ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w13 ১২/১৫ পৃষ্ঠা ২৭-৩১
  • সাথি হারানোর বেদনার সঙ্গে লড়াই করা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • সাথি হারানোর বেদনার সঙ্গে লড়াই করা
  • ২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যে-কষ্ট কখনো দূর হবার নয় বলে মনে হয়
  • দিনের চিন্তা দিনেই
  • পুনরুত্থানের আশা —সান্ত্বনার এক উৎস
  • আশা রাখার এক কারণ
  • বিধবা ও বিপত্নীকরা তাদের কী প্রয়োজন? কীভাবে আপনি সাহায্য করতে পারেন?
    ২০১০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর”
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • ‘ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ কাছ থেকে সাহায্য
    ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” এর কাছ থেকে সান্ত্বনা পাওয়া
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w13 ১২/১৫ পৃষ্ঠা ২৭-৩১

সাথি হারানোর বেদনার সঙ্গে লড়াই করা

বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে: একজন স্বামীর ‘আপন স্ত্রীকে আপনার মত প্রেম করিতে’ হবে। একইভাবে একজন স্ত্রীর তার ‘স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করা’ উচিত। দু-জনকেই “একাঙ্গ” হওয়ার ব্যাপারে তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে। (ইফি. ৫:৩৩; আদি. ২:২৩, ২৪) পরস্পরের প্রতি একটা দম্পতির যে-বন্ধন থাকে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও শক্তিশালী হয়, যেমনটা তাদের প্রেমের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। এই বিষয়টাকে আপনি হয়তো পাশাপাশি বেড়ে ওঠা দুটো গাছের শিকড়ের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। সুখী বিবাহিত স্বামী এবং স্ত্রীর অনুভূতি পরস্পর সংযুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কিন্তু, স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে? তখন সেই বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়, যা জীবনকালে ছিন্ন হবার নয়। এর ফলে বেশিরভাগ সময়ই বিধবা অথবা বিপত্নীক সাথি মর্মবেদনা, একাকিত্ব আর এমনকী কিছুটা হলেও হয়তো অভিমান অথবা অপরাধবোধের সঙ্গে লড়াই করেন। ৫৮ বছরের বিবাহিত জীবনে ড্যানিয়েলা এমন অনেক ব্যক্তিকে দেখেছেন, যারা তাদের সাথিকে হারিয়েছে।a কিন্তু, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন: “আমি আগে কখনো এই অনুভূতি সম্বন্ধে বুঝতে পারিনি। আপনার প্রতি এমনটা না ঘটলে, আপনার পক্ষেও তা বোঝা কখনো সম্ভব না।”

যে-কষ্ট কখনো দূর হবার নয় বলে মনে হয়

কিছু গবেষক বলেন যে, প্রিয় সাথির মৃত্যুর ফলে যে-চাপ অনুভূত হয়, সেটার চেয়ে বড়ো চাপ আর কিছুই নেই। অনেক শোকার্ত ব্যক্তি এর সঙ্গে একমত। মিলির স্বামী অনেক বছর আগে মারা গিয়েছেন। তার বৈধব্য জীবন সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন: “নিজেকে আমার পঙ্গু বলে মনে হয়।” ২৫ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কাটানোর পর বিবাহিত সাথি হারানোর যে-আবেগগত কষ্ট, সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন।

সুজান মনে করতেন, যে-বিধবারা তাদের স্বামীর মৃত্যুর কারণে বছরের পর বছর ধরে শোক করে, তারা একটু অতিরিক্তই দুঃখ প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে, ৩৮ বছর বিবাহিত জীবন পার করার পর তার স্বামী মারা যান। ২০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে, তার পরও তিনি বলেন, “প্রতিদিন তার কথা আমার মনে পড়ে।” তার অভাব বোধ করেন বলে তিনি প্রায়ই কাঁদেন।

বাইবেল স্বীকার করে যে, একজন সাথি হারানোর বেদনা অনেক তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী। সারা যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তার স্বামী অব্রাহাম, ‘সারার নিমিত্তে শোক ও রোদন করিতে আসিয়াছিলেন।’ (আদি. ২৩:১, ২) পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও, অব্রাহাম সেই সময় তীব্র শোক অনুভব করেছিলেন, যখন তার প্রিয়জন মারা গিয়েছিল। (ইব্রীয় ১১:১৭-১৯) তার প্রিয় স্ত্রী রাহেলের মৃত্যুর পর যাকোব সহজেই তাকে ভুলে যাননি। ছেলেদের কাছে তার স্ত্রী সম্বন্ধে কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।—আদি. ৪৪:২৭; ৪৮:৭.

