জীবন কাহিনী
বিয়োগব্যথা সত্ত্বেও এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন
বলেছেন অড্রি হাইড
৬৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা—যার মধ্যে ৫৯ বছরই যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ে—সেটার কথা স্মরণ করে আমি বলতে পারি যে, আমার এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন ছিল। এটা ঠিক যে, আমার প্রথম স্বামীকে ক্যান্সারের কারণে ধীরে ধীরে মারা যেতে দেখা এবং আমার দ্বিতীয় স্বামীকে আলজেইমারস রোগের ভয়ানক প্রভাবগুলো ভোগ করতে দেখা বেদনাদায়ক ছিল। কিন্তু, এই সমস্ত চরম দুর্দশা সত্ত্বেও কীভাবে আমি আমার আনন্দ বজায় রেখেছি, তা আপনাদের বলতে চাই।
আমার শৈশব কেটেছে নেব্রাসকা সীমান্তের নিকটবর্তী উত্তরপূর্ব কলোরাডো সমভূমি অঞ্চলের হ্যাক্সটান নামক ছোট্ট শহরের কাছাকাছি একটা খামারে। আমি ছিলাম অরিল এবং নিনা মকের ছয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম সন্তান। রাসেল, ওয়েন, ক্লারা, আর্ডিস ১৯১৩ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে আর আমি এর পরের বছর জন্মগ্রহণ করি। কার্টিস ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করে।
১৯১৩ সালে মা একজন বাইবেল ছাত্রী হন, যিহোবার সাক্ষিদের সেই সময় এই নামে ডাকা হতো। অবশেষে, আমাদের পরিবারের বাকি সকলেও তা-ই হয়।
সমভূমি অঞ্চলে এক গঠনমূলক জীবন
বাবা অনেক প্রগতিবাদী ব্যক্তি ছিলেন। আমাদের খামারের পুরো বিল্ডিংয়ে বৈদ্যুতিক বাতি ছিল, যা সেই সময়ে অনেক দুর্লভ বিষয়। এ ছাড়া, আমরা খামারে কাজ করার ফলে নিত্যদিনের দ্রব্যসামগ্রী পেতাম—আমাদের নিজেদের মুরগি থেকে ডিম এবং আমাদের নিজেদের গাভি থেকে দুধ, ক্রিম এবং মাখন। জমি চাষের জন্য আমরা ঘোড়া ব্যবহার করতাম এবং স্ট্রবেরি ও আলু আর সেইসঙ্গে গম ও ভুট্টা উৎপাদন করতাম।
বাবা মনে করতেন যে, সব ছেলেমেয়ের কাজ শেখা উচিত। এমনকি স্কুলে যেতে শুরু করার আগেই আমাকে মাঠে কাজ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। গরমকালে কড়া রোদের নিচে নিড়ানি দিয়ে আমাদের বাগানের আগাছা পরিষ্কার করার কথাগুলো আমার মনে পড়ে। আমি মনে মনে ভাবতাম, ‘আমি কি কখনও তা শেষ করতে পারব?’ আমার শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতো এবং মৌমাছি হুল ফুটিয়ে দিত। মাঝে মাঝে নিজের জন্যই আমার দুঃখ লাগত কারণ অন্যান্য অল্পবয়স্কদের আমাদের মতো এত কঠিন পরিশ্রম করতে হতো না। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে আমি যখন আমার শৈশবের কথা স্মরণ করি, তখন আমি এর জন্য কৃতজ্ঞ হই যে, আমাদের কাজ করতে শেখানো হয়েছিল।
আমাদের সকলেরই কোনো না কোনো দায়িত্ব ছিল। আর্ডিস আমার চেয়ে ভাল করে গরুর দুধ দোয়াতে পারত, তাই আমার কাজ ছিল ঘোড়ার আস্তাবল পরিষ্কার করা এবং বেলচা দিয়ে পশুর মল সরানো। তবে, আমরা অনেক মজাও করতাম এবং খেলাধুলা করতাম। আর্ডিস এবং আমি স্থানীয় দলে সফ্টবল খেলতাম। আমি বল ছুঁড়তাম অথবা তৃতীয় অবস্থানে খেলতাম আর আর্ডিস প্রথম অবস্থানে খেলত।
তৃণভূমিতে পরিষ্কার রাতের আকাশ অত্যন্ত অপূর্ব ছিল। হাজার হাজার তারকা আমাকে আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দিত। এমনকি অল্পবয়স্ক থাকা সত্ত্বেও, আমি গীতসংহিতা ১৪৭:৪ পদের কথা চিন্তা করতাম, যেখানে বলা আছে: “তিনি [যিহোবা] তারাগণের সংখ্যা গণনা করেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে ডাকেন।” এইরকম অনেক পরিষ্কার রাতে আমাদের কুকুর জাজ আমার কোলে মাথা রেখে আমাকে সঙ্গ দিত। দুপুরবেলা প্রায়ই আমি আমাদের বারান্দায় বসতাম এবং সবুজ গম খেতের ওপর দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যেত আর রোদের আলোতে সেটাকে দেখতে রুপোর মতো লাগত, তখন আমি মুগ্ধ হয়ে এর প্রশংসা করতাম।
মার উত্তম উদাহরণ
আমার মা একান্তভাবে নিয়োজিত একজন স্ত্রী ছিলেন। সবসময় বাবাই ছিলেন পরিবারের প্রধান আর মা আমাদের তাকে সম্মান করতে শিক্ষা দিতেন। ১৯৩৯ সালে তিনিও যিহোবার সাক্ষিদের একজন হন। আমরা জানতাম যে বাবা আমাদের ভালবাসেন, যদিও তিনি আমাদের দিয়ে কাজ করাতেন এবং আমাদের অত্যধিক প্রশ্রয় দিতেন না। শীতকালে প্রায়ই তিনি এক জোড়া ঘোড়া গাড়ির সঙ্গে বেঁধে দিয়ে আমাদের স্লেজ গাড়ি তৈরি করে দিতেন। তুষারের দ্যুতি আমরা কতই না উপভোগ করতাম।
যাই হোক, মা-ই আমাদের ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা এবং বাইবেলের প্রতি সম্মান গড়ে তুলতে শিখিয়েছিলেন। আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা এবং তিনি হলেন জীবনের উৎস। (গীতসংহিতা ৩৬:৯; ৮৩:১৮, NW) আমরা এও জেনেছিলাম যে, তিনি আমাদের যে-নির্দেশাবলী দিয়েছেন, সেগুলো আমাদের আনন্দকে কেড়ে নেওয়ার জন্য নয় বরং আমাদের উপকারের জন্য। (যিশাইয় ৪৮:১৭) মা সবসময় এই বিষয়টার ওপর জোর দিতেন যে, আমাদের করণীয় এক বিশেষ কাজ রয়েছে। আমরা শিখেছিলাম যে, যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.
শৈশবের সেই দিনগুলোতে যখনই আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম এবং মা যদি ঘরে না থাকত, তা হলে আমি তাকে খুঁজতে বের হতাম। একবার আমার বয়স যখন প্রায় ছয় কী সাত, তখন আমি তাকে আস্তাবলের মধ্যে খুঁজে পাই। তখন প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। আমরা খড়কুটো রাখার চিলেকোঠায় ছিলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, ঈশ্বর আবারও প্লাবন নিয়ে এসেছেন কি না। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তিনি আর কখনও জলপ্লাবন দিয়ে পৃথিবী ধ্বংস করবেন না। আমার সেই কথাও মনে পড়ে যে, বহুবার আমি ভূগর্ভস্থ ঘরে দৌড়ে গিয়েছিলাম কারণ ঘূর্ণিঝড় হওয়া অস্বাভাবিক কোনো বিষয় ছিল না।
আমার জন্মেরও আগে থেকে মা প্রচার কাজে অংশ নিতেন। একটা দল আমাদের ঘরে মিলিত হতো, যাদের সকলেরই স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে থাকার প্রত্যাশা ছিল। যদিও ঘরে ঘরে প্রচার করা আমাদের মার পক্ষে কঠিন ছিল কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের কারণে তিনি সেই ভয়কে জয় করেছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালের ২৪ নভেম্বর তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন, যে-সময়ে তার বয়স ছিল ৮৪ বছর। “মা তুমি স্বর্গে যাচ্ছ আর তুমি তাদের সঙ্গেই থাকবে, যাদেরকে তুমি জানো,” তার কানের কাছে আমি ফিসফিস করে বলেছিলাম। আমি কতই না আনন্দিত হয়েছিলাম যে, সেই সময়ে আমি মার কাছে থাকতে পেরেছিলাম এবং তার সঙ্গে আমার আস্থা ভাগ করে নিতে পেরেছিলাম! তিনি মৃদুস্বরে বলেছিলেন, “তুমি আমার অনেক যত্ন নিয়েছ।”
আমরা প্রচার করতে শুরু করি
১৯৩৯ সালে রাসেল একজন অগ্রগামী হয়, যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারকদের এই নামে ডাকা হতো। সে ওক্লাহোমা এবং নেব্রাসকাতে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত অগ্রগামীর কাজ করেছিল, যে-সময়ে তাকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্ব প্রধান কার্যালয়ে (যেটাকে বেথেল বলা হয়) সেবা করার জন্য ডাকা হয়। আমি ১৯৪১ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর অগ্রগামীর কাজ শুরু করি এবং কলোরাডো, ক্যানসাস ও নেব্রাসকার বিভিন্ন জায়গায় পরিচর্যা করতে শুরু করি। অগ্রগামী কাজের সেই বছরগুলো অনেক আনন্দের ছিল আর তা শুধুমাত্র অন্যদের যিহোবাকে সেবা করার জন্য সাহায্য করতে পেরেছিলাম বলেই নয় কিন্তু তাঁর ওপর আমি নির্ভর করতে শিখেছিলাম বলে।
রাসেল যে-সময়ে অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিল, ওয়েন তখন কিছু সময়ের জন্য চাকরি করার পর পূর্ব উপকূলে কলেজে পড়ত। পরবর্তী সময়ে, তাকে বেথেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে কয়েক বছরের জন্য নিউ ইয়র্কের ইথেকার নিকটবর্তী কিংডম ফার্মে কাজ করে। সেখানে ফার্মের ছোট্ট পরিবার ও সেইসঙ্গে ব্রুকলিন বেথেলের প্রায় ২০০ জন কর্মীর জন্য খাদ্য উৎপাদন করা হতো। ওয়েন ১৯৮৮ সালে তার মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত যিহোবার সেবায় তার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিল।
আমার দিদি আর্ডিস, জেমস কার্নকে বিয়ে করে এবং তাদের পাঁচ সন্তানের এক পরিবার ছিল। সে ১৯৯৭ সালে মারা যায়। আমার আরেক দিদি ক্লারা এখন পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত রয়েছে আর আমার ছুটির সময় আমি এখনও কলোরাডোতে তার বাড়িতে তাকে দেখতে যাই। আমাদের সবচেয়ে ছোট ভাই কার্টিস ৪০ এর দশকের মাঝামাঝিতে ব্রুকলিন বেথেলে আসে। সে ট্রাকে করে বিভিন্ন মালপত্র এবং উৎপাদিত দ্রব্য কিংডম ফার্মে নিয়ে যেত এবং নিয়ে আসত। সে বিয়ে করেনি এবং ১৯৭১ সালে মারা যায়।
আমার আকাঙ্ক্ষা—বেথেল পরিচর্যা
আমার বড় দাদারা অল্পবয়সেই বেথেলে গিয়েছিল এবং আমারও বেথেলে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, তাদের উত্তম উদাহরণই আমাকে বেথেলে আমন্ত্রিত হতে পরিচালিত করেছিল। ঈস্বরের সংগঠনের ইতিহাস সম্বন্ধে আমার মাকে বলতে শোনা এবং শেষ কাল সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতা নিজে দেখাই আমার মধ্যে বেথেলে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলেছিল। আমি প্রার্থনায় যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, তিনি যদি আমাকে বেথেলে কাজ করার সুযোগ দেন, তা হলে আমি কেবলমাত্র খ্রিস্টীয় বাধ্যবাধকতাগুলোর যত্ন নেওয়া ছাড়া আর কখনও সেই কাজ পরিত্যাগ করব না।
আমি ১৯৪৫ সালের জুন মাসের ২০ তারিখে বেথেলে আসি এবং আমাকে হাউসকিপার হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমাকে প্রতিদিন ২৬টা বিছানাসহ ১৩টা রুম ও সেইসঙ্গে করিডোর, সিঁড়ি এবং জানালা পরিষ্কার করতে হতো। সেই কাজ অনেক কষ্টকর ছিল। প্রতিদিন কাজের সময় আমি মনে মনে বলতাম, ‘এটা ঠিক যে, তুমি ক্লান্ত কিন্তু তুমি বেথেলে, ঈশ্বরের গৃহে কাজ করছ!’
নেথেন নরের সঙ্গে বিয়ে
১৯২০ এর দশক থেকে যে-বেথেলকর্মীরা বিয়ে করতে চাইত, তাদের বেথেল ত্যাগ করে অন্য কোনো জায়গায় রাজ্যের কাজ করতে হতো। কিন্তু, ১৯৫০ দশকের প্রথম দিকে দীর্ঘ সময় ধরে বেথেলে কাজ করছে এমন অল্প কয়েক জন দম্পতিকে বিয়ে করে সেখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাই নেথেন এইচ. নর, যে সেই সময় বিশ্বব্যাপী রাজ্যের কাজের নেতৃত্ব নিচ্ছিল, যখন আমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল, তখন আমি মনে করেছিলাম যে, ‘সে অবশ্যই বেথেলে থাকবে!’
যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বব্যাপী কাজের দেখাশোনার জন্য নেথেনের অনেক দায়িত্ব ছিল। তাই, সে আমার প্রতি বেশ সৎ ছিল, আমাকে অনেক কারণ দেখিয়েছিল যে, তার বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার আগে কেন আমার মনোযোগের সঙ্গে ভেবে দেখা উচিত। সেই সময় সে সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসগুলো পরিদর্শন করার জন্য অনেক ভ্রমণ করত এবং মাঝে মাঝে কয়েক সপ্তাহের জন্য যেত। তাই সে বুঝিয়ে বলেছিল যে, আমাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য আলাদা থাকতে হবে।
আমি যেহেতু যুবতী ছিলাম, তাই বসন্তকালে বিয়ে হওয়ার এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ হাওয়াইয়ে মধুচন্দ্রিমা যাপনের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু, আমরা ১৯৫৩ সালের ৩১শে জানুয়ারি, শীতকালে বিয়ে করি এবং সেই শনিবার বিকেলে এবং রবিবার আমরা নিউ জার্সিতে আমাদের মধুচন্দ্রিমা যাপন করি। সোমবার আমরা কাজে ফিরে আসি। তবে, এক সপ্তাহ পরে আমরা এক সপ্তাহের জন্য মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলাম।
এক পরিশ্রমী সঙ্গী
১৯২৩ সালে নেথেন যখন বেথেলে আসে, তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। সে সেই সময়ের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের যেমন, জোসেফ এফ. রাদারফোর্ড, যিনি সাক্ষিদের কাজে নেতৃত্ব দিতেন এবং ছাপাখানার ম্যানেজার রবার্ট জে. মার্টিনের কাছ থেকে অনেক মূল্যবান প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। ভাই মার্টিন যখন ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান, তখন নেথেন ছাপাখানার ম্যানেজার হয়। পরের বছর ভাই রাদারফোর্ড যখন ইউরোপের যিহোবার সাক্ষিদের শাখাগুলো পরিদর্শনে যান, তখন তিনি নেথেনকে সঙ্গে নিয়ে যান। ভাই রাদারফোর্ড যখন ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে মারা যান, তখন নেথেনকে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বব্যাপী কাজের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নেথেন অনেক প্রগতিবাদী ছিল, সবসময় ভবিষ্যতের উন্নয়নের বিষয়ে পরিকল্পনা করত। কেউ কেউ এটাকে অনুপযুক্ত বলে মনে করত, যেহেতু এই বিধিব্যবস্থার শেষ খুব কাছেই বলে ধরে নেওয়া হতো। বস্তুতপক্ষে, একজন ভাই নেথেনের পরিকল্পনা দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এটা কী, ভাই নর? আপনার কি কোনো বিশ্বাস নেই?” সে উত্তর দিয়েছিলেন: “হ্যাঁ, আছে কিন্তু আমরা যত শীঘ্রই আশা করছি, তত শীঘ্রই যদি শেষ না আসে, তা হলে আমরা প্রস্তুত থাকব।”
বিশেষভাবে যে-ধারণাটা নেথেন খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত, তা হল মিশনারিদের জন্য একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। তাই, ১৯৪৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বিরাট ফার্মে মিশনারি স্কুল শুরু হয়, যেখানে আমার ভাই ওয়েন সেই সময় কাজ করত। যদিও স্কুলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বাইবেলের গভীর বিষয়গুলো অধ্যয়ন করা হতো কিন্তু নেথেন ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু বিনোদনের ব্যবস্থাও করেছিল। ক্লাসের প্রথম দিকে সে বল খেলায় অংশ নিত কিন্তু পরবর্তী সময়ে আঘাত পাওয়ার ভয়ে সে আর খেলেননি, যার জন্য সে হয়তো গরমের সময়কার জেলা সম্মেলনগুলোতে যোগ দিতে পারবেন না। এর পরিবর্তে, সে আম্পায়ার হওয়া বেছে নিয়েছিল। বিদেশি যে-ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলা করত, তাদের জন্য সে যখন অবাধে নিয়ম পরিবর্তন করত, তা দেখে ছাত্রছাত্রীরা অনেক আনন্দিত হতো।
নেথেনের সঙ্গে ভ্রমণ করা
অবশেষে, আমি নেথেনের সঙ্গে অন্য দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে শুরু করি। শাখার স্বেচ্ছাসেবক এবং মিশনারিদের কাছে অভিজ্ঞতাগুলো ভাগ করে নেওয়া আমি উপভোগ করতাম। আমি সরাসরি তাদের ভালবাসা ও বিশ্বস্ত সেবা দেখতে পেরেছিলাম এবং যে-দেশগুলোতে তাদের কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাদের তালিকা ও জীবনযাপন সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলাম। অনেক বছর ধরে আমি এইরকম সাক্ষাৎগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতায় ভরা বহু চিঠি পেয়েছি।
আমাদের ভ্রমণগুলোর কথা স্মরণ করে আমার অনেক অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন পোল্যান্ডে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে দুজন বোন আমার সামনে ফিসফিস করে কথা বলতে থাকে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আপনারা ফিসফিস করে কথা বলছেন কেন?” তারা ক্ষমা চেয়ে ব্যাখ্যা করেছিল যে, তারা ফিসফিস করে কথা বলায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল, যেহেতু পোল্যান্ডে যিহোবার সাক্ষিদের কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং তাদের বাড়িতে মাইক্রোফোন লুকিয়ে রেখে আড়িপেতে তাদের কথা শোনা হতো।
বোন আডা ছিলেন তাদের অনেকের মধ্যে একজন, যিনি পোল্যান্ডে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সেবা করেছিলেন। তার কপালের সামনে কোকড়ানো ঝাঁকড়া চুল ছিল। একবার তিনি সেই চুল সরিয়ে আমাকে গভীর আঘাতের চিহ্ন দেখান, যা একজন তাড়নাকারীর দ্বারা আঘাতের কারণে হয়েছিল। আমাদের ভাই ও বোনদের যে-নিষ্ঠুর ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছিল, সেটার পরিণতি সরাসরি দেখে আমার খুবই কষ্ট লেগেছিল।
বেথেলের পরে হাওয়াই ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। ১৯৫৭ সালে হিলো শহরের সম্মেলনের কথা আমার মনে আছে। সেটা এক স্মরণীয় ঘটনা ছিল আর মোট উপস্থিতি স্থানীয় সাক্ষিদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এমনকি শহরের মেয়র নেথেনকে অভ্যর্থনার স্বীকৃতিস্বরূপ শহরের চাবি দিয়েছিলেন। অনেকে আমাদের সম্ভাষণ জানাতে এসেছিল এবং আমাদের ফুলের মালা দিয়ে ভূষিত করেছিল।
আরেকটা রোমাঞ্চকর সম্মেলন ছিল, ১৯৫৫ সালে জার্মানির নুরেমবার্গে, যা হিটলারের প্যারেড করার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটা সকলের জানা ছিল যে, হিটলার জার্মানি থেকে যিহোবার লোকেদের নির্মূল করার শপথ নিয়েছিলেন কিন্তু এখন এই স্টেডিয়াম যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা পরিপূর্ণ! আমি চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি। প্ল্যাটফর্ম অনেক বড় ছিল এবং ১৪৪টা বিশাল স্তম্ভে রং করা আকর্ষণীয় কাপড় ঝুলানো ছিল। আমি মঞ্চে ছিলাম এবং ১,০৭,০০০রেরও বেশি দর্শককে দেখতে পেয়েছিলাম। পিছনের সারিটা এত দূরে ছিল যে, অনেক কষ্টে শেষের সারি দেখতে পেরেছিলাম।
আমরা জার্মান ভাইবোনদের নীতিনিষ্ঠা এবং নাৎসী শাসন আমলে তাদের তাড়নার সময়ে যিহোবার কাছ থেকে তারা যে-শক্তি পেয়েছিল, তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। এটা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার এবং নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের নিজেদের সংকল্পকে শক্তিশালী করেছিল। নেথেন শেষ বক্তৃতা দিয়েছিল এবং বক্তৃতার শেষে সে দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়েছিল। তারাও সঙ্গে সঙ্গে বিদায় হিসেবে তাদের রুমাল নাড়িয়ে সাড়া দিয়েছিল। এটা দেখতে অপূর্ব ফুলের বাগানের মতো ছিল।
১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পর্তুগালে আমাদের পরিদর্শনও ভোলার নয়। আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ বৈধ হওয়ার পর লিসবনে সাক্ষিদের প্রথম সভায় আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম। এই কাজ ৫০ বছর ধরে নিষিদ্ধ ছিল! যদিও সেই দেশে সেই সময়ে মাত্র ১৪,০০০ জন রাজ্য প্রকাশক ছিল কিন্তু দুটো সভাতে ৪৬,০০০ জনেরও বেশি লোক উপস্থিত হয়েছিল। আমার চোখ জলে ভরে গিয়েছিল, যখন ভাইবোনেরা বলেছিল: “আমাদের আর লুকিয়ে থাকতে হবে না। আমরা মুক্ত।”
নেথেনের সঙ্গে ভ্রমণের দিনগুলো থেকে আজ পর্যন্ত আমি অনিয়মিত সাক্ষ্যদান—প্লেনে, রেস্তরাঁয়—এবং রাস্তায় সাক্ষ্যদান উপভোগ করছি। আমি সবসময় সঙ্গে করে সাহিত্যাদি রাখি যাতে আমি প্রস্তুত থাকি। একবার আমরা যখন বিলম্বিত প্লেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তখন এক ভদ্রমহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আমি কোথায় কাজ করি। এটা আমাকে তার সঙ্গে আলোচনা করতে পরিচালিত করেছিল আর আমাদের চারপাশের লোকেরা তা শুনছিল। বেথেল পরিচর্যা এবং আমার প্রচার কাজ আমাকে ব্যস্ত এবং অনেক আনন্দিত রেখেছে।
অসুস্থতা এবং বিদায়ী উৎসাহ
১৯৭৬ সালে নেথেন ক্যান্সারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং আমি ও সেইসঙ্গে বেথেলের সদস্যরা তাকে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করি। তার দুর্বল স্বাস্থ্য সত্ত্বেও, আমরা আমাদের রুমে সারা পৃথিবী থেকে আসা বিভিন্ন শাখা অফিসের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানাতাম, যারা সেই সময় প্রশিক্ষণের জন্য ব্রুকলিনে ছিল। ডন ও আর্লিন স্টিল, লয়েড ও মেলবা বেরি, ডগলাস ও মেরি গেস্ট, মার্টিন ও গ্যারট্রুট পোয়েটজিঙ্গার, প্রাইস হিউজ এবং অন্যান্য আরও অনেকের সাক্ষাতের কথা আমার মনে পড়ে। প্রায়ই তারা তাদের দেশের কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের বলত। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও আমাদের ভাইবোনদের অটল থাকার সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞতাগুলো শুনে আমি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলাম।
নেথেন যখন বুঝতে পেরেছিল যে, তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে তখন সে আমাকে আমার বৈধব্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য কিছু উত্তম পরামর্শ দিয়েছিল। সে বলেছিল: “আমরা অনেক সুখী বিবাহিত জীবন কাটিয়েছি। অনেকের কখনও সেই অভিজ্ঞতা হয়নি।” একটা বিষয়, যা আমাদের বিয়েকে আনন্দিত করেছিল, সেটা হল নেথেনের সুবিবেচনা। উদাহরণস্বরূপ, ভ্রমণের সময় আমরা যখন বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম, তখন সে আমাকে বলত: “অড্রি, মাঝে মাঝে আমি যদি তোমার সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে না দিই, তা হলে সেটা কেবল আমি তার নাম ভুলে গিয়েছি বলে।” আমাকে আগে থেকে বলে রাখার জন্য আমি অনেক আনন্দিত ছিলাম।
নেথেন আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল: “মৃত্যুর পর আমাদের আশা নিশ্চিত এবং আমাদের আর কখনও কষ্ট পেতে হবে না।” এরপর সে আমাকে বুঝিয়েছিল: “সামনের দিকে তাকাও কারণ সেখানেই তোমার পুরস্কার রয়েছে। অতীতকে ধরে রেখো না—যদিও তোমার স্মৃতি সবসময়ই থাকবে। সময়ই তোমাকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে। নিজের বিষয়ে তিক্ত হোয়ো না এবং দুঃখ করো না। এইরকম আনন্দ এবং আশীর্বাদগুলো ছিল বলে আনন্দিত হও। সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তুমি দেখবে যে, স্মৃতিগুলো তোমাকে আনন্দ দেয়। স্মৃতিগুলো হল ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের জন্য এক উপহার।” সে আরও বলেছিল: “সবসময় ব্যস্ত থাকবে—তোমার জীবনকে অন্যদের জন্য কিছু করতে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। এটা তোমাকে বেঁচে থাকার আনন্দ পেতে সাহায্য করবে।” অবশেষে ১৯৭৭ সালের ৮ই জুন নেথেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
গ্লেন হাইডের সঙ্গে বিয়ে
নেথেন আমাকে বলেছিল যে, অতীতের স্মৃতিগুলো নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারি অথবা নতুন জীবন গড়তে পারি। তাই ১৯৭৮ সালে নিউ ইয়র্কের ওয়ালকিলের ওয়াচটাওয়ার ফার্মে যাওয়ার পর আমি অত্যন্ত সুদর্শন, শান্তশিষ্ট এবং নম্র ব্যক্তি গ্লেন হাইডকে বিয়ে করি। সাক্ষি হওয়ার আগে সে নৌবিভাগে কাজ করত, যখন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে রত ছিল।
গ্লেন পিটি (পেট্রোল টর্পেডো) জাহাজে কাজ করত এবং তাকে ইঞ্জিন রুমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ইঞ্জিনের শব্দে সে তার প্রায় অর্ধেক শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। যুদ্ধের পরে সে একজন দমকলকর্মী হয়। যুদ্ধের অভিজ্ঞতাগুলোর কারণে কয়েক বছর দুঃস্বপ্নগুলো তাকে তাড়া করে ফিরত। সে তার সচিবের কাছ থেকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জেনেছিল, যিনি তার কাছে অনিয়মিতভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
এরপরে ১৯৬৮ সালে, গ্লেনকে ব্রুকলিন বেথেলে দমকলকর্মী হিসেবে সেবা করার জন্য ডাকা হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে ওয়াচটাওয়ার ফার্ম যখন তাদের ফায়ার ইঞ্জিন পায় তখন তাকে সেখানে বদলি করা হয়। পরবর্তী সময়ে তার আলজেইমারস রোগ হয়। আমরা দশ বছর বিবাহিত জীবন কাটানোর পর, গ্লেন মারা যায়।
কীভাবে আমি এই অবস্থাকে মোকাবিলা করেছিলাম? নেথেন যখন জানতে পেরেছিল যে সে মারা যাবে, তখন সে আমাকে যে-প্রজ্ঞা প্রদান করেছিল, সেটাই আমাকে আবারও সান্ত্বনা দিয়েছিল। বৈধব্যর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সে আমাকে যা লিখে গিয়েছিল, তা আমি সবসময় পড়ি। আমি এখনও এই মন্তব্যগুলো তাদের সামনে পড়ি, যারা তাদের সঙ্গীকে হারিয়েছে আর তারাও নেথেনের পরামর্শ থেকে সান্ত্বনা পেয়েছে। হ্যাঁ, সামনের দিকে তাকানোই উত্তম যেমনটা সে আমাকে উৎসাহিত করেছিল।
এক মূল্যবান ভ্রাতৃসমাজ
যে-বিষয়টা বিশেষভাবে আমার সুখী এবং পরিতৃপ্তিদায়ক জীবনে অবদান রেখেছে, সেটা হল বেথেল পরিবারের প্রিয় বন্ধুরা। বিশেষ করে একজন হলেন এস্টার লোপেজ, যিনি ১৯৪৪ সালে ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েড এর তৃতীয় ক্লাসে থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্প্যানিশ ভাষায় আমাদের বাইবেল সাহিত্যাদির একজন অনুবাদক হিসেবে ব্রুকলিন বেথেলে ফিরে আসেন। প্রায়ই নেথেন যখন ভ্রমণে যেত, তখন এস্টার আমার কাছের সঙ্গী ছিলেন। সেও ওয়াচটাওয়ার ফার্মে থাকেন। এখন ৯০ কোঠার মাঝামাঝি বয়সে তার স্বাস্থ্য ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে এবং আমাদের চিকিৎসালয়ে তার যত্ন নেওয়া হচ্ছে।
আমার সহদরদের মধ্যে একমাত্র রাসেল এবং ক্লারা বেঁচে আছে। রাসেলের বয়স ৯০ বছরেরও ওপরে এবং সে ব্রুকলিন বেথেলে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে যাচ্ছে। বিয়ের পরে যাদেরকে প্রথম বেথেলে থাকতে দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে সেও ছিল। ১৯৫২ সালে, সে সহবেথেলকর্মী জিন লারসনকে বিয়ে করে। জিনের ভাই ম্যাক্স ১৯৩৯ সালে বেথেলে আসেন এবং ১৯৪২ সালে নেথেনের পরে ছাপাখানার অধ্যক্ষ হন। ম্যাক্স তার প্রিয় স্ত্রী হেলেন, যিনি মালটিপাল স্ক্লেরোসিস নামক রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন, তার যত্ন নিতে সাহায্য করা ছাড়াও ক্রমাগত বেথেলে অনেক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
৬৩ বছরের বেশি সময় ধরে পূর্ণসময় যিহোবার সেবার কথা স্মরণ করে আমি বলতে পারি যে, আমার সত্যিই এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন রয়েছে। বেথেল আমার ঘর হয়ে উঠেছে এবং আমি এখানে ক্রমাগত আনন্দের সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের মধ্যে কাজের গুরুত্ব এবং যিহোবাকে সেবা করার ইচ্ছা স্থাপন করার সমস্ত কৃতিত্ব আমার বাবামার। কিন্তু যে-বিষয়টা আমার জীবনকে সত্যিই পরিতৃপ্তিদায়ক করে তুলেছে, তা হল আমাদের চমৎকার ভ্রাতৃসমাজ এবং এক পরমদেশ পৃথিবীতে আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে বাস করার আশা ও আমাদের সর্বমহান সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর যিহোবাকে চিরকাল সেবা করা।
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯১২ সালের জুন মাসে আমার বাবামা তাদের বিয়ের দিনে
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাম দিক থেকে ডান দিকে: ১৯২৭ সালে রাসেল, ওয়েন, ক্লারা, আর্ডিস, আমি ও কার্টিস
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৪৪ সালে অগ্রগামীর কাজ করার সময় ফ্রান্সেস এবং বারবারা ম্যাকনটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৫১ সালে বেথেলে। বাম দিক থেকে ডান দিকে: আমি, এস্টার লোপেজ এবং আমার বৌদি জিন
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ন্যাথেন এবং তার বাবামার সঙ্গে
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৫৫ সালে নেথেনের সঙ্গে
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
হাওয়াইয়ে নেথেনের সঙ্গে
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমার দ্বিতীয় স্বামী গ্লেনের সঙ্গে