ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৭ ৩/১ পৃষ্ঠা ৮-১২
  • এমন এক রাজ্যের জন্য প্রতীক্ষা করা, যা “জগতের নয়”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • এমন এক রাজ্যের জন্য প্রতীক্ষা করা, যা “জগতের নয়”
  • ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • বিদ্রোহ!
  • যোগ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়
  • বিপদজনক অবস্থানে রাখা
  • যুদ্ধ শুরু হয়
  • আমরা রাজ্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলাম
  • বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও যিহোবার সেবা করতে পেরেছি বলে কৃতজ্ঞ
    ২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার সাহায্যে আমরা একদলীয় শাসনতন্ত্রে রক্ষা পেয়েছিলাম
    ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৭ ৩/১ পৃষ্ঠা ৮-১২

জীবনকাহিনি

এমন এক রাজ্যের জন্য প্রতীক্ষা করা, যা “জগতের নয়”

বলেছেন নিকোলাই গুসুলিয়াক

একচল্লিশ দিন ও একচল্লিশ রাত ধরে আমি এক জেল বিদ্রোহের মধ্যে আটকা পড়ি। হঠাৎ, কামান দাগার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ট্যাঙ্ক ও সৈন্যরা বন্দি শিবিরে ছুটে আসে, বন্দিদের আক্রমণ করে। আমার জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

কীভাবে আমি এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলাম? আমি আপনাদের বলছি। এই ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৫৪ সালে। সেই সময়ে আমার বয়স ছিল ৩০ বছর। সোভিয়েত শাসনের অধীনে বসবাসরত অনেক যিহোবার সাক্ষির মতো আমাকেও রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে নিরপেক্ষ থাকার ও অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে বলার কারণে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমাদের কারারুদ্ধ সাক্ষি দলের মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ ও ৩৪ জন মহিলা ছিল। আমাদেরকে মধ্য কাজাখস্তানের কেংগির গ্রামের কাছাকাছি একটা শ্রম শিবিরে রাখা হয়েছিল। সেখানে আমরা অন্যান্য হাজার হাজার বন্দির সঙ্গে থাকতাম।

এর আগের বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্টালিন মারা গিয়েছিলেন। অনেক বন্দি আশা করেছিল যে, মস্কোর নতুন সরকার হয়তো জেলের নির্মম পরিস্থিতি সম্বন্ধে তাদের অভিযোগ শুনবে। বন্দিদের অসন্তোষ শেষ পর্যন্ত আরও জোরালো হয়ে জেল বিদ্রোহের দ্বারা ফেটে পড়েছিল। উদ্ভূত সংঘর্ষ চলাকালে আমরা যারা সাক্ষি ছিলাম, আমাদেরকে বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহীদের কাছে আমাদের অবস্থান সম্বন্ধে স্পষ্ট করতে হয়েছিল আর সেইসঙ্গে সেনারক্ষীদের কাছেও আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল। সেই নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল।

বিদ্রোহ!

১৬ই মে বন্দি শিবিরে বিদ্রোহ শুরু হয়। দুদিন পর, শিবিরের অবস্থা আরও উন্নত করার ও রাজনৈতিক বন্দিদের সুযোগসুবিধার দাবি জানিয়ে ৩,২০০ জনেরও বেশি বন্দি কাজে যেতে প্রত্যাখ্যান করে। ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে। প্রথমে বিদ্রোহীরা জোর করে রক্ষীদের শিবির থেকে বের করে দেয়। তারপর তারা চারপাশের বেড়ার মধ্যে ফুটো করে। এরপর তারা নারী-পুরুষের কক্ষ পৃথক করার জন্য যে-দেওয়ালগুলো ছিল, সেগুলো ভেঙে ফেলে এমন ব্যারাক তৈরি করে, যেখানে সকলে একসঙ্গে থাকে। এর পরের বিক্ষুব্ধ দিনগুলোতে বন্দিদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকি বিয়ে পর্যন্ত করেছিল, যাদের বিয়ে সেই যাজকরা পরিচালনা করেছিল, যারা নিজেরাও বন্দি ছিল। শিবিরের যে-তিনটে কক্ষে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, সেখানকার ১৪,০০০ বন্দির মধ্যে অধিকাংশই সেই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিদ্রোহীরা শিবিরে একটা কমিটি গঠন করে। কিন্তু, শীঘ্রই কমিটির সদস্যদের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয় এবং শিবিরের নিয়ন্ত্রণ অতি গোঁড়া ব্যক্তিদের হাতে চলে যায়। পরিবেশ ক্রমান্বয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। “শান্তিশৃঙ্খলা” বজায় রাখার জন্য বিদ্রোহী নেতারা একটা নিরাপত্তা বিভাগ, একটা সেনা বিভাগ ও একটা প্রচারণা বিভাগ গঠন করে। বিদ্রোহের মনোভাবকে উত্তেজনার চরমে রাখতে নেতারা উসকানিমূলক বার্তা প্রচার করার জন্য লাউডস্পিকার ব্যবহার করত, যেগুলো পুরো শিবির জুড়ে খুঁটির ওপর স্থাপন করা ছিল। বিদ্রোহীরা অন্যদের পালাতে দিত না, যারা তাদের বিরোধিতা করত তাদের শাস্তি দিত এবং তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন যেকাউকে হত্যা করতে তারা প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছিল। গুজব উঠেছিল যে, কিছু বন্দিকে ইতিমধ্যেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

যেহেতু বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আক্রমণ আশা করেছিল, তাই নিজেদের সুরক্ষা করতে তারা সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়েছিল। যতটা সম্ভব অধিক সংখ্যক বন্দিকে শিবির রক্ষা করার জন্য যে সুসজ্জিত করা হয়, তা নিশ্চিত করতে নেতারা সমস্ত বন্দিকে সশস্ত্র থাকতে আদেশ দিয়েছিল। তা করার জন্য বন্দিরা জানালার লোহার গরাদ খুলে নিয়েছিল এবং সেই ধাতু দিয়ে ছুরি ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করেছিল। এমনকি তারা বন্দুক ও বিস্ফোরক দ্রব্যেরও ব্যবস্থা করেছিল।

যোগ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়

সেই সময়ে, দুজন বিদ্রোহী আমার কাছে এসেছিল। তাদের মধ্যে একজন একটা নতুন ধারালো ছুরি ধরে ছিলেন। “এটা নাও!” তিনি আদেশ করেছিলেন। “সুরক্ষার জন্য তোমার এটা দরকার হবে।” আমাকে শান্ত থাকতে সাহায্য করার জন্য আমি যিহোবার কাছে নীরবে প্রার্থনা করেছিলাম। আমি বলেছিলাম: “আমি একজন খ্রিস্টান, যিহোবার সাক্ষি। অন্যান্য সাক্ষি ও আমি এখানে কারারুদ্ধ কারণ আমরা যুদ্ধ করছি কিন্তু তা লোকেদের বিরুদ্ধে নয় বরং অদৃশ্য আত্মাদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্রশস্ত্র হল, আমাদের বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের রাজ্যের ওপর আমাদের প্রত্যাশা।”—ইফিষীয় ৬:১২.

আমাকে অবাক করে দিয়ে সেই ব্যক্তি মাথা নেড়ে জানান যে, তিনি বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু, অন্যজন আমাকে প্রচণ্ড আঘাত করেন। এরপর তারা চলে যায়। বিদ্রোহীরা একটা ব্যারাক থেকে অন্য ব্যারাকে যায়, সাক্ষিদের সেই বিদ্রোহে যোগ দেওয়ার জন্য জোর করে। কিন্তু, আমাদের সমস্ত খ্রিস্টান ভাইবোন তা করতে প্রত্যাখ্যান করে।

যিহোবার সাক্ষিদের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্বন্ধে বিদ্রোহী কমিটির একটা সভায় আলোচনা করা হয়েছিল। “সমস্ত ধর্মের—পেন্টিকস্টাল, আ্যডভেনটিস্ট, ব্যাপটিস্ট ও অন্যান্য ধর্মের—সদস্যরা বিদ্রোহে যোগ দিচ্ছে। শুধুমাত্র যিহোবার সাক্ষিরাই তা প্রত্যাখ্যান করেছে,” তারা বলেছিল। “তাদেরকে নিয়ে আমরা কী করব?” কোনো একজন প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, একজন সাক্ষিকে ধরে জেলের চুল্লির মধ্যে ফেলে দেওয়া হোক, যাতে আমাদের মধ্যে কিছুটা ভয় ঢোকে। কিন্তু, সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা, যিনি একজন বন্দি ছিলেন ও যাকে অন্যেরা সম্মান করত, তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন: “সেটা ঠিক হবে না। আমরা তাদের সবাইকে শিবিরের একেবারে প্রান্তে গেটের ঠিক পাশের একটা ব্যারাকে রেখে দিতে পারি। এর ফলে, যদি সেনাবাহিনী ট্যাঙ্ক নিয়ে আমাদের আক্রমণ করতে আসে, তা হলে সাক্ষিরাই প্রথমে নিহত হবে। আর তাদেরকে হত্যা করার জন্য আমরা দায়ী হব না।” অন্যেরা তার এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল।

বিপদজনক অবস্থানে রাখা

একটু পরেই বন্দিরা পুরো শিবির ঘুরে ঘুরে চিৎকার করে বলে, “যিহোবার সাক্ষিরা, বেরিয়ে এসো!” তারপর তারা আমাদের ৮০ জনের সবাইকে দলবদ্ধ করে শিবিরের একেবারে প্রান্তে একটা ব্যারাকের দিকে নিয়ে যায়। তারা ব্যারাকের দেওয়াল সংলগ্ন সরু বিছানাগুলো বাইরে বের করে দেয়, যাতে রুমের ভিতরে আরও জায়গা হয় এবং আমাদেরকে সেখানে ঢুকতে আদেশ দেয়। সেই ব্যারাক আমাদের জন্য জেলের ভিতরে আরেকটা জেল হয়ে ওঠে।

কিছুটা গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য আমাদের দলের খ্রিস্টান বোনেরা কয়েকটা চাদর একসঙ্গে সেলাই করে জোড়া লাগায় আর আমরা সেগুলোকে সেই ব্যারাককে দুটো অংশে—একটা পুরুষদের ও আরেকটা মহিলাদের জন্য—ভাগ করতে ব্যবহার করি। (পরে রাশিয়ার একজন সাক্ষি সেই ব্যারাকের একটা ছবি আঁকেন, যা নীচে দেখানো হয়েছে।) সেই ঘিঞ্জি জায়গাগুলোতে থাকার সময়ে আমরা প্রায়ই একসঙ্গে প্রার্থনা করতাম, যিহোবার কাছে ঐকান্তিকভাবে প্রজ্ঞা এবং “পরাক্রমের উৎকর্ষ” চাইতাম।—২ করিন্থীয় ৪:৭.

পুরো সময় ধরে আমরা বিদ্রোহীদের ও সোভিয়েত সেনাবাহিনীর মাঝে বিপদজনক অবস্থার মধ্যে ছিলাম। আমাদের মধ্যে কেউই জানত না যে, উভয় দল এরপর কী করতে পারে। “অনুমান করার চেষ্টা কোরো না,” একজন বয়স্ক, বিশ্বস্ত খ্রিস্টান ভাই পরামর্শ দিয়েছিলেন। “যিহোবা আমাদের পরিত্যাগ করবেন না।”

আমাদের প্রিয় খ্রিস্টান বোনেরা—যুবতী ও বয়স্ক উভয়েই—অসাধারণ ধৈর্য দেখিয়েছিল। একজনের বয়স ছিল ৮০ বছর আর তার বাড়তি যত্নের প্রয়োজন ছিল। অন্যেরা অসুস্থ ছিল ও তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। সেই সময়ে ব্যারাকের দরজা খুলে রাখতে হতো, যাতে বিদ্রোহীরা অনবরত আমাদের ওপর নজর রাখতে পারে। রাতে, সশস্ত্র বন্দিরা ব্যারাকে আসত। মাঝে মাঝে আমরা তাদের বলতে শুনেছি যে, “ঈশ্বরের রাজ্য ঘুমিয়ে আছে।” দিনের বেলা যখন আমাদেরকে শিবিরের খাবার ঘরে যেতে অনুমতি দেওয়া হতো, তখন আমরা সবসময় একসঙ্গে থাকতাম এবং প্রার্থনা করতাম যেন যিহোবা ওই হিংস্র লোকেদের হাত থেকে আমাদের সুরক্ষা করেন।

ব্যারাকে থাকাকালীন আমরা একে অন্যকে আধ্যাত্মিকভাবে সমর্থন করার চেষ্টা করতাম। উদাহরণস্বরূপ, একজন ভাই প্রায়ই আমরা যাতে শুনতে পাই এমন জোরে শব্দ করে বাইবেল থেকে একটা বিবরণ পড়তেন। এরপর তিনি সেই বিবরণকে আমাদের পরিস্থিতির প্রতি প্রয়োগ করে দেখাতেন। একজন বয়স্ক ভাই বিশেষভাবে গিদিয়োনের সেনাবাহিনীর বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন। “৩০০ জন লোক যিহোবার নামে তাদের হাতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ১,৩৫,০০০ সশস্ত্র সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল,” তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। “৩০০ জন সকলেই অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছিল।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৭:১৬, ২২; ৮:১০) এটা ও বাইবেলের অন্যান্য উদাহরণ আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়েছিল। যদিও আমি সাক্ষি হয়েছিলাম খুব বেশিদিন হয়নি কিন্তু তখন আরও অভিজ্ঞ ভাইবোনদের দৃঢ় বিশ্বাস দেখে আমি অনেক উৎসাহ লাভ করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যে, যিহোবা সত্যি সত্যিই আমাদের সঙ্গে আছেন।

যুদ্ধ শুরু হয়

সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে যায় আর শিবিরের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিদ্রোহী ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা আরও চরমে চলে যায়। বিদ্রোহী নেতারা দৃঢ়ভাবে বলে যে, মস্কোর কেন্দ্রীয় সরকার যেন তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য একজন প্রতিনিধিকে পাঠায়। আর কর্তৃপক্ষ দাবি করে যেন বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে, তাদের অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দেয় এবং কাজে ফিরে যায়। উভয় পক্ষই আপোশ করতে প্রত্যাখ্যান করে। সেই সময়ের মধ্যে, সেনাবাহিনী শিবিরকে ঘিরে ফেলে, প্রথম আদেশেই আঘাত করার জন্য প্রস্তুত থাকে। বিদ্রোহীরাও অবরোধ তৈরি করে ও মজুতকৃত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকে। প্রত্যেকেই আশা করেছিল যে, যেকোনো মুহূর্তে সেনাবাহিনী ও বন্দিদের মধ্যে শেষ লড়াই শুরু হবে।

২৬শে জুন আমরা অনবরত কামান দাগার কান-ফাটানো শব্দে জেগে উঠি। ট্যাঙ্কের আঘাতে বেড়াগুলো দুমড়েমুচড়ে যায় এবং শিবিরের মধ্যে বিস্ফোরণ হয়। এগুলোর পিছন পিছন সেনাবাহিনী মেশিনগানের গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে আক্রমণ করে। বন্দিরা—নারী-পুরুষরা—“হুররে!” বলে চিৎকার করে এবং পাথর, স্বদেশে প্রস্তুত বোমা ও হাতের কাছে যা-ই পেয়েছিল, সেগুলো ছুঁড়তে ছুঁড়তে আসন্ন ট্যাঙ্কগুলোর দিকে ছুটে যায়। একটা ভয়ংকর যুদ্ধ আসন্ন ছিল আর আমরা সাক্ষিরা একেবারে এর মাঝখানে ছিলাম। কীভাবে যিহোবা সাহায্যের জন্য করা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন?

হঠাৎ, সৈন্যরা আমাদের ব্যারাকের দিকে ছুটে আসে। “তোমরা পবিত্র লোকেরা বেরিয়ে এসো!” তারা চিৎকার করে বলে। “তাড়াতাড়ি করো, বেড়ার বাইরে চলে যাও!” দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈন্যদেরকে আমাদের গুলি করার জন্য নয় বরং আমাদের সঙ্গে থাকার ও রক্ষা করার জন্য আদেশ দেন। যুদ্ধ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন আমরা শিবিরের ঠিক বাইরে খোলা জায়গায় ঘাসের ওপর বসে থাকি। চার ঘন্টা ধরে আমরা শিবিরের ভিতর থেকে আসা বিস্ফোরণের, গুলি ছোঁড়ার শব্দ, চিৎকার ও আহাজারি শুনতে থাকি। এরপর সব নীরব হয়ে যায়। পরে, ভোরের আলোতে আমরা সৈন্যদেরকে মৃতদেহ শিবিরের বাইরে বহন করে নিয়ে আসতে দেখি। আমরা জানতে পারি যে, শত শত লোক আহত ও নিহত হয়েছে।

সেইদিনই, পরে আমার পরিচিত একজন কর্মকর্তা আমাদের কাছে আসেন। “তো নিকোলাই,” তিনি গর্বের সঙ্গে জিজ্ঞেস করেন, “কে আপনাদের রক্ষা করল? আমরা নাকি যিহোবা?” আমাদের জীবন রক্ষা করার জন্য আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে ধন্যবাদ জানাই আর এও বলি, “আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা আমাদের জীবন বাঁচাতে আপনাদের পরিচালিত করেছেন, ঠিক যেমনটা তিনি বাইবেলের সময়ে তাঁর দাসদের মুক্ত করতে অন্যদের পরিচালিত করেছিলেন।”—ইষ্রা ১:১, ২.

এ ছাড়া, সেই একই কর্মকর্তা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করেন যে কীভাবে সৈন্যরা জেনেছিল যে, আমরা কারা আর আমাদের কোথায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন যে, একবার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলাকালে সৈন্যরা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সেই বন্দিদের হত্যা করার অভিযোগ করে, যারা বিদ্রোহীদের সমর্থন করেনি। আত্মরক্ষা করার জন্য বিদ্রোহীরা উত্তর দেয় যে, যিহোবার সাক্ষিরা বিদ্রোহে অংশ নেয়নি কিন্তু তাদের হত্যা করা হয়নি। এর পরিবর্তে, শাস্তিস্বরূপ সমস্ত সাক্ষিকে একটা ব্যারাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা সেই বিষয়টা মনে রাখে।

আমরা রাজ্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলাম

রাশিয়ার সুপরিচিত গ্রন্থকার আলিকস্যান্দার সোলঝেনিট্‌সিন, আমরা যে-জেল বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেই বিষয়ে তার দ্যা গুলাগ আর্কিপেলেগো বইয়ে উল্লেখ করেন। সেই ঘটনার বিষয়ে তিনি লেখেন যে, সেই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল কারণ, তিনি এভাবে বলেছিলেন, “অবশ্যই আমরা মুক্তি চাই . . . কিন্তু কে আমাদের তা দিতে পারে?” যিহোবার সাক্ষি হওয়ার কারণে সেই একই বন্দি শিবিরে থাকায় আমরাও মুক্তির জন্য প্রতীক্ষা করেছিলাম। কিন্তু, শুধুমাত্র জেল থেকে মুক্তির জন্যই নয় বরং সেই মুক্তির জন্যও, যা একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই নিয়ে আসতে পারে। জেলে থাকাকালীন আমরা জানতাম যে, তাঁর রাজ্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে শক্তির প্রয়োজন। আর যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্তকিছুই জুগিয়েছিলেন। তিনি ছুরি অথবা গ্রেনেড ছাড়াই আমাদের বিজয় এনে দিয়েছিলেন।—২ করিন্থীয় ১০:৩.

“আমার রাজ্য এ জগতের নয়,” যিশু খ্রিস্ট পীলাতকে বলেছিলেন। “যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত।” (যোহন ১৮:৩৬) তাই, খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে আমরা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বগুলোতে অংশ নিই না। বিদ্রোহের সময়ে ও বিদ্রোহের পরে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি আমাদের আনুগত্য অন্যদের কাছে স্পষ্ট হয়েছিল বলে আমরা আনন্দিত। সেই সময়ে আমাদের আচরণ সম্বন্ধে সোলঝেনিট্‌সিন লিখেছিলেন: “যিহোবার সাক্ষিরা নির্দ্বিধায় তাদের ধর্মীয় নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলেছিল এবং দুর্গ নির্মাণ করতে অথবা প্রহরীর কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল।”

সেই বিক্ষুব্ধ ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পর ৫০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে প্রায়ই সেই সময়ের কথা চিন্তা করি, কারণ আমি সেই সময়ে কিছু স্থায়ী শিক্ষা যেমন, যিহোবার জন্য অপেক্ষা করতে ও তাঁর পরাক্রান্ত হস্তের নীচে পূর্ণ নির্ভরতা রাখতে শিখেছিলাম। হ্যাঁ, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য অনেক প্রিয় সাক্ষির মতো আমিও অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম যে, যিহোবা তাদেরকে প্রকৃত স্বাধীনতা, সুরক্ষা ও মুক্তি দেন, যারা এমন এক রাজ্যের জন্য প্রতীক্ষা করে, যা “জগতের নয়।”

[৮, ৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কাজাখস্তানের সেই শ্রম শিবির, যেখানে আমাদের কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

সাক্ষিদের ব্যারাকের, মহিলাদের অংশের আঁকা ছবি

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের মুক্তির পর খ্রিস্টান ভাইদের সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার