খণ্ড ১২
জীবনের জন্য ঐশিক প্রজ্ঞা
হিতোপদেশ বইটি হল অনুপ্রাণিত পরামর্শের এক সংকলন, যে-বইটির অধিকাংশই শলোমনের দ্বারা লিখিত আর যেটি দৈনন্দিন জীবনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে
যিহোবা কি একজন বিজ্ঞ শাসক? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার একটা সুস্পষ্ট উপায় হল, তাঁর প্রদত্ত পরামর্শ বিবেচনা করা। এটা কি কার্যকারী? এটা প্রয়োগ করা হলে কি জীবন আরও উত্তম ও অর্থপূর্ণ হবে? বিজ্ঞ রাজা শলোমন শত শত প্রবাদবাক্য লিখেছিলেন। এগুলো জীবনের প্রায় প্রত্যেকটা ক্ষেত্র সম্বন্ধে উল্লেখ করে। কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন।
ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা। নির্ভরতাই হল যিহোবার সঙ্গে উত্তম সম্পর্কের এক চাবিকাঠি। শলোমন লিখেছিলেন: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) ঈশ্বরের নির্দেশনা খোঁজার ও তাঁর বাধ্য থাকার মাধ্যমে তাঁর ওপর বিশ্বাস বা নির্ভর করা, জীবনকে অনেক অর্থপূর্ণ করে তোলে। এই ধরনের এক পথ একজন মানুষকে ঈশ্বরের হৃদয়কে আনন্দিত করতে সমর্থ করে এবং যিহোবাকে তাঁর বিপক্ষ শয়তানের উত্থাপিত বিচার্য বিষয়ের এক উত্তর জোগায়।—হিতোপদেশ ২৭:১১.
অন্যদের সঙ্গে বিজ্ঞতা সহকারে আচরণ করা। স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ঈশ্বরের পরামর্শ এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি সময়োপযোগী। “তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর,” ঈশ্বর স্বামীকে উপদেশ দেন, যার অর্থ তিনি যেন স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। (হিতোপদেশ ৫:১৮-২০) বিবাহিত নারীরা হিতোপদেশ বইয়ে একজন গুণবতী স্ত্রীর প্রাণবন্ত বর্ণনা পায়, যিনি তার স্বামী ও সন্তানদের প্রশংসা জয় করে নেন। (হিতোপদেশ ৩১ অধ্যায়) আর সন্তানরা তাদের বাবা-মার বাধ্য হওয়ার নির্দেশনা পায়। (হিতোপদেশ ৬:২০) এই বইটি এও দেখায় যে, বন্ধুত্ব অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিজেকে পৃথক করা স্বার্থপর মনোভাব জাগিয়ে তোলে। (হিতোপদেশ ১৮:১) বন্ধুরা আমাদের ওপর ভালো কিংবা মন্দ প্রভাব ফেলতে পারে, তাই আমাদের বিজ্ঞতা সহকারে বন্ধু বাছাই করতে হবে।—হিতোপদেশ ১৩:২০; ১৭:১৭.
নিজের সঙ্গে বিজ্ঞতা সহকারে আচরণ করা। হিতোপদেশ বইয়ে মদের অপব্যবহার এড়িয়ে চলার, গঠনমূলক আবেগ-অনুভূতি গড়ে তোলার ও ধ্বংসাত্মক আবেগ-অনুভূতি প্রতিরোধ করার এবং একজন পরিশ্রমী কর্মী হওয়ার বিষয়ে অমূল্য পরামর্শ রয়েছে। (হিতোপদেশ ৬:৬; ১৪:৩০; ২০:১) এটি সতর্ক করে যে, ঈশ্বরের পরামর্শের বিপরীত মানব বিচারের ওপর নির্ভর করা দুর্দশার দিকে পরিচালিত করে। (হিতোপদেশ ১৪:১২) এটি আমাদেরকে কলুষিত প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের ভিতরের ব্যক্তিকে অর্থাৎ হৃদয়কে সুরক্ষা করার জোরালো পরামর্শ দেয় আর আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, “[হৃদয়] হইতে জীবনের উদ্গম হয়।”—হিতোপদেশ ৪:২৩.
পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোক দেখতে পেয়েছে যে, এই ধরনের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করা আরও উত্তম জীবন এনে দেয়। ফল স্বরূপ, যিহোবাকে তাদের শাসক হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রচুর কারণ তাদের রয়েছে।
—হিতোপদেশ বইয়ের ওপর ভিত্তি করে।