এই শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো থেকে আমাদের কী শেখা উচিত? বেশিরভাগ সময়ই বিধবা এবং বিপত্নীক ব্যক্তিরা বছরের পর বছর ধরে হারানোর বেদনা অনুভব করে থাকে। তাদের কান্না এবং দুঃখের সময়কে আমাদের এক দুর্বলতা হিসেবে নয় বরং সাথি হারানোর এক স্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে দেখা উচিত। তাদেরকে হয়তো দীর্ঘসময় ধরে আমাদের সহমর্মিতা দেখাতে এবং সমর্থন করে চলতে হবে।

দিনের চিন্তা দিনেই

একজন বিধবা বা বিপত্নীক ব্যক্তির পক্ষে আবার একাকী জীবন শুরু করা সহজ নয়। বিয়ের কয়েক বছর পার হওয়ার পর, একজন স্বামী সাধারণত জানেন যে, তার স্ত্রীকে কীভাবে সান্ত্বনা দিতে হয় এবং যখন সে দুঃখার্ত থাকে অথবা হতাশা বোধ করে, তখন কীভাবে তার মনকে প্রফুল্ল করে তোলা যায়। যদি তিনি মারা যান, তাহলে তার ভালোবাসা এবং সান্ত্বনার উৎসও হারিয়ে যায়। একইভাবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন স্ত্রী শিখে থাকেন যে, কীভাবে তিনি তার স্বামীকে নিরাপদ এবং সুখী বোধ করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। তার কোমল স্পর্শ এবং সান্ত্বনাদায়ক কথা ও সেইসঙ্গে স্বামীর আগ্রহ এবং প্রয়োজনগুলোর প্রতি তিনি যে-মনোযোগ দেন, সেগুলোর সঙ্গে কোনোকিছুরই তুলনা হয় না। স্ত্রী মারা গেলে, স্বামী হয়তো শূন্যতা বোধ করেন। তাই, সাথি হারানোর ফলে শোক করে থাকে এমন কিছু ব্যক্তি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনিশ্চয়তা বোধ করে এবং ভয় পায়। বাইবেলের কোন নীতি তাদেরকে নিরাপত্তা এবং শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে?

“কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় আপনি ভাবিত হইবে; দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট।” (মথি ৬:৩৪) যিশুর এই কথাগুলো মূলত জীবনের বস্তুগত চাহিদাগুলোর প্রতি প্রযোজ্য, কিন্তু সেগুলো অনেক ব্যক্তিকে তার প্রিয় সাথিকে হারানোর কঠিন পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করেছে। চার্লস নামে একজন বিপত্নীক ব্যক্তি তার স্ত্রী মারা যাওয়ার কয়েক মাস পর লিখেছিলেন: “আমি এখনও প্রচণ্ডভাবে মনিকের অভাব বোধ করি এবং মাঝে মাঝে সেটাকে অসহনীয় বলে মনে হয়। কিন্তু, আমি জানি যে, এটা স্বাভাবিক এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একসময় এই বেদনাও কিছুটা কমে যাবে।”

হ্যাঁ, চার্লসকে “সময়ের” জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তিনি কীভাবে তা করতে পেরেছিলেন? তিনি বলেন, “যিহোবার সাহায্যে আমি দিনের চিন্তা দিনেই করতাম।” চার্লস দুঃখে ভেঙে পড়েননি। তার বেদনা এক রাতের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়নি কিন্তু তাই বলে এটা তাকে গ্রাসও করে ফেলেনি। আপনি যদি আপনার সাথিকে হারিয়ে থাকেন, তাহলে দিনের চিন্তা দিনেই করার মাধ্যমে সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করুন। একটা নতুন দিনের শুরুতে আপনি কোন উপকার বা উৎসাহ লাভ করবেন, তা আপনি জানেন না।

