা হচ্ছে ঈশ্বরের রাজ্য। আর তাই আমরা সবাইকে ট্র্যাক্ট, পুস্তিকা, বই ও বাইবেল পড়ার জন্য দিতাম।

১৯৩১ সালে, যখন সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের লোকেরা বাইবেল অনুসারে যিহোবার সাক্ষি নাম নিয়েছিল তখন আমরাও তাদের মধ্যে ছিলাম। (যিশাইয় ৪৩:১০) পরের বছরে, সরকারি কর্তৃপক্ষদের কাছে আমাদের এই নতুন নাম ও এর গুরুত্ব সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য আমরা এক প্রচার অভিযানে অংশ নিয়েছিলাম। এই অভিযানে আমরা আমাদের এলাকার সমস্ত পাদ্রি, বিচারক, পুলিশ অফিসার ও ব্যাবসায়ীদের হাতে একটা করে পুস্তিকা তুলে দিয়েছিলাম।

এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছিল, পাদ্রিরা আমাদের ওপর তাড়না শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রথমবার গ্রেপ্তার করে আমাকে ২০ দিনের জন্য জেলে আটকে রাখা হয়। ছাড়া পাওয়ার পর পরই আবার আমায় এক মাসের জন্য জেলে পাঠানো হয়। যখন একজন বিচারক আমাদের প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন, আমরা প্রেরিত ৫:২৯ পদের কথা বলে উত্তর দিয়েছিলাম: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” এরপর ১৯৩২ সালে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রতিনিধি দুলিয়ানায় আমাদের ছোট দলটাকে পরিদর্শন করতে আসেন আর তখন আমরা চারজনই বাপ্তিস্ম নিই।

আধ্যাত্মিক পরিবার পাওয়া

আরও বেশি করে প্রচার কাজ করতে চাওয়ায় আমি শিক্ষকতার কাজ ছেড়ে দিই। আর এতেই আমার মায়ের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তিনি বলেছিলেন আমি যেন ঘর ছেড়ে চলে যাই। এথেন্সে ওয়াচ টাওয়ার শাখা অফিসের অনুমতিতে, ক্রীতের ইরাক্লিয়ন শহরে একজন উদার খ্রীষ্টান ভাই খুশি হয়ে আমাকে তার ঘরে রেখেছিলেন। তাই ১৯৩৩ সালের আগস্ট মাসে, আমার গ্রামের ভাইরা সেইসঙ্গে আরও কয়েকজন আগ্রহী ব্যক্তি আমায় বিদায় জানাতে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছিলেন। বিদায়ের সেই মুহূর্তটা ছিল খুবই দুঃখের, আমরা সবাই কেঁদেছিলাম কারণ কবে আবার আমাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হবে তা আমরা জানতাম না।

ইরাক্লিয়নে, আমি এক প্রেমময় আধ্যাত্মিক পরিবারের সদস্য হয়ে যাই। সেখানে আরও অন্য তিনজন খ্রীষ্টান ভাই ও একজন বোন ছিলেন যাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত অধ্যয়ন ও উপাসনা করার জন্য মিলিত হতাম। বেশ স্পষ্টভাবেই আমি যীশুর এই প্রতিজ্ঞাকে পূর্ণ হতে দেখেছিলাম: “এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা . . . পাইবে।” (মার্ক ১০:২৯, ৩০) আমাকে ওই শহরে এবং কাছাকাছি সব গ্রামগুলোতে গিয়ে প্রচার করতে বলা হয়েছিল। শহরে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, আমি ইরাক্লিয়ন ও ল্যাসিথিয়ন জেলায় প্রচার করতে যাই।

একজন নিঃসঙ্গ অগ্রগামী

এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে হেঁটে যেতে আমার অনেক সময় চলে যেত। তার ওপর, যেহেতু ওই সময় বইপত্র পাঠানোর জন্য যানবাহনের ততখানি সুবিধা ছিল না, তাই আমাকে অনেক বইপত্র বয়ে নিয়ে যেতে হতো। আমার রাতে শোয়ার জায়গা ছিল না বলে আমি ওই গ্রামের এক চায়ের দোকানে যেতাম আর সেখানকার শেষ খরিদ্দার না যাওয়া পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হতো। কখনও কখনও অপেক্ষা করতে করতে মাঝরাত হয়ে যেত, তারপর আমি একটা গদিআটা বেঞ্চির ওপর শুয়ে পড়তাম আর পরের দিন খুব ভোরবেলা দোকানের মালিক তার বেচা-কেনা শুরু করার আগেই আমাকে ঘুম থেকে উঠে পড়তে হতো। ওই বেঞ্চিতে অগণিত ছারপোকা আমার সঙ্গী হতো।

যদিও বেশির ভাগ লোকেরা একটুও উৎসাহ দেখাত না, তবুও আমি আমার যৌবনের শক্তি যিহোবাকে দিতে পেরে আনন্দিত ছিলাম। আমি যখন এমন একজনকে খুঁজে পাই যিনি বাইবেলের সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, তখন এই জীবন রক্ষাকারী কাজ সবসময় চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমার দৃঢ়সংকল্পে যেন আবার প্রাণ ফিরে আসে। আমার আধ্যাত্মিক ভাইদের সঙ্গে মেলামেশাও আমাকে নতুন শক্তি দিত। আমি ২০ থেকে ৫০ দিন বাদে বাদে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম তবে এটা নির্ভর করত, আমি ইরাক্লিয়ন শহর থেকে কতটা দূরে প্রচার করছি তার ওপর।

আমার এখনও খুব পরিষ্কার মনে আছে যে একদিন বিকেলে আমি কী ভীষণ নিঃসঙ্গ বোধ করেছিলাম আর বিশেষ করে এই কথা ভেবে আমি আরও উদাস হয়ে গিয়েছিলাম যে আজ সন্ধ্যায় ইরাক্লিয়নে আমার খ্রীষ্টান ভাই ও বোনেরা মিলে তাদের সভাগুলো করবেন। তাদের দেখার জন্য আমার মন এতটাই ছটফট করছিল যে আমি প্রায় ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের পথ হেঁটে সেখানে যাব বলে মনে মনে তৈরি হয়েছিলাম। জীবনে আমি এত তাড়াতাড়ি কখনও হাঁটিনি। ওই সন্ধ্যায় আমার ভাইদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমার কতই না ভাল লেগেছিল আর আমার আধ্যাত্মিক ভাণ্ডার যেন আবারও ভরে উঠেছিল!

বেশ কিছুদিন পর থেকেই প্রচার কাজে আমার পরিশ্রমের ফল আমি পেতে শুরু করি। প্রেরিতদের দিনের মতো, ‘যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন আমাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন।’ (প্রেরিত ২:৪৭) ক্রীতে যিহোবার উপাসকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। আমার সঙ্গে অন্যেরা যখন প্রচারে যেতেন তখন আমার আর একটুও একা লাগত না। আমরা দৈহিক কষ্ট এবং প্রচণ্ড বিরোধিতা সহ্য করেছি। আমাদের প্রতিদিনের খাবার ছিল রুটি আর সেইসঙ্গে কখনও কখনও ডিম, জলপাই কিংবা শাকসবজি যেগুলো আমরা প্রচারে আগ্রহী লোকেদের কাছে সাহিত্যাদি অর্পণের বিনিময়ে পেতাম।

ক্রীতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ইরাপেট্রা শহরে আমি একজন কাপড়ের ব্যাবসায়ী, মাইনস কোক্কিনাকিসের কাছে প্রচার করি। তার সঙ্গে একটা বাইবেল অধ্যয়ন আরম্ভ করার জন্য আমাকে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল কারণ তিনি তার কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতেন যে একেবারেই সময় করে উঠতে পারতেন না। কিন্তু, শেষে যখন তিনি ঠিক করেন যে এখন থেকে তিনি ঠিকমতো অধ্যয়ন করবেন, তিনি সত্যিই নিজের মধ্যে ছোটবড় অনেক পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনিও সুসমাচারের একজন উদ্যোগী ও উৎসাহী প্রচারক হয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়সী ইম্মানূয়েল প্যাটারিকিস, কোক্কিনাকিসের একজন কর্মচারী, সে কোক্কিনাকিসের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো দেখে এতটাই অবাক হয়েছিল যে তখনই বাইবেলের সাহিত্যাদি চেয়েছিল। তার ওই আধ্যাত্মিক উন্নতি ও পরিশেষে তাকে একজন মিশনারি হতে দেখা আমাকে কতই না আনন্দ দিয়েছিল!a

এই সময়ের মধ্যে, আমার গ্রামের মণ্ডলীও বাড়তে থাকে আর সেইসময় সেখানে ১৪ জন প্রকাশক ছিলেন। সেই দিনটার কথা আমি কখনও ভুলব না যেদিন আমি আমার বোন ডেসপিনার কাছ থেকে চিঠি পেয়েছিলাম, সে লিখেছিল যে সে এবং আমার বাবামা সত্যকে নিজের করে নিয়েছেন আর এখন তারা যিহোবার বাপ্তাইজিত উপাসক!

তাড়না ও নির্বাসন সহ্য করা

গ্রিক অর্থোডক্স গির্জা আমাদের প্রচার কাজকে প্রাণনাশক পঙ্গপালের হুল ফোটানোর মতো মনে করত আর তাই তারা আমাদের সর্বনাশ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে, আমাকে সরকারি উকিলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যিনি চেয়েছিলেন আমি যেন একটুও দেরি না করে সেই মুহূর্তে এই এলাকা ছেড়ে চলে যাই। আমি বলেছিলাম যে আমাদের এই প্রচার কাজ লোকেদের জন্য সত্যি সত্যিই উপকারজনক আর আমাদেরকে এই কাজ করার আদেশ আমাদের রাজা যীশু খ্রীষ্ট দিয়েছেন, যিনি ঊর্ধ্বতন অধিকর্তা।—মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১:৮.

এর পরের দিন, আমাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ডেকে আনা হয়েছিল। সেখানে আমাকে জানানো হয় যে আমি নাকি লোকেদের জন্য বিপদজনক বলে প্রমাণিত হয়েছি আর তাই এক বছরের জন্য আমাকে আমোরগোসের এজিয়ান দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। এর কিছু দিন পরে, আমাকে হাতকড়া পরিয়ে নৌকায় করে ওই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। আমোরগোসে আমি ছাড়া আর অন্য কোন যিহোবার সাক্ষি ছিল না। আমার আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার কথা কল্পনা করুন যখন ছয় মাস পরে আমি জেনেছিলাম যে আরেকজন সাক্ষিকেও ওই দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে! তিনি কে হতে পারেন? মাইনস কোক্কিনাকিস ক্রীতে আমি যার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম। একজন আধ্যাত্মিক সঙ্গী পেয়ে আমি কতই না আনন্দিত হয়েছিলাম! কিছু দিন যাওয়ার পর আমি তাকে আমোরগোসের সমুদ্রতটে বাপ্তিস্ম দিতে পেরেছিলাম।b

আমি ক্রীতে ফিরে আসার পর পরই, আবার আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় আর এইবার ওই দ্বীপেরই নিয়াপোলিসের ছোট্ট শহরে ছয় মাসের জন্য নির্বাসন দেওয়া হয়। আমার এই ছয় মাসের নির্বাসন শেষ হওয়ার পরে আমাকে দশ দিনের জন্য জেলে দেওয়া হয় এবং এরপর আমাকে আবার একটা দ্বীপে চার মাসের জন্য পাঠানো হয়, যেখানে সাম্যবাদীদের নির্বাসন দেওয়া হতো। আমি দেখেছিলাম যে প্রেরিত পৌলের কথাগুলো কত সত্যি ছিল: “যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।”—২ তীমথিয় ৩:১২.

বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃদ্ধি

১৯৪০-৪৪ সালে জার্মানরা যখন গ্রিসকে দখল করে নিয়েছিল সেইসময়ে আমাদের প্রচার কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, গ্রিসে খুব তাড়াতাড়িই আবার যিহোবার লোকেরা সংগঠিত হন আর আমরাও আবার নতুন করে প্রচার কাজ শুরু করে দিই। যে সময়টা নষ্ট হয়েছিল সেটা পূরণ করার চেষ্টায়, আমরা আরও উদ্যোগের সঙ্গে আরও নিয়মিতভাবে রাজ্যের প্রচার কাজ করতে থাকি।

আমরা যা ভেবেছিলাম তাই-ই হয়েছিল অর্থাৎ ধর্মের প্রতি আবার প্রচণ্ড বিরোধিতা শুরু হয়ে যায়। গ্রিক অর্থোডক্স পাদ্রিরা প্রায়ই আইনকে তাদের নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতেন। এমন একটা গ্রামে, একজন পাদ্রি আমাদের বিরুদ্ধে এক দল গুণ্ডা লাগিয়ে আমাদের হেনস্তা করেছিলেন। সেই পাদ্রি নিজে আমাকে মারতে শুরু করেন আর তার ছেলেও আমাকে পিছন থেকে মেরেছিল। তাদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আমি দৌড়ে গিয়ে কাছাকাছি একটা বাড়িতে ঢুকে পড়ি কিন্তু আমার সাথিকে তারা টানতে টানতে গ্রামের চৌরাস্তায় নিয়ে যায়। তারা তার সাহিত্যাদি ছিঁড়ে ফেলে আর একজন মহিলা তার বারান্দা থেকে চিৎকার করতে থাকেন, “মারও ওকে মেরে ফেল!” অবশেষে, একজন ডাক্তার এবং পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করেন যারা সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

এরপর, ১৯৫২ সালে, আবার আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় আর আমাকে চার মাসের জন্য ক্রীতের ক্যাস্টলি কিস্‌সামোসে নির্বাসন দেওয়া হয়। সেখান থেকে আসার পরেই আমাকে মণ্ডলীগুলোতে গিয়ে ভাইবোনদের আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই ভ্রমণ কাজে দুই বছর পার হওয়ার পর, আমি একজন বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান বোনকে বিয়ে করি, আমার নিজের বোনের নামের মতো তার নামও ছিল ডেসপিনা। আজ পর্যন্ত সে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার উপাসনা করে চলেছে। আমাদের বিয়ের পর আমাদেরকে বিশেষ অগ্রগামী করে ক্রীতের হানিয়া শহরে পাঠানো হয়েছিল আর এখনও আমি সেখানেই কাজ করছি।

পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার এই ৭০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে, আমি প্রচার করে প্রায় সম্পূর্ণ ক্রীত শেষ করে ফেলেছি যা কিনা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ৮,৩০০ বর্গ কিলোমিটারের একটা দ্বীপ। আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয় এই বিষয়টা দেখে যে ১৯৩০ এর দশকের হাতে গোনা কয়েকজন সাক্ষি আজ বেড়ে ১,১০০ জনের বেশি হয়েছে আর আজকে তারা পূর্ণ উদ্যোগে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচার করে চলেছে। আমি যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ যে এই লোকেদের অনেককে যারা বাইবেলের যথার্থ জ্ঞান পেতে চায় এবং ভবিষ্যতের জন্য এক অপূর্ব আশাকে নিজের করে নিতে ইচ্ছুক তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি আমাকে ব্যবহার করেছিলেন।

যিহোবা “রক্ষাকর্ত্তা”

অভিজ্ঞতা আমায় শিখিয়েছে যে লোকেদের সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখাতে সাহায্য করার জন্য ধৈর্য ও সহ্যশক্তির দরকার। যিহোবা আমাদের এই দরকারি গুণগুলো গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। আমার ৬৭ বছরের পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায়, আমি বার বার প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোকে আমার জীবনে সত্যি হতে দিয়েছি “ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ব্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি,—বিপুল ধৈর্য্যে, নানা প্রকার ক্লেশে, অনাটনে, সঙ্কটে, প্রহারে, কারাবাসে, উপপ্লবে, পরিশ্রমে, অনিদ্রায়, অনাহারে।” (২ করিন্থীয় ৬:৪, ৫) বিশেষ করে আমার প্রচার কাজ শুরু করার প্রথম বছরগুলোতে আমার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু, যিহোবা আমাকে ও আমার পরিবারকে কখনও পরিত্যাগ করেননি। তিনি সবসময় আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থেকে প্রমাণ করেছেন যে তিনি আমাদের কত বড় সহায়। (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) আমরা সবসময় দেখেছি যে তাঁর মেষদের একত্র করার ব্যাপারে ও আমাদের চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য সবসময় তাঁর প্রেমপূর্ণ সাহায্য রয়েছে।

আমি যখন পিছনের কথা মনে করি, তখন আমি দেখি যে আধ্যাত্মিক অর্থে যা মরুভূমি ছিল আজ সেখানে ফুল ফুটেছে আর আমি নিশ্চিত যে আমার কাজ বিফলে যায়নি। আমি আমার যৌবনের শক্তিকে সবচেয়ে ভালভাবে কাজে লাগিয়েছি। আমার জীবনে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার কাজ অন্য যে কোন পেশার চেয়ে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ হয়েছে। আজ এই বৃদ্ধ বয়সে, আমি সর্বান্তকরণে সমস্ত অল্পবয়সীদের তাদের ‘যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করার’ জন্য উৎসাহিত করি।—উপদেশক ১২:১.

আমার বয়স এখন ৯১ বছর হলেও, আমি এখনও অনায়াসে প্রতি মাসে ১২০ ঘন্টারও বেশি প্রচার করতে পারি। প্রতিদিন, আমি সকাল সাড়ে সাতটায় উঠে, রাস্তায়, দোকানে, বা পার্কে লোকেদের কাছে সাক্ষ্য দিই। প্রতি মাসে আমি গড়ে ১৫০টা পত্রিকা অর্পণ করি। কানে কম শোনায় ও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ায় এখন আমার একটু অসুবিধা হয় বটে কিন্তু আমার প্রেমময় আধ্যাত্মিক ভাইবোন অর্থাৎ আমার বড় আধ্যাত্মিক পরিবার আর সেইসঙ্গে আমার নিজের দুই মেয়ের পরিবার, এরা সবাই মিলে সত্যি আমাকে খুব সাহায্য করে।

সব কথার শেষ কথা হল, আমি যিহোবাতে নির্ভর করতে শিখেছি। তিনি সারাটা জীবন ধরে “মম শৈল, মম দুর্গ, ও মম রক্ষাকর্ত্তা” হয়েছেন।—গীতসংহিতা ১৮:২.

[পাদটীকাগুলো]

a ইম্মানূয়েল প্যাটারিকিসের জীবন কাহিনী জানার জন্য ১৯৯৬ সালের ১লা নভেম্বর, প্রহরীদুর্গ এর ২২-২৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

b মাইনস কোক্কিনাকিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনী জয় সম্বন্ধে পড়ার জন্য ১৯৯৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর, প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ২৭-৩১ পৃষ্ঠা দেখুন। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে মাইনস কোক্কিনাকিস মারা যান।

[২৬, ২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

নিচে: আমার স্ত্রীর সঙ্গে; বাঁদিকে: ১৯২৭ সালে; পরের পৃষ্ঠায়: ১৯৩৯ সালে নির্বাসন থেকে ফিরে আসার পর পরই এক্রোপলিসে মাইনস কোক্কিনাকিস (বাঁ দিকে) ও অন্য আরেকজন সাক্ষির সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার