আপনার পরিচর্যায় কার্যকারী হোন
১ আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে আর এক ভয়াবহ আওয়াজ এতই বেড়ে চলেছে যে তা যেন কান কালা করে দেওয়ার মতো গর্জন। ধোয়ার মতো মেঘ নেমে আসছে। এটা কী? সম্পূর্ণ দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ পঙ্গপালের এক বাহিনী আসছে! ভাববাদী যোয়েলের বর্ণিত এই দৃশ্য আজকের দিনে ঈশ্বরের অভিষিক্ত সেবক ও তাদের সহযোগী বিরাট জনতার প্রচার কাজের দ্বারা পরিপূর্ণ হচ্ছে।
২ ১৯৯৮ সালের ১লা মে, প্রহরীদুর্গ, ১১ পৃষ্ঠার ১৯ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছিল যে: “ঈশ্বরের আধুনিক পঙ্গপাল বাহিনী খ্রীষ্টীয় জগতের ‘নগরে’ এক ব্যাপক সাক্ষ্য দিয়েছেন। (যোয়েল ২:৯) . . . যিহোবার বার্তা ঘোষণা করার সময় তারা এখনও সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করছেন, কোটি কোটি লোকেদের গৃহে প্রবেশ করে, রাস্তায় লোকেদের কাছে গিয়ে, ফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং যে কোন উপায়েই হোক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।” ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা এই কাজে অংশ নেওয়া কি আমাদের জন্য এক বড় সুযোগ নয়?
৩ আমরা আক্ষরিক পঙ্গপালদের মতো নই, যাদের একমাত্র লক্ষ্য হল সমস্ত কিছু খেয়ে ফেলে শুধু নিজেদের পেট ভরানো। কিন্তু আমরা, যিহোবার সেবকেরা যাদের কাছে প্রচার করি, আমরা তাদের জীবন সম্পর্কে চিন্তিত। ঈশ্বরের বাক্যে যে গৌরবজনক সত্য রয়েছে সে সম্বন্ধে শেখানোর জন্য আমরা অন্যদের সাহায্য করতে চাই আর চাই যে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাদের হৃদয় সাড়া দিক যাতে করে তারা অনন্তকালীন পরিত্রাণ পেতে পারেন। (যোহন ১৭:৩; ১ তীম. ৪:১৬) তাই আমরা আমাদের পরিচর্যায়, যে ভাবে আমরা এটা তাদের কাছে নিয়ে যাই তাতে দক্ষ হতে চাই। যে পদ্ধতিতেই আমরা প্রচার করি না কেন, আমরা যেন মনে রাখি যে আমাদের প্রচারের ধরণ অর্থাৎ যে ভাবে আমরা তা বলি ও সময় অর্থাৎ যে সময়ে আমরা তাদের কাছে যাই, এমন হওয়া চাই যা সবচেয়ে ভাল ফল নিয়ে আসবে। যেহেতু “এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে,” তাই আমরা আমাদের প্রচারকাজে যতখানি বেশি সম্ভব ফল উৎপন্ন করার উপযুক্ত হয়ে উঠছি কি না তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমাদের প্রচারের পদ্ধতি ও গৃহকর্তার সামনে তা বলার ধরণকে বিশ্লেষণ করা ভাল হবে।—১ করি. ৭:৩১.
৪ যদিও আমরা লোকেদের কাছে যাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা উপায় খুঁজি কিন্তু ঘরে ঘরে প্রচার হচ্ছে আমাদের পরিচর্যার প্রধান পদ্ধতি। আপনি কি দেখেন যে বেশিরভাগ সময়ই যখন আপনি লোকেদের কাছে যান তারা ঘরে থাকেন না বা তারা ঘুমাচ্ছেন? যেহেতু আপনি তাদের কাছে প্রচার করতে পারলেন না, তাই আপনি হয়ত খুবই মনমরা হয়ে পড়লেন! এই সমস্যাটার মোকাবিলা আপনি কিভাবে করবেন?
৫ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসুন ও অন্যদের জন্য বিবেচনা দেখান: প্রথম শতাব্দীতে ইস্রায়েলীয় জেলেরা রাতের বেলায় মাছ ধরত। কেন রাতের বেলায়? যদিও এটা তাদের জন্য খুব সুবিধাজনক সময় ছিল না, তবুও এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি মাছ ধরার জন্য সবচেয়ে ভাল সময়। শুধু এই সময়েই সবচেয়ে বেশি মাছ পাওয়া যেত। তাদের এই রীতি সম্বন্ধে মন্তব্য করে ১৯৯২ সালের ১৫ই জুন, প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) বলে: “আমাদেরও আমাদের এলাকা সম্বন্ধে জানা দরকার যাতে করে আমরা ঠিক সেই সময়ে আমাদের রূপক মাছ ধরার কাজে যেতে পারি যখন বেশিরভাগ লোকেরা ঘরে থাকবেন ও শুনতে চাইবেন।” লোকেদের সামাজিক জীবনধারা লক্ষ্য করে দেখা গেছে যে অনেক শহরতলি ও ঘনবসতি অঞ্চলগুলোতে, যখন আমরা শনি ও রবিবার খুব সকালবেলায় যাই তখন লোকেরা হয়ত ঘরে থাকেন কিন্তু সেই সময়ে আমাদের কথা শোনার মতো মন তাদের একেবারেই থাকে না। আপনার এলাকার অবস্থাও যদি এইরকমই হয়, আপনি আপনার প্রচারে যাওয়ার সময়ে কি কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন যেমন খুব সকালে যাওয়ার বদলে একটু বেলার দিকে বা বিকেল বেলায়? এটা পরিচর্যায় আমাদের দক্ষতা বাড়ানোর, ভাল ফল আনার এক উত্তম উপায় আর এটা করে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের জন্য বিবেচনাও দেখাব যা সত্য খ্রীষ্টীয় প্রেমের এক বড় দিক।—মথি ৭:১২.
৬ ফিলিপীয় ৪:৫ পদে প্রেরিত পৌল আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ‘আমাদের শান্ত ভাব [বিবেচনা] মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক।’ এই অনুপ্রাণিত নির্দেশকে মানার জন্য আমরা উদ্যোগ ও উৎসাহ নিয়ে প্রচারকাজ করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রচারের ধরণে ভারসাম্য বজায় রাখব ও অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাব। আমরা ‘সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে শিক্ষা দিতে, সঙ্কুচিত হতে’ চাই না কিন্তু আমরা লক্ষ্য রাখতে চাই যে আমরা যে সময়ে ঘরে ঘরে শিক্ষা দেওয়ার কাজ করি তা যেন অন্যদের প্রতি বিবেচনাপূর্ণ হয় ও একইসঙ্গে সবচেয়ে ভাল ফল নিয়ে আসে। (প্রেরিত ২০:২০) প্রথম শতাব্দীর ইস্রায়েলীয় জেলেদের মতোই আমরাও ‘মাছ ধরার’ জন্য আমাদের সুবিধামত সময় খুঁজি না বরং আমরা সেই সময়কে বেছে নিই যখন আমরা সবচেয়ে বেশি ফল পেতে পারি।
৭ কোন্ কোন্ রদবদল করা যেতে পারে? বেশিরভাগ সময় শনি ও রবিবার সকাল ৯:০০-টা বা ৯:৩০ মিনিটে ক্ষেত্রের পরিচর্যার জন্য সভা হয়ে থাকে যার ঠিক পরেই প্রচারের দল তাদের এলাকায় ঘরে ঘরে কাজ করার জন্য বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু কিছু প্রাচীনগোষ্ঠী ঘরে ঘরে প্রচার শুরু করার আগে প্রকাশকদের পরিচর্যার অন্য দিকগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য বলেন ও তার ব্যবস্থা করেন, যেমন রাস্তায় বা ব্যবসায়িক এলাকায় সাক্ষ্যদান অথবা পুনর্সাক্ষাৎ করা। অন্যান্য কিছু