মৃত্যু যিহোবার আদি উদ্দেশ্যের অংশ ছিল না। এর বিপরীতে, এটা হল ‘দিয়াবলের কার্য্য সকলের’ অংশ। (১ যোহন ৩:৮; রোমীয় ৬:২৩) অনেক ব্যক্তিকে দাসত্বে এবং আশাহীন করে রাখার জন্য শয়তান মৃত্যু এবং এর ফলে উদ্ভূত ভয়কে ব্যবহার করে থাকে। (ইব্রীয় ২:১৪, ১৫) শয়তান সেই সময় অনেক খুশি হয়, যখন কেউ প্রকৃত সুখ এবং পরিতৃপ্তি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়ে, এমনকী তা ঈশ্বরের নতুন জগতেও। তাই, একজন শোকার্ত সাথি তার সঙ্গীকে হারানোর ফলে যে-দুর্দশা ভোগ করে থাকেন, সেটা হল আদমের পাপ এবং শয়তানের চাতুরীর ফল। (রোমীয় ৫:১২) যিহোবা শয়তানের নিষ্ঠুর অস্ত্র মৃত্যুকে পরাজিত করার মাধ্যমে তার কারণে আসা ক্ষতিকে সম্পূর্ণরূপে দূর করে দেবেন। যে-ব্যক্তিরা শয়তানের দ্বারা সৃষ্ট ভয় থেকে মুক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছে, যারা তাদের সাথিকে হারিয়েছে, যেমনটা আপনিও হয়তো হারিয়েছেন।

যারা এই পৃথিবীতে পুনরুত্থিত হবে, তাদের সম্পর্কের মধ্যে স্পষ্টতই অনেক পরিবর্তন ঘটবে। সেই বাবা-মা, ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা এবং অন্যান্য পূর্বপুরুষের কথা চিন্তা করে দেখুন, যারা জীবন ফিরে পাবে এবং তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে একত্রে সিদ্ধতার দিকে অগ্রসর হবে। বার্ধক্যের প্রভাব দূর হয়ে যাবে। নতুন বংশধররা কি তাদের পূর্বপুরুষদের এমন এক উপায়ে দেখতে শিখবে, যা বর্তমান সময় থেকে একেবারে ভিন্ন? আর আমরা কি বিশ্বাস করি না যে, এই ধরনের পরিবর্তনগুলো মানব পরিবারে উন্নতির অংশ হয়ে উঠবে?

পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে, যেমন দুই বা এর অধিক সাথিকে হারিয়েছে এমন ব্যক্তিদের সম্বন্ধে অসংখ্য প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। সদ্দূকীরা এমন একজন মহিলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, যার প্রথম স্বামী, দ্বিতীয় স্বামী আর এরপর কয়েক জন স্বামী মারা গিয়েছিল। (লূক ২০:২৭-৩৩) পুনরুত্থিত হওয়ার পর এই ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক থাকবে? আমরা তা জানি না এবং এই অজানা বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কোনো ধারণা করার অথবা চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এই ক্ষেত্রে, আমাদের ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে হবে। একটা বিষয় নিশ্চিত—ভবিষ্যতে যিহোবা যা-ই করুন-না কেন, সেটা হবে উত্তম, যেটার ওপর ভয় নয় বরং আশা করা যায়।

পুনরুত্থানের আশা —সান্ত্বনার এক উৎস

ঈশ্বরের বাক্যের স্পষ্ট শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটা হল, মৃত প্রিয়জনরা জীবন ফিরে পাবে। অতীতের পুনরুত্থান সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণগুলো এই নিশ্চয়তা দেয় যে, “কবরস্থ সকলে [যিশুর] রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) সেই সময় যে-লোকেরা জীবিত থাকবে, তারা মৃত্যুর দৃঢ়মুষ্ঠি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে আনন্দিত হবে। অন্যদিকে পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা যে-আনন্দ লাভ করবে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।

মৃত ব্যক্তিরা যখন পুনরুত্থিত হবে, তখন পৃথিবী এতটা আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, যেমনটা আগে কখনো হয়নি। একসময় মৃত ছিল এমন কোটি কোটি ব্যক্তি আবারও জীবিত লোকেদের মাঝে বাস করার সুযোগ পাবে। (মার্ক ৫:৩৯-৪২; প্রকা. ২০:১৩) ভবিষ্যতের এই অলৌকিক কাজ নিয়ে ধ্যান করা যেন এমন সমস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেয়, যারা মৃত্যুতে তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে।

সেই সময়ে কারো দুঃখিত হওয়ার কি কোনো উপযুক্ত কারণ থাকবে, যখন জীবন ফিরে পাওয়ার এই চমৎকার বিষয়টা ঘটবে? বাইবেল উত্তর দেয়, না। যিশাইয় ২৫:৮ পদ অনুযায়ী যিহোবা ‘মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিবেন।’ এর অন্তর্ভুক্ত মৃত্যুর বেদনাদায়ক প্রভাব সম্পূর্ণরূপে দূর করা, কারণ ভবিষ্যদ্‌বাণী আরও বলে: “প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।” আপনার জীবনসঙ্গী মারা যাওয়ার কারণে আপনি যদি দুঃখিত হয়ে থাকেন, তাহলে পুনরুত্থানের আশা নিশ্চিতভাবেই আপনাকে আনন্দিত হওয়ার কারণ জোগাবে।

নতুন জগতে ঈশ্বর যা করবেন, তা কোনো মানুষই পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না। যিহোবা বলেন: “ভূতল হইতে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ।” (যিশা. ৫৫:৯) আসন্ন পুনরুত্থান সম্বন্ধে যিশুর প্রতিজ্ঞা আমাদেরকে অব্রাহামের মতো যিহোবার ওপর নির্ভর করার সুযোগ করে দেয়। এখন প্রত্যেক খ্রিস্টানের জন্য মূল বিষয় হল ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যা চান, সেই অনুযায়ী কাজ করা আর এভাবে পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘সেই জগতের অধিকারী হইবার যোগ্য গণিত হওয়া।’—লূক ২০:৩৫.

আশা রাখার এক কারণ

ভীত না হয়ে বরং আশা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন। একজন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যৎকে হয়তো অন্ধকার বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, যিহোবা আমাদেরকে আরও ভালো কিছুর আশা প্রদান করেন। আমরা একেবারে সঠিকভাবে জানি না যে, কীভাবে যিহোবা আমাদের সমস্ত চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করবেন, কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের সন্দেহ করা উচিত নয় যে, তিনি নিশ্চিতভাবেই তা পূর্ণ করবেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “দৃষ্টিগোচর যে প্রত্যাশা, তাহা প্রত্যাশাই নয়। কেননা যে যাহা দেখে, সে তাহার প্রত্যাশা কেন করিবে? কিন্তু আমরা যাহা দেখিতে না পাই, তাহার প্রত্যাশা যদি করি, তবে ধৈর্য্য সহকারে তাহার অপেক্ষায় থাকি।” (রোমীয় ৮:২৪, ২৫) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর এক দৃঢ় আশা বজায় রাখা আপনাকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে। ধৈর্য ধরার মাধ্যমে আপনি সেই চমৎকার ভবিষ্যতের অধিকারী হতে পারবেন, যেখানে যিহোবা ‘আপনার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।’ তিনি “সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা” পূর্ণ করবেন।—গীত. ৩৭:৪; ১৪৫:১৬; লূক ২১:১৯.

যিশুর মৃত্যুর সময় যখন ঘনিয়ে এসেছিল, তখন তাঁর প্রেরিতরা উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। যিশু তাদের এই কথাগুলো বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন: “তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক; ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমাতেও বিশ্বাস কর।” তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে অনাথ রাখিয়া যাইব না, আমি তোমাদের নিকটে আসিতেছি।” (যোহন ১৪:১-৪, ১৮, ২৭) তাঁর কথাগুলো তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের শত শত বছর ধরে আশা এবং ধৈর্যের এক ভিত্তি জুগিয়েছে। যারা পুনরুত্থানে তাদের প্রিয়জনদের দেখার জন্য আকাঙ্ক্ষা করে আছে, তাদেরও নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। যিহোবা এবং তাঁর পুত্র সেই ব্যক্তিদের পরিত্যাগ করবেন না। আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন!

a কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

মৃত্যুতে প্রিয়জনকে হারিয়েছে এমন শোকার্ত ব্যক্তিদের উৎসাহিত করুন

একজন বিবাহিত খ্রিস্টান মারা যাওয়ার পর, কিছু সময় ধরে অনেকে হয়তো শোকার্ত সাথিকে সান্ত্বনা দেওয়ার এবং বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করার জন্য তার বাড়িতে আসতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন বিধবার প্রতি তার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব মনোযোগ দিলে, তিনি হয়তো সেই বিষয়টাকে উপলব্ধি করবেন। কিন্তু, তার বেদনা দূর হওয়ার জন্য যেহেতু সময়ের প্রয়োজন, তাই কিছু সময়ের জন্য তাকে হয়তো সাহায্য করার বা তার প্রতি সান্ত্বনা দেখানোর দরকার হবে। বাইবেল বলে: “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার” বা দুর্দশার সময়ে সাহায্য করার “জন্য জন্মে।”—হিতো. ১৭:১৭.

একজন শোকার্ত ব্যক্তিকে দেখলে আপনার কী বলা উচিত? বাইবেল এই নির্দেশনা দেয়: “সকলে সমমনা, পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্‌ ও নম্রমনা হও।” (১ পিতর ৩:৮) সাথি হারানোর পর, কিছু সময় ধরে একজন শোকার্ত খ্রিস্টানের মন হয়তো খারাপ থাকতে পারে। তাই, ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে বলা হলেও এই কথাগুলো হয়তো উপযুক্ত না-ও হতে পারে, যেমন “কী খবর?” অথবা “আপনি ঠিক আছেন তো?” শোকার্ত ব্যক্তি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, ‘আমার অনুভূতি সম্বন্ধে আপনার কোনো ধারণাই নেই,’ অথবা ‘এইরকম এক সময়ে কীভাবে আমি ঠিক থাকতে পারি?’ তাই, এই ধরনের আন্তরিক ও ইতিবাচক কথা বলা আরও বেশি ব্যবহারিক হতে পারে যে, “আপনাকে দেখে অনেক খুশি হলাম,” অথবা “মণ্ডলীতে আপনাকে দেখে আমি উৎসাহিত হই।”

আপনি একজন শোকার্ত ব্যক্তিকে এক বেলা খাওয়ার জন্য অথবা একসঙ্গে হাঁটতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। মার্কোস নামে একজন বিপত্নীক সেই বন্ধুদের কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন, যারা তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তারা কোন বিষয়ে কথা বলেছিল? তিনি বলেন: “আমার সমস্যা নিয়ে নয় বরং উৎসাহমূলক বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলেছিল।” নিনা নামে একজন বিধবা বলেন: “আমার প্রিয় বন্ধুরা প্রায়ই সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলে। মাঝে মাঝে, তারা কিছুই বলে না—তারা শুধু আমার সঙ্গে থাকে।”

শোকার্ত ব্যক্তি যদি সাথির মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলতে চায়, তাহলে আগ্রহ নিয়ে এবং ধৈর্যপূর্বক তার কথা শুনুন। কৌতূহলের বশে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা এড়িয়ে চলুন। বিচার করবেন না। শোকার্ত ব্যক্তির কীভাবে অথবা কত সময় ধরে শোক প্রকাশ করা উচিত, সেই বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করার প্রয়োজন নেই। তিনি যদি একা থাকতে চান, তাহলে দুঃখিত হবেন না। আপনি অন্য কোনো সময়ে আসতে পারেন। প্রেম দেখিয়ে চলুন।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.

ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কি আপনার প্রশ্ন আছে?

যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতা নিয়ে চিন্তা করা স্বাভাবিক। অব্রাহাম প্রায়ই তাকে একটা পুত্র দেওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা নিয়ে চিন্তা করতেন। যিহোবা তাকে ধৈর্য ধরার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। এই বিশ্বস্ত ব্যক্তি হতাশ হয়ে পড়েননি।—আদি. ১৫:২-৫; ইব্রীয় ৬:১০-১৫.

যোষেফের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর, যাকোব গভীরভাবে তার পুত্রের অভাব বোধ করেছিলেন। বহু বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও যাকোব তার পুত্রের জন্য শোক করেছিলেন, যাকে তিনি মৃত বলে ধরে নিয়েছিলেন। তবে, যিহোবা বিশ্বস্ত যাকোবের জন্য একটা আশীর্বাদ রেখেছিলেন, যে-সম্বন্ধে তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে, যাকোব যোষেফের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে পেরেছিলেন এবং এমনকী তার নাতি-নাতনিদের দেখার সুযোগও পেয়েছিলেন। যাকোব বলেছিলেন: “আমি ভাবিয়াছিলাম, তোমার মুখ আর দেখিতে পাইব না; কিন্তু দেখ, ঈশ্বর আমাকে তোমার বংশও দেখাইলেন।”—আদি. ৩৭:৩৩-৩৫; ৪৮:১১.

এই বিবরণগুলো থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি? প্রথমত, এই বিষয়ে নির্ভরতা রাখুন যে, কোনো কিছুই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে না। দ্বিতীয়ত, আমরা যদি যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনা এবং কাজ করি, তাহলে তিনি এখন আমাদের যত্ন নেবেন ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে আমাদের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষাগুলো পুরোপুরিভাবে পূর্ণ করবেন। পৌল লিখেছিলেন: “যে শক্তি আমাদিগেতে কার্য্য সাধন করে, সেই শক্তি অনুসারে যিনি আমাদের সমস্ত যাচ্ঞার ও চিন্তার নিতান্ত অতিরিক্ত কর্ম্ম করিতে পারেন, মণ্ডলীতে এবং খ্রীষ্ট যীশুতে যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে সমস্ত পুরুষানুক্রমে তাঁহারই মহিমা হউক। আমেন।”—ইফি. ৩:২০, ২১.

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার