আপনি কি যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করতে পারেন?
“যুক্তরাষ্ট্রে আমরা সচ্ছল জীবনযাপন করছিলাম, কিন্তু আমরা সেখানকার বস্তুবাদী মনোভাব দেখে চিন্তিত ছিলাম যে, তা শেষপর্যন্ত আমাদের এবং আমাদের দুই ছেলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমার স্ত্রী ও আমি আগে মিশনারি হিসেবে সেবা করেছি এবং আমরা আবারও সেই ধরনের সাদাসিধে অথচ সুখী জীবন উপভোগ করতে চাইছিলাম।”
সেই আকাঙ্ক্ষার দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে রাল্ফ ও প্যাম ১৯৯১ সালে, যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে সেবা করার ইচ্ছে প্রকাশ করে বিভিন্ন শাখা অফিসে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মেক্সিকোর শাখা অফিস উত্তরে জানিয়েছিল যে, সেই দেশের ইংরেজিভাষী লোকেদের কাছে প্রচার করতে পারবে এমন রাজ্য প্রকাশকদের খুবই প্রয়োজন ছিল। বস্তুতপক্ষে, সেই শাখা অফিস জানিয়েছিল যে, সেই ক্ষেত্র “শস্য . . .কাটিবার মত শ্বেতবর্ণ” হয়ে গিয়েছে। (যোহন ৪:৩৫) দেরি না করে, রাল্ফ ও প্যাম তাদের দুই ছেলে, যাদের বয়স তখন ৮ ও ১২ বছর, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল আর মেক্সিকোতে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল।
এক বিরাট এলাকা
রাল্ফ স্মরণ করে বলেন: “যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে কয়েক জন শুভাকাঙ্ক্ষী ভাইবোন আমাদের বলেছিল: ‘বিদেশে যাওয়া খুবই বিপদজনক!’ ‘যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো, তাহলে?’ ‘ইংরেজিভাষী এলাকায় প্রচার করতে যাওয়ার কী দরকার? সেখানকার ইংরেজিভাষী লোকেরা সত্যের প্রতি আগ্রহী হবে না!’ কিন্তু, আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম। বস্তুতপক্ষে, অন্য জায়গায় যাওয়ার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত, ঝোঁকের বশে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। আমরা এটার জন্য কয়েক বছর ধরে পরিকল্পনা করছিলাম। আমরা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলেছিলাম, অর্থ সঞ্চয় করেছিলাম এবং আমরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারি, সেগুলো সম্বন্ধে অনেকবার পারিবারিকভাবে আলোচনা করেছিলাম।”
প্রথমে, রাল্ফ ও তার পরিবার মেক্সিকো শাখা অফিস পরিদর্শন করেছিল। সেখানে ভাইয়েরা পুরো দেশের একটা মানচিত্র দেখিয়ে তাদের বলেছিল, “এটা হল আপনাদের এলাকা!” সেই পরিবার সান মিগেল দে আয়েনদে শহরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যে-শহরটা মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আর সেখানে অনেক বিদেশি লোক বাস করে। তারা সেখানে আসার তিন বছর পরে, সেই শহরে ১৯ জন প্রকাশকের একটা মণ্ডলী গড়ে উঠেছিল। সেটা ছিল মেক্সিকোর প্রথম ইংরেজিভাষী মণ্ডলী—কিন্তু আরও কাজ অপেক্ষা করছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের আনুমানিক দশ লক্ষ নাগরিক মেক্সিকোতে বাস করে। অধিকন্তু, মেক্সিকোতে বিভিন্ন পেশার অনেক ব্যক্তি ও ছাত্রছাত্রী রয়েছে, যারা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজিতে কথা বলে। রাল্ফ ব্যাখ্যা করেন: “আমরা আরও কর্মীর জন্য প্রার্থনা করেছিলাম। আমরা আমাদের বাড়িতে সবসময় একটা অতিরিক্ত শোবার ঘর প্রস্তুত করে রাখতাম যাতে সেখানে সেই ভাইবোনেরা থাকতে পারে, যারা রূপকভাবে বলতে গেলে, ‘দেশ নিরীক্ষণ করিবার জন্য’ আসত।”—গণনা. ১৩:২.
