ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৮ ১২/১ পৃষ্ঠা ২৭-৩১
  • সম্রাট উপাসনা থেকে সত্য উপাসনায়

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • সম্রাট উপাসনা থেকে সত্য উপাসনায়
  • ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আগের ধর্মীয় প্রভাব
  • যুদ্ধের বছরগুলি
  • এক নতুন আশা জেগে ওঠে
  • অগ্রগামী পরিচর্যার আনন্দ
  • পূর্বেই নতুন জগতের স্বাদ গ্রহণ
  • আমার কার্যভারের প্রতি উপলব্ধিবোধ
  • আনন্দের বিভিন্ন কারণ
  • যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের সত্যের প্রতি আকর্ষণ করেন
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমার বাবা “পারমাণবিক বোমার দ্বারা জেল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন”
    ১৯৯৪ সচেতন থাক!
  • আমার লাজুক স্বভাব কাটিয়ে উঠতে আমি সাহায্য পেয়েছি
    ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমরা একটা দল ছিলাম
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৮ ১২/১ পৃষ্ঠা ২৭-৩১

সম্রাট উপাসনা থেকে সত্য উপাসনায়

ইজামু সুগিওরা দ্বারা কথিত

১৯৪৫ সালে যদিও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় অনিবার্য কিন্তু আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে কামিকাজি (“ঐশিক ঝোড়োহাওয়া”) প্রবাহিত হবে, ফলে শত্রুপক্ষের পরাজয় নিশ্চিত। কামিকাজি ১২৭৪ এবং ১২৮১ সালের সেই ঝড়গুলিকে বোঝায় যা জাপান উপকূলবর্তী আক্রমণকারী মঙ্গোল রণতরীগুলিকে দুবার বিধ্বস্ত করেছিল ফলে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

সম্রাট হিরোহিতো ১৯৪৫ সালের ১৫ই আগস্ট যখন জাতির উদ্দেশে ঘোষণা দেন যে জাপান, মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তখন তার প্রতি উৎসর্গীকৃত কোটি কোটি লোক আশাহত হয়েছিলেন। তখন আমি স্কুলে পড়ি আর এতে আমিও আশাহত হই। আমি ভাবি যে ‘সম্রাট যদি জীবন্ত ঈশ্বর না হয়ে থাকেন, তাহলে ঈশ্বর কে? কার উপর আমি আস্থা রাখব?’

কিন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ই প্রকৃতপক্ষে আমার এবং হাজার হাজার জাপানিদের সত্য ঈশ্বর, যিহোবাকে জানার পথ খুলে দিয়েছিল। যে পরিবর্তনগুলি আমি করেছি তা বলার আগে, আমি কোন্‌ ধর্মে বিশ্বাসী ছিলাম সেই সম্বন্ধে আপনাদের বলছি।

আগের ধর্মীয় প্রভাব

আমি ১৯৩২ সালের ১৬ই জুন নাগোয়া শহরে জন্মগ্রহণ করি। চার ভাইয়ের মধ্যে আমি ছিলাম সবার ছোট। বাবা শহরে ভূমি জরিপের কাজ করতেন। মা মনে প্রাণে শিন্টো সম্প্রদায়ের টেনরিকিয়ো গোত্রে বিশ্বাসী ছিলেন এবং আমার বড় দাদা টেনরিকিয়ো গুরু হওয়ার জন্য ধর্মীয় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মার সঙ্গে আমার বেশি অন্তরঙ্গতা ছিল বলে তিনি আমাকে তার সঙ্গে মন্দিরে নিয়ে যেতেন।

আমাকে মাথা নত করে প্রার্থনা করতে শেখানো হয়েছিল। টেনরিকিয়ো ধর্ম টেনরি ও নো মিকোটো নামে একজন সৃষ্টিকর্তা আর সেইসঙ্গে তার চেয়ে নিম্নপদের দশজন দেবতাকে বিশ্বাস করত। এই গোত্রের সদস্যরা দৈব চিকিৎসা অভ্যাস করত এবং অন্যদের সেবা করা ও তাদের বিশ্বাস প্রচার করার উপর জোর দিত।

একজন বালক হিসাবে, স্বাভাবিকভাবেই আমার অনেক কৌতূহল ছিল। আমি চাঁদ ও রাতের আকাশে অগণিত তারা দেখে আশ্চর্য হতাম এবং ভাবতাম যে আকাশ ছাড়িয়ে মহাশূন্য কতদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। বাড়ির পিছনে ছোট্ট জায়গায় আমার লাগানো বেগুন ও শশাগাছগুলি বেড়ে উঠতে দেখে আমি খুবই অবাক হতাম। প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে দেখাই ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল।

যুদ্ধের বছরগুলি

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম। সম্রাটের উপাসনা শিন্টো ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আর তা আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আমাদের শুসিন সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হতো, যার মধ্যে ছিল জাতীয়তাবাদী ও সামরিক শিক্ষা সহ নৈতিক প্রশিক্ষণ। পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত গাওয়া, সম্রাটসংক্রান্ত অনুশাসন অধ্যয়ন এবং সম্রাটের ছবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো আমাদের বিদ্যালয় তালিকার অপরিহার্য অংশ ছিল।

এছাড়াও, সম্রাটের সৈন্যবাহিনীর বিজয়ের জন্য আমরা সেখানকার শিন্টো মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করতাম। আমার নিজের দুই দাদা সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় শিক্ষার ফলে জাপানি সৈনিকদের সাফল্যের খবর পেলে আমি আনন্দিত হতাম।

নাগোয়া শহরটি জাপানি যুদ্ধবিমান প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল ছিল, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বিমান বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল এই শহরের উপর আঘাত আনা। দিনের বেলা, বি-২৯ সুপারফোরট্রেস বোমারু বিমানগুলি একে একে শহরের প্রায় ৯,০০০ মিটার উপর দিয়ে উড়ে যেত এবং কারখানা এলাকাগুলিতে শত শত টন বোমা নিক্ষেপ করত। রাতের বেলা বোমারু বিমানগুলি মাত্র ১,৩০০ মিটার উপর দিয়ে যেত যেগুলিকে সন্ধানী বাতির মাধ্যমে চিহ্নিত করা হতো। আগ্নেয় বোমা বহনকারী কয়েকটি বিমান হামলা আবাসিক এলাকাগুলিতে নারকীয় তাণ্ডব ঘটিয়েছিল। যুদ্ধের শেষ নয় মাসে কেবল নাগোয়া শহরেই ৫৪টি বিমান হামলার ফলে প্রচুর দুঃখদুর্দশা উপস্থিত হয়েছিল এবং ৭,৭০০ জনের বেশি লোক মারা গিয়েছিল।

এরই মধ্যে, যুদ্ধজাহাজগুলি থেকে উপকূলবর্তী দশটি শহরে গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে যায় এবং টোকিও শহরের কাছাকাছি কোন স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সম্ভাব্য ঘাঁটি স্থাপনের কথা লোকেদের মুখে মুখে শোনা যায়। দেশকে রক্ষা করার জন্য মহিলা ও অল্পবয়স্ক ছেলেদের বাঁশের বর্শা দিয়ে যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের স্লোগ্যান ছিল, “ইচিওকু সৌগিয়োকুসাই,” যার অর্থ “জীবনের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই করে যাব তবুও আত্মসমর্পণ নয়।”

১৯৪৫ সালের ৭ই আগস্ট, সংবাদপত্রের একটি শিরোনাম ছিল এইরকম: “হিরোশিমায় নতুন ধরনের বোমা নিক্ষেপ।” দুইদিন পর, নাগাসাকিতে আরেকটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এগুলি ছিল পারমাণবিক বোমা আর পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে এর ফলে ৩,০০০০০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। তারপর, ১৫ই আগস্ট কাঠের তৈরি অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর, আমরা সম্রাটের ভাষণটি শুনেছিলাম যেখানে তিনি জাপানের আত্মসমর্পণ করার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে আমরাই জয়ী হব কিন্তু সেই ঘোষণা শোনার পর একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম!

এক নতুন আশা জেগে ওঠে

আমেরিকার সৈন্যবাহিনী দখল করে নিতে শুরু করলে ধীরে ধীরে আমরা মেনে নিয়েছিলাম যে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রই জয়ী হয়েছে। জাপানে গণতন্ত্র চালু হয় আর সেইসঙ্গে নতুন সংবিধান, উপাসনার স্বাধীনতা সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেয়। তখন জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন হয়ে পড়ে এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ফলে ১৯৪৬ সালে আমার বাবা অপুষ্টিতে ভুগে মারা যান।

এর মধ্যে আমি যে বিদ্যালয়ে পড়তাম সেখানে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় এবং এনএইচকে রেডিও স্টেশন ইংরেজি কথপোকথনের কার্যক্রম চালু করে। পাঁচ বছর আমি প্রতিদিন পাঠ্যবই হাতে নিয়ে এই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটি শুনতাম। আর এই বিষয়টিই, আমার মধ্যে কোন একদিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছিল। শিন্টো ও বৌদ্ধ ধর্মে নিরাশ হয়ে আমি পাশ্চাত্যের ধর্মগুলিতে ঈশ্বরকে খোঁজার কথা ভেবেছিলাম।

১৯৫১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে, গ্রেস গ্রেগরি নামে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির একজন মিশনারির সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি নাগোয়া ট্রেন স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে ইংরেজি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা এবং জাপানি ভাষায় বাইবেল বিষয়ক একটি পুস্তিকা অর্পণ করছিলেন। এই কাজ করতে তার নম্র স্বভাব আমাকে প্রভাবিত করেছিল। আমি দুটি প্রকাশনাই নিয়েছিলাম এবং বাইবেল অধ্যয়ন করার বিষয়ে তার প্রস্তাবে তখনই রাজি হয়েছিলাম। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম যে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য কয়েকদিন পর তার ঘরে আসব।

ট্রেনে বসে আমি যখন প্রহরীদুর্গ পত্রিকাটি পড়া শুরু করি, প্রথম প্রবন্ধটির যে শব্দটি সবার আগে আমার চোখে পড়ে তা ছিল, “যিহোবা।” এর আগে আমি কোনদিন এই নামটি দেখিনি। আমার কাছে যে ছোট ইংরেজি-জাপানি শব্দকোষটি ছিল তাতে এই নামটি পাওয়া যাবে বলে আমি ভাবিনি কিন্তু আশ্চর্য নামটি সেখানে ছিল! “যিহোবা . . . , বাইবেলের ঈশ্বর।” তখনই আমি খ্রীষ্টধর্মের ঈশ্বরকে খুঁজতে শুরু করেছিলাম!

মিশনারি গৃহে সেই প্রথম দিনই আমি জানতে পাই যে কয়েক সপ্তাহ পর, ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির তৎকালীন সভাপতি নেথেন এইচ. নর বাইবেলের উপর একটি বক্তৃতা দেবেন। তিনি তার সচিব, মিলটন হেনসেলের সঙ্গে জাপান পরিদর্শন করছিলেন এবং শীঘ্রই নাগোয়া শহরে আসবেন। বাইবেল সম্বন্ধে আমার সামান্য জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, ওই বক্তৃতা এবং মিশনারি ও অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা আমার খুবই ভাল লেগেছিল।

গ্রেসের সঙ্গে প্রায় দুই মাস অধ্যয়ন করে আমি যিহোবা, যীশু খ্রীষ্ট, মুক্তির মূল্য, শয়তান দিয়াবল, হর্‌মাগিদোন এবং পরমদেশ পৃথিবী সম্বন্ধে মৌলিক সত্যগুলি জেনেছিলাম। রাজ্যের সুসমাচারই ছিল সেই বার্তা এতদিন আমি যা খুঁজছিলাম। অধ্যয়ন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই আমি মণ্ডলীর সভাগুলিতেও যোগ দিতে শুরু করি। আমি এই সমাবেশগুলির বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশকে খুবই পছন্দ করতাম যেখানে মিশনারিরা স্বচ্ছন্দ্যে জাপানিদের সঙ্গে মিশতেন এবং আমাদের সঙ্গে তাতামির (খড় দিয়ে বোনা মাদুরে) উপর বসতেন।

১৯৫১ সালের অক্টোবর মাসে জাপানের ওসাকা শহরের নাকানোসিমা পাবলিক হলে প্রথম সীমা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সমগ্র জাপানে ৩০০ জনেরও কম সাক্ষী ছিল কিন্তু সেই অধিবেশনে প্রায় ৫০ জন মিশনারি সহ ৩০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। এমনকি ওই কার্যক্রমের একটি ছোট বিষয়ে আমি অংশও নিয়েছিলাম। সেখানে আমি যা দেখেছিলাম ও শুনেছিলাম, তা আমাকে এতই মুগ্ধ করেছিল যে আমি সারা জীবন যিহোবাকে সেবা করার সংকল্প নিয়েছিলাম। পরের দিন, কাছেই জনসাধারণের স্নানাগারের হালকা গরম জলে আমি বাপ্তিস্ম নিই।

অগ্রগামী পরিচর্যার আনন্দ

আমি একজন অগ্রগামী হতে চেয়েছিলাম, যিহোবার সাক্ষীদের পূর্ণ সময়ের পরিচারকদের যেভাবে ডাকা হয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমার পারিবারিক দায়িত্বের বিষয়েও সচেতন ছিলাম। আমি সাহস করে যখন আমার ইচ্ছাটি নিয়োগকর্তাকে জানিয়েছিলাম, তখন তার এই কথাটি শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম: “তাতে যদি আপনি সুখী হন, তবে আমি সানন্দে আপনার সহযোগিতা করব।” আমি সপ্তাহে মাত্র দুই দিন কাজ করতাম আর এতেই মাকে ঘরের খরচ দিয়ে সাহায্য করতে পারতাম। প্রকৃতপক্ষে আমার অনুভূতি খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়া এক পাখির মতো হয়েছিল।

অবস্থার যখন উন্নতি হতে থাকে, ১৯৫৪ সালের ১লা আগস্ট থেকে আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করি। আমার প্রথম এলাকা ছিল নাগোয়া স্টেশনের পিছনে, যেখানে গ্রেসের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল সেখান থেকে হেঁটে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। কয়েক মাস পর, আমাকে পশ্চিমাঞ্চলের কিয়োশু দ্বীপের বেপ্পু শহরে একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসাবে সেবা করার কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। আমার সঙ্গী হিসাবে সুতোমু মিউরাও কার্যভার পেয়েছিলেন।a সেই সময় সমগ্র দ্বীপে যিহোবার সাক্ষীদের একটিও মণ্ডলী ছিল না কিন্তু আজকে সেখানে শত শত মণ্ডলী রয়েছে, যা ২২টি সীমায় বিভক্ত!

পূর্বেই নতুন জগতের স্বাদ গ্রহণ

১৯৫৬ সালের এপ্রিল মাসে ভাই নর যখন আবার জাপানে এসেছিলেন, তখন তিনি আমাকে একটি ইংরেজি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা থেকে কয়েকটি অনুচ্ছেদ জোরে জোরে পড়তে বলেছিলেন। কেন পড়িয়েছিলেন তা তিনি আমাকে বলেননি কিন্তু কয়েক মাস পর, আমি গিলিয়েড মিশনারি স্কুলের ২৯তম ক্লাসে যোগদান করার আমন্ত্রণ পত্র পাই। তাই সেই বছরের নভেম্বর মাসে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা শুরু করি যা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে সত্য করেছিল। ব্রুকলিনের বড় বেথেল পরিবারের সঙ্গে কয়েক মাস থেকে কাজ করার ফলে যিহোবার দৃশ্যত সংগঠনের প্রতি আমার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।

১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ভাই নর গাড়ি চালিয়ে আমাদের তিনজন ছাত্রকে উত্তর নিউইয়র্কের সাউথ ল্যান্সিং-এ গিলিয়েড স্কুল চত্বরে নিয়ে গিয়েছিলেন। গিলিয়েড স্কুলে পাঁচটি মাস আমি যিহোবার বাক্য থেকে শিক্ষা পেয়েছিলাম এবং এক সুন্দর পরিবেশে আমার সহছাত্রদের সঙ্গে পূর্বেই পরমদেশ পৃথিবীর আস্বাদ উপভোগ করেছিলাম। ১০৩ জন ছাত্রের মধ্যে আমাকে সহ দশজনকে জাপানে কার্যভার দেওয়া হয়েছিল।

আমার কার্যভারের প্রতি উপলব্ধিবোধ

১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে আমি যখন জাপানে ফিরে আসি তখন সেখানে প্রায় ৮৬০ জন সাক্ষী ছিল। ভ্রমণ কাজের জন্য আমি একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলাম কিন্তু প্রথমে আমি নাগোয়া শহরে অ্যাড্রিয়ান থম্পসনের কাছ থেকে সেই কাজের উপর কয়েকদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। আমার সীমার এলাকা ফুজি পর্বতের কাছে অবস্থিত সিমিজু অঞ্চল থেকে শুরু করে শিকুকু দ্বীপ পর্যন্ত ছিল এবং কিয়োটো, ওসাকা, কোবে ও হিরোশিমার মতো বড় বড় শহর এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৯৬১ সালে আমি একজন জেলা অধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত হই। এই জেলার মধ্যে উত্তরাঞ্চলের তুষারাবৃত হোক্কাইডো দ্বীপ থেকে শুরু করে ওকিনাওয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল এবং তাইওয়ানের কাছে অবস্থিত ইশিগাকি দ্বীপও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেগুলির মধ্যে ব্যবধান ছিল প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার।

তারপর, ১৯৬৩ সালে আমি ব্রুকলিন বেথেলে গিলিয়েড স্কুলের দশ মাসের প্রশিক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ পাই। সেই পর্বে, ভাই নর কার্যভারের প্রতি সঠিক মনোভাব পোষণ করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে টয়লেট পরিষ্কারের কাজ দপ্তরে কাজ করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেছিলেন টয়লেট যদি পরিষ্কার না থাকত, তাহলে সম্পূর্ণ বেথেল পরিবার ও তাদের কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। পরে, জাপান বেথেলে আমার কাজের অংশ ছিল টয়লেট পরিষ্কার করা আর আমি সবসময়ই সেই পরামর্শ মনে রেখেছিলাম।

জাপানে ফিরে আসার পর, আমি আবার ভ্রমণ কাজে নিযুক্ত হই। কয়েক বছর পর, ১৯৬৬ সালে আমি জাঙ্কু আইওয়াস্কি নামে এক বিশেষ অগ্রগামীকে বিয়ে করি, সে মাতসুই শহরে পরিচর্যা করত। তখনকার শাখা অধ্যক্ষ, লয়েড ব্যারি উদ্দীপনামূলক বিবাহের বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন। এরপর জাঙ্কু আমার সঙ্গে ভ্রমণ কাজে যোগ দিয়েছিল।

১৯৬৮ সালে আমাদের কার্যভারের বদল হয় এবং আমাকে টোকিও শাখা অফিসে অনুবাদ কাজের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বেথেলে পর্যাপ্ত ঘর ছিল না বলে আমি টোকিওর সুমিদা বিভাগ থেকে আসতাম এবং জাঙ্কু স্থানীয় মণ্ডলীতে বিশেষ অগ্রগামী হিসাবে সেবা করত। এই সময় শাখা দপ্তরকে বড় করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। তাই ১৯৭০ সালে, ফুজি পর্বতের কাছেই নুমাজু শহরে জমি কেনা হয়। সেখানে, তিনতলা বিশিষ্ট একটি কারখানা ও বাসভবন নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ কাজ শুরুর আগে, মণ্ডলীর অধ্যক্ষদের প্রশিক্ষণ দিতে সেই জমির কয়েকটি ঘরকে রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়ের জন্য ব্যবহার করা হতো। আমি সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম এবং জাঙ্কু ছাত্রদের জন্য খাবার প্রস্তুত করত। শত শত খ্রীষ্টান পুরুষদের পরিচর্যার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তা দেখা সত্যই আনন্দদায়ক ছিল।

এক বিকেলে আমি একটি জরুরি টেলিগ্রাম পেয়েছিলাম। মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাঁচবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আমি সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেনে চড়ে নাগোয়াতে যাই এবং গিয়েই হাসাপাতালে চলে যাই। তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন কিন্তু তবুও আমি সারারাত তার বিছানার পাশে বসেই কাটিয়েছিলাম। মা ভোরবেলা মারা যান। আমি নামাজুতে ফিরে আসার সময়, বেঁচে থাকতে তিনি যে কষ্ট করেছেন এবং আমাকে কত ভালবাসতেন তা মনে করে আমার চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। যিহোবার ইচ্ছা হলে, আমি পুনরুত্থানে তাকে আবার দেখতে পাব।

শাখাতে যে সুযোগসুবিধা ছিল তার তুলনায় আমাদের সংখ্যা শীঘ্রই খুব বেড়ে গিয়েছিল। ফলে এবিনা শহরে ১৮ একর জমি কেনা হয়েছিল এবং ১৯৭৮ সালে নতুন শাখা দপ্তর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। এখন এই জমির বাকি জায়গায় কারখানা ও বাসভবন এবং একটি সম্মেলন হলও রয়েছে, যেখানে ২,৮০০ জনেরও বেশি লোক বসতে পারে। এই বছরের শুরুতে সর্বশেষ সংযোজন ১৩ তলাবিশিষ্ট বাসভবন এবং ৫ তলবিশিষ্ট পার্কিং/সার্ভিস অট্টালিকা। আমাদের বেথেল পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা এখন প্রায় ৫৩০ জন কিন্তু আমাদের যে সুযোগসুবিধা রয়েছে তাতে প্রায় ৯০০ জনের মতো লোক থাকতে পারবে।

আনন্দের বিভিন্ন কারণ

বাইবেলের এই ভবিষ্যদ্বাণীটিকে, হ্যাঁ, ‘যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিতেছে’ পরিপূর্ণ হতে দেখা সত্যই আনন্দদায়ক। (যিশাইয় ৬০:২২) আমার মনে পড়ে আমার এক দাদা ১৯৫১ সালে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “জাপানে কয়জন সাক্ষী আছে?”

আমি বলেছিলাম, “প্রায় ২৬০ জন।”

“এই কজনই?” তাচ্ছিল্যের সুরে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

আমি মনে মনে ভেবেছিলাম, ‘এই শিন্টো-বৌদ্ধ দেশ থেকে যিহোবা কয়জনকে তাঁর উপাসনার দিকে ডাকেন, সময়ই তা বলে দেবে।’ আর যিহোবা তারই উত্তর দিয়েছেন! বর্তমানে জাপানে, এমন কোন এলাকা নেই যেখানে প্রচার করা হয়নি আর সত্য উপাসকদের সংখ্যা ৩,৮০০টি মণ্ডলীতে প্রায় ২,২২,০০০ জনকেও ছাড়িয়ে গেছে!

পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় বিগত ৪৪ বছর—তার মধ্যে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ৩২ বছর—আমার জীবনে বিশেষ আনন্দপূর্ণ সময় ছিল। তার মধ্যে ২৫ বছর আমি বেথেলের অনুবাদ বিভাগে কাজ করেছি। ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমাকে, জাপানে যিহোবার সাক্ষীদের শাখা কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

আন্তরিক, শান্তিপ্রিয় লোকেদের যিহোবার উপাসনা করতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে এক ক্ষুদ্র অবদান থাকাও সত্যই এক সুযোগ ও আশীর্বাদ। আমি যা করেছি তা অনেকেই করেছেন—সম্রাটের উপাসনা না করে একমাত্র সত্য ঈশ্বর, যিহোবার উপাসনা করছেন। যিহোবার বিজয়ী পক্ষে আসতে এবং শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে অনন্ত জীবন লাভ করতে আরও অনেক অনেক লোককে সাহায্য করাই হল আমার আন্তরিক ইচ্ছা।—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭.

[পাদটীকাগুলো]

a তার বাবা একজন বিশ্বস্ত সাক্ষী ছিলেন যিনি ১৯৪৫ সালে জাপানি কারাগারে থাকাকালে, হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বিস্ফোরণের মধ্যেও বেঁচে ছিলেন। ১৯৯৪ সালের ৮ই অক্টোবর সচেতন থাক! (ইংরাজি) সংখ্যার ১১-১৫ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

সম্রাটের উপাসনা ছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষার মুখ্য বিষয়

[সজন্যে]

The Mainichi Newspapers

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ভাই ফ্রাঞ্জের সঙ্গে নিউইয়র্কে

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্ত্রী, জাঙ্কুর সঙ্গে

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অনুবাদ বিভাগে কর্মরত

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার