অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪১
যিহোবার “করুণা অসীম”
“সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।”—গীত. ১৪৫:৯.
গান ৩৮ যিহোবার ওপর তোমার ভার অর্পণ করো
সারাংশa
১. একজন করুণাময় ব্যক্তি কেমন হন? ব্যাখ্যা করুন।
একজন করুণাময় ব্যক্তির মন খুব ভালো হয়। তিনি অন্যদের প্রতি সদয় আচরণ করেন এবং সমবেদনা ও উদারতা দেখান। এটা জেনে আমাদের হয়তো প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের বিষয়ে মনে পড়ে যায়, যার গল্প যিশু বলেছিলেন। যদিও সে অন্য দেশে বাস করত, তারপরও সে একজন যিহুদির প্রতি “করুণা” দেখিয়েছিল। এই যিহুদিকে কিছু দস্যু মারধর করেছিল আর এরপর, তাকে আধমরা অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল। সেই শমরীয় যখন সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন আহত যিহুদিকে দেখে “তার গভীর সমবেদনা হল” এবং সে ‘তার প্রতি করুণা দেখাল।’ এ ছাড়া, সে সেই যিহুদির দেখাশোনা করার ব্যবস্থা করেছিল। (লূক ১০:২৯-৩৭) এই দৃষ্টান্ত থেকে আমরা যিহোবার একটা গুণ সম্বন্ধে শিখতে পারি আর সেটা হল করুণা। যিহোবা প্রতিদিন বিভিন্ন উপায়ে আমাদের প্রতি করুণা দেখান।
২. করুণা দেখানোর একটা উপায় কী?
২ করুণা দেখানোর একটা উপায় হল, অন্যদের ভুল ক্ষমা করা। যিহোবাও আমাদের ক্ষমা করে থাকেন। একজন গীতরচক লিখেছিলেন: “তিনি আমাদের প্রতি আমাদের পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই।” (গীত. ১০৩:১০) তবে, কখনো কখনো যিহোবা হয়তো অন্যায়কারী ব্যক্তিকে কড়া শাসন প্রদান করার মাধ্যমেও তার প্রতি করুণা দেখান।
৩. আমরা কোন তিনটে প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব?
৩ এই প্রবন্ধে আমরা বাইবেল থেকে তিনটে প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব: কেন যিহোবা করুণা দেখান? কাউকে কড়া শাসন প্রদান করার মাধ্যমেও কি তার প্রতি করুণা দেখানো সম্ভব? কেন আমাদের অন্যদের প্রতি করুণা দেখানো উচিত?
কেন যিহোবা করুণা দেখান?
৪. কেন যিহোবা লোকদের প্রতি করুণা দেখান?
৪ যিহোবা লোকদের ভালোবাসেন, তাই তিনি তাদের প্রতি করুণা দেখান। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, যিহোবার “করুণা অসীম।” তিনি এটা লিখেছিলেন কারণ ঈশ্বর করুণা দেখিয়ে তাঁর কিছু উপাসককে স্বর্গে বেঁচে থাকার আশা প্রদান করেছেন। (ইফি. ২:৪-৭) কিন্তু, যিহোবা শুধু অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের প্রতিই করুণা দেখান না। দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।”—গীত. ১৪৫:৯.
৫. কীভাবে যিশু জানতে পেরেছিলেন, যিহোবা করুণাময়?
৫ যিহোবা ও যিশু যুগ যুগ ধরে একসঙ্গে স্বর্গে ছিলেন। (হিতো. ৮:৩০, ৩১) যিশু অনেক বার দেখেছিলেন, তাঁর পিতা পাপী ব্যক্তিদের প্রতি করুণা দেখান। (গীত. ৭৮:৩৭-৪২) এভাবে তিনি জানতে পেরেছিলেন, তাঁর পিতা কত করুণাময়! তাই, তিনি যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন তিনি অনেক বার তাঁর পিতার এই গুণের বিষয়ে শিখিয়েছিলেন।
বাবা তার ছেলেকে অপমান করেননি বরং তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)c
৬. যিহোবা যে কত করুণাময়, সেটা বোঝানোর জন্য যিশু কোন দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন?
৬ যিহোবা যে কত করুণাময়, সেটা বোঝানোর জন্য যিশু হারানো ছেলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন। দৃষ্টান্তে ছেলে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় আর “উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে তার সমস্ত কিছু উড়িয়ে” দেয়। (লূক ১৫:১৩) কিন্তু, পরে সে অনুতপ্ত হয় আর বাড়ি ফিরে আসে। সেইসময় তার বাবা কী করেন? যিশু বলেছিলেন, “[ছেলে] দূরে থাকতেই তার বাবা তাকে দেখতে পেলেন এবং তাকে দেখে তার গভীর সমবেদনা হল। তখন তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কোমলভাবে চুম্বন করলেন।” বাবা তাকে কোনোরকম বকাঝকা করেননি কিংবা অপমান করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তার প্রতি করুণা দেখান এবং ক্ষমা করেন। যদিও ছেলে গুরুতর পাপ করেছিল, কিন্তু বাবা তাকে ক্ষমা করে দেন কারণ সে তার ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছিল। যিহোবা সেই করুণাময় বাবার মতো। তিনি সেই লোকদের প্রতি করুণা দেখানোর জন্য প্রস্তুত থাকেন, যারা পাপ করার পর অনুতপ্ত হয়।—লূক ১৫:১৭-২৪.
৭. যিহোবার দেখানো করুণা থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, তিনি প্রজ্ঞাবান?
৭ যিহোবা প্রজ্ঞাবান, তাই তিনি করুণা দেখান। বাইবেলে লেখা রয়েছে: “যে-প্রজ্ঞা স্বর্গ থেকে আসে, তা . . . করুণা এবং উত্তম ফলে পূর্ণ।” (যাকোব ৩:১৭) যিহোবা একজন প্রেমময় পিতার মতো আমাদের প্রতি করুণা দেখান কারণ তিনি জানেন, এতে আমাদেরই ভালো হবে। (গীত. ১০৩:১৩; যিশা. ৪৯:১৫) তাঁর করুণার জন্য অসিদ্ধ মানুষ ভবিষ্যতের এক অপূর্ব প্রত্যাশা লাভ করেছে। এটা থেকে বোঝা যায় যে, যিহোবা কত প্রজ্ঞাবান! তিনি জানেন, কখন করুণা দেখানো উচিত এবং কখন তা দেখানো উচিত নয়। যখন তিনি উপযুক্ত কারণ দেখেন, তখন তিনি করুণা দেখান। কিন্তু, লোকেরা যখন অনুতপ্ত হয় না, তখন তিনি করুণা দেখান না।
৮. কখনো কখনো কোন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি আর কেন?
৮ যখন যিহোবার একজন উপাসক ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে, তখন আমাদের কী করা উচিত? পৌল লিখেছিলেন: “এমন ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করো।” (১ করি. ৫:১১) যে-ব্যক্তি অনুতপ্ত হন না, তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়। এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে ভাই-বোনেরা সুরক্ষিত থাকে আর সবাই বুঝতে পারে যে, আমরা যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি। কিন্তু, কিছু লোক হয়তো মনে করে, কাউকে যখন সমাজচ্যুত করা হয়, তখন আসলে তার প্রতি করুণা দেখানো হয় না। সত্যিই কি তা-ই? আসুন, তা লক্ষ করি।
কড়া শাসনের মধ্যে কি করুণাও থাকতে পারে?
যতক্ষণ মেষ অসুস্থ থাকে, ততক্ষণ তাকে আলাদা রাখতে হয়। কিন্তু, সেই সময়ে মেষপালক তার দেখাশোনা করে থাকেন (৯-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৯-১০. (ক) ইব্রীয় ১২:৫, ৬ পদ অনুযায়ী কেন আমরা বলতে পারি যে, যখন কাউকে সমাজচ্যুত করা হয়, তখন আসলে তার প্রতি করুণা দেখানো হয়? (খ) এটা ব্যাখ্যা করার জন্য একটা উদাহরণ দিন।
৯ যখন সভায় ঘোষণা করা হয়, অমুক ব্যক্তি এখন থেকে “আর যিহোবার সাক্ষি নন,” তখন এটা শুনে আমরা খুব দুঃখ পাই। আমরা হয়তো চিন্তা করি, তাকে কি সমাজচ্যুত করা জরুরি ছিল? আসলে, যখন কাউকে সমাজচ্যুত করা হয়, তখন তার প্রতি করুণা দেখানো হয় আর এটা হল এক প্রেমময় ব্যবস্থা। এ ছাড়া, এটা এক বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ কারণ তা হলেই সেই অন্যায়কারী ব্যক্তি নিজের ভুল বুঝতে পারবেন। (হিতো. ১৩:২৪) অনেক ভাই-বোন স্বীকার করেছে, প্রাচীনেরা যখন তাদের সমাজচ্যুত করেছিলেন, তখন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছিল। তারা নিজেদের আচার-আচরণ পরিবর্তন করেছিল এবং যিহোবার কাছে ফিরে এসেছিল।—পড়ুন, ইব্রীয় ১২:৫, ৬.
১০ একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। একজন মেষপালক দেখেন যে, তার একটি মেষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনি জানেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই মেষ ঠিক হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে অন্য মেষদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু, তিনি এও জানেন, এমনটা করলে সেই অসুস্থ মেষ ছটফট করবে। সেই মেষপালক এখন কী করবেন? তিনি যদি সেই অসুস্থ মেষকে পাল থেকে আলাদা রাখেন, তা হলে সেটার অর্থ কি এই, তিনি একজন নিষ্ঠুর ব্যক্তি? না। মেষপালক বোঝেন, এমনটা করা সেই মেষ ও পাল উভয়ের জন্য ভালো হবে। সেই মেষের যে-রোগ হয়েছে, সেটা অন্য মেষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে না।—তুলনা করুন, লেবীয় পুস্তক ১৩:৩, ৪.
১১. (ক) কেন একজন অন্যায়কারী ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করা প্রয়োজন? (খ) কোন কোন উপায়ে একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তি সাহায্য লাভ করতে পারেন?
১১ যখন একজন খ্রিস্টান পাপ করেন, তখন যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এই অর্থে, তিনি সেই অসুস্থ মেষের মতো হয়ে যান। (যাকোব ৫:১৪) তাই, প্রাচীনদের তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করতে হয়। তা না হলে, তার খারাপ প্রভাব অন্য ভাই-বোনদের উপর পড়তে পারে। যিহোবা সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থা করেছেন কারণ তিনি মণ্ডলীর বিশ্বস্ত ভাই-বোনদের ভালোবাসেন। আর তিনি চান, অন্যায়কারী ব্যক্তি যেন নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং অনুতপ্ত হন। একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তি সভাগুলোতে আসতে পারেন, যেখানে তিনি বাইবেল থেকে শিখতে পারেন এবং নিজের বিশ্বাস পুনরায় দৃঢ় করতে পারেন। তিনি আমাদের প্রকাশনাগুলো পড়তে পারেন আর JW ব্রডকাস্টিং দেখতে পারেন। প্রাচীনেরা মাঝে মাঝে দেখেন, তিনি নিজেকে কতটা পরিবর্তন করেছেন আর যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তাকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।b
১২. কখনো কখনো প্রাচীনদের অন্যায়কারী ব্যক্তির প্রতি কী করতে হয় আর কেন?
১২ মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তিকে তখনই মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়, যখন তিনি কোনো গুরুতর পাপ করেন এবং অনুতপ্ত হন না। প্রাচীনেরা জানেন যে, এটা খুবই গুরুগম্ভীর এক বিষয়। তাই, তারা অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন। তারা জানেন যে, কাউকে শাসন করার জন্য যিহোবা “বিচারানুরূপ শাস্তি” দেন। (যির. ৩০:১১) প্রাচীনেরা সমস্ত ভাই-বোনকে ভালোবাসেন। আর তারা এমন কিছু করতে চান না, যার ফলে যিহোবার সঙ্গে ভাই-বোনদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাক। তাই, কখনো কখনো এই ভালোবাসা ও করুণার কারণে তাদের অন্যায়কারী ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করতে হয়।
১৩. কেন করিন্থের একজন খ্রিস্টানকে সমাজচ্যুত করতে হয়েছিল?
১৩ একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। প্রথম শতাব্দীতে, করিন্থ শহরে একজন খ্রিস্টান তার সৎ মায়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রাখেন। এটা খুবই জঘন্য এক কাজ ছিল। এই পাপ করার পর তিনি কোনো অনুতাপ দেখাননি। প্রেরিত পৌল তার প্রতি কী করেন? পৌল জানতেন, যিহোবা ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি আপন পিতৃভার্য্যার সহিত শয়ন করে, সে আপন পিতার আবরণীয় অনাবৃত করে; তাহাদের দুই জনেরই প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে।” (লেবীয়. ২০:১১) এটা ঠিক যে, পৌল সেই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারতেন না। কিন্তু, তিনি প্রাচীনদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তারা যেন সেই ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করেন। সেই খ্রিস্টানের জঘন্য কাজের ফলে মণ্ডলীর অন্যান্য ব্যক্তির উপর খারাপ প্রভাব পড়ছিল। কিছু ভাই-বোনের এটা মনেই হচ্ছিল না যে, সেই ব্যক্তি কোনো গুরুতর পাপ করেছেন।—১ করি. ৫:১, ২, ১৩.
১৪. কীভাবে পৌল সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তির প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন আর কেন? (২ করিন্থীয় ২:৫-৮, ১১)
১৪ কিছুসময় পর, প্রেরিত পৌল জানতে পারেন, সেই ব্যক্তি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছেন। তিনি তার জীবনে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করেছেন। তাই, পৌল তার প্রতি করুণা দেখান। যদিও সেই ব্যক্তির জন্য মণ্ডলীর অনেক বদনাম হয়েছে, তারপরও পৌল তার প্রতি বেশি কড়া হতে চাননি। তিনি প্রাচীনদের পরামর্শ দেন: “তোমরা . . . তাকে সদয়ভাবে ক্ষমা করো এবং সান্ত্বনা দাও।” কেন তিনি এমনটা করতে বলেছিলেন? পৌল বলেন: “যাতে সে অতিরিক্ত দুঃখিত হয়ে হাল ছেড়ে না দেয়।” পৌল চাননি, সেই ব্যক্তি নিজেকে দোষী বলে মনে করে এতটা ভেঙে পড়েন যে, তিনি ক্ষমা লাভ করার আশাই ছেড়ে দেন।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ২:৫-৮, ১১.
১৫. কখন প্রাচীনেরা কড়া হন আর কখন করুণা দেখান?
১৫ প্রাচীনেরা যিহোবার মতো অন্যদের প্রতি করুণা দেখান। যখন প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন তারা অন্যায়কারী ব্যক্তির প্রতি কড়া হন। কিন্তু, যখন সম্ভব হয়, তখন প্রাচীনেরা তার প্রতি করুণা দেখান। প্রাচীনেরা যদি অন্যায়কারী ব্যক্তিকে একেবারেই শাসন না করেন, তা হলে তারা তার প্রতি করুণা দেখাচ্ছেন না। এর পরিবর্তে, তারা তাকে আরও ভুল কাজ করার জন্য প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কিন্তু, শুধু কি প্রাচীনদেরই অন্যদের প্রতি করুণা দেখানো উচিত?
কেন আমাদের অন্যদের প্রতি করুণা দেখানো উচিত?
১৬. হিতোপদেশ ২১:১৩ পদ অনুযায়ী যারা অন্যদের প্রতি করুণা দেখায় না, তাদের প্রতি যিহোবা কী করেন?
১৬ সমস্ত খ্রিস্টানের যিহোবার মতো অন্যদের প্রতি করুণা দেখানো উচিত। এর একটা কারণ হল, আমরা যদি এমনটা না করি, তা হলে যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনবেন না। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২১:১৩.) আর আমরা এমনটা কখনোই চাইব না। তাই, আমাদের কঠোর হওয়া উচিত নয়। যখন কোনো খ্রিস্টান কষ্টের মধ্যে থাকে, তখন তার দিকে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আমাদের এও মনে রাখা উচিত: “যে-ব্যক্তি করুণা দেখায় না, বিচারের সময় তাকেও করুণা দেখানো হবে না।” (যাকোব ২:১৩) আমরা যদি মনে রাখি, আমাদের কতটা করুণার প্রয়োজন রয়েছে, তা হলে আমরাও অন্যদের প্রতি করুণা দেখাব। আমাদের বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের প্রতি করুণা দেখানো উচিত, যারা অনুতপ্ত হয়ে মণ্ডলীতে ফিরে আসে।
১৭. কীভাবে দায়ূদ শৌলের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন?
১৭ বাইবেলের কিছু উদাহরণ থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আমাদের কঠোর হওয়ার পরিবর্তে করুণা দেখানো উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, রাজা দায়ূদের বিষয়ে চিন্তা করুন। দায়ূদ প্রায়ই অন্যদের প্রতি করুণা দেখাতেন। যেমন, রাজা শৌল অনেক বার দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন, তা সত্ত্বেও দায়ূদ তার প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। দায়ূদ কখনো শৌলের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা চিন্তা করেননি।—১ শমূ. ২৪:৯-১২, ১৮, ১৯.
১৮-১৯. দায়ূদ কখন কখন করুণা দেখাননি?
১৮ কিন্তু, দায়ূদ সবসময় করুণা দেখাননি। একবার, এমন হয়েছিল যে, নাবল দায়ূদকে অপমান করেছিলেন আর তাকে ও তার লোকদের খাবার দিতে অস্বীকার করেছিলেন। দায়ূদ খুব রেগে গিয়েছিলেন আর নাবল ও তার পরিবারের সমস্ত পুরুষকে হত্যা করার জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, অবীগল তার স্বামী নাবলের মতো কঠোর ছিলেন না। তিনি দ্রুত দায়ূদ ও তার লোকদের জন্য খাবার পাঠিয়েছিলেন। এই কারণে দায়ূদ নাবল ও তার লোকদের হত্যা করেননি।—১ শমূ. ২৫:৯-২২, ৩২-৩৫.
১৯ আরেকটা ঘটনার উপর মনোযোগ দিন। দায়ূদ যখন খুবই গুরুতর পাপ করেছিলেন, তখন তার ভুল বুঝতে সাহায্য করার জন্য ভাববাদী নাথন তাকে একজন ধনী ব্যক্তির একটা গল্প শুনিয়েছিলেন। সেই ধনী ব্যক্তি একজন দরিদ্র ব্যক্তির একমাত্র মেষ চুরি করেছিল। এটা শুনে দায়ূদ খুব রেগে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যে ব্যক্তি সেই কর্ম্ম করিয়াছে, সে মৃত্যুর সন্তান।” (২ শমূ. ১২:১-৬) দায়ূদ জানতেন যে, মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী একজন চোর যদি একটি মেষ চুরি করে, তা হলে এর বিনিময়ে তাকে চারটি মেষ ফিরিয়ে দিতে হবে। (যাত্রা. ২২:১) তবে, সেই চোরকে কখনো মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত না। যদিও সেই ধনী ব্যক্তি কোনো গুরুতর পাপ করেনি, তা সত্ত্বেও দায়ূদ তাকে কঠোর শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন। দায়ূদ সেই ধনী ব্যক্তির চেয়ে আরও বড়ো বড়ো অপরাধ করেছিলেন, তা সত্ত্বেও যিহোবা তার প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।—২ শমূ. ১২:৭-১৩.
রাজা দায়ূদ নাথনের বলা গল্পের সেই ধনী ব্যক্তির প্রতি করুণা দেখাননি (১৯-২০ অনুচ্ছেদ দেখুন)d
২০. দায়ূদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
২০ যদিও দায়ূদ সবার সঙ্গে ভালোভাবে আচরণ করতেন, কিন্তু তিনি দু-বার করুণা দেখানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিলেন। একবার, তিনি খুব রেগে গিয়েছিলেন এবং নাবল ও তার লোকদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন। আরেক বার, তিনি সেই চোরকে কঠোর শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন, যে মেষ চুরি করেছিল। চিন্তা করে দেখুন, দায়ূদের অনুভূতি কেমন ছিল। তিনি ইতিমধ্যে পাপ করেছিলেন এবং তার বিবেক তাকে দংশন করছিল। এটা থেকে বোঝা যায় যে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যখন ঠিক থাকে না, তখন আমরা কঠোর হয়ে যাই আর করুণা দেখানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হই। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা অন্যদের বিচার কোরো না, যাতে তোমরা বিচারিত না হও; কারণ তোমরা যে-বিচারে বিচার করছ, তোমাদেরও সেভাবে বিচার করা হবে।” (মথি ৭:১, ২) তাই আসুন, আমরা কঠোর না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই এবং যিহোবাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করি, যাঁর “করুণা অসীম।”
২১-২২. কোন কোন উপায়ে আমরা অন্যদের প্রতি করুণা দেখাতে পারি?
২১ করুণা দেখানোর অর্থ শুধু দুঃখ প্রকাশ করাই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করাও জড়িত। আমরা দেখতে পারি যে, আমাদের পরিবারে, মণ্ডলীতে এবং আশেপাশে কার সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। আর তাকে আমরা সাহায্য করতে পারি। যেমন, যারা কষ্টের মধ্যে রয়েছে, আমরা তাদের সান্ত্বনা দিতে পারি। অন্যদের জন্য রান্না করতে পারি কিংবা অন্যান্য কাজও করতে পারি। একজন খ্রিস্টান যদি অনুতপ্ত হয়ে মণ্ডলীতে ফিরে আসেন, তা হলে তার সঙ্গে আমরা সময় কাটাতে পারি এবং তাকে উৎসাহিত করতে পারি। লোকদের প্রতি করুণা দেখানোর একটা চমৎকার উপায় হল, সুসমাচার প্রচার করা।—ইয়োব ২৯:১২, ১৩; রোমীয় ১০:১৪, ১৫; যাকোব ১:২৭.
২২ আমরা যদি আমাদের আশেপাশে মনোযোগ দিই, তা হলে আমরা করুণা দেখানোর অনেক সুযোগ পাব। আমরা যখন লোকদের প্রতি করুণা দেখাব, তখন আমরা আমাদের পিতা যিহোবাকে খুশি করব, যাঁর “করুণা অসীম।”
গান ১৩ ধন্যবাদের এক প্রার্থনা
a যিহোবার মধ্যে অপূর্ব গুণাবলি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটা হল করুণা। যিহোবার মতো আমাদেরও অন্যদের প্রতি করুণা দেখানো উচিত। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, যিহোবা কেন করুণা দেখান, যখন তিনি কাউকে শাসন করেন, তখন কীভাবে তাঁর করুণা প্রকাশ পায় আর আমরা কীভাবে এই গুণ অনুকরণ করতে পারি।
b মণ্ডলীতে ফিরে আসার পর, একজন ব্যক্তি যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক কীভাবে দৃঢ় করতে পারেন আর এই বিষয়ে প্রাচীনেরা তাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন, তা জানার জন্য এই সংখ্যার “যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তুলুন” প্রবন্ধটা দেখুন।
c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: বাড়ির ছাদ থেকে বাবা তার হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে আসতে দেখছেন আর তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য দৌড়ে যাচ্ছেন।
d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: রাজা দায়ূদের বিবেক তাকে দংশন করছে। তাই, তিনি রেগে গিয়ে নাথনকে বলছেন, সেই ধনী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।