ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • শোকের নিদারুণ যন্ত্রণা
    ২০১৮ সজাগ হোন! | নং ৩
    • একজন শোকার্ত ব্যক্তি একা রেস্টুরেন্টে বসে আছেন

      শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সাহায্য

      শোকের নিদারুণ যন্ত্রণা

      “দীর্ঘদিনের এক অসুস্থতা যখন সোফিয়ার a জীবন কেড়ে নেয়, তখন ও আর আমি ইতিমধ্যেই আমাদের বিবাহিত জীবনের ৩৯ বছরেরও বেশি সময় পার করেছিলাম। বন্ধুরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল আর আমি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম। তবুও, পুরো এক বছর ধরে মনে হয়েছে, আমাকে যেন দু-টুকরো করে ফেলা হয়েছে। মনে হতো, আমি নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এমনকী এখনও, ওর মৃত্যুর প্রায় তিন বছর পরও, আমি হঠাৎ করেই প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করতে থাকি আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে থেকে তা বুঝতে পারি না।”—মাইকেল।

      আপনি কি কোনো প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারিয়েছেন? যদি তা-ই হয়, তা হলে আপনি হয়তো মাইকেলের অনুভূতি বুঝতে পারেন। বিবাহিত সাথি, কোনো আত্মীয় কিংবা প্রিয় বন্ধুকে মৃত্যুতে হারানোর চেয়ে বেশি চাপপূর্ণ বা হৃদয়বিদারক ঘটনা খুব কমই রয়েছে। যে-বিশেষজ্ঞরা শোকের নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়ে গবেষণা করেন, তারাও এই বিষয়ের সঙ্গে একমত। মনোরোগ চিকিৎসা বিষয়ক আমেরিকান পত্রিকা-য় (ইংরেজি) প্রকাশিত একটা প্রবন্ধ বলে, “মৃত্যু হল স্পষ্টতই সবচেয়ে স্থায়ী ও চরম ক্ষতি।” কাউকে হারিয়ে অসহনীয় কষ্টের মুখোমুখি হলে, একজন ব্যক্তি হয়তো ভাবতে পারে: ‘কতদিন পর্যন্ত এই অনুভূতি থাকবে? আমি কি আবার কখনো আনন্দ ফিরে পাব? কীভাবে আমি স্বস্তি লাভ করতে পারি?’

      এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সজাগ হোন! পত্রিকার এই সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছে। পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, আপনি যদি সম্প্রতি কোনো প্রিয়জনকে হারিয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কোন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন। আর এর পরের প্রবন্ধগুলোতে সেইসমস্ত উপায় সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো আপনার শোকের তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

      আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, পরের প্রবন্ধগুলোতে যে-বিষয়বস্তু রয়েছে, তা শোকের নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে এমন যেকোনো ব্যক্তিকে সান্ত্বনা ও ব্যাবহারিক সাহায্য প্রদান করবে।

      a এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোতে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

  • যে-পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন
    ২০১৮ সজাগ হোন! | নং ৩
    • শোকার্ত এক দম্পতি

      শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সাহায্য

      যে-পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন

      যদিও কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, শোক প্রকাশ করার একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে, তবে প্রত্যেক ব্যক্তির শোক প্রকাশের ধরন পুরোপুরি আলাদা হতে পারে। শোক প্রকাশের ধরনে পার্থক্য থাকার অর্থ কি এই যে, কারো কারো মধ্যে হারানোর বেদনা কম কিংবা তারা তাদের অনুভূতি “চেপে রাখছে”? হয়তো তা নয়। যদিও নিজের শোক মেনে নেওয়ার ও তা প্রকাশ করার মাধ্যমে আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে, তবে শোক প্রকাশ করার যে কেবল একটাই “সঠিক উপায়” রয়েছে তা নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়তো একজন ব্যক্তির সংস্কৃতি, ব্যক্তিত্ব, জীবনের অভিজ্ঞতা আর সেইসঙ্গে তিনি যেভাবে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, সেটার উপর নির্ভর করে।

      পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে?

      কোনো প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারানোর পর পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা হয়তো শোকার্ত ব্যক্তিরা জানে না। তবে, নির্দিষ্ট কিছু অনুভূতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসা স্বাভাবিক আর সাধারণত সেই বিষয়গুলো প্রায়ই আগে থেকে বোঝা যায়। নীচে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:

      আবেগগত কষ্টের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়া। একজন ব্যক্তি কান্নায় ভেঙে পড়তে পারে, মৃত ব্যক্তিকে কাছে পাওয়ার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা অনুভব করতে পারে এবং হঠাৎ হঠাৎ তার মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। মনের মধ্যে মৃত ব্যক্তির সুস্পষ্ট স্মৃতি ও তাকে স্বপ্নে দেখার কারণে আবেগগত কষ্ট আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে, প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, প্রচণ্ড মানসিক আঘাত ও অবিশ্বাস। টিনার স্বামী টিমো যখন অপ্রত্যাশিতভাবে মারা গিয়েছিলেন, তখন টিনা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা তিনি স্মরণ করেন। তিনি বলেন: “প্রথমে, আমার কোনোরকম অনুভূতিই ছিল না। এমনকী আমি কাঁদতেও পারিনি। আমি এতটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম যে, কখনো কখনো আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়েছে। কী ঘটেছে তা আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।”

      কিছু সময়ের জন্য উদ্‌বিগ্নতা, রাগ ও অপরাধবোধের অনুভূতি আসাও খুব স্বাভাবিক। ইভান বলেন: “আমাদের ২৪ বছর বয়সি ছেলে এরিকের মৃত্যুর পর, কিছু সময় পর্যন্ত এমন হয়েছে, আমার স্ত্রী ইয়োলেন্ডা ও আমি প্রচণ্ড রেগে যেতাম! এতে আমরা নিজেরাই অবাক হতাম, কারণ আমরা কখনো নিজেদের রাগী ব্যক্তি হিসেবে ভাবিনি। এ ছাড়া, ছেলেকে সাহায্য করার জন্য আমরা আরও কিছু করতে পারতাম কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করে আমরা নিজেদের দোষী ভাবতাম।” আলেহান্দ্রোর স্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে মারা গিয়েছেন। তিনিও নিজেকে দোষী ভেবেছিলেন: “প্রথমে আমার মনে হয়েছিল, ঈশ্বর যেহেতু আমাকে এতটা কষ্ট পেতে দিচ্ছেন, তার মানে হচ্ছে আমি একজন খারাপ মানুষ। এরপর, আমি অপরাধবোধ করতে থাকি কারণ যা ঘটেছে সেটার জন্য আমি ঈশ্বরকে দোষ দিচ্ছিলাম।” আর আগের প্রবন্ধে উল্লেখিত মাইকেল বলেন: “কয়েক বার আমি এমনকী এই ভেবে সোফিয়ার উপর রেগে গিয়েছিলাম যে, কেন সে মারা গেল। তারপর, এভাবে চিন্তা করার কারণে আমি অপরাধবোধ করেছিলাম। আসলে যা ঘটেছে, তাতে তো ওর কোনো দোষ ছিল না।”

      অসংগত চিন্তাভাবনা। মাঝে মাঝে এমন সময় আসতে পারে, যখন একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনা অসংলগ্ন বা অযৌক্তিক হয়ে পড়ে। যেমন, একজন শোকার্ত ব্যক্তি হয়তো কল্পনা করতে পারেন, মৃত ব্যক্তির কথা শোনা যায়, উপস্থিতি অনুভব করা যায় কিংবা তাকে দেখা যায়। অথবা শোকার্ত ব্যক্তির পক্ষে হয়তো কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া কিংবা তা মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। টিনা বলেন: “মাঝে মাঝে কথা বলার সময়, আমি কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম! আমার মন তখন ছটফট করত, আমি টিমোর মৃত্যুর সময়ের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে চিন্তা করতে থাকতাম। কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা খুব হতাশাজনক ছিল।”

      নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা। একজন শোকার্ত ব্যক্তি অন্যদের উপস্থিতিতে বিরক্তি বা অস্বস্তিবোধ করতে পারেন। মাইকেল বলেন: “দম্পতিদের মাঝে থাকার সময়, নিজেকে গাড়ির একটা বাড়তি চাকার মতো মনে হতো। এমনকী অবিবাহিত ব্যক্তিদের মাঝেও আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম না।” ইভানের স্ত্রী ইয়োলেন্ডা বলেন: “সেই ব্যক্তিদের আশেপাশে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়ত, যারা এমন একেকটা সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করত, যা আমাদের পরিস্থিতির তুলনায় নগণ্য বলে মনে হতো! তা ছাড়া, এমন ব্যক্তিরাও ছিল, যারা আমাদের সামনে তাদের ছেলে-মেয়েরা কত ভালো করছে তা বলত। আমি তাদের জন্য আনন্দিত হতাম কিন্তু একই সময়ে তাদের কথা শোনা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ত। আমার স্বামী ও আমি বুঝতাম, জীবন কখনো থেমে থাকে না কিন্তু অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার ইচ্ছা কিংবা ধৈর্য কোনোটাই আমাদের ছিল না।”

      স্বাস্থ্যগত সমস্যা। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেওয়া, ওজন হ্রাস ও অনিদ্রা স্বাভাবিক বিষয়। আ্যরোন, তার বাবা যে-বছর মারা যান, সেই সময়ের কথা স্মরণ করেন: “আমার ঘুমের সমস্যা হতো। প্রতিদিন রাতে ঠিক একই সময়ে আমার ঘুম ভেঙে যেত আর আমি বাবার মৃত্যুর কথা চিন্তা করতাম।”

      আলেহান্দ্রো স্মরণ করেন, তার এমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল, যেটার কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছিল না। তিনি বলেন: “একজন ডাক্তার কয়েক বার আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন ও আশ্বস্ত করেছিলেন, আমার কোনো অসুস্থতা নেই। আমার সন্দেহ হতো, শোকের কারণে আমার শরীরে নানারকম উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।” সেইসমস্ত উপসর্গ একসময় দূর হয়ে গিয়েছিল। তবে, ডাক্তার দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আলেহান্দ্রো বিজ্ঞতার কাজ করেছিলেন। শোকের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে, ইতিমধ্যে যে-স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তা বৃদ্ধি পেতে পারে, এমনকী নতুন কোনো রোগও হতে পারে।

      প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইভান বলেন: “এরিকের মৃত্যুর পর আমাদের কেবল আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আরও কয়েক জনকে তা জানাতে হয়েছে, যেমন এরিকের কর্মকর্তা ও বাড়িওয়ালাকে। এ ছাড়া, অসংখ্য আইনি ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে। তারপর, আমাদের এরিকের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। আর এই সব কিছু এমন এক সময়ে করতে হয়েছে, যখন আমরা মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে ও আবেগগতভাবে অবসন্ন ছিলাম।”

      তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে আরও পরে আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসে, যখন তাদের সেই বিষয়গুলো সামলাতে হয়, যেগুলো আগে তাদের প্রিয়জন দেখাশোনা করত। টিনার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তিনি বলেন: “টিমো সবসময় আমাদের ব্যাঙ্কের কাজ ও ব্যাবসায়িক বিষয়গুলো দেখাশোনা করত। এগুলো এখন আমার দায়িত্ব, যার ফলে আমার মানসিক চাপ কেবল আরও বেড়ে গিয়েছে। আমি কি আসলেই কোনো ঝামেলা ছাড়া সব কিছু ঠিকভাবে সামলাতে পারব?”

      উপরে উল্লেখিত আবেগগত, মানসিক ও শারীরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো শোকের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। তবে বাস্তব সত্যটা হল, প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা তীব্র হলেও, শোকার্ত ব্যক্তিরা যদি আগে থেকে সেই বিষয়ে জানে, তা হলে সেটা তাদের শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। এটাও মনে রাখুন, সবার মধ্যে এখানে উল্লেখিত শোকের সম্ভাব্য সকল প্রভাব দেখা যায় না। তা ছাড়া, শোকার্ত ব্যক্তিরা হয়তো এটা জেনেও কিছুটা সান্ত্বনা লাভ করতে পারে, শোকের সময়ে তীব্র অনুভূতি আসা স্বাভাবিক।

      আমি কি আবার কখনো আনন্দিত হতে পারব?

      যে-পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন: শোকের তীব্রতা চিরকাল স্থায়ী হয় না; তা একটা সময়ে কমে যায়। এটা বলার অর্থ এই নয়, একজন ব্যক্তি পুরোপুরি “পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়” কিংবা প্রিয়জনকে ভুলে যায়। বরং ধীরে ধীরে সেই তীব্র যন্ত্রণা হালকা হয়। হঠাৎ করেই সেই যন্ত্রণা আবার দেখা দিতে পারে, যখন অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো স্মৃতি মনে পড়ে যায় কিংবা নির্দিষ্ট কোনো সময় যেমন, বিবাহবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী অথবা এইরকম কিছু আসে। তবে অধিকাংশ ব্যক্তি একটা সময়ে আবেগগত ভারসাম্য ফিরে পায় এবং আবারও দৈনন্দিন কাজকর্মে মনোযোগ দিতে পারে। এটা বিশেষভাবে তখনই সম্ভব হয়, যখন শোকার্ত ব্যক্তির পরিবার ও বন্ধুরা তাকে সাহায্য করে এবং তিনি শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেন।

      কতটা সময় লাগবে? কেউ কেউ, পরিস্থিতি অনেক খারাপ হলেও কয়েক মাসের মধ্যে তা কাটিয়ে উঠতে পারে। অনেকে এক বা দু-বছর পর আগের চেয়ে ভালো বোধ করে। আর কারো কারো ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় প্রয়োজন হয়।a আলেহান্দ্রো স্মরণ করে বলেন: “আমি প্রায় তিন বছর গভীর শোকে আচ্ছন্ন ছিলাম।”

      নিজের প্রতি ধৈর্যশীল হোন। শুধু এক-একটা দিনের কথা চিন্তা করুন, নিজে যতটুকু করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ততটুকুই করুন এবং মনে রাখুন, শোকের তীব্র বেদনা চিরকাল স্থায়ী হয় না। তবে, আপনি কি এমন কিছু করতে পারেন, যেগুলো আপনাকে এখন শোক থেকে স্বস্তি দিতে পারে আর এমনকী সেই শোক যাতে অযথা দীর্ঘায়িত না হয় সেই ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

      শোকের সময়ে তীব্র অনুভূতি আসা স্বাভাবিক

      a খুব কমসংখ্যক ব্যক্তির ক্ষেত্রে শোক হয়তো খুবই গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। আর এর ফলে যে-মানসিক রোগ হতে পারে, সেটাকে বলা হয় “কমপ্লিকেটেড গ্রিফ” বা “ক্রনিক গ্রিফ।” তাদের হয়তো পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সাহায্য প্রয়োজন আর তা লাভ করে তারা উপকৃত হতে পারে।

  • শোক কাটিয়ে ওঠা​—আপনি এখনই যা করতে পারেন
    ২০১৮ সজাগ হোন! | নং ৩
    • লোকেরা সমুদ্রের ধারে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে ও ছবি তুলছে

      শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সাহায্য

      শোক কাটিয়ে ওঠা​—আপনি এখনই যা করতে পারেন

      আপনি যদি শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য পরামর্শ খুঁজতে শুরু করেন, তা হলে আপনি সম্ভবত অসংখ্য মতামত খুঁজে পাবেন। এগুলোর মধ্যে কিছু হয়তো সাহায্যকারী, আবার অন্যগুলো তেমন সাহায্যকারী নয়। সম্ভবত এর কারণ হল প্রত্যেকে ভিন্ন উপায়ে শোক প্রকাশ করে, যেমনটা আগে উল্লেখ করা হয়েছে। একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে-পরামর্শ কাজ করে, অন্যজনের ক্ষেত্রে তা না-ও করতে পারে।

      তবে, কিছু মৌলিক নির্দেশনা রয়েছে, যেগুলো অনেকের জন্য ব্যাবহারিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। এসব নির্দেশনার বিষয়ে পরামর্শদাতারা বার বার উল্লেখ করেছেন। আর এগুলো প্রজ্ঞার এক প্রাচীন পুস্তক অর্থাৎ বাইবেলের এমন নীতির উপর ভিত্তি করে তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

      ১: পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করুন

      • লোকেরা সমুদ্রের ধারে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে ও ছবি তুলছে

        কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ শোক কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন। তবে কখনো কখনো, আপনার হয়তো একা থাকার ইচ্ছা হতে পারে। এমনকী আপনি হয়তো সেই ব্যক্তিদের প্রতি বিরক্ত হতে পারেন, যারা আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। এটা স্বাভাবিক বিষয়।

      • এমনটা ভেবে নেবেন না, আপনাকে সবসময় অন্যদের মাঝেই থাকতে হবে। তবে, তাদের সাহচর্য পুরোপুরি এড়িয়েও চলবেন না। কারণ ভবিষ্যতে তাদের সাহায্য আপনার প্রয়োজন হতে পারে। এই মুহূর্তে আপনার কী প্রয়োজন ও কী প্রয়োজন নেই, তা সদয়ভাবে অন্যদের জানান।

      • আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী, অন্যদের সঙ্গে সময় কাটানো ও একাকী থাকার সময়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন।

      নীতি: “এক জন অপেক্ষা দুই জন ভাল . . . কারণ তাহারা পড়িলে এক জন আপন সঙ্গীকে উঠাইতে পারে।”—উপদেশক ৪:৯, ১০.

      ২: নিজের খাদ্যতালিকার প্রতি খেয়াল রাখুন এবং ব্যায়াম করার জন্য সময় করে নিন

      • শোকের কারণে যে-চাপপূর্ণ পরিস্থিতি আসে, তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুষম খাবার সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি ও চর্বিহীন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

      • প্রচুর পরিমাণ জল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করুন।

      • খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে গেলে, বার বার অল্প পরিমাণ খাবার খান। এ ছাড়া, আপনি হয়তো আপনার ডাক্তারের কাছে পুষ্টিবর্ধক ওষুধ বা এই ধরনের কোনো কিছু চাইতে পারেন।a

      • জোরে জোরে হাঁটলে ও অন্যান্য ধরনের ব্যায়াম করলে নেতিবাচক আবেগ কমে যেতে পারে। ব্যায়াম করা আপনাকে নিজের জীবনের পরিবর্তন নিয়ে চিন্তা করার কিংবা প্রিয়জনের মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকার সুযোগ করে দেয়।

      নীতি: “কেউই তো কখনও নিজের দেহকে ঘৃণা করে না, বরং সকলে তার পুষ্টিসাধন করে, তার প্রতি যত্নবান থাকে।”—ইফিষীয় [এফেসীয়] ৫:২৯, জুবিলী বাইবেল।

      ৩: পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান

      • একটা বিছানা

        ঘুম সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ শোক তাদের আরও বেশি অবসন্ন করে ফেলে।

      • আপনি কতটা পরিমাণ ক্যাফেইন (চা-কফির মতো পানীয়) ও মদ্য-জাতীয় পানীয় গ্রহণ করেন, সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন কারণ এগুলো আপনার ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

      নীতি: “বাতাসকে ধরবার জন্য দুই মুঠো পরিশ্রমের চেয়ে এক মুঠো বিশ্রাম শ্রেয়।”—উপদেশক ৪:৬, ইজি-টু-রিড ভারশন।

      ৪: নমনীয় হোন

      • একজন শোকার্ত মহিলা তার বান্ধবীর কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করছেন

        এটা মেনে নিন, প্রত্যেকে ভিন্ন উপায়ে শোক প্রকাশ করে। তাই, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য কোন উপায়টা আপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, সেই বিষয়ে শেষপর্যন্ত আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে।

      • অনেকে লক্ষ করেছে, অন্যদের কাছে শোকের অনুভূতি প্রকাশ করা তাদের তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে, আবার অন্যেরা কারো কাছে তা প্রকাশ না করা বেছে নেয়। শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য একজন ব্যক্তির অনুভূতি প্রকাশ করা অপরিহার্য কি না, সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। আপনি যদি কারো কাছে নিজের হৃদয়ের অনুভূতি খুলে বলা প্রয়োজন বলে মনে করেন অথচ সেটা করতে দ্বিধাবোধ করেন, তা হলে কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে প্রথমে অল্প অল্প করে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করা হয়তো সহজ হতে পারে।

      • কেউ কেউ লক্ষ করেছে, কান্না করা তাদের শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে, আবার অন্যেরা কম কান্নাকাটি করেও তা কাটিয়ে উঠতে পারে বলে মনে হয়।

      নীতি: “প্রত্যেকে আপন আপন মনঃপীড়া ও মর্ম্মব্যথা জানে।”—২ বংশাবলি ৬:২৯.

      ৫: নিজের জন্য ক্ষতিকর এমন অভ্যাস এড়িয়ে চলুন

      • একজন ব্যক্তি মদ পান করছেন

        কোনো কোনো শোকার্ত ব্যক্তি মদ্য-জাতীয় পানীয় কিংবা মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার করে নিজেদের আবেগগত কষ্ট কমানোর চেষ্টা করে। শোক থেকে ‘মুক্তিলাভ’ করার এইরকম উপায় নিজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এভাবে একজন ব্যক্তি যে-স্বস্তি লাভ করেন, তা সাময়িক এবং পরে কেবল গুরুতর ক্ষতি নিয়ে আসে। এমন উপায়ে নিজের উদ্‌বিগ্নতা কমানোর জন্য চেষ্টা করুন, যা ক্ষতিকর নয়।

      নীতি: “আইস, . . . সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করি।”—২ করিন্থীয় ৭:১.

      ৬: সময়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করুন

      • সবসময় শোক না করে বরং সাময়িকভাবে বিরতি নেওয়া অর্থাৎ যে-কাজগুলো সাময়িকভাবে কষ্ট ভুলে থাকতে সাহায্য করে, তা করা অনেকের জন্য উপকারজনক হয়েছে।

      • আপনি হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে, নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে, নতুন কোনো কিছু শেখার মাধ্যমে কিংবা আমোদপ্রমোদে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সাময়িক স্বস্তি লাভ করতে পারেন।

      • সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ভারসাম্য ফিরে আসতে পারে। আপনি হয়তো দেখবেন যে, আপনার শোক থেকে বিরতি নেওয়ার সময়টা আরও দীর্ঘ হচ্ছে এবং আপনি প্রায়ই এই বিরতি নিচ্ছেন আর এটা আগের অবস্থায় ফিরে আসার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

      নীতি: “সকল বিষয়েরই সময় আছে . . . রোদন করিবার কাল ও হাস্য করিবার কাল; বিলাপ করিবার কাল ও নৃত্য করিবার কাল।”—উপদেশক ৩:১, ৪.

      ৭: দৈনন্দিন কাজকর্মের তালিকা বজায় রাখুন

      • একজন মহিলা ক্যালেন্ডারে তার দৈনন্দিন কাজের তালিকা লিখছেন

        যত শীঘ্র সম্ভব স্বাভাবিক কাজকর্মের তালিকায় ফিরে যান।

      • আপনি যখন ঘুমানোর জন্য, কাজের জন্য ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য একটা তালিকা বজায় রাখবেন, তখন আপনি হয়তো জীবনের স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবেন।

      • ইতিবাচক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, কষ্ট কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

      নীতি: “তার আয়ুর দিনগুলোর দিকে সে ফিরে তাকায় না, কারণ ঈশ্বর তার মনে আনন্দ দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখেন।”—উপদেশক ৫:২০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

      ৮: খুব দ্রুত বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়িয়ে চলুন

      • প্রিয়জনকে হারানোর পর পরই অনেকে বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু পরে তারা সেগুলোর জন্য আপশোস করেছে।

      • যদি সম্ভব হয়, তা হলে অন্য কোনো জায়গায় চলে যাওয়ার, চাকরি পরিবর্তন করার কিংবা আপনার প্রিয়জনের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার আগে যথাসম্ভব যুক্তিযুক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

      নীতি: “পরিশ্রমীর পরিকল্পনার ফলে নিশ্চয়ই প্রচুর ধনলাভ হয়, কিন্তু যে লোক পরিকল্পনা না করে তাড়াহুড়া করে কাজ করতে যায় তার নিশ্চয়ই অভাব হয়।”—হিতোপদেশ ২১:৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

      ৯: আপনার প্রিয়জনকে স্মরণ করুন

      • একজন ব্যক্তি বন্ধুদের তার মৃত স্ত্রীর ছবি দেখাচ্ছেন

        শোকার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে মনে করে, এমন বিষয়গুলো করা উপকারী, যেগুলোর মাধ্যমে যিনি মারা গিয়েছেন তার স্মৃতি জীবন্ত রাখা যায়।

      • ছবি অথবা স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করে রাখা কিংবা আপনি যেসব ঘটনা ও গল্প স্মরণে রাখতে চান, সেগুলো নিয়ে ডায়েরি লেখা হয়তো আপনার কাছে সান্ত্বনাদায়ক বলে মনে হতে পারে।

      • সুখকর স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে এমন বিষয়গুলো আলাদা করে রেখে দিন এবং পরে আপনি যখন নিজেকে প্রস্তুত মনে করেন, তখন সেগুলো দেখুন।

      নীতি: “সেই পুরানো দিনগুলোর কথা মনে কর।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

      ১০: কোথাও বেড়াতে যান

      • আপনি হয়তো ছুটি কাটানোর কথা চিন্তা করতে পারেন।

      • যদি বেশি ছুটি নেওয়া সম্ভব না-ও হয়, তবুও আপনি হয়তো শুধু এক বা দু-দিনের জন্য উপভোগ্য কোনো কিছু করতে পারেন, যেমন পার্কে যেতে পারেন, সমুদ্রসৈকতে যেতে পারেন অথবা বন্ধুদের সঙ্গে সারা দিনের জন্য কোথাও যেতে পারেন।

      • স্বাভাবিক কাজের তালিকায় ছোট্ট একটু পরিবর্তন, আপনাকে শোক কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

      নীতি: “তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।”—মার্ক ৬:৩১.

      ১১: অন্যদের সাহায্য করুন

      • একজন যুবতী একজন বয়স্ক মহিলাকে বাজার করায় সাহায্য করছেন

        মনে রাখুন, অন্যদের সাহায্য করার জন্য আপনি যতটুকু সময়ই ব্যয় করুন না কেন, তাতে আপনিই আরও ভালো বোধ করবেন।

      • আপনি হয়তো আপনার প্রিয়জনের মৃত্যুতে কষ্ট পাচ্ছে এমন ব্যক্তিদের যেমন, কোনো বন্ধু অথবা আত্মীয়কে সাহায্য করা শুরু করতে পারেন। কারণ শোকের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য তাদেরও হয়তো কোনো সঙ্গী প্রয়োজন।

      • অন্যদের সাহায্য করা ও সান্ত্বনা দেওয়ার মাধ্যমে আপনি পুনরায় আনন্দ ও জীবনের উদ্দেশ্য ফিরে পেতে পারেন, যা হয়তো হারিয়ে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল।

      নীতি: “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।”—প্রেরিত ২০:৩৫, জুবিলী বাইবেল।

      ১২: আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করুন

      • শোকার্ত পরিস্থিতি আপনাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, কোন বিষয়টা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।

      • নিজের জীবনকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন তা নিয়ে চিন্তা করার জন্য এই সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করুন।

      • প্রয়োজন হলে, আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো রদবদল করুন।

      নীতি: “ভোজের গৃহে যাওয়া অপেক্ষা বিলাপ-গৃহে যাওয়া ভাল, কেননা তাহা সকল মনুষ্যের শেষগতি, এবং জীবিত লোক তাহাতে মনোনিবেশ করিবে।”—উপদেশক ৭:২.

      শোক কাটিয়ে ওঠা | সারাংশ

      • ১: পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করুন

        আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী, অন্যদের সঙ্গে সময় কাটানো ও একাকী থাকার সময়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন।

      • ২: নিজের খাদ্যতালিকার প্রতি খেয়াল রাখুন এবং ব্যায়াম করার জন্য সময় করে নিন

        স্বাস্থ্যকর খাবার খান, প্রচুর পরিমাণ জল পান করুন ও পরিমিত মাত্রায় ব্যায়াম করুন।

      • ৩: পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান

        লক্ষ রাখুন, শোকের অবসন্নতা কাটিয়ে ওঠার জন্য ঘুম অপরিহার্য।

      • ৪: নমনীয় হোন

        যেহেতু প্রত্যেকে ভিন্ন উপায়ে শোক প্রকাশ করে, তাই তা কাটিয়ে ওঠার জন্য কোন উপায়টা আপনার ক্ষেত্রে কাজ করে, তা খুঁজে বের করুন।

      • ৫: নিজের জন্য ক্ষতিকর এমন অভ্যাস এড়িয়ে চলুন

        মদ্য-জাতীয় পানীয় কিংবা মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, যা সমস্যা সমাধানের চেয়ে বরং আরও বাড়িয়ে দেয়।

      • ৬: সময়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করুন

        শোক করার সময় এবং অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা ও আমোদপ্রমোদের সময়, এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করুন।

      • ৭: দৈনন্দিন কাজকর্মের তালিকা বজায় রাখুন

        একটা উত্তম তালিকা মেনে চলার মাধ্যমে জীবনের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনুন।

      • ৮: খুব দ্রুত বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়িয়ে চলুন

        সম্ভব হলে, বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এক বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করুন, যেন সেগুলোর জন্য পরে আপনাকে আপশোস করতে না হয়।

      • ৯: আপনার প্রিয়জনকে স্মরণ করুন

        যিনি মারা গিয়েছেন তার সঙ্গে আপনার স্মৃতি জীবন্ত রাখার জন্য ছবি অথবা স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করে রাখুন কিংবা ডায়েরি লিখুন।

      • ১০: কোথাও বেড়াতে যান

        একটু পরিবর্তন আনার জন্য সময় বের করুন, অন্ততপক্ষে শুধু এক-আধ দিনের জন্য হলেও।

      • ১১: অন্যদের সাহায্য করুন

        অন্যদের জন্য কিছু করার মাধ্যমে নিজের জীবনের উদ্দেশ্যকে পুনরুজ্জীবিত করুন, যাদের মধ্যে আপনার প্রিয়জনের মৃত্যুতে কষ্ট পাচ্ছে এমন ব্যক্তিরাও রয়েছে।

      • ১২: আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করুন

        কোন বিষয়টা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ তা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এই সুযোগটা ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজন হলে, আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো রদবদল করুন।

      সত্যি বলতে কী, কোনো কিছুই আপনার কষ্ট পুরোপুরি দূর করে দেবে না। তবে, প্রিয়জনকে হারিয়েছেন এমন অনেক ব্যক্তি তাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া, যেমন এই প্রবন্ধে উল্লেখিত বিষয়গুলো করা তাদের সান্ত্বনা লাভ করতে সাহায্য করেছে। অবশ্য, শোক দূর করার সম্ভাব্য সমস্ত উপায় এখানে তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু, আপনি যদি এগুলোর মধ্যে কয়েকটা পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন, তা হলে আপনি হয়তো অনেকটা স্বস্তি লাভ করতে পারবেন।

      a সজাগ হোন! পত্রিকা কোনো নির্দিষ্ট ধরনের স্বাস্থ্যগত চিকিৎসার বিষয়ে সুপারিশ করে না।

  • শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সর্বোত্তম সাহায্য
    ২০১৮ সজাগ হোন! | নং ৩
    • পরমদেশে লোকেরা তাদের পুনরুত্থিত প্রিয়জনদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে

      শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সাহায্য

      শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সর্বোত্তম সাহায্য

      প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারানোর ফলে যে-কষ্ট হয়, তা সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণা করার মতো এক বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে আগেও যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইবেলে পাওয়া প্রাচীন প্রজ্ঞার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আর এটা উপযুক্তভাবেই বাইবেলের নির্দেশনা যে সবসময় নির্ভরযোগ্য, সেই বিষয়ে তুলে ধরে। কিন্তু, বাইবেলে নির্ভরযোগ্য নির্দেশনার চেয়ে আরও বেশি কিছু রয়েছে। বাইবেলে এমন তথ্য রয়েছে, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না এবং তা শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রচুর সান্ত্বনা নিয়ে আসতে পারে।

      • আমাদের মৃত প্রিয়জনরা যে কোথাও কষ্টভোগ করছে না, সেই বিষয়ে নিশ্চয়তা রয়েছে

        বাইবেলে উপদেশক ৯:৫ পদে বলা হয়েছে, “মৃতেরা কিছুই জানে না।” তাদের “সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৪) এই পদের সঙ্গে মিল রেখে বাইবেল মৃত্যুকে শান্তিপূর্ণ ঘুমের সঙ্গে তুলনা করে।—যোহন ১১:১১.

      • একজন প্রেমময় ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখা সান্ত্বনা এনে দেয়

        গীতসংহিতা ৩৪:১৫ পদে বাইবেল বলে: “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর [“যিহোবার,”a NW] দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।” প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করা, কোনো ভালো থেরাপির চেয়ে কিংবা আমাদের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায়ের চেয়ে আরও বেশি কিছু করে থাকে। এটা আসলে আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যিনি আমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নিজের শক্তি ব্যবহার করতে পারেন।

      • আরও ভালো এক ভবিষ্যতের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা

        ভবিষ্যতের এমন এক সময় সম্বন্ধে কল্পনা করুন, যখন কবরে থাকা ব্যক্তিরা এই পৃথিবীতে জীবন ফিরে পাবে! এইরকম এক সময় সম্বন্ধে বাইবেলে বার বার উল্লেখ করা আছে। সেই সময়ে, পৃথিবীর পরিস্থিতি কেমন হবে সেটার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাইবেল বলে, ঈশ্বর “[আমাদের] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

      যিহোবার উপর বিশ্বাস করে এমন অনেক ব্যক্তি, তাদের মৃত প্রিয়জনকে আবারও দেখার আশা সম্বন্ধে জেনে শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রচুর শক্তি লাভ করেছে। উদাহরণ হিসেবে আ্যনের কথা বলা যায়, যিনি ৬৫ বছর বিবাহিত জীবন কাটানোর পর স্বামীকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন: “বাইবেল আমাকে নিশ্চয়তা দেয় যে, আমাদের মৃত প্রিয়জনরা কোথাও কষ্ট পাচ্ছে না এবং ঈশ্বর তাঁর স্মরণে থাকা সমস্ত ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করবেন। যখনই আমি হারানোর কষ্টের বিষয়ে চিন্তা করি, তখনই এই বিষয়গুলো আমার চিন্তায় আসে আর এর ফলে, আমি আসলে আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ এই ঘটনাটার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সমর্থ হই!”

      টিনা, যার বিষয়ে এই ধারাবাহিক প্রবন্ধে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: “টিমোর মৃত্যুর দিন থেকেই আমি ঈশ্বরের সাহায্য অনুভব করি। আমার দুর্দশার সময়ে আমি দৃঢ়ভাবে যিহোবার সাহায্যের হাত অনুভব করেছি। আর পুনরুত্থান সম্বন্ধে বাইবেলের প্রতিজ্ঞা আমার কাছে খুবই বাস্তব এক বিষয়। এটা আমাকে সেই দিন পর্যন্ত এগিয়ে চলার শক্তি প্রদান করছে, যখন আমি আবার টিমোকে দেখতে পারব।”

      এই মন্তব্যগুলোর মাধ্যমে আসলে সেই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির অনুভূতিই প্রকাশ পায়, যারা বাইবেলের নির্ভরযোগ্যতার বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী। তারপরও আপনি যদি মনে করেন, বাইবেলের এই কথাগুলো অবাস্তব কিংবা এক স্বপ্ন মাত্র, তা হলে বাইবেলের পরামর্শ ও প্রতিজ্ঞাগুলো যে সঠিক, সেটার প্রমাণ লাভ করার জন্য আপনার তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। আপনি তখন জানতে পারবেন, বাইবেলই শোকার্ত ব্যক্তিদের সর্বোত্তম সাহায্য প্রদান করে।

      মৃত ব্যক্তিদের আশা সম্বন্ধে আরও জানুন

      আমাদের ওয়েবসাইট jw.org থেকে সম্পর্কযুক্ত ভিডিও দেখুন

      পরমদেশে লোকেরা তাদের পুনরুত্থিত প্রিয়জনদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে

      বাইবেল এমন এক ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করে, যখন আমরা আমাদের মৃত প্রিয়জনদের আবার স্বাগত জানাব

      মৃত ব্যক্তিরা কোন অবস্থায় রয়েছে?

      মৃত ব্যক্তিরা কোন অবস্থায় রয়েছে?

      আমরা মারা গেলে আমাদের কী হয়? এই বিষয়ে বাইবেলের স্পষ্ট উত্তর সান্ত্বনাদায়ক ও আশ্বাসদায়ক।

      দেখুন, LIBRARY > VIDEOS (Video Category: THE BIBLE)

      আপনি কি সুসংবাদ শুনতে চান?

      আপনি কি সুসংবাদ শুনতে চান?

      চারিদিকে এত খারাপ খবরের মাঝে আপনি কি কোথাও কোনো সুসংবাদ খুঁজে পেতে পারেন?

      দেখুন, BIBLE TEACHINGS > PEACE & HAPPINESS

      a যিহোবা হল ঈশ্বরের নাম, যা বাইবেলে প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
লগ আউট
লগ ইন
  • বাংলা
  • শেয়ার
  • পছন্দসমূহ
  • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
  • ব্যবহারের শর্ত
  • গোপনীয়তার নীতি
  • গোপনীয়তার সেটিং
  • JW.ORG
  • লগ ইন
শেয়ার