ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w11 ১/১৫ পৃষ্ঠা ৯-১২
  • বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও যিহোবার সেবা করতে পেরেছি বলে কৃতজ্ঞ

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও যিহোবার সেবা করতে পেরেছি বলে কৃতজ্ঞ
  • ২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “তুমি কি তাড়াতাড়িই চলে আসবে মা?”
  • “একটু হাসো তো”
  • ক্যাম্পে রোজকার জীবন
  • হতাশা, অনুশোচনা এবং উৎসাহ
  • এক কঠিন পরীক্ষা
  • বিভিন্ন আশীর্বাদ ও আনন্দ
  • যিহোবার সাহায্যে আমরা একদলীয় শাসনতন্ত্রে রক্ষা পেয়েছিলাম
    ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • এমন এক রাজ্যের জন্য প্রতীক্ষা করা, যা “জগতের নয়”
    ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সত্যের চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবা যে আমার সাথে আছেন তা প্রমাণিত হয়েছে
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w11 ১/১৫ পৃষ্ঠা ৯-১২

বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও যিহোবার সেবা করতে পেরেছি বলে কৃতজ্ঞ

বলেছেন মারচে দে ইয়ংগে-ভান দেন হভেল

আমার বয়স এখন ৯৮ বছর। এর মধ্যে ৭০ বছর ধরে আমি যিহোবাকে সেবা করার আনন্দ লাভ করেছি—তার মানে এই নয় যে, আমার বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, আমাকে একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যেতে হয়েছিল, যেখানে নিরুৎসাহিতা আমাকে এক পর্যায়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালিত করেছিল, যেটার কারণে পরে আমাকে অনুশোচনা করতে হয়েছে। কয়েক বছর পর, আমি আরেকটা কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও, এমনকী বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও আমি যিহোবার সেবা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি বলে, আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।

১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসে আমার জীবনে পরিবর্তন ঘটেছিল। আমি নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার (১৫ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে হিলভারসাম নামে একটা শহরে থাকতাম। সেই দেশটা নাতসি শাসনের অধীনে ছিল। এর পাঁচ বছর আগে ইয়াপ দে ইয়ংগের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়, যে একজন যত্নবান স্বামী ছিল আর আমাদের ভিলি নামে তিন বছর বয়সি এক ফুটফুটে মেয়ে ছিল। আমাদের পাশেই একটা দরিদ্র পরিবার থাকত, যারা তাদের আট ছেলে-মেয়ের ভরণপোষণ জোগানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করত। কিন্তু, তার পরও তারা তাদের ঘরে একজন স্থায়ী অতিথি অর্থাৎ একজন যুবকের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। ‘কেন তারা একটা বাড়তি বোঝা ঘাড়ে নিয়েছে?’ আমি ভাবতাম। তাদেরকে কিছু খাবার দিতে গিয়ে আমি জানতে পেরেছিলাম যে, সেই যুবক একজন অগ্রগামী। সে আমাকে ঈশ্বরের রাজ্য ও এটা যে-আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে, সেই সম্বন্ধে জানিয়েছিল। আমি যা জেনেছিলাম, তা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল আর আমি অল্পসময়ের মধ্যেই সত্যকে গ্রহণ করে নিয়েছিলাম। সেই বছরই আমি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। আমি বাপ্তিস্ম নেওয়ার এক বছর পর আমার স্বামীও সত্যের পক্ষসমর্থন করেছিল।

যদিও সেই সময়ে আমার খুব বেশি বাইবেলের জ্ঞান ছিল না, তবে আমি পুরোপুরিভাবে বুঝতে পেরেছিলাম যে, একজন সাক্ষি হওয়ার মাধ্যমে আমি এমন এক সংগঠনের অংশী হয়েছি, যেটা নিষিদ্ধ ছিল। আমি এও জানতাম যে, রাজ্যের বার্তা প্রচার করার কারণে অসংখ্য সাক্ষিকে ইতিমধ্যেই জেলে পাঠানো হয়েছে। তবুও, আমি অবিলম্বে ঘরে ঘরে প্রচার করতে শুরু করেছিলাম আর আমার স্বামী ও আমি আমাদের ঘরকে অগ্রগামী এবং ভ্রমণ অধ্যক্ষদের জন্য থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম। এ ছাড়া, আমাদের ঘরটা বাইবেল সাহিত্যাদি মজুদ রাখার এক জায়গা হয়ে উঠেছিল, যেগুলো ভাইবোনেরা আমস্টারডাম থেকে আমাদের দিয়ে যেত। তাদের সাইকেলগুলো বইপত্রে বোঝাই করা থাকত, যেগুলোকে তারা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখত। সেই কুরিয়ারদের কতই না প্রেম ও সাহস ছিল! তারা তাদের ভাইবোনদের জন্য নিজেদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলত।—১ যোহন ৩:১৬.

“তুমি কি তাড়াতাড়িই চলে আসবে মা?”

আমার বাপ্তিস্মের প্রায় ছয় মাস পর, তিন জন পুলিশ অফিসার আমাদের দরজায় উপস্থিত হয়েছিল। তারা আমাদের ঘর তল্লাশি করেছিল। যদিও তারা সাহিত্যাদি ভরতি আলমারিটা খুঁজে পায়নি, তবে তারা আমাদের বিছানার নীচে লুকানো কিছু বই খুঁজে পেয়েছিল। তখনই তারা আমাকে তাদের সঙ্গে হিলভারসামের পুলিশ স্টেশনে যেতে আদেশ দিয়েছিল। আমি যখন বিদায় জানানোর জন্য আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, তখন ভিলি জিজ্ঞেস করেছিল, “তুমি কি তাড়াতাড়িই চলে আসবে মা?” “হ্যাঁ, সোনা,” আমি বলেছিলাম, “তাড়াতাড়িই চলে আসব।” কিন্তু, আমি তাকে আবারও কোলে নেওয়ার আগে ১৮টা দুঃসহ মাস পার হয়ে গিয়েছিল।

একজন পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাকে ট্রেনে করে আমস্টারডামে নিয়ে গিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা আমাকে দিয়ে হিলভারসামের তিন জন ভাইকে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে শনাক্ত করানোর চেষ্টা করেছিল। আমি বলেছিলাম: “একজন বাদে আমি এদের কাউকে চিনি না। তিনি আমাদের দুধওয়ালা।” এটা সত্য ছিল; সেই ভাই আমাদের দুধ দিয়ে যেতেন। “তবে তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি কি না,” আমি এও বলেছিলাম, “সেটা আমাকে নয় বরং তাকেই আপনাদের জিজ্ঞেস করা উচিত।” আমি যখন আর কিছু বলতে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম, তখন তারা আমার মুখে আঘাত করেছিল আর আমাকে দুই মাস ধরে একটা কারাকক্ষে আটকে রেখেছিল। আমার স্বামী যখন জানতে পেরেছিল যে আমি কোথায় রয়েছি, তখন সে আমার জন্য কিছু পোশাক ও খাবারদাবার নিয়ে আসতে পেরেছিল। পরে, ১৯৪১ সালের আগস্ট মাসে আমাকে রেভেন্সব্রুকে—জার্মানির বার্লিনের প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) উত্তরে মহিলাদের জন্য কুখ্যাত এক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে—পাঠানো হয়েছিল।

“একটু হাসো তো”

সেখানে পৌঁছানোর পর আমাদের বলা হয়েছিল যে, আমরা যদি নিজেদের বিশ্বাস অস্বীকার করে একটা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করি, তাহলে আমরা ঘরে ফিরে যেতে পারি। তবে, অবশ্যই আমি স্বাক্ষর করিনি। এর ফলে, আমাকে নিজের জিনিসপত্র তাদের হাতে তুলে দিয়ে একটা শৌচাগারে নগ্ন হতে হয়েছিল আর সেখানেই নেদারল্যান্ডস থেকে আসা কিছু খ্রিস্টান বোনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমাদেরকে একটা বেগুনি ত্রিভুজ সেলাই করা ক্যাম্পের পোশাক, একটা প্লেট, গ্লাস ও চামচ দেওয়া হয়েছিল। প্রথম রাতে, আমাদেরকে অস্থায়ী ব্যারাকে রাখা হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়ার পর, সেখানেই প্রথম বারের মতো আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। “আমার কী হবে? কত দিন আমাকে এখানে থাকতে হবে?” আমি ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম। সত্যি বলতে কী, সেই সময়ে যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব বেশি দৃঢ় ছিল না কারণ মাত্র কয়েক মাস হয়েছে আমি সত্য জেনেছিলাম। তখনও পর্যন্ত আমার অনেক কিছু শেখার বাকি ছিল। পরদিন সকালে নাম ডাকার সময়, একজন ডাচ বোন নিশ্চয়ই আমার দুঃখী চেহারা লক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “একটু হাসো তো! কোনো কিছু কি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে?”

নাম ডাকার পর, আমাদেরকে আরেকটা ব্যারাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস থেকে আসা কয়েক-শো বোন আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। কয়েক জন জার্মান বোন ইতিমধ্যেই সেই ব্যারাকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিল। তাদের সাহচর্য আমাকে শক্তি দিয়েছিল—সত্যি বলতে কী, সেটা আমার মুখে হাসি এনে দিয়েছিল। এ ছাড়া, এই বিষয়টাও আমার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল যে, আমাদের বোনেরা যে-ব্যারাকগুলোতে থাকত, সেগুলো ক্যাম্পের অন্যান্য ব্যারাক থেকে অনেক বেশি পরিষ্কার ছিল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা ছাড়াও আমাদের ব্যারাকগুলো এমন স্থান হিসেবে সুপরিচিত ছিল যে, যেখানে কেউ চুরি, গালিগালাজ অথবা মারামারি করত না। ক্যাম্পে আমরা যে-নিষ্ঠুর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম সেগুলোর বিপরীতে আমাদের ব্যারাকগুলো নোংরা সমুদ্রের মধ্যে এক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দ্বীপের মতোই ছিল।

ক্যাম্পে রোজকার জীবন

ক্যাম্পের জীবনটা এমন ছিল, যেখানে প্রচুর কাজ কিন্তু খুব সামান্যই খাবারদাবার ছিল। আমাদেরকে ভোর পাঁচটায় উঠতে হতো আর এর পর পরই নাম ডাকা শুরু হতো। আবহাওয়া যেমনই থাকুক না কেন, রক্ষীরা আমাদেরকে প্রায় এক ঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করত। কঠোর পরিশ্রম করে একটা দিন পার করার পর, বিকেল পাঁচটায় আবারও নাম ডাকা হতো। এরপর, আমরা সামান্য সুপ ও রুটি খেয়ে অত্যন্ত পরিশ্রান্ত অবস্থায় ঘুমাতে যেতাম।

রবিবার বাদে প্রতিদিন আমাকে খামারে কাজ করতে হতো, যেখানে আমি কাস্তে দিয়ে গম কাটতাম, নালা থেকে কাদা উত্তোলন ও শূকরের ঘর পরিষ্কার করতাম। যদিও কাজগুলো অনেক পরিশ্রমের ও নোংরা ছিল কিন্তু আমি প্রতিদিন সেগুলো করতে পারতাম কারণ আমি তখনও পর্যন্ত যুবতী এবং বেশ শক্তিশালী ছিলাম। তা ছাড়া, কাজ করার সময় বাইবেলের বার্তা সম্বন্ধে গানগুলো গেয়ে আমি শক্তি পেতাম। কিন্তু, প্রতিটা দিন আমি আমার স্বামী ও বাচ্চাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠতাম।

যদিও আমরা সামান্য পরিমাণ খাবার পেতাম, কিন্তু আমরা সব বোনেরাই প্রতিদিন এক টুকরো রুটি বাঁচানোর চেষ্টা করতাম, যাতে রবিবারে আমরা যখন বাইবেলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পেতাম, তখন আমাদের কাছে বাড়তি কিছু থাকে। আমাদের কাছে কোনো বাইবেল সাহিত্যাদি ছিল না, তবে বয়স্ক ও বিশ্বস্ত জার্মান বোনেরা যখন আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করত, তখন আমি অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে তাদের কথা শুনতাম। এমনকী আমরা খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরনার্থ সভাও উদ্‌যাপন করেছিলাম।

হতাশা, অনুশোচনা এবং উৎসাহ

কখনো কখনো, আমাদেরকে এমন কাজ করার আদেশ দেওয়া হতো, যা নাতসিদের যুদ্ধকে সরাসরি সমর্থন করত। রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে আমাদের নিরপেক্ষতার কারণে সমস্ত বোনই সেই কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করত আর আমিও তাদের সাহসী উদাহরণ অনুসরণ করতাম। শাস্তি হিসেবে আমরা কয়েক দিন খাবার পেতাম না আর নাম ডাকার সময়ে আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। একবার, শীতকালে আমাদেরকে কোনো উত্তাপের ব্যবস্থা ছাড়াই ৪০ দিন ধরে একটা ব্যারাকে আটকে রাখা হয়েছিল।

যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমাদের বার বার বলা হয়েছিল যে, আমরা যদি নিজেদের বিশ্বাস অস্বীকার করে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করি, তাহলে আমাদের মুক্তি দেওয়া হবে আর আমরা ঘরে ফিরে যেতে পারব। রেভেন্সব্রুকে এক বছরেরও বেশি সময় থাকার পর, আমি খুবই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার স্বামী ও মেয়েকে দেখার আকাঙ্ক্ষা এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে, আমি রক্ষীদের কাছে গিয়েছিলাম, তাদের কাছে সেই ঘোষণাপত্র চেয়েছিলাম, যেটাতে লেখা ছিল যে আমি আর একজন বাইবেল ছাত্র নই আর সেটাতে স্বাক্ষর করেছিলাম।

আমি কী করেছি সেটা যখন বোনেরা জানতে পেরেছিল, তখন কেউ কেউ আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল। কিন্তু, হেটভিক ও গারট্রুট নামে দুজন বয়স্ক বোন আমাকে খুঁজে বের করেছিল আর আমাকে তাদের ভালোবাসা সম্বন্ধে আশ্বস্ত করেছিল। একসঙ্গে শূকরের ঘর পরিষ্কারের কাজ করার সময় তারা আমার কাছে যিহোবার প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার গুরুত্ব এবং কীভাবে আমরা কোনো আপোশ না করার দ্বারা তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম দেখাই, তা সদয়ভাবে ব্যাখ্যা করেছিল। তাদের মাতৃসুলভ চিন্তা ও কোমল স্নেহ আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিল।a আমি জানতাম যে, আমি যা করেছি সেটা ভুল আর তাই আমি আমার ঘোষণা বাতিল করতে চেয়েছিলাম। একদিন সন্ধ্যায় আমি একজন বোনকে আমার ঘোষণা বাতিল করতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে বলেছিলাম। ক্যাম্পের কোনো কর্মী নিশ্চয়ই আমাদের কথা আড়ি পেতে শুনেছিল কারণ সেই দিনই সন্ধ্যায় হঠাৎ আমাকে ক্যাম্প থেকে মুক্তি দেওয়া হয় আর ট্রেনে করে নেদারল্যান্ডসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একজন তত্ত্বাবধায়ক—তার চেহারা আমার এখনও মনে আছে—আমাকে বলেছিলেন, “তুমি এখনও একজন বিবেলফরশার (বাইবেল ছাত্র) আর তুমি সবসময়ই তা থাকবে।” আমি বলেছিলাম, “যিহোবার ইচ্ছা হলে আমি তা থাকব।” তবুও আমি ভাবতে থাকি, ‘কীভাবে আমি সেই ঘোষণাপত্র প্রত্যাহার করতে পারি?’

ঘোষণাপত্রে এইরকম একটা বিষয় উল্লেখ করা ছিল: “আমি শপথ করছি যে, আমি আর কখনো আন্তর্জাতিক বাইবেল ছাত্র সমাজ-এর জন্য কাজ করব না।” কী করতে হবে, তা আমি জানতাম! ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে ঘরে পৌঁছানোর অল্পসময় পর, আমি আবারও প্রচার কাজে অংশ নিতে শুরু করেছিলাম। অবশ্য, ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করার সময় নাতসি কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো ধরত, তাহলে আমাকে চরম শাস্তি পেতে হতো।

একজন অনুগত দাস হওয়ার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা যিহোবার কাছে প্রকাশ করার জন্য আমার স্বামী ও আমি আবার আমাদের ঘরটাকে কুরিয়ার ও ভ্রমণ অধ্যক্ষদের থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম। যিহোবা ও তাঁর লোকেদের জন্য আমার প্রেম প্রমাণ করার আরেকটা সুযোগ পেয়ে আমি কত কৃতজ্ঞই না হয়েছিলাম!

এক কঠিন পরীক্ষা

যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে, আমার স্বামী ও আমি এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলাম। ১৯৪৪ সালের অক্টোবর মাসে আমাদের মেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভিলির ডিপথিরিয়া হয়েছিল। শীঘ্র তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে আর তিন দিন পর সে মারা যায়। তার বয়স হয়েছিল মাত্র সাত বছর।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আমরা একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। সত্যিই, আমাদের সন্তানকে হারিয়ে আমি যে-কষ্ট পেয়েছিলাম, সেটার তুলনায় রেভেন্সব্রুকে আমি যে-পরীক্ষাগুলোর মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম, সেগুলো কিছুই ছিল না। কিন্তু, সেই হতাশার সময়ে আমরা সবসময় গীতসংহিতা ১৬:৮ পদ থেকে এই আশ্বাস পেয়েছিলাম: “আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি; তিনি ত আমার দক্ষিণে, আমি বিচলিত হইব না।” পুনরুত্থানের বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞার প্রতি আমার স্বামীর ও আমার দৃঢ় আস্থা ছিল। আমরা সত্যে অটল আর সবসময় সুসমাচারের পক্ষে উদ্যোগী প্রচারক ছিলাম। ১৯৬৯ সালে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমার স্বামী, কৃতজ্ঞতার মনোভাব সহকারে যিহোবার সেবা করার ব্যাপারে আমাকে সত্যিই সাহায্য করেছিল।

বিভিন্ন আশীর্বাদ ও আনন্দ

অতীতের দশকগুলোতে, যে-বিষয়টা সবসময়ই আনন্দের এক বিরাট উৎস হয়ে এসেছে তা হল, পূর্ণসময়ের দাসদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা। যুদ্ধের সময়ে যেমন ছিল, তেমনই আমাদের ঘরের দরজা সবসময়ই অতিথি ভ্রমণ অধ্যক্ষরা ও তাদের স্ত্রীরা যখন আমাদের মণ্ডলী পরিদর্শন করতে আসত, তখন তাদের থাকার জন্য খোলা ছিল। মার্টিন ও নেল কেপটিন নামে ভ্রমণ কাজে নিয়োজিত এক দম্পতি এমনকী আমাদের ঘরে ১৩ বছর ধরে থেকেছিল! যখন নেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমি তিন মাস ধরে আমাদের ঘরে তার যত্ন নেওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে এবং স্থানীয় প্রিয় ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করা আমাকে এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করতে সাহায্য করেছিল, যেখানে আমরা এখনই বসবাস করছি।

আমার জীবনে ১৯৯৫ সালে এক রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছিল—আমি রেভেন্সব্রুকে একটা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। সেখানে আমার সেই বোনদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, যাদের সঙ্গে আমি ক্যাম্পে থেকেছিলাম আর ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি! তাদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা অবিস্মরণীয় ও হৃদয়গ্রাহী ছিল আর তা আমাদেরকে একে অন্যকে সেই দিনের জন্য প্রতীক্ষা করতে উৎসাহিত করার এক চমৎকার সুযোগ দিয়েছিল, যখন আমাদের মৃত প্রিয়জনরা আবার বেঁচে উঠবে।

রোমীয় ১৫:৪ পদে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, “শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” সেই আশা—যা আমাকে এমনকী বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও কৃতজ্ঞতার মনোভাব সহকারে তাঁর সেবা করতে সমর্থ করেছে—জুগিয়েছেন বলে আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই।

[পাদটীকা]

a সেই সময়ে, যখন প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না, তখন ভাইবোনেরা নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিজেদের বোধগম্যতা অনুযায়ী সর্বোত্তম উপায়ে মীমাংসা করত। এই কারণে, বিষয়গুলোকে ব্যক্তি বিশেষরা যেভাবে সমাধান করত, তাতে কিছুটা পার্থক্য থাকত।

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৩০ সালে ইয়াপের সঙ্গে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

সাত বছর বয়সে আমাদের মেয়ে ভিলি

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৯৫ সালে আমি এক হৃদয়গাহী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। আমি প্রথম সারির বাম দিক থেকে দ্বিতীয় জন

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার