ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৩ ১০/১ পৃষ্ঠা ২৪-২৮
  • যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের সত্যের প্রতি আকর্ষণ করেন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের সত্যের প্রতি আকর্ষণ করেন
  • ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • একজন বিদেশির সঙ্গে সাক্ষাৎ
  • তিনটে দুঃখজনক ঘটনা
  • সত্যের প্রতি আকর্ষিত
  • সুখের ঈশতান্ত্রিক কাজকর্ম
  • আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ মুগ্ধ করে
  • দম্পতি হিসেবে আনন্দপূর্ণ পরিচর্যা
  • বৃদ্ধি দেখে আনন্দিত
  • যে-কয়েদিদের পোশাকে বেগুনি ত্রিভুজ লাগানো ছিল
    যিহোবার সাক্ষিদের অভিজ্ঞতা
  • সম্রাট উপাসনা থেকে সত্য উপাসনায়
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমরা একটা দল ছিলাম
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমার লাজুক স্বভাব কাটিয়ে উঠতে আমি সাহায্য পেয়েছি
    ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৩ ১০/১ পৃষ্ঠা ২৪-২৮

জীবন কাহিনী

যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের সত্যের প্রতি আকর্ষণ করেন

বলেছেন আসানো কোশিনো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক বছর পর ১৯৪৯ সালে, কোবে শহরে যে-পরিবারে আমি কাজ করতাম, সেখানে একজন লম্বা, বন্ধুত্বপূর্ণ বিদেশি ব্যক্তি দেখা করতে আসেন। তিনিই ছিলেন জাপানে আসা যিহোবার সাক্ষিদের প্রথম মিশনারি। তার সাক্ষাৎ আমার জন্য সত্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল। কিন্তু প্রথমে আমাকে আমার পটভূমি সম্বন্ধে আপনাদের বলতে দিন।

উত্তর ওকাইয়ামা প্রিফেকচারের একটা ছোট্ট গ্রামে ১৯২৬ সালে আমি জন্মগ্রহণ করি। আট সন্তানের মধ্যে আমি ছিলাম পঞ্চম। স্থানীয় শিন্টো মন্দিরের দেবতার ওপর বাবার আন্তরিক বিশ্বাস ছিল। তাই, আমরা ছেলেমেয়েরা সারাবছর ধর্মীয় উৎসবগুলো উদ্‌যাপন ও সেই সময় পারিবারিক পুনর্মিলনগুলো উপভোগ করতাম।

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, জীবন সম্বন্ধে আমার মনে নানা প্রশ্ন আসত কিন্তু মৃত্যু সম্বন্ধে আমি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত ছিলাম। লোকেরা যদি বাড়িতে মারা যেত, তা হলে প্রথা অনুযায়ী ছেলেমেয়েদের পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুশয্যার পাশে থাকতে হতো। যখন আমার ঠাকুরমা মারা গিয়েছিলেন এবং আমার ছোট ভাই এমনকি এক বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা গিয়েছিল, তখন আমি খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম। আমার বাবামার মৃত্যুর কথা চিন্তা করা আমার কাছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ছিল। ‘এটাই কি সবকিছু? জীবনে কি এর চেয়ে আরও বেশি কিছু থাকতে পারে?’ আমি জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম।

১৯৩৭ সালে, আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি, তখন সিনো-জাপানি যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। পুরুষদের জোরপূর্বক চিনের যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার হুকুম দেওয়া হয়েছিল। “বানজাই!” (দীর্ঘজীবি হও) সম্রাটের উদ্দেশে উচ্চস্বরে এই কথাগুলো বলে, বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা অথবা দাদাদের বিদায় জানিয়েছিল। লোকেরা জাপানের, এক ঐশিক জাতি ও এর সম্রাট, এক জীবন্ত দেবতার জয়ের ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিল।

শীঘ্রই, পরিবারগুলো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মৃত্যুর খবর পেতে শুরু করেছিল। শোকার্ত পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছুই ছিল না। তাদের হৃদয়ে ঘৃণা বেড়ে চলছিল এবং শত্রুদের অনেকে যখন হতাহত হয়েছিল, তখন তারা আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু একই সময়ে আমি ভাবতাম, ‘শত্রুপক্ষের লোকেরাও নিশ্চয় ঠিক আমাদের মতো কষ্ট পায়, যখন তাদের প্রিয়জনরা মারা যায়।’ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যখন আমি গ্র্যাজুয়েট হই, তখন ইতিমধ্যে চিনের চারিদিকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল।

একজন বিদেশির সঙ্গে সাক্ষাৎ

কৃষক হিসেবে আমাদের পরিবার সবসময়ই গরিব ছিল কিন্তু বাবাকে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার পড়াশোনার জন্য কোনো খরচপাতি করতে হয়নি, ততক্ষণ তিনি আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেন। তাই ১৯৪১ সালে, আমি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে ওকাইয়ামা শহরের এক বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। মেয়েদের ভাল স্ত্রী ও মা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত করতে বিদ্যালয়টা তৈরি করা হয়েছিল আর এটা গৃহস্থালির কাজের শিক্ষানবিশ হিসেবে সেই শহরের ধনী পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকার জন্য ছাত্রীদের নিযুক্ত করত। ছাত্রীরা সকালে এই বাড়িগুলোতে কাজ করে শিক্ষা লাভ করত আর বিকেলে তারা বিদ্যালয়ে ফিরে যেত।

নবীন-বরণ অনুষ্ঠানের পর, আমার শিক্ষিকা যিনি কিমোনো পরে ছিলেন, তিনি আমাকে একটা বড় বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু, কোনো একটা কারণে সেই বাড়ির ভদ্রমহিলা আমাকে গ্রহণ করেননি। “তা হলে আমরা কি মিসেস কোডার বাড়িতে যাব?” শিক্ষিকা জিজ্ঞেস করেন। তিনি আমাকে পাশ্চাত্যের ধাঁচের একটা বাড়িতে নিয়ে যান এবং দরজার কলিংবেল বাজান। কিছুক্ষণ পর, রূপালি চুলওয়ালা এক লম্বা ভদ্রমহিলা বেরিয়ে আসেন। আমি খুব অবাক হয়ে যাই! তিনি জাপানি ছিলেন না আর আমি জীবনে কখনও কোনো পাশ্চাত্যের অধিবাসীকে দেখিনি। শিক্ষিকা আমাকে মিসেস মড কোডার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে যান। আমার ব্যাগগুলো টানতে টানতে ভয়ে ভয়ে আমি বাড়ির ভিতরে পা রাখি। পরে আমি জেনেছিলাম যে, মিসেস মড কোডা ছিলেন একজন আমেরিকান এবং তিনি একজন জাপানিকে বিয়ে করেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছিলেন। মিসেস কোডা বাণিজ্য-শিক্ষা স্কুলগুলোতে ইংরেজি শেখাতেন।

পরের দিন সকালেই এক ব্যস্ত জীবন শুরু হয়ে যায়। মিসেস কোডার স্বামী মৃগীরোগে ভুগছিলেন আর তাই তার দেখাশোনার কাজে আমাকে সাহায্য করতে হতো। যেহেতু আমি একেবারেই ইংরেজি বুঝতাম না, তাই আমি একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। মিসেস কোডা যখন আমার সঙ্গে জাপানি ভাষায় কথা বলেন, তখন আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম। প্রতিদিন, আমি তাদের পরস্পরের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে শুনতাম আর তাই আমি ধীরে ধীরে সেই ভাষা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ির মনোরম পরিবেশ আমি ভালবাসতাম।

অসুস্থ স্বামীর প্রতি মডের অনুরাগ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তিনি বাইবেল পড়তে ভালবাসতেন। পরে আমি জেনেছিলাম যে, সেই দম্পতি পুরনো বইয়ের একটা দোকানে বিভিন্ন যুগ সম্বন্ধে ঐশিক পরিকল্পনা বইটির এক জাপানি সংস্করণ পেয়েছিলেন এবং বেশ কিছু বছর ধরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণের গ্রাহক হয়েছিলেন।

একদিন আমাকে একটি বাইবেল উপহার দেওয়া হয়। আমি এতে খুশি হয়েছিলাম কারণ আমার জীবনে এই প্রথম আমি নিজস্ব বাইবেল পেয়েছিলাম। আমি বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে এটি পড়তাম কিন্তু এর বিষয়ে সামান্যই বুঝতাম। যেহেতু আমি একজন জাপানি শিন্টোধর্মী হিসেবে বড় হয়ে উঠেছিলাম, তাই যিশু খ্রিস্ট আমার কাছে বলতে গেলে অপরিচিত ছিলেন। আমি বুঝতে পারিনি যে, যা আমাকে শেষে বাইবেলের সত্য গ্রহণ করতে চালিত করেছিল এটা ছিল সেটার শুরু, যা জীবন ও মৃত্যু সম্বন্ধে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল।

তিনটে দুঃখজনক ঘটনা

দুবছরের শিক্ষানবিশের কাজ শীঘ্রই শেষ হয়ে আসে আর তাই আমাকে সেই পরিবারটিকে বিদায় জানাতে হয়। বিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর, আমি এক বালিকা স্বেচ্ছাসেবীর দলে যোগ দিই এবং নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম তৈরির কাজে অংশ নিই। সহসা আমেরিকান বি-২৯ জঙ্গিবিমান হামলা শুরু করে এবং ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট হিরোশিমাতে একটা পরমাণু বোমা ফেলা হয়। কয়েকদিন পর, আমি একটা টেলিগ্রাম পাই এবং জানতে পারি যে, আমার মা গুরুতর অসুস্থ। বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমি প্রথম ট্রেনটা ধরি। ট্রেন থেকে নামামাত্র, একজন আত্মীয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয় এবং তিনি আমাকে জানান যে, মা আর বেঁচে নেই। তিনি ১১ই আগস্ট মারা গিয়েছিলেন। অনেক বছর ধরে যে-ভয় আমি পাচ্ছিলাম, সেটাই সত্য হয়! তিনি আর কখনও আমার সঙ্গে কথা বলবেন না অথবা আমার দিকে চেয়ে হাসবেন না।

আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে জাপানের পরাজয় বাস্তবায়িত হয়। তাই, আমাকে তিনটে দুঃখজনক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় আর এর সবগুলোই দশ দিনের সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে: প্রথমটা পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ, এরপর মায়ের মৃত্যু এবং তারপর জাপানের ঐতিহাসিক পরাজয়। অন্তত এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক ছিল যে, লোকেরা যুদ্ধে আর মারা যাবে না। অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে আমি সেই কারখানার কাজ ছেড়ে দিই এবং আমার গ্রামে ফিরে আসি।

সত্যের প্রতি আকর্ষিত

একদিন, ওকাইয়ামার মড কোডার কাছ থেকে আমি অপ্রত্যাশিতভাবে একটা চিঠি পাই। গৃহস্থালির কাজকর্মে তাকে সাহায্য করার জন্য আমি আসতে পারব কি না তা তিনি জিজ্ঞেস করেন, কারণ তিনি একটা ইংরেজি স্কুল খুলতে যাচ্ছিলেন। আমি ভাবছিলাম যে, আমার কী করা উচিত কিন্তু আমি তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করি। কয়েক বছর পর, আমি কোডা পরিবারের সঙ্গে কোবেতে চলে আসি।

১৯৪৯ সালের গ্রীষ্মকালের প্রথমদিকে, লম্বা, বন্ধুত্বপূর্ণ একজন ভদ্রলোক কোডা পরিবারে দেখা করতে আসেন। তার নাম ছিল ডোনাল্ড হ্যাসলেট এবং তিনি কোবে শহরে মিশনারিদের জন্য একটা বাড়ি খুঁজতে টোকিও থেকে কোবেতে এসেছিলেন। জাপানে আসা তিনিই ছিলেন যিহোবার সাক্ষিদের প্রথম মিশনারি। একটা বাড়ি পাওয়া যায় আর তাই ১৯৪৯ সালের নভেম্বর মাসে কিছু মিশনারি কোবেতে এসে পৌঁছায়। একদিন, তাদের পাঁচ জন কোডা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসে। তাদের মধ্যে দুজন, লয়েড ব্যারি এবং পারসি ইজলব এই বাড়িতে একত্রিত প্রত্যেকের সঙ্গে প্রায় দশ মিনিট করে ইংরেজিতে কথা বলে। মিশনারিদের কাছে মড একজন খ্রিস্টান বোন বলে পরিচিত ছিলেন এবং স্পষ্টতই এই মেলামেশার দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিলেন। এই সময়ই আমি ইংরেজি শেখার প্রেরণা পেয়েছিলাম।

উদ্যোগী মিশনারিদের সাহায্যে, আমি ধীরে ধীরে বাইবেলের মৌলিক সত্যগুলো বুঝতে পেরেছিলাম। ছোটবেলা থেকে আমার মনে যে-প্রশ্নগুলো ছিল, আমি সেগুলোর উত্তর পেয়েছিলাম। হ্যাঁ, বাইবেল এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা দান এবং ‘কবরস্থ সকলের’ এক পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞা করে। (যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:১, ৪) যিহোবা তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে এইরকম এক আশা সম্ভবপর করছেন বলে আমি যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ ছিলাম।

সুখের ঈশতান্ত্রিক কাজকর্ম

১৯৪৯ সালের ৩০শে ডিসেম্বর থেকে ১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত, জাপানের কোবের মিশনারি হোমে প্রথম ঈশতান্ত্রিক সম্মেলন হয়েছিল। আমি মডের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলাম। বড় বাড়িটা আগে একজন নাৎসির ছিল এবং এখান থেকে ইনল্যান্ড সমুদ্র এবং আওয়াজি দ্বীপের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যেত। বাইবেল সম্বন্ধে আমার সীমিত জ্ঞান থাকায়, যা কিছু বলা হয়েছিল সেগুলোর সামান্যই আমি বুঝেছিলাম। তবুও, আমি সেই মিশনারিদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলাম, যারা স্বচ্ছন্দে জাপানি লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিল। এই সম্মেলনে জনসাধারণের বক্তৃতায় মোট ১০১ জন উপস্থিত ছিল।

এর পরেই, আমি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেহেতু আমি লাজুক প্রকৃতির ছিলাম, তাই ঘরে ঘরে যাওয়ার জন্য আমাকে সাহস অর্জন করতে হয়। একদিন সকালে, ভাই লয়েড ব্যারি আমাকে পরিচর্যায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসেন। তিনি বোন কোডার পাশের বাড়ি থেকেই কাজ করতে শুরু করেছিলেন। তার উপস্থাপনা শোনার সময় আমি বলতে গেলে তার পিছনে লুকিয়ে ছিলাম। দ্বিতীয়বার যখন আমি প্রচারে যাই, তখন আমি অন্য দুজন মিশনারির সঙ্গে কাজ করি। একজন বয়স্কা জাপানি ভদ্রমহিলা আমাদের ভিতরে ডাকেন, আমাদের কথা শোনেন এবং পরে আমাদের প্রত্যেককে এক গ্লাস করে দুধ খেতে দেন। তিনি গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন এবং শেষে একজন বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান হন। তার উন্নতি দেখা উৎসাহজনক ছিল।

১৯৫১ সালের এপ্রিল মাসে, ব্রুকলিনের প্রধান কার্যালয় থেকে ভাই নেথেন এইচ. নর প্রথম জাপান পরিদর্শন করেন। টোকিওর কানডায় কিওরিৎসু অডিটোরিয়ামে তিনি যে-জনসাধারণের বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন, তাতে প্রায় ৭০০ জন উপস্থিত হয়েছিল। এই বিশেষ সভায় যারা উপস্থিত ছিল, তারা সকলেই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার জাপানি সংস্করণ প্রকাশ দেখে আনন্দিত হয়েছিল। পরের মাসে, ভাই নর কোবে পরিদর্শন করেন এবং সেখানে সেই বিশেষ সভায় আমি যিহোবার কাছে আমার উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে বাপ্তিস্ম নিই।

প্রায় এক বছর পর, আমাকে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা অর্থাৎ অগ্রগামীর পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়। সেই সময়ে জাপানে মাত্র কয়েক জন অগ্রগামী ছিল আর আমি ভাবছিলাম যে, কীভাবে আমি নিজের ভরণপোষণ করব। এ ছাড়া, আমি বিয়ে করার বিষয়েও চিন্তা করছিলাম। কিন্তু এরপর আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, যিহোবাকে সেবা করা জীবনে প্রথমে আসা উচিত, তাই ১৯৫২ সালে আমি অগ্রগামীর কাজে যোগ দিই। আনন্দের বিষয় যে, অগ্রগামীর কাজ করার সময় আমি বোন কোডার জন্য খণ্ডকালীন কাজ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

প্রায় সেই সময়ে, আমার দাদা যাকে আমি ভেবেছিলাম যে যুদ্ধে মারা গেছে, সে তাইওয়ান থেকে তার পরিবার নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। আমার পরিবার কখনও খ্রিস্টধর্মের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কিন্তু অগ্রগামীদের মতো উদ্যোগী মনোভাব দেখিয়ে আমি তাদের কাছে আমাদের পত্রিকা ও পুস্তিকাগুলো পাঠাতে শুরু করি। পরে কাজের সূত্রে আমার দাদা তার পরিবার নিয়ে কোবেতে চলে আসে। “তুমি কি কখনও এই পত্রিকাগুলো পড়ে দেখেছ?” আমি আমার বৌদিকে জিজ্ঞেস করি। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলে, “এগুলো আগ্রহজনক পত্রিকা।” সে মিশনারিদের একজনের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে আর আমার ছোট বোন, যে তাদের সঙ্গেই থাকত সেও তার সঙ্গে অধ্যয়নে যোগ দেয়। পরে, তারা দুজনেই বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান হয়।

আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ মুগ্ধ করে

অল্প কিছুদিন পরে, ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েডের ২২তম ক্লাসে যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়ে আমি অবাক হয়ে যাই। ভাই সুতোমু ফুকাসে এবং আমিই প্রথম জাপান থেকে স্কুলে যোগদানের আমন্ত্রণ পাই। ১৯৫৩ সালে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, আমরা নিউ ইয়র্কের ইয়াংকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নিউ ওয়ার্ল্ড সোসাইটি এসেম্বলিতে যোগদান করতে পেরেছিলাম। যিহোবার লোকেদের আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে।

জাপান থেকে আসা অভ্যাগতরা, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল মিশনারি, তারা সম্মেলনের পঞ্চম দিনে কিমোনো পরবে বলে ঠিক করেছিল। যেহেতু যে-কিমোনোটা আমি আগেই জাহাজে পাঠিয়েছিলাম সেটা সময়মতো এসে পৌঁছায়নি, তাই আমি বোন নরের কাছ থেকে একটা ধার করে নিই। অধিবেশন চলাকালীন বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় আর তাই আমি চিন্তায় পড়ে যাই যে, কিমোনোটা হয়তো ভিজে যাবে। ঠিক তখনই, পিছন থেকে কেউ একজন কোমলভাবে আমাকে একটা রেইনকোট দেয়। “আপনি কি জানেন তিনি কে?” আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বোন জিজ্ঞেস করেন। পরে আমি জেনেছিলাম যে, ইনি ছিলেন পরিচালক গোষ্ঠীর একজন সদস্য ভাই ফ্রেডরিক ডব্লু. ফ্রাঞ্জ। যিহোবার সংগঠনের উষ্ণতা আমি কতই না উপভোগ করেছিলাম!

গিলিয়ডের ২২তম ক্লাস সত্যিই এক আন্তর্জাতিক ক্লাস ছিল, যেখানে ৩৭টা দেশ থেকে ১২০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। যদিও সেখানে কিছু ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা ছিল, তবুও আমরা আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্বকে পুরোপুরি উপভোগ করেছিলাম। ১৯৫৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক তুষারাবৃত দিনে আমি গ্র্যাজুয়েট হই এবং জাপানে কার্যভার পাই। ইংয়ার ব্রান্ট নামে এক সুইডিশ বোন, যিনি আমাদের সহপাঠী ছিলেন, তিনি নাগোয়া শহরের কার্যভারে আমার সঙ্গী হন। সেখানে, আমরা মিশনারিদের দলে যোগদান করি, যারা যুদ্ধের কারণে কোরিয়া থেকে অপসৃত হয়েছিল। যে-কয়েক বছর আমি মিশনারি পরিচর্যায় কাটিয়েছিলাম, সেগুলো আমার কাছে খুবই মূল্যবান ছিল।

দম্পতি হিসেবে আনন্দপূর্ণ পরিচর্যা

১৯৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, আমাকে টোকিও বেথেলে পরিচর্যা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কাঠের দুতলা বিশিষ্ট বাড়িটা জাপানের শাখা দপ্তর হিসেবে কাজ করে। শাখায়, শাখা অধ্যক্ষ ভাই ব্যারিকে নিয়ে মাত্র চার জন সদস্য ছিল। পরিবারের বাকি সদস্যরা ছিল মিশনারি। আমাকে অনুবাদ ও প্রুফরিডিংয়ের আর সেইসঙ্গে পরিষ্কার করার, কাপড় ধোয়ার (লন্ড্রি), রান্না করার এবং আরও অন্যান্য কাজে নিযুক্ত করা হয়।

জাপানের কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছিল আর তাই আরও ভাইদের বেথেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের মধ্যে একজন সেই মণ্ডলীর অধ্যক্ষ হয়েছিলেন, যে-মণ্ডলীর সঙ্গে আমি মেলামেশা করতাম। ১৯৬৬ সালে সেই ভাই, জুঞ্জি কোশিনো ও আমি বিয়ে করি। আমাদের বিয়ের পর, জুঞ্জিকে সীমার কাজে নিযুক্ত করা হয়। বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করার সময় অনেক ভাইবোনকে জানা এক আনন্দের বিষয় ছিল। যেহেতু আমাকে কিছু অনুবাদ করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল, তাই ভ্রমণের সপ্তাহে আমরা যে-বাড়িতে থাকতাম, সেখানে আমি এটা করতাম। ভ্রমণের সময়, আমাদের সুটকেস ও অন্যান্য ব্যাগ ছাড়াও ভারী ভারী অভিধান বয়ে নিয়ে যেতে হতো।

চার বছরের বেশি সময় ধরে আমরা সীমার কাজ উপভোগ করেছিলাম এবং দেখেছিলাম যে, সংগঠন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। শাখা নুমাজুতে সরে যায় এবং কয়েক বছর পর এবিনাতে চলে আসে, যেখানে বর্তমান শাখার সুযোগসুবিধাগুলো রয়েছে। জুঞ্জি এবং আমি অনেক দিন ধরে বেথেল পরিচর্যা উপভোগ করে আসছি, এখন প্রায় ৬০০ জন সদস্যের এক পরিবারের সঙ্গে কাজ করছি। ২০০২ সালের মে মাসে, বেথেলের বন্ধুবান্ধবরা সদয়ভাবে আমার পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার ৫০তম বৎসর উদ্‌যাপন করেছে।

বৃদ্ধি দেখে আনন্দিত

১৯৫০ সালে, আমি যখন যিহোবাকে সেবা করতে শুরু করেছিলাম, তখন জাপানে মাত্র অল্প কিছু প্রকাশক ছিল। এখন সেখানে ২,১০,০০০ এরও বেশি রাজ্য প্রকাশক রয়েছে। সত্যিই, হাজার হাজার মেষতুল্য ব্যক্তিদের যিহোবার কাছে নিয়ে আসা হয়েছে, ঠিক যেমন আমাকে আনা হয়েছিল।

সেই চার জন ভাইবোন, যারা ১৯৪৯ সালে বোন কোডার বাড়িতে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছিল তারা ও সেইসঙ্গে বোন মড কোডা, সকলেই বিশ্বস্তভাবে মারা গেছে। এ ছাড়া আমার দাদা, যে একজন পরিচারক দাস ছিল এবং আমার বৌদি, যে প্রায় ১৫ বছর ধরে অগ্রগামীর কাজ করেছিল, তারাও বিশ্বস্তভাবে মারা গেছে। আমার বাবামার ভবিষ্যতের প্রত্যাশাগুলো কী হবে, আমার ছেলেবেলায় যাদের মৃত্যু সম্বন্ধে আমি ভয় পেতাম? পুনরুত্থান সম্বন্ধে বাইবেলের প্রতিজ্ঞা আমাকে আশা ও সান্ত্বনা দেয়।—প্রেরিত ২৪:১৫.

আমি যখন অতীতের কথা চিন্তা করি তখন আমি মনে করি যে, ১৯৪১ সালে মডের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ছিল আমার জীবনের এক সন্ধিক্ষণ। আমি যদি সেই সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করতাম এবং যুদ্ধের পর পুনরায় তার বাড়িতে কাজ করার জন্য তার আমন্ত্রণে সাড়া না দিতাম, তা হলে সম্ভবত আমি দূরবর্তী গ্রামে আমাদের খামারে স্থায়ীভাবে বাস করতাম এবং প্রথমদিকের সেই দিনগুলোতে মিশনারিদের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ হতো না। যিহোবার কাছে আমি কতই না কৃতজ্ঞ যে, মড ও প্রথমদিকের মিশনারিদের মাধ্যমে তিনি আমাকে সত্যের প্রতি আকর্ষণ করেছেন!

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মড কোডা এবং তার স্বামী। বাঁদিকে সামনে আমি

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইয়াংকি স্টেডিয়ামে ১৯৫৩ সালে জাপান থেকে আসা মিশনারিদের সঙ্গে। আমি একেবারে বাঁদিকে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বেথেলে আমার স্বামী জুঞ্জির সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার