ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w12 ৯/১৫ পৃষ্ঠা ১৮-২২
  • যিহোবা ও যিশুর ধৈর্য থেকে শিখুন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবা ও যিশুর ধৈর্য থেকে শিখুন
  • ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • কেন যিহোবা ধৈর্য দেখান?
  • কীভাবে যিশু ধৈর্য ধরার এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
  • কীভাবে আমি ঈশ্বরীয় ধৈর্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি?
  • ধৈর্য কোন আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসে?
  • সবসময় ধৈর্য ধরুন!
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২৩
  • যিহোবার ধৈর্যকে অনুকরণ করুন
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমাদের পরিচর্যায় ধৈর্য ধরতে হবে
    ২০১১ আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা
  • ধৈর্য​—⁠একটা উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে সহ্য করা
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৮
আরও দেখুন
২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w12 ৯/১৫ পৃষ্ঠা ১৮-২২

যিহোবা ও যিশুর ধৈর্য থেকে শিখুন

“আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর।” —২ পিতর ৩:১৫.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছেন যে, তিনি ধৈর্যশীল?

কেন যিশুকে দীর্ঘসময় ধরে ধৈর্য দেখাতে হয়েছিল?

ঈশ্বরীয় ধৈর্যকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারি?

১. কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তি কোন বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে?

এ কজন বিশ্বস্ত বোন, যিনি কয়েক দশক ধরে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করেছিলেন, তিনি নম্রভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “মৃত্যুর আগে আমি কি শেষ দেখে যেতে পারব?” দীর্ঘসময় ধরে যিহোবাকে সেবা করছে এমন কিছু ব্যক্তিও একই বিষয় নিয়ে চিন্তা করে। আমরা সেই দিনের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে আছি, যখন ঈশ্বর সকলই নতুন করবেন এবং বর্তমানে আমরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলো দূর করে দেবেন। (প্রকা. ২১:৫) যদিও আমাদের এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, শয়তানের বিধিব্যবস্থার ধ্বংস খুবই নিকটে কিন্তু সেই দিনের জন্য ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করা কঠিন হতে পারে।

২. ঈশ্বরীয় ধৈর্য সম্বন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

২ তা সত্ত্বেও, বাইবেল দেখায় যে, আমাদের ধৈর্য বজায় রাখতে হবে। ঈশ্বরের অতীতের দাসদের মতো আমরাও ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত বিষয়গুলো লাভ করতে পারব, যদি আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস থাকে এবং যদি আমরা সেই প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে তাঁর নিরূপিত সময়ের জন্য দীর্ঘসহিষ্ণুতা সহকারে বা ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করি। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১১, ১২.) যিহোবা নিজে ধৈর্য বজায় রেখেছেন। তিনি চাইলে যেকোনো সময়ে দুষ্টতাকে শেষ করে দিতে পারতেন কিন্তু তিনি উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। (রোমীয় ৯:২০-২৪) কেন তিনি এত ধৈর্যশীল? কীভাবে যিশু ঈশ্বরীয় ধৈর্যের এক উদাহরণ হয়ে এসেছেন? আমরা যদি ঈশ্বরীয় ধৈর্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি, তাহলে আমরা কোন উপকারগুলো লাভ করব? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদেরকে ধৈর্য এবং দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে, এমনকী যদিও আমাদের এটা মনে হতে পারে যে, যিহোবা দেরি করছেন।

কেন যিহোবা ধৈর্য দেখান?

৩, ৪. (ক) পৃথিবীর বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য কেন যিহোবা ধৈর্য দেখিয়েছেন? (খ) এদনে বিদ্রোহের ব্যাপারে যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

৩ যিহোবা উত্তম কারণেই ধৈর্য দেখান। এটা ঠিক যে, তিনি সবসময়ই সমস্ত নিখিলবিশ্বে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী; কিন্তু এরপরও এদনের বিদ্রোহ সর্বজনীন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যিহোবা এই বিষয়টা জেনে ধৈর্য দেখিয়েছেন যে, এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দেওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন। স্বর্গ এবং পৃথিবীর প্রত্যেকের কাজ ও মনোভাব সম্বন্ধে পূর্ণরূপে জ্ঞান থাকায় নিশ্চিতভাবেই তিনি আমাদের সকলের সর্বোত্তম মঙ্গলের জন্য কাজ করছেন।—ইব্রীয় ৪:১৩.

৪ যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল, যেন আদম এবং হবার বংশধররা পৃথিবী পরিপূর্ণ করে। শয়তান যখন হবাকে প্রলুব্ধ করেছিল এবং এরপর আদম অবাধ্য হয়েছিল, তখন ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য পরিত্যাগ করেননি। তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েননি, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি, অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাননি অথবা মানব পরিবারের ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি মানুষ এবং পৃথিবী গ্রহের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্পন্ন করার একটা উপায় বের করেছিলেন। (যিশা. ৫৫:১১) তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার জন্য যিহোবা যথেষ্ট ইন্দ্রিয়দমন এবং ধৈর্য দেখিয়েছেন, এমনকী তাঁর উদ্দেশ্যের কিছু দিক যাতে সর্বোত্তম উপায়ে পরিপূর্ণ হয়, সেটার জন্য হাজার হাজার বছর অপেক্ষা করছেন।

৫. যিহোবার ধৈর্যের ফলে কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করা যায়?

৫ আরেকটা যে-কারণে যিহোবা ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করেছেন, তা হল যেন আরও বেশি লোক অনন্তজীবন লাভ করতে পারে। এখন, তিনি ‘বিস্তর লোককে’ রক্ষা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। (প্রকা. ৭:৯, ১৪; ১৪:৬) যিহোবা আমাদের প্রচার কাজের মাধ্যমে লোকেদের কাছে পৌঁছান আর এভাবে তাদেরকে রাজ্য এবং তাঁর ধার্মিক মানগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। রাজ্যের বার্তা হল মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম সংবাদ—হ্যাঁ, এটা হল “সুসমাচার।” (মথি ২৪:১৪) যিহোবা আকর্ষণ করেন এমন প্রত্যেক ব্যক্তি সেইসমস্ত প্রকৃত বন্ধুদের নিয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী এক মণ্ডলীর অংশ হয়ে ওঠেন, যারা যা সঠিক, সেটাকে ভালোবাসে। (যোহন ৬:৪৪-৪৭) আমাদের প্রেমময় পিতা এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে তাঁর অনুমোদন লাভ করার জন্য সাহায্য করেন। এ ছাড়া, তিনি তাঁর স্বর্গীয় সরকারের জন্য মানবজাতির মধ্যে থেকে সম্ভাব্য সদস্যদের বাছাই করেছেন। তাদের স্বর্গীয় অবস্থান লাভ করার পর, এই একনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বাধ্য মানবজাতিকে সিদ্ধতায় পৌঁছাতে এবং অনন্তজীবন লাভ করতে সাহায্য করবে। স্পষ্টতই, এমনকী ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করার সময়ও যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য কাজ করছেন আর তা আমাদের মঙ্গলের জন্য।

৬. (ক) কোন অর্থে নোহের দিনে যিহোবা ধৈর্য দেখিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে যিহোবা আমাদের দিনে ধৈর্য দেখাচ্ছেন?

৬ চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সত্ত্বেও যিহোবা ধৈর্য দেখান আর এই বিষয়টা আমরা জলপ্লাবনের আগে দুষ্টতার ব্যাপারে তিনি যা করেছিলেন, সেটা থেকে দেখতে পারি। সেই সময় পৃথিবী অনৈতিকতা ও দৌরাত্ম্যে ভরে গিয়েছিল আর মানুষের অধঃপতন দেখে যিহোবা “মনঃপীড়া” পেয়েছিলেন। (আদি. ৬:২-৮) যেহেতু তিনি সেই পরিস্থিতি চিরকাল সহ্য করবেন না, তাই তিনি অবাধ্য মানবজাতির ওপর জলপ্লাবন নিয়ে আসার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন। “নোহের সময়ে, . . . যখন ঈশ্বরের দীর্ঘসহিষ্ণুতা” বা ধৈর্য “বিলম্ব করিতেছিল,” তখন যিহোবা নোহ ও তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। (১ পিতর ৩:২০) একেবারে উপযুক্ত সময়ে যিহোবা নোহকে এই সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন এবং তাকে একটা জাহাজ বানানোর কার্যভার দিয়েছিলেন। (আদি. ৬:১৪-২২) এ ছাড়া, নোহ “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” ছিলেন, তার প্রতিবেশীদের আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। (২ পিতর ২:৫) যিশু বলেছিলেন যে, আমাদের সময়ও নোহের দিনের মতো। কখন যিহোবা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংস নিয়ে আসবেন, তা তিনি স্থির করে ফেলেছেন। কখন ‘সেই দিন ও সেই দণ্ড’ আসবে, তা কোনো মানুষই জানে না। (মথি ২৪:৩৬) এই সময়ের মধ্যে আমরা ঈশ্বরদত্ত এই কার্যভার লাভ করেছি যে, আমরা যেন লোকেদেরকে সাবধান করি এবং কীভাবে তারা রক্ষা পেতে পারে, তা তাদেরকে জানাই।

৭. যিহোবা কি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে ধীর? ব্যাখ্যা করুন।

৭ স্পষ্টতই, যিহোবার ধৈর্য ধরার অর্থ এই নয় যে, তিনি শুধু শুধু বসে থেকে অপেক্ষা করছেন। না, আমাদের কখনো তাঁর ধৈর্যের সঙ্গে অমনোযোগিতাকে অথবা উদাসীনতাকে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়! তবে এটা ঠিক যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থায় কষ্টভোগ করার সময় এই বিষয়টা মনে রাখা অনেক কঠিন হতে পারে। আমরা হয়তো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে অথবা এইরকমটা মনে করতে পারি যে, ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে ধীর। (ইব্রীয় ১০:৩৬) কখনো এই বিষয়টা ভুলে যাবেন না যে, ধৈর্য ধরার পিছনে তাঁর উত্তম কারণ রয়েছে এবং তাঁর অনুগত দাসদের উপকারের জন্য তিনি এই মধ্যবর্তী সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। (২ পিতর ২:৩; ৩:৯) এ ছাড়া, যিশু কীভাবে ঈশ্বরীয় ধৈর্য দেখিয়েছিলেন, সেটাও বিবেচনা করুন।

কীভাবে যিশু ধৈর্য ধরার এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

৮. কোন পরিস্থিতিগুলোতে যিশু ধৈর্য দেখিয়েছিলেন?

৮ যিশু ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছেন এবং অগণিত বছর ধরে উৎসুকভাবে তা করে আসছেন। শয়তান যখন বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তাঁর একজাত পুত্র পৃথিবীতে মশীহ হিসেবে আসবে। একটু চিন্তা করে দেখুন যে, যিশুর জন্য এর অর্থ ছিল সেই সময় আসার আগে পর্যন্ত হাজার হাজার বছর ধরে ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করা। (পড়ুন, গালাতীয় ৪:৪.) সেই সময়টাতে তিনি শুধু শুধু বসে থেকে অপেক্ষা করেননি; বরং তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত কার্যভারে নিয়োজিত ছিলেন। অবশেষে তিনি যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন তিনি জানতেন যে, ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী তাঁকে শয়তানের হাতে মৃত্যুবরণ করতে হবে। (আদি. ৩:১৫; মথি ১৬:২১) তিনি ধৈর্যপূর্বক ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি বশীভূত হয়েছিলেন, যদিও এর অর্থ ছিল যন্ত্রণাদায়ক কষ্টভোগ করা। তিনি সর্বোচ্চ আনুগত্য দেখিয়েছিলেন। তিনি নিজের প্রতি এবং তাঁর অবস্থানের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছিলেন না আর আমরা এটা থেকে উপকার লাভ করতে পারি।—ইব্রীয় ৫:৮, ৯.

৯, ১০. (ক) যিহোবার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময় যিশু ধৈর্যপূর্বক কী করছেন? (খ) যিহোবার সময়সূচিকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

৯ পুনরুত্থানের পর, যিশু স্বর্গে ও পৃথিবীতে কর্তৃত্ব লাভ করেছিলেন। (মথি ২৮:১৮) তিনি ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য সেই কর্তৃত্ব ব্যবহার করেছিলেন। ১৯১৪ সালে তাঁর শত্রুদেরকে তাঁর পাদপীঠ না করা পর্যন্ত তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণ পাশে ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করেছিলেন। (গীত. ১১০:১, ২; ইব্রীয় ১০:১২, ১৩) খুব শীঘ্র তিনি শয়তানের বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসার জন্য পদক্ষেপ নেবেন। সেই সময়ের মধ্যে যিশু ধৈর্যপূর্বক লোকেদের সঙ্গে কাজ করেন এবং তাদেরকে “জীবন-জলের” দিকে পরিচালনা দেন।—প্রকা. ৭:১৭.

১০ যিশুর উদাহরণ থেকে আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন যে, যিহোবার সময়সূচিকে আপনার কীভাবে দেখা উচিত? কোনো সন্দেহ নেই যে, তাঁর পিতা তাঁর কাছ থেকে যা চাইতেন, তা-ই করার জন্য যিশু আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলেন; তা সত্ত্বেও তিনি ঈশ্বরের সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আসার জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের সকলের ঈশ্বরীয় ধৈর্যের প্রয়োজন, কখনো ঈশ্বরকে অতিক্রম করা কিংবা নিরুৎসাহিতার জন্য হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এই ধরনের ঈশ্বরীয় ধৈর্য গড়ে তোলার জন্য আমরা কী করতে পারি?

কীভাবে আমি ঈশ্বরীয় ধৈর্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করি?

১১. (ক) কোন উপায়ে বিশ্বাস ও ধৈর্যের মধ্যে সংযোগ রয়েছে? (খ) কেন আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস রাখার যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে?

১১ এমনকী অসিদ্ধ মানুষেরাও কীভাবে ধৈর্যপূর্বক সহ্য করতে পারে, সেই সম্বন্ধে যিশু পৃথিবীতে আসার আগে বেঁচে ছিল এমন অনেক ভাববাদী এবং বিশ্বস্ত দাস এক উদাহরণ স্থাপন করে। তাদের বিশ্বাস এবং ধৈর্যের মধ্যে এক সরাসরি সংযোগ রয়েছে। (পড়ুন, যাকোব ৫:১০, ১১.) যিহোবা তাদেরকে যা বলেছিলেন, সেগুলো যদি তারা প্রকৃতই বিশ্বাস না করত—যদি তাদের বিশ্বাসের অভাব থাকত—তাহলে তারা কি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করত? বার বার তারা বিশ্বাসের ভয়ংকর অথবা কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও এই আস্থা রেখেছিল যে, ঈশ্বর যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা অবশেষে তিনি পরিপূর্ণ করবেন। (ইব্রীয় ১১:১৩, ৩৫-৪০) এখন আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস রাখার আরও কারণ রয়েছে, কারণ যিশু এখন আমাদের ‘বিশ্বাসের সিদ্ধিকর্ত্তা’ হিসেবে সেবা করছেন। (ইব্রীয় ১২:২) তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন এবং এমন উপায়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছিলেন, যা আমাদের বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য যুক্তিযুক্ত কারণ জোগায়।

১২. আমাদের বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য আমরা হয়তো কী করতে পারি?

১২ আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আমাদের ধৈর্যকে আরও বৃদ্ধি করার জন্য আমরা কোন ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারি? এর চাবিকাঠি হল, আমরা যেন ঈশ্বরের পরামর্শ কাজে লাগাই। উদাহরণস্বরূপ, যে-কারণগুলোর জন্য আপনি ঈশ্বরের রাজ্যকে আপনার জীবনে প্রথমে রেখেছেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করুন। মথি ৬:৩৩ পদে প্রাপ্ত পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য আপনি কি আরেকটু বেশি প্রচেষ্টা করতে পারেন? এর অর্থ হতে পারে, পরিচর্যায় আরও বেশি সময় ব্যয় করা অথবা আপনার জীবনধারায় কিছুটা রদবদল করা। এ যাবৎ যিহোবা আপনার প্রচেষ্টাগুলোতে যে আশীর্বাদ করেছেন, সেটা উপেক্ষা করবেন না। তিনি হয়তো আপনাকে একটা নতুন বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে অথবা “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা” লাভ করতে সাহায্য করেছেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৭.) এভাবে আপনি যখন সেই উপকারগুলোর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন, যেগুলো আপনি ঈশ্বরের নির্দেশনাগুলো পালন করার মাধ্যমে লাভ করেছেন, তখন ধৈর্যের প্রতি আপনার উপলব্ধি আরও বৃদ্ধি পাবে।—গীত. ৩৪:৮.

১৩. কীভাবে আমরা বিশ্বাস ও ধৈর্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকে উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারি?

১৩ এই প্রক্রিয়া অনেকটা প্রাকৃতিক জগতের বীজবপন করার, কর্ষণ করার এবং ফসল কাটার চক্রের অনুরূপ। প্রতিবার একজন কৃষক যখন প্রচুর পরিমাণে ফসল কাটেন, তখন তিনি পরের মৌসুমে বীজবপন করার ব্যাপারে আরও আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। এটা ঠিক যে, এরপর তাকে ফসল কাটার জন্য ধৈর্যপূর্বক অপেক্ষা করতে হয় কিন্তু এটা তাকে বীজবপন করার ক্ষেত্রে বাধা দেয় না, এমনকী তিনি হয়তো আগের মৌসুমের চেয়ে আরও বেশি জমিতে বীজবপন করেন। তিনি এই নির্ভরতা রাখেন যে, তিনি ফসল কাটতে পারবেন। একইভাবে, আমরা যখন যিহোবার পরামর্শ জানার, তা পালন করার এবং এরপর এর উপকারগুলো লাভ করার চক্রের প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি করি, তখন যিহোবার প্রতি আমাদের নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে আমাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের পক্ষে সেই আশীর্বাদগুলোর জন্য অপেক্ষা করা সহজ হয়ে ওঠে, যেগুলো নিশ্চিতভাবেই আসবে।—পড়ুন, যাকোব ৫:৭, ৮.

১৪, ১৫. মানুষের কষ্টভোগ সম্বন্ধে আমাদের কেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে?

১৪ ধৈর্য গড়ে তোলার আরেকটা উপায় হল, জগৎ এবং আমাদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতিগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত, সেটা বিবেচনা করা। বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের দুঃখকষ্টকে তিনি কীভাবে দেখেন, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। মানুষকে কষ্টভোগ করতে দেখে তিনি দীর্ঘসময় ধরে কষ্ট পাচ্ছেন; কিন্তু তিনি দুঃখে ভেঙে পড়েননি এবং মঙ্গলজনক কাজ করতে অসমর্থ হয়ে যাননি। তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে পাঠিয়েছেন, যেন সেই পুত্র ‘দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করিতে’ এবং মানুষের জন্য শয়তান যে-ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এসেছে, সেগুলোর সবই দূর করতে পারেন। (১ যোহন ৩:৮) বাস্তব বিষয়টা হল, দুঃখকষ্ট ক্ষণস্থায়ী বলে প্রমাণিত হবে কিন্তু ঈশ্বরের সমাধান হবে চিরস্থায়ী। একইভাবে, নিজেদেরকে শয়তানের শাসনের বর্তমান দুষ্টতা দ্বারা জর্জরিত করে ফেলার এবং কখন শেষ আসবে, সেই সম্বন্ধে অধৈর্য হয়ে পড়ার পরিবর্তে, আসুন আমরা সেই অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি, যেগুলো চিরস্থায়ী হবে। যিহোবা দুষ্টতার জন্য একটা নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছেন আর উপযুক্ত সময়ে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।—যিশা. ৪৬:১৩; নহূম ১:৯.

১৫ এই বিধিব্যবস্থার শেষের কঠিন দিনগুলোতে, আমরা হয়তো আমাদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে পারি। দৌরাত্ম্যের শিকার হলে অথবা আমাদের প্রিয়জনরা কষ্টভোগ করলে ক্রুদ্ধভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরিবর্তে, আমাদের সম্পূর্ণরূপে যিহোবার ওপর নির্ভরতা রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই আমাদের জন্য এটা সহজ নয়। কিন্তু যিশু কী করেছিলেন, তা মনে করে দেখুন, যেমনটা মথি ২৬:৩৯ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে।—পড়ুন।

১৬. যে-সময়টুকু বাকি আছে, সেই সময়টাতে আমাদের কী করা এড়িয়ে চলতে হবে?

১৬ যে-বিষয়টা আমাদের ঈশ্বরীয় ধৈর্য দেখানোর ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে তা হল এই মনোভাব যে, দেখা যাক কী হয়। এর অর্থ কী? শেষ যে নিকটে, সেই সম্বন্ধে যে-ব্যক্তির আস্থার অভাব রয়েছে, তিনি যিহোবার কথামতো যদি বিষয়গুলো না ঘটে, তাহলে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা নিতে শুরু করতে পারেন। অন্য কথায়, তিনি হয়তো এইরকমটা চিন্তা করতে পারেন, ‘আমি দেখব যে, যিহোবার কথাগুলো আসলেই সত্যি হয় কি না।’ তখন তিনি হয়তো এই জগতে তার নাম কামানোর জন্য, ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখার পরিবর্তে বরং আর্থিক নিরাপত্তা লাভের জন্য অথবা এখনই এক আরামদায়ক জীবনের বিষয়টা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে উচ্চশিক্ষার ওপর নির্ভর করার জন্য চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু, এইরকম করা কি বিশ্বাসের অভাবকে প্রকাশ করবে না? মনে রাখবেন যে, পৌল আমাদেরকে সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের অনুকারী হতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যারা ‘বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা’ বা ধৈর্য দ্বারা যিহোবার কাছ থেকে প্রতিজ্ঞার অধিকারী হয়েছিলেন। (ইব্রীয় ৬:১২) যিহোবা এই দুষ্ট জগৎকে তাঁর উদ্দেশ্য অনুযায়ী যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি সময় থাকতে দেবেন না। (হবক্‌. ২:৩) এই মধ্যবর্তী সময়ে, আমাদের কেবল দায়সারাভাবে যিহোবার সেবা করা এড়িয়ে চলতে হবে। এর পরিবর্তে, আমাদের সতর্ক থাকতে এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে সেই সুসমাচার প্রচারের কাজ করে চলতে হবে, যা কিনা এমনকী এখনই অতুলনীয় পরিতৃপ্তি নিয়ে আসতে পারে।—লূক ২১:৩৬.

ধৈর্য কোন আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসে?

১৭, ১৮. (ক) ধৈর্যের সঙ্গে জড়িত কোন সুযোগ এখন আমাদের রয়েছে? (খ) এখনই ধৈর্য দেখানোর মাধ্যমে আমরা কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করব?

১৭ আমরা ঈশ্বরকে কয়েক মাস ধরে কিংবা কয়েক দশক ধরে, যতদিনই সেবা করি না কেন, আমরা চিরকাল তাঁকে সেবা করতে চাই। এই বিধিব্যবস্থায় যতটুকু সময়ই অবশিষ্ট থাকুক না কেন, ধৈর্য আমাদেরকে পরিত্রাণ পাওয়া না পর্যন্ত টিকে থাকতে সাহায্য করে। যিহোবা এখন আমাদেরকে তাঁর সিদ্ধান্তগুলোর ওপর আমাদের পূর্ণ নির্ভরতা প্রমাণ করার এবং—প্রয়োজন হলে—তাঁর নামের জন্য দুঃখভোগ করতে ইচ্ছুক হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। (১ পিতর ৪:১৩, ১৪) এ ছাড়া, ঈশ্বর আমাদেরকে এমন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, যা আমাদেরকে পরিত্রাণের জন্য যে-ধৈর্য প্রয়োজন, তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।—১ পিতর ৫:১০.

১৮ স্বর্গ এবং পৃথিবী, সমস্তকিছুর ওপর যিশুর কর্তৃত্ব রয়েছে আর কোনো কিছুই আপনাকে তাঁর সুরক্ষামূলক যত্ন থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারবে না—কেবল আপনি ছাড়া। (যোহন ১০:২৮, ২৯) ভবিষ্যৎ অথবা এমনকী মৃত্যুকেও ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা ধৈর্যপূর্বক শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে, তারা রক্ষা পাবে। তাই, আমাদের লক্ষ রাখতে হবে, যেন আমরা জগতের দ্বারা প্রলুব্ধ না হই এবং যিহোবার ওপর নির্ভর করা বন্ধ করে না দিই। এর পরিবর্তে, আমাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি করার এবং ঈশ্বরের ধৈর্যের সময়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।—মথি ২৪:১৩; পড়ুন, ২ পিতর ৩:১৭, ১৮.

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বরীয় ধৈর্য আপনাকে রাজ্যের বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে এবং আশীর্বাদ লাভ করতে সাহায্য করবে!

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার