ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২১
  • যিহোবা কি আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চান?

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা কি আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চান?
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • অতীতে যিহোবা যা চেয়েছিলেন
  • ইস্রায়েলের জন্য যিহোবার ব্যবস্থা
  • যিহোবার ব্যবস্থা কি দুর্বহ বোঝা ছিল?
  • যিহোবা আসলেই যা চান
  • এটা খুব বেশি কিছু নয়
  • একজন বীরযোদ্ধা এবং একটি ছোটো মেয়ে
    বাইবেল থেকে তুমি যা শিখতে পার
  • তিনি একগুঁয়ে ছিলেন কিন্তু শেষে বাধ্য হয়েছিলেন
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সে সাহায্য করতে চেয়েছিল
    ২০০৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • একটি ছোট মেয়ে যে সাহসের সাথে কথা বলেছিল
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ১৬-২১

যিহোবা কি আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চান?

“ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?”—মীখা ৬:৮.

১. কিছু লোকেরা হয়তো কোন্‌ কারণে যিহোবাকে সেবা করতে চান না?

যিহোবা তাঁর লোকেদের কাছ থেকে কিছু চান। কিন্তু আপনি যখন ওপরে দেওয়া মীখার ভবিষ্যদ্বাণীটা পড়বেন, তখন হয়তো বুঝতে পারবেন যে ঈশ্বর যা চান তা যুক্তিসংগত। তবুও, অনেকেই আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার সেবা করতে চান না আর কিছু জন একসময় তাঁর সেবা করলেও এখন আর করেন না। কেন? কারণ তারা মনে করেন যে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চান। সত্যিই কি তাই? নাকি যিহোবা যা চান সেগুলোকে একজন ব্যক্তি যেভাবে দেখেন তাতে কোন সমস্যা আছে? একটা ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদেরকে এই বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করবে।

২. নামান কে ছিলেন এবং যিহোবার ভাববাদী তাকে কী করতে বলেছিলেন?

২ সিরিয়ার প্রধান সেনাপতি, নামানের কুষ্ঠরোগ হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল যে ইস্রায়েলে যিহোবার একজন ভাববাদী আছেন যিনি তাকে সুস্থ করতে পারবেন। তাই নামান ও তার দাসেরা ইস্রায়েলের উদ্দেশে রওনা দেন আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঈশ্বরের ভাববাদী ইলীশায়ের বাড়িতে এসে পৌঁছান। কিন্তু ইলীশায় তার এই সম্মানিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বাইরে না এসে, একজন দাসকে দিয়ে নামানকে বলে পাঠিয়েছিলেন: “আপনি . . . সাত বার যর্দ্দনে স্নান করুন, আপনার নূতন মাংস হইবে, ও আপনি শুচি হইবেন।”—২ রাজাবলি ৫:১০.

৩. যিহোবা যা করতে বলেছিলেন নামান প্রথমে কেন তা করতে চাননি?

৩ নামান যদি ঈশ্বরের ভাববাদীর কথা মতো কাজ করতেন, তবে এই জঘন্য রোগ থেকে সুস্থ হতে পারতেন। সুতরাং, যিহোবা কি তার কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চেয়েছিলেন? অবশ্যই না। কিন্তু, যিহোবা যা চেয়েছিলেন নামান প্রথমে তা করতে চাননি। “ইস্রায়েলের সমস্ত জলাশয় হইতে দম্মেশকের অবানা ও পর্পর নদী কি উত্তম নয়? আমি কি তাহাতে স্নান করিয়া শুচি হইতে পারি না?” এই কথা বলে নামান রাগ করে সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন।—২ রাজাবলি ৫:১২.

৪, ৫. (ক) নামানের বাধ্যতার পুরস্কার কী ছিল এবং সুস্থ হয়ে তিনি কি করেছিলেন? (খ) এখন আমরা কী দেখব?

৪ নামানের সমস্যাটা আসলে কী ছিল? তার কাছে এমন কিছু চাওয়া হয়নি যে তা করা খুব কঠিন কাজ ছিল। নামানের দাসেরা তার কাছে নিবেদন করেছিলেন: “ঐ ভাববাদী যদি কোন মহৎ কর্ম্ম করিবার আজ্ঞা আপনাকে দিতেন, আপনি কি তাহা করিতেন না? তবে স্নান করিয়া শুচি হউন, তাঁহার এই আজ্ঞাটী কি মানিবেন না?” (২ রাজাবলি ৫:১৩) নামান এটাকে যেভাবে দেখেছিলেন তাতে সমস্যা ছিল। তিনি মনে করেছিলেন যে যতটা সম্মান তার পাওয়া উচিত ছিল ততটা সম্মান তাকে দেখানো হয়নি আর তাকে এমনকিছু করতে বলা হয়েছে যা করার কোন মানে হয় না ও যা করলে তার অপমান হবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত নামান তার দাসেদের কথা শুনেছিলেন এবং জর্দন নদীতে সাত বার ডুব দিয়েছিলেন। আর যখন “ক্ষুদ্র বালকের ন্যায় তাঁহার নূতন মাংস হইল, ও তিনি শুচি হইলেন” তখন তিনি কতটা খুশি হয়েছিলেন তা একবার কল্পনা করুন! তার মন কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছিল। এছাড়াও, নামান ঘোষণা করেছিলেন যে এখন থেকে তিনি যিহোবা ছাড়া আর অন্য কোন দেবতার উপাসনা করবেন না।—২ রাজাবলি ৫:১৪-১৭.

৫ যিহোবা বিভিন্ন সময়ে লোকেদের বিভিন্ন নিয়ম দিয়েছিলেন এবং চেয়েছিলেন যেন তারা সেগুলো মেনে চলে। এখন আমরা আপনাদের এর মধ্যে থেকে কিছু নিয়ম পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। পরীক্ষা করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে যিহোবা যদি আমার কাছ থেকেও এই বিষয়গুলো চাইতেন, তাহলে আমি কী করতাম। পরে আমরা দেখব যে আজকে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

অতীতে যিহোবা যা চেয়েছিলেন

৬. প্রথম মানব দম্পতিকে কী করতে বলা হয়েছিল এবং আপনি এইরকম নির্দেশগুলোতে কীভাবে সাড়া দিতেন?

৬ যিহোবা প্রথম মানব দম্পতি আদম ও হবাকে সন্তান জন্ম দিতে, পৃথিবীকে বশীভূত করতে এবং পশুপাখিদের ওপরে কর্তৃত্ব করতে বলেছিলেন। এছাড়া তিনি তাদের দুজনকে একটা বিরাট বাগানবাড়িও দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৭, ২৮; ২:৯-১৫) তবে তাদের ওপর একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। এদন বাগানের অনেক গাছের মধ্যে থেকে একটা নির্দিষ্ট গাছের ফল খেতে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) এটা কি খুব বেশি কিছু চাওয়া ছিল? আপনি কি এইরকম একটা কাজ খুশি মনে করতেন না, যা করলে আপনি পুরোপুরি সুস্থভাবে অনন্ত কাল বেঁচে থাকতে পারবেন? বাগানে যদি কোন প্রলোভনকারী এসেও থাকে, আপনি কি তার কথাকে অগ্রাহ্য করতেন না? আর আপনি কি মেনে নিতেন না যে যিহোবার এই সামান্য নিষেধাজ্ঞাটা দেওয়ার অধিকার আছে?—আদিপুস্তক ৩:১-৫.

৭. (ক) নোহকে কোন্‌ কাজ দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে কোন্‌ বিরোধিতা সহ্য করতে হয়েছিল? (খ) যিহোবা নোহের কাছ থেকে যা চেয়েছিলেন সেটাকে আপনি কোন্‌ চোখে দেখেন?

৭ পরে, যিহোবা নোহকে একটা জাহাজ বানাতে বলেছিলেন যাতে পৃথিবীব্যাপী জলপ্লাবনের সময় সেটাতে করে জীবন রক্ষা করা যায়। জাহাজের বিরাট আকার থেকে বোঝা যায় যে কাজটা খুব সহজ ছিল না আর নোহ যখন তা বানাচ্ছিলেন তখন অনেক লোকেরা তাকে উপহাস করেছিল আবার অনেকে বিরোধিতাও করেছিল। কিন্তু, তার পরিবার আর হাজার হাজার পশুপাখির জীবন রক্ষা করার কত বড় এক সুযোগ নোহ পেয়েছিলেন! (আদিপুস্তক ৬:১-৮, ১৪-১৬; ইব্রীয় ১১:৭; ২ পিতর ২:৫) আপনাকেও যদি এইরকম একটা কাজ দেওয়া হতো, তবে আপনি কি প্রাণপণ পরিশ্রম করে তা শেষ করতেন না? নাকি আপনি মনে করতেন যে যিহোবা আপনার কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চাচ্ছেন?

৮. অব্রাহামকে কী করতে বলা হয়েছিল এবং তার বাধ্যতা কী দেখিয়েছিল?

৮ ঈশ্বর অব্রাহামকে এমন একটা কাজ করতে বলেছিলেন যা করা খুবই কঠিন ছিল। তিনি বলেছিলেন: “তুমি আপন পুত্ত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্ত্রকে, যাহাকে তুমি ভাল বাস, সেই ইস্‌হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও, এবং তথাকার যে এক পর্ব্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব, তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর।” (আদিপুস্তক ২২:২) যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে ইস্‌হাকের বংশ বৃদ্ধি পাবে কিন্তু তখনও যেহেতু ইস্‌হাকের কোন সন্তান ছিল না, তাই ইস্‌হাককে আবারও জীবিত করার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে কি না সেই বিষয়ে অব্রাহামের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল। অব্রাহাম যখন ইস্‌হাককে বলি দিতে যাচ্ছিলেন, তখন ঈশ্বর এই যুবকের জীবন রক্ষা করেছিলেন। ওই ঘটনা দেখিয়েছিল যে ঈশ্বর মানবজাতির জন্য তাঁর নিজের পুত্রকে বলি হতে দেবেন ও পরে তাঁকে পুনরুত্থিত করবেন।—আদিপুস্তক ১৭:১৯; ২২:৯-১৮; যোহন ৩:১৬; প্রেরিত ২:২৩, ২৪, ২৯-৩২; ইব্রীয় ১১:১৭-১৯.

৯. কেন যিহোবা অব্রাহামের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চাননি?

৯ কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন যে যিহোবা ঈশ্বর অব্রাহামের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চেয়েছিলেন। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আমাদের সৃষ্টিকর্তা, যিনি মৃতদের পুনরুত্থিত করতে পারেন, তিনি যদি আমাদের কাছ থেকে বাধ্যতা চান আর এর জন্য যদি আমাদের কিছু দিনের জন্য মারা যেতেও হয়, তবে তা কি সত্যিই নিষ্ঠুরতা? যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর প্রাথমিক শিষ্যরা তা মনে করতেন না। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য তারা শারীরিক নির্যাতন ভোগ করতে আর এমনকি মারা যেতেও প্রস্তুত ছিলেন। (যোহন ১০:১১, ১৭, ১৮; প্রেরিত ৫:৪০-৪২; ২১:১৩) যদি এমন কোন পরিস্থিতি আসে, তাহলে আপনিও কি তা করতে প্রস্তুত থাকবেন? যে লোকেরা ঈশ্বরের লোক হতে চেয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে যিহোবা যা চেয়েছিলেন আসুন আমরা এখন তার কিছু দেখি।

ইস্রায়েলের জন্য যিহোবার ব্যবস্থা

১০. যিহোবা যা কিছু বলেছিলেন কারা তা করবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল এবং তিনি তাদের কী দিয়েছিলেন?

১০ অব্রাহামের বংশধরেরা অর্থাৎ তার পুত্র ইস্‌হাক ও নাতি যাকোব বা ইস্রায়েলের সন্তানেরা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও পরে তাদের ইস্রায়েল জাতি বলা হয়। যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩২:২৮; ৪৬:১-৩; ২ শমূয়েল ৭:২৩, ২৪) এর কিছুদিন পরই তারা প্রতিজ্ঞা করেছিল যে ঈশ্বর তাদের যা করতে বলবেন তারা তাই করবে। তারা বলেছিল: “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:৮) যেহেতু ইস্রায়েল জাতি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী চলতে চেয়েছিল, তাই যিহোবা তাদেরকে ছ’শরও বেশি নিয়ম দিয়েছিলেন ও সেইসঙ্গে দশ আজ্ঞা দিয়েছিলেন। মোশির মাধ্যমে দেওয়া ঈশ্বরের এই নিয়মগুলো পরে ‘ব্যবস্থা’ বলে পরিচিত হয়েছিল।—ইষ্রা ৭:৬; লূক ১০:২৫-২৭; যোহন ১:১৭.

১১. ব্যবস্থার একটা উদ্দেশ্য কী ছিল এবং কিছু নিয়ম কী যা এটা পূর্ণ করতে সাহায্য করেছিল?

১১ ব্যবস্থার একটা উদ্দেশ্য ছিল ইস্রায়েলীয়দের সুরক্ষা জোগানো। তাদের যৌন নৈতিকতা, ব্যাবসায়িক লেনদেন ও সন্তান লালন-পালনের মতো বিষয়গুলো সম্বন্ধে গঠনমূলক নিয়ম দেওয়া হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৪; লেবীয় পুস্তক ১৮:৬-১৮, ২২-২৪; ১৯:৩৫, ৩৬; দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৯) স্বজাতীয় লোক আর সেইসঙ্গে পশুদের সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করতে হবে সেই বিষয়েও নিয়ম দেওয়া হয়েছিল। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮; দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৪, ১০) লোকেদের বলা হয়েছিল যেন তারা বার্ষিক পর্বগুলোতে যোগ দেয় এবং উপাসনার জন্য একত্রিত হয় আর তা তাদের আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করেছিল।—লেবীয় পুস্তক ২৩:১-৪৩; দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১০-১৩.

১২. ব্যবস্থার মুখ্য উদ্দেশ্য কী ছিল?

১২ ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, যিনি লিখেছিলেন: “অপরাধের কারণ তাহা যোগ করা হইয়াছিল, যে পর্য্যন্ত না সেই বংশ [খ্রীষ্ট] আইসেন, যাঁহার কাছে প্রতিজ্ঞা করা গিয়াছিল।” (গালাতীয় ৩:১৯) ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের মনে করিয়ে দিত যে তারা অসিদ্ধ। তাই যুক্তিসংগতভাবেই তাদের এমন এক সিদ্ধ বলিদানের দরকার ছিল যা তাদের পাপকে একেবারে মুছে ফেলতে পারত। (ইব্রীয় ১০:১-৪) তাই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল যীশুকে মেনে নেওয়ার জন্য লোকেদের তৈরি করা, যিনি মশীহ বা খ্রীষ্ট ছিলেন। পৌল লিখেছিলেন: “ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল, যেন আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই।”—গালাতীয় ৩:২৪.

যিহোবার ব্যবস্থা কি দুর্বহ বোঝা ছিল?

১৩. (ক) অসিদ্ধ মানুষেরা ব্যবস্থাকে কীভাবে দেখেছিল এবং কেন? (খ) ব্যবস্থা কি আসলেই দুর্বহ বোঝা ছিল?

১৩ যদিও ব্যবস্থা “পবিত্র, ন্যায্য ও উত্তম” ছিল, তবুও অনেকেই এটাকে দুর্বহ বোঝা মনে করেছিল। (রোমীয় ৭:১২) ব্যবস্থা সিদ্ধ ছিল বলে ইস্রায়েলীয়রা এর উঁচু মানদণ্ড অনুযায়ী চলতে পারেনি। (গীতসংহিতা ১৯:৭) এইজন্যই প্রেরিত পিতর এটাকে “যোঁয়ালি” বলেছিলেন “যাহার ভার না আমাদের পিতৃপুরুষেরা, না আমরা বহন করিতে সমর্থ হইয়াছি?” (প্রেরিত ১৫:১০) কিন্তু ব্যবস্থা দুর্বহ বোঝা ছিল না কারণ তা মেনে চললে লোকেদের উপকারই হতো।

১৪. কিছু উদাহরণ কী যা দেখায় যে ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের অনেক উপকার করেছিল?

১৪ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যবস্থার অধীনে একজন চোরকে জেলে দেওয়া হতো না কিন্তু তাকে পরিশ্রম করে চুরি করা জিনিসের দ্বিগুণ বা আরও বেশি জিনিস ফিরিয়ে দিতে হতো। ফলে যার জিনিস চুরি করা হয়েছিল তার কোন ক্ষতি হতো না আর জেল চালানোর জন্য খেটে খাওয়া লোকেদের ওপর করের বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হতো না। (যাত্রাপুস্তক ২২:১, ৩, ৪, ৭) অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া নিষেধ ছিল। শূকরের মাংস যদি ঠিক মতো সিদ্ধ করা না হয়, তবে তার থেকে ট্রিচিনোসিস নামে একধরনের রোগ হতে পারে যার ফলে পেশীতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ইত্যাদি হয় আর খরগোশের মাংস খাওয়ার ফলে প্লেগ জাতীয় রোগ হতে পারে। (লেবীয় পুস্তক ১১:৪-১২) একইভাবে, মৃতদেহ স্পর্শ করতে নিষেধ করেও ব্যবস্থা সুরক্ষা জুগিয়েছিল। একজন ব্যক্তি যদি মৃতদেহ স্পর্শ করতেন, তাহলে তাকে স্নান করতে হতো আর সেইসঙ্গে জামাকাপড়ও ধুতে হতো। (লেবীয় পুস্তক ১১:৩১-৩৬; গণনা পুস্তক ১৯:১১-২২) মলমূত্র মাটি চাপা দিতে হতো যা জীবাণু ছড়িয়ে পড়া থেকে লোকেদের রক্ষা করেছিল, যেগুলোর অস্তিত্বকে মাত্র কয়েকশ বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১৩.

১৫. কী ইস্রায়েলীয়দের কাছে দুর্বহ বোঝা প্রমাণিত হয়েছিল?

১৫ ব্যবস্থা লোকেদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চায়নি। কিন্তু যারা ব্যবস্থার ব্যাখ্যাকারক হয়ে উঠেছিলেন তারা লোকেদের ওপর প্রচুর নিয়মের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এই নিয়মগুলোর বিষয়ে জেমস হেস্টিংসের বাইবেলের অভিধান (ইংরেজি) বই বলে: “বাইবেলের প্রত্যেকটা আজ্ঞা অহেতুক নিয়মের বেড়াজালে ঘেরা ছিল। . . . ছোটখাটো সমস্ত ব্যাপারকে ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার আর নিজেদের বানানো নিয়ম দিয়ে মানুষকে পদে পদে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। . . . এত বেশি নিয়ম ছিল যে লোকেরা তাদের বিবেক অনুসারে ভাল মন্দ বিচার করতেও ভুলে গিয়েছিল; অসংখ্য বাহ্যিক নিয়মের তলায় চাপা পড়ে ঈশ্বরের বাক্য যেন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল আর লোকেদের জীবনে এর প্রভাবকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছিল।”

১৬. ধর্মীয় নেতাদের দুর্বহ নিয়ম ও পরম্পরাগত বিধি সম্বন্ধে যীশু কী বলেছিলেন?

১৬ যীশু খ্রীষ্ট সবার সামনে সেসব ধর্মীয় নেতাদের দোষারোপ করেছিলেন, যারা লোকেদের ওপর নিয়মের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল: “তাহারা ভারী দুর্ব্বহ বোঝা বাঁধিয়া লোকদের কাঁধে চাপাইয়া দেয়, কিন্তু আপনারা অঙ্গুলি দিয়াও তাহা সরাইতে চাহে না।” (মথি ২৩:২, ৪) তিনি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে মানুষের বানানো দুর্বহ নিয়ম ও পরম্পরাগত বিধিগুলো, যার মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম ছিল, “ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল” করেছিল। (মার্ক ৭:১-১৩; মথি ২৩:১৩, ২৪-২৬) এমনকি যীশু পৃথিবীতে আসার আগে, ইস্রায়েলের যাজকেরা যিহোবা আসলেই কী চান তার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

যিহোবা আসলেই যা চান

১৭. অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের হোমবলিতে ঈশ্বর সন্তুষ্ট ছিলেন না কেন?

১৭ ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “মেষের, হোমবলিতে ও পুষ্ট পশুর মেদে আমার আর রুচি নাই; বৃষের কি মেষের, কি ছাগের রক্তে আমার কিছু সন্তোষ নাই।” (যিশাইয় ১:১০, ১১) কেন ঈশ্বর হোমবলিতে আর সন্তুষ্ট ছিলেন না, যা তিনি নিজেই ব্যবস্থায় চেয়েছিলেন? (লেবীয় পুস্তক ১:১–৪:৩৫) কারণ লোকেরা তাঁকে অসম্মান করেছিল। তাই তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল: “তোমরা আপনাদিগকে ধৌত কর, বিশুদ্ধ কর, আমার নয়নগোচর হইতে তোমাদের ক্রিয়ার দুষ্টতা দূর কর; কদাচরণ ত্যাগ কর; সদাচরণ শিক্ষা কর, ন্যায়বিচারের অনুশীলন কর, উপদ্রবী লোককে শাসন কর, পিতৃহীন লোকের বিচার নিষ্পত্তি কর, বিধবার পক্ষ সমর্থন কর।” (যিশাইয় ১:১৬, ১৭) এটা কি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে না যে যিহোবা তাঁর দাসদের কাছ থেকে আসলেই কী চান?

১৮. ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে আসলে কী চেয়েছিলেন?

১৮ ঈশ্বর আসলেই কী চান তা যীশু বলেছিলেন। তিনি তা বলেছিলেন যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “ব্যবস্থার মধ্যে কোন্‌ আজ্ঞা মহৎ?” যীশু উত্তরে বলেছিলেন: “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,’ এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা। আর দ্বিতীয়টী ইহার তুল্য; ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’ এই দুইটি আজ্ঞাতেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদিগ্রন্থও ঝুলিতেছে।” (মথি ২২:৩৬-৪০; লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮; দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৬) ভাববাদী মোশিও একই বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যখন তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার কাছে কি চাহেন? কেবল এই, যেন তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় কর, তাঁহার সকল পথে চল ও তাঁহাকে প্রেম কর, এবং তোমার সমস্ত হৃদয় ও তোমার সমস্ত প্রাণের সহিত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা কর, . . . সদাপ্রভুর . . . আজ্ঞা ও বিধি . . . পালন কর।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩; ১৫:৭, ৮.

১৯. কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা নিজেদের পবিত্র দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু যিহোবা তাদের কী বলেছিলেন?

১৯ পাপী হওয়া সত্ত্বেও ইস্রায়েলীয়রা নিজেদের পবিত্র দেখাতে চেয়েছিল। যদিও ব্যবস্থায় শুধু বার্ষিক প্রায়শ্চিত্তের দিনে উপবাস করার নিয়ম ছিল কিন্তু তারা ঘন ঘন উপবাস করতে শুরু করেছিল। (লেবীয় পুস্তক ১৬:৩০, ৩১) তাই যিহোবা তাদের তিরস্কার করেছিলেন এই বলে: “আমার মনোনীত উপবাস কি এই নয়? দুষ্টতার গাঁট সকল খুলিয়া দেওয়া, যোঁয়ালির খিল মুক্ত করা, এবং দলিত লোকদিগকে স্বাধীন করিয়া ছাড়িয়া দেওয়া, ও প্রত্যেক যোঁয়ালি ভগ্ন করা কি নয়? ক্ষুধিত লোককে তোমার খাদ্য বন্টন করা, তাড়িত দুঃখীদিগকে গৃহে আশ্রয় দেওয়া, ইহা কি নয়? উলঙ্গকে দেখিলে তাহাকে বস্ত্র দান করা, তোমার নিজ মাংস হইতে আপনার গা না ঢাকা, ইহা কি নয়?”—যিশাইয় ৫৮:৩-৭.

২০. কেন যীশু ধর্মীয় কপটীদের তিরস্কার করেছিলেন?

২০ আত্ম-ধার্মিক ইস্রায়েলীয়রা সেই ধর্মীয় কপটীদের মতোই ছিল যাদের সম্বন্ধে যীশু বলেছিলেন: “তোমরা পোদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়া থাক; আর ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছ; কিন্তু এ সকল পালন করা, এবং ঐ সকলও পরিত্যাগ না করা, তোমাদের উচিত ছিল।” (মথি ২৩:২৩; লেবীয় পুস্তক ২৭:৩০) যীশুর এই কথাগুলো কি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে না যে যিহোবা আসলেই আমাদের কাছ থেকে কী চান?

২১. যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান ও কী চান না তা ভাববাদী মীখা কীভাবে সংক্ষেপে বলেছিলেন?

২১ যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান ও কী চান না তা স্পষ্ট করে বোঝানোর জন্য ঈশ্বরের ভাববাদী মীখা জিজ্ঞেস করেছিলেন: “‘আমি কি লইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হইব, ঊর্দ্ধ্বস্থ ঈশ্বরের সম্মুখে প্রণত হইব? আমি কি হোমবলি লইয়া, একবর্ষীয় গোবৎসদিগকে লইয়া, তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইব? সহস্র সহস্র মেষে ও অযুত অযুত তৈলপ্রবাহে কি সদাপ্রভু প্রসন্ন হইবেন? আমি আপন অধর্ম্মের নিমিত্ত কি আপনার প্রথমজাত পুত্ত্রকে দিব? আমার প্রাণের পাপ প্রযুক্ত কি শরীরের ফল দান করিব?’ হে মনুষ্য, যাহা ভাল, তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুতঃ ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন [কী চান]?”—মীখা ৬:৬-৮.

২২. যারা ব্যবস্থার অধীনে ছিল তাদের কাছ থেকে যিহোবা বিশেষ করে কী চেয়েছিলেন?

২২ তাহলে, যারা ব্যবস্থার অধীনে ছিল তাদের কাছ থেকে যিহোবা বিশেষ করে কী চেয়েছিলেন? অবশ্যই তাদের যিহোবা ঈশ্বরকে প্রেম করতে হতো। এছাড়াও, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “সমস্ত ব্যবস্থা এই একটী বচনে পূর্ণ হইয়াছে, যথা, ‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’” (গালাতীয় ৫:১৪) একইভাবে পৌল রোমের খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “পরকে যে প্রেম করে, সে ব্যবস্থা পূর্ণরূপে পালন করিয়াছে। . . . প্রেমই ব্যবস্থার পূর্ণসাধন।”—রোমীয় ১৩:৮-১০.

এটা খুব বেশি কিছু নয়

২৩, ২৪. (ক) যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা কেন কখনোই খুব বেশি কিছু হতে পারে না? (খ) আমরা এর পরে কী আলোচনা করব?

২৩ যিহোবা ঈশ্বর কতটা প্রেমময়, চিন্তাশীল ও করুণাময় তা কি আমাদের মধ্যে ছাপ ফেলে না? তাঁর একজাত পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের প্রেমের মহিমা দেখানোর জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন অর্থাৎ লোকেদের জানানোর জন্য যে যিহোবার কাছে তারা কতটা মূল্যবান। ঈশ্বরের প্রেম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যীশু ছোট্ট চড়ুই পাখিদের উদাহরণ দিয়েছিলেন: “তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটীও ভূমিতে পড়ে না।” তাই তিনি এই বলে শেষ করেছিলেন: “ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।” (মথি ১০:২৯-৩১) এমন একজন প্রেমময় পিতা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা কখনই খুব বেশি কিছু হতে পারে না!

২৪ কিন্তু, আজকে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান? আর কেনই বা কিছুজন মনে করেন যে ঈশ্বর খুব বেশি কিছু চান? এই প্রশ্নগুলো পরীক্ষা করে আমরা দেখব যে যিহোবা যা কিছুই চান না কেন, তা করা কেন এক চমৎকার সুযোগ।

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

◻ কেন কিছুজন যিহোবার সেবা থেকে সরে যেতে পারেন?

◻ বিভিন্ন সময়ে কীভাবে যিহোবার চাহিদা বদলেছে?

◻ ব্যবস্থা কোন্‌ উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছিল?

◻ যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা কেন খুব বেশি কিছু নয়?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

মানুষের তৈরি নিয়মগুলোর জন্য উপাসনা দুর্বহ বোঝা হয়ে উঠেছিল, যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার