ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ১০/১ পৃষ্ঠা ২২-২৫
  • যিহোবা যা কিছু চান তাঁকে তাই-ই দেওয়া

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা যা কিছু চান তাঁকে তাই-ই দেওয়া
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আমি যা কিছু শিখেছিলাম সেই মতো কাজ করা
  • বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও প্রচার করা
  • ইথোনোহরিতে আমাদের প্রচার
  • নির্মম তাড়না
  • বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃদ্ধি
  • যিহোবার প্রেমময় হস্তের অধীনে সেবা করা
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ‘পার হওয়া’
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “স্বর্ণের পরিবর্তে, আমি হীরেগুলি খুঁজে পেয়েছি”
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • এক পরিত্যক্ত অনাথ একজন প্রেমময় পিতা খুঁজে পান
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ১০/১ পৃষ্ঠা ২২-২৫

যিহোবা যা কিছু চান তাঁকে তাই-ই দেওয়া

টিমোলিওন ভ্যাসিলিউ দ্বারা কথিত

ইথোনোহরি গ্রামে বাইবেল থেকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিশ আমার পা থেকে জুতো খুলে নেয় আর পায়ের তলায় মারতে শুরু করে। তারা আমাকে এত মারে যে আমার পা অবশ হয়ে যায় আর তারপর আমি ব্যথাও আর টের পাইনি। এমন দুর্ব্যবহার সেই সময়ে গ্রিসে নতুন কোন ব্যাপার ছিল না কিন্তু আমার সঙ্গে কী কারণে এমন ব্যবহার করা হয়েছিল তা বলার আগে, আমি আপনাদের বলি যে কীভাবে আমি একজন বাইবেলের শিক্ষক হয়েছিলাম।

উনিশশো একুশ সালে আমার জন্মের ঠিক পর পরই, আমাদের পরিবার গ্রিসের উত্তরদিকে, রডোলিভস শহরে চলে আসে। তরুণ বয়সে আমি অনৈতিক জীবনযাপন করতাম। এগারো বছর বয়সেই আমি সিগারেট খেতে শুরু করি। পরে, আমি একজন মাতাল ও জুয়াড়ি হয়ে যাই আর প্রায় প্রতি রাতেই আমি নোংরা পার্টিগুলোতে যেতাম। গান বাজনায় ঝোঁক থাকায় আমি একটা ব্যান্ড পার্টিতে যোগ দিই। আর প্রায় এক বছরের মধ্যেই, আমি বেশির ভাগ বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখে নিই। কিন্তু, পড়াশোনায় মন আর ন্যায়বিচারের প্রতি ভালবাসা আমার তখনও ছিল।

১৯৪০ সালের গোড়ার দিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এক ছোট্ট মেয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বাজানোর জন্য আমাদের দলকে ডাকা হয়েছিল। কবরস্থানে, আমি তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আকুল হয়ে কাঁদতে দেখেছিলাম। তাদের দুঃখ ও নিরাশা দেখে আমার ভীষণ দুঃখ হয়েছিল। আমি ভাবতে শুরু করি যে ‘আমরা কেন মারা যাই? এই কিছুদিনের জন্য বেঁচে থাকার নামই কি জীবন বা জীবন এর চেয়ে আরও বেশি কিছু? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কোথায় পাওয়া যেতে পারে?’

এর কিছুদিন পরে, আমি আমাদের ঘরের তাকের ওপর একটা নতুন নিয়ম বাইবেল দেখতে পাই। আমি ওটা নামিয়ে পড়তে শুরু করি। আমি যখন মথি ২৪:৭ পদে যীশুর কথাগুলো পড়ি যেখানে সেই বড় বড় যুদ্ধের কথা বলা আছে যা তাঁর উপস্থিতির সময়ে ঘটবে, আমি বেশ বুঝতে পারি যে যীশুর এই কথাগুলো অবশ্যই আমাদের দিনের জন্য। এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, আমি কয়েক বার এই খ্রীষ্টান গ্রিক শাস্ত্রবলিটা পড়ে ফেলি।

আমাদের ঘরের কাছাকাছিই একজন বিধবা তার পাচঁজন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতেন। ১৯৪০ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি একবার তার বাসায় যাই। তাদের চিলে-কোঠায় আমি এক বোঝা বইপত্র দেখতে পাই আর সেগুলোর মধ্যে এক আকাঙ্ক্ষিত সরকার (ইংরেজি) নামে একটা পুস্তিকা ছিল যা ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত। আমি সেই চিলে-কোঠায় বসেই ওই পুস্তিকাটা একেবারে পুরোটা পড়ে ফেলি। আমি যা পড়েছিলাম তার থেকে আমি পুরোপুরি বুঝে নিয়েছিলাম যে আমরা সত্যিই সেই সময় বাস করছি বাইবেল যাকে ‘শেষ কাল’ বলে আর যিহোবা ঈশ্বর খুব শীঘ্রই এই বিধিব্যবস্থার শেষ আনবেন, তারপর তিনি এখানে এক ধার্মিক নতুন জগৎ গড়ে তুলবেন।—২ তীমথিয় ৩:১-৫; ২ পিতর ৩:১৩.

বাইবেলের যে বিষয়টা আমাকে খুব বেশি আকৃষ্ট করেছিল তা হল বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা পৃথিবীর পরমদেশে চিরকাল বাস করবে আর ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে সেই নতুন পৃথিবীতে দুঃখ কষ্ট ও মৃত্যু আর থাকবে না। (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১, ২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) পড়তে পড়তে আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, এই সমস্ত কিছুর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম আর মিনতি করেছিলাম যে তিনি যেন আমাকে তাঁর পথে চালান। আর এটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে যিহোবা ঈশ্বর আমার কাছ থেকে সর্বান্তকরণের উপাসনা চান।—মথি ২২:৩৭.

আমি যা কিছু শিখেছিলাম সেই মতো কাজ করা

সেই সময় থেকেই, আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিই, আমি আর কখনও মাতলামি করিনি ও জুয়া খেলিনি। তারপর আমি সেই বিধবার পাঁচজন ছেলেমেয়ে আর সেইসঙ্গে আমার তিন ছোট ভাইবোনকে একসঙ্গে জড়ো করে ওই পুস্তিকা থেকে যা কিছু শিখেছিলাম তা তাদের বলি। আমরা সবাই যতটুকুই জানতাম তাই-ই অন্যদের কাছে শিগগিরিই বলতে শুরু করে দিই। আমাদের এলাকায় আমরা যিহোবার সাক্ষি বলে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলাম যদিও, তখনও পর্যন্ত আমরা কোন যিহোবার সাক্ষিকে দেখিইনি। সেই প্রথম থেকেই, আমি যে অপূর্ব বিষয়গুলো শিখেছিলাম তা অন্যদের কাছে বলে আমি প্রতি মাসে প্রায় একশ ঘন্টারও বেশি সময় কাটাতাম।

স্থানীয় একজন গ্রিক অর্থোডক্স পাদ্রি, মেয়রের কাছে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। কিন্তু কিছু দিন আগেই একজন সাক্ষি ভাই, অবশ্য আমরা তাকে চিনতাম না, একটা হারানো ঘোড়া পেয়ে সেটা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তার এইরকম সততার জন্য, সেখানকার মেয়র সাক্ষিদের সম্মান করতে শুরু করেন আর সেইজন্য তিনি ওই পাদ্রির কোন কথা শুনতে চাননি।

১৯৪১ সালের অক্টোবর মাসের দিকে, একদিন আমি যখন বাজারে প্রচার করছিলাম, তখন এক ব্যক্তি আমায় একজন যিহোবার সাক্ষির কথা বলেছিলেন যিনি কাছাকাছি একটা শহরে থাকতেন। তিনি আগে একজন পুলিশ ছিলেন আর তার নাম খ্রিস্টোস ত্রিয়াতাফিলো। আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আর জেনেছিলাম যে তিনি সেই ১৯৩২ সাল থেকে একজন সাক্ষি। তিনি যখন আমায় ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির ছাপানো অনেক পুরনো বইপত্র দিয়েছিলেন তখন আমি কত খুশিই না হয়েছিলাম! সত্যিই, ওই বইগুলো আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে বেড়ে উঠতে খুব সাহায্য করেছিল।

১৯৪৩ সালে, জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে আমি ঈশ্বরের কাছে আমার উৎসর্গীকরণকে সবার সামনে দেখাই। এইসময়ে, আমি আশেপাশের তিনটে গ্রাম যেমন দ্রাভিসকোস, প্যালাউকোমি ও ম্যাভ্রোলোফসতে বাইবেল অধ্যয়ন করতে থাকি। আমি ঈশ্বরের বীণা (ইংরেজি) নামক বইটা থেকে বাইবেল অধ্যয়ন করতাম। পরে আমি ওই এলাকায় গড়ে ওঠা যিহোবার সাক্ষিদের চারটে মণ্ডলী দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।

বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও প্রচার করা

১৯৪৪ সালে জার্মানির অধীনতা থেকে গ্রিস স্বাধীন হয় আর তাই এর অল্প কিছুদিন পরে, এথেন্সে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির শাখা অফিসের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করতে পারি। এইসময় শাখা অফিস আমাকে এমন একটা জায়গায় গিয়ে প্রচার করার জন্য বলে যেখানে রাজ্যের বার্তা একেবারেই কেউ শোনেনি। সেখানে যাওয়ার পর, আমি তিন মাস একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করি ও বছরের বাকি মাসগুলোতে প্রচার করি।

ওই বছরে আমার মা আর সেইসঙ্গে সেই বিধবা ও তার বাকি ছেলেমেয়েদের বাপ্তিস্ম নিতে দেখে আমার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। আর সেই বিধবার সবচেয়ে ছোট মেয়ে ম্যারিয়ানথি ১৯৪৩ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল যাকে সেই বছরেরই নভেম্বর মাসে আমি বিয়ে করি। ত্রিশ বছর পর, ১৯৭৪ সালে আমার বাবাও একজন বাপ্তিস্মিত সাক্ষি হন।

১৯৪৫ সালের গোড়ার দিকে, আমরা শাখা অফিস থেকে প্রহরীদুর্গ এর প্রথম মিমিওগ্রাফ কপি পাই। এর মূল প্রবন্ধটার নাম ছিল “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯) আর দেরি না করে তখনই ম্যারিয়ানথি ও আমি স্ট্রিমন নদীর পূর্বদিকে দূরের এলাকাগুলোতে প্রচার করার জন্য ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। পরে অবশ্য আমরা অন্যান্য সাক্ষিদের সঙ্গে মিলে কাজ করি।

এক একটা গ্রামে পৌঁছানোর জন্য আমরা প্রায়ই খালি পায়ে খানা-খন্দ, পাহাড় পার হয়ে অনেক অনেক কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতাম। আমরা আমাদের জুতোগুলোকে বাঁচানোর জন্য খালি পায়ে হাঁটতাম কারণ নতুন নতুন জুতো কেনার মতো অত টাকা আমাদের ছিল না। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে গ্রিসে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে আর পথে-ঘাটে চলাফেরা করা ভীষণ ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। খোলা রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখাটা সেইসময় নিত্যকার ব্যাপার ছিল।

কঠিন পরিস্থিতির কাছে হার না মেনে বরঞ্চ আমরা আরও উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। অনেক সময় আমার ঠিক গীতরচকের মতো মনে হতো যিনি লিখেছিলেন: “যখন আমি মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকা দিয়া গমন করিব, তখনও অমঙ্গলের ভয় করিব না, কেননা তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ, তোমার পাঁচনী ও তোমার যষ্টি আমাকে সান্ত্বনা করে।” (গীতসংহিতা ২৩:৪) সেইসময়ে, আমাদের প্রায়ই সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘর ছেড়ে দূরে থাকতে হতো আর আমি কতবার মাসে ২৫০ ঘন্টা করে প্রচার করেছি।

ইথোনোহরিতে আমাদের প্রচার

১৯৪৬ সালে আমরা যে গ্রামগুলোতে গিয়েছিলাম তার মধ্যে ইথোনোহরি ছিল একটা যেটা এক পাহাড়ের ওপর ছিল। সেখানে গিয়ে আমরা একজন লোকের দেখা পাই যিনি আমাদের বলেছিলেন যে এই গাঁয়ে দুজন লোক আছেন যারা বাইবেল শিখতে চান। কিন্তু, তিনি তার প্রতিবেশীদের ভয়ে আমাদেরকে সেই লোকেদের বাসায় নিয়ে যেতে রাজি হননি। যাইহোক আমরা তাদের ঘর খুঁজে বের করে নিয়েছিলাম আর তারা আমাদের খুব আদর-যত্ন করেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ঘর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবে একেবারে ভরে গিয়েছিল! তারা সবাই এত মন দিয়ে আমাদের কথা শুনেছিলেন যে আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের জানিয়েছিলেন যে তারা যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু এই অঞ্চল জার্মানির অধীনে ছিল বলে এখানে কোন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন না। কী এই লোকেদের মধ্যে সত্য জানার ইচ্ছাকে জাগিয়েছিল?

এই দুই ব্যক্তি একসময় স্থানীয় সাম্যবাদী দলের গণ্যমান্য নেতা ছিলেন যারা লোকেদেরকে সাম্যবাদ সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু যখন তারা ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রকাশিত, সরকার নামক বইটা পড়েন তারা বুঝতে পারেন যে এক ধার্মিক ও শান্তিপূর্ণ সরকারের জন্য একমাত্র আশা হল ঈশ্বরের রাজ্য।

আমরা তাদের ও তাদের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বসে বসে প্রায় মাঝ রাত অবধি কথা বলি। তারা বাইবেল থেকে তাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু, এর ঠিক পর পরই, গাঁয়ের সাম্যবাদীরা আমাকে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করে কারণ তারা মনে করে যে আমরা নাকি তাদের প্রাক্তন নেতাদের বিগড়ে দিয়েছি। ঘটনাচক্রে, প্রথম রাতে যারা সেখানে ছিলেন তাদের মধ্যে সেই লোকও ছিলেন যিনি আমাদেরকে এই গাঁয়ের দুজন আগ্রহী লোকের কথা জানিয়েছিলেন। পরে তিনিও বাইবেলের জ্ঞানে উন্নতি করতে থাকেন আর বাপ্তাইজিত হন ও সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন খ্রীষ্টান প্রাচীন হন।

নির্মম তাড়না

সেই দুজন সাম্যবাদী নেতার কাছে যাতায়াত শুরু হওয়ার পর খুব বেশি দিন যেতে না যেতেই একদিন যখন আমরা ঘরে সভা করছিলাম এমন সময় দুজন পুলিশ ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা আমাদের চারজনকে গ্রেপ্তার করে ও আমাদের ওপর বন্দুক ধরে তাদের সঙ্গে করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানকার বড়বাবুর সঙ্গে গ্রিক অর্থোডক্স পাদ্রিদের বেশ দহরম-মহরম থাকায় তিনি আমাদের সঙ্গে ভীষণ খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। শেষে, তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনারাই বলে দিন তো আমি আপনাদের কী শাস্তি দিই?”

“বেশ, আসুন আপনাদের উত্তম-মধ্যমই ধোলাই দেওয়া যাক!” আর সেখানে আমাদের পিছনে যে সব পুলিশেরা দাঁড়িয়ে ছিল তারা সবাই একসঙ্গে জোরে জোরে বলতে থাকে হ্যাঁ তাই-ই হোক।

অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। পুলিশেরা আমাদেরকে নিচে আটকে রেখে পাশেই মদের দোকানে গিয়েছিল। একেবারে মাতাল হয়ে তারা ফিরে এসেছিল ও আমাকে ওপর তলায় ডেকেছিল।

তাদের ভয়ংকর চেহারা দেখে আমার মনে হয়েছিল, যে কোন সময় তারা আমায় মেরে ফেলতে পারে। তাই আমি মনে মনে ঈশ্বরের কাছে শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করি যাতে যে কোন অত্যাচারই আমার ওপর করা হোক না কেন আমি যেন তা সহ্য করতে পারি। তারা কয়েকটা লাঠি নেয় আর আমার জুতো খুলে নিয়ে পায়ের তলায় মারতে শুরু করে যেমন আমি শুরুতে বলেছি। এরপর তারা আমার সারা শরীরে মারতে থাকে আর এক সময় আমাকে আবার সেই নিচের ঘরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর তারা আরেকজনকে ওপরের ঘরে ডাকে ও ওইভাবে তাকেও মারতে শুরু করে।

এরই মধ্যে আমি বাকি দুজন যুবক সাক্ষিকে ওই নির্মম তাড়না সহ্য করতে তৈরি হওয়ার জন্য সাহস দিতে থাকি। কিন্তু, পুলিশেরা তাদের দুজনকে না নিয়ে গিয়ে আবার আমায় ওপরে নিয়ে যায়। তারা আমার কাপড় খুলে নেয় আর তাদের পাঁচজন প্রায় একঘন্টা ধরে আমাকে মারে আর তাদের পায়ের বুট দিয়ে আমার মাথায় জোরে জোরে আঘাত করতে থাকে। এরপর তারা আমায় সিঁড়ি দিয়ে ছুঁড়ে নিচে ফেলে দেয় আর সেখানেই আমি প্রায় ১২ ঘন্টা অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকি।

অবশেষে আমাদের যখন ছেড়ে দেওয়া হয় তখন ওই গাঁয়ের এক পরিবার আমাদেরকে সেই রাতে তাদের ঘরে রাখেন ও সেবা-যত্ন করেন। আর পরের দিন, আমরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হই। মারের আঘাতে আমরা এতটাই ক্ষত-বিক্ষত ও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে দুই ঘন্টার হাঁটা পথ যেতে আমাদের আট ঘন্টা সময় লেগেছিল। মারে আমার শরীর এতটাই ফুলে গিয়েছিল যে ম্যারিয়ানথি পর্যন্ত আমায় চিনতে পারেনি।

বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃদ্ধি

১৯৪৯ সালে, গৃহযুদ্ধ যখন চলছিল সেই সময় আমরা থিষলনীকায় চলে আসি। ওই শহরের চারটে মণ্ডলীর একটাতে আমাকে মণ্ডলীর সহকারী দাস হিসেবে সেবা করতে বলা হয়। এক বছরের মধ্যে আমাদের মণ্ডলীতে এত বেশি বৃদ্ধি হয়েছিল যে আমাদেরকে আরেকটা মণ্ডলী বানাতে হয় আর তখন আমি সেই মণ্ডলীর দাস বা পরিচালক অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হই। এক বছর পরে এই নতুন মণ্ডলীও বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায় আর তাই আরও একটা মণ্ডলী বানানোর দরকার হয়!

থিষলনীকায় দিন দিন যিহোবার সাক্ষিদের সংখ্যা এত বাড়তে দেখে বিরোধীরা ভীষণ রেগে যায়। তাই ১৯৫২ সালে একদিন আমি কাজ থেকে ফিরে দেখি যে আমাদের ঘর পুড়ে একেবারে শেষ হয়ে গেছে। ম্যারিয়ানথি অনেক কষ্টে শুধু প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। ওই দিন রাতে সভায় এসে আমরা সবাইকে বলেছিলাম যে আগুনে পুড়ে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই আমরা বাধ্য হয়ে এই ময়লা কাপড়ে সভায় এসেছি। আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন আর আমাদের অনেক সাহায্য করেছিলেন।

১৯৬১ সালে, আমাকে ভ্রমণের কাজ দেওয়া হয় যাতে আমি প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন মণ্ডলীতে গিয়ে ভাইদের আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করি। এমন করে ২৭ বছর ধরে, ম্যারিয়ানথি ও আমি ম্যাসিডোনিয়া, তার্স ও থেসালিয়ার সীমা ও জেলাগুলোতে পরিদর্শন করি। যদিও ১৯৪৮ সাল থেকে আমার স্ত্রী ম্যারিয়ানথি বলতে গেলে চোখে দেখতেই পেত না তবুও সে আমার পাশে পাশে থেকে নির্ভিকভাবে কাজ করেছে আর বিশ্বাসের বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করেছে। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল আর অনেকবার জেলে দেওয়া হয়েছিল। পরে তার শরীর ভাঙতে শুরু করে আর এভাবে ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে লড়তে ১৯৮৮ সালে সে মারা যায়।

ওই একই বছরে আমি থিষলনীকায় বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে কাজ শুরু করি। যিহোবার সেবায় এই ৫৬ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আজকে এখনও আমি কঠোর পরিশ্রম করতে পারি এবং পরিচর্যার সমস্ত দিকগুলোতে অংশ নিই। কখনও কখনও আমি আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে সপ্তায় ২০টা পর্যন্ত বাইবেল অধ্যয়ন করেছি।

আমি এইজন্য খুবই কৃতজ্ঞ যে এখন আমরা যিহোবার এক মহৎ শিক্ষা কর্মসূচির শুরুতে আছি যা যিহোবার নতুন জগতে সহস্র বছর ধরে চলতেই থাকবে। তাই আমার মনে হয় যে এটা কোনভাবেই পিছিয়ে পড়ার, নিছক বসে থাকার অথবা সুখবিলাসে মেতে থাকার সময় নয়। আমি প্রথমে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তা রাখতে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই কারণ যিহোবা সত্যি সত্যিই আমাদের সর্বান্তকরণের সেবা ও উপাসনার যোগ্য।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রচার কাজ নিষিদ্ধ থাকাকালীন সময়ে বক্তৃতা দিচ্ছি

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্ত্রী, ম্যারিয়ানথির সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার