যিহোবাকে দোষ দেওয়া যায় না
“পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন। কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।”—গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪.
১, ২. অব্রাহাম কে ছিলেন, এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র লোট কিভাবে দুষ্ট সদোম নগরে বাস করতে শুরু করেন?
আমাদের ভুলের জন্য যে দুঃখকষ্ট আমরা ভোগ করি তার জন্য যিহোবা দায়ী নন। এই সম্পর্কে প্রায় ৩,৯০০ বছর আগে কী ঘটেছিল তা বিবেচনা করুন। ঈশ্বরের মিত্র অব্রাহাম (অব্রাম) এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র লোট অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছিলেন। (যাকোব ২:২৩) বাস্তবিক তাদের বিষয়সম্পত্তি এবং পশুপাল এত বড় হয়েছিল যে তাদের পক্ষে ‘সেই দেশে একত্র বাস সম্পোষ্য হইল না।’ উপরন্তু, দুইজনের পশুপালকদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়। (আদিপুস্তক ১৩:৫-৭) এই সম্বন্ধে কী করা যেতে পারে?
২ কলহ শেষ করতে, অব্রাহাম উল্লেখ করেন যে তারা পৃথকভাবে বাস করবেন, আর তিনি লোটকে প্রথমে বেছে নিতে দিলেন। যদিও অব্রাহাম বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন এবং লোটের পক্ষে তাঁকে সর্বোত্তম জায়গাটি নিতে দেওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু লোট সবচেয়ে ভাল জায়গাটি—যর্দ্দন নদীর নিম্নভাগের সম্পূর্ণ উর্বর জমিটি বেছে নেন। বাহ্যিক দৃশ্য প্রবঞ্চক হয়েছিল, কারণ কাছেই নৈতিকভাবে অধঃপতিত সদোম ও ঘমোরা শহর অবস্থিত ছিল। লোট এবং তার পরিবার সদোম নগরে বসবাস শুরু করেন, আর এইজন্য তাদের আত্মিকতা বিপন্ন হয়। উপরন্তু, যখন রাজা কদর্লায়োমর এবং তার সহায়করা সদোমের শাসককে পরাস্ত করেন, তখন তাদের বন্দী করা হয়। অব্রাহাম এবং তাঁর লোকেরা তাদের উদ্ধার করেন, কিন্তু লোট ও তার পরিবার সদোমে ফিরে যান।—আদিপুস্তক ১৩:৮-১৩; ১৪:৪-১৬.
৩, ৪. যখন ঈশ্বর সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করেন, তখন লোট ও তার পরিবারের কী হয়েছিল?
৩ সদোম ও ঘমোরার যৌন-বিকৃতি এবং নৈতিক অধঃপতনের জন্য, যিহোবা এই শহরগুলিকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। করুণাপূর্বক তিনি দুইজন স্বর্গদূতকে পাঠান লোট, তার স্ত্রী, এবং তাদের দুই কন্যাকে সদোমের বাইরে নিয়ে যেতে। তাদের পিছনে না ফিরে দেখা উচিৎ ছিল, কিন্তু লোটের স্ত্রী দেখেছিলেন, হয়ত যে বিষয়সম্পত্তি তারা ছেড়ে এসেছিলেন তার প্রতি আসক্তিবশত। সেই সময়ে, তিনি একটি লবণস্তে পরিণত হন।—আদিপুস্তক ১৯:১-২৬.
৪ লোট এবং তার মেয়েদের কত ক্ষতি সহ্য করতে হয়! যাদের সঙ্গে তার মেয়েদের বিবাহ হওয়ার কথা ছিল, তাদের ছেড়ে আসতে হয়। লোট এখন তার স্ত্রীকে এবং তার ধনসম্পদ হারিয়েছেন। এমনকি তাকে শেষপর্যন্ত তার মেয়েদের সাথে একটি গুহায় বাস করতে হয়। (আদিপুস্তক ১৯:৩০-৩৮) যা তার মনে হয়েছিল খুব ভাল এখন তা ঠিক তার বিপরীতই হয়েছে। যদিও তিনি স্পষ্টত কিছু গুরুতর ভুল করেছিলেন, কিন্তু পরে তাকে “ধার্মিক লোট” বলা হয়েছে। (২ পিতর ২:৭, ৮) আর অবশ্যই লোটের ভুলের জন্য যিহোবা ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া যায় না।
“ভ্রান্তির কার্য্যসকল কে বুঝিতে পারে?”
৫. ভ্রান্তি এবং দুঃসাহস সম্বন্ধে দায়ূদের মনোভাব কী ছিল?
৫ অসিদ্ধ এবং পাপপ্রবণ হওয়ার জন্য আমরা সকলেই ভুল করে থাকি। (রোমীয় ৫:১২; যাকোব ৩:২) লোটের মত আমরা বাহ্যিক দৃশ্য দেখে ভ্রান্ত হতে পারি এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি। সেই জন্য, গীতরচক দায়ূদ বিনতি করেছিলেন: “ভ্রান্তির কার্য্য সকল কে বুঝিতে পারে? তুমি গুপ্ত দোষ হইতে আমাকে পরিষ্কার কর। দুঃসাহসজনিত [পাপ] হইতেও নিজ দাসকে পৃথক্ রাখ, সেই সকল আমার উপরে কর্ত্তৃত্ব না করুক; তখন আমি সিদ্ধ এবং মহাপাতক হইতে শুচি হইব।” (গীতসংহিতা ১৯:১২, ১৩) দায়ূদ জানতেন যে তিনি এমন পাপ করে ফেলতে পারতেন যে সম্বন্ধে তিনি হয়ত সচেতনও ছিলেন না। সুতরাং, যে পাপ এমনকি তাঁর কাছেও গুপ্ত ছিল সেই সমস্ত থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিনি প্রার্থনা করেছিলেন। যখন তাঁর অসিদ্ধ দেহ তাঁকে ভুল পথ বেছে নিতে প্ররোচিত করার জন্য তিনি গুরুতর পাপ করেন, তখন তিনি যিহোবার সাহায্য পেতে অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ থেকে ঈশ্বর যেন তাঁকে বাধা দেন। দায়ূদ চাননি যে ঔদ্ধত্য যেন তাঁর স্বভাব হয়ে দাঁড়ায়। বরং, তিনি চেয়েছিলেন যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি তাঁর ভক্তি সম্পূর্ণ হোক।
৬. গীতসংহিতা ১০৩:১০-১৪ পদ থেকে কী সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে?
৬ যিহোবার বর্তমান-কালের উৎসর্গীকৃত সেবক হিসাবে, আমরাও অসিদ্ধ আর সেই জন্য ভুল করে থাকি। উদাহরণস্বরূপ, লোটের মত, আমাদের থাকার জায়গা সম্বন্ধে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি। হয়ত ঈশ্বরের প্রতি পবিত্র পরিচর্য্যা বাড়িয়ে তুলবার কোন সুযোগকে আমরা হাতছাড়া করি। যদিও যিহোবা এই সমস্ত ভুল লক্ষ্য করেন, যাদের হৃদয় ধার্মিকতা-প্রবণ তিনি তাদের সকলকে জানেন। যদিও আমরা গুরুতর পাপকাজ করি কিন্তু অনুতপ্ত হই, যিহোবা ক্ষমা করেন, আমাদের সাহায্য করেন এবং আমাদের এখনও ঈশ্বর-নিষ্ঠ ব্যক্তি হিসাবে দেখেন। “তিনি আমাদের প্রতি আমাদের পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই, আমাদের অধর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল আমাদিগকে দেন নাই,” দায়ূদ ঘোষণা করেছিলেন। “কারণ পৃথিবীর উপরে আকাশমন্ডল যত উচ্চ, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে তাঁহার দয়া তত মহৎ। পশ্চিম দিক্ হইতে পূর্ব্ব দিক্ যেমন দূরবর্ত্তী, তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনই দূরবর্ত্তী করিয়াছেন। পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন। কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (গীতসংহিতা ১০৩:১০-১৪) আমাদের করুণাময় স্বর্গীয় পিতা হয়ত আমাদের ভুল সংশোধন করতে অথবা তাঁর প্রশংসার্থে তাঁর প্রতি পবিত্র পরিচর্য্যা বৃদ্ধি করতে আমাদের আরেকটি সুযোগ দিতে পারেন।
ঈশ্বরকে দোষ দেওয়ার ভুল
৭. কেন আমরা দুঃসময়ের মধ্যে পড়ি?
৭ যখন কোনকিছু ভুল হয়, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হল কাউকে অথবা কোনকিছুকে, যা ঘটেছে তার জন্য দোষ দেওয়া। কেউ কেউ এমনকি ঈশ্বরকে দোষ দেয়। কিন্তু যিহোবা মানুষের উপর এই রকম দুঃখকষ্ট নিয়ে আসেন না। তিনি ভাল কাজ করেন, ক্ষতিকারক কাজ নয়। এমনকি, “তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৫) আমরা কেন দুঃসময়ের মধ্যে পড়ি তার প্রধান কারণ এই যে আমরা এমন একটি জগতে বাস করি যেখানে স্বার্থপরতাই নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং যে জগৎ শয়তান দিয়াবলের ক্ষমতায় রয়েছে।—১ যোহন ৫:১৯.
৮. যখন সবকিছু সঠিকভাবে চলেনি তখন আদম কী করেছিল?
৮ আমাদের ভুলের জন্য যে দুঃখকষ্ট আমাদের সহ্য করতে হয় তার জন্য যিহোবা ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া মূর্খতা এবং মারাত্মক। তা করলে এমনকি আমাদের জীবন সংশয় ঘটতে পারে। প্রথম মানুষ আদমের উচিৎ ছিল যে সমস্ত ভাল জিনিষ সে পেয়েছিল তার জন্য ঈশ্বরকে কৃতিত্ব দেওয়া। হ্যাঁ, আদমের উচিৎ ছিল জীবন পাওয়ার জন্য এবং তার পরমদেশতুল্য বাসস্থান, এদোন উদ্যানে, সে যে আশীর্বাদসকল উপভোগ করত, তার জন্য যিহোবার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ থাকা। (আদিপুস্তক ২:৭-৯) যিহোবার অবাধ্য হয়ে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার জন্য যখন সবকিছু ঠিকমত চলেনি, তখন আদম কী করেছিল? আদম ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ জানায়: “তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি।” (আদিপুস্তক ২:১৫-১৭; ৩:১-১২) অবশ্যই, আমাদের যিহোবাকে দোষ দেওয়া উচিৎ নয়, যেমন আদম দিয়েছিল।
৯. (ক) আমাদের অনভিজ্ঞ কাজের জন্য যদি আমরা দুঃখকষ্ট ভোগ করি, তাহলে কোথা থেকে আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি? (খ) হিতোপদেশ ১৯:৩ অনুযায়ী, যখন কেউ কেউ নিজেদের উপর সংকট নিয়ে আসে, তখন তারা কী করে?
৯ যদি আমাদের অনভিজ্ঞ কাজের জন্য আমাদের দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয়, তাহলে আমরা এই জেনে সান্ত্বনা পেতে পারি যে যিহোবা আমাদের দুর্বলতা আমাদের চেয়েও ভাল বোঝেন এবং যদি আমরা তাঁর প্রতি একাগ্র ভক্তি দেখাই তাহলে তিনি দুরবস্থা থেকে আমাদের উদ্ধার করবেন। আমাদের উচিৎ যে ঐশিক সাহায্য আমরা পাই তা উপলব্ধি করা, আমরা নিজেদের উপর যে সংকট এবং দুর্দশা নিয়ে আসি তার জন্য ঈশ্বরকে কখনও দোষ দেওয়া উচিৎ নয়। এই সম্বন্ধে, একটি জ্ঞানী নীতিবাক্য জানায়: “মানুষের অজ্ঞানতা তাহার পথ বিপরীত করে, আর তাহার চিত্ত সদাপ্রভুর উপরে রুষ্ট হয়।” (হিতোপদেশ ১৯:৩) আরেকটি সংস্করণ বলে: “কিছু লোক আপন মূর্খতাবশত নিজেদের সর্বনাশ করে আর তারপর প্রভুকে দোষ দেয়।” (টুডেজ্ ইংলীশ্ ভারশন্) আরেকটি অনুবাদ জানায়: “মানুষের অজ্ঞতা তার কর্মসকল ব্যর্থ করে আর সে যিহোবার বিরুদ্ধে রাগিয়া ওঠে।”—বাইংটন.
১০. আদমের মূর্খতা কিভাবে তার ‘পথ বিপরীত’ করেছিল?
১০ এই হিতোপদেশের নীতি অনুযায়ী, আদম স্বার্থপর কাজ করে এবং তার মূর্খ যুক্তি ‘তাহার পথ বিপরীত করে।’ তার হৃদয় যিহোবার বিরূপ হয়ে ওঠে, আর সে নিজের স্বার্থপর, স্বাধীন পথে চলতে শুরু করে। এমনকি, আদম এতই অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে যে সে তার সৃষ্টিকর্তাকে দোষ দেয় আর সেই জন্য নিজেকে সর্বেসর্বার শত্রু করে তোলে! আদমের পাপ তার নিজের এবং তার পরিবারের ধ্বংস নিয়ে আসে। এর থেকে কী উপযুক্ত সাবধানবাণী আমরা পাই! যাদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য যিহোবাকে দোষ দেওয়ার অভ্যাস আছে, তারা নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারে: যে ভাল জিনিষগুলি আমি উপভোগ করি তার জন্য ঈশ্বরকে কৃতিত্ব দিই কি? তাঁর একটি সৃষ্টি হিসাবে জীবন পাওয়ার জন্য আমি কি কৃতজ্ঞ? আমার নিজের ভুলের জন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি তা কি হতে পারে? তাঁর অনুপ্রাণীত বাক্য, বাইবেলে যে নির্দেশ দেওয়া আছে তা পালন করার জন্য আমি কি যিহোবার অনুগ্রহ অথবা সাহায্য পাওয়ার যোগ্য?
এমনকি ঈশ্বরের সেবকদের জন্যেও একটি বিপদ
১১. প্রথম শতাব্দীর যিহূদী ধর্মীয় নেতারা ঈশ্বরের সম্বন্ধে কিসের দোষে দোষী ছিল?
১১ সাধারণ শতাব্দীর প্রথম শতকের যিহূদী ধর্মীয় নেতারা ঈশ্বরের পরিচর্য্যা করার দাবী করে কিন্তু তাঁর সত্যের বাক্য উপেক্ষা করে নিজেদের বিচার-ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। (মথি ১৫:৮, ৯) যেহেতু যীশু খ্রীষ্ট তাদের ভুল মনোভাব প্রকাশ করে দেন, তারা তাঁকে হত্যা করে। পরে, তারা তাঁর শিষ্যদের উপর প্রচন্ড ক্রোধ প্রকাশ করে। (প্রেরিত ৭:৫৪-৬০) এই লোকদের পথ এতই বিপরীত ছিল যে প্রকৃতপক্ষে তারা যিহোবার উপরে রুষ্ট হয়ে ওঠে।—তুলনা করুন প্রেরিত ৫:৩৪, ৩৮, ৩৯.
১২. কোন্ উদাহরণ দেখায় যে এমনকি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি তাদের সংকটের জন্য যিহোবাকে দোষ দেয়?
১২ এমনকি কিছু ব্যক্তি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতেও ক্ষতিকারক চিন্তাধারা গড়ে তুলেছে, তারা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তার জন্য ঈশ্বরকে দায়ী করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কোন একটি মণ্ডলীতে নিযুক্ত প্রাচীনরা একজন অল্পবয়স্ক বিবাহিতা মহিলাকে নম্রভাবে কিন্তু দৃঢ়তা সহকারে শাস্ত্র থেকে উপদেশ দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন কারণ সে একটি জাগতিক লোকের সাথে মেলামেশা করছিল। একবার আলোচনার সময়ে, সে ঈশ্বরকে দোষ দেয় সেই লোকটির সঙ্গে ক্রমাগত মেলামেশা যে প্রলোভন তার উপর নিয়ে আসছিল, তা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য না করার জন্য। প্রকৃতপক্ষে সে বলে যে ঈশ্বরের উপর সে প্রচন্ড রেগে গিয়েছিল! শাস্ত্র থেকে যুক্তি এবং তাকে সাহায্য করার বারংবার প্রচেষ্টা কোন কাজে আসেনি, এবং পরে অনৈতিকার জন্য তাকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে বহিষ্কৃত করা হয়।
১৩. অভিযোগ করার মনোভাব কেন এড়িয়ে চলা উচিৎ?
১৩ অভিযোগ করার মনোভাবও কোন ব্যক্তিকে পরিচালিত করতে পারে যিহোবাকে দোষ দিতে। প্রথম-শতাব্দীর মণ্ডলীতে যে “ভক্তিহীন” লোকেরা ঢুকে পড়েছিল তাদের এই ধরনের মন্দ প্রবৃত্তি ছিল, এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য আত্মিকভাবে দূষিত চিন্তাধারাও ছিল। যেমন শিষ্য যিহূদা বলেছিলেন, এই লোকেরা “ঈশ্বরের অনুগ্রহ লম্পটতায় পরিণত করে, এবং আমাদের একমাত্র অধিপতি ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে।” যিহূদা আরও বলেছিলেন: “ইহারা বচসাকারী, স্বভাগ্যনিন্দক।” (যিহূদা ৩, ৪, ১৬) যিহোবার বিশ্বস্ত সেবকরা বিজ্ঞতার সাথে প্রার্থনা করবেন যাতে তাদের উপলব্ধিবোধ থাকে, তাদের যেন অভিযোগ করা অভ্যাস না হয় যা হয়ত শেষ পর্যন্ত তাদের এত অসন্তুষ্ট করে তুলবে যে তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারাবে এবং তাঁর সাথে তাদের সম্পর্কের ক্ষতি হবে।
১৪. যদি সহ-খ্রীষ্টীয়ের কাজে অসন্তুষ্ট হয় তাহলে কিছু ব্যক্তি কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিন্তু তা কেন সঠিক হবে না?
১৪ আপনি হয়ত মনে করতে পারেন যে আপনার ক্ষেত্রে এইরকম ঘটবে না। কিন্তু, আমাদের অথবা অপরের ভুলের জন্য যদি সবকিছু ঠিকমত না ঘটে, তাহলে তা হয়ত অবশেষে আমাদের পক্ষেও ঈশ্বরকে দোষ দেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন সহবিশ্বাসী যা বলে অথবা করে তার জন্য হয়ত কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে। সেই অসন্তুষ্ট ব্যক্তি—যে হয়ত বহু বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার পরিচর্য্যা করে এসেছে—সে বলতে পারে: ‘যদি ওই লোকটি মণ্ডলীতে থাকে, তাহলে আমি সভায় আসব না।’ কেউ কেউ এত বিরক্ত হয়ে ওঠে যে নিজের মনে বলতে পারে: ‘যদি এইভাবেই চলতে থাকে, তাহলে আমি আর মণ্ডলীর অংশ হতে চাই না।’ কিন্তু একজন খ্রীষ্টীয় ব্যক্তির কী এই ধরনের মনোভাব থাকা উচিৎ? যদি আরেক জন অসিদ্ধ মানবের উপরে অসন্তুষ্ট হই, তাহলে ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তাঁকে বিশ্বস্তভাবে পরিচর্য্যাকারী সম্পূর্ণ মণ্ডলীর ভাইদের কেন দায়ী করব? যে যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত হয়েছে সে ঐশিক ইচ্ছা পালন করা বন্ধ করে ঈশ্বরকে কেন দায়ী করবে? একজন ব্যক্তিকে অথবা কিছু ঘটনাকে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ধ্বংস করতে দেওয়া কতটা বিজ্ঞতার কাজ হবে? অবশ্যই, যে কোন কারণের জন্য যিহোবা ঈশ্বরের উপাসনা বন্ধ করে দেওয়া মূর্খতা এবং পাপকাজ হবে।—যাকোব ৪:১৭.
১৫, ১৬. দিয়ত্রিফি কী দোষ করেছিল, কিন্তু গায় কিরকম ব্যবহার করেছিলেন?
১৫ অনুমান করুন যে আপনি সেই প্রেমময় খ্রীষ্টীয় গায়ের সঙ্গে একই মণ্ডলীতে ছিলেন। সহ উপাসকদের প্রতি—এমনকি অপরিচিতদের প্রতি—আতিথেয়তা দেখিয়ে তিনি “বিশ্বাসীর উপযুক্ত কার্য্য” করছিলেন! কিন্তু ওই একই মণ্ডলীতে দিয়ত্রিফি নামে সেই দাকি ব্যক্তিও ছিল। সে যীশু খ্রীষ্টের একজন প্রেরিত, যোহনের কাছ থেকে কোনকিছুই সম্মানসূচকভাবে নিত না। এমনকি, দিয়ত্রিফি দুর্ব্বাক্য দ্বারা যোহনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। সেই প্রেরিত বলেছিলেন: “তাহাতেও সন্তুষ্ট নয়, সে আপনিও ভ্রাতৃগণকে গ্রাহ্য করে না, আর যাহারা গ্রাহ্য করিতে ইচ্ছা করে, তাহাদিগকেও বারণ করে এবং মণ্ডলী হইতে বাহির করিয়া দেয়”।—৩ যোহন ১, ৫-১০.
১৬ যদি যোহন মণ্ডলীতে আসেন, তাহলে দিয়ত্রিফি যা করছিল তার বিচার করার ইচ্ছা তাঁর ছিল। ইতিমধ্যে, গায় এবং সেই মণ্ডলীতে অন্যান্য অতিথিপরায়ণ খ্রীষ্টীয়রা কিরকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? শাস্ত্রে কোন ইঙ্গিত নেই যে তাদের মধ্যে একজনও বলেছিলেন: ‘যতক্ষণ দিয়ত্রিফি মণ্ডলীতে আছে, আমি সেই মণ্ডলীর অংশ হতে চাই না। সভায় তুমি আমাকে দেখতে পাবে না।’ নিঃসন্দেহে গায় এবং তাঁর মত অন্যেরা দৃঢ় মনোভাব রেখেছিলেন। কোনকিছুকেই তাঁরা ঐশিক ইচ্ছা পালন করা থেকে তাঁদের নিবৃত্ত করতে দেননি, আর অবশ্যই তাঁরা যিহোবার বিরুদ্ধে রেগে ওঠেননি। না, আর তাঁরা শয়তান দিয়াবলের ছলচাতুরীর বশীভূত হয়ে পড়েননি, যে খুবই আনন্দিত হত যদি তারা যিহোবার প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে ঈশ্বরকে দোষ দিতেন।—ইফিষীয় ৬:১০-১৮.
কখনও যিহোবার উপরে রুষ্ট হবেন না
১৭. যদি কোন ব্যক্তি অথবা ঘটনা আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তাহলে আমাদের কী করা উচিৎ?
১৭ যদিও বা কোন মণ্ডলীতে একজন ব্যক্তি অথবা কোন ঘটনা ঈশ্বরের কোন সেবককে অসন্তুষ্ট করে, যে অসন্তুষ্ট হচ্ছে সে যদি যিহোবার লোকেদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দেয় তাহলে সে নিজের পথ সত্যই ভ্রান্ত করবে। সেই রকম ব্যক্তি নিজের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকলের সদ্ব্যবহার করবে না। (ইব্রীয় ৫:১৪) সুতরাং একজন বিশ্বস্ততা-রক্ষাকারী হিসাবে সমস্ত বিপক্ষতার সম্মুখীন হতে দৃঢ় সংকল্প করুন। যিহোবা ঈশ্বর, যীশু খ্রীষ্ট, এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখুন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) যে সত্য অনন্ত জীবনে নিয়ে যায় তা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।
১৮. যদিও আমরা সবসময়ে ঐশিক কার্য বুঝতে পারি না, তবুও যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে কোন্ বিষয়ে আমরা নিশ্চিৎ থাকতে পারি?
১৮ আরও মনে রাখবেন, যিহোবা কখনও মন্দ বিষয়ের দ্বারা কারো পরীক্ষা নেন না। (যাকোব ১:১৩) ঈশ্বর, যিনি প্রেমের সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি, মঙ্গলসাধন করেন, বিশেষত তাদের যারা তাঁকে ভালবাসে। (১ যোহন ৪:৮) যদিও সবসময় আমরা ঐশিক কার্য বুঝতে পারি না, কিন্তু আমরা নিশ্চিৎ থাকতে পারি যে যিহোবা ঈশ্বর কখনও তাঁর সেবকদের সর্বাধিক মঙ্গল করতে ব্যর্থ হবেন না। যেমন পিতর বলেছিলেন: “অতএব তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও, যেন তিনি উপযুক্ত সময়ে তোমাদিগকে উন্নত করেন; তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৬, ৭) হ্যাঁ, যিহোবা সত্যই তাঁর লোকেদের জন্য চিন্তা করেন।—গীতসংহিতা ৯৪:১৪.
১৯, ২০. যদি আমাদের পরীক্ষাসকল কখনও কখনও আমাদের নিরুৎসাহ করেও, আমাদের কী করা উচিৎ?
১৯ সুতরাং, কাউকে বা কোনকিছুকে আপনাকে উছোট খাওয়াতে দেবেন না। গীতরচক যেমন সুন্দরভাবে বলেন, “যাহারা তোমার [যিহোবা ঈশ্বরের] ব্যবস্থা ভালবাসে, তাহাদের পরম শান্তি, তাহাদের উছোট লাগে না।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫) আমরা সকলেই পরীক্ষার সম্মুখীন হই, এবং এইজন্য এক-এক সময়ে আমরা বিষন্ন এবং নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। কিন্তু কখনও আপনার হৃদয়ে ক্ষোভ জন্মাতে দেবেন না, বিশেষত যিহোবার বিরুদ্ধে। (হিতোপদেশ ৪:২৩) তাঁর সাহায্য নিয়ে এবং শাস্ত্রীয় মান অনুযায়ী, যে সমস্যাগুলির সমাধান আপনি করতে পারবেন সেগুলির নিত্তি করুন এবং যেগুলি থেকে যাবে, সেগুলি সহ্য করুন।—মথি ১৮:১৫-১৭; ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭.
২০ আবেগবশত কখনও মূর্খতার কাজ করবেন না যাতে আপনার পথ ভ্রান্ত হয়। এমনভাবে কথা বলুন এবং আচরণ করুন যা ঈশ্বরের চিত্তকে আনন্দিত করে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) যিহোবার কাছে আন্তরিক প্রার্থনা করুন, এই জেনে যে তাঁর একজন সেবক হিসাবে তিনি অবশ্যই আপনার জন্য চিন্তা করেন এবং তাঁর লোকেদের সঙ্গে জীবনের পথে থাকতে যে বিবেচনাশক্তি প্রয়োজন তা তিনি আপনাকে দেবেন। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) সর্বোপরি, ঈশ্বরের উপরে রুষ্ট হবেন না। যখন সবকিছু ঠিক মত হয় না, তখন সবসময়ে মনে রাখবেন যে যিহোবাকে দোষ দেওয়া যায় না। (w92 11/15)
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
▫ লোট কী ভুল করেছিল, কিন্তু ঈশ্বর কিরূপে তাকে দেখতেন?
▫ ভ্রান্তি এবং দুঃসাহস সম্বন্ধে দায়ূদের মনোভাব কী ছিল?
▫ যখন সবকিছু ঠিকমত চলে না, তখন ঈশ্বরকে কেন দোষ দেওয়া উচিৎ নয়?
▫ যিহোবার উপরে রুষ্ট হওয়া এড়াতে কী আমাদের সাহায্য করবে?
[Pictures on page 22]
অব্রাহামের থেকে আলাদা হওয়ার সময়ে, বাসস্থান সম্বন্ধে লোট ভুল জায়গাটি বেছে নিয়েছিল