আপনি আপনার ভাইকে লাভ করতে পারেন
“যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে।”—মথি ১৮:১৫.
১, ২. সমস্যাকে মিটিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যীশু কোন্ বাস্তব উপদেশ দিয়েছিলেন?
পৃথিবীতে যীশুর পরিচর্যা শেষ হতে আর এক বছরের চেয়েও কম সময় বাকি আছে, এই সময়ের মধ্যে তাঁকে তাঁর শিষ্যদের জরুরি কিছু শিক্ষা দিতে হবে। সেগুলো আপনি মথি ১৮ অধ্যায়ে পাবেন। এর মধ্যে একটা ছিল শিশুদের মতো নম্র হওয়ার বিষয়ে। পরে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন আমাদের অবশ্যই ‘ক্ষুদ্রজনের মধ্যে এক জনেরও’ বিঘ্ন জন্মানোকে এড়িয়ে চলতে হবে এবং এই ‘ক্ষুদ্রদিগকে’ বিপথগামী হওয়া থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে যাতে তারা বিনষ্ট না হন। এরপর যীশু, খ্রীষ্টান ভাইবোনদের মধ্যে যে কোন সমস্যাকে মিটিয়ে ফেলার ওপর অনেক জরুরি ও বাস্তব উপদেশ দেন।
২ আপনার হয়তো তাঁর এই কথাগুলো মনে আছে: “যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন অপরাধ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে। কিন্তু যদি সে না শুনে, তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন ‘দুই কিম্বা তিন জন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হয়।’ আর যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক।” (মথি ১৮:১৫-১৭) কখন আমরা এই উপদেশ কাজে লাগাব এবং তা করার সময় আমাদের মনোভাব কেমন হবে?
৩. অন্যেরা যখন ভুল করেন তখন তাদের প্রতি সাধারণত আমাদের কেমন মনোভাব থাকা উচিত?
৩ আগের প্রবন্ধ খুব জোর দিয়ে বলেছে যে আমরা সবাই অসিদ্ধ এবং ভুল করি, তাই আমাদের অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা দরকার। আর বিশেষভাবে তখন দরকার, যদি আমরা আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেদের কোন কথা অথবা কাজে দুঃখ পাই। (১ পিতর ৪:৮) সেইরকম হলে সাধারণত দোষ উপেক্ষা করা অর্থাৎ ক্ষমা করা ও ভুলে যাওয়াই ভাল। এটা করে আমরা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে শান্তি রাখার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি। (গীতসংহিতা ১৩৩:১; হিতোপদেশ ১৯:১১) কিন্তু, এমন পরিস্থিতিও হয়তো আসতে পারে যখন আপনি মনে করতে পারেন, যে ভাই বা বোন আপনাকে দুঃখ দিয়েছে তার সঙ্গে আপনার সমস্যাটা মিটমাট করে ফেলা দরকার। এমন পরিস্থিতিতে ওপরে বলা যীশুর কথাগুলো আমাদের সাহায্য করে।
৪. অন্যেরা ভুল করলে মথি ১৮:১৫ পদের নীতিটা আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি?
৪ যীশু উপদেশ দিয়েছিলেন, “যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) তা করা বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু জার্মান অনুবাদ এই কথাগুলোকে এভাবে অনুবাদ করে, তার দোষকে “চার চোখের মধ্যে রাখ” অর্থাৎ আপনার ও তার, আপনাদের দুজনের চোখের মধ্যে। প্রেমের সঙ্গে আপনি যখন সমস্যাটা নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেন, তখন তা সমাধান করা সাধারণত আরও সহজ হয়ে যায়। যে ভাই কোন কথায় বা কাজে আপনাকে অপমান করেছেন বা আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন, তার হয়তো শুধু আপনার সামনে তার দোষ মেনে নেওয়াকে সহজ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু অন্য কারও সামনে হলে মানুষের অসিদ্ধতার জন্য তিনি হয়তো তার ভুল স্বীকার নাও করতে পারেন অথবা তিনি যা করেছেন তার জন্য অজুহাত খুঁজতে শুরু করতে পারেন। কিন্তু আপনি যখন “চার চোখের মধ্যে” কথাবার্তা বলবেন তখন হয়তো আপনি দেখবেন যে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা কোন ভুল বা পাপ ছিল না, বরং নিতান্তই ভুলবোঝাবুঝি ছিল। আপনারা দুজনেই যখন বুঝতে পারবেন যে এটা নিছক ভুলবোঝাবুঝি, তখন এই তুচ্ছ বিষয়টাকে আপনাদের সম্পর্ককে নষ্ট করতে না দিয়ে আপনারা সমস্যাটা মিটমাট করে ফেলতে পারবেন। তাই মথি ১৮:১৫ পদের নীতিটা প্রতিদিনের বিভিন্ন ছোটখাটো ভুলত্রুটির বেলায়ও খাটে।
তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?
৫, ৬. মথি ১৮:১৫ পদের প্রসঙ্গে আসলে কোন্ ধরনের পাপের কথা বলা হয়েছে আর তা থেকে আমরা কী বুঝি?
৫ আসলে নিখুঁতভাবে বলতে গেলে যীশুর উপদেশ আরও বড় বিষয়ের জন্য ছিল। যীশু বলেছিলেন “যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন অপরাধ [পাপ] করে।” ব্যাপক অর্থে যে কোন অন্যায় কিংবা ভুলকে “পাপ” বলা যায়। (ইয়োব ২:১০; হিতোপদেশ ২১:৪; যাকোব ৪:১৭) কিন্তু, প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যায় যীশু যে পাপের বিষয় বোঝাতে চেয়েছিলেন তা নিশ্চয়ই আরও বেশি গুরুতর। সেটা এতই গুরুতর ছিল যে অন্যায়কারীকে “পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য” বলে মনে করা যেত। কিন্তু ওই কথার অর্থ কী?
৬ যীশুর যে শিষ্যরা ওই কথাগুলো শুনেছিলেন তারা জানতেন যে তাদের দেশের লোকেরা পরজাতীয় লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করেন না। (যোহন ৪:৯; ১৮:২৮; প্রেরিত ১০:২৮) আর তারা করগ্রাহীদের এড়িয়ে চলতেন কারণ এই লোকেরা যিহূদী হয়ে জন্ম নিয়েও যিহূদী লোকেদের ওপর অত্যাচার করত। তাই সঠিক করে বলতে গেলে মথি ১৮:১৫-১৭ পদে যে পাপের কথা বলা হয়েছে তা ছিল গুরুতর পাপ, নিজেদের মধ্যে কোন ভুলত্রুটি কিংবা মনোমালিন্য নয়, যা আপনি সহজেই ক্ষমা করে দিতে ও ভুলে যেতে পারেন।—মথি ১৮:২১, ২২.a
৭, ৮. (ক) কোন্ ধরনের পাপ প্রাচীনদের মিটমাট করা দরকার? (খ) মথি ১৮:১৫-১৭ পদ অনুযায়ী কোন্ ধরনের পাপ দুজন খ্রীষ্টানই মিটমাট করে নিতে পারেন?
৭ মোশির ব্যবস্থায় কিছু কিছু পাপ যেমন ঈশ্বরনিন্দা, ধর্মভ্রষ্টতা, প্রতিমাপূজা ও ব্যভিচার, পারদারিকতা ও সমকামিতার কথা প্রাচীনদের (অথবা যাজকদের) কাছে জানাতে হতো এবং তারা বিষয়গুলোর মীমাংসা করতেন, শুধু যার বিরুদ্ধে পাপ করা হয়েছে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়াই যথেষ্ট ছিল না। খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতেও একই বিষয় খাটে। (লেবীয় পুস্তক ৫:১; ২০:১০-১৩; গণনাপুস্তক ৫:৩০; ৩৫:১২; দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:৯; ১৯:১৬-১৯; হিতোপদেশ ২৯:২৪) লক্ষ্য করে দেখুন, যীশু এখানে যে পাপের বিষয়ে বলেছিলেন সেটা দুজন ব্যক্তির মধ্যেই মিটমাট করা যায়। যেমন: কারও ওপর রাগ করে বা কাউকে হিংসা করে একজন তার সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলতে পারেন। একজন খ্রীষ্টান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন কাজ শেষ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন। আরেকজন খ্রীষ্টান হয়তো মাসে মাসে কিংবা নির্দিষ্ট তারিখে টাকা শোধ করার বিষয়ে রাজি হতে পারেন। আরেকজন হয়তো কথা দিতে পারেন যে তাকে যিনি চাকরি দিয়েছেন তিনি যদি তাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেন, তাহলে তিনি (এমনকি অন্য চাকরি করলেও) তার মালিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন না কিংবা চুক্তিবদ্ধ সময়ের মধ্যে তার খরিদ্দার নষ্ট করবেন না।b একজন ভাই যদি তার কথা না রাখেন ও তার কাজের জন্য অনুতপ্ত না হন, তাহলে তা গুরুতর হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৮) তবে এইরকম ভুলগুলো দুজনের মধ্যেই মিটমাট করা যায়।
৮ কিন্তু সমস্যাটা মিটমাট করার জন্য আপনি কীভাবে এগোবেন? যীশুর কথাগুলোকে প্রায়ই তিনটে ধাপে দেখা হয়। আসুন আমরা প্রত্যেকটা ধাপ আলাদা আলাদা করে দেখি। সেগুলোকে কঠোর নিয়ম হিসেবে না দেখে বরং যীশুর কথার সত্যিকার অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন আর কখনও ভুলে যাবেন না যে আপনার লক্ষ্য হল প্রেমের সঙ্গে আপনার ভাইকে লাভ করা।
আপনার ভাইকে লাভ করার জন্য চেষ্টা করুন
৯. মথি ১৮:১৫ পদের উপদেশ কাজে লাগানোর সময় আমাদের কোন্ বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে?
৯ যীশু এই বলে শুরু করেছিলেন: “যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন পাপ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে।” এটা পরিষ্কার যে এইরকম পদক্ষেপ কেবল সন্দেহের বশে নেওয়া যাবে না। আপনার কাছে উপযুক্ত প্রমাণ অথবা সঠিক তথ্য থাকতে হবে, যেগুলো আপনি আপনার ভাইকে বোঝাতে ব্যবহার করবেন যে তিনি ভুল করেছিলেন এবং তা মীমাংসা করে নেওয়া খুবই জরুরি। আর সমস্যাটাকে আরও বড় হতে না দিয়ে অথবা মনে পুষে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে মিটিয়ে ফেলা ভাল। আর মনে রাখবেন যে বিষয়টা নিয়ে রাতদিন অযথা চিন্তা করলে তা আপনারও ক্ষতি করতে পারে। কথাবার্তা যেহেতু শুধু আপনাদের দুজনের মধ্যেই হবে তাই অন্যদের সহানুভূতি পাবার জন্য অথবা অন্যদের কাছে নিজেকে ভাল দেখানোর জন্য বিষয়টা অন্যদের কাছে বলে না বেড়ানোই ভাল। (হিতোপদেশ ১২:২৫; ১৭:৯) কেন? কারণ আপনি আপনার ভাইকে লাভ করতে চান।
১০. কী আমাদের ভাইকে লাভ করতে সাহায্য করবে?
১০ আপনার লক্ষ্য হল আপনার ভাইকে লাভ করা, তাকে শাস্তি দেওয়া, ছোট করা অথবা তার ক্ষতি করা নয়। তিনি যদি সত্যি সত্যিই পাপ করে থাকেন, তাহলে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ইতিমধ্যেই বিপদের মধ্যে রয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই চান যে সে এখনও আপনার খ্রীষ্টান ভাই হিসেবেই থাকুক। তাই এই কাজে আপনি তখনই বেশি সফল হতে পারবেন যদি আপনাদের দুজনের নিজেদের মধ্যেকার কথাবার্তায় আপনি শান্ত থাকেন, রূঢ়ভাবে কথা না বলেন কিংবা চিৎকার চেঁচামেচি না করেন। নিজেদের মধ্যেকার এই আলোচনায় আপনারা মনে রাখবেন যে আপনারা দুজনেই অসিদ্ধ, পাপী মানুষ। (রোমীয় ৩:২৩, ২৪) তিনি যখন বুঝতে পারবেন যে আপনি অন্যদেরকে এই বিষয়ে কিছু বলেননি এবং আপনি মন থেকে তাকে সাহায্য করতে চান তখন বিষয়টা মিটমাট করা আরও সহজ হয়ে যাবে। এইভাবে প্রেম দেখানো সত্যিই বুদ্ধির কাজ হবে বিশেষ করে যখন আপনি বুঝতে পারেন যে আপনারা দুজনেই ভুল করেছেন বা বিষয়টার মূলে আসলে শুধু ভুলবোঝাবুঝিই ছিল।—হিতোপদেশ ২৫:৯, ১০; ২৬:২০; যাকোব ৩:৫, ৬.
১১. যিনি অন্যায় করেছেন তিনি যদি আমাদের কথা না শোনেন তখন আমরা কী করতে পারি?
১১ আপনি যদি তাকে বুঝতে সাহায্য করেন যে আসলেই ভুল হয়েছে এবং তা গুরুতর, তাহলে তিনি হয়তো অনুতাপ করতে চাইতে পারেন। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে অহংকার একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। (হিতোপদেশ ১৬:১৮; ১৭:১৯) তাই, প্রথমেই তিনি যদি তার ভুল স্বীকার নাও করেন ও অনুতপ্ত নাও হন, তাহলেও পরের ধাপে যাওয়ার আগে আপনি হয়তো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে পারেন। যীশু বলেননি যে ‘শুধু একবার যাও এবং সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও।’ (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) যেহেতু এই পাপের মীমাংসা আপনি নিজেই করতে পারেন, তাই গালাতীয় ৬:১ পদে বলা মন নিয়ে এবং শুধু “চার চোখের মধ্যে” তার কাছে আবারও যাওয়ার কথা ভেবে দেখুন। আপনি হয়তো সফল হতেও পারেন। (যিহূদা ২২, ২৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) কিন্তু আপনি যদি বুঝতে পারেন যে সত্যি সত্যিই পাপ হয়েছে আর তিনি আপনার কথা শুনবেন না, তাহলে কী করবেন?
পরিপক্ব ভাইদের সাহায্য নেওয়া
১২, ১৩. (ক) সমস্যা মিটমাট করার বিষয়ে যীশুর বলা দ্বিতীয় ধাপটা কী? (খ) এই ধাপগুলো মানার সময় কোন্ কোন্ বিষয়ে আগে থেকে সাবধান হওয়া উপযুক্ত?
১২ আপনি যদি কোন গুরুতর ভুল করেন, তাহলে আপনি কি চাইবেন যে আপনাকে যারা সাহায্য করতে চান তারা তাড়াতাড়িই হাল ছেড়ে দিক? আপনি চাইবেন না। একইভাবে যীশু দেখিয়েছিলেন যে আপনার ভাইকে লাভ করার চেষ্টায় প্রথম ধাপ পর্যন্ত গিয়েই আপনার হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ আপনি চান যে তিনিও আপনার ও অন্যদের সঙ্গে ঈশ্বরের উপাসনা করুন। যীশু দ্বিতীয় ধাপের কথাও বলেছিলেন: “যদি সে না শুনে, তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন ‘দুই কিম্বা তিন জন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হয়।’”
১৩ যীশু “দুই এক ব্যক্তিকে” সঙ্গে নিতে বলেছিলেন। তিনি বলেননি যে প্রথম ধাপের পর আপনি সমস্যাটা নিয়ে অনেকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, ভ্রমণ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন অথবা সমস্যাটার বিষয়ে অন্য ভাইদের চিঠি লিখে জানাতে পারেন। আপনি হয়তো ভাল করে জানেন যে অন্যায় তারই কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। আপনি এমন কোন বাজে কথা ছড়াতে চাইবেন না যাতে আপনার ওপর অন্যের নামে মিথ্যা বলার দোষ দেওয়া যায়। (হিতোপদেশ ১৬:২৮; ১৮:৮) কিন্তু যীশু এক বা দুই জনকে সঙ্গে করে নিতে বলেছিলেন। কেন? আর এই এক বা দুই জন কারা হতে পারেন?
১৪. দ্বিতীয় ধাপের সময় আমরা কাদের সঙ্গে করে নিতে পারি?
১৪ আপনি আপনার ভাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে তিনি পাপ করেছেন এবং তার অনুতপ্ত হওয়া দরকার, যেন আপনার ও ঈশ্বরের সঙ্গে তার শান্তি বজায় থাকে আর আপনি আপনার ভাইকে লাভ করতে পারেন। এইসব করার জন্য সবচেয়ে ভাল হবে যদি সেই অন্যায় কাজের ‘দুই এক ব্যক্তি’ সাক্ষি থাকেন। হতে পারে যে ঘটনার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন অথবা ব্যাবসায়িক কোন ব্যাপারে কী হয়েছে (বা হয়নি) সেই সম্বন্ধে তাদের কাছে ঠিক ঠিক তথ্য আছে। কিন্তু ওই কাজের যদি কোন সাক্ষি না থাকে, তাহলে আপনি যাদেরকে নিয়ে আসবেন তাদের নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ হতে হবে, ফলে তারা ঠিক করতে পারবেন যে সত্যিই সেটা কোন অন্যায় ছিল কি না। এছাড়াও, পরে যদি দরকার হয় তখন তারা বলতে পারবেন যে কী কথাবার্তা হয়েছিল, সত্যি বিষয়টা কী ও কতখানি চেষ্টা করা হয়েছিল। (গণনাপুস্তক ৩৫:৩০; দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:৬) তাই এই ভাইরা এমন হবেন না যে তারা কোন পক্ষেই নন, শুধু সমস্যা মিটমাট করার জন্যই এসেছেন; কিন্তু তাদের সেখানে আসার উদ্দেশ্য হল আপনার ও তাদের, আপনাদের সকলের ভাইকে লাভ করা।
১৫. দ্বিতীয় ধাপের সময় খ্রীষ্টান প্রাচীনদেরকে সঙ্গে নেওয়া কেন সাহায্য করতে পারে?
১৫ আপনি যাদেরকে সঙ্গে নেবেন তাদের যে মণ্ডলীর প্রাচীনই হতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। কিন্তু প্রাচীনেরা হলেন পরিপক্ব ব্যক্তি, তাই তারা তাদের আধ্যাত্মিক যোগ্যতার গুণে আপনাদের অনেক বেশি সাহায্য করতে পারবেন। এইরকম প্রাচীনেরা “যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, . . . তদ্রূপ।” (যিশাইয় ৩২:১, ২) তাদের যুক্তি দেখানোর এবং ভাইবোনদের আবার ঠিক পথে ফিরিয়ে আনার অভিজ্ঞতা আছে। আর যিনি ভুল করেছেন তিনিও “মনুষ্যদের মধ্যে নানা বর”-দের ওপর আস্থা রাখতে পারবেন।c (ইফিষীয় ৪:৮, ১১, ১২) এই পরিপক্ব ব্যক্তিদের সামনে কথা বলা ও তাদের সঙ্গে প্রার্থনা করার ফলে এমন এক পরিবেশ তৈরি হয় যেখানে অনেক কঠিন সমস্যাকেও যেটাকে হয়তো একসময় মীমাংসা করা অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল তাও মিটমাট করা যেতে পারে।—যাকোব ৫:১৪, ১৫ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
তাকে লাভ করার শেষ চেষ্টা
১৬. যীশুর বলা তৃতীয় ধাপ কোন্টা?
১৬ দুটো ধাপের পরও যদি বিষয়টা মিটমাট না হয়, তাহলে তৃতীয় ধাপে অবশ্যই মণ্ডলীর অধ্যক্ষেরা থাকবেন। “আর যদি সে তাহাদের [দুই এক ব্যক্তির] কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক।” এই কথার অর্থ কী?
১৭, ১৮. (ক) ‘মণ্ডলীকে বলার’ অর্থ কী তা বুঝতে প্রাচীনকালের কোন্ নমুনা আমাদের সাহায্য করবে? (খ) আজকে আমরা কীভাবে এই ধাপকে কাজে লাগাতে পারি?
১৭ এর অর্থ এই নয় যে সেই পাপ অথবা অন্যায় সম্বন্ধে মণ্ডলীর সভাতে কিংবা বিশেষ কোন সভা ডেকে সবার সামনে বলতে হবে। আমাদের কী করতে হবে তা আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকেই জানতে পারি। প্রাচীন ইস্রায়েলে কেউ যদি বিদ্রোহী হতো, অপব্যয়ী অথবা মদ্যপায়ী হতো, তাহলে কী করা হতো সেই বিষয়টা দেখুন: “যদি কাহারো পুত্ত্র অবাধ্য ও বিরোধী হয়, পিতামাতার কথা না শুনে, এবং শাসন করিলেও তাহাদিগকে অমান্য করে; তবে তাহার পিতামাতা তাহাকে ধরিয়া নগরের প্রাচীনবর্গের নিকটে ও তাহার নিবাস-স্থানের নগর-দ্বারে লইয়া যাইবে; আর তাহারা নগরের প্রাচীনবর্গকে বলিবে, আমাদের এই পুত্ত্র অবাধ্য ও বিরোধী, আমাদের কথা মানে না, সে অপব্যয়ী ও মদ্যপায়ী। তাহাতে সেই নগরের সমস্ত পুরুষ তাহাকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—দ্বিতীয় বিবরণ ২১:১৮-২১.
১৮ ওই লোকের পাপের কথা পুরো ইস্রায়েল জাতিকে কিংবা এমনকি তার নিজের গোষ্ঠীর সবাইকেও শোনানো হতো না কিংবা তারা তার বিচারও করত না। এর বদলে স্বীকৃত ‘প্রাচীনবর্গ’ সমস্ত জাতির পক্ষে বিষয়টা মিটমাট করতেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৬, ১৭ পদের সঙ্গে তুলনা করুন যেখানে ‘তাৎকালিক যাজকেরা ও বিচারকর্ত্তাদের’ দ্বারা মীমাংসিত একটা বিষয় দেওয়া আছে।) একইভাবে আজকেও, তৃতীয় ধাপ যদি নিতেই হয়, তাহলে মণ্ডলীর প্রতিনিধি হয়ে প্রাচীনেরা বিষয়টা মিটমাট করেন। তাদের লক্ষ্যও একই, তারাও তাদের ভাইকে লাভ করার জন্য মনেপ্রাণে চেষ্টা করেন। তারা ন্যায়বিচার করেন, কোন কিছু না শুনেই বিচার করেন না বা পক্ষপাত দেখান না।
১৯. কোন বিষয়ের মীমাংসা করার জন্য প্রাচীনেরা কী করার চেষ্টা করবেন?
১৯ সত্যি সত্যিই কোন পাপ করা হয়েছে কি না (অথবা এখনও হচ্ছে কি না) তা ঠিক করার জন্য তারা আসল ঘটনা জানার চেষ্টা করবেন ও সমস্ত সাক্ষির কথা শুনবেন। তারা কলুষতা ও জগতের আত্মা থেকে মণ্ডলীকে রক্ষা করতে চান। (১ করিন্থীয় ২:১২; ৫:৭) তাদের আধ্যাত্মিক যোগ্যতা আছে তাই তারা “নিরাময় শিক্ষাতে উপদেশ দিতে এবং প্রতিকূলবাদীদের দোষ ব্যক্ত করিতে” মনেপ্রাণে চেষ্টা করবেন। (তীত ১:৯) তারা আশা করেন যে যিনি অন্যায় করেছেন তিনি সেই ইস্রায়েলীয়দের মতো হবেন না যাদের সম্বন্ধে যিহোবার ভাববাদী লিখেছিলেন: “আমি ডাকিলে তোমরা উত্তর দিতে না, আমি কথা কহিলে শুনিতে না; কিন্তু আমার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিতে, এবং যাহাতে আমার প্রীতি নাই, তাহাই মনোনীত করিতে।”—যিশাইয় ৬৫:১২.
২০. পাপী যদি কোন কিছু না শোনেন ও অনুতপ্ত না হন, তাহলে কী করা উচিত বলে যীশু বলেছিলেন?
২০ কিন্তু, মাঝে মাঝে দেখা যায় যে পাপী ব্যক্তি এইরকম মনোভাব দেখান। যদি তাই হয়, তাহলে কী করা দরকার সেই বিষয়ে যীশু খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন: “সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক।” প্রভু এখানে তার প্রতি নিষ্ঠুর হওয়ার বা তাকে ইচ্ছে করে আঘাত করার কথা বলছিলেন না। এছাড়া, অনুতাপহীন পাপীকে মণ্ডলী থেকে বের করার বিষয়ে প্রেরিত পৌলের নির্দেশের মধ্যেও না বোঝার কিছু নেই। (১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩) আর হতে পারে যে সমাজচ্যুত করার ফলে আমরা শেষ পর্যন্ত ওই পাপীকে লাভ করতে পারব।
২১. কাউকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়ার পরও তার জন্য কোন্ সুযোগ খোলা থাকে?
২১ অপব্যয়ী পুত্র সম্বন্ধে যীশুর দৃষ্টান্ত থেকে আমরা তা দেখতে পাই। সেই দৃষ্টান্তে যেমন দেখা যায় যে কিছু সময়ের জন্য সেই পাপী তার বাবার বাড়ির প্রেমপূর্ণ পরিবেশের বাইরে থাকার পরই তার ‘চেতনা পেয়েছিল।’ (লূক ১৫:১১-১৮) পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন যে সময় মতো কিছু অন্যায়কারীরা অনুতপ্ত হবে এবং “দিয়াবলের ফাঁদ হইতে জীবনার্থে ধৃত হইয়া চেতনা” পাবে। (২ তীমথিয় ২:২৪-২৬) আমরা অবশ্যই আশা করব যে পাপীরা যখন অনুতপ্ত না হয়ে পাপ করেই চলে ও তার ফলে তাদের মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়, তখন তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও বিশ্বস্ত ভাইবোনদের প্রেমপূর্ণ সঙ্গ ও মেলামেশার অভাব বোধ করবে। আর তারপরই তারা তাদের চেতনা ফিরে পায়।
২২. শেষ পর্যন্ত কীভাবে আমরা আমাদের ভাইকে লাভ করতে পারি?
২২ এখানে যীশু বোঝাতে চাননি যে পরজাতীয় লোকেরা ও করগ্রাহীরা মন পরিবর্তন করবে না। করগ্রাহী মথি মন পরিবর্তন করে আন্তরিকভাবে ‘যীশুর পশ্চাতে’ এসেছিলেন এবং এমনকি তাকে একজন প্রেরিত হিসেবেও মনোনীত করা হয়েছিল। (মার্ক ২:১৫; লূক ১৫:১) একইভাবে, আজকে কোন পাপী যদি “মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে” এবং এরজন্য তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা অপেক্ষা করতে পারি যে তিনি একসময় অনুতাপ করবেন এবং তার পথ শুধরাবেন। যখন তিনি অনুতপ্ত হন এবং আবার মণ্ডলীতে ফিরে আসেন, তখন আমরা খুবই খুশি হই যে তিনি আমাদের সঙ্গে সত্য উপাসনা করছেন, শেষ পর্যন্ত যাকে আমরা লাভ করেছি।
[পাদটীকাগুলো]
a ম্যাক ক্লিনটক এবং স্ট্রংয়ের সাইক্লোপিডিয়া বলে: “নতুন নিয়মের সময়কার যিহূদী করগ্রাহীদের বিশ্বাসঘাতক ও ধর্মভ্রষ্ট যিহূদী হিসেবে দেখা হতো যাদের বিধর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় শুদ্ধতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং তারা রোমীয়দের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিল। তাদেরকে পাপী বলেই ধরা হতো . . . তাদেরকে একঘরে করে দেওয়া হতো, ভদ্র লোকেরা তাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন না, তাদেরই মতো সমাজ থেকে বহিষ্কৃত লোকেরাই তাদের বন্ধু বা সঙ্গী ছিল।”
b ব্যাবসা অথবা টাকাপয়সাজনিত কোন বিষয়ে যদি প্রতারণা, ফাঁকি অথবা ছলনা করা হয়, তাহলে তা যীশু যে পাপকে বোঝাতে চেয়েছিলেন তার মধ্যে পড়ে। এটা এইজন্য বলা যায় কারণ মথি ১৮:১৫-১৭ পদের পরামর্শগুলো দেওয়ার পর যীশু দাসেদের (কর্মচারীদের) সম্বন্ধে একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন, যারা টাকা ধার নিয়েছিল কিন্তু শোধ করতে পারেনি।
c একজন বাইবেল পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছিলেন: “কখনও কখনও দেখা যায় যে যিনি ভুল করেছেন সেই ব্যক্তি কেবল একজনের চেয়ে দুই বা তিনজনের (বিশেষ করে তারা যদি সম্মানীয় ব্যক্তি হয়ে থাকেন) কথা মন দিয়ে শোনেন। আর বিশেষভাবে সেই একজন যদি সেই ব্যক্তি হন যার সঙ্গে তার মতের অমিল হয়েছিল।”
আপনার কি মনে আছে?
◻ মূলত কোন্ ধরনের পাপের বেলায় মথি ১৮:১৫-১৭ পদ খাটে?
◻ প্রথম ধাপে আমাদের কোন্ বিষয় মনে রাখতে হবে?
◻ দ্বিতীয় ধাপের সময় কারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন?
◻ তৃতীয় ধাপের সময় কারা যুক্ত হন এবং শেষ পর্যন্ত কীভাবে আমরা আমাদের ভাইকে লাভ করতে পারি?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহূদীরা করগ্রাহীদের এড়িয়ে চলত। মথি তার পথ পরিবর্তন করেছিলেন এবং যীশুর পশ্চাতে এসেছিলেন
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রায়ই আমরা “চার চোখের মধ্যে” বিষয়গুলোকে মিটমাট করে নিতে পারি