মণ্ডলী একটু বেলার দিকে যেমন ১০:০০-টা, ১১:০০-টা বা ১২:০০-টার সময় তাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যার সভা করে থাকে। এরপর প্রকাশকেরা সোজা ঘরে ঘরে প্রচার শুরু করে দেন আর প্রায় বিকেল হওয়া পর্যন্ত প্রচার করেন। কিছু এলাকায়, সকালবেলার চেয়ে বরং ২:০০-টো বা ৩:০০-টের সময় প্রচারে যাওয়া সবচেয়ে ভাল। ঘরে ঘরে পরিচর্যায় এই রদবদল হয়ত আরও ভাল সাড়া ও ফল পেতে সাহায্য করবে।
৮ পরিস্থিতিকে বুঝুন ও কৌশলী হোন: যখন আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলি, আমরা দেখি যে বিভিন্ন লোকেরা আমাদের সংবাদকে বিভিন্নভাবে নিয়ে থাকেন। কিছু ব্যক্তিরা আগ্রহ নিয়ে শোনেন, কিছুজন মনই দেন না আর অল্প কিছু লোকেরা হয়ত আমাদের সঙ্গে তর্ক করেন বা ঝগড়া শুরু করে দেন। এই তৃতীয় শ্রেণীর লোকেদের জন্য শাস্ত্র থেকে যুক্তি করা (ইংরাজি) বইয়ের ৭ পৃষ্ঠায় আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে “সত্যের প্রতি যাদের কোন শ্রদ্ধা নেই সেই লোকেদের সঙ্গে ‘তর্কে জয়ী’ হওয়ার” চেষ্টা আমরা করব না। গৃহকর্তা যদি একেবারেই বিরোধী হন আমাদের সেখান থেকে চলে আসা উচিত। আমরা কখনও তাদের বিরোধিতা করে তর্ক করেই চলব না আর জোর করে বোঝাবার চেষ্টা করব না যে আমরা যা বলছি সেটাই ঠিক আর তাদের আমাদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। আমরা আমাদের কথা শোনার জন্য তাদের জোর করব না। কারণ এরকম করার অর্থ হচ্ছে যে আমরা তাদের প্রতি বিবেচনা দেখাচ্ছি না আর এটা পরে অন্য সাক্ষীদের জন্য সমস্যা নিয়ে আসতে পারে ও এমনকি আমাদের সম্পূর্ণ কাজে বাধা নিয়ে আসতে পারে।
৯ একটা এলাকায় কাজ করতে শুরু করার আগে সেই এলাকার কার্ডটা দেখে নেওয়া ভাল যাতে করে আমরা জানতে পারি যে কোন্ ঘরগুলোর গৃহকর্তারা আমাদের তাদের কাছে আসতে মানা করেছেন। যদি কার্ডে এইরকম কিছু ঘরের ঠিকানা থাকে, তাহলে সেই রাস্তায় যে প্রকাশকেরা কাজ করছেন তাদের বলে দেওয়া উচিত যে কোন্ ঘরগুলোতে যাওয়ার দরকার নেই। পরিচারক অধ্যক্ষ না বলা পর্যন্ত কোন প্রকাশকের সেই ঘরগুলোতে নিজের ইচ্ছামতো যাওয়া উচিত নয়।—১৯৯৪ সালের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র প্রশ্নবাক্স দেখুন।
১০ ঘরে ঘরে প্রচার করার সময় পরিস্থিতিকে বুঝতে চেয়ে আমরা প্রচারকাজে আমাদের দক্ষতাকে বাড়াতে পারি। একটা ঘরে ঢোকার আগে চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন। জানালার পর্দাগুলো কি টানা আছে বা জানলার খড়খড়ি কি বন্ধ? ভিতর থেকে কাজকর্মের কোন আওয়াজ কি আসছে? যদি পর্দা টানা থাকে ও লোকেদের সাড়াশব্দ পাওয়া না যায় তাহলে আপনার বোঝা দরকার যে ঘরের লোকেরা ঘুমাচ্ছেন। তাই এইরকম পরিস্থিতিতে যদি আমরা পরে ঘুরে আসি, তাহলে বোধ হয় আরও ভালভাবে কথা বলা যেতে পারে যা ভাল ফল নিয়ে আসবে। হয়ত ঘরের নম্বরটা লিখে নিয়ে আমরা কিছু সময়ের জন্য সেই ঘরটা ছেড়ে চলে যেতে পারি। আর সেই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আপনি আবার একবার এসে দেখতে পারেন বা পরে অন্য কোন সময় ফিরে আসার জন্য সবকিছু লিখে নিতে পারেন।
১১ এমন পরিস্থিতিও এসে পড়তে পারে যখন আমরা হয়ত অনিচ্ছাকৃতভাবে কাউকে জাগিয়ে ফেলেছি বা তাদের জ্বালাতন করেছি। সেই ব্যক্তি হয়তো বিরক্ত হয়ে বা রাগ মুখে বাইরে এসেছেন। তখন আমরা কী করব? হিতোপদেশ ১৭:২৭ পদ আমাদের পরামর্শ দেয়: “যে শীতলাত্মা, সে বুদ্ধিমান।” আমরা যে তার কাছে প্রচার করতে এসেছি তার জন্য আমাদের অপরাধ বোধ করার দরকার নেই কিন্তু আমরা এইজন্য দুঃখ প্রকাশ করব যে আমরা অসময়ে এসে তাকে বিরক্ত করেছি। আমরা তাকে নম্রভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারি যে অন্য কোন্ সময় তার জন্য সুবিধাজনক হবে, তাহলে আমরা সেই সময়ে আসব। যদি আমরা তাদের দেখাই যে আমরা তাদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে চাই আর শান্তভাবে তাদের সঙ্গে অন্তর থেকে কথা বলি, তাহলে তা প্রায়ই এই বিরক্ত ব্যক্তিকে সহজ করে দিতে পারে। (হিতো. ১৫:১) যদি কোন গৃহকর্তা আমাদের বলেন যে তিনি এখন রাত্রের শিফ্টে কাজ করছেন, তাহলে আমরা আমাদের এলাকার কার্ডে তার সম্বন্ধে লিখে নেব যাতে ভবিষ্যতে আমরা এমন সময়ে আসা এড়াতে পারি যখন এলে তাকে বিরক্ত করা হবে।
১২ আমরা যদি আমাদের এলাকা একেবারে পুরোপুরি শেষ করতে চাই তাহলেও পরিস্থিতিকে বোঝা দরকার। যেহেতু আমরা প্রথমবার যখন আসি তখন বেশিরভাগ লোকেরাই ঘরে থাকেন না, তাই তাদেরকে পরিত্রাণের খবর দেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে দেখা করতে আমাদের আরও বেশি চেষ্টা করা দরকার। (রোমীয় ১০:১৩) রিপোর্ট দেখায় যে কখনও কখনও প্রকাশকেরা ব্যক্তিকে ঘরে পাওয়ার জন্য দিনের মধ্যে অনেকবার সেই ঘরে যান। প্রতিবেশীরা ব্যাপারটা লক্ষ্য করেন। এতে যিহোবার সাক্ষীদের নামে এক খারাপ ধারণা তৈরি হতে পারে যে যিহোবার সাক্ষীরা ‘সবসময় আমাদের এলাকায় আসে।’ তাহলে এই পরিস্থিতিকে এড়ানোর জন্য কী করা যেতে পারে?
১৩ পরিস্থিতিকে বুঝুন। যখন দ্বিতীয়বার সেই ঘরটাতে যাচ্ছেন তখন দেখার চেষ্টা করুন যে ঘরে লোক থাকার কোন লক্ষণ কি আছে? যদি চিঠির বাক্সে চিঠিপত্র বা অন্যকিছু পড়েই থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে সেই ব্যক্তি এখনও আসেননি আর তাই আবারও তার দরজায় কড়া নাড়া অনর্থক হবে। যদি দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার গিয়েও এমনকি সন্ধ্যেবেলাতেও সেই ব্যক্তির দেখা পাওয়া না যায়, তাহলে তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যেতে পারে। যদি তা করা না যায়, তাহলে তার দরজায় সাবধানে একটা ট্র্যাক্ট বা ইশতিহার রেখে আসা যেতে পারে বিশেষকরে সেই এলাকা যদি বেশ কয়েকবার ভাল করে করা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে আবার যখন এই এলাকায় কাজ হবে শুধু তখনই এই ঘরে আসা ভাল হবে।
১৪ বাইরের আবহাওয়া যদি খারাপ হয়, তাহলে আমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে অনেক লম্বা আলোচনা করে চলা ঠিক হবে না। যদি গৃহকর্তা ভিতরে ডাকেন, লক্ষ্য রাখুন যেন আপনার পায়ের ধুলোয় ঘর নোংরা না হয়। কুকুর যদি খুব চিৎকার করতে থাকে, বুদ্ধিপূর্বক আচরণ করুন। যখন স্বয়ংসম্পূর্ণ কক্ষগুলোতে প্রচার করছেন, আস্তে আস্তে কথা বলুন যেন আশেপাশের ভাড়াটেরা বিরক্ত না হন বা আপনি যে পাশের ঘরে কথা বলছেন তা টের না পান।
১৫ পরিপাটী ও মর্যাদাপূর্ণ হোন: ভালভাবে সংগঠিত করলে প্রচারের এলাকায় গিয়ে সবার নজরে পড়ার মতো খুব বড় দল হয়ে এক জায়গায় জটলা করাকে এড়ানো যেতে পারে। কিছু কিছু গৃহকর্তা তো বোধহয় ভয়ই পেতে পারেন যদি তারা অনেক গাড়ি, মটর সাইকেল, স্কুটার বা ভ্যান তাদের ঘরের সামনে জড়ো হতে দেখেন। আমরা তাদের এইরকম ধারণা দিতে চাই না যে আমরা তাদের এলাকায় “হামলা” করতে এসেছি। তাই ক্ষেত্রের পরিচর্যার সভাতেই কে কোন্ দিকে যাবে তা ঠিক করে দিলে ভাল হবে। একটা পরিবারের মতো প্রকাশকদের ছোট দল গৃহকর্তাদের কাছে ভয়ের কারণ হবে না আর ক্ষেত্রে কাজ করার সময় তাদের বারে বারে সামলানোরও প্রয়োজন হবে না।
১৬ পরিপাটী হওয়া দরকার আছে আর এলাকায় কাজ করার সময় বাবামাদের তাদের ছেলেমেয়েদের আচার-ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। ছেলেমেয়েরা যখন বড়দের সঙ্গে ঘরে ঘরে যাচ্ছে তখন তাদের আচরণ ভদ্র হওয়া উচিত। অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা প্রচারে গিয়ে যেন খেলতে শুরু করে না দেয় বা ইচ্ছামত এদিক ওদিক ঘুরে না বেড়ায় যাতে করে তারা অকারণে সেখানকার অধিবাসী অথবা সেখান দিয়ে যাতায়াতকারী লোকেদের নজরে পড়ে।
১৭ চা বা কফি খাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ নেওয়ার সময়েও ভারসাম্য রাখা দরকার। ১৯৯৫ সালের জুন মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র ৩ পৃষ্ঠা বলে: “যখন আমরা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাই তখন চা [বা কফি] খাবার সময়ে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করতে পারি। যাইহোক আবহাওয়া যখন খারাপ থাকে তখন এইধরনের বিরতি আমাদের সতেজ করবে এবং কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি দেবে। কিন্তু অনেকে আবার লোকেদের কাছে প্রচার করতেই ব্যস্ত থাকেন এবং ভাইদের সঙ্গে চা [বা কফির] বিরতিতে মেলামেশার সুযোগকে ছেড়ে দেন এবং পরিচর্যার জন্য যে সময়টা নির্ধারিত তার সদ্ব্যবহার করেন।” যদিও, কিছুটা সময় প্রচার বন্ধ করে আপনি চা খেতে যাবেন কি না সেটা আপনার নিজস্ব ব্যাপার কিন্তু কখনও কখনও ভাই ও বোনেদের বেশ বড় দলকে চায়ের দোকানে অথবা রেস্তোরাঁয় জড়ো হতে দেখা যায়। এতে চা দেওয়ার জন্য সময় তো লাগেই কিন্তু এছাড়াও এত ভীড় দেখে অন্যেরা ঘাবড়ে যেতে পারেন। কখনও কখনও ভাই বোনেরা সকালবেলায় প্রচারে কী কী হয়েছে তা জোরে জোরে বলতে থাকেন আর এতে আমাদের প্রচারের মর্যাদা ক্ষুন্ন হতে পারে ও তা ভাল ফলকে বাধা দিতে পারে। সুতরাং বুদ্ধিপূর্বক চলে প্রকাশকেরা দোকানে গিয়ে অত্যধিক ভীড় করা ও অকারণে কথাবার্তা বলে প্রচারের জন্য ধার্য সময় নষ্ট করাকে এড়াতে পারেন।
১৮ যেখানেই লোকেদের পাওয়া যায় সেখানেই গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে অনেকেই ভাল ফল পেয়েছেন—যেমন রাস্তায়, গাড়ি রাখার জায়গায় বা অন্যান্য যে জায়গাগুলোতে লোকেদের পাওয়া যায়। এই সব জায়গাতেও আমরা ভাল সাক্ষ্য দিতে চাই আর তা শুধু মুখেই নয় কিন্তু অন্যদের জন্য বিবেচনা দেখিয়েও। সব মণ্ডলীর প্রকাশকদের তাদের মণ্ডলীর এলাকার সীমানা কতখানি তা জানা উচিত যাতে করে বিভিন্ন মণ্ডলীর প্রকাশকেরা দোকান বাজার করতে আসা লোকেদের, বাস স্টপ বা স্টেশনে যাওয়ার রাস্তার পথচারীদের বা দোকানের কর্মচারীদের যেমন পেট্রোল পাম্প যা চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে তাদের কাছে গিয়ে তাদের বিরক্ত না করেন। পরিপাটী ও মর্যাদাপূর্ণভাবে পরিচর্যা করার জন্য আমাদের শুধু আমাদের জন্য নিযুক্ত এলাকার মধ্যেই কাজ করা উচিত, যদি কি না অন্য মণ্ডলীর পরিচারক কমিটি কোন বিশেষ ব্যবস্থা না করেন।—২ করিন্থীয় ১০:১৩-১৫ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
১৯ কিছু মণ্ডলীর নিজেদের এলাকার মধ্যে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে জনসাধারণ্যে প্রচার করার সুযোগ রয়েছে আর মণ্ডলী এই জায়গাগুলোকে তাদের প্রচারের এলাকা করে নিয়েছে। আর এলাকার একটা কার্ড প্রকাশকদের বা প্রকাশকদের দলকে দিয়ে দিয়েছে। এই ব্যবস্থার ফলে এলাকাকে ভালভাবে সম্পূর্ণ করা যায় আর একই সময়ে অনেক প্রকাশকের একই জায়গায় কাজ করাকে এড়ানো যায় যা ১ করিন্থীয় ১৪:৪০ পদের নীতির সঙ্গে মিলযুক্ত যেখানে বলা হয়েছে “সকলই শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে করা হউক।”
২০ আমাদের নিজেদের সাজ পোশাক সবসময় মর্যাদাপূর্ণ হওয়া উচিত আর তা যেন আমাদের যিহোবার নাম বহনকারী পরিচারকদের উপযুক্ত করে তোলে। আর আমরা প্রচারে যে জিনিসপত্রগুলো ব্যবহার করি সেগুলোর জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। পুরনো ছেঁড়া ব্যাগ আর পাতার কোণা মোড়া বইপত্র আর ধুলোভর্তি বাইবেল রাজ্যের বার্তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে পারে। কথিত আছে যে আপনার পোশাক পরিচ্ছদ “খুব শীঘ্রই আপনার চারপাশের লোকেদের জানিয়ে দেয় যে আপনি কে আর আপনি কীধরনের ব্যক্তি। আর তাই আমাদের সাজসজ্জা অগোছাল কিংবা এলোমেলো হবে না আবার জাগতিক বা উগ্রও হবে না কিন্তু সবসময় “সুসমাচারের যোগ্যরূপে” হবে।—ফিলি. ১:২৭. ১ তীমথিয় ২:৯, ১০ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
২১ প্রথম করিন্থীয় ৯:২৬ পদে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমি এরূপে দৌড়িতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।” পৌলকে অনুকরণ করে আমরা পরিচর্যায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠা ও ফল নিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ করতে পারি। যিহোবার “পঙ্গপাল বাহিনী” হিসাবে আজকে যখন আমরা প্রচারকাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নিচ্ছি তখন আসুন আমরা আমাদের এলাকার সবার কাছে পরিত্রাণের এই বার্তা নিয়ে যাওয়ার সময় পরিস্থিতিকে বুঝি ও অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাই।