ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w11 ৩/১৫ পৃষ্ঠা ১২-১৬
  • শেষ যতই এগিয়ে আসছে যিহোবার ওপর নির্ভর করুন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • শেষ যতই এগিয়ে আসছে যিহোবার ওপর নির্ভর করুন
  • ২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • ভুল কিছু করার জন্য প্রলোভিত হওয়ার সময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন
  • উদাসীনতা ও বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার সময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন
  • উদ্‌বিগ্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন
  • “ঈশ্বরের শান্তি” যেন আপনার হৃদয়কে রক্ষা করে
  • যিহোবার ওপর আপনার আস্থা আরও দৃঢ় করুন
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • এক সুখী জীবনের জন্য নির্ভরতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আপনি ভাই-বোনদের উপর আস্থা রাখতে পারেন!
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২২
  • সমস্ত চিত্তে যিহোবাতে নির্ভর করুন
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w11 ৩/১৫ পৃষ্ঠা ১২-১৬

শেষ যতই এগিয়ে আসছে যিহোবার ওপর নির্ভর করুন

“তোমরা চিরকাল সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ।”—যিশা. ২৬:৪.

১. ঈশ্বরের দাসদের ও জগতের লোকেদের মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে?

আমরা এমন এক জগতে বাস করি, যেখানে লক্ষ লক্ষ লোক এখন আর জানে না যে, তারা কার বা কীসের ওপর নির্ভর করতে পারে আর এর কারণ সম্ভবত তারা বার বার কষ্ট পেয়েছে অথবা হতাশ হয়েছে। যিহোবার দাসদের থেকে কতই না আলাদা! ঈশ্বরের প্রজ্ঞার দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় তারা জানে যে, এই জগতের ওপর বা এই জগতের “রাজন্যগণে” নির্ভর করার চেয়ে আরও ভালো কিছু রয়েছে। (গীত. ১৪৬:৩) তাই, তারা তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ যিহোবার ওপর ছেড়ে দেয় কারণ তারা জানে যে, তিনি তাদেরকে ভালোবাসেন এবং তাঁর বাক্য সবসময় পরিপূর্ণ করেন।—রোমীয় ৩:৪; ৮:৩৮, ৩৯.

২. কীভাবে যিহোশূয় ঈশ্বরের নির্ভরযোগ্যতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন?

২ প্রাচীনকালের যিহোশূয় ঈশ্বরের নির্ভরযোগ্যতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তার জীবনের শেষের দিকে, তিনি সহইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে।”—যিহো. ২৩:১৪.

৩. ঈশ্বরের নাম তাঁর সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?

৩ যিহোবা শুধুমাত্র তাঁর দাসদের প্রতি প্রেমের বশবর্তী হয়েই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিশেষভাবে নিজ নামের জন্য তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করেন। (যাত্রা. ৩:১৪, পাদটীকা; ১ শমূ. ১২:২২) ঐশিক নামের বিষয়ে জে. বি. রদারয়েমের দি এমফাসাইজড্‌ বাইবেল-এর ভূমিকাতে এভাবে বলা আছে: “[এটা] সবচেয়ে সদয় প্রতিজ্ঞা; উত্থাপিত হতে পারে এমন যেকোনো পরিস্থিতি, যেকোনো সমস্যা, যেকোনো প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করে তা হওয়ার ঐশিক ক্ষমতা . . . [এটা হল] এক প্রতিজ্ঞা . . . এক ঘোষণা, এক স্মরণীয় বাক্য, এক প্রতিশ্রুতি। এই নামের প্রতি ঈশ্বর সবসময় বিশ্বস্ত থাকবেন; এর কারণে তিনি কখনোই লজ্জিত হবেন না।”

৪. (ক) যিশাইয় ২৬:৪ পদ আমাদের কী করার পরামর্শ দেয়? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

৪ নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি যিহোবাকে যথেষ্ট ভালোভাবে জানি, যেন তাঁর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি? ঈশ্বরের হাতে যে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা জেনে আমি কি আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের মোকাবিলা করি?’ যিশাইয় ২৬:৪ পদ বলে: “তোমরা চিরকাল সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ; কেননা সদাপ্রভু যিহোবাতেই যুগসমূহের শৈল।” এটা ঠিক যে, ঈশ্বর এখন অলৌকিকভাবে লোকেদের জীবনে হস্তক্ষেপ করেন না, যেমনটা তিনি বাইবেলের সময়ে মাঝে মাঝে করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, “যুগসমূহের শৈল” হিসেবে তাঁর ওপর “চিরকাল” নির্ভর করা যায়। একজন নির্ভরযোগ্য ঈশ্বর কীভাবে বর্তমানে তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের সহযোগিতা করেন? আসুন, আমরা তিনটে উপায় বিবেচনা করি: তিনি আমাদেরকে শক্তিশালী করেন, যখন আমরা তাঁর কাছে প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য চাই, তিনি আমাদের সমর্থন করেন, যখন আমাদেরকে উদাসীনতা ও সরাসরি বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হয় এবং তিনি আমাদের উদ্দীপিত করেন, যখন উদ্‌বিগ্নতা আমাদেরকে ভারগ্রস্ত করে ফেলে। এই ক্ষেত্রগুলো পরীক্ষা করার সময়, কীভাবে আপনি যিহোবার ওপর আপনার নির্ভরতাকে শক্তিশালী করতে পারেন, সেই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন।

ভুল কিছু করার জন্য প্রলোভিত হওয়ার সময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন

৫. ঈশ্বরের ওপর আমাদের নির্ভরতার ক্ষেত্রে একটা বড়ো পরীক্ষা কী হতে পারে?

৫ যখন পরমদেশ ও পুনরুত্থান, যেগুলোর জন্য আমরা আকুল আকাঙ্ক্ষা করে আছি, সেই সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার বিষয়টা আসে, তখন যিহোবার ওপর নির্ভর করা এক বিষয়। কিন্তু, নৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নির্ভর করা এবং তাঁর পথ ও মানগুলোর প্রতি বশীভূত হওয়া যে সঠিক বিষয় ও সেইসঙ্গে এটা যে আমাদেরকে পরম সুখের দিকে পরিচালিত করবে, সেই সম্বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। রাজা শলোমন এই উপদেশ লিখেছিলেন: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” (হিতো. ৩:৫, ৬) আমাদের “সমস্ত পথ” ও “পথ সকল” অভিব্যক্তিগুলো লক্ষ করুন। হ্যাঁ, আমাদের জীবনের সমস্ত পথে—শুধুমাত্র আমাদের খ্রিস্টীয় আশাতেই নয়—ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নির্ভরতা প্রতিফলিত হওয়া উচিত। যখন প্রলোভন আসে, তখন কীভাবে আমরা সেই ধরনের নির্ভরতা দেখাতে পারি?

৬. কীভাবে আমরা মন্দ চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে নিজেদের সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারি?

৬ মন্দ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টা শুরু হয় মন থেকে। (পড়ুন, রোমীয় ৮:৫; ইফিষীয় ২:৩.) তাহলে, কীভাবে আপনি মন্দ চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে আপনার সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারেন? এই পাঁচটা উপায় বিবেচনা করুন: ১. প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চান। (মথি ৬:৯, ১৩) ২. বাইবেলের সেই ব্যক্তিদের উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করুন, যারা যিহোবার কথা শোনেনি এবং যারা তাঁর কথা শুনেছে। এরপর লক্ষ করুন যে, এর ফলে তাদের কী হয়েছিল।a (১ করি. ১০:৮-১১) ৩. পাপ করার কারণে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের যে-মানসিক ও আবেগগত ক্ষতি হতে পারে, সেই বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। ৪. ঈশ্বরের একজন দাস যখন গুরুতর পাপ করেন, তখন তাঁর কেমন লাগে, তা নিয়ে চিন্তা করুন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১.) ৫. যিহোবা যখন দেখেন যে, তাঁর একজন অনুগত উপাসক জনসমক্ষে অথবা একান্তে যেখানেই থাকুক না কেন, মন্দ বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করে বরং সঠিক বিষয়টা করে, তখন যিহোবার হৃদয় যে আনন্দে ভরে ওঠে, তা কল্পনা করুন। (গীত. ১৫:১, ২; হিতো. ২৭:১১) আপনিও যিহোবার ওপর আপনার নির্ভরতা দেখাতে পারেন।

উদাসীনতা ও বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার সময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন

৭. যিরমিয় কোন পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন আর মাঝে মাঝে তিনি কেমন বোধ করতেন?

৭ আমাদের অনেক ভাইবোন এমন এলাকাগুলোতে কাজ করে, যেখানে ধৈর্য বজায় রাখা এক বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভাববাদী যিরমিয় এই ধরনের এক পরিবেশে—যিহূদা রাজ্য ধ্বংসের আগে অশান্ত সময়ে—সেবা করেছিলেন। প্রতিদিন তিনি বিশ্বাসের পরীক্ষার মুখোমুখি হতেন কারণ তিনি বাধ্যতা সহকারে ঈশ্বরের বিচারের বার্তা ঘোষণা করতেন। এমনকী এক পর্যায়ে, তার অনুগত সচিব বারূক অভিযোগ করে বলেছিলেন যে, তিনি পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। (যির. ৪৫:২, ৩) যিরমিয় কি নিরুৎসাহিতার কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন? একবার, তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। “আমি যে দিন জন্মিয়াছিলাম, সেই দিন শাপগ্রস্ত হউক,” তিনি বলেছিলেন। “লজ্জায় জীবন কাটাইবার জন্য আমি কষ্ট ও খেদ দেখিতে কেন গর্ব্ভ হইতে নির্গত হইলাম?”—যির. ২০:১৪, ১৫, ১৮.

৮, ৯. যিরমিয় ১৭:৭, ৮ এবং গীতসংহিতা ১:১-৩ পদের সঙ্গে সংগতি রেখে, ক্রমাগত উত্তম ফল উৎপাদন করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

৮ কিন্তু, যিরমিয় হাল ছেড়ে দেননি। তিনি ক্রমাগত যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। ফল স্বরূপ, এই বিশ্বস্ত ভাববাদী যিরমিয় ১৭:৭, ৮ পদে লিপিবদ্ধ স্বয়ং যিহোবার এই বাক্যের পরিপূর্ণতা দেখতে পেয়েছিলেন: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, যাহার বিশ্বাসভূমি সদাপ্রভু। সে জলের নিকটে রোপিত এমন বৃক্ষের ন্যায় হইবে, যাহা নদীকূলে মূল বিস্তার করে, গ্রীষ্মের আগমনে সে ভয় করিবে না, এবং তাহার পত্র সতেজ থাকিবে; অনাবৃষ্টির বৎসরেও সে নিশ্চিন্ত থাকিবে, ফলদানেও নিবৃত্ত হইবে না।”

৯ “জলের নিকটে রোপিত” বা জল সেচের ব্যবস্থা রয়েছে এমন বাগানের সতেজ ফলবতী বৃক্ষের মতো, যিরমিয় কখনো ‘ফলদানে নিবৃত্ত হন নাই।’ তিনি তার চারপাশের দুষ্ট উপহাসকদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি জীবনরক্ষাকারী ‘জলের’ উৎসের প্রতি আসক্ত ছিলেন এবং যিহোবা তাকে যা বলেছিলেন, সেগুলোর সমস্তই হৃদয়ে নিয়েছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩; যির. ২০:৯) আমাদের জন্য, বিশেষভাবে আমাদের মধ্যে যারা কঠিন এলাকাগুলোতে ঈশ্বরের সেবা করে, তাদের জন্য যিরমিয় কতই না চমৎকার এক উদাহরণ! আপনার পরিস্থিতি যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে যিহোবার ওপর আরও বেশি নির্ভর করুন, যিনি “তাঁহার নাম স্বীকারকারী” হিসেবে আপনাকে ধৈর্য বজায় রাখতে সাহায্য করবেন।—ইব্রীয় ১৩:১৫.

১০. আমাদের কোন কোন আশীর্বাদ রয়েছে আর সেইসঙ্গে নিজেদেরকে কী জিজ্ঞেস করা উচিত?

১০ এই শেষকালে জীবনে আমরা যে-কঠিন পরিস্থিতিগুলো ভোগ করছি, সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে আমাদের সাহায্য করার জন্য যিহোবা অনেক কিছু জুগিয়েছেন। তিনি অন্যান্য বিষয় ছাড়াও, ঈশ্বরের সম্পূর্ণ বাক্য বাইবেল দিয়েছেন, যেটি দিন দিন আরও বেশি ভাষায় সঠিকভাবে অনুবাদ করা হচ্ছে। তিনি বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর মাধ্যমে উপযুক্ত সময়ে প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য দিচ্ছেন। আর তিনি আমাদের সভা ও সম্মেলনগুলোতে সহবিশ্বাসীদের এক বিরাট দলের মাধ্যমে উৎসাহজনক সাহচর্য জুগিয়েছেন। আপনি কি এই ব্যবস্থাগুলোর পূর্ণ সদ্‌ব্যবহার করেন? যারা তা করে, তারা “চিত্তের সুখে আনন্দরব করিবে।” কিন্তু, যারা ঈশ্বরের কথা শুনতে ব্যর্থ হয়, তারা “চিত্তের দুঃখে ক্রন্দন করিবে, এবং আত্মার ক্ষোভে হাহাকার করিবে।”—যিশা. ৬৫:১৩, ১৪.

উদ্‌বিগ্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুন

১১, ১২. জগতের সমস্যাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে, প্রকৃত প্রজ্ঞার কাজ কোনটা?

১১ যেমন ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী বৃদ্ধিরত দুর্দশার বন্যা মানবজাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। (মথি ২৪:৬-৮; প্রকা. ১২:১২) যখন আক্ষরিক বন্যা শুরু হয়, তখন একটা সাধারণ প্রতিক্রিয়া হল, উচ্চভূমির দিকে দৌড়ে যাওয়া অথবা কোনো দালানের ছাদে—যেকোনো উচ্চস্থানে—ওঠা। একইভাবে, জগতের সমস্যা যতই বৃদ্ধি পায়, ততই লক্ষ লক্ষ লোক অতি উচ্চ বলে মনে হয় এমন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ও সেইসঙ্গে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যার আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, এগুলোর কোনোটাই প্রকৃত নিরাপত্তা প্রদান করে না। (যির. ১৭:৫, ৬) অন্যদিকে, যিহোবার দাসদের এক নিশ্চিত আশ্রয় অর্থাৎ “যুগসমূহের শৈল” রয়েছে। (যিশা. ২৬:৪) গীতরচক বলেছিলেন: “[সদাপ্রভু] মম শৈল ও মম পরিত্রাণ; তিনি মম উচ্চদুর্গ।” (পড়ুন, গীতসংহিতা ৬২:৬-৯.) কীভাবে আমরা এই শৈলকে আমাদের আশ্রয় করে তুলতে পারি?

১২ আমরা যখন যিহোবার বাক্যে মনোযোগ দিই, যা প্রায়ই মানব প্রজ্ঞার বিপরীত, তখন তাঁর প্রতি আসক্ত থাকি। (গীত. ৭৩:২৩, ২৪) উদাহরণস্বরূপ, লোকেরা মানবপ্রজ্ঞার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলতে পারে: ‘জীবন তো মাত্র একটাই; তাই ইচ্ছেমতো উপভোগ করো।’ ‘উত্তম কোনো কেরিয়ার বেছে নেওয়ার চেষ্টা করো।’ ‘অনেক টাকাপয়সা রোজগার করো।’ ‘এটা কেনো, ওটা কেনো।’ ‘যেখানে খুশি সেখানে বেড়াতে যাও; এই জগৎকে উপভোগ করো।’ অন্যদিকে, ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা এই পরামর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ: “যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় করিতেছে না, যেহেতুক এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে।” (১ করি. ৭:৩১) একইভাবে, যিশুও আমাদেরকে সবসময় রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার আর এভাবে ‘স্বর্গে ধন’ সঞ্চয় করার জোরালো পরামর্শ দেন, যেখানে সেগুলো সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে।—মথি ৬:১৯, ২০.

