বাইবেল পারমাণবিক যুদ্ধ সম্বন্ধে কী বলে?
জগতের শক্তিশালী দেশগুলো যতই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র বাড়াবে, ততই সারা পৃথিবীতে পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক বেড়ে চলবে। তাই, লোকেরা স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত যে, অতিরিক্ত পরিমাণে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কারণে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকী অনেকে এই বিষয়েও ভয় পাচ্ছে যে, কোনো দেশ যদি একটা ছোটো পারমাণবিক বোমা প্রয়োগ করে, তা হলে বিশাল আকারে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, যেটা সারা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবে। বুলেটিন অভ্ দি অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্ট সংস্থা জানায়, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন “অনবরত পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে।”
পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা কি সত্যিই আছে? যদি থাকে, তা হলে আমাদের পৃথিবী কি রক্ষা পাবে? আর কীভাবে আমরা এই সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি? বাইবেল এই বিষয়ে কী বলে?
এই প্রবন্ধে রয়েছে
বাইবেলে কি আগে থেকেই বলা রয়েছে যে, পারমাণবিক যুদ্ধের মাধ্যমে আরমাগিদোন শুরু হবে?
বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বইয়ে কি পারমাণবিক যুদ্ধ সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ আছে?
বাইবেলে কি এমনটা বলা রয়েছে যে, পারমাণবিক যুদ্ধ হবে?
বাইবেলে নির্দিষ্টভাবে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধের কথা বলা নেই। কিন্তু, বাইবেলে এমন আচার-আচরণ এবং ঘটনা সম্বন্ধে বলা রয়েছে, যেগুলোর ফলে পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় থাকা অস্বাভাবিক নয়।
নীচে দেওয়া বাইবেলের পদে যা বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে আজ সারা পৃথিবীতে ঘটে চলা ঘটনাগুলো তুলনা করে দেখুন:
বাইবেলের পদ: যিশুর শিষ্যেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আপনার উপস্থিতির এবং এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ের চিহ্ন কী?” উত্তরে যিশু বলেছিলেন:“এক জাতি আরেক জাতিকে এবং এক রাজ্য আরেক রাজ্যকে আক্রমণ করবে আর একের-পর-এক স্থানে খাদ্যের অভাব দেখা দেবে এবং ভূমিকম্প হবে।”—মথি ২৪:৩, ৭.
পৃথিবীর ঘটনাগুলো: প্রায়ই বিভিন্ন দেশ নিজেদের মধ্যে অস্ত্র নিয়ে লড়াই করছে আর তাদের মধ্যে এমন দেশগুলোও আছে, যাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে অথবা যারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথিবীতে দৌরাত্ম্য আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে: আগের চেয়ে আরও বেশি করে যুদ্ধ ও লড়াই হচ্ছে।”—দি আর্মড কলফ্লিক্ট লোকেশন এন্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট।
বাইবেলের পদ: “শেষকালে দক্ষিণ দেশের রাজা [উত্তর দেশের রাজাকে] ঢুসাইবে।”—দানিয়েল ১১:৪০.
পৃথিবীর ঘটনাগুলো: বিরোধী দেশ এবং তাদের পক্ষে থাকা দেশগুলো একে অন্যকে ঢুসাচ্ছে অর্থাৎ একে অন্যের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক যেমনটা বাইবেলে আগে থেকে বলা ছিল। যদিও আজ সেই দেশগুলো, যাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, তারা হয়তো সরাসরি একে অন্যকে আক্রমণ করছে না, কিন্তু তারা ক্রমশই আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে চলেছে।
“বিগত দশ বছর ধরে আমরা লক্ষ করছি, বিভিন্ন দেশ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করছে আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রধান শক্তিশালী দেশগুলো সেই যুদ্ধে পরোক্ষভাবে একে অন্যের বিপরীত দেশগুলোর সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে।”—দা উপসালা কনফ্লিক্ট ডেটা প্রোগ্রাম।
বাইবেলের পদ: “শেষকালে পরিস্থিতি কঠিন ও বিপদজনক হবে। কারণ লোকেরা … আপোশ করতে চাইবে না, অপবাদ দেবে, সংযমের অভাব দেখাবে, হিংস্র হবে।”—২ তীমথিয় ৩:১-৩.
পৃথিবীর ঘটনাগুলো: আজ বেশিরভাগ লোকদের মতোই জগতের নেতারাও একে অন্যের সঙ্গে আপোশ করতে চায় না। শান্তির পথ বেছে না নিয়ে তারা হুমকি দেখিয়ে কিংবা জোর খাটিয়ে তাদের মধ্যে থাকা সমস্যার সমাধান করতে চায়। আর এই ধরনের পথ বেছে নেওয়ার ফলে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
“একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করার পথ বেছে না নিলে আমরা এমন যুদ্ধগুলো দেখতে পাব, যেগুলো এখনকার চেয়ে আরও বেশি ধ্বংসাত্মক হবে।”—এস. স্যারন এবং জে. হারম্যান, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।
ঈশ্বর কি পারমাণবিক যুদ্ধের অনুমতি দেবেন?
বাইবেল এই বিষয়ে কিছু বলে না। কিন্তু এটি বলে, আমাদের দিনে “ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর দৃশ্য” অর্থাৎ ভয়াবহ ঘটনাগুলো ঘটবে। (লূক ২১:১১) এই ধরনের ঘটনার একটা উদাহরণ হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আণবিক বোমার ব্যবহার। বাইবেল ব্যাখ্যা করে, কেন ঈশ্বর যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছেন। এই বিষয়ে আরও জানার জন্য কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন? নামক ভিডিওটা দেখুন।
পৃথিবী কি রক্ষা পাবে?
অবশ্যই। এমনকী মানুষ যদি আবারও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তা সত্ত্বেও ঈশ্বর এমন পরিস্থিতি কখনোই আসতে দেবেন না, যেটার ফলে পৃথিবী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বাইবেল এও বলে, পৃথিবী যে শুধুমাত্র ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে, তা-ই নয়, কিন্তু এখানে মানুষ চিরকাল বসবাস করতে পারবে।
কেউ কেউ মনে করে, ভবিষ্যতে পৃথিবীতে অল্প কিছু লোকই থাকবে। আর তখন তাদের এমন এক পরিবেশে খুব কষ্ট করে বসবাস করতে হবে, যেটা পারমাণবিক যুদ্ধের কারণে বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাইবেল আশ্বাস দেয়, যুদ্ধের ফলে পৃথিবীর যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হয়ে যাবে।
ঈশ্বর চান, আমরা যেন সুন্দর পৃথিবীতে আনন্দের সঙ্গে থাকতে পারি
আমাদের সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যেটা নিজেই নিজেকে যেকোনো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে শেষপর্যন্ত, ঈশ্বর এই পৃথিবীকে আবার গড়ে তোলার জন্য তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করবেন; এটা আবারও মানুষের বসবাসের জন্য এক চমৎকার জায়গা হয়ে উঠবে।—গীতসংহিতা ৩৭:১১, ২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৫.
কীভাবে আপনি পারমাণবিক যুদ্ধ এবং এর পরিণতি সম্বন্ধে যে-আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে, সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করবেন?
কেউ কেউ পারমাণবিক যুদ্ধ এবং এর পরিণতি নিয়ে খুবই চিন্তিত। বাইবেলের প্রতিজ্ঞা এবং পরামর্শ এই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে, যাতে তারা কিছুটা হলেও এই ভীতি কাটিয়ে ওঠে। কিন্তু কীভাবে?
বাইবেল বর্ণনা করে, এই পৃথিবী এবং যারা এখানে বসবাস করে, তাদের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। এই আশা “আমাদের জীবনের জন্য এক নোঙরের মতো,” যেটা আমাদের উদ্বিগ্নতা কমিয়ে দেয়। (ইব্রীয় ৬:১৯) এ ছাড়া, ভবিষ্যতে কী ঘটবে, সেই নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে বরং প্রতিদিন কী ঘটছে, সেটার উপর আমরা নজর রাখতে পারি। এভাবে আমরা আমাদের উদ্বিগ্নতা কমাতে পারি। যিশু যেমনটা বলেছিলেন, “দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট।”—মথি ৬:৩৪.
এ ছাড়াও, আমরা যেন নিজেদের যত্ন নিই, যাতে আমরা স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে পারি এবং শান্ত থাকতে পারি। এর জন্য আমাদের সেইসমস্ত পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে হবে, যেগুলো অযথা আমাদের উদ্বিগ্নতা বাড়িয়ে তোলে, যেমন সাম্প্রতিক পারমাণবিক বিষয়গুলোর উপর আলোচনা এবং এর ফলাফল কী হতে পারে, তা নিয়ে মতামত প্রকাশ। তবে এমনটা নয় যে, আমরা এই বিষয়ে কোনো খবরই রাখব না। এর পরিবর্তে, আমরা সেই সমস্ত ঘটনা সম্বন্ধে চিন্তা করা এড়িয়ে চলব, যেগুলোর উপর আমাদের কোনো হাত নেই এবং যেগুলো হয়তো কখনোই ঘটবে না।
আপনার জীবনের ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিন; এভাবে আপনি খারাপ খবরগুলো থেকে কিছুটা হলেও নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারবেন।
বাইবেল আরও ভালো ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এক নিশ্চিত আশা দেয়
আপনি যদি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে আরও বেশি করে জানতে থাকেন, তা হলে তা আপনাকে আশা, আনন্দ এবং মনের শান্তি দেবে।
বাইবেলে কি আগে থেকেই বলা রয়েছে যে, পারমাণবিক যুদ্ধের মাধ্যমে আরমাগিদোন শুরু হবে?
কেউ কেউ মনে করে, আরমাগিদোন হল পারমাণবিক যুদ্ধ। তাদের বিশ্বাস, এই ধরনের যুদ্ধের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে।
কিন্তু বাইবেল আমাদের জানায়, “হর্মাগিদোন” বা আরমাগিদোন হল “পুরো পৃথিবীর রাজাদের” অর্থাৎ মানব সরকারের সঙ্গে ঈশ্বরের যুদ্ধ।a (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) পারমাণবিক যুদ্ধ হলে পৃথিবী আর এর মধ্যে থাকা সমস্ত মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু আরমাগিদোন এই ধরনের কোনো যুদ্ধ নয়। আরমাগিদোনের সময় ঈশ্বর শুধুমাত্র দুষ্ট লোকদের ধ্বংস করবেন, যেটার ফলে প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসবে।—গীতসংহিতা ৩৭:৯, ১০; যিশাইয় ৩২:১৭, ১৮; মথি ৬:১০.
যুদ্ধের সমাধান সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?
যিহোবাb ঈশ্বর যুদ্ধ এবং এর অস্ত্রগুলো ধ্বংস করে দেবেন আর এভাবে তিনি বিভিন্ন জাতির উপর তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তিনি তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে তা করবেন আর এই রাজ্য হল একটা স্বর্গীয় সরকার, যেটা সমস্ত পৃথিবীর উপর শাসন করবে।—দানিয়েল ২:৪৪.
ঈশ্বরের রাজ্য লোকদের শেখাবে, কীভাবে তারা শান্তি ও একতায় বসবাস করতে পারে। যেহেতু একটাই সরকার পৃথিবীকে শাসন করবে, তাই কারো মধ্যে মতভেদ থাকবে না; লোকেরা এমনকী আর কখনো শিখবে না যে, কী করে যুদ্ধ করতে হয়। (মীখা ৪:১-৩) এর ফলাফল কী হবে? “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—মীখা ৪:৪.
a “আরমাগিদোনের যুদ্ধ কী?” নামক প্রবন্ধটা দেখুন।
b ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম হল যিহোবা। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) যিহোবা কে? নামক প্রবন্ধটা দেখুন।