তাদের পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য তারা তাদের জীবনকে সাদাসিধে করেছে
শীঘ্র এমন আরও ভাই ও বোনেরা এসেছিল, যারা তাদের পরিচর্যাকে বাড়াতে চেয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বিল ও ক্যাথি। ইতিমধ্যে ২৫ বছর তারা সেই এলাকাগুলোতে সেবা করেছে, যেখানে প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন ছিল। তারা স্প্যানিশ ভাষা শেখার কথা চিন্তা করছিল, কিন্তু তাদের পরিকল্পনাগুলো পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল, যখন তারা চাপালা হ্রদের তীরে অবস্থিত আখিখিক শহরে গিয়েছিল, যে-শহরটা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের থাকার জন্য সুন্দর জায়গা ছিল। বিল ব্যাখ্যা করেন, “আমরা আখিখিক শহরে এমন ইংরেজিভাষী লোকেদের খুঁজে বের করায় রত ছিলাম, যারা সত্য শিখতে চাইছিল।” সেই শহরে আসার দু-বছরের মধ্যে বিল ও ক্যাথি এক নতুন মণ্ডলী—মেক্সিকোর দ্বিতীয় ইংরেজিভাষী মণ্ডলী—গঠিত হতে দেখার আনন্দ লাভ করেছিল।
কানাডার কেন্ ও জোয়েন তাদের জীবনকে সাদাসিধে করতে এবং রাজ্যের কাজে আরও বেশি সময় দিতে চেয়েছিল। তারাও মেক্সিকোতে চলে গিয়েছিল। কেন্ বলেন, “যেখানে দিনের পর দিন গরম জল, বিদ্যুৎ বা টেলিফোন পরিষেবা পাওয়া যায় না এমন এক জায়গার জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছিল।” কিন্তু, প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করা ছিল আনন্দের এক উৎস। শীঘ্র কেন্কে একজন পরিচারক দাস হিসেবে এবং দু-বছর পরে একজন প্রাচীন হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। শুরুর দিকে, তাদের মেয়ে ব্রিটেনির পক্ষে এমন একটা ইংরেজিভাষী মণ্ডলীর অংশ হওয়া কঠিন ছিল, যেখানে ছোটো ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু, কিংডম হল নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে অংশগ্রহণ করতে শুরু করার পর সে দেশজুড়ে অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের প্যাট্রিক ও রোক্সান এমন এক ইংরেজিভাষী মিশনারি ক্ষেত্র সম্বন্ধে জানতে পেরে রোমাঞ্চিত হয়েছিল, যা তাদের এলাকা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। প্যাট্রিক বলেন, “মেক্সিকোর উত্তর-পূর্বের একটা শহর মন্টেরি পরিদর্শন করার পর আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, সেখানে সাহায্য করার জন্য যিহোবা আমাদের পরিচালনা দিচ্ছিলেন।” পাঁচ দিনের মধ্যে তারা তাদের টেক্সাসের বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিল এবং ঠিক যেন ‘পার হইয়া মাকিদনিয়াতে আসিয়াছিল।’ (প্রেরিত ১৬:৯) মেক্সিকোতে জীবিকানির্বাহ করা সহজ ছিল না, কিন্তু তারা মাত্র দু-বছরের মধ্যে ১৭ জন সাক্ষির এক ছোটো দলকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ জন প্রকাশকের এক মণ্ডলীতে পরিণত হতে দেখার আনন্দ লাভ করেছিল।
জেফ ও ডেব হল আরেক দম্পতি, যারা তাদের পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য তাদের জীবনকে সাদাসিধে করেছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিশাল বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছিল, মেক্সিকোর পূর্ব উপকূলের ক্যানকুন শহরের একটা ছোটো আ্যপার্টমেন্টে চলে গিয়েছিল। আগে তারা তাদের বাড়ির কাছাকাছি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হলে সম্মেলনগুলোতে যোগ দিতে অভ্যস্ত ছিল। এখন সবচেয়ে কাছের ইংরেজি ভাষার সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের আট ঘন্টা যাত্রা করতে হয়, যা খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তারা ক্যানকুনে ৫০ জন প্রকাশকের একটা মণ্ডলী গঠিত হতে দেখার গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করেছে।
মেক্সিকোর কিছু ভাইবোনও ইংরেজি ভাষায় প্রচার কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে শুরু করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, যখন রূবেন এবং তার পরিবার জানতে পারে যে, সান মিগেল দে আয়েনদে শহরে প্রথম ইংরেজিভাষী মণ্ডলী গড়ে উঠেছে এবং মেক্সিকোর পুরোটাই ছিল সেই মণ্ডলীর প্রচারের এলাকা, তখন তারা সঙ্গেসঙ্গে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর অর্থ ছিল ইংরেজি ভাষা শেখা, এক ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং সভাগুলোতে যোগদান করার জন্য দীর্ঘ যাত্রা—প্রতি সপ্তাহে ৮০০ কিলোমিটার যাত্রা—করা। রূবেন বলেন: “সেইসমস্ত বিদেশির কাছে প্রচার করে আমরা খুব আনন্দ পেয়েছিলাম, যারা বহু বছর ধরে মেক্সিকোতে বাস করছে কিন্তু এই প্রথম সুসমাচারের বার্তা তাদের নিজেদের ভাষায় শুনেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের প্রতি তাদের উপলব্ধি প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেছিল।” সান মিগেল দে আয়েনদের মণ্ডলীতে সাহায্য করার পর, রূবেন ও তার পরিবার মধ্য মেক্সিকোর গুয়ানাজুয়াটো শহরে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেছিল, যেখানে তারা ৩০ জনের বেশি প্রকাশকের এক ইংরেজিভাষী মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। বর্তমানে, তারা গুয়ানাজুয়াটোর কাছেই ইরাপুয়াটো শহরের এক ইংরেজিভাষী দলে সেবা করছে।
সহজে পৌঁছানো যায় না এমন লোকেদের কাছে পৌঁছানো
বিদেশিরা ছাড়াও মেক্সিকোতে এমন অনেক অধিবাসী রয়েছে, যারা ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। তাদের সঙ্গে রাজ্যের বার্তা ভাগ করে নেওয়া প্রায়ই কঠিন কারণ তারা অভিজাত এলাকাগুলোতে থাকে, যেখানে গৃহপরিচারিকারা দরজায় কথা বলে থাকে। কিংবা গৃহকর্তারা যদি দরজায় এসেও থাকে, তবুও তারা আমাদের বার্তা না-ও শুনতে পারে কারণ তারা মনে করে যিহোবার সাক্ষিরা হল একটা ছোটো স্থানীয় দল। কিন্তু, এই ধরনের গৃহকর্তাদের কাছে যখন বিদেশ থেকে আসা সাক্ষিরা যায়, তখন কেউ কেউ অনুকূলভাবে সাড়া দেয়।
মধ্য মেক্সিকোর কুরেটারো শহরে বসবাসকারী গ্লরিয়ার উদাহরণ বিবেচনা করুন। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আগে স্প্যানিশভাষী সাক্ষিরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তবে আমি তাদের কথা শুনিনি। কিন্তু, যখন আমার পরিবার ও আমার বন্ধুদের ওপর বিভিন্ন সমস্যা আসতে শুরু করে, তখন আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, যাতে তিনি আমাকে সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। এর অল্পসময় পরেই একজন ইংরেজিভাষী মহিলা আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ঘরে কেউ ইংরেজিতে কথা বলে কি না। যেহেতু তিনি একজন বিদেশিনি ছিলেন, আমি তার সম্বন্ধে জানতে কৌতূহলী ছিলাম এবং আমি তাকে বলেছিলাম যে, আমি ইংরেজিতে কথা বলি। যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন আমি আশ্চর্য হয়ে চিন্তা করছিলাম যে, ‘এই আমেরিকানটা আমার পাড়ায় কী করছে?’ কিন্তু, আমি ঈশ্বরের কাছে একটা চিহ্ন চেয়ে প্রার্থনা করেছিলাম। তাই, হয়তো এই বিদেশিনিই ঈশ্বরের কাছ থেকে আমার প্রার্থনার উত্তর।” গ্লরিয়া বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন এবং পরিবারের বিরোধিতা সত্ত্বেও খুব শীঘ্র বাপ্তিস্ম নেওয়ার দিকে অগ্রগতি করেছিলেন। আজকে গ্লরিয়া একজন নিয়মিত অগ্রগামী এবং তার স্বামী ও ছেলেও যিহোবাকে সেবা করে।
পরিচর্যাকে বৃদ্ধি করে এমন লোকেদের জন্য পুরস্কারগুলো
এটা ঠিক যে, যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করার মধ্যে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে কিন্তু এর অনেক পুরস্কারও রয়েছে। শুরুতে উল্লেখিত রাল্ফ বলেন: “আমরা ব্রিটেন, চিন, জামাইকা, সুইডেন আর এমনকী ঘানার অভিজাত শ্রেণীর লোকেদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছিলাম। এই বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেরাই পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে আমাদের পরিবার সাতটা ইংরেজিভাষী মণ্ডলী গড়ে উঠতে দেখেছে। আমাদের দুই ছেলেই আমাদের সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করেছিল আর এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের বেথেলে সেবা করছে।”
বর্তমানে, মেক্সিকোতে ৮৮টি ইংরেজিভাষী মণ্ডলী এবং অনেক দল রয়েছে। এত দ্রুত বৃদ্ধির পিছনে কারণটা কী? মেক্সিকোর অনেক ইংরেজিভাষী লোকের সঙ্গে সাক্ষিদের আগে কখনো যোগাযোগ হয়নি। অন্যেরা অনুকূল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, কারণ তারা সঙ্গীসাথিদের চাপ অনুভব করেনি, যা তাদের নিজের দেশে তাদেরকে বাধা দিতে পারত। আবার অন্যেরা বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, কারণ তারা অবসরপ্রাপ্ত ছিল আর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো অনুধাবন করার মতো সময় তাদের ছিল। অধিকন্তু, ইংরেজিভাষী মণ্ডলীগুলোর এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রকাশক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে, যা সেই মণ্ডলীগুলোর উদ্যম ও বৃদ্ধিতে অনেক অবদান রাখে।
আপনার জন্য যে-আশীর্বাদগুলো অপেক্ষা করছে
কোনো সন্দেহ নেই, বিশ্বের আরও অনেক লোক অনুকূলভাবে সাড়া দেবে, যখন তারা নিজেদের ভাষায় রাজ্যের বার্তা তাদের কাছে প্রচার করতে শুনবে। তাই, এটা লক্ষ করা খুবই উৎসাহজনক যে, আধ্যাত্মিকমনা অনেক ভাই ও বোন—অল্পবয়সি ও বৃদ্ধ, অবিবাহিত এবং বিবাহিত ব্যক্তিরা—সেই এলাকাগুলোতে যেতে ইচ্ছুক, যেখানে রাজ্যের ঘোষণাকারীদের বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এটা ঠিক যে, তাদেরকে হয়তো কষ্টকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, কিন্তু তা সেই সুখের তুলনায় তুচ্ছ, যা তারা সেইসমস্ত সৎহৃদয়ের লোককে খুঁজে পাওয়ার দ্বারা লাভ করে, যারা বাইবেলের সত্যকে গ্রহণ করে থাকে। আপনি কি সেই রদবদলগুলো করতে পারেন, যেগুলো আপনাকে আপনার নিজের দেশে অথবা অন্য দেশে যেখানে রাজ্য প্রচারকদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করতে সক্ষম করবে?a (লূক ১৪:২৮-৩০; ১ করি. ১৬:৯) যদি তা-ই হয়, তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনার জন্য অনেক আশীর্বাদ অপেক্ষা করছে।
[পাদটীকা]
a যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে সেবা করার বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য ২০০৭ সালের মার্চ মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র ৩ ও ৪ পৃষ্ঠা দেখুন।
[২১ পৃষ্ঠার বাক্স]
সুখী অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মনোযোগ আকর্ষণ করে
বেরিল, ব্রিটেন থেকে কানাডায় চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বেশ কয়েকটা আন্তর্জাতিক কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি অশ্বচালনায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন আর এমনকী ১৯৮০ সালের অলিম্পিকে তাকে কানাডার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বাছাই করা হয়েছিল। অবসর গ্রহণ করে মেক্সিকোর চাপালায় চলে যাওয়ার পর, বেরিল এবং তার স্বামী প্রায়ই স্থানীয় রেস্টুরন্টগুলোতে খেতে যেত। যখন তিনি ইংরেজিভাষী অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের লক্ষ করতেন, যাদেরকে বেশ সুখী দেখাত, তখন তিনি তাদের কাছে নিজের পরিচয় দিতেন এবং জিজ্ঞেস করতেন যে, তারা মেক্সিকোতে কী করছে। প্রায় সময়ই দেখা যেত এই সুখী ব্যক্তিরা ছিল যিহোবার সাক্ষি। বেরিল ও তার স্বামী চিন্তা করেছিল যে, ঈশ্বরকে জানার দ্বারা যদি সুখ এবং জীবনের উদ্দেশ্য পাওয়া যায়, তবে তারাও তাঁকে জানতে চায়। কয়েক মাস খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার পরে, বেরিল বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিলেন ও একজন সাক্ষি হয়েছিলেন। বেরিল কয়েক বছর ধরে একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেছিলেন।
[২২ পৃষ্ঠার বাক্স]
“আমাদের সঙ্গে তাদেরকে পাওয়া এক আশীর্বাদ”
যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন, সেই জায়গাগুলোতে যারা চলে যায় তাদের প্রতি স্থানীয় ভাইবোনেরা যথেষ্ট উপলব্ধি প্রকাশ করে থাকে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের একটা শাখা অফিস লিখেছিল: “এখানে যে-শত শত বিদেশিরা সেবা করে, তাদেরকে যদি চলে যেতে হয়, তাহলে মণ্ডলীর সুস্থিত অবস্থা প্রভাবিত হবে। আমাদের সঙ্গে তাদেরকে পাওয়া এক আশীর্বাদ।”
ঈশ্বরের বাক্য বলে যে, “শুভবার্ত্তার প্রচারিকাগণ মহাবাহিনী।” (গীত. ৬৮:১১) তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যারা বিদেশে সেবা করছে, তাদের মধ্যে অনেক অবিবাহিত বোনও রয়েছে। এই ধরনের আত্মত্যাগী বোনেরা খুবই সাহায্যকারী হয়ে থাকে। পূর্ব ইউরোপের একটা শাখা অফিস জানিয়েছিল: “আমাদের অনেক মণ্ডলীতে বোনদের সংখ্যা বেশি আর মাঝে মাঝে তা ৭০ শতাংশ। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ বোনই সত্যে নতুন কিন্তু যে-অবিবাহিত অগ্রগামী বোনেরা অন্য দেশগুলো থেকে এসেছে, তারা এই নতুন বোনদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে অমূল্য সাহায্য জুগিয়ে থাকে। বিদেশ থেকে আসা এই বোনেরা আমাদের কাছে এক প্রকৃত উপহার!”
বিদেশে সেবা করার বিষয়ে এই বোনেরা কীরকম অনুভব করে? “প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক,” আ্যঞ্জেলিকা বলেন, যার বয়স ৩০-এর কোঠার মাঝামাঝি এবং যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে একজন অবিবাহিত অগ্রগামী হিসেবে বিদেশে সেবা করেছিলেন। “একটা কার্যভারের জায়গায়, দিনের পর দিন আমি কাঁচা রাস্তাগুলো দিয়ে অনেক কষ্ট করে হেঁটে যেতাম এবং চারপাশে লোকেদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে দেখে হতাশ হয়ে পড়তাম। কিন্তু পরিচর্যায় লোকেদের সাহায্য করে আমি পরিতৃপ্তি পেয়েছি। এ ছাড়া, স্থানীয় বোনদের কাছ থেকে আসা কৃতজ্ঞতার অনেক অভিব্যক্তি আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল, যারা প্রায়ই তাদের সাহায্য করার জন্য আমি এসেছি বলে আমাকে ধন্যবাদ জানায়। একজন বোন আমাকে বলেছিলেন যে, এত দূরে তার দেশে এসে একজন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার ক্ষেত্রে আমার উদাহরণ তাকেও পূর্ণসময়ের পরিচর্যা গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে।”
সু নামে একজন অগ্রগামী, যার বয়স ৫০-এর কোঠার প্রথম দিকে, তিনি বলেন: “আপনি নিশ্চয়ই সমস্যার সম্মুখীন হবেন, কিন্তু আপনি যে-আশীর্বাদগুলো লাভ করবেন, সেগুলোর তুলনায় তা কিছুই নয়। পরিচর্যা হল রোমাঞ্চকর! যেহেতু পরিচর্যার অনেকটা সময় আমি যুবতী বোনদের সঙ্গে কাজ করি, তাই কীভাবে প্রতিবন্ধকতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে আমি বাইবেল ও প্রকাশনাগুলো থেকে যা শিখেছি, তা তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। তারা প্রায়ই আমাকে বলে যে, অনেক বছর ধরে একজন অবিবাহিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার সময়ে সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমার উদাহরণ তাদেরকে এটা দেখতে সাহায্য করেছে যে, তারাও তাদের জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে। এই বোনদের সাহায্য করা আমাকে পরিতৃপ্তির এক গভীর অনুভূতি এনে দেয়।”
[২০ পৃষ্ঠার মানচিত্র]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
মেক্সিকো
মন্টেরি
গুয়ানাজুয়াটো
ইরাপুয়াটো
আখিখিক
চাপালা
চাপালা হ্রদ
সান মিগেল দে আয়েনদে
কুরেটারো
মেক্সিকো সিটি
ক্যানকুন
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
কেউ কেউ সেইসমস্ত বিদেশির কাছে প্রচার করে আনন্দ পেয়েছে, যারা প্রথম বার সুসমাচারের বার্তা শুনছে