জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
সেপ্টেম্বর ৪-১০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিহিষ্কেল ৪২-৪৫
“বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত হয়!”
(যিহিষ্কেল ৪৩:১০-১২) হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েল-কুলকে এই গৃহের কথা জ্ঞাত কর, যেন তাহারা আপন আপন অপরাধের জন্য লজ্জিত হয়, আর তাহারা ইহার সকল স্থান পরিমাণ করুক। ১১ যদি তাহারা আপনাদের কৃত সমস্ত কর্ম্ম প্রযুক্ত লজ্জিত হয়, তবে তুমি তাহাদিগকে গৃহের আকার, গঠন, নির্গমন-স্থান ও প্রবেশ-স্থান সকল, তাহার সমস্ত আকৃতি ও সমস্ত বিধি, তাহার সমস্ত আকৃতি ও সমস্ত ব্যবস্থা জ্ঞাত কর, আর তাহাদের সাক্ষাতে লিখ; এবং তাহারা তাহার সমস্ত আকৃতি ও সমস্ত বিধি রক্ষা করিয়া তদনুযায়ী কর্ম্ম করুক। ১২ গৃহের ব্যবস্থা এই; পর্ব্বতের শিখরে চারিদিকে তাহার সমস্ত পরিসীমা অতি পবিত্র। দেখ, ইহাই সেই গৃহের ব্যবস্থা।
ঈশ্বরের মন্দিরে “তোমার চিত্ত নিবেশ কর”!
৩ এই দর্শন, যিহিষ্কেলের বইয়ের নয়টা অধ্যায়ে লেখা হয়েছে। এতে নির্বাসিত যিহুদিদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিজ্ঞা ছিল। শুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত হবেই! তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, এই দর্শন যিহোবাকে যারা ভালোবাসেন তাদেরকে উৎসাহ জুগিয়ে এসেছে। কীভাবে? আসুন আমরা পরীক্ষা করি যে নির্বাসিত যিহুদিদের কাছে এই দর্শন কী অর্থ রেখেছিল যেখানে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলা হয়েছিল। এই দর্শনের চারটে প্রধান অংশ রয়েছে: মন্দির, যাজকবর্গ, অধ্যক্ষ এবং দেশ।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১০৮২ অনু. ২, ইংরেজি
মন্দির
যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৩ সালে, যিরূশালেম ও শলোমনের মন্দির ধ্বংস হওয়ার পর ১৪তম বছরে যাজক ও ভাববাদী যিহিষ্কেলকে এক দর্শনের মাধ্যমে একটা পর্বতের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তিনি যিহোবার মহান মন্দির দেখতে পেয়েছিলেন। (যিহি ৪০:১, ২) নির্বাসিত যিহুদিদের অবনত ও অনুতপ্ত হওয়ার জন্য এবং নিঃসন্দেহে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য, যিহিষ্কেলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি যা দেখেছিলেন, তার সমস্ত কিছুই “ইস্রায়েল-কুলকে” জ্ঞাত করেন। (যিহি ৪০:৪; ৪৩:১০, ১১) এই দর্শনে সতর্কতার সঙ্গে পরিমাণ করার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পরিমাপ করার একক হিসেবে “নল” (৩.১১ মিটার; ১০.২ ফুট দৈর্ঘ্য নল) এবং “হস্ত” (৫১.৮ মিটার; ২০.৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য হস্ত) ব্যবহার করা হয়েছিল। (যিহি ৪০:৫) এই পরিমাপের বিষয় মনোযোগ দিয়ে দেখার পর কেউ কেউ মনে করে, দর্শনের এই মন্দির নির্বাসনের পরবর্তী সময়ে সরুব্বাবিলের দ্বারা নির্মিত মন্দিরের আদর্শ হিসেবে কাজ করেছিল। কিন্তু এই ধারণার চূড়ান্ত কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
(যিহিষ্কেল ৪৪:২৩) আর তাহারা আমার প্রজাগণকে পবিত্র ও সামান্য বস্তুর প্রভেদ শিক্ষা দিবে, এবং শুচি ও অশুচির প্রভেদ জানাইবে।
(যিহিষ্কেল ৪৫:১৬) দেশের সমস্ত প্রজা ইস্রায়েলের অধ্যক্ষকে এই উপহার দিতে বাধ্য হইবে।
ঈশ্বরের মন্দিরে “তোমার চিত্ত নিবেশ কর”!
১০ দর্শনের এই সমস্ত কিছু নির্বাসিতদের হৃদয়কে কতই না উৎসাহিত করেছিল! তাদের বলা হয়েছিল যে, প্রত্যেক পরিবার সেখানে তাদের নিজস্ব ভূমি পাবে। (মীখা ৪:৪ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) সেখানে বিশুদ্ধ উপাসনা এক উচ্চ এবং মুখ্য স্থান পাবে। আর লক্ষ্য করুন যে, যিহিষ্কেলের দর্শনে অধ্যক্ষ, যাজকবর্গের মতোই লোকেদের দান করা ভূমিতে বাস করবেন। (যিহিষ্কেল ৪৫:১৬) সুতরাং, এর অর্থ ছিল পুনর্স্থাপিত দেশে লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যিহোবা যাদের নিযুক্ত করেছেন তাদের কাজে সহযোগিতা করতে ও তাদের বশীভূত হয়ে তাদের সমর্থন করতে হয়েছিল। তাই সবদিক থেকেই এই ভূমি সংগঠন, সহযোগিতা ও নিরাপত্তার এক প্রতীক ছিল।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(যিহিষ্কেল ৪৩:৮, ৯) তাহারা আমার গোবরাটের কাছে তাহাদের গোবরাট, ও আমার চৌকাঠের পার্শ্বে তাহাদের চৌকাঠ দিত, এবং আমার ও তাহাদের মধ্যে কেবল এক ভিত্তি ছিল; আর তাহারা আপনাদের কৃত জঘন্য ক্রিয়া দ্বারা আমার পবিত্র নাম অশুচি করিত, এই নিমিত্ত আমি নিজ ক্রোধানলে তাহাদিগকে গ্রাস করিয়াছি। ৯ এখন তাহারা আপনাদের ব্যভিচার ও আপনাদের রাজাদের শব আমা হইতে দূর করুক, তাহাতে আমি চিরকাল তাহাদের মধ্যে বাস করিব।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৪৬৭ অনু. ৪, ইংরেজি
নাম
ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের নামের লোক হিসেবে তাঁর ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হয়েছিল আর এভাবে ঈশ্বরের নাম অপবিত্র বা অশুচি করেছিল। (যিহি ৪৩:৮; আমোষ ২:৭) ইস্রায়েলীয়দের অবিশ্বস্ততার কারণে ঈশ্বর যেহেতু তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন, তাই অন্যান্য জাতি যিহোবার নামের দুর্নাম করার সুযোগ পেয়েছিল। (তুলনা করুন, গীত ৭৪:১০, ১৮; যিশা ৫২:৫) যিহোবার কাছ থেকেই যে সেই শাস্তি এসেছিল, তা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায়, সেই জাতিগুলো ইস্রায়েলীয়দের উপর আসা দুর্দশার কারণ সম্বন্ধে ভুলভাবে এই উপসংহারে এসেছিল, তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করার জন্য যিহোবার ক্ষমতা নেই। তাঁর নামের উপর থেকে এই দুর্নাম দূর করার জন্য যিহোবা তাঁর নামের পক্ষে কাজ করেছিলেন এবং অবশিষ্ট ইস্রায়েলীয়দের তাদের বাসভূমিতে পুনর্স্থাপিত করেছিলেন।—যিহি ৩৬:২২-২৪.
(যিহিষ্কেল ৪৫:৯, ১০) প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ, ইহাই তোমাদের যথেষ্ট হউক; তোমরা দৌরাত্ম্য ও ধনাপহার দূর কর, ন্যায় ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান কর, আমার প্রজাদিগকে অধিকারচ্যুত করিতে ক্ষান্ত হও, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। ১০ ন্যায্য পাল্লা, ন্যায্য ঐফা ও ন্যায্য বাৎ তোমাদের হউক।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১৪০
ন্যায়বিচার
তাই, যারা তাঁর অনুমোদন লাভ করতে চায়, তাদের কাছ থেকে যিহোবা সবসময় উপযুক্তভাবে চান যেন তারা তাঁর মান ভালোভাবে জানে ও তা অনুসরণ করে। (যিশা ১:১৭, ১৮; ১০:১, ২; যির ৭:৫-৭; ২১:১২; ২২:৩, ৪; যিহি ৪৫:৯, ১০; আমোষ ৫:১৫; মীখা ৩:৯-১২; ৬:৮; সখ ৭:৯-১২)
বাইবেল পাঠ
(যিহিষ্কেল ৪৪:১-৯) পরে তিনি ধর্ম্মধামের পূর্ব্বাভিমুখ বহির্দ্বারের দিকে আমাকে ফিরাইয়া আনিলেন; তখন সেই দ্বার রুদ্ধ ছিল। ২ পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, এই দ্বার রুদ্ধ থাকিবে, খোলা যাইবে না; এবং ইহা দিয়া কেহ প্রবেশ করিবে না; কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইহা দিয়া প্রবেশ করিয়াছেন, তন্নিমিত্ত ইহা রুদ্ধ থাকিবে। ৩ অধ্যক্ষ বলিয়া কেবল অধ্যক্ষই সদাপ্রভুর সম্মুখে আহার করণার্থে ইহার মধ্যে বসিবেন; তিনি এই দ্বারের বারাণ্ডার পথ দিয়া ভিতরে আসিবেন, ও সেই পথ দিয়া বাহিরে যাইবেন। ৪ পরে তিনি উত্তরদ্বারের পথে আমাকে গৃহের সম্মুখে আনিলেন; তাহাতে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সদাপ্রভুর গৃহ সদাপ্রভুর প্রতাপে পরিপূর্ণ হইল; তখন আমি উপুড় হইয়া পড়িলাম। ৫ সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্যসন্তান, সদাপ্রভুর গৃহের সমস্ত বিধি ও সমস্ত ব্যবস্থার বিষয়ে যাহা যাহা আমি তোমাকে বলিব, তুমি তাহাতে মনোযোগ কর, স্বচক্ষে তাহা নিরীক্ষণ কর ও স্বকর্ণে শ্রবণ কর, এবং এই গৃহে প্রবেশ করিবার ও ধর্ম্মধাম হইতে বাহিরে যাইবার সমস্ত পথের বিষয়ে মনোযোগ কর। ৬ আর সেই বিদ্রোহীদলকে, ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে ইস্রায়েল-কুল, তোমাদের সকল জঘন্য ক্রিয়া যথেষ্ট হইয়াছে। ৭ বস্তুতঃ তোমরা অচ্ছিন্নত্বক্ হৃদয় ও অচ্ছিন্নত্বক্ মাংসবিশিষ্ট বিজাতীয় লোকদিগকে আমার ধর্ম্মধামে থাকিতে ও আমার সেই গৃহ অপবিত্র করিতে ভিতরে আনয়ন করিয়াছ, তোমরা আমার উদ্দেশে ভক্ষ্য, মেদ ও রক্ত উৎসর্গ করিয়াছ, আর তোমরা আমার নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছ, তোমাদের সকল জঘন্য ক্রিয়া ছাড়া ইহা করিয়াছ। ৮ আর তোমরা আমার পবিত্র বিষয়সমূহের রক্ষণীয় রক্ষা কর নাই; কিন্তু আপনাদের ইচ্ছামতে আমার ধর্ম্মধামে রক্ষণীয়ের রক্ষক নিযুক্ত করিয়াছ। ৯ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে যে সকল বিজাতীয় লোক আছে, তাহাদের মধ্যে অচ্ছিন্নত্বক্ হৃদয় ও অচ্ছিন্নকত্বক্ মাংসবিশিষ্ট কোন বিজাতীয় লোক আমার ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিবে না।
সেপ্টেম্বর ১১-১৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | যিহিষ্কেল ৪৬-৪৮
“যে-আশীর্বাদগুলো পুনর্স্থাপিত ইস্রায়েল উপভোগ করবে”
(যিহিষ্কেল ৪৭:১) পরে তিনি আমাকে ঘুরাইয়া গৃহের প্রবেশস্থানে আনিলেন, আর দেখ, গৃহের গোবরাটের নীচে হইতে জল বাহির হইয়া পূর্ব্বদিকে বহিতেছে, কেননা গৃহের সম্মুখভাগ পূর্ব্বদিকে ছিল; আর সেই জল নীচে হইতে গৃহের দক্ষিণ বগল দিয়া যজ্ঞবেদির দক্ষিণে নামিয়া যাইতেছিল।
(যিহিষ্কেল ৪৭:৭-১২) আর আমি যখন ফিরিয়া গেলাম, তখন দেখ, সেই নদীর তীরে এপারে ওপারে অনেক বৃক্ষ ছিল। ৮ তখন তিনি আমাকে কহিলেন, এই জল পূর্ব্বদিক্স্থ অঞ্চলে বহিতেছে, অরাবা তলভূমিতে নামিয়া যাইবে, এবং সমুদ্রের দিকে যাইবে; যে জল বাহির করা হইয়াছে তাহা সমুদ্রে যাইবে ও ইহার জল উত্তম হইবে। ৯ আর এই স্রোতের জল যে কোন স্থানে বহিবে সে স্থানের অগণনীয় জীবজন্তু বাঁচিবে; আর যার-পর-নাই প্রচুর মৎস্য হইবে; কেননা এই জল সেখানে গিয়াছে বলিয়া সেখানকার [জল] উত্তম হইবে; এবং এই স্রোত যে কোন স্থান দিয়া বহিবে, সেই স্থানের সকলই সঞ্জীবিত হইবে। ১০ আর তাহার তীরে ধীবরগণ দাঁড়াইবে, ঐন্-গদী অবধি ঐন্-ইগ্লয়িম পর্য্যন্ত জাল বিস্তার করিবার স্থান হইবে; মহাসমুদ্রের মৎস্যের ন্যায় নানাজাতীয় মৎস্য জন্মিয়া যার-পর-নাই প্রচুর হইবে। ১১ কিন্তু তাহার পঙ্কস্থান ও জলাভূমির প্রতীকার হইবে না; তাহা লবণার্থে নিরূপিত। ১২ আর নদীর ধারে এপারে ওপারে সর্ব্বপ্রকার ভোজনার্থ ফলের বৃক্ষ হইবে, তাহার পত্র ম্লান হইবে না, ও ফল শেষ হইবে না; প্রতিমাসে তাহার ফল পাকিবে, কেননা তাহার সেচনের জল ধর্ম্মধাম হইতে নির্গত; আর তাহার ফল আহারের জন্য ও পত্র আরোগ্যের নিমিত্ত ব্যবহৃত হইবে।
প্রহরীদুর্গ ৯৯ ৩/১ ১০ অনু. ১১-১২
ঈশ্বরের মন্দিরে “তোমার চিত্ত নিবেশ কর”!
১১ যিহোবা কি তাদের ভূমি আশীর্বাদ করবেন? ভবিষ্যদ্বাণী এক হৃদয়গ্রাহী ছবির সাহায্যে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়। মন্দির থেকে এক জলধারা বয়ে আসে যেটা বয়ে চলতে চলতে চওড়া হয় আর মৃত সমুদ্র পর্যন্ত যেতে যেতে প্রবল বেগে বইতে থাকা এক নদীতে পরিণত হয়। এর ফলে মৃত সমুদ্র পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে আর এর তীরে এক বিশাল এলাকা জুড়ে মৎস্য শিল্প গড়ে ওঠে। নদীর তীরগুলোতে অনেক গাছ রয়েছে যেগুলো সারা বছর ধরে ফল উৎপাদন করে আর পুষ্টি ও আরোগ্য দান করে।—যিহিষ্কেল ৪৭:১-১২.
১২ নির্বাসিতদের কাছে পুনর্স্থাপন সম্বন্ধে করা অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলো খুবই প্রিয় ছিল আর এই দর্শনে সেই প্রতিজ্ঞাগুলোকেই আবার বলা হয়েছিল এবং এগুলোর পূর্ণতা সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। যিহোবার অনুপ্রাণিত ভাববাদীরা বার বার পরমদেশতুল্য পরিস্থিতিতে এক পুনর্স্থাপিত বসতিপূর্ণ ইস্রায়েলের বর্ণনা দিয়েছিলেন। ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে বার বার বলা হয়েছিল যে বসতিহীন এলাকাগুলো আবার জনমুখর হয়ে উঠবে। (যিশাইয় ৩৫:১, ৬, ৭; ৫১:৩; যিহিষ্কেল ৩৬:৩৫; ৩৭:১-১৪) তাই লোকেরা আশা করতে পারত যে যেমন পুনর্স্থাপিত মন্দির থেকে নদী বয়ে আসছে সেইরকম যিহোবার কাছ থেকে তারা জীবনদায়ক আশীর্বাদগুলো পাবে। ফলে ঈশ্বরের চোখে মৃত জাতি আবার জীবিত হয়ে উঠবে। যিহোবা পুনর্স্থাপিত লোকেদের আশীর্বাদ করবেন ও তত্ত্বাবধানের জন্য যোগ্য আধ্যাত্মিক পুরুষদের দেবেন। এই পুরুষেরা ধার্মিক হবেন, দর্শনে দেখা নদীর তীরের গাছগুলোর মতো দৃঢ় হবেন আর ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে আবার গড়ে তোলার জন্য নেতৃত্ব দেবেন। এ ছাড়া, যিশাইয় ভাববাদীও ‘ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষদের’ সম্বন্ধে লিখেছিলেন যারা ‘পুরাকালের ধ্বংসিত স্থান সকল নির্ম্মাণ করিবেন।’—যিশাইয় ৬১:৩, ৪.
(যিহিষ্কেল ৪৭:১৩, ১৪) প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশকে যে দেশ অধিকার জন্য দিবে, তাহার সীমা এই; যোষেফের দুই অংশ হইবে। ১৪ আর তোমরা সকলে সমানাংশে অধিকার বলিয়া তাহা পাইবে, কারণ আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে এই দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম; এই দেশ অধিকার বলিয়া তোমাদের হইবে।
ঈশ্বরের মন্দিরে “তোমার চিত্ত নিবেশ কর”!
১০ দর্শনের এই সমস্ত কিছু নির্বাসিতদের হৃদয়কে কতই না উৎসাহিত করেছিল! তাদের বলা হয়েছিল যে প্রত্যেক পরিবার সেখানে তাদের নিজস্ব ভূমি পাবে। (মীখা ৪:৪ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) সেখানে বিশুদ্ধ উপাসনা এক উচ্চ এবং মুখ্য স্থান পাবে। আর লক্ষ্য করুন যে যিহিষ্কেলের দর্শনে অধ্যক্ষ, যাজকবর্গের মতোই লোকেদের দান করা ভূমিতে বাস করবেন। (যিহিষ্কেল ৪৫:১৬) সুতরাং, এর অর্থ ছিল পুনর্স্থাপিত দেশে লোকেদের, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যিহোবা যাদের নিযুক্ত করেছেন তাদের কাজে সহযোগিতা করতে ও তাদের বশীভূত হয়ে তাদের সমর্থন করতে হয়েছিল। তাই সবদিক থেকেই এই ভূমি সংগঠন, সহযোগিতা ও নিরাপত্তার এক প্রতীক ছিল।
(যিহিষ্কেল ৪৮:৯, ১০) সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমরা যে উপহার-ভূমি নিবেদন করিবে, তাহা পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ ও দশ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ হইবে। ১১ সেই পবিত্র উপহার-ভূমি যাজকদের জন্য হইবে; তাহা উত্তরদিকে পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ, পশ্চিমদিকে দশ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ, পূর্ব্বদিকে দশ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ ও দক্ষিণদিকে পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ; তাহার মধ্যস্থানে সদাপ্রভুর ধর্ম্মধাম থাকিবে।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(যিহিষ্কেল ৪৭:১) পরে তিনি আমাকে ঘুরাইয়া গৃহের প্রবেশস্থানে আনিলেন, আর দেখ, গৃহের গোবরাটের নীচে হইতে জল বাহির হইয়া পূর্ব্বদিকে বহিতেছে, কেননা গৃহের সম্মুখভাগ পূর্ব্বদিকে ছিল; আর সেই জল নীচে হইতে গৃহের দক্ষিণ বগল দিয়া যজ্ঞবেদির দক্ষিণে নামিয়া যাইতেছিল।
(যিহিষ্কেল ৪৭:৮) তখন তিনি আমাকে কহিলেন, এই জল পূর্ব্বদিক্স্থ অঞ্চলে বহিতেছে, অরাবা তলভূমিতে নামিয়া যাইবে, এবং সমুদ্রের দিকে যাইবে; যে জল বাহির করা হইয়াছে তাহা সমুদ্রে যাইবে ও ইহার জল উত্তম হইবে।
(যিহিষ্কেল ৪৮:৩০) আর নগরের এই সকল পরিসর হইবে; উত্তর পার্শ্বে পরিমাণে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]।
(যিহিষ্কেল ৪৮:৩২-৩৪) পূর্ব্ব পার্শ্বে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত], আর তিন দ্বার হইবে; যোষেফের এক দ্বার, বিন্যামীনের এক দ্বার, দানের এক দ্বার। ৩৩ দক্ষিণ পার্শ্বে পরিমাণে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত], আর তিন দ্বার হইবে; শিমিয়োনের এক দ্বার, ইষাখরের এক দ্বার ও সবূলূনের এক দ্বার। ৩৪ আর পশ্চিম পার্শ্বে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত] ও তাহার তিন দ্বার হইবে; গাদের এক দ্বার, আশেরের এক দ্বার ও নপ্তালির এক দ্বার।
ঈশ্বরের মন্দিরে “তোমার চিত্ত নিবেশ কর”!
১৪ এই ঘটনাগুলোই কি যিহিষ্কেলের দর্শনের একমাত্র পূর্ণতা ছিল? না; এই দর্শনে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা আরও বড় আকারে হওয়ার ছিল। গভীরভাবে চিন্তা করুন: যিহিষ্কেল যে মন্দিরটা দেখেছিলেন সেটাকে যেভাবে বলা হয়েছিল বাস্তবে সেভাবে নির্মাণ করা যেত না। তবে এটা সত্যি যে, যিহুদিরা সেই দর্শনকে বাস্তব বিষয় বলে ধরে নিয়েছিল আর মন্দিরকে কিছুটা সেইরকম করে তৈরিও করেছিল। কিন্তু, দর্শনে দেখানো মন্দির এত বিশাল ছিল যে এমনকী মোরিয়া পর্বত অর্থাৎ আগে যেখানে মন্দির ছিল সেখানেও এটা তৈরি করা যেত না। এ ছাড়াও, যিহিষ্কেলের মন্দির নগরে ছিল না বরং নগর থেকে কিছুটা দূরে ভূমির এক পৃথক অংশে ছিল কিন্তু দ্বিতীয় মন্দিরটা সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছিল যেখানে প্রথম মন্দিরটা ছিল অর্থাৎ যিরূশালেম নগরে। (ইষ্রা ১:১, ২) এ ছাড়াও, যিরূশালেমের মন্দির থেকে কোন আক্ষরিক নদী কখনো বয়ে আসেনি। এইজন্য প্রাচীন ইস্রায়েল জাতি যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীর কেবল এক আংশিক পরিপূর্ণতা দেখেছিল। এটা ইঙ্গিত দেয় যে এই দর্শনের অবশ্যই এক বৃহৎ আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা রয়েছে।
(যিহিষ্কেল ৪৭:৬) তখন তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি দেখিলে? পরে তিনি আমাকে পুনরায় ঐ নদীর তীরে লইয়া গেলেন।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১০০১, ইংরেজি
মনুষ্যসন্তান
ইব্রীয় শাস্ত্রের যিহিষ্কেল পুস্তকে এই অভিব্যক্তি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, যেখানে ঈশ্বর ভাববাদীকে ৯০ বারেরও বেশি “মনুষ্য-সন্তান” হিসেবে সম্বোধন করেন। (যিহি ২:১, ৩, ৬, ৮) এই উপাধি ব্যবহার করে, স্পষ্টতই এই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল যে, ভাববাদী হলেন একজন সাধারণ পার্থিব ব্যক্তি আর এভাবে মানব মুখপাত্র ও তার বার্তার উৎস সর্বমহান ঈশ্বরের মধ্যে বড়ো পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছিল। দানিয়েল ৮:১৭ পদে এই একই উপাধি ভাববাদী দানিয়েলের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছিল।
বাইবেল পাঠ
(যিহিষ্কেল ৪৮:১৩-২২) আর যাজকদের সীমার সম্মুখে লেবীয়েরা পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ ও দশ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ [ভূমি] পাইবে; সমুদায়ের দীর্ঘতা পঁচিশ সহস্র ও প্রস্থ দশ সহস্র [হস্ত] হইবে। ১৪ তাহারা তাহার কিছু বিক্রয় করিবে না, বা পরিবর্ত্তন করিবে না, এবং দেশের [সেই] অগ্রিমাংশ হস্তান্তরীকৃত হইবে না, কেননা তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। ১৫ আর পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ সেই ভূমির সম্মুখে প্রস্থ পরিমাণে যে পাঁচ সহস্র [হস্ত] অবশিষ্ট থাকে, তাহা সাধারণ স্থান বলিয়া নগরের, বসতির ও পরিসরের জন্য হইবে; নগরটী তাহার মধ্যস্থানে থাকিবে। ১৬ তাহার পরিমাণ এইরূপ হইবে; উত্তরপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত], দক্ষিণপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত], পূর্ব্বপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত] ও পশ্চিমপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]। ১৭ আর নগরের পরিসরভূমি থাকিবে; উত্তরদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত], দক্ষিণদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত], পূর্ব্বদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত] ও পশ্চিমদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত]। ১৮ আর পবিত্র উপহারভূমির সম্মুখে অবশিষ্ট স্থান দীর্ঘ পরিমাণে পূর্ব্বদিকে দশ সহস্র [হস্ত] ও পশ্চিমে দশ সহস্র [হস্ত] হইবে, আর তাহা পবিত্র উপহারভূমির সম্মুখে থাকিবে, তদুৎপন্ন দ্রব্য নগরের কর্ম্মচারী লোকদের ভক্ষ্যের নিমিত্ত হইবে। ১৯ আর ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্য হইতে নগরের শ্রমজীবীরা তাহা চাষ করিবে। ২০ সেই উপহারভূমি সর্ব্বশুদ্ধ পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ ও পঁচিশ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ হইবে; তোমরা নগরের অধিকারশুদ্ধ চতুষ্কোণ পবিত্র উপহারভূমি নিবেদন করিবে। ২১ পবিত্র উপহারভূমির ও নগরের অধিকারের দুই পার্শ্বে যে সকল অবশিষ্ট ভূমি, তাহা অধ্যক্ষের হইবে; অর্থাৎ—পঁচিশ সহস্র [হস্ত] পরিমিত উপহারভূমি অবধি পূর্ব্বসীমা পর্য্যন্ত, ও পশ্চিমদিকে পঁচিশ সহস্র [হস্ত] পরিমিত সেই উপহারভূমি অবধি পশ্চিমসীমা পর্য্যন্ত অন্য সকল অংশের সম্মুখে অধ্যক্ষের [অংশ] হইবে, এবং পবিত্র উপহারভূমি ও গৃহের ধর্ম্মধাম তাহার মধ্যস্থিত হইবে। ২২ আর অধ্যক্ষের প্রাপ্তব্য অংশের মধ্যস্থিত লেবীয়দের অধিকার ও নগরের অধিকার ছাড়া যাহা যিহূদার সীমার ও বিন্যামীনের সীমার মধ্যে আছে, তাহা অধ্যক্ষের হইবে।
সেপ্টেম্বর ১৮-২৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | দানিয়েল ১-৩
“যিহোবার প্রতি আনুগত্য পুরস্কার নিয়ে আসে”
(দানিয়েল ৩:১৬-২০) শদ্রক, মৈশক, ও অবেদ্-নগো রাজাকে উত্তর করিলেন, হে নবূখদ্নিৎসর, আপনাকে এই কথার উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে নিষ্প্রয়োজন। ১৭ যদি হয়, আমরা যাঁহার সেবা করি, আমাদের সেই ঈশ্বর আমাদিগকে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড হইতে উদ্ধার করিতে সমর্থ আছেন, আর, হে রাজন্, তিনি আপনার হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন; ১৮ আর যদি নাও হয়, তবু হে রাজন্আপনি জানিবেন, আমরা আপনার দেবগণের সেবা করিব না, এবং আপনার স্থাপিত স্বর্ণ-প্রতিমাকে প্রণাম করিব না। ১৯ তখন নবূখদ্নিৎসর ক্রোধে পরিপূর্ণ হইলেন, এবং শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর বিরুদ্ধে তাঁহার মুখ বিকটাকার হইল; তিনি বলিয়া দিলেন ও আদেশ করিলেন অগ্নিকুণ্ড যে পরিমাণে উত্তপ্ত আছে, তাহা অপেক্ষা যেন সাত গুণ অধিক উত্তপ্ত করা হয়; ২০ আর তিনি আপন সৈন্যের মধ্যে কতকগুলি বীর্য্যবান্ পুরুষকে আজ্ঞা দিলেন, যেন তাহারা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে বাঁধিয়া প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে।
প্রহরীদুর্গ ১৫ ৭/১৫ ২৫ অনু. ১৫-১৬
ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি আপনার আনুগত্য বজায় রাখুন
১৫ আমরা শুদ্ধ সংবেদ বা বিবেক নিয়ে যিহোবার সেবা করতে চাই আর কখনো কখনো আমাদের হয়তো সহকর্মী, সহপাঠী, প্রতিবেশী অথবা আত্মীয়স্বজনের চেয়ে একেবারে আলাদা থাকতে হবে। (১ পিতর ২:১৯) যিশু সাবধান করেছিলেন, আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা বলে তারা এমনকী আমাদের ঘৃণা করবে। মনে রাখবেন, যারা আমাদের বিরোধিতা করে, তাদের অধিকাংশই ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানে না। তাই মানুষের সরকারের পরিবর্তে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি অনুগত থাকা কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তা তারা বোঝে না।
১৬ আমরা যদি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে চাই, তা হলে লোকেরা যা-ই বলুক অথবা করুক না কেন, আমাদের তাঁর প্রতি বাধ্য থাকতে হবে। (দানি. ৩:১৬-১৮) বিশেষভাবে অল্পবয়সিদের পক্ষে অন্যদের চেয়ে আলাদা থাকা কঠিন হতে পারে। তাই বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানরা স্কুলে থাকার সময় তাদের সাহসী হতে সাহায্য করুন। আপনাদের সন্তানরা হয়তো পতাকা অভিবাদন করা অথবা অন্যান্য জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা প্রত্যাখ্যান করতে ভয় পেতে পারে। এই ধরনের বিষয়ে যিহোবা কেমন অনুভব করেন, তা আপনারা পারিবারিক উপাসনার সময় আলোচনা করতে পারেন। সন্তানরা যা বিশ্বাস করে, তা কীভাবে অন্যদের কাছে স্পষ্টভাবে ও সম্মানের সঙ্গে ব্যাখ্যা করতে হয়, সেই বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিন। (রোমীয় ১:১৬) এ ছাড়া, প্রয়োজন হলে তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার এবং আমরা যা বিশ্বাস করি, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে সন্তানদের সাহায্য করুন।
(দানিয়েল ৩:২৬-২৯) তখন নবূখদ্নিৎসর সেই প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের দুয়ারের কাছে গিয়া কহিলেন, হে পরাৎপর ঈশ্বরের দাস শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো, বাহির হইয়া আইস। তখন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো অগ্নির মধ্য হইতে বাহির হইয়া আসিলেন। ২৭ পরে ক্ষিতিপাল, প্রতিনিধি, দেশাধ্যক্ষ ও রাজমন্ত্রিগণ একত্র হইয়া ঐ তিন ব্যক্তিকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন, অগ্নি তাঁহাদের শরীরের উপর কিছুই শক্তি প্রকাশ করে নাই, তাঁহাদের মস্তকের কেশও দগ্ধ হয় নাই, বস্ত্রও বিকৃত হয় নাই, এবং তাহাদের গায়ে অগ্নির গন্ধও নাই। ২৮ তখন নবূখদ্নিৎসর এই কথা কহিলেন, ধন্য শদ্রকের, মৈশকের ও অবেদ্নগোর ঈশ্বর, তিনি আপন দূত প্রেরণ করিয়া, তাঁহার সেই দাসদিগকে উদ্ধার করিলেন, যাহারা তাহাতে বিশ্বাস করিয়াছে, রাজার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিয়াছে, এবং আপনাদের ঈশ্বর ব্যতিরেকে যেন অন্য কোন দেবের সেবা ও পূজা করিতে না হয়, সেই জন্য আপন আপন শরীর দিয়াছে। ২৯ অতএব আমি এই নিয়ম স্থাপন করিতেছি, সকল দেশের লোক, জাতি ও ভাষাবাদিগণের মধ্যে যে কেহ শদ্রকের, মৈশকের ও অবেদ্-নগোর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোন ভ্রান্তির কথা বলিবে, সে খণ্ডবিখণ্ড হইবে, এবং তাহার গৃহ সারের ঢিবী করা যাইবে; কেননা এ প্রকার উদ্ধার করিতে সমর্থ আর কোন দেবতা নাই।
প্রহরীদুর্গ ১৩ ১/১৫ ১০ অনু. ১৩
সাহস করুন যিহোবা আপনার সহবর্তী!
১৩ খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে, যিহোবার তিন জন ইব্রীয় দাসকে স্পষ্ট প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল যে, ঈশ্বর বিশ্বাস ও সাহসের প্রতি আশীর্বাদ করেন। রাজা নবূখদ্নিৎসর বাবিলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের একত্রিত করেছিলেন এবং তাদেরকে সোনার তৈরি এক প্রকাণ্ড প্রতিমার উপাসনা করার আদেশ দিয়েছিলেন। আর যারা তা করবে না, তাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে মারা যেতে হবে। সেই তিন জন ইব্রীয় সম্মানের সঙ্গে নবূখদ্নিৎসরকে বলেছিল: “আমরা যাঁহার সেবা করি, আমাদের সেই ঈশ্বর আমাদিগকে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড হইতে উদ্ধার করিতে সমর্থ আছেন, আর, হে রাজন্, তিনি আপনার হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন; আর যদি নাও হয়, তবু হে রাজন্, আপনি জানিবেন, আমরা আপনার দেবগণের সেবা করিব না, এবং আপনার স্থাপিত স্বর্ণ-প্রতিমাকে প্রণাম করিব না।” (দানি. ৩:১৬-১৮) তিন জন ইব্রীয়ের রোমাঞ্চকর উদ্ধারের ঘটনা দানিয়েল ৩:১৯-৩০ পদের মধ্যে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও আমাদেরকে হয়তো জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে মারা যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয় না, তবে আমরা নীতিনিষ্ঠার পরীক্ষার মুখোমুখি হই আর নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ঈশ্বর আমাদের বিশ্বাস ও সাহসের প্রতি আশীর্বাদ করবেন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(দানিয়েল ১:৫) পরে রাজা নিরূপণ করিলেন যে, তাহাদের জন্য রাজার আহারীয় দ্রব্য ও তাঁহার পানীয় দ্রাক্ষারস হইতে প্রতিদিনের অংশ দিতে, এবং তাহাদিগকে তিন বৎসর পরিপোষণ করিতে হইবে; যেন সেই সময়ের শেষে তাহারা রাজার নিকটে দাঁড়াইতে পারে।
(দানিয়েল ১:৮) কিন্তু দানিয়েল মনে স্থির করিলেন যে, তিনি রাজার আহারীয় দ্রব্যে ও তাঁহার পানীয় দ্রাক্ষারসে আপনাকে অশুচি করিবেন না; এই জন্য আপনাকে যেন অশুচি করিতে না হয়, এই অনুমতি নপুংসকগণের অধ্যক্ষের কাছে প্রার্থনা করিলেন।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৩৮২, ইংরেজি
মৈশক
তারা কেন রাজার আহারীয় দ্রব্য ‘অশুচি’ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন, সেটার সম্ভাব্য তিনটে কারণ হল: (১) বাবিলীয়রা এমন পশুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত, যেগুলোকে মোশির ব্যবস্থায় অশুচি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল; (২) পশুর রক্ত সঠিকভাবে ঝড়ানো হয়েছে কি না, সেটা তারা ভালোমতো লক্ষ করত না, কেউ কেউ সেগুলোকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করত; (৩) পৌত্তলিক উপাসকরা প্রায় সময়ই তাদের দেবতাদের কাছে প্রথমে সেই পশু উৎসর্গ করত ও সেই মাংস গ্রহণ করা এই দেবতাদের উপাসনা করার অংশ হিসেবে বিবেচনা করত।—দানিয়েল ১:৮; তুলনা করুন, ১ করিন্থীয় ১০:১৮-২০, ২৮.
(দানিয়েল ২:৪৪) আর সেই রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।
প্রহরীদুর্গ ১২ ৬/১৫ ১৭, বাক্স
“ঐ সকল রাজ্য” কাদের নিয়ে গঠিত?
দানিয়েল ২:৪৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণী বলে যে, ঈশ্বরের রাজ্য ‘ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিবে।’ এই ভবিষ্যদ্বাণী কেবল প্রতিমার বিভিন্ন অংশ দ্বারা চিত্রিত রাজ্যগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করে।
অন্যান্য মানবসরকারের বিষয়ে কী বলা যায়? প্রকাশিত বাক্য বইয়ের সাদৃশ্যমূলক ভবিষ্যদ্বাণী এই বিষয়টা আরও ব্যাপকভাবে প্রকাশ করে। এটা দেখায় যে, ‘জগৎ সমুদয়ের রাজারা,’ ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনে’ যিহোবার বিরুদ্ধে একত্রিত হবে। (প্রকা. ১৬:১৪; ১৯:১৯-২১) তাই, কেবল প্রতিমার দ্বারা চিত্রিত রাজ্যগুলোই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যান্য সমস্ত মানবসরকারও আরমাগিদোনে ধ্বংস হয়ে যাবে।
এক সুখী জগতের চাবিকাঠি
দানিয়েল ২:৪৪ পদে এই প্রশ্নের উত্তর এভাবে পাওয়া যায়: “সেই রাজগণের সময়ে [বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে যারা শাসন করছে] স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা [মানুষের তৈরি] ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) কিন্তু, কেন ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীর এই সরকারগুলোকে “চূর্ণ” করবে? কারণ এদন উদ্যানে শয়তান ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করে নিজের ইচ্ছামতো শাসন করার যে মনোভাব গড়ে তুলেছিল, তা এই সরকারগুলো ধরে রাখতে চায়। মানুষের মঙ্গলের বিরুদ্ধে কাজ করা ছাড়াও যারা এই মনোভাবকে ধরে রাখে তারা সৃষ্টিকর্তার বিরোধী হয়। (গীতসংহিতা ২:৬-১২; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) তাই অবশ্যই আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘আমরা ঈশ্বরের শাসনের পক্ষে, না বিপক্ষে?’
বাইবেল পাঠ
(দানিয়েল ২:৩১-৪৩) হে মহারাজ, আপনি দৃষ্টিপাত করিয়াছিলেন, আর দেখুন, এক প্রকাণ্ড প্রতিমা; সেই প্রতিমা বৃহৎ এবং অতিশয় তেজোবিশিষ্ট; তাহা আপনার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিল; আর তাহার দৃশ্য ভয়ঙ্কর। ৩২ সেই প্রতিমার বৃত্তান্ত এই; তাহার মস্তক সুবর্ণময়, তাহার বক্ষঃ ও বাহু রৌপ্যময়, তাহার উদর ও ঊরুদেশ পিত্তলময়; ৩৩ তাহার জঙ্ঘা লৌহময়, এবং তাহার চরণ কিছু লৌহময় ও কিছু মৃত্তিকাময় ছিল। ৩৪ আপনি দৃষ্টিপাত করিতে থাকিলেন, শেষে বিনা হস্তে খনিত এক প্রস্তর সেই প্রতিমার লৌহ ও মৃণ্ময় দুই চরণে আঘাত করিয়া সেইগুলি চূর্ণ করিল। ৩৫ তখন সেই লৌহ, মৃত্তিকা, পিওল, রৌপ্য ও সুবর্ণ একসঙ্গে চূর্ণ হইয়া গ্রীষ্মকালীন খামারের তুষের ন্যায় হইল, আর বায়ু সে সকল উড়াইয়া লইয়া গেল, তাহাদের জন্য আর কোথাও স্থান পাওয়া গেল না। আর যে প্রস্তরখানি ঐ প্রতিমাকে আঘাত করিয়াছিল, তাহা বাড়িয়া মহাপর্ব্বত হইয়া উঠিল, এবং সমস্ত পৃথিবী পূর্ণ করিল। ৩৬ স্বপ্নটী এই; এখন আমরা মহারাজের সাক্ষাতে ইহার তাৎপর্য্য জ্ঞাত করি। ৩৭ হে মহারাজ, আপনি রাজাধিরাজ, স্বর্গের ঈশ্বর আপনাকে রাজ্য, ক্ষমতা, পরাক্রম ও মহিমা দিয়াছেন। ৩৮ আর যে কোন স্থানে মনুষ্য-সন্তানগণ বাস করে, সেই স্থানে তিনি মাঠের পশু ও আকাশের পক্ষিগণকে আপনার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন, এবং তাহাদের সকলের উপরে আপনাকে কর্ত্তৃত্ব দিয়াছেন; আপনিই সেই স্বর্ণময় মস্তক। ৩৯ আপনার পশ্চাতে আপনা হইতে ক্ষুদ্র আর এক রাজ্য উঠিবে; তাহার পরে পিত্তলময় তৃতীয় এক রাজ্য উঠিবে, তাহা সমস্ত পৃথিবীর উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। ৪০ আর চতুর্থ রাজ্য লৌহবৎ দৃঢ় হইবে; কারণ লৌহ যেমন সমস্ত দ্রব্য চূর্ণ করে ও পাড়িয়া ফেলে, লৌহ যেমন এই সকল চূর্ণ করে, তদ্রূপ সেই রাজ্য সকলই ভাঙ্গিয়া চূর্ণ করিবে। ৪১ আর আপনি দেখিয়াছেন, দুই চরণ ও চরণের অঙ্গুলি সকল কিছু কুম্ভকারের মৃত্তিকার ও কিছু লৌহের, ইহাতে বিভক্ত রাজ্য বুঝায়; কিন্তু সেই রাজ্যে লৌহের দৃঢ়তা থাকিবে, কেননা আপনি কর্দ্দমে মিশ্রিত লৌহ দেখিয়াছেন। ৪২ আর চরণের অঙ্গুলি সকল যেরূপ কিছু লৌহময় ও কিছু মৃণ্ময় ছিল, তদ্রূপ রাজ্যের একাংশ দৃঢ় ও একাংশ ভঙ্গুর হইবে। ৪৩ আর আপনি যেমন দেখিয়াছেন, লৌহ কর্দ্দমে মিশ্রিত হইয়াছে, তদ্রূপ সেই লোকেরা মনুষ্যের বীর্য্যে পরস্পর মিশ্রিত হইবে; কিন্তু যেমন লৌহ মৃত্তিকার সহিত মিশ্রিত হয় না, তদ্রূপ তাহারা পরস্পর মিশ্রিত থাকিবে না।
সেপ্টেম্বর ২৫–অক্টোবর ১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | দানিয়েল ৪-৬
“আপনি কি ক্রমাগত যিহোবার সেবা করছেন?”
(দানিয়েল ৬:৭-১০) রাজ্যের অধ্যক্ষগণ, প্রতিনিধিগণ, ক্ষিতিপালগণ, মন্ত্রিগণ ও দেশাধ্যক্ষগণ সকলে মন্ত্রণা করিয়া এমন রাজাজ্ঞা স্থাপন ও দৃঢ় প্রতিষেধবিধি প্রচার করিতে বিহিত বুঝিয়াছেন যে, যদি কেহ ত্রিশ দিন পর্য্যন্ত মহারাজ ব্যতীত কোন দেবতার কিম্বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করে, তবে হে রাজন্, সে সিংহদের খাতে নিক্ষিপ্ত হইবে। ৮ এখন হে রাজন, আপনি সেই প্রতিষেধবিধি স্থির করুন, এবং বিধিপত্রে স্বাক্ষর করুন, যেন মাদীয়দের ও পারসীকদের অলোপ্য ব্যবস্থানুসারে তাহা অপরিবর্ত্তনীয় হয়। ৯ অতএব দারিয়াবস রাজা সেই পত্র ও প্রতিষেধবিধিতে স্বাক্ষর করিলেন। ১০ পত্রখানি স্বাক্ষরিত হইয়াছে, ইহা দানিয়েল যখন জানিতে পাইলেন, তখন আপন গৃহে গেলেন; তাঁহার কুঠরীর বাতায়ন যিরূশালেমের দিকে খোলা ছিল; তিনি দিনের মধ্যে তিনবার জানু পাতিয়া আপন ঈশ্বরের সম্মুখে প্রার্থনা ও স্তবগান করিলেন, যেমন পূর্ব্বে করিতেন।
প্রহরীদুর্গ ১০ ১১/১৫ ৬ অনু. ১৬
অল্পবয়সিরা—ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা পরিচালিত হও
১৬ কেন তোমাদের এমনকী একা থাকাকালীন যিহোবার বাধ্য থাকতে চাওয়া উচিত? এই বিষয়টা মনে রাখবে: তোমরা হয় যিহোবাকে কষ্ট দিতে নতুবা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারো। (আদি. ৬:৫, ৬; হিতো. ২৭:১১) যিহোবা তোমাদের কাজগুলো দ্বারা প্রভাবিত হন কারণ তিনি “তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭) তিনি চান যেন তোমরা তাঁর কথা শোনো, যাতে তোমরা উপকার লাভ করতে পারো। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) প্রাচীন ইস্রায়েলে যিহোবার কিছু দাস যখন তাঁর পরামর্শ উপেক্ষা করেছিল, তখন তারা তাঁকে অসন্তুষ্ট করেছিল বা কষ্ট দিয়েছিল। (গীত. ৭৮:৪০, ৪১) অন্যদিকে, যিহোবা ভাববাদী দানিয়েলের প্রতি গভীর স্নেহ অনুভব করেছিলেন, কারণ একজন স্বর্গদূত তাকে “মহাপ্রীতি-পাত্র” বলে অভিহিত করেছিলেন। (দানি. ১০:১১) কেন? দানিয়েল কেবল জনসমক্ষেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে একা থাকাকালীনও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন।—পড়ুন, দানিয়েল ৬:১০.
প্রহরীদুর্গ ০৬ ১১/১ ২৪ অনু. ১২
পবিত্র বিষয়গুলোকে কি আপনি যিহোবার মতো করে দেখেন?
১২ এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অভিষিক্ত সদস্য ও তাদের সহযোগীদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত অনেক বিষয়কে পবিত্র বলে গণ্য করা হয়। যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এক পবিত্র বিষয়। (১ বংশাবলি ২৮:৯; গীতসংহিতা ৩৬:৭) এটা আমাদের কাছে এতটাই মূল্যবান যে, আমরা কোনোকিছুকেই এবং কাউকেই আমাদের ও আমাদের ঈশ্বর যিহোবার মধ্যে আসতে দিই না। (২ বংশাবলি ১৫:২; যাকোব ৪:৭, ৮) যিহোবার সঙ্গে আমাদের এক নিকট সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রার্থনা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাববাদী দানিয়েলের কাছে প্রার্থনা এতটাই পবিত্র ছিল যে, এমনকী জীবনের ঝুঁকির মুখেও তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার রীতির প্রতি ক্রমাগত বিশ্বস্ত ছিলেন। (দানিয়েল ৬:৭-১১) “পবিত্রগণের” অথবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ‘প্রার্থনা’ মন্দিরের উপাসনায় ব্যবহৃত ধূপের মতো। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৮; ৮:৩, ৪; লেবীয় পুস্তক ১৬:১২, ১৩) এই প্রতীকী প্রার্থনা পবিত্রতার ওপর জোর দেয়। নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হওয়া কী এক বিশেষ সুযোগ! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমাদের জীবনে প্রার্থনা পবিত্র বলে গণ্য!
(দানিয়েল ৬:১৬) তখন রাজা আজ্ঞা দিলেন, তাই তাঁহারা দানিয়েলকে আনিয়া সিংহদের খাতে নিক্ষেপ করিলেন। রাজা দানিয়েলকে কহিলেন, তুমি অবিরত যাঁহার সেবা করিয়া থাক, তোমার সেই ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করিবেন।
(দানিয়েল ৬:২০) আর খাতের নিকটে গিয়া তিনি আর্ত্তস্বর করিয়া দানিয়েলকে ডাকিলেন; রাজা দানিয়েলকে বলিলেন, হে জীবন্ত ঈশ্বরের সেবক দানিয়েল, তুমি অবিরত যাঁহার সেবা কর, তোমার সেই ঈশ্বর কি সিংহের মুখ হইতে তোমাকে রক্ষা করিতে পারিয়াছেন?
কেন আমাদের অবিরত প্রার্থনা করা উচিত?
২ যিহোবা দানিয়েলকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন? যখন স্বর্গদূত গাব্রিয়েল, দানিয়েলের প্রার্থনাগুলোর একটার উত্তর দিতে এসেছিলেন, তখন তিনি ভাববাদীকে “অতিশয় প্রীতি-পাত্র” বলে বর্ণনা করেছিলেন। (দানিয়েল ৯:২০-২৩) যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে যিহোবা দানিয়েলকে একজন ধার্মিক ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছিলেন। (যিহিষ্কেল ১৪:১৪, ২০) তার জীবনকালে দানিয়েলের প্রার্থনাগুলো স্পষ্টতই তার ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে আরও বৃদ্ধি করেছিল, যে-বিষয়টা এমনকী দারিয়াবসও স্বীকার করেছিলেন।—দানিয়েল ৬:১৬.
(দানিয়েল ৬:২২, ২৩) আমার ঈশ্বর আপন দূত পাঠাইয়া সিংহগণের মুখ বদ্ধ করিয়াছেন, তাহারা আমার হিংসা করে নাই; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে আমার নির্দ্দোষতা লক্ষিত হইল; এবং হে রাজন্, আপনার সাক্ষাতেও আমি কোন অপরাধ করি নাই। ২৩ তখন রাজা অতিশয় আহ্লাদিত হইলেন, এবং দানিয়েলকে খাত হইতে তুলিতে আজ্ঞা করিলেন। তাহাতে দানিয়েলকে খাত হইতে তুলিয়া লওয়া হইল, আর তাঁহার শরীরে কোন প্রকার আঘাত দৃষ্ট হইল না, কারণ তিনি আপন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিয়াছিলেন।
প্রহরীদুর্গ ১০ ২/১৫ ১৮ অনু. ১৫
“আত্মা ও কন্যা কহিতেছেন, আইস”
১৫ দানিয়েল সিংহের গর্তে এক রাত কাটানোর পর, রাজা নিজে সেখানে গিয়েছিলেন এবং আর্তস্বর করে বলেছিলেন: “হে জীবন্ত ঈশ্বরের সেবক দানিয়েল, তুমি অবিরত যাঁহার সেবা কর, তোমার সেই ঈশ্বর কি সিংহের মুখ হইতে তোমাকে রক্ষা করিতে পারিয়াছেন?” দানিয়েল সঙ্গেসঙ্গে উত্তর দিয়েছিলেন: “হে রাজন্, চিরজীবী হউন। আমার ঈশ্বর আপন দূত পাঠাইয়া সিংহগণের মুখ বদ্ধ করিয়াছেন, তাহারা আমার হিংসা করে নাই; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে আমার নির্দ্দোষতা লক্ষিত হইল; এবং হে রাজন্, আপনার সাক্ষাতেও আমি কোন অপরাধ করি নাই।” দানিয়েল “অবিরত” সেবা করার কারণে যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন।—দানি. ৬:১৯-২২.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
(দানিয়েল ৪:১০, ১১) শয্যার উপরে আমার মনের দর্শন এই; আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ পৃথিবীর মধ্যস্থলে এক বৃক্ষ রহিয়াছে, তাহা উচ্চে বৃহৎ। ১১ সেই বৃক্ষ বৃদ্ধি পাইয়া বলবান ও উচ্চতায় গগনস্পর্শী হইল, সমস্ত পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত দৃশ্যমান হইল।
(দানিয়েল ৪:২০-২২) আপনি যে বৃক্ষটী দেখিয়াছেন, যাহা বৃদ্ধি পাইল, বলবান হইয়া উঠিল, যাহার উচ্চতা আকাশ পর্য্যন্ত পৌঁছিল, ও যাহা সমস্ত পৃথিবীতে দৃশ্যমান হইল, ২১ যাহার পত্র সুন্দর ও ফল বিস্তর ছিল, যাহাতে সকলের জন্য খাদ্য ছিল, যাহার তলে মাঠের পশুগণ বাস করিত, এবং যাহার শাখাতে আকাশের পক্ষিগণ বসতি করিত; হে রাজন্, সেই বৃক্ষ আপনি; ২২ আপনি বৃদ্ধি পাইয়াছেন, বলবান হইয়া উঠিয়াছেন, আপনার মহিমা বৃদ্ধি পাইয়াছে, আকাশ পর্য্যন্ত পৌঁছিয়াছে, এবং আপনার কর্ত্তৃত্ব পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত ব্যাপিয়াছে।
দানিয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
৪:১০, ১১, ২০-২২—নবূখদ্নিৎসরের স্বপ্নের বৃহৎ বৃক্ষ দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়েছিল? প্রথমে বৃক্ষটা একটা বিশ্বশক্তির শাসক হিসেবে নবূখদ্নিৎসরকে চিত্রিত করেছিল। কিন্তু, সেই শাসন যেহেতু “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” সম্প্রসারিত হয়েছিল, তাই সেই বৃক্ষ আরও মহৎ কিছুকে নির্দেশ করে। দানিয়েল ৪:১৭ পদ সেই স্বপ্নকে মানবজাতির ওপর ‘পরাৎপরের’ শাসনের সঙ্গে যুক্ত করে। তা হলে, সেই বৃক্ষ বিশেষ করে পৃথিবীতে যিহোবার সার্বিক সার্বভৌমত্বকেও চিত্রিত করে। তাই, সেই স্বপ্নের দুটো পরিপূর্ণতা রয়েছে— নবূখদ্নিৎসরের শাসন এবং যিহোবার সার্বভৌমত্ব।
(দানিয়েল ৫:১৭) তখন দানিয়েল উত্তর করিয়া রাজার সম্মুখে বলিলেন, আপনার দান আপনারই থাকুক, আপনার পুরস্কার অন্যকে দিউন; কিন্তু আমি মহারাজের নিকটে এই লিপি পাঠ করিব, এবং ইহার তাৎপর্য্য তাঁহাকে জানাইব।
(দানিয়েল ৫:২৯) তখন বেল্শৎসরের আজ্ঞায় দানিয়েল বেগুনিয়া বস্ত্রে বস্ত্রান্বিত হইলেন, ও তাঁহার কণ্ঠে সুবর্ণের হার দেওয়া গেল, এবং তাঁহার বিষয়ে এই কথা ঘোষণা করিয়া দেওয়া হইল যে, তিনি রাজ্যে তৃতীয় কর্ত্তা হইলেন।
প্রহরীদুর্গ ৮৮ ১০/১ ৩০ অনু. ৩-৫ ইংরেজি
পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন
অবশেষে দানিয়েল নামে একজন ইব্রীয়কে যখন কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, তখন রাজা তার উপহার সম্বন্ধে আবারও উল্লেখ করে দানিয়েলকে বেগুনি বস্ত্র পরাতে, তার গলায় সোনার হার দিতে এবং তাকে রাজ্যের তৃতীয় কর্তা হিসেবে নিযুক্ত করতে বলেছিলেন। ভাববাদী সম্মানের সঙ্গে এই উত্তর দিয়েছিলেন: “আপনার দান আপনারই থাকুক, আপনার পুরস্কার অন্যকে দিউন; কিন্তু আমি মহারাজের নিকটে এই লিপি পাঠ করিব, এবং ইহার তাৎপর্য্য তাঁহাকে জানাইব।”—দানিয়েল ৫:১৭.
তাই, তাৎপর্য বলে দেওয়ার জন্য দানিয়েলকে কোনো ঘুস কিংবা বেতন দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। রাজা সেই উপহার নিজে রাখতে পারতেন অথবা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারতেন। দানিয়েল কোনো পুরস্কার লাভ করার জন্য সেই তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেননি বরং তিনি তা করার জন্য যিহোবার কাছ থেকে শক্তি লাভ করেছিলেন, যিনি সত্য ঈশ্বর এবং যার কাছ থেকে বাবিলীয়দের উপর বিচার আসতে যাচ্ছিল।
দানিয়েল ৫:২৯ পদে আমরা যেমনটা পড়ি, দানিয়েল তার কথা মতো সেই লিপি পাঠ ও সেটার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার পর, রাজা যেকোনোভাবেই হোক দানিয়েলকে সেই উপহার দেওয়ার আজ্ঞা দিয়েছিলেন। দানিয়েল নিজে সেই বস্ত্র ও হার পরেননি। সর্বক্ষমতার অধিকারী রাজা বেল্শৎসরের আদেশেই তাকে সেগুলো পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে, এটা দানিয়েল ৫:১৭ পদের সঙ্গে কোনো সংঘাত সৃষ্টি করে না, যেখানে ভাববাদী স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন, তার মনোভাব স্বার্থপর নয়।
দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী ১০৯ অনু. ২২ ইংরেজি
যে-চারটা শব্দ জগৎ পরিবর্তন করে দিয়েছিল
২২ এভাবে সেই প্রহেলিকা বা ধাঁধাঁর সমাধান করা হয়েছিল। শক্তিশালী বাবিল মাদীয় পারসিক বাহিনীর কাছে পরাজিত হতে যাচ্ছিল। দণ্ডাজ্ঞা শুনে ভীষণভাবে হতাশ হয়ে পড়া সত্ত্বেও, বেল্শৎসর তার কথা রেখেছিলেন। তিনি দানিয়েলকে বেগুনি বস্ত্র পরাতে, তার গলায় সোনার হার দিতে এবং তাকে রাজ্যের তৃতীয় কর্তা হিসেবে নিযুক্ত করতে তার দাসদের আদেশ দিয়েছিলেন। (দানিয়েল ৫:২৯) দানিয়েল এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেননি কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই সম্মান যিহোবার প্রাপ্য সম্মানকে চিত্রিত করে। এটা ঠিক, বেল্শৎসর হয়তো আশা করেছিলেন, তাঁর ভাববাদীকে সম্মানিত করার মাধ্যমে যিহোবার বিচার কিছুটা লঘু করা সম্ভব হবে। যদি তাই হয়, তা হলে সেই প্রচেষ্টা ছিল অতি সামান্য ও সেটা অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
বাইবেল পাঠ
(দানিয়েল ৪:২৯-৩৭) বারো মাসের শেষে তিনি বাবিলের রাজপ্রাসাদের উপরে বেড়াইতেছিলেন। ৩০ রাজা এই কথা কহিলেন, এ কি সেই মহতী বাবিল নয়, যাহা আমি আপন বলের প্রভাবে ও আপন প্রতাপের মহিমার্থে রাজধানী করিবার জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছি? ৩১ রাজার মুখ হইতে এই বাক্য নির্গত হইতে না হইতে এই আকাশবাণী হইল, হে রাজন্ নবূখদ্নিৎসর! তোমাকে বলা হইতেছে, তোমার রাজত্ব তোমা হইতে গেল। ৩২ আর তুমি মানব-সমাজ হইতে দূরীকৃত হইবে, মাঠের পশুদের সহিত তোমার বসতি হইবে, বলদের ন্যায় তোমাকে তৃণ ভোজন করান যাইবে, ও তোমার উপরে সাত কাল ঘূরিবে; যে পর্য্যন্ত না তুমি জানিবে যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, ও যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন। ৩৩ সেই দণ্ডে নবূখদ্নিৎসরের সম্বন্ধে সেই বাক্য সিদ্ধ হইল; তিনি মানবসমাজ হইতে দূরীকৃত হইলেন, বলদের ন্যায় তৃণ ভোজন করিতে লাগিলেন, তাঁহার শরীর আকাশের শিশিরে ভিজিল, ক্রমে তাঁহার কেশ ঈগল পক্ষীর পালখের ন্যায়, ও তাঁহার নখ পক্ষীর নখরের ন্যায় হইয়া উঠিল। ৩৪ আর সেই সময়ের শেষে আমি নবূখদ্নিৎসর স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিলাম, ও আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল; তাহাতে আমি পরাৎপরের ধন্যবাদ করিলাম, এবং অনন্তজীবী ঈশ্বরের প্রশংসা ও সমাদর করিলাম; কারণ তাঁহার কর্ত্তৃত্ব অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব ও তাঁহার রাজ্য পুরুষানুক্রমে স্থায়ী; ৩৫ আর পৃথিবীনিবাসিগণ সকলে অবস্তুবৎ গণ্য; তিনি স্বর্গীয় বাহিনীর ও পৃথিবীনিবাসীদের মধ্যে আপন ইচ্ছানুসারে কার্য্য করেন; এবং এমন কেহ নাই যে, তাঁহার হস্ত থামাইয়া দিবে, কিম্বা তাঁহাকে বলিবে, তুমি কি করিতেছ? ৩৬ সেই সময়ে আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল, এবং আমার রাজ্যের গৌরবার্থে আমার প্রতাপ ও তেজ আমাতে ফিরিয়া আসিল; আর আমার মন্ত্রিগণ ও আমার মহল্লোক সকল আমার অন্বেষণ করিল, এবং আমি আপন রাজ্যে পুনঃস্থাপিত হইলাম, ও আমার মহিমা অতিশয় বৃদ্ধি পাইল। ৩৭ এখন আমি নবূখদ্নিৎসর সেই স্বর্গরাজের প্রশংসা, প্রতিষ্ঠা ও সমাদর করিতেছি; কেননা তাঁহার সমস্ত ক্রিয়া সত্য, ও তাঁহার পথ সকল ন্যায্য; আর যাহারা স্বগর্ব্বে চলে, তিনি তাহাদিগকে খর্ব্ব করিতে পারেন।