সর্বপ্রকার প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকুন
“প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক?”—২ করিন্থীয় ৬:১৬.
১. ইস্রায়েলের সমাগম তাঁবু এবং মন্দিরের দ্বারা কী চিত্রিত হয়েছিল?
যিহোবার একটি মন্দির আছে যেখানে প্রতিমাদের কোন স্থান নেই। মোশি ইস্রায়েলের জন্য যে সমাগম তাঁবু নির্মাণ করেছিলেন এবং পরে যিরূশালেমে যে মন্দিরগুলি তৈরী করা হয়েছিল, সেগুলি যিহোবার মন্দিরকে চিত্রিত করে। ওই ইমারতগুলি “প্রকৃত তাম্বু,” যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরের প্রতীকস্বরূপ। (ইব্রীয় ৮:১-৫) সেই মন্দিরটি যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যস্বরূপ উৎসর্গের মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনা করার ব্যবস্থা।—ইব্রীয় ৯:২-১০, ২৩.
২. ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরে কারা স্তম্ভস্বরূপ হয়েছিলেন, এবং বিরাট জনতা কোন্ স্থান উপভোগ করে?
২ প্রত্যেক অভিষিক্ত খ্রীষ্টান স্বর্গে স্থান পেয়ে “[ঈশ্বরের] মন্দিরে স্তম্ভস্বরূপ” হন। যিহোবার অন্য উপাসকদের “বিস্তর লোক,” হেরোদের পুনর্নিমিত মন্দিরের পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণ যা চিত্রিত করে সেখানে “[ঈশ্বরের] আরাধনা” করছেন। যীশুর বলিদানের প্রতি বিশ্বাসের জন্য, তারা ধার্মিক পরিগণিত হয়েছেন যার ফল হবে “মহা ক্লেশ” থেকে পরিত্রাণ।—প্রকাশিত বাক্য ৩:১২; ৭:৯-১৫.
৩, ৪. পৃথিবীতে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মণ্ডলীকে কিসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, এবং কোন্ অপবিত্রতা থেকে তাকে মুক্ত থাকতেই হবে?
৩ পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মণ্ডলীকেও প্রতিমাপূজা থেকে মুক্ত আরেকটি মন্দিরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যারা ‘পবিত্র আত্মা দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত’ হয়েছে, তাদের পৌল বলেছিলেন: “তোমাদিগকে প্রেরিত ও ভাববাদিগণের ভিত্তিমূলের উপরে গাঁথিয়া তোলা হইয়াছে; তাহার প্রধান কোণস্থ প্রস্তর স্বয়ং খ্রীষ্ট যীশু। তাঁহাতেই প্রত্যেক গাঁথনি সুসংলগ্ন হইয়া প্রভুতে পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে; তাঁহাতে আত্মাতে ঈশ্বরের আবাস হইবার নিমিত্ত তোমাদিগকে একসঙ্গে গাঁথিয়া তোলা হইতেছে।” (ইফিষীয় ১:১৩; ২:২০-২২) এই মুদ্রাঙ্কিত ১,৪৪,০০০ জন হলেন “জীবন্ত প্রস্তর” যাদের ‘পবিত্র যাজকবর্গ হইয়া আত্মিক গৃহস্বরূপে গাঁথিয়া তোলা যাইতেছে।’—১ পিতর ২:৫; প্রকাশিত বাক্য ৭:৪; ১৪:১.
৪ এই সহযাজকরা যেহেতু “ঈশ্বরেরই গাঁথনি,” তিনি এই মন্দিরকে অপবিত্র হতে দেন না। (১ করিন্থীয় ৩:৯, ১৬, ১৭) “তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না,” পৌল সাবধান করেছিলেন। “কেননা ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি সহভাগিতা? আর বলীয়ালের [পাপদেবের] সহিত খ্রীষ্টের কি ঐক্য? অবিশ্বাসীর সহিত বিশ্বাসীরই বা কি অংশ? আর প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক?” অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা, যারা “সর্ব্বশক্তিমান্ প্রভুর,” তাদের প্রতিমাপূজা থেকে অবশ্যই মুক্ত থাকতে হবে। (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৮) যারা বিস্তর লোকের অন্তর্ভুক্ত তাদেরও সর্বপ্রকার প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. যিহোবা যে একাগ্র ভক্তি পেতে চান, তা জেনে সত্য খ্রীষ্টানেরা কী করেন?
৫ সরাসরি এবং সূক্ষ্মভাবে উভয়তই প্রতিমাপূজা হতে পারে। না, প্রতিমাপূজা মিথ্যা দেবদেবীদের উপাসনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যিহোবা ঈশ্বর বাদে অন্য যে কেউ অথবা যে কোন বস্তুর উপাসনা, প্রতিমাপূজা। সার্বভৌম সম্রাট হিসাবে, তিনি ন্যায়সঙ্গতভাবেই একনিষ্ঠ ভক্তি দাবী করার এবং পাওয়ার যোগ্য। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২৪) এই সম্বন্ধে সজাগ থেকে, সত্য খ্রীষ্টীয়রা সমস্ত প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে শাস্ত্রীয় সাবধানবাণী মেনে চলেন। (১ করিন্থীয় ১০:৭) যিহোবার সেবকদের কী কী ধরনের প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলতে হবে আসুন আমরা তা বিবেচনা করি।
খ্রীষ্টজগতের প্রতিমাপূজার প্রতিচ্ছবি দেওয়া হয়েছিল
৬. যিহিষ্কেল দর্শনে কী কী ঘৃণার্হ বস্তু দেখেছিলেন?
৬ বাবিলনে নির্বাসনে থাকাকালীন, সা.শ.পূ. ৬১২ সালে, ভাববাদী যিহিষ্কেল ধর্মভ্রষ্ট যিহূদীরা যিরূশালেমে যিহোবার মন্দিরে যে ঘৃণার্হ কাজ করছিল তার দর্শন পেয়েছিলেন। যিহিষ্কেল একটি “অন্তর্জালার প্রতিমা” দেখেছিলেন। সত্তর জন প্রাচীনকে মন্দিরে ধূপ দিতে দেখা গিয়েছিল। একজন মিথ্যা দেবতার জন্য স্ত্রীলোকদের অশ্রুপাত করতে দেখা গিয়েছিল। আর ২৫ জন পুরুষ সূর্যের উপাসনা করছিল। এই ধর্মভ্রষ্ট কাজগুলির কী গুরুত্ব ছিল?
৭, ৮. “অন্তর্জালার প্রতিমা কী হতে পারে, এবং কেন তা যিহোবার ঈর্ষার কারণ হয়েছিল?
৭ যিহিষ্কেল দর্শনে যে ঘৃণার্হ কাজগুলি দেখেছিলেন তার দ্বারা খ্রীষ্টজগতের প্রতিমাপূজার প্রতিচ্ছবি দেওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেছিলেন: “দেখ যজ্ঞবেদির দ্বারের উত্তরে, প্রবেশ-স্থানে ঐ অন্তর্জালার প্রতিমা রহিয়াছে। আর [যিহোবা ঈশ্বর] আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, ইহারা কি করে, তুমি কি দেখিতেছ? ইস্রায়েল-কূল আমার ধর্ম্মধাম হইতে আমাকে দূর করণার্থে এখানে অধিক ঘৃণার্হ কার্য্য করিতেছে।”—যিহিষ্কেল ৮:১-৬.
৮ অন্তর্জালার প্রতিমা হয়ত একটি পবিত্র স্তম্ভ ছিল, যা কনানীয়রা যাকে তাদের দেবতা বালের স্ত্রী হিসাবে দেখত তার প্রতিনিধিত্ব করত। সেই প্রতিমা যাই হোক না কেন, সেটি যিহোবার অন্তর্জালার কারণ ছিল কেননা তাঁর আজ্ঞার বিরুদ্ধে সেটি তাঁর প্রতি ইস্রায়েলের একাগ্র ভক্তি বিচ্ছিন্ন করত: “আমি তোমার ঈশ্বর যিহোবা . . . আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক। তুমি আপনার নিমিত্ত খোদিত প্রতিমা-নির্ম্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নিচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্তি নির্ম্মাণ করিও না; তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না এবং তাহাদের সেবা করিও না; কেননা তোমার ঈশ্বর যিহোবা আমি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর।”—যাত্রাপুস্তক ২০:২-৫, (NW).
৯. কিভাবে খ্রীষ্টজগৎ ঈশ্বরকে ঈর্ষান্বিত হতে প্ররোচনা করেছে?
৯ ধর্মভ্রষ্ট ইস্রায়েলীয়রা যে বহু ঘৃণার্হ কার্য করছিল, ঈশ্বরের মন্দিরে অন্তর্জালার প্রতিমার উপাসনা করা তার মধ্যে একটি। ঠিক একইভাবে, খ্রীষ্টীয়জগতের গীর্জাগুলি ঈশ্বর-নিন্দক প্রতীক এবং প্রতিমা দ্বারা কলুষিত হয়েছে, যা যাঁকে তারা সেবা করে, তাঁর প্রতি যে একাগ্র ভক্তি তারা দেখায় বলে দাবী করে, তা বিভক্ত করে। আরও, ঈশ্বরের অন্তর্জালা জন্মায় কারণ পাদ্রীবর্গ মানবজাতির একমাত্র আশা হিসাবে তাঁর রাজ্যকে প্রত্যাখ্যান করে এবং রাষ্ট্রসংঘকে প্রতিমারূপে পূজা করে—সেই “ঘৃণার্হ বস্তু . . . তাহা পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে,” যেখানে তার দাঁড়ানো উচিৎ নয়।—মথি ২৪:১৫, ১৬; মার্ক ১৩:১৪.
১০. মন্দিরের ভিতরে যিহিষ্কেল কী দেখেছিলেন, এবং খ্রীষ্টজগতে যা দেখা যায় তার সঙ্গে কিভাবে এর তুলনা হতে পারে?
১০ মন্দিরে প্রবেশ করে, যিহিষ্কেল বর্ণনা করেন: “দেখ, সর্ব্বপ্রকার সরীসৃপের ও ঘৃণ্য পশুর আকৃতি, এবং ইস্রায়েল কুলের সমস্ত পুত্তলি চারিদিকে ভিত্তির গাত্রে চিত্রিত রহিয়াছে; আর তাহাদের সম্মুখে ইস্রায়েল-কুলের প্রাচীনবর্গের সত্তর জন পুরুষ দন্ডায়মান, . . . আর প্রত্যেকের হস্তে এক এক ধূনাচি; আর ধূপমেঘের সৌরভ ঊর্দ্ধে উঠিতেছে।” চিন্তা করুন! যিহোবার মন্দিরে ইস্রায়েলীয় প্রাচীনেরা মিথ্যা দেবতাদের প্রতি ধূপ জ্বালাচ্ছে, যে দেবতাদের প্রতীক হিসাবে দেওয়ালে পাথর কেটে ঘৃণার্হ সমস্ত মূর্তি বানানো হয়েছে। (যিহিষ্কেল ৮:১০-১২) তুলনামূলকভাবে খ্রীষ্টজগতের দেশগুলির প্রতীক হিসাবে পশু-পক্ষী ব্যবহার করা হয়, যেগুলির প্রতি লোকে ভক্তি দেখায়। উপরন্তু, যিহোবা ঈশ্বরের সৃষ্টি সম্বন্ধে বাইবেলের সত্য বিবরণ সমর্থন না করে, মানুষের বিবর্তন যে নিম্নতর জীবজন্তু থেকে হয়েছে, এই ভুল মতবাদ প্রচার করে পাদ্রীদের মধ্যে অনেকে লোকেদের ভ্রান্ত করার জন্য দায়ী।—প্রেরিত ১৭:২৪-২৮.
১১. ধর্মভ্রষ্ট ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোকেরা কেন তম্মুষের জন্য রোদন করছিল?
১১ যিহোবার গৃহের দ্বারের প্রবেশপথে, যিহিষ্কেল ধর্মভ্রষ্ট ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোকদের তম্মুষের জন্য রোদন করতে দেখেছিলেন। (যিহিষ্কেল ৮:১৩, ১৪) বাবিলনীয়রা এবং অরামীয়রা তম্মুষকে শস্য, তৃণ, ইত্যাদির দেবতা হিসাবে দেখত, যা বর্ষাকালে জন্মায় এবং যখন বৃষ্টি হয় না তখন শুকিয়ে যায়। সেই শস্যের শুকিয়ে যাওয়া তম্মুষের মৃত্যুকে চিত্রিত করত, যে জন্য তার উপাসকেরা সর্বাধিক গরমের সময়ে শোকপালন করত। আবার বর্ষাকালে গাছপালা জন্মালে, মনে করা হত তম্মুষ পরলোক থেকে ফিরে এসেছে। তার নামের প্রথম অক্ষর, টাউ যা একটি ক্রুশের আকারে ছিল, তার দ্বারা তাকে চিহ্নিত করা হত। এর দ্বারা স্বভাবতই আমাদের মনে পড়ে যায় ক্রুশের প্রতি খ্রীষ্টজগতের প্রতিমাপূজাতুল্য ভক্তির কথা।
১২. যিহিষ্কেল ২৫ জন ইস্রায়েলীয় ধর্মত্যাগী পুরুষকে কী করতে দেখেছিলেন, এবং খ্রীষ্টজগতে একই ধরনের কী কাজ করা হয়?
১২ এরপর, মন্দিরের ভিতর-প্রাঙ্গনে, যিহিষ্কেল ২৫ জন ধর্মত্যাগী ইস্রায়েলীয় পুরুষকে সূর্যের উপাসনা করতে দেখেছিলেন—যা এইরকম প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে যিহোবার আদেশ লঙ্ঘন ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:১৫-১৯) এই পৌত্তলিকেরা যিহোবার প্রতি ঘৃণার্হ পল্লব তুলে ধরেছে, যা হয়ত পুরুষ জননেন্দ্রিয়কে চিত্রিত করে। সুতরাং, আশ্চর্যের বিষয় নয় যে যিহোবা তাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন না, ঠিক যেমন “মহাক্লেশের” সময়ে, খ্রীষ্টজগৎ তাঁর সাহায্য চাইবে, কিন্তু তা লাভ করতে ব্যর্থ হবে। (মথি ২৪:২১) সেই ধর্মত্যাগী ইস্রায়েলীয়রা যেমন ঈশ্বরের মন্দিরের দিকে পিছন ফিরে দীপ্তি-দায়ক সূর্যের উপাসনা করছিল, সেইভাবে খ্রীষ্টজগৎ ঈশ্বরের দীপ্তি উপেক্ষা করে, মিথ্যা মতবাদ শিক্ষা দেয়, জাগতিক জ্ঞানকে আরাধ্য স্থান দেয়, আর অনৈতিকতার প্রতি উদাসীনতা দেখায়।—যিহিষ্কেল ৮:১৫-১৮.
১৩. যিহিষ্কেলের দর্শনে যে যে ধরনের প্রতিমাপূজা দেখানো হয়েছিল, যিহোবার সাক্ষীরা কী কী উপায়ে তা এড়িয়ে চলে?
১৩ খ্রীষ্টজগৎ, অথবা রূপক যিরূশালেমকে যিহিষ্কেল যে রকম প্রতিমাপূজা অভ্যাস করতে দেখেছিলেন, যিহোবার সাক্ষীরা তা বর্জন করে। আমরা ঈশ্বর-নিন্দক প্রতীকচিহ্নের পূজা করি না। যদিও আমরা সরকারি “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের” প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি, কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের বাধ্যতা আপেক্ষিক। (রোমীয় ১৩:১-৭; মার্ক ১২:১৭; প্রেরিত ৫:২৯) আমরা যিহোবা এবং তাঁর রাজ্যের প্রতি আন্তরিক ভক্তি দেখাই। আমরা স্রষ্টা এবং তাঁর সৃষ্টির পরিবর্তে ক্রমবিবর্তনবাদকে স্থান দিই না। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) আমরা কখনও ক্রুশের পূজা অথবা বুদ্ধিবাদ, দর্শনশাস্ত্র, অথবা অন্যান্য ধরনের জাগতিক জ্ঞানকে আরাধ্য স্থান দিই না। (১ তীমথিয় ৬:২০, ২১) আমরা অন্য সমস্ত ধরনের প্রতিমাপূজা থেকেও সাবধান থাকি। এগুলির মধ্যে কয়েকটি কী?
অন্য প্রকারের প্রতিমাপূজা
১৪. প্রকাশিত বাক্য ১৩:১ পদের “বন্য পশু” সম্বন্ধে যিহোবার সেবকরা কী দৃষ্টিভঙ্গি রাখে?
১৪ মানবসমাজের সঙ্গে একটি রূপক “বন্য পশুর” উপাসনা করায় খ্রীষ্টানরা যোগ দেয় না। প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “আমি দেখিলাম, “সমুদ্রের মধ্য হইতে এক পশু উঠিতেছে; তাহার দশ শৃঙ্গ” ও সপ্ত মস্তক; এবং তাহার শৃঙ্গগুলিতে দশ কিরীট . . . পৃথিবী-নিবাসীদের সমস্ত লোক তাহার ভজনা করিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১, ৮) পশুর দ্বারা “রাজগণ” অথবা রাজনৈতিক শক্তিগুলি চিহ্নিত হতে পারে। (দানিয়েল ৭:১৭; ৮:৩-৮, ২০-২৫) সুতরাং রূপক বন্য পশুর সাতটি মস্তকের অর্থ এই বিশ্ব-শক্তিগুলি—মিশর, অশূর, বাবিলন, মাদীয়-পারস্য, গ্রীস, রোম, এবং ব্রিটেন ও আমেরিকা দ্বারা যৌথভাবে গঠিত অ্যাংলো-আমেরিকান শক্তি। “এ যুগের দেব,” শয়তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার পূজা করতে মানবজাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে খ্রীষ্টজগতের যাজকবর্গ ঈশ্বর এবং খ্রীষ্টের প্রতি চূড়ান্ত অশ্রদ্ধা দেখায়। (যোহন ১২:৩১) কিন্তু, নিরপেক্ষ খ্রীষ্টান এবং রাজ্যের সমর্থক হিসাবে, যিহোবার সেবকেরা এই ধরনের প্রতিমাপূজা প্রত্যাখ্যান করে।—যাকোব ১:২৭.
১৫. জগতের তারকাদের যিহোবার ব্যক্তিরা কীভাবে দেখে, এবং একজন সাক্ষী এই সম্বন্ধে কী বলেছিলেন?
১৫ ঈশ্বরের ব্যক্তিরা মনোরঞ্জন এবং ক্রীড়া জগতের তারকাদেরও উপাসনার স্থান দেয় না। যিহোবার সাক্ষী হওয়ার পরে, একজন সঙ্গীতজ্ঞ বলেছিলেন: “মনোরঞ্জন এবং নাচের জন্য সঙ্গীত ভুল ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে পারে . . . গায়ক আনন্দ এবং কোমলতা সম্বন্ধে গান করে যা অনেক শ্রোতা মনে করতে পারে যে তারা তাদের সাথীর কাছে পাচ্ছে না। গায়ক যে সম্বন্ধে গান করে, অনেক সময়ে সেই অনুযায়ী তাকে দেখা হয়। আমি কয়েকজন পেশাদার গায়ক এবং সঙ্গীতজ্ঞদের জানি যারা এই জন্য মেয়েদের কাছে খুবই প্রিয়। একবার এই স্বপ্নের জগতে ডুবে গেলে, গায়কের উপাসনা করার প্রতি একজন পরিচালিত হতে পারে। খুব সাধারণভাবেই এটি শুরু হতে পারে, হয়ত স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে একটি সই চাওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু কেউ কেউ শিল্পীকে তাদের আদর্শ হিসাবে দেখতে পারে, এবং অতি উচ্চাসনে স্থান দিয়ে তাকে উপাসনার বস্তু করে তুলতে পারে। তারা হয়ত সেই তারকার ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পারে এবং তার মত সাজসজ্জা করতে পারে। খ্রীষ্টানদের মনে রাখা উচিৎ যে আরাধনা একমাত্র ঈশ্বরের পাওয়া উচিৎ।”
১৬. কী দেখায় যে ধার্মিক স্বর্গদূতরা প্রতিমাপূজা প্রত্যাখ্যান করেন?
১৬ হ্যাঁ, একমাত্র ঈশ্বর আরাধনা অথবা উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। যে দূত যোহনকে আশ্চর্য সব দর্শন দেখিয়েছিলেন, “ভজনা করিবার জন্য তাঁহার চরণের সম্মুখে” পড়লে, সেই আত্মিক প্রাণী কোনভাবে উপাসনা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেছিলেন: “দেখিও, এমন কর্ম্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার ভ্রাতা ভাববাদিগণের ও এই গ্রন্থে লিখিত বচন পালনকারিগণের সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর।” (প্রকাশিত বাক্য ২২:৮, ৯) যিহোবার প্রতি ভয়, অথবা প্রগাঢ় শ্রদ্ধার জন্য আমরা একমাত্র তাঁকেই উপাসনা করতে পরিচালিত হই। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৭) সুতরাং, প্রকৃত ঐশিক ভক্তি প্রতিমাপূজা থেকে আমাদের রক্ষা করে।—১ তীমথিয় ৪:৮.
১৭. প্রতিমাপূজাতুল্য যৌন অনৈতিকতা থেকে কিভাবে আমরা সাবধান থাকতে পারি?
১৭ যন অনৈতিকতা আরেক ধরনের প্রতিমাপূজা যা যিহোবার সেবকরা প্রত্যাখ্যান করে। তারা জানে যে “বেশ্যাগামী কি অশুদ্ধাচারী কি লোভী—সে ত প্রতিমাপূজক—কেহই খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পায় না।” (ইফিষীয় ৫:৫) প্রতিমাপূজা জড়িত আছে কারণ অবৈধ আনন্দ লাভের আকাঙ্ক্ষা উপাসনার বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। অন্যায় যৌন ইচ্ছার দ্বারা ঐশিক গুণাবলী নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিপদ রয়েছে। অশ্লীল বিষয়ের প্রতি কর্ণ এবং দৃষ্টি দিয়ে, একজন ব্যক্তি, পবিত্র ঈশ্বর যিহোবার সাথে কোন সম্পর্ক থাকলেও, তা ধ্বংস করে ফেলে। (যিশাইয় ৬:৩) সুতরাং, এই ধরনের প্রতিমাপূজা থেকে সাবধান থাকতে হলে, ঈশ্বরের সেবকদের অশ্লীল সাহিত্যাদি এবং ক্ষতিকারক সঙ্গীতকে এড়িয়ে চলতে হবে। শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে দৃঢ় আত্মিক মানগুলি তাদের ধরে রাখতে হবে, এবং ‘তাদের সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করতে হবে, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।’—ইফিষীয় ৪:২২-২৪.
লোভ এবং অন্যায় লালসা এড়িয়ে চলুন
১৮, ১৯. (ক) লোভ এবং অন্যায় লালসা কী? (খ) প্রতিমাপূজাতুল্য লোভ এবং অন্যায় লালসা থেকে কিভাবে আমরা সাবধান থাকতে পারি?
১৮ খ্রীষ্টানরা লোভ এবং লালসা থেকেও সাবধান থাকে, যেগুলির সঙ্গে প্রতিমাপূজার নিকট সম্পর্ক আছে। লোভের অর্থ অবাধ অথবা লোভাতুর আকাঙ্ক্ষা, আর অন্যায় লালসার অর্থ অন্যের কোন বস্তুর উপর লোভ। যীশু লালসার বিরুদ্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন এবং একটি লোভী ধনী ব্যক্তির বিষয়ে বলেছিলেন, যে মৃত্যুর সময়ে তার ধনসম্পত্তি থেকে কোন উপকার পায়নি আর যে “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্” না হওয়ার জন্য খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে ছিল। (লূক ১২:১৫-২১) পৌল উপযুক্তরূপেই সহবিশ্বাসীদের উপদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা।”—কলসীয় ৩:৫.
১৯ যারা অর্থের প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত, অত্যধিক পরিমাণে খাদ্য এবং পানীয় ব্যবহার করে, অথবা ক্ষমতা লাভ করার উচ্চাশা রাখে, তারা এই সমস্ত ইচ্ছাকে প্রতিমার স্থান দেয়। যেমন পৌল উল্লেখ করেছিলেন, লোভী ব্যক্তি একজন প্রতিমাপূজক যে ঈশ্বরের রাজ্যে স্থান পাবে না। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; ইফিষীয় ৫:৫) সুতরাং, যে বাপ্তাইজিত ব্যক্তিরা লোভী ব্যক্তি হিসাবে প্রতিমাপূজক, তাদের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে বহিষ্কার করা যেতে পারে। কিন্তু শাস্ত্র প্রয়োগ করে এবং আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে, আমরা লোভ এড়িয়ে চলতে পারি। হিতোপদেশ ৩০:৭-৯ পদ বলে: “আমি তোমার [যিহোবা ঈশ্বরের] কাছে দুই বর ভিক্ষা করিয়াছি, আমার জীবন থাকিতে তাহা অস্বীকার করিও না; অলীকতা ও মিথ্যাকথা আমা হইতে দূর কর; দরিদ্রতা বা ঐশ্বর্য্য আমাকে দিও না, আমার নিরূপিত খাদ্য ভোজন করাও; পাছে অতি তৃপ্ত হইলে আমি তোমাকে অস্বীকার করিয়া বলি, সদাপ্রভু কে? কিম্বা পাছে দরিদ্র হইলে চুরি করিয়া বসি, ও আমার ঈশ্বরের নাম অপব্যবহার করি।” এইরকম মনোভাব লোভ এবং অন্যায় লালসা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
আত্ম-উপাসনা করা থেকে সাবধান থাকুন
২০, ২১. যিহোবার ব্যক্তিরা কিভাবে আত্ম-উপাসনা থেকে সাবধান থাকে?
২০ যিহোবার লোকেরা আত্ম-উপাসনা করা থেকেও সাবধান থাকে। এই জগতে নিজেকে এবং নিজের ইচ্ছাকে উপাসনার স্থান দেওয়া সাধারণ। খ্যাতি এবং গৌরবের আকাঙ্ক্ষা অনেককে বিপথে যেতে বাধ্য করেছে। তারা চায় তাদের নিজেদের ইচ্ছা পালন করা হোক, ঈশ্বরের নয়। কিন্তু আমরা ঈশ্বরের সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে পারি না যদি আত্ম-উপাসনার বশে এসে আমরা যে কোন উপায়ে আমাদের নিজেদের মতামত জারি করি এবং অন্যদের উপর প্রভুত্ব করি। (হিতোপদেশ ৩:৩২; মথি ২০:২০-২৮; ১ পিতর ৫:২, ৩) যীশুর অনুগামী হিসাবে আমরা জগতের লজ্জার গুপ্ত কার্য্যসকল জলাঞ্জলি দিয়েছি।—২ করিন্থীয় ৪:১, ২.
২১ খ্যাতি লাভ করার চেষ্টা করার পরিবর্তে, ঈশ্বরের ব্যক্তিরা পৌলের নির্দেশ অনুযায়ী চলে: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।” (১ করিন্থীয় ১০:৩১) যিহোবার সেবক হিসাবে, আমরা প্রতিমাপূজাতুল্য দাবি করি না যে আমাদের ইচ্ছা রাখতেই হবে কিন্তু আনন্দসহকারে ঐশিক ইচ্ছা পালন করি, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস”-এর নির্দেশনা গ্রহণ করি এবং যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করি।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
সাবধানতা বজায় রাখুন!
২২, ২৩. কিভাবে আমরা সর্বপ্রকার প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকতে পারি?
২২ যিহোবার প্রজা হিসাবে, আমরা পার্থিব প্রতিমাদের সামনে মাথা নত করি না। আমরা পরোক্ষভাবে প্রতিমাপূজা করা থেকেও সাবধান থাকি। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের সর্বপ্রকার প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকা উচিৎ। এইভাবে আমরা যোহনের উপদেশ পালন করতে পারি: “তোমরা প্রতিমাগণ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর।”—১ যোহন ৫:২১.
২৩ যদি আপনি যিহোবার একজন সেবক হন, তাহলে সর্বদা আপনার বাইবেল অনুযায়ী শিক্ষিত সংবেদ এবং বিচক্ষণতা ব্যবহার করুন। (ইব্রীয় ৫:১৪) তাহলে আপনি জগতের প্রতিমাপূজা করার মনোভাবের দ্বারা কলুষিত হবেন না কিন্তু সেই তিনজন বিশ্বস্ত ইব্রীয় ব্যক্তি এবং অনুগত প্রারম্ভিক খ্রীষ্টানদের মত হতে পারবেন। আপনি যিহোবার প্রতি একাগ্র ভক্তি দেখাবেন, এবং তিনি সর্বপ্রকার প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকতে আপনাকে সাহায্য করবেন। (w93 1⁄15)
আপনি কী মনে করেন?
▫ যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা বিভিন্ন ধরনের প্রতিমাপূজা কিভাবে যিহোবার সাক্ষীরা এড়িয়ে চলেন?
▫ প্রকাশিত বাক্যের ১৩:১ পদের “বন্য পশু” কী, এবং সেই সম্বন্ধে যিহোবার সেবকদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
▫ মনোরঞ্জন এবং ক্রীড়া জগতের তারকাদের উপাস্য স্থান দেওয়া থেকে সাবধান থাকা উচিৎ কেন?
▫ কিভাবে আমরা আত্ম-উপাসনা থেকে সাবধান থাকতে পারি?
▫ কেন সর্বপ্রকার প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকা উচিৎ?
[Pictures on page 28]
আপনি কি জানেন কিভাবে যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা ঘৃণার্হ বস্তুগুলি খ্রীষ্টজগতের প্রতিমাপূজাকে চিত্রিত করে?
[সজন্যে]
Artwork (upper left) based on photo by Ralph Crane/Bardo Museum