যিরমিয়ের মতো জাগ্রত থাকুন
“আমি [সদাপ্রভু] আপন বাক্য সফল করিতে জাগ্রৎ আছি।” —যির. ১:১২.
১, ২. কেন যিহোবার “জাগ্রৎ” থাকাকে কাঠবাদাম গাছের সঙ্গে তুলনা করা যায়?
লিবানোন ও ইস্রায়েলের পাহাড়পর্বতে সবচেয়ে প্রথমে যে-গাছগুলোতে ফুল ফোটে, সেগুলোর মধ্যে একটা হল কাঠবাদাম গাছ। জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এই গাছে হালকা গোলাপি ও সাদা রঙের চমৎকার ফুল দেখা যায়। এর ইব্রীয় নামের আক্ষরিক অর্থ হল, “জাগ্রত হওয়া।”
২ যিহোবা যখন যিরমিয়কে তাঁর ভাববাদী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, তখন এক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাকে উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করার জন্য কাঠবাদাম গাছের এই বৈশিষ্ট্যকে উপযুক্তভাবেই ব্যবহার করা হয়েছিল। তার পরিচর্যার শুরুতে, ভাববাদীকে দর্শনে সেই গাছের একটা শাখা দেখানো হয়েছিল। এর অর্থ কী ছিল? যিহোবা ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি আপন বাক্য সফল করিতে জাগ্রৎ আছি।” (যির. ১:১১, ১২) ঠিক যেমন একটা কাঠবাদাম গাছ আগে ‘জাগ্রত হয়’, তেমনই যিহোবা লোকেদের অবাধ্যতার পরিণতি সম্বন্ধে সাবধান করতে তাঁর ভাববাদীদেরকে তাদের কাছে পাঠানোর জন্য রূপকভাবে ‘প্রত্যূষে উঠেন।’ (যির. ৭:২৫) আর তিনি বিশ্রাম নেননি—তিনি “জাগ্রৎ” ছিলেন—যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্য পরিপূর্ণ হয়েছিল। সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে, একেবারে নিরূপিত সময়ে ধর্মভ্রষ্ট যিহূদা রাজ্যের ওপর যিহোবার বিচার এসেছিল।
৩. যিহোবা সম্বন্ধে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?
৩ একইভাবে বর্তমানে, যিহোবা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য জাগ্রত ও মনোযোগী। তাঁর পক্ষে তাঁর বাক্য পরিপূর্ণ করার বিষয়টাকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। যিহোবা যে মনোযোগী, সেই বিষয়টা আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে? আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, এই ২০১১ সালেও যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য “জাগ্রৎ” আছেন? যিহোবার নিশ্চিত প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে আমাদের যদি কোনো সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে আমাদের যেকোনো আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতা থেকে জাগ্রত হওয়ার সময় এখনই। (রোমীয় ১৩:১১) যিহোবার দাস হিসেবে যিরমিয় জাগ্রত ছিলেন। কীভাবে এবং কেন যিরমিয় তার ঈশ্বরদত্ত কার্যভার পালন করার জন্য জাগ্রত ছিলেন, তা পরীক্ষা করা আমাদেরকে এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে আমরা সেই কাজে অধ্যবসায়ী হতে পারি, যা যিহোবা আমাদেরকে দিয়েছেন।
অতীব জরুরি এক বার্তা
৪. যিরমিয়কে তাঁর বার্তা জানানোর বিষয়ে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছিল আর কোন কারণে তা অতীব জরুরি ছিল?
৪ যিরমিয় যখন একজন প্রহরী হিসেবে যিহোবার কাছ থেকে কার্যভার লাভ করেছিলেন, তখন তার বয়স হয়তো প্রায় ২৫ বছর। (যির. ১:১, ২) কিন্তু, তিনি নিজেকে নিতান্তই একজন বালক বলে মনে করেছিলেন, যিনি সেই জাতির প্রাচীনবর্গের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে একেবারে অযোগ্য, যারা কিনা বয়সে বড়ো এবং কর্তৃত্বে রয়েছে। (যির. ১:৬) তাকে জোরালো অভিযোগ এবং ভীতিজনক বিচার ঘোষণা করতে হয়েছিল আর তা বিশেষভাবে যাজক, মিথ্যা ভাববাদী, শাসক ও সেইসঙ্গে সেই ব্যক্তিদের কাছে, যারা “আপন আপন ধাবন পথে” চলে এবং “নিত্যস্থায়ী বিপথগমন” দ্বারা বিপথগামী হয়। (যির. ৬:১৩; ৮:৫, ৬) রাজা শলোমনের চমৎকার মন্দির, যা প্রায় চার শতাব্দী ধরে সত্য উপাসনার কেন্দ্র ছিল, সেটা ধ্বংস হয়ে যাবে। যিরূশালেম ও যিহূদা জনশূন্য হয়ে পড়বে এবং সেখানকার অধিবাসীদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হবে। স্পষ্টতই, যিরমিয়কে যে-বার্তা জানানোর জন্য কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, তা অতীব জরুরি ছিল!
৫, ৬. (ক) কীভাবে যিহোবা বর্তমানে যিরমিয় শ্রেণীকে ব্যবহার করছেন? (খ) আমাদের অধ্যয়ন কোন বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে?
৫ আধুনিক দিনে, যিহোবা প্রেমের সঙ্গে মানবজাতির জন্য এক দল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জুগিয়েছেন, যারা এই জগতের বিচার সম্বন্ধে সাবধান করার জন্য রূপক প্রহরী হিসেবে কাজ করে। দশকের পর দশক ধরে এই যিরমিয় শ্রেণী লোকেদেরকে এই জোরালো পরামর্শ দিয়ে আসছে, যেন তারা আমরা যে-সময়ে বাস করছি, সেটার প্রতি মনোযোগ প্রদান করে। (যির. ৬:১৭) বাইবেল এই বিষয়টার ওপর জোর দেয় যে, মহান সময়রক্ষাকারী যিহোবা ধীর নন। তাঁর দিন একেবারে ঠিক সময়ে আসবে, এমন এক সময়ে, যখন মানুষ তা আশা করবে না।—সফ. ৩:৮; মার্ক ১৩:৩৩; ২ পিতর ৩:৯, ১০.
৬ মনে রাখবেন যে, যিহোবা জাগ্রত আছেন এবং একেবারে ঠিক সময়ে তাঁর ধার্মিক নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন। আর এই বিষয়টা জানা যেন যিরমিয় শ্রেণীর লোকেদেরকে উৎসাহিত করে এবং তাদের উৎসর্গীকৃত সহযোগীদেরকে তাদের সেই বার্তার ব্যাপারে জাগ্রত থাকতে সাহায্য করে, যেটার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিষয়টা আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে? যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, আমাদের সকলকে ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষ সমর্থন করতে হবে। আসুন আমরা তিনটে গুণ পরীক্ষা করি, যেগুলো যিরমিয়কে তার কার্যভারের ব্যাপারে জাগ্রত থাকতে সাহায্য করেছিল আর তা আমাদেরকেও একই বিষয় করতে সাহায্য করবে।
লোকেদের প্রতি ভালোবাসা
৭. কীভাবে ভালোবাসা যিরমিয়কে কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করেছিল, তা ব্যাখ্যা করুন।
৭ কোন বিষয়টা যিরমিয়কে কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রচার করতে অনুপ্রাণিত করেছিল? লোকেদের প্রতি তার ভালোবাসা। যিরমিয় জানতেন যে, লোকেরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল, সেগুলোর জন্য মিথ্যা পালকরা অনেকাংশে দায়ী ছিল। (যির. ২৩:১, ২) এই বিষয়টা জানা তাকে প্রেম ও সমবেদনা সহকারে তার কাজ করে যেতে সাহায্য করেছিল। তিনি চেয়েছিলেন যেন তার স্বজাতীয় লোকেরা ঈশ্বরের বাক্য শোনে এবং বেঁচে থাকে। তিনি এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, তাদের ওপর যে-বিপর্যয় আসতে যাচ্ছিল, সেটার জন্য তিনি রোদন করেছিলেন। (পড়ুন, যিরমিয় ৮:২১; ৯:১.) বিলাপ বইটি, যিহোবার নাম ও লোকেদের প্রতি যিরমিয়ের গভীর প্রেম এবং উদ্বিগ্নতা সম্বন্ধে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। (বিলাপ. ৪:৬, ৯) আজকে, আপনি যখন এমন লোকেদের দেখেন, যারা “ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন . . . যেন পালকবিহীন মেষপাল,” তখন আপনি কি তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সান্ত্বনাদায়ক সংবাদ নিয়ে যাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষী হন না?—মথি ৯:৩৬.
৮. কী দেখায় যে, কষ্ট ভোগ করা সত্ত্বেও যিরমিয় তিক্তবিরক্ত হননি?
৮ যদিও যিরমিয় ঠিক সেই লোকেদের হাতেই কষ্ট ভোগ করেছিলেন, যাদেরকে তিনি সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, তবুও তিনি প্রতিশোধ নেননি অথবা তিক্তবিরক্ত হয়ে ওঠেননি। তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু এবং সদয় ছিলেন আর তা এমনকী মন্দ রাজা সিদিকিয়ের প্রতিও! রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে প্রাণদণ্ডের জন্য সমর্পণ করার পরও যিরমিয় রাজাকে যিহোবার বাক্য মান্য করার জন্য মিনতি করেছিলেন। (যির. ৩৮:৪, ৫, ১৯, ২০) লোকেদের প্রতি আমাদের ভালোবাসাও কি যিরমিয়ের মতো এতটা গভীর?
ঈশ্বরদত্ত সাহস
৯. কীভাবে আমরা জানি যে, যিরমিয় ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহস লাভ করেছিলেন?
৯ যিহোবা যখন প্রথম তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন, তখন যিরমিয় অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। এটা থেকে আমরা দেখতে পারি যে, তিনি যে-সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন, তা তার সহজাত বৈশিষ্ট্য ছিল না। ভাববাদী হিসেবে সেবা করার সময় যিরমিয় যে-অসাধারণ শক্তি দেখিয়েছিলেন, তা আসলে ঈশ্বরের ওপর তার পূর্ণ নির্ভরতা থেকে এসেছিল। প্রকৃতপক্ষে, যিহোবা এই অর্থে ভাববাদীর সঙ্গে “প্রবল পরাক্রান্ত বীরের ন্যায়” ছিলেন যে, তিনি যিরমিয়কে সমর্থন করেছিলেন এবং তার কার্যভার পালন করার জন্য শক্তি জুগিয়েছিলেন। (যির. ২০:১১) সাহসের জন্য যিরমিয়ের এতটাই সুনাম ছিল যে, যিশুর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে কেউ কেউ মনে করেছিল, যিরমিয়ই বুঝি যিশু হয়ে এসেছেন!—মথি ১৬:১৩, ১৪.
১০. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা ‘জাতিগণের ও রাজ্য সকলের উপরে’ নিযুক্ত?
১০ “জাতিগণের রাজন্” হিসেবে যিহোবা যিরমিয়কে বিভিন্ন জাতি এবং রাজ্যের কাছে এক বিচারের বার্তা জানানোর কার্যভার দিয়েছিলেন। (যির. ১০:৬, ৭) কিন্তু, কোন অর্থে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা “জাতিগণের উপরে ও রাজ্য সকলের উপরে” নিযুক্ত? (যির. ১:১০) প্রাচীনকালের ভাববাদীর মতো, যিরমিয় শ্রেণী নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভুর কাছ থেকে একটা কার্যভার পেয়েছে। এই কারণে, ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাসেরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন জাতি ও রাজ্যের বিরুদ্ধে ঘোষণা করার জন্য যথাযথভাবে নিযুক্ত। পরাৎপর ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমতা লাভ করে এবং তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যের স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করে, যিরমিয় শ্রেণী এই ঘোষণা করে যে, ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে ও তাঁর মনোনীত প্রতিনিধিদের দ্বারা বর্তমানকালীন জাতি এবং রাজ্যগুলোকে নির্মূল ও ধ্বংস করে দেওয়া হবে। (যির. ১৮:৭-১০; প্রকা. ১১:১৮) যিরমিয় শ্রেণী পৃথিবীব্যাপী যিহোবার বার্তা ঘোষণা করার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে যে-দায়িত্ব পেয়েছে, সেটাকে হালকাভাবে না নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
১১. কী আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও দমে না গিয়ে প্রচার করে চলতে সাহায্য করবে?
১১ বিরোধিতা, উদাসীনতা অথবা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সময় মাঝে মাঝে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। (২ করি. ১:৮) কিন্তু, আসুন আমরা যিরমিয়ের মতো কাজ করে চলি। নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন না। আমরা সকলে যেন সাহায্যের জন্য ঈশ্বরের ওপর ভরসা করার সময় ক্রমাগত তাঁর কাছে মিনতি করি, তাঁর ওপর নির্ভর করি এবং ‘সাহসী হই।’ (১ থিষল. ২:২) সত্য উপাসক হওয়ায়, আমাদেরকে ঈশ্বরদত্ত দায়িত্বগুলো পালন করার জন্য সবসময় জাগ্রত থাকতে হবে। আমাদেরকে দমে না গিয়ে খ্রিস্টীয়জগতের ধ্বংস সম্বন্ধে প্রচার করে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে, যে-ধ্বংসের পূর্বাভাস অবিশ্বস্ত যিরূশালেমের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। যিরমিয় শ্রেণী কেবল “সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বৎসর” সম্বন্ধেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে “আমাদের ঈশ্বরের প্রতিশোধের দিন” সম্বন্ধেও ঘোষণা করবে।—যিশা. ৬১:১, ২; ২ করি. ৬:২.
গভীর আনন্দ
১২. কেন আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, যিরমিয় তার আনন্দ বজায় রেখেছিলেন আর এর মূলে কোন বিষয়টা ছিল?
১২ যিরমিয় তার কাজে আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে বলেছিলেন: “তোমার বাক্য সকল পাওয়া গেল, আর আমি সেগুলি ভক্ষণ করিলাম, তোমার বাক্য সকল আমার আমোদ ও চিত্তের হর্ষজনক ছিল; কেননা হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, আমার উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত।” (যির. ১৫:১৬) যিরমিয়ের কাছে সত্য ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করা এবং তাঁর বাক্য প্রচার করা এক বিশেষ সুযোগ ছিল। এই বিষয়টা আগ্রহজনক যে, যিরমিয় যখন লোকেদের কাছ থেকে আসা উপহাসের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন, তখন তার আনন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু, তার বার্তা যে চমৎকার ও এর যে গুরুত্ব রয়েছে, সেটার ওপর তিনি যখন পুনরায় মনোযোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনি তার আনন্দ ফিরে পেয়েছিলেন।—যির. ২০:৮, ৯.
১৩. কেন গভীর আধ্যাত্মিক সত্যগুলো গ্রহণ করা আমাদের আনন্দ বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ?
১৩ আমাদের দিনে প্রচার কাজে আনন্দ বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে “কঠিন খাদ্য” অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যের গভীর সত্যগুলো গ্রহণ করতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১৪) গভীর অধ্যয়ন বিশ্বাসকে বৃদ্ধি করে। (কল. ২:৬, ৭) এটা আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে, কীভাবে আমাদের কাজগুলো প্রকৃতই যিহোবার হৃদয়কে স্পর্শ করে। আমাদের পক্ষে যদি বাইবেল পাঠ ও অধ্যয়নের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের তালিকা পুনরায় পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এমনকী প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য অধ্যয়ন এবং ধ্যান করা, আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করবে এবং এটা আমাদের ‘আমোদ ও চিত্তের হর্ষজনক’ হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে, যেমনটা যিরমিয়ের ক্ষেত্রে রেখেছিল।
১৪, ১৫. (ক) যিরমিয় যে বিশ্বস্তভাবে তার কার্যভার চালিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা কোন ফল নিয়ে এসেছিল? (খ) বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেরা প্রচার কাজ সম্বন্ধে কোন বিষয়টা উপলব্ধি করে?
১৪ যদিও যিরমিয় দমে না গিয়ে যিহোবার সতর্কবাণী এবং বিচারের বার্তা ঘোষণা করেছিলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি “পত্তন ও রোপণ করিবার” কার্যভার নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। (যির. ১:১০) পত্তন ও রোপণ করার ব্যাপারে তার যে-কাজ ছিল, সেটা ফল নিয়ে এসেছিল। কিছু যিহুদি ও সেইসঙ্গে ন-ইস্রায়েলীয় ব্যক্তি, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তাদের মধ্যে রেখবীয়দের এবং এবদ-মেলক ও বারূকের কথা আমরা জানি। (যির. ৩৫:১৮, ১৯; ৩৯:১৫-১৮; ৪৩:৫-৭) যিরমিয়ের এইসমস্ত অনুগত ও ঈশ্বরভয়শীল বন্ধুরা, বর্তমানে পার্থিব আশাসম্পন্ন সেই ব্যক্তিদের চিত্রিত করে, যাদের যিরমিয় শ্রেণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। এই ‘বিস্তর লোককে’ আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তুলতে পেরে যিরমিয় শ্রেণী অনেক আনন্দিত। (প্রকা. ৭:৯) একইভাবে, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এই অনুগত সহযোগীরা সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদেরকে সত্যের জ্ঞান জানানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে প্রচুর পরিতৃপ্তি লাভ করে।
১৫ ঈশ্বরের লোকেরা উপলব্ধি করে যে, সুসমাচার প্রচার করার কাজ কেবল যারা শোনে, তাদের প্রতি জনসেবামূলক এক কাজই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরকে উপাসনা করারও একটা অংশ। লোকেরা আমাদের বার্তা শুনুক বা না-ই শুনুক, আমাদের প্রচার কাজের মাধ্যমে যিহোবাকে পবিত্র সেবা প্রদান করা আমাদের জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে।—গীত. ৭১:২৩; পড়ুন, রোমীয় ১:৯.
আপনার কার্যভার সম্বন্ধে “জাগ্রৎ” থাকুন
১৬, ১৭. কীভাবে প্রকাশিত বাক্য ১৭:১০ পদ এবং হবক্কূক ২:৩ পদ আমাদের সময়ের গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে?
১৬ আমরা যখন প্রকাশিত বাক্য ১৭:১০ পদের অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণী বিবেচনা করি, তখন আমরা যে-সময়ে বাস করছি, সেটার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। সপ্তম রাজা অর্থাৎ অ্যাংলো-আমেরিকান যৌথ বিশ্বশক্তি অস্তিত্বে এসে গিয়েছে। এই সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “তাহাকে [সপ্তম বিশ্বশক্তিকে] অল্পকাল থাকিতে হইবে।” এখন সেই “অল্পকাল” অবশ্যই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভাববাদী হবক্কূক বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন: “এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, . . . তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।”—হবক্. ২:৩.
১৭ নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার জীবন কি প্রকৃতই আমাদের সময়ের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে? আমার জীবনযাপন কি দেখায় যে, আমি শীঘ্র শেষ আসবে বলে আশা করি? নাকি আমার সিদ্ধান্ত অথবা অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো এই ইঙ্গিত দেয় যে, শীঘ্র যেকোনো সময় শেষ আসবে বলে আমি আশা করি না অথবা আদৌ তা আসবে কি না, সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই?’
১৮, ১৯. কেন এখন ধীর হয়ে পড়ার সময় নয়?
১৮ প্রহরী শ্রেণীর কাজ এখনও শেষ হয়নি। (পড়ুন, যিরমিয় ১:১৭-১৯.) এটা কতই না আনন্দদায়ক যে, অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা “লৌহস্তম্ভ” এবং ‘দৃঢ় নগরের’ মতো অটল আছে! তারা এই অর্থে “সত্যের কটিবন্ধনীতে বদ্ধকটি” হয়েছে যে, তারা ঈশ্বরের বাক্যকে সুযোগ দেয় যেন তা তাদেরকে সেই সময় পর্যন্ত শক্তিশালী করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা প্রদত্ত কার্যভার সম্পন্ন করে। (ইফি. ৬:১৪) একই দৃঢ়সংকল্প নিয়ে বিস্তর লোকেরাও যিরমিয় শ্রেণীকে এর ঐশিক কার্যভার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে।
১৯ এখন রাজ্যের কাজে ধীর হয়ে পড়ার সময় নয় বরং যিরমিয় ১২:৫ পদের অর্থ বিবেচনা করার সময়। (পড়ুন।) আমাদের সকলকেই এমন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, যেগুলো আমাদের সহ্য করতেই হবে। বিশ্বাসের এই পরীক্ষাগুলোকে সেই “পদাতিকদের” সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যাদের সঙ্গে আমাদেরও দৌড়াতে হবে। যাই হোক, যতই “মহাক্লেশ” নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই আমরা জানি যে, দুঃখকষ্ট বৃদ্ধি পাবেই। (মথি ২৪:২১) আসন্ন আরও কঠিন সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করাকে “অশ্বগণের সহিত” দৌড়ানোর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। দ্রুত গতিসম্পন্ন ঘোড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়ানোর জন্য একজন ব্যক্তির আরও অনেক বেশি ধৈর্যের প্রয়োজন। অতএব, এখন আমরা যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি, সেগুলো সহ্য করা উপকারজনক, যা হয়তো আমাদেরকে সম্মুখস্থ পরীক্ষাগুলো সহ্য করার ক্ষেত্রে প্রস্তুত করবে।
২০. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
২০ আমরা সকলে যিরমিয়কে অনুকরণ করতে এবং আমাদের প্রচারের কার্যভার সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারি! প্রেম, সাহস ও আনন্দের মতো গুণ যিরমিয়কে বিশ্বস্ততার সঙ্গে ৬৭ বছরের পরিচর্যা সম্পন্ন করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। কাঠবাদাম গাছের চমৎকার ফুল ফোটা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, যিহোবা “জাগ্রৎ” থাকবেন যেন তাঁর বাক্য সফল হয়। তাই, উত্তম কারণে আমরাও জাগ্রত থাকতে চাই। যিরমিয় “জাগ্রৎ” ছিলেন আর আমরাও থাকতে পারি।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কীভাবে প্রেম যিরমিয়কে তার কার্যভারের ব্যাপারে “জাগ্রৎ” থাকতে সাহায্য করেছিল?
• কেন আমাদের ঈশ্বরদত্ত সাহসের প্রয়োজন?
• কী যিরমিয়কে তার আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল?
• কেন আপনি “জাগ্রৎ” থাকতে চান?
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
বিরোধিতা সত্ত্বেও আপনি কি প্রচার করে চলবেন?