১৩. প্রথম যোহন ২:১৫-১৭ পদের বিষয়বস্তু মনে রেখে নিজেদেরকে কী জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৩ ‘জগৎ’ ও ‘জগতীস্থ বিষয় সকলের’ প্রতি আপনার মনোভাব কি ঈশ্বরের প্রতি আপনার পূর্ণ নির্ভরতাকে প্রতিফলিত করে? (১ যোহন ২:১৫-১৭) জগৎ যে-বিষয়গুলো দিতে চায়, সেগুলোর চেয়ে আধ্যাত্মিক ধনসম্পদ এবং রাজ্যের সেবার বিশেষ সুযোগগুলোকে কি আপনি আরও বেশি কাঙ্ক্ষিত এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন? (ফিলি. ৩:৮) আপনি কি এক ‘সরল চক্ষু’ বজায় রাখার প্রচেষ্টা করেন? (মথি ৬:২২) অবশ্য, ঈশ্বর চান না যেন আপনি অবিবেচক বা দায়িত্বজ্ঞানহীন হন, বিশেষভাবে যদি আপনাকে পরিবারের যত্ন নিতে হয়। (১ তীম. ৫:৮) কিন্তু, তিনি আশা করেন যেন তাঁর দাসেরা সম্পূর্ণরূপে তাঁর ওপর নির্ভর করে—শয়তানের মৃতপ্রায় জগতের ওপর নয়।—ইব্রীয় ১৩:৫.

১৪-১৬. এক ‘সরল চক্ষু’ বজায় রাখার ও রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথম স্থানে রাখার মাধ্যমে কেউ কেউ কীভাবে উপকৃত হয়েছে?

১৪ তিন জন অল্পবয়সি সন্তানের বাবা-মা রিচার্ড ও রুথের উদাহরণ বিবেচনা করুন। “আমার মনে হতো যে, আমি যিহোবার জন্য আরও বেশি কিছু করতে পারি,” রিচার্ড বলেন। “আমি এক আরামদায়ক জীবনযাপন করতাম কিন্তু আমার মনে হতো যেন আমি বলতে গেলে ঈশ্বরকে কেবল উদ্বৃত্ত সময়টুকু দিচ্ছি। বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করার এবং খরচাপাতি বিবেচনা করার পর, রুথ এবং আমি এই বিষয়ে একমত হয়েছিলাম যে, আমি আমার সুপারভাইজারকে আমার কাজের সময় কমিয়ে সপ্তাহে চার দিন কাজ করার কথা বলব—যদিও দেশে তখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। আমার আবেদন মঞ্জুর হয়েছিল এবং আমি এক মাসের মধ্যে নতুন তালিকা অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করেছিলাম।” রিচার্ড এখন কেমন বোধ করেন?

১৫ “আমি আগের চেয়ে ২০ শতাংশ কম বেতন পাই,” তিনি বলেন, “তবে আমার পরিবারের সঙ্গে থাকার এবং সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এখন আমি প্রতি বছর ৫০টা অতিরিক্ত দিন পাচ্ছি। এর ফলে আমি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় দ্বিগুণ সময় দিচ্ছি, আমার বাইবেল অধ্যয়নের সংখ্যা ত্রিগুণ হয়েছে এবং মণ্ডলীতে আমি আরও বেশি নেতৃত্ব দিতে পারছি। আর সন্তানদেরকে সাহায্য করার জন্য আরও বেশি সময় দিতে পারছি বলে রুথ মাঝে মাঝে সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করতে পারছে। আমি যতদিন সম্ভব এই তালিকা বজায় রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।”

১৬ রয় এবং পেটিনা, যাদের একজন মেয়ে এখনও তাদের সঙ্গে থাকে, তারা পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার জন্য তাদের চাকরির সময় কমিয়ে দিয়েছে। “আমি সপ্তাহে তিন দিন কাজ করি,” রয় বলেন, “আর পেটিনা দুই দিন কাজ করে। আর আমরা বাড়ি ছেড়ে দিয়ে একটা অ্যাপার্টমেন্টে উঠি, যেটার যত্ন নেওয়া আরও বেশি সহজ। আমাদের ছেলে-মেয়ের জন্মের আগে আমরা অগ্রগামীর কাজ করতাম আর আমাদের অগ্রগামীর কাজ করার আকাঙ্ক্ষা কখনোই হারিয়ে যায়নি। তাই, আমাদের সন্তানরা যখন বড়ো হয়েছে, তখন আমরা আবারও পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছি। আমরা যে-আশীর্বাদ লাভ করেছি, সেগুলো কোনো টাকাপয়সা দিয়েই পরিমাপ করা যায় না।”

“ঈশ্বরের শান্তি” যেন আপনার হৃদয়কে রক্ষা করে

১৭. জীবনের অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে শাস্ত্র আপনাকে সান্ত্বনা দিয়েছে?

১৭ আমরা কেউই জানি না যে, আগামীকাল কী হবে কারণ আমাদের সকলের প্রতি “কাল ও দৈব ঘটে।” (উপ. ৯:১১) কিন্তু, আগামীকালের বিষয়ে অনিশ্চয়তা যেন আমাদের আজকের মনের শান্তি কেড়ে না নেয়, যা কিনা প্রায়ই এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে, যাদের সেই নিরাপত্তা নেই, যা ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে লাভ করা যায়। (মথি ৬:৩৪) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন . . . রক্ষা করিবে।”—ফিলি. ৪:৬, ৭.

১৮, ১৯. কোন কোন উপায়ে ঈশ্বর আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করেন? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১৮ অনেক ভাই ও বোন কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যেও যিহোবার কাছ থেকে মনের প্রশান্তি এবং শান্তি লাভ করেছে। একজন বোন বলেন, “একজন ডাক্তার বার বার আমাকে রক্ত নেওয়ার জন্য ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। তার প্রথম ‘কথাই’ ছিল, ‘রক্ত নেবেন না, এটা আবার কেমন কথা?’ তখন ও অন্যান্য সময়ে, আমি নীরবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম আর তাঁর কাছ থেকে শান্তি লাভ করেছিলাম। আমি নিজেকে শৈলের মতো দৃঢ় মনে করেছিলাম। রক্তশূন্যতার কারণে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও, আমি আমার পক্ষ থেকে স্পষ্ট শাস্ত্রীয় কারণ তুলে ধরতে পেরেছিলাম।”

১৯ ঈশ্বর হয়তো মাঝে মাঝে সান্ত্বনাকারী সহবিশ্বাসী অথবা সঠিক সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাহায্য জুগিয়ে থাকেন। আপনি হয়তো কোনো ভাই বা বোনকে এইরকম কথা বলতে শুনেছেন: “আমার ঠিক এইরকমই একটা প্রবন্ধের দরকার ছিল। এটা ঠিক আমার জন্যই লেখা হয়েছে!” হ্যাঁ, আমাদের পরিস্থিতি বা প্রয়োজন যা-ই হোক না কেন, যিহোবা আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করবেনই, যদি আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করি। পরিশেষে, আমরা হচ্ছি তাঁর “মেষ” এবং তিনি আমাদেরকে তাঁর নাম দিয়েছেন।—গীত. ১০০:৩; যোহন ১০:১৬; প্রেরিত ১৫:১৪, ১৭.

২০. যখন শয়তানের জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন যিহোবার দাসেরা কেন নির্ভয়ে বাস করবে?

২০ দ্রুত আসন্ন “সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে,” শয়তানের জগৎ যে-বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে এমন সমস্তকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। সোনা, রুপো এবং অন্যান্য মূল্যবান বিষয়বস্তু কোনো নিরাপত্তাই দিতে পারবে না। (সফ. ১:১৮; হিতো. ১১:৪) একমাত্র আশ্রয় হবেন আমাদের “যুগসমূহের শৈল।” (যিশা. ২৬:৪) তাই, আসুন এখনই আমরা বাধ্যতার সঙ্গে তাঁর ধার্মিক পথে চলার, উদাসীনতা অথবা বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করার এবং তাঁর ওপর আমাদের সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার ভার অর্পণ করার মাধ্যমে যিহোবার ওপর আমাদের পূর্ণ নির্ভরতা প্রদর্শন করি। আমরা যখন এই বিষয়গুলো করি, তখন আমরা সত্যিই ‘নির্ভয়ে বাস করিব, শান্ত থাকিব, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিব না।’—হিতো. ১:৩৩.

[পাদটীকা]

a “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের ১১৬-১২২ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

কীভাবে আমরা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে পারি

• ভুল কিছু করার জন্য প্রলোভিত হওয়ার সময়?

• উদাসীনতা ও বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার সময়?

• উদ্‌বিগ্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়?

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের মানগুলো সমর্থন করা সুখ নিয়ে আসে

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

“যিহোবাতেই যুগসমূহের শৈল”

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার