বন্ধুত্বসুলভ কথোপকথন হৃদয় স্পর্শ করতে পারে
১ কথোপকথনকে “ধারণার মৌখিক আদানপ্রদান” হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এমন একটি বিষয় যার সম্বন্ধে অন্যেরা চিন্তা করে সেই বিষয়ের উপর বন্ধুত্বসুলভ আলোচনার সূত্রপাত তাদের আগ্রহকে ধরে রাখতে এবং রাজ্যের বার্তা নিয়ে তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। অভিজ্ঞতা দেখায় যে ধর্মোপদেশ দেওয়ার চাইতে একজন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বসুলভ ও আন্তরিক কথাবার্তা বলা অনেক বেশি কার্যকারী।
২ কিভাবে বন্ধুত্বসুলভ কথোপকথন শুরু করা যায়: অপরের সাথে কথা বলা মানেই নয় যে আমাদের কিছু মুগ্ধকর চিন্তাধারা ও শাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সাধারণভাবে এর মানে হল আমাদের কথাবার্তার মধ্যে অপরকে অন্তর্ভুক্ত করা। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমাদের পাশের প্রতিবেশীর সাথে কথোপকথন হয়, তখন আমরা গুরুগম্ভীরভাবে নয়, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে থাকি। আমরা পরবর্তী শব্দগুলি নিয়ে চিন্তা করি না, কিন্তু সেই ব্যক্তিটি যে ধরণের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে আমরা স্বাভাবিকরূপে তারই উত্তর দিয়ে থাকি। সে যা বলছে তার প্রতি যদি আন্তরিক উৎসাহ দেখানো যায় তাহলে এটি হয়ত তাকে উৎসাহ দিতে পারে আমাদের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে। অপরের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক একই বিষয় প্রযোজ্য।
৩ কয়েকটি বিষয় যেমন অপরাধ, যুবকযুবতীদের সমস্যা, স্থানীয় বিষয়, জগতের পরিস্থিতি অথবা এমনকি আবহাওয়া সম্বন্ধে কথা বলার দ্বারাও বন্ধুত্বসুলভ কথোপকথন শুরু করা যায়। যে সমস্ত বিষয় লোকেদের জীবনকে সরাসরিভাবে প্রভাবিত করে সেগুলি আগ্রহকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকারী। একবার আলোচনা শুরু হওয়ার পর আমরা সন্তর্পণে রাজ্যের বার্তার প্রতি সেটিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
৪ স্বাভাবিকভাবে কথা বলার অর্থ নয় যে এর জন্য কোন পূর্ব-প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আছে। কিন্তু এর জন্য নির্বাচিত কিছু শব্দসমষ্টি তৈরি করা অথবা কোন ধর্মোপদেশ কণ্ঠস্থ করার কোন প্রযোজন নেই, যার ফলে এমন ধরনের কথোপকথনের সৃষ্টি হতে পারে যা নমনীয় নয় অথবা বর্তমান পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে নিতে পারে না। (তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ৯:২০-২৩.) প্রস্তুত করার সবচাইতে উত্তম উপায় হল একটি বা দুইটি শাস্ত্রীয় বিষয়কে বেছে নেওয়া এবং তারই উপর ভিত্তি করে কথোপকথনকে গড়ে তোলা। যুক্তি (ইংরাজি) বইয়ে পাওয়া বিষয়গুলির পর্যালোচনা এই ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হবে।
৫ বন্ধুত্বসুলভ কথোপকথনের জন্য প্রয়োজনীয় গুণগুলি: যখন আমরা অপরের সাথে কথা বলি তখন আমাদের উচিত উষ্ণ ও আন্তরিক হওয়া। হাসি ও আনন্দপূর্ণ অভিব্যক্তি এই গুণগুলিকে প্রতিফলিত করতে সাহায্য করতে পারে। আমাদের কাছে পৃথিবীর সবচাইতে উত্তম বার্তা আছে; এটি সহৃদয় ব্যক্তিদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। যদি তারা অনুভব করতে পারে যে তাদের সাথে সুসমাচার বন্টন করার জন্য তাদের প্রতি আমাদের আগ্রহ এক আন্তরিক ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে তারা হয়ত আমাদের কথা শোনার জন্য পরিচালিত হবে।—২ করি. ২:১৭.
৬ কথোপকথনের মধ্যে অংশ নিতে পারা এক উত্তম অভিজ্ঞতাস্বরূপ হওয়া উচিত। অতএব, রাজ্যের বার্তা উপস্থাপনা করার ক্ষেত্রে আমাদের কোমল ও কৌশলী হতে হবে। (গালা. ৫:২২; কল. ৪:৬) চলে আসার সময় অপরের উপর এক উত্তম প্রভাব ফেলার চেষ্টা করুন। এইভাবে, যদি বা আমরা প্রাথমিক সাক্ষাতের সময় হৃদয় স্পর্শ করার ক্ষেত্রে সফল নাও হই, কিন্তু পরবর্তী সময় কোন সাক্ষী আলোচনা করতে এলে সে হয়ত তার সাথে কথা বলতে চাইবে।
৭ বন্ধুত্বসুলভ কথোপকথন শুরু করা কোন জটিল ধর্মোপদেশ আয়ত্ব করার ফল নয়। এটি সাধারণভাবে কোন একটি বিষয়ে আগ্রহ জাগিয়ে তোলার ব্যাপার যা এক ব্যক্তিকে চিন্তান্বিত করে। একবার যখন আমরা আগে থেকে প্রস্তুত করে ফেলি, তখন আমরা বন্ধুত্বসুলভ কথোপকথনে অংশ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকি। আসুন আমরা অনন্ত রাজ্যের আশীর্বাদ সম্বন্ধীয় সবচাইতে উত্তম সংবাদ যাদের সাথে আমাদের দেখা হয় তাদের কাছে বন্টন করি এবং তাদের হৃদয় স্পর্শ করার চেষ্টা করি।—২ পিতর ৩:১৩.