যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষমতা মানুষের নেই
যেভাবে যুদ্ধ ও দৌরাত্ম্য শেষ হবে
বাইবেল আমাদের জানায়, কোনো মানুষ নয় বরং ঈশ্বর ‘সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।’—গীতসংহিতা ৪৬:৯, NW.
ঈশ্বর মানবসরকারকে সরিয়ে দেবেন
ঈশ্বর যে-যুদ্ধের মাধ্যমে মানবসরকারকে ধ্বংস করবেন, সেটাকে বাইবেল আরমাগিদোন বলে উল্লেখ করে।a (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৬) সেই সময়ে, ‘পুরো পৃথিবীর রাজারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধের জন্য একত্রিত হবে।’ (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪) ঈশ্বর আরমাগিদোনের মাধ্যমেই সমস্ত যুদ্ধ শেষ করবেন।
ঈশ্বর মানবসরকারের জায়গায় তাঁর রাজ্য বা সরকার নিয়ে আসবেন আর তা স্বর্গ থেকে পৃথিবীর উপর চিরকাল ধরে শাসন করবে। (দানিয়েল ২:৪৪) ঈশ্বর এই রাজ্যের রাজা হিসেবে তাঁর পুত্র, যিশু খ্রিস্টকে বাছাই করেছেন। (যিশাইয় ৯:৬, ৭; মথি ২৮:১৮) এই রাজ্যেরb জন্যই যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (মথি ৬:৯, ১০) যিশু যখন রাজত্ব করবেন, তখন সারা পৃথিবীতে একটাই সরকার থাকবে আর সমস্ত লোক সেই সরকারের অধীনে একতাবদ্ধ হবে।
মানবশাসকরা যেমন নিজেদের স্বার্থের জন্য তাদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে, যিশু তেমনটা করবেন না। যিশু যেহেতু সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখেন, তাই একজন ব্যক্তিকে তার জাতি, দেশ কিংবা সামাজিক পটভূমি নিয়ে ভয় পেতে হবে না কারণ সেখানে কাউকেই নীচু চোখে দেখা হবে না। (যিশাইয় ১১:৩, ৪) মানুষকে নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে না। কেন? কারণ যিশু প্রত্যেকটা মানুষের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করবেন। “যে-গরিব ব্যক্তিরা সাহায্য চেয়ে কাঁদে, তিনি তাদের উদ্ধার করবেন, দুঃখী লোকদের ও সেইসঙ্গে যাদের সাহায্য করার মতো কেউ নেই, তিনি তাদের উদ্ধার করবেন। . . . তিনি তাদের অত্যাচার ও দৌরাত্ম্য থেকে উদ্ধার করবেন।”—গীতসংহিতা ৭২:১২-১৪, NW.
ঈশ্বরের রাজ্য যখন আসবে, তখন পৃথিবী থেকে সমস্ত ধরনের ধ্বংসাত্মক অস্ত্র সরিয়ে দেওয়া হবে। (মীখা ৪:৩) এ ছাড়া, সেই সমস্ত দুষ্ট লোকদেরও সরিয়ে দেওয়া হবে, যারা যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় না অথবা অন্যদের শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটায়। (গীতসংহিতা ৩৭:৯, ১০) প্রত্যেক পুরুষ, নারী ও শিশু সুরক্ষিত থাকবে, তা তারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গাতেই বসবাস করুক না কেন।—যিহিষ্কেল ৩৪:২৮.
যখন ঈশ্বরের সরকার শাসন করবে, তখন সবাই একটা মনোরম পরিবেশে বসবাস করবে। এই সরকার দরিদ্রতা, খাদ্যের অভাব এবং ঘরবাড়ি না থাকার মতো সমস্যাগুলো দূর করবে, যেগুলোর জন্য সাধারণত মানুষ লড়াই-ঝগড়া করে থাকে। প্রত্যেকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে পারবে এবং তাদের কাছে বসবাস করার জন্য আরামদায়ক ঘরবাড়িও থাকবে।—গীতসংহিতা ৭২:১৬; যিশাইয় ৬৫:২১-২৩.
ঈশ্বরের রাজ্য যখন আসবে, তখন পৃথিবীতে যুদ্ধের ফলে যে-সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা হবে। শুধুমাত্র শারীরিক আঘাতই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে যুদ্ধের সময় ঘটা নিষ্ঠুরতার জন্য মানুষ যে-মানসিক ও আবেগগত কষ্ট পেয়েছে, সেগুলোও মুছে ফেলা হবে। এমনকী যারা যুদ্ধে মারা গিয়েছে, তাদের আবার জীবিত করা হবে। (যিশাইয় ২৫:৮; ২৬:১৯; ৩৫:৫, ৬) পরিবারের সদস্যরা পুনরায় মিলিত হবে এবং যুদ্ধের যেকোনো খারাপ স্মৃতি মুছে ফেলা হবে কারণ ‘আগের বিষয়গুলো শেষ হয়ে যাবে।’—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
ঈশ্বর পাপকে দূর করবেন
ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে সমস্ত লোক একমাত্র সত্য ঈশ্বর যিহোবাকেc উপাসনা করবে, যিনি “প্রেম ও শান্তির ঈশ্বর।” (২ করিন্থীয় ১৩:১১) লোকেরা শিখবে যে, কীভাবে একসঙ্গে শান্তিতে থাকা যায়। (যিশাইয় ২:৩, ৪; ১১:৯) যারা ঈশ্বরের বাধ্য থাকবে, তারা পাপের সমস্ত প্রভাব থেকে মুক্ত হবে।—রোমীয় ৮:২০, ২১.
শয়তান ও তার মন্দ দূতদের ঈশ্বর ধ্বংস করবেন
ঈশ্বরের রাজ্য শয়তান ও তার মন্দ দূতদের ধ্বংস করে দেবে, যারা আড়াল থেকে লোকদের যুদ্ধ করতে পরিচালিত করে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩, ১০) তাদের মন্দ প্রভাব না থাকার ফলে “সব জায়গায় শান্তি থাকবে।”—গীতসংহিতা ৭২:৭, NW.
আপনারা এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারেন, ঈশ্বর যুদ্ধ ও দৌরাত্ম্য শেষ করার বিষয়ে যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ হবে। যুদ্ধ শেষ করার ক্ষমতা ও ইচ্ছা, দুটোই তাঁর রয়েছে।
যুদ্ধ ও দৌরাত্ম্য শেষ করার জন্য যে-প্রজ্ঞা ও শক্তি দরকার, সেগুলো ঈশ্বরের রয়েছে। (ইয়োব ৯:৪) তাঁর পক্ষে কোনো কাজ করাই অসম্ভব নয়।—ইয়োব ৪২:২.
ঈশ্বর চান না, লোকেরা কষ্ট পাক। (যিশাইয় ৬৩:৯) এ ছাড়া, “তিনি এমন লোকদের ঘৃণা করেন, যারা হিংসাত্মক কাজ ভালোবাসে।”—গীতসংহিতা ১১:৫. NW.
ঈশ্বর কখনো মিথ্যা কথা বলেন না; তিনি সবসময় তাঁর কথা রাখেন।—যিশাইয় ৫৫:১০, ১১; তীত ১:২.
ঈশ্বর খুব তাড়াতাড়ি প্রকৃত শান্তি নিয়ে আসবেন আর সেই শান্তি চিরকাল ধরে থাকবে।
ঈশ্বর শীঘ্রই যুদ্ধ নির্মূল করবেন
a jw.org ওয়েবসাইটে গিয়ে “আরমাগিদোনের যুদ্ধ কী?” শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ুন।
b jw.org ওয়েবসাইটে গিয়ে ঈশ্বরের রাজ্য কী? শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
c যিহোবা হল ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম।—গীতসংহিতা ৮৩:১৮.