বিধবা ও বিপত্নীকরা তাদের কী প্রয়োজন? কীভাবে আপনি সাহায্য করতে পারেন?
জান ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে মৃদু আলোর রান্নাঘরে রুটিনমতো টেবিল সাজান। কারণ তাকে তো কিছু খেতে হবেই। হঠাৎই, তার সামনে রাখা দুটো প্লেটে তার চোখ স্থির হয়ে যায় . . . আর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। অভ্যাসবশত, তিনি দুজনের জন্য টেবিল সাজিয়েছেন! তার প্রিয়তম স্বামী মারা যাওয়ার পর দুবছর কেটে গিয়েছে।
যারা অভিজ্ঞতা লাভ করেনি, তাদের পক্ষে সাথি হারানোর গভীর যন্ত্রণাকে বোঝা সম্ভব নয়। বস্তুতপক্ষে, মানুষের মন কঠোর বাস্তবতাকে ধীরে ধীরে মেনে নেয়। ৭২ বছর বয়সি বেরিল তার স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি। “এটা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল,” তিনি বলেন। “আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে, সে আর এই দরজা দিয়ে হেঁটে যাবে না।”
পা কেটে বাদ দেওয়ার পর কেউ কেউ “অনুভব করে” যে, এখনও তাদের পা রয়েছে। একইভাবে, শোকার্ত সাথিরা কখনো কখনো ভিড়ের মধ্যে তাদের প্রিয়জনকে “দেখতে পায়” কিংবা হঠাৎ-ই তারা উপলব্ধি করে যে, তারা তাদের সাথিদের সঙ্গে কথা বলছে!
বন্ধুবান্ধব ও পরিবার এই ধরনের কষ্টের মুখে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, তা প্রায়ই জানে না। আপনি কি এমন কাউকে জানেন যিনি সাথির মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। তাহলে, কীভাবে আপনি সমর্থন জোগাতে পারেন? বিধবা ও বিপত্নীকদের দুঃখকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য আপনার কী জানা উচিত? কীভাবে আপনি শোকার্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে জীবনে পুনরায় আনন্দ ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারেন?
যে-বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে
বন্ধুবান্ধব ও পরিবার হয়তো তাদের প্রিয়জনের কষ্টের দ্বারা দুঃখার্ত হতে এবং সদুদ্দেশ্য নিয়ে তাদের শোক করে চলার সময়কালকে সীমিত করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু, একজন গবেষক যিনি ৭০০ জন বিধবা ও বিপত্নীকের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছিলেন তিনি লিখেছিলেন: “একজন ব্যক্তি কতদিন ধরে দুঃখ করবে সেটার কোনো সীমা নেই।” তাই, শোক করা থামানোর চেষ্টা করার পরিবর্তে, জীবিত সাথিকে তার দুঃখ প্রকাশ করার জন্য সময় দিন।—আদিপুস্তক ৩৭:৩৪, ৩৫; ইয়োব ১০:১.
যদিও আপনার জন্য হয়তো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজগুলোতে সাহায্য করা উপযুক্ত হতে পারে কিন্তু এটা ধরে নেবেন না যে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যে-সমস্ত বিষয় করার আছে সেই সমস্ত বিষয়কে আপনিই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবেন। ৪৯ বছর বয়সি বিপত্নীক পল বলেন: “আমি মনে করি এটা আমার জন্য ভালো ছিল যে, যারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করতে আমাকে সাহায্য করেছিল তারা তখনও আমাকে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন সিদ্ধান্তগুলো নিতে সুযোগ দিয়েছিল। আমার স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সমস্তকিছু ভালোভাবে হওয়া আমার কাছে অনেক অর্থ রেখেছিল। আমার মনে হয়েছিল এটাই ছিল শেষ কাজ যেটা আমি তার সম্মানার্থে করতে পারি।”
অবশ্য, কিছু সাহায্যকে নিঃসন্দেহে উপলব্ধি করা হয়। ৬৮ বছর বয়স্কা একজন বিধবা আইলিন বলেন: “আমি স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে পারছিলাম না বলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করা এবং কাগজপত্র সংক্রান্ত কাজগুলো সামলানো কঠিন ছিল। ভালো বিষয় যে, আমার ছেলে ও বৌমা সত্যিই আমাকে সাহায্য করেছিল।”
এ ছাড়া, মৃত প্রিয়জনের বিষয়ে কথা বলতে ভয় পাবেন না। আগে উল্লেখিত বেরিল বলেন: “আমার বন্ধুবান্ধব অনেক সমর্থন জুগিয়েছিল। কিন্তু, আমি দেখেছিলাম যে, অনেকে আমার স্বামী জনের বিষয়ে কথা বলা এড়িয়ে গিয়েছিল। এটা এমন ছিল যেন সে কখনোই অস্তিত্বে ছিল না আর আমি এটাকে কিছুটা আঘাতদায়ক বলে মনে করেছিলাম।” পরবর্তী সময়ে, বিধবা ও বিপত্নীকরা হয়তো তাদের সাথিদের সম্বন্ধে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে ইচ্ছুক হতে পারে। মৃত ব্যক্তির সদয় আচরণ অথবা তার সম্বন্ধীয় কোনো মজার গল্প কি আপনার মনে পড়ে? এরপর জীবিত সাথিকে তা বলুন; ভয় পেয়ে পিছিয়ে পড়বেন না। আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, আপনার মন্তব্যকে মেনে নেওয়া হবে, তাহলে তার সম্বন্ধে যে-বিষয়টা আপনার ভালো লেগেছে কিংবা তার সম্বন্ধে যেটার অভাব আপনি অনুভব করেন সেটা বলুন। এটা হয়তো শোকার্ত সাথিদেরকে এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে, অন্যেরাও শোকার্ত।—রোমীয় ১২:১৫.
সাহায্য করার সময়ে, শোকার্ত ব্যক্তিকে উপদেশে জর্জরিত করা এড়িয়ে চলুন। শোকার্ত সাথিকে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।a এর পরিবর্তে, বিচক্ষণতাকে কাজে লাগান ও নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘জীবনের সবচেয়ে কঠিন একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এমন একজন বন্ধু বা আত্মীয়কে সাহায্য করার জন্য আমি কোন ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো নিতে পারি?’
আপনি যা করতে পারেন
একজন প্রিয়জনের মৃত্যুর পরবর্তী দিনগুলোতে জীবিত সাথি খুব সম্ভবত ব্যবহারিক সাহায্যকে মেনে নেবেন। আপনি কি খাবার প্রস্তুত করতে, সাক্ষাৎ করতে আসা আত্মীয়দের থাকার জন্য জায়গা দিতে অথবা শোকার্ত ব্যক্তির সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন?
এ ছাড়া, আপনার এটাও বোঝা প্রয়োজন যে, পুরুষ ও স্ত্রীরা দুঃখ ও একাকীত্বের সঙ্গে ভিন্নভাবে মোকাবিলা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায়, অর্ধেকেরও বেশি বিপত্নীক একজন সাথির মৃত্যুর পর ১৮ মাসের মধ্যে পুনরায় বিয়ে করে কিন্তু বিধবাদের ক্ষেত্রে তা খুব কমই ঘটে থাকে। এই পার্থক্যের কারণ কী?
জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে, পুরুষরা শুধুমাত্র নিজেদের দৈহিক বা যৌন চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য সবসময় পুনরায় বিয়ে করে না। বস্তুতপক্ষে, পুরুষের প্রবণতা হল একজন সাথির কাছে মনের সমস্ত কথা খুলে বলা যার ফলে সেই সাথির মৃত্যুর পর সেই পুরুষ খুবই একাকী বোধ করতে পারেন। অন্যদিকে, বিধবারা প্রায়ই আবেগগত সমর্থন খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সমর্থ, এমনকী যদিও কখনো কখনো স্বামীর বন্ধুবান্ধবরা তাদের ভুলে যায়। বিপত্নীকদের ক্ষেত্রে সেই প্রবণতা আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে যে, কেন অনেকে তাদের একাকীত্বকে কাটিয়ে ওঠার জন্য পুনরায় বিয়ে করাকে একমাত্র পথ হিসেবে দেখে থাকে—যদিও তাড়াহুড়ো করে একটা নতুন সম্পর্কে জড়িত হওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে। তাই, বিধবারা হয়তো একাকীত্বের যন্ত্রণার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকে।
আপনার বন্ধু অথবা আত্মীয় একজন পুরুষ হোন বা স্ত্রী হোন, তাদের একাকীত্বকে হ্রাস করার জন্য আপনি কী করতে পারেন? ৪৯ বছর বয়স্কা একজন বিধবা হেলেন বলেন: “অনেকের সদুদ্দেশ্য রয়েছে কিন্তু তারা নিজে থেকে এগিয়ে আসে না। তারা প্রায়ই বলবে যে, ‘কিছু করার থাকলে আমাকে জানাবেন।’ কিন্তু, আমার এটা ভালো লেগেছিল যখন কেউ শুধু বলেছিল যে, ‘আমি কেনাকাটা করতে যাচ্ছি। আপনি কি সঙ্গে আসতে চান?’” পল, যার স্ত্রী ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন, তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, তাকে যখন বাইরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তখন কেন তার তা ভালো লেগেছিল। “কখনো কখনো,” তিনি বলেন, “আপনার লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করার অথবা আপনার পরিস্থিতি সম্বন্ধে কথা বলার ইচ্ছা করে না। কিন্তু সাহচর্যমূলক এক সন্ধ্যার পর আপনি অনেকটা ভালো বোধ করেন; আপনি আর অতটা একাকী বোধ করেন না। আপনি জানেন যে, লোকেরা সত্যিই চিন্তা করে আর তা বিষয়গুলোকে আরও সহজ করে তোলে।”b
যখন সহমর্মিতাকে বিশেষ করে উপলব্ধি করা হয়
হেলেন দেখেছিলেন যে, যখন তার অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ফিরে গিয়েছিল, তখনই তার সবচেয়ে বেশি আবেগগত সমর্থনের প্রয়োজন হয়েছিল। “প্রথম প্রথম বন্ধুবান্ধব ও পরিবার আপনার সঙ্গে থাকে,” তিনি বলেন, “কিন্তু পরে তারা তাদের সাধারণ জীবনযাত্রায় ফিরে যায়। কিন্তু আপনার জীবনের ক্ষেত্রে তা হয় না।” সেই বাস্তবতা সম্বন্ধে অবগত হয়ে প্রকৃত বন্ধুরা নিজেদের প্রাপ্তিসাধ্য করবে ও ক্রমাগত সমর্থন জুগিয়ে যাবে।
সম্ভবত একজন বিধবা বা একজন বিপত্নীকের, বিবাহ বার্ষিকীতে কিংবা সাথির মৃত্যুর দিনের মতো বার্ষিকীগুলোতে বিশেষ করে সঙ্গ পাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আইলিন, যার সম্বন্ধে আগে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি বলেন যে, তার বিবাহ বার্ষিকীতে তিনি যে-শূন্যতা বোধ করেন, তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে সেটাকে পূর্ণ করে থাকে। “প্রতি বছর,” তিনি বলেন, “আমার ছেলে কেভিন আমাকে সেই দিনে বাইরে নিয়ে যায়। আমি তার সঙ্গে দুপুরের খাবার খাই আর এটা এমনকিছু যা শুধু মা ও ছেলের মধ্যেকার বিষয়।” পরিবারের কোনো সদস্য বা একজন বন্ধু যিনি বিধবা বা বিপত্নীক তার জন্য সবচেয়ে কঠিন এই সময়গুলোর বিষয়ে খেয়াল রাখুন না কেন? এরপর আপনি এই ধরনের কঠিন কোনো দিনে সেই ব্যক্তির সঙ্গে নিজে থাকার অথবা অন্য কারোর ব্যবস্থা করতে পারেন।—হিতোপদেশ ১৭:১৭.
কেউ কেউ দেখেছে যে, যারা একজন সাথিকে হারিয়েছে তারা নিজেরাই সান্ত্বনার উৎস হতে পারে। অ্যানি, যিনি আট বছর ধরে একজন বিধবা, তিনি অন্য একজন বিধবার সঙ্গে তার মেলামেশার সম্বন্ধে বলেন, “তার দৃঢ়সংকল্প আমার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল আর আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে উৎসাহিত করেছিল।”
হ্যাঁ, শোকের প্রাথমিক ধাপগুলো কাটিয়ে ওঠার পর, বিধবা ও বিপত্নীকরা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার ও আশার এক উৎস হতে পারে। বাইবেলে উল্লেখিত দুজন বিধবা, অল্পবয়সি রূৎ এবং তার শাশুড়ি নয়মী, একে অপরকে যে-সমর্থন প্রদান করেছিল, তা থেকে উপকৃত হয়েছিল। সেই হৃদয়স্পর্শী বিবরণ ব্যাখ্যা করে যে, এই দুজন স্ত্রীলোক যে-পারস্পরিক যত্ন দেখিয়েছিল, তা কীভাবে তাদেরকে শোক কাটিয়ে উঠতে এবং তারা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল।—রূতের বিবরণ ১:১৫-১৭; ৩:১; ৪:১৪, ১৫.
সুস্থ করার কাল
পুনরায় পূর্ণভাবে জীবনযাপন শুরু করার জন্য, বিধবা ও বিপত্নীকদের তাদের প্রিয়জনের স্মৃতিকে ধরে রাখার ও তাদের নিজেদের বর্তমান প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেওয়ার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে। বিজ্ঞ রাজা শলোমন স্বীকার করেছিলেন যে, “রোদন করিবার কাল” রয়েছে। কিন্তু, তিনি এও বলেছিলেন যে, “সুস্থ করিবার কাল”-ও থাকা প্রয়োজন।—উপদেশক ৩:৩, ৪.
ওপরে উল্লেখিত পল, তুলে ধরেন যে, অতীত নিয়ে ডুবে থাকা এড়ানো কতখানি কঠিন। “আমার স্ত্রী ও আমি,” তিনি বলেন, “দুটো চারা গাছের মতো ছিলাম যেগুলো একটা অন্যটার সঙ্গে জড়িয়ে বড়ো হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এরপর একটা গাছ মরে গিয়েছিল ও সেটাকে উপড়ে ফেলা হয়েছিল, ফলে অন্যটাকে বিকৃত দেখাচ্ছিল। একাকী থাকাকে অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল।” মৃত সাথির প্রতি আনুগত্যের কারণে কেউ কেউ অতীত থেকে ফিরে আসতে প্রত্যাখ্যান করে। অন্যেরা এই ভেবে উদ্বগ্নি হয় যে, নিজেরা আনন্দ উপভোগ করা হয়তো বিশ্বাসঘাতকতার কাজ হবে, তাই তারা বাইরে যেতে অথবা অন্য লোকেদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতে প্রত্যাখ্যান করে। কীভাবে বিধবা ও বিপত্নীকদের সুস্থ হতে অর্থাৎ তাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোমলভাবে সাহায্য করা সম্ভব?
একটা প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে, ব্যক্তিকে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহায্য করা। হার্বাট, যিনি ছয় বছর ধরে একজন বিপত্নীক, তিনি বলেন: “আমি বিশেষ করে সেই সময়কে খুবই মূল্যবান বলে মনে করি যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসা ব্যক্তিরা, আমি যখন স্মৃতিচারণ করি অথবা সেই মুহূর্তে আমার মনে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা বিষয়কে প্রকাশ করি, তখন তারা শান্তভাবে বসে তা শোনে। আমি নিশ্চিত যে, আমার সঙ্গ সবসময় অন্যদের ভালো লাগত না কিন্তু আমি তাদের সহমর্মিতাকে উপলব্ধি করেছিলাম।” বিশেষ করে একজন পরিপক্ব বন্ধুর কাজগুলো পলের হৃদয় স্পর্শ করেছিল, যিনি নিয়মিতভাবে নিজে থেকে এগিয়ে এসে তাকে জিজ্ঞেস করতেন যে, কীভাবে তিনি আবেগগতভাবে মোকাবিলা করছেন। পল বলেন, “আমি তার আন্তরিক ও মৃদুতাপূর্ণ উপস্থিতিকে উপলব্ধি করেছিলাম আর প্রায়ই তাকে বলতাম যে, সেই সময় আমি কেমন অনুভব করতাম।”—হিতোপদেশ ১৮:২৪.
অনুশোচনা, দোষী বোধ অথবা ক্রোধের মতো দ্বন্দ্বমূলক অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করার দ্বারা শোকার্ত ব্যক্তি তার নতুন পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রাজা দায়ূদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আস্থাবান ব্যক্তি যিহোবা ঈশ্বরের কাছে তার হৃদয় উজাড় করে দেওয়া-ই তাকে ‘উঠিবার’ শক্তি খুঁজে পেতে ও তার অল্পবয়সি ছেলের মৃত্যুজনিত দুঃখজনক বাস্তবতাকে মেনে নিতে সাহায্য করেছিল।—২ শমূয়েল ১২:১৯-২৩.
এমনকী যদিও প্রথম প্রথম এটা কঠিন কিন্তু পরে একজন বিধবা বা বিপত্নীক ব্যক্তির রোজকার কাজকর্মে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। আপনি কি তাকে আপনার রোজকার কাজকর্মের কয়েকটাতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, যেমন কেনাকাটা করতে যাওয়া অথবা সন্ধ্যায় হাঁটতে যাওয়া? কোনো কাজে আপনি কি আপনার বন্ধুর সাহায্য চাইতে পারেন? ব্যক্তি বিশেষদেরকে তাদের একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে উৎসাহিত করার এটা হল আরেকটা উপায়। উদাহরণস্বরূপ, তিনি কি সন্তানদের দেখাশোনা করতে অথবা তিনি ভালো রান্না করেন এমন কোনো রেসিপি আপনাকে দেখাতে পারেন? তিনি কি বাড়ির কোনো মেরামতের কাজে সাহায্য করতে পারেন? উদ্দীপনামূলক কাজ দেওয়া ছাড়াও, এই ধরনের অনুরোধগুলো ব্যক্তিকে এই আশ্বাস দেয় যে, জীবনে তার একটা উদ্দেশ্য রয়েছে।
অন্যদের কাছে পুনরায় তার অনুভূতিগুলোকে ব্যক্ত করার দ্বারা শোকার্ত ব্যক্তি হয়তো ধীরে ধীরে জীবন উপভোগ করার আকাঙ্ক্ষা ফিরে পেতে আর এমনকী হয়তো নতুন লক্ষ্যগুলোকে স্থাপন করতে পারেন। ৪৪ বছর বয়স্কা একজন বিধবা ও মা, ইয়োনেটের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছিল। তিনি স্মরণ করেন: “নিয়মিত কাজকর্মে ফিরে যাওয়া খুবই কঠিন ছিল! রোজকার গৃহস্থ কাজকর্ম করা, আমার আর্থিক বিষয়গুলোকে সামলানো এবং তিনটে বাচ্চার দেখাশোনা করা সত্যিই কঠিন ছিল।” কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, ইয়োনেট নিজেকে সংগঠিত করতে ও তার সন্তানদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে ভাববিনিময় করতে শিখেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন গ্রহণ করতেও শিখেছিলেন।
“জীবন এক অমূল্য দান হিসেবেই থেকে যায়”
কার্যকর সাহায্যকারী হতে গেলে, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারকে বাস্তবধর্মী হতে হবে। মাসের পর মাস, এমনকী বছরের পর বছর ধরে বিধবা বা বিপত্নীক ব্যক্তির উন্নতি ও প্রত্যাশা হয়তো আপেক্ষিক প্রশান্তি ও ক্ষণিকের হতাশার সময়কালের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। নিশ্চিতভাবেই, “আপন আপন মনের মারী” বা যন্ত্রণা তীব্র হতে পারে।—১ রাজাবলি ৮:৩৮, ৩৯.
এইরকম দুঃখজনক সময়েই জীবিত সাথিকে হয়তো বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং নিজেকে একাকীত্বের মধ্যে গুটিয়ে নেওয়া এড়াতে সঠিক দিকে মৃদু ঠেলা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই ধরনের সমর্থন অনেক বিধবা এবং বিপত্নীককে তাদের জীবনকে নতুন করে নির্দেশনা দিতে সমর্থ করেছে। ৬০ বছর বয়সি একজন বিপত্নীক এবং আফ্রিকায় এখন একজন পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারক ক্লড বলেন: “এমনকী একজন সাথির কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কষ্টের পরও, জীবন এক অমূল্য দান হিসেবেই থেকে যায়।”
একজন সাথির মৃত্যুর পর জীবন একইরকম থাকে না। তা সত্ত্বেও, কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুর পর যারা জীবিত থাকে, তাদের তখনও অন্যদেরকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু থাকে।—উপদেশক ১১:৭, ৮. (w১০-E ০৫/০১)
[পাদটীকাগুলো]
a ১২ পৃষ্ঠায় দেওয়া “মূল্যবান স্মৃতিচিহ্নগুলো প্রিয়জনকে মনে রাখার জন্য নাকি দুঃখকে বাড়ানোর জন্য?” নামক বাক্সটা দেখুন।
b শোকার্ত ব্যক্তিকে ব্যবহারিক সাহায্য প্রদান করার বিষয়ে আরও পরামর্শের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত আপনার প্রিয়জন যখন মারা যায় (ইংরেজি) ব্রোশারটির ২০-২৫ পৃষ্ঠা দেখুন।
[১১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
প্রকৃত বন্ধুরা নিজেদের প্রাপ্তিসাধ্য করবে ও ক্রমাগত সমর্থন জুগিয়ে যাবে
[১২ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
মূল্যবান স্মৃতিচিহ্নগুলো প্রিয়জনকে মনে রাখার জন্য নাকি দুঃখকে বাড়ানোর জন্য?
“আমি আমার স্বামীর ব্যক্তিগত অনেক জিনিসপত্র রেখে দিয়েছিলাম,” হেলেন বলেন, যার স্বামী মাত্র কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছিলেন। “আমি দেখেছি যে, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই জিনিসগুলো আমার কাছে সুখের স্মৃতি হয়ে রয়েছে। আমি তখনই কোনো জিনিসই ফেলে দিতে চাইনি কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুভূতিগুলোর পরিবর্তন হতে পারে।”
এর বৈসাদৃশ্যে, ক্লড যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি আগে তার স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন, তিনি বলেন: “আমি যতটা মনে করি, তাকে মনে রাখার জন্য আমাকে তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি যে, তার ব্যক্তিগত জিনিসগুলোকে ফেলে দেওয়া আমাকে বাস্তবকে মেনে নিতে সাহায্য করেছে এবং দুঃখ করে চলাকে আরও সহজ করেছে।”
ওপরের মন্তব্যগুলো দেখায় যে, মৃত ব্যক্তির জিনিসপত্র নিয়ে কী করা হবে, তা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কত পার্থক্য থাকতে পারে। তাই, এই বিষয়ে বিজ্ঞ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকবে।—গালাতীয় ৬:২, ৫.
[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
নির্দিষ্ট তারিখগুলো কি রয়েছে যখন আপনার সাহায্যকে বিশেষ করে উপলব্ধি করা হবে?
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
তাদেরকে বাইরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর কথা মনে রাখুন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আপনার রোজকার কাজকর্মে অথবা বিনোদনে বিধবা ও বিপত্নীকদের অন্তর্ভুক্